বৃষ্টিস্নাত ভোর পর্বঃ৩২

0
5147

#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ৩২
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

ঘৃনা ও ভালোবাসা মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।এক জনের উপস্থিতিতে অন্যজন অনুপস্থিত।
যেখানে ঘৃনার জন্ম নেয় সেখানে ভালোবাসা ধীরে ধীরে প্রলীণ হতে থাকে।

দুই সপ্তাহ এর মতো আজরাহানদের বাড়িতে বিরান অবস্থা।কেউ কারো সাথে কথা বলে না।প্রহর ভুলেও রুম থেকে বের হয় না।ওর খাবার হয় সানায় না হয় কুহেলিকা কিংবা নন্দিতা দিয়ে আসে।
আজরাহান এর সাথে প্রায় কথা বলা বন্ধ সবার।আশফিকও ইদানিং এড়িয়ে চলে।নিজেকে দোষারোপ করে।যদি সঠিক সময়ে আজরাহান কে সঠিক পথ দেখাতো, হয় তো আজ এতোবড় ভুল সে করতো না।

আজরাহান ছোট বেলা থেকে রাগী।রাগের মাথায় কী করে বসে তা সে নিজেও জানে না।কুহেলিকার মনে এই ভয়টাই এতোদিন দানা বেঁধেছিলো।আজরাহান রাগের বসে প্রহর এর সাথে উল্টা পাল্টা কিছু করে না বসে।আর তার সেই ভয়ই আজ সত্যে প্রমানিত হলো।
সবকিছুই যখন ঠিক তখন শুধুমাত্র ছোট্ট একটু ভুলে সব এলোমেলো হয়েগেলো।

“বিশ্বাস মানুষের রক্তের মতো।যতদিন তা বিশুদ্ধ মানুষ ততদিন বেঁচে থাকে প্রানের শ্বাস নিয়ে।কিন্তু যখন তাতে সন্দেহ নামের বিষাক্ত বায়ু মিশে এক নিমিষে তা প্রান কেড়ে নেয়।”

একটি রেস্তোরাঁয় বসে আছে আজরাহান।উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনে থাকা মানুষটার দিকে।এক বদ্ধ যন্ত্রণা আজরাহান এর মন,মস্তিষ্ক আর দেহ কে কুঁড়ে কুঁড়ে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।গত দুই সপ্তাহে এক পলকের জন্যও প্রহর কে দেখেনি।যতবার ওর ঘরের সামনে দিয়ে গেছে ততবার ওর শ্রান্ত দুই নজর ওর লিটল হার্ট কে দেখার জন্য আকুলিবিকুলি করছে।কিন্তু দিনশেষে সেই তৃষ্ণাই তার বাড়তে লাগলো।যার কোনো কুল কিনারা সে করতে পারে নি।
সামনে থাকা ব্যক্তিটি হালকা গলা কেশে আজরাহান এর মনোযোগ আকর্ষন করলো।আজরাহান তার নিস্প্রভ চোখ দুটি নিবদ্ধ করে তারাফ এর দিকে।স্মিত হাসে তারাফ।মৃদু গলায় বলল—

“কেমন আছেন মি.আজরাহান?

আজরাহান ছোট্ট করে একটা শ্বাস ফেললো।কেমন আছে সে!আদৌ কী সে বেঁচে আছে!
তার লিটেল হার্ট যে তার কাছে নেই।সে তো নিঃশ্বাস ই নিতে পারছে না।আর যে বেঁচেই নেই তার আবার কেমন থাকা!
ব্যপারটা হাস্যকর!
সবাই তার রাগ দেখলো কিন্তু কেউ তার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ দেখলো না।যাকে পাওয়ার জন্য সে এতোটা নিচে নামলো আর তাকেই তার থেকে আলাদা করে দিলো!
মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক প্রাণি।কেউ যদি হাজার সঠিক কাজও করে তার একটি ভুল তার সেই হাজার সঠিক কাজকে হার মানিয়ে দেয়।

আজরাহান এর দিক থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে তারাফ হালকা গলায় আবার বলল–

“মি.আজরাহান!ক্যান ইউ হিয়ার মি?

আজরাহান অধর ছড়িয়ে তার ভিতর জমে থাকা বিষাক্ত,অবাধ্য যন্ত্রণা গুলোর এক নিগুঢ় শ্বাস ফেলে।ফিকে গলায় বলল–

“আমি ঠিক আছি।কেনো ডেকেছেন আমাকে?

তারাফ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলল–

“সুখতারা কে আপনি ভালোবাসেন?

আজরাহান বিদ্রুপপূর্ণ হাসে।ক্ষুন্ন গলায় বলল–

“জানোয়ার এর আবার ভালোবাসা !

“কথাটা মিথ্যে নয়।কিন্তু কী বলেন তো,সব জানোয়ার তো আর এক নয়।কিছু প্রভু ভক্ত কুকুরও হয় আবার কিছু লোভী অজগরও হয়।
তা আপনি কোনটা?

আজরাহান নীরস হেসে বলল—

“জানি না।মানুষ তো নই আমি।পশুদের কাতারে পড়ি কিনা তাও জানি না।
কারন আল্লাহ তা’আলা পশুদের সৃষ্টি করেছেন হিংস্রতা দিয়ে।আর আমি মানুষ হয়েও সেই পশুদের হারিয়ে দিলাম।”

তারাফ কঠিন হাসলো।আজরাহান এর চোখে মুখে অনুশোচনা।হৃদয়পুরে জ্বলছে প্রেমানল।যে আগুনে প্রতিনিয়ত দগ্ধ হচ্ছে আজরাহান।খানিক চুপ থেকে তারাফ বলল–

“যাকে আকাশসম ভালোবাসেন তাকে ওই চাঁদসম বিশ্বাস তো করতে পারতেন।যার আলোই সে আপনার জীবনকে আলোকিত করতো।বাট সেড,সেই চাঁদ কে অবিশ্বাসের কালো মেঘে ঢেকে দিয়েছেন।”

আজরাহান দৃঢ় গলায় বলল—

“আমি জানি আমি ভুল করেছি।কিন্তু তাই বলে আমার এক ভুলের সাজা আমার পুরো জীবন নিয়ে তো আমি দিতে পারি না।
আমার প্রতিটা দিন,প্রতিটা রাত কী অবাধ্য যন্ত্রণায় কাটাচ্ছি তা শুধু আমি জানি।”

তারাফ উদাস গলায় বলল—

“অনুশোচনা মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় সাজা।আই উইশ আপনার সাজা অতি দ্রুত তার সমাপন ঘটাবে।”

আজরাহান বিগলিত হাসলো।ধরা গলায় বলল—

“আদৌ আমার ডিঙি নৌকা আমাকে ক্ষমা করবে কি না আমি জানি না।
জানেন গত দুই সপ্তাহ ওকে আমি এক পলকের জন্য দেখতে পারিনি।ঘন্টা পর ঘন্টা ড্রয়িং রুমে বসে ছিলাম।যদি একবার ওকে এক পলকের জন্য দেখতে পাই!কিন্তু আমার রেড রোজ আর কখনো তার সৌরভ আমার গায়ে মাখতে আসবে না।আমি তো পশু।একটা নিকৃষ্ট জানোয়ার।আমি আসলেই ওকে ডিজার্ব করি না।”

আজরাহান এর গলা ধরে আসে।অক্ষিপল্লব ভারী হয়ে আসে নোনতা জলে।নাহ,সে কাঁদছে না।পশুদের কাঁদতে নেই।কারণ তা দেখার জন্য কেউ থাকে না।তারাফ নীরস গলায় বলল–

“আপনারা সুখতারার জন্য যা করেছেন ওর বাবা মাও তা করেনি।”

আজরাহান চোখ তুলে তাকায়।প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টি তার।অপ্রতিভ হয়ে তারাফ আবার বলল—

“কাউকে নিঃশ্বাস নিতে বলে যদি তার হৃদপিন্ড টা তার কাছ থেকে কেড়ে নেন তাহলে সে বাঁচবে কী করে!
পাখিকে উড়তে বলে যদি তার ডানা দুটো কেটে নেন তাহলে সে উড়বে কী করে মি.আজরাহান!
আমার সুখতারা কে আপনি ভালোবেসেছেন তার বিনিময়ে তাকে পেতে চেয়েছেন।
ভুলে গেলেন ভালোবাসা নিঃস্বার্থ।পন্যের বিনিময় হয়।ভালোবাসার নয়।ভালোবাসা অব্যক্ত অনুভুতি।তাকে অনুভব করতে হয়।জোর করে সব পাওয়া যায়।ভালোবাসা নয়।”

আজরাহান এর নাকের পাটা তার ঘন নিঃশ্বাসের সাথে বাড়ছে কমছে।চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।ফর্সা মুখ লালীমা ধারণ করেছে।ঠোঁট কামড়ে নিজের কষ্টগুলো দমানোর চেষ্টায় ব্যস্ত আজরাহান।কিন্তু সামনে বসা মানুষটা অতিমাত্রায় বিচক্ষন।তার চোখ এড়ানো দায়।তারাফ নির্মল হাসে।ম্লান গলায় বলল–

“আপনি শুধু সুখতারার উপরের প্রানোচ্ছল,উচ্ছ্বসিত,ফুলে ফুলে উড়া রঙিন প্রজাপতি টাকে ভালোবেসেছেন।ওর ভিতরে জমে থাকা পাহাড়সম কষ্ট আর হিমালয়ের মতো জমা বিষাক্ত অনুভুতিকে বুঝতে চান নি।নিজেকে ওর কাছে সপে দিয়েছেন শুধু ওকে পাবার জন্য নাকী ওর ভালোবাসা!

আজরাহান দাঁতে দাঁত চেপে ধরে অধর ছড়িয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে।বুকের ভেতরে আস্ত এক উত্তাল ঢেউ যেনো ওর পাজরের হাড়গুলো ভেঙে দিচ্ছে।কেউ যেনো ওর হৃদপিন্ডের উপর পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে।শ্বাস নিতে পারছে না সে।ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে গহীন অন্ধকারে।তার লিটল হার্ট কী তার হার্টের বিট হবে!

তারাফ গুঢ় দৃষ্টিতে দেখছে আজরাহান কে।ওর মনে চলা উথাল পাতাল ঢেউ এর প্রতিক্রিয়া যতই গোপন করার চেষ্টা করুক না কেনো তা ওর চোখে মুখে স্পষ্ট।সরস গলায় তারাফ বলল—

“আমি আপনার বন্ধুর সাথেও দেখা করেছি।তাকে দেখে অন্য মানুষ মনে হলো।হি ইজ আ গ্রেট ম্যান।জানেন সে কী বলেছে?
সে বলেছে আমার সুখতারার জন্য আপনার চেয়ে বেস্ট আর কেউ হবে না।
না বেটার না গুড।ইউ আর বেস্ট ফর হার।
যার আপনার সম্পর্কে এতো ভালো ধারণা তার সম্পর্কে আপনার এতো নিচু ধারণা কেনো?
শুধুই কী মিস সানায়া?
আই ডোন্ট থিংক সো।বাট,আই রিয়েলাইজ ইউ আর সাচ আ গুড ম্যান।
আমার সুখতারা আপনার কাছে ভালো থাকবে।কী করে বুঝলাম বলেন তো?

তারাফ থামলো।তার অধর জুড়ে রহসময়ী হাসি।আজরাহান শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তার ঠোঁট দুটো কাঁপছে।শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রতঙ্গ নাড়া দিয়ে উঠছে।

তারাফ স্নিগ্ধ কন্ঠে বলল–

“মারশিয়াদ বিয়ে করেছে।এখন তো আর কোনো সংশয় নেই আপনার!
আমার সুখতারা জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করেছে।আপন মানুষগুলো থেকে জীবনের সবচেয়ে বড় ধোঁকা খেয়েছে।আর তাই আপনার নির্মল ভালোবাসা আঁকড়ে বাঁচতে চেয়েছে সে।কতোবার বললাম চল আমার সাথে।বলল,আমার রাহান আমাকে ভালোবাসে।খুব ভালোবাসে।সে আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না।আমিও না।”

আজরাহান এর চোখ দিয়ে উপচে উঠে বেপরোয়া ঢেউ।টেবিলে হাত রেখে তার উপর মাথা রেখে চোখের জল বিসর্জন দিতে থাকে।সে চায়না এই জল কেউ দেখুক।কেঁপে কেঁপে উঠে আজরাহান এর শরীর।পুরুষ মানুষদের চোখের জল ফেলতেও কতো বাঁধা।

তারাফ ছোট্ট নিঃশ্বাস টেনে নেয়।শান্ত ও স্বাভাবিক গলায় বলল—

“ওর অতীত থেকে ওকে বের করে আনুন মি.আজরাহান।ওকে প্রান ভরে শ্বাস নিতে দিন।বাঁচতে দিন ওকে।ও অনেক ছোট।কিন্তু এই ছোট্ট জীবনে ও যা সয়েছে তা সবাই পারে না।হয়তো আপনারা ছিলেন বলেই পেরেছে।
আপনি ওকে ওর বিষাক্ত অতীত থেকে বের করে আনুন।আর যদি না হয় আমাকে দিয়ে দিন।আমি ওকে নিয়ে এখান থেকে অনেক দুরে চলে যাবো।”

তারাফ নম্র গলায় বলল–

“মি.আজরাহান আর ইউ অলরাইট?

আজরাহান সোজা হয়ে বসে।অবিচলিত গলায় বলল–

“ইয়েস আই এম ফাইন।”

তারাফ প্রসন্ন হাসে।চোখে তার উজ্জ্বলতা।অতি স্বাভাবিক গলায় বলল—

” আমার ভরসা আছে আপনার উপর।
আজ আসি তাহলে।বেস্ট অফ লাক।”

আজরাহান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।তারাফ চলে যায়।বিক্ষিপ্তচিত্তে বসে আছে আজরাহান।কেনো যেনো সবকিছু এলোমেলো মনে হচ্ছে।যদি টাইম মেশিন থাকতো তাহলে সে সত্যিই সময়কে পিছিয়ে দিতো।তার রেড রোজ কে সে হারাতে পারে না।এই জন্মেও না।পরবর্তী শত জনমেও না।যদি সত্যিই পুনর্জন্ম থাকে তাহলে প্রতি জনমে সে তার রেড রোজকেই নিজের করে চায়।সে আর কোনো ভুল করতে চায় না।শুধু ভালোবাসতে চায়।
,
,
,

রাতের আঁধার ঘনিয়েছে অনেকক্ষন।আজরাহান এর হৃদয়ের চাপা আর্তনাদ শোনার কেউ নেই।বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের বিশলতার মাঝে তার জৌলুশ নিয়ে বসে থাকা ওই চাঁদকে দেখছে আজরাহান।কিন্তু তার চাঁদের আলো আজ ম্রিয়মান।
রাত প্রায় এগারোটা।বাসার সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।নরম পায়ে নিচে নেমে আসে আজরাহান।আলতো হাতে করাঘাত করে প্রহর এর দরজায়।একটু আগেই শুয়েছিলো প্রহর।চোখে এখনো ঘুম আসেনি।আসবে কী করে!
ঝড় তো তার মনেও চলছে।অসহিষ্ণু ঝড়।
আওয়াজ শুনেই চকিতে ঘড়ির দিকে তাকায় প্রহর।এতো রাতে কে আসতে পারে!
একরাশ দ্বিধা নিয়েও সরল মনে দরজা খুলে প্রহর।আজরাহান কে দেখেই আৎকে উঠা গলায় বলল–

” আপনি?

আজারাহান ব্যস্ত পায়ে ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়।প্রহর এর বুক ধড়ফড় করে উঠে।আজরাহান এর দিকে ক্ষীন চোখে তাকিয়ে আছে।শ্বাস ঘন হতে থাকে প্রহর এর।অস্বাভাবিক গতিতে উঠানামা করতে থাকে প্রহর এর বুক।পুরো শরীর ভয়ে কাঁপতে থাকে।কম্পনরত গলায় হালকা আওয়াজ এ বলল—

“আআপনিইইই কেএনোয় এসেএছেন এখখানে?চলে যানননন।”

আজরাহান গভীর গলায় বলল–

“আমার কথা শোন প্রহর,প্লিজ।”

“নাআআ।
আপনিই চলেএএ যাননন।”

” একবার শোন আমার কথা।”

প্রহর ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে।দম বন্ধ হয়ে আসছে ওর।ভয়ে গলা শুকিয়ে আছে।আজরাহান এর চোখ দেখে আরো ভয় পেয়ে যায় প্রহর।ভয়ার্ত সে চোখ।নাহ, এই চোখ সে দেখবে না আর।
জোরে জোরে দম ফেলতে ফেলতে শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে নেয় জিহ্বা দিয়ে।একটু শান্ত হয়ে সাহস সঞ্চার করে হালকা উঁচু গলায় বলল–

“আমি কিন্তু ছোট মা কে ডাকবো।আপনি যান এখান থেকে।”

আজরাহান ব্যগ্র গলায় বলল–

“প্লিজ রেড রোজ আমার কথা শোন।”

প্রহর তেতে উঠা গলায় বলল–

“একদম আমার কাছে আসবেন না।আমি আপনার রেড রোজ নই।কেউ না আমি আপনার।চলে যান এখান থেকে।চলে যান।”

আজরাহান আর পারছে না।এর চেয়ে বেশি আওয়াজ হলে বাড়ির সবাই চলে আসবে।বাধ্য হয়ে হাওয়ার বেগে প্রহর এর কাছে এসে দু হাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে আজরাহান।প্রহর এর অধর পুরে নেয় নিজের ওষ্ঠদ্বয়ে।শুষে নিতে থাকে প্রহর এর সকল রাগ,ভয়,দ্বিধা,জড়তা।
প্রহর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে।আজরাহান ওর হাতের বাঁধন আরো শক্ত করে।মিশিয়ে নেয় প্রহর কে একদম নিজের সাথে।প্রহর দুই হাত দিয়ে আজরাহান কে ইচ্ছেমতো ধাক্কা মেরে যাচ্ছে।যতক্ষন না পর্যন্ত প্রহর নিজেকে সংযত করছে আজরাহান ওকে জড়িয়ে রাখে নিজের সাথে।প্রায় মিনিট দশেক পর প্রহর স্থবির হয়।আজরাহান ধীরগতিতে প্রহর এর অধরযুগল ছেড়ে ওর কপালে কপাল ঠেকিয়ে আনম্র গলায় বলল—

“প্লিজ রেড রোজ একবার আমার কথা শোন।একটা সুযোগ দে আমাকে।প্লিজ রেড রোজ।”

প্রহর ঝমঝম করে অশ্রু ঝড়ায়।আজরাহান এর টি শার্ট খামচে ধরে ওর বুকের মধ্যে নিজের মাথা চেপে বলল—

“কেনো এমন করেন আপনারা?
কেনো এতো কষ্ট দেন আমাকে?আমি কী এতোই খারাপ!
কেনো এতো সন্দেহ করেন আমাকে!

আজরাহান আর্দ্রতা জড়ানো গলায় বলল—

“ক্ষমা করে দে আমাকে ডিঙি নৌকা।একটা সুযোগ দে আমাকে।আই প্রমিজ ইউ আর কখনো এমন করবো না।”

প্রহর এর কান্নার বেগ বাড়তে থাকে।আজরাহান ওকে কোমর ধরে একটু উঁচু করে নিয়ে বিছানায় বসায়।প্রহর এর সাথে একদম লাগোয়া হয়ে বসে আজরাহান।ওর গালে এক হাত দিয়ে গাঢ় গলায় বলল—

“আমি মানছি আমি ভুল করেছি।আই এম সরি লিটেল হার্ট।প্লিজ মাফ করে দে তোর রাহান ভাইয়া কে।
শেষবারের মতো ক্ষমা করে দে।”

আজরাহান প্রহর এর অশ্রুসজল চোখের জল শুঁষে নেয়।প্রহর ক্ষনে ক্ষনে কম্পন তুলে বুকে।আজরাহান প্রহর এর চোখে, মুখে,ঠোঁটে অনবরত চুমু খেতে থাকে।প্রহর অনুরণন করা ঠোঁটে নরম গলায় বলল–

“আপনি চলে যান রাহান ভাইয়া।আমি আপনার যোগ্য নই।”

“এভাবে বলিস না প্রহর।আমাকে এতোবড় সাজা দিস না।তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।
তুই জানিস, এই কয়কদিন আমি ঘুমাতে পারিনি।শুধু তোকে ভেবেছি।তোর গায়ের গন্ধ ছাড়া যে আমি মুক্ত নিঃশ্বাস নিতে পারিনা।তোকে না দেখলে যে আমার চোখের ক্লান্তি দুর হয় না।তোকে ছাড়া আমি মরে যাবো প্রহর একদম নিঃস্ব হয়ে যাবো।আমাকে নিঃশেষ করে দিসনা প্রহর।”

“কেনো পাগলামো করছেন আপনি!কেনো শুনছেন না আমার কথা!আমি আপনার রেড রোজ নই।আমি খুব খারাপ।খুব খারাপ।”

আজরাহান প্রহর কে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে।প্রহর এর বাড়ন্ত হৃদকম্পন শুনতে পায় আজরাহান।আজরাহান এর উষ্ণ ছোয়ায় গলতে থাকে প্রহর এর কষ্টের বরফ জমা হিমালয়।আজরাহান দৃঢ় গলায় বলল—

“আমি তোকে ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারি না প্রহর।আমাকে ক্ষমা করে দে।একবার নিজের করে নে আমাকে।আমি সারাজীবন তোকে আগলে রাখবো আমার ভালোবাসা দিয়ে।আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই তোর কাছে।”

নিজেকে আজরাহান এর কাছ থেকে সরিয়ে নেয় প্রহর।বিক্ষিপ্ত গলায় বলল—

“আমি আপনার কখনো হতে পারবো না রাহান ভাইয়া।আমাকে ভুলে যান আপনি।
আমি আপনার যোগ্য নই।”

আজরাহান তপ্ত গলায় বলল—

“এইসব কী বলছিস তুই!কেনো বলছিস!
প্লিজ এমন বলিস না।ফিরিয়ে দিস না আমাকে।”

আজরাহান আবারো প্রহর কে নিজের কাছে টেনে নেয়।প্রহর এর অধর সুধায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়।
আজরাহান কিছুতেই তার রেড রোজ কে হারাতে পারে না।কোনা কিছুর বিনিময়ে না।

চলবে,,,

(বিঃদ্রঃ
প্রহর আর আজরাহান এর মিল চান কারা😒😒😒😒)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here