অন্ধকার মানব পর্ব-২৪

0
662

#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্ব_২৪

লিখা✍️তাজরিয়ান খান তানভি

একটি রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে জাদ আর দ্বিধা।গত কয়েকদিনও একবারও বাড়ি থেকে বের হতে পারেনি।কিন্তু আজ ওর পাপা অফিস যাওয়ার পর মাম্মা কে বলে রিশাল এর সাথে বেরিয়েছে।সবচেয়ে বড় কথা পারিজা ইরাম বিনা সংকোচে জাদ আর দ্বিধা সম্পর্ক মেনে নিয়েছে।আর সে জাদ সম্পর্কে আগে থেকেই জানতো ঠিক দ্বিধার জন্মদিন থেকে।কারন রিশাল সেদিন তাকে সব জানিয়েছিল।আর তারপরে ওদের সাথে ঘটা সব ঘটনাই রিশাল পারিজা ইরাম কে জানায়।আর পারিজা ইরাম দ্বিধার জন্মের পরই বুঝতে তার মেয়ের জীবন অন্য সাধারণ মেয়ের জীবন থেকে আলাদা।

রেস্টুরেন্টের বাইরে থেকে সূর্যি মামার কিরন রেস্টুরেন্টের বেষ্টিত কাচ গলিয়ে জাদ এর মুখের উপর এসে পড়ছে যা একদমই ওর ভালো লাগছে না।কারন কিছু বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী ভ্যাম্পায়ার ছাড়া অন্য ভ্যাম্পায়ারদের সূর্যের রশ্মির সহন ক্ষমতা একদমই কম।আর জাদ সেই বিশেষ ক্ষমতাসমপন্ন।

দ্বিধার অগ্নি চোখ জাদ এর দিকে।রিপ্তির কাছে শুনেছে জাদ কয়েকদিন যাবৎ একটা মেয়েকে নিয়ে রোজ ভার্সিটি তে আসে।

“কি ভাবেন আপনি নিজেকে?লজ্জা করে না গার্লফ্রেন্ড থাকা সত্বেও অন্য মেয়েদের সাথে ইটিশ পিটিশ করতে?

জাদ ওর অধরে হাসি ফুটিয়ে বলে–
“সুধানিধী,আজকাল আপনি এইসব কি ধরনের ভাষা ব্যবহার করেন।”

“ভাষা মাই ফুট।এতো লুচু কেনো আপনি?

রিশাল দ্বিধার কথা শুনে হতবাক।বাকিরাও হা করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।

“আস্তে বলুন।এইটা তো আর আপনার বাসা নয়।”

“আগে বলুন ওই মেয়েটা কোথায়?

ঠিক এইসময় পিছন থেকে একটা মিষ্টি কন্ঠ ভেসে আসে।
“তুমি কি আমাকে খুজছো?

দ্বিধা আর রিশাল চেয়ার থেকে উঠে পিছন ফিরে তাকায়।ব্রাউন কার্লি চুল,চোখ দুটো একদম নীলনয়না,গায়ের রঙ একদম ফর্সা,পরনে একটা গাঢ় মেরুন রঙের টপস আর কালো জিন্সের সাথে হাই হিল।যেনো কোনো বিদেশী মডেল।মেয়েটা কে দেখে দ্বিধার মুখটা একদম চুপসে যায়।মেয়েটার সৌন্দর্যের একআনাও তো ওর মধ্যে নেই।

মেয়েটা একটু হেটে সামনে আসে ঠিক যেমন মডেল রা হাটে ওভাবে।

হাত টা দ্বিধার দিকে বাড়িয়ে বলে–
“হাই,,আই অ্যাম ইশায়া।”

দ্বিধাও হাত বাড়িয়ে করমর্দন করে।
“আমি দ্বিধা।”

“আই নো।'”
দ্বিধা অবাক চোখে তাকায়।ইশায়া ওর সামনে থেকে এসে জাদ এর হাত নিজের হাতের মুঠে নিয়ে বলে–
“হি ইজ মাই ফিয়ন্সি”।
দ্বিধা ভ্রু কুচকায়।বলে কি এই মেয়ে।

“মানে?

“জাদ তুমি নবনীযুক্তা কে বলোনি যে আমাদের এংগেজমেন্ট হয়ে গেছে?

ইশায়া আবার দ্বিধার দিকে তাকিয়ে বলে–
“ও হয়তো ভুলে গেছে।এখন তো জানলে।”

জাদ ইশায়া কে বলে–
“এইসব বলার কোনো মানে হয় না।”

“হয়তো জাদ।নবনীযুক্তার জানা উচিত সে যেনো তোমাকে নিয়ে কোনো দুঃস্বপ্ন না দেখে।”

দ্বিধা ছলছল চোখে জাদ এর দিকে তাকিয়ে আছে।
“উনি কি সত্যি বলছে??

“জ্বি।

“তাহলে আপনি আমাকে আগে কেনো বলেন নি?

“প্রয়োজন ছিলো না।?

দ্বিধা এবার ওর গলার স্বর উচু করে বলে–
“তাহলে কিসের প্রয়োজন ছিল আপনার।এতো নাটকের কি দরকার ছিল?

“আপনি এখন বাসায় যান।”

“আমি জাহান্নামে যাবো তাতে আপনার কোনো সমস্যা?

হঠাৎ করে দ্বিধা জাদ এর বা হাত থেকে ইশায়া আর ওর এংগেজমেন্ট এর আংটি টা খুলে ফেলে দেয়।

ইশায়া রেগে ওকে চড় মারতে গেলেই জাদ ওর হাত ধরে ফেলে-
“ডোন্ট টাচ হার।”

দ্বিধা এখনো রাগে ফুসছে।সাথে ইশায়াও দ্বিধাকে কষে এক থাপ্পড় না দিতে পারার কষ্টে ফুসতে থাকে।ও গিয়ে আংটি টা খুজতে থাকে।জাদ দ্বিধার দিকে মুখ এগিয়ে বলে–

“এখন খুশি তো?

দ্বিধা দু হাত দিয়ে জাদ এর বুকে জোরে ধাক্কা মারে।
“আপনি একটা ইডিয়েট,একটা মিচকা শয়তান।
চলো রিশাল।”

জাদ এখনও হাসছে।
“আপনি পারেনও বটে।”
ইশায়া আংটি টা হাতে নিয়ে এক দৃষ্টিতে দেখছে জাদ এর দিকে।জাদ হাসছে,ঠিক ৫০০বছর আগে যেমন হাসতো!!
.
.
.
.
বিছানা হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে রিশাল।

“কি ভাবছো স্পাইসি?

“কিছু না।”

“তুমি যাই বলো মেয়েটা কিন্তু সেই।”

“আচ্ছা!!!তাই নাকি তাহলে এখানে শুয়ে আছো কেনো ওর গলায় গিয়ে ঝুলে পড়ো।”

দ্বিধা বিরক্তি নিয়ে বললো।
“তুমি রেগে যাচ্ছো কেনো?আমি কি তাই বলেছি নাকি।
আর ওর তো জাদ এর সাথে বিয়ে ঠিক হয়েই আছে।ভালোই হলো,,আমার রাস্তা একদম পুরোপুরি ক্লিয়ার।”

দ্বিধা বসা থেকে উঠে রিশালের বুকে ইচ্ছেমতো কিল ঘুসি মারতে মারতে বলল–
“ক্লিয়ার না,,,দেখাচ্ছি ক্লিয়ার।”

হঠাৎ করে দ্বিধা একদম রিশাল এর বুকের উপর পরে যায়।রিশাল কিছু না ভেবেই ওকে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে।

দ্বিধা কিছুক্ষন নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে।
“রিশাল কি করছো?
ছাড়ো বলছি।”

দ্বিধার প্রতিটি নিঃশ্বাস রিশাল কে ছুয়ে যাচ্ছ।এতো কাছ থেকে ও আগে কখনো দ্বিধাকে দেখিনি।ওর মনে হচ্ছে যদি সত্যিই ওর কাছে টাইম মেশিন থাকতো তাহলে সময় কে আজ ও এখানেই থামিয়ে দিতো চিরকাল এর জন্য যেনো ওর স্পাইসি সারাজীবন এভাবেই ওর বুকের মাঝে থাকে।

দ্বিধা আবার কিছুক্ষন নড়াচড়া করে বলল–
“রিশাল ছাড়ো বলছি।”

“যদি না ছাড়ি?

“ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”

“তোমাকে ছাড়া তো আমি এমনিতেও ভালো থাকবো না।পারো না একটু ভালবাসতে আমাকে?
দ্বিধা বুঝতে পারছে অবস্থা বেগতিক।ও ওর সমস্ত শক্তি দিয়ে বিছানায় দু হাতে ভর দিয়ে রিশাল এর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।

“তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?

দ্বিধার ঝাড়িতে ওর ধ্যান ফিরে আসে।
“সরি,সরি স্পাইসি।আসলে তোমাকে এতো কাছে এর আগে কখনো দেখিনি তো।”

“ইটস ওকে।এখন তুমি যাও।”

“তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো?

“বলো।”

“ইশায়া তোমাকে নবনীযুক্তা কেনো বলল??

“জানিনা।”

“তুমি কি সত্যিই জানো না?

“আমার পুরো নাম দ্বিধা নবনীযুক্তা।”

“মানে???
তোমাদের সারনেম তো ইরাম তাহলে তোমার নাম নবনীযুক্তা কেনো??

“সেটা তুমি পাপা কে জিঙ্গেস করো।এখন যাও এখান থেকে।”

দ্বিধা রিশাল এর পিঠে ঠেলে ওকে বের করে দেয়।
দরজায় পিঠ চাপিয়ে একটা বড় নিঃশ্বাস ছাড়ে।আর বলে–এই ছেলে আস্ত একটা পাগল।
.
.
.
.
“ওর সামনে এইসব বলার কোনো প্রয়োজন ছিল না।”

ইশায়া চিৎকার দিয়ে বলে—
“কেনো?তোমার প্রেমে বাধা পড়বে তাই?

“ইশায়া,,, যা জানো না তা নিয়ে কথা বলবে না।”

“আমি কি কিছুই বুঝিনা।তুমি ধীরে ধীরে নবনীযুক্তার প্রতি অ্যাট্রাক্টেড হয়ে পড়ছো?

“জাস্ট শাট আপ ইশায়া।”

আইভান ওদের কে বলে—
“বাচ্ছাদের মতো কি শুরু করলে তোমরা?

ফ্রিদা নিজের ছেলেকে শান্ত হতে বললেন।
“জাদ,,বিহেভ ইউর সেল্ফ।তুমি এভাবে কেনো কথা বলছো ইশায়ার সাথে?

“মম,আই অ্যাম সরি।”

জাদ ইশায়ার দিকে তাকিয়ে আবার বলল–
“তুমি কালই এখান থেকে চলে যাবে।”
বলেই সিড়ি বেয়ে উঠতে থাকে।

ইশায়া সেখানে উচু গলায় বলতে থাকে–
“কোথাও যাব না আমি।
কোথাও না।”

“ইশায়া,,কেনো পাগলামি করছো?

“আপনি জানেন না কেনো করছি??
নবনীযুক্তা হুবুহু মাহনুর এর মতো দেখতে।
আর,,,আজ এতোবছর পর আমি জাদ কে নিজের চোখে হাসতে দেখেছি।”

“ইশায়া শান্ত হও।”

“কি করে শান্ত হবো আনটি,,,আপনারা সব কিছু জেনেও কেনো ওকে ওর কাছে যেতে দিলেন??

“আমরা তো জানতাম না যে নবনীযুক্তা,মাহনুর এর মতো দেখতে।”

তৎক্ষণাৎ আইভান বলে–
“তোমাকে এইসব নিয়ে ভাবতে হবে না ইশায়া।জাদ ওর কাজ করছে।”

“আমি এতো কিছু জানি না।জাদ কে যদি আমি না পাই তাহলে আমি ওকে বলে দিবো মাহনুর কে কারা মেরেছে।”

আইভান তীক্ষ্ম কন্ঠে বলে–
“সত্যি জানলে জাদ তোমাকেও ছাড়বে না।”

ইশায়া বিদ্রুপের হাসি হাসে।
“জাদ কে ছাড়া আমি এমনিতেই মরে যাবো তার চেয়ে বরং ওর হাতেই আমার প্রান যাক।”
ইশায়া নিজের ঘরে চলে যায়।

“ফ্রিদা ইশায়া কে বোঝাও,এই মেয়েটা আবারও পাগলামি শুরু করেছে।ও যা শুরু করেছে জাদ এর মাথা আবারও বিগড়ে যাবে।”

“আই নো।ইশায়া এখানে থাকলে জাদ নবনীযুক্তার উপর কনসেন্ট্রেন্ট করতে পারবে না।”

“আমি বুঝি না মল্লিকাআলিয়া ওকে জন্মের পর কি খাইয়েছে যে এমন পাগল হয়ে গেছে এই মেয়ে।”

“তুমি যাই বলো আইভান,,এটাও সত্যি যে ইশায়া জাদ কে সত্যিই ভালোবাসে।”

“হুম,এটাই তো আমাদের সবচেয়ে বড় সুযোগ।ওকে বিয়ে করলেই তো আমাদের জাদ ভ্যাম্পায়ার কিংডমের রাজা হবে।”

“তোমার কি মনে হয়,জাদ ইশায়া কে বিয়ে করবে?
আইভান একটা কাজ করলে হয় না নবনীযুক্তার কাজ শেষ হলে আমরা ওর সাথে জাদ এর বিয়ে,,,

“তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? কোন মানুষের সাথে ভ্যাম্পায়ার এর সম্পর্ক আমাদের জাতী মেনে নিবে না।আর সেটা কেনো তুমি তা ভালো করেই জানো।তাই এইসব ভাবনার কোনো মানে হয় না।নবনীযুক্তা বাচবে না।”

ফ্রিদা মনে মনে বলে,,জাদ তা হতে দিবে না আইভান।ও নবনীযুক্তাকে মাহনুর এর জায়গায় বসিয়েছে।এইবার তোমাদের হারতে হবে,ওর ভালোবাসার কাছে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here