আলোয় অন্ধকার পর্ব-২০

0
1969

#আলোয়_অন্ধকার 🍁
#Roja_islam
#part 20
ডেনিয়াল নিজের পছন্দ মতো ফ্লেবার এর আইসক্রিম নিলো কারণ টিয়ার পছন্দ জানা নেই তার! বিল পে করে আইসক্রিম নিয়ে আসার সময় রেস্টুরেন্ট এর একটি টেবিলে কায়রাকে দেখলো মনে হলো ডেনিয়ালের। তাই দাঁড়িয়ে পড়লো সে তারপর কি ভেবে দ্রুত পিছনে তাকায় ডেনিয়াল! কিন্তু কই টেবিলটা এখন ফাঁকা…এই মাত্রতো দেখলো সে? ঐটা কে ছিলো তবে! কায়্রাই বা কিভাবে আসবে এখানে ঐদিন তো নিজেই মারলো তাকে! ডেনিয়াল বিড়বিড় করে বললো,
— হোয়াট দ্যা হ্যাল ইজ দিস!

ডেনিয়ালের কিছু একটা ঠিক মনে হলো না! তিড়িৎ গতিতে মাথায় এলো টিয়াকে একা রেখে এসেছে সে! গাড়ীটাও লক করা নয়! ডেনিয়াল বিড়বিড় করে বললো,
— শীট!!

ডেনিয়াল দ্রুত পায়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরুলো! এবং গাড়ীর কাছে গেলো! গিয়ে যা দেখার তাই দেখলো! টিয়ার সীটের পাশের দরজাটা খোলা! ডেনিয়াল হুংকার দিয়ে হাতের আইসক্রিম গুলো ফেলে দিলো! ডেনিয়াল এর মাথায় তিন টা জিনিস এলো! টিয়া হয় পালিয়েছে না হয় স্তব্ধ…. আর এখন তার জ্যাককে কল দিতে হবে! ডেনিয়াল তাই করলো জ্যাককে কল লাগিয়ে গিয়ে গাড়ীতে বসলো ডেনিয়াল!

জ্যাক কল পিক করেই বললো,
— এনিথিং রঙ স্যার?

ডেনিয়াল শুদ্ধ আমেরিকান ভাষায় বললো,
— মিস টিয়া! পালিয়েছে! যেখান থেকে পারো ওকে আমার সামনে চাই!

বলেই ডেনিয়াল কল কেটে দিলো! স্টেয়ারিং দুই হাতে শক্ত করে ধরে বসে আছে ডেনিয়াল! গায়ের জোরে শ্বাস নিচ্ছে সে বুঝাই যাচ্ছে কতটা রেগে সে! এদিকে জ্যাক মাথায় হাত দিয়ে বসে সোফায়! টিয়ার ভাষ্যমতে কালো পতাকার মতো লোকটাও চড়চড় করে ঘামছে কালো লোকটাও ভয়ে লাল হয়ে গেছে! সামনে কি হবে সে নিশ্চয় মরবে?? ভেবেই কায়রাকে কল দিলো সে দ্রুত!

কায়্রা ফোন পিক করে হ্যালো বলতে পারলো না! তার আগেই জ্যাক আমেরিকার কিছু গালি দিলো তাকে! তারপর চেঁচিয়ে বললো,
— হাউ ড্যায়ার ইউ! হাউ?? কি করে করলে এটা তুমি আমি তোমায় বাঁচিয়েছিলাম আর তুমি? আমার মৃত্যু ডেকে আনলে!

কায়রা জ্যাক এর গালী খেয়ে হজম করে রাগের সাথে হাসি মিলিয়ে বললো,
— যেই মেয়ের জন্য ডেনিয়াল আমার মারতে বসেছিলো তাকে তো ওর থেকে দূর করতেই হতো! আর তুমি এমনি এমনি বাঁচাও নি ফুল নাইট ইঞ্জয় করেছো! তোমার সাহস হলো কি করে আমার দিকে নজর দাওয়ার! ঐদিন বিপদে পড়ে তোমার কথা রাখতে বাধ্য হয়েছি! কিন্তু তুনি ভাবলে কি করে আমি তোমায় ছেড়ে দিবো তোমার শাস্তি হচ্ছে ডেনিয়াল এর হাতে তোমার মৃত্যু বায়!

জ্যাক চেঁচিয়ে উঠলো তার ভারী মোটা গলায় বললো,
— তুমি কান খুলে শুনে রাখো ঐ মেয়ের উপর যদি ডেনিয়াল গ্লোবার এর নজর পড়েই থাকে তাহলে ডেনিয়াল তাকে যেকোন মূল্যে খুঁজে বের করবেই। রইলো কথা আমার মৃত্যুর শোনে রাখো তাহলে তুমিও মরবে! চাঁদে লুকিয়ে থাকলেও ডেনিয়াল মারবে তোমায় এবার আর হয়তো বাঁচবে না তুমি! যে লোক টিয়ার ব্যাপারে সামান্য জবাব চাওয়ায় তোমায় মারতে গিয়েছে! সে যদি জানতে পারে তুমি টিয়াকে পালাতে হেল্প করেছো তাহলে কি হবে ভেবে দেখেছো?? কি ভাবে মারবে তোমায় সেটা ভাবতেই…. আমার ভয় করছে কিন্তু! টিয়া কোথা….!

কায়রা বড়সড় ঢোগ গিললো তার গলা শুকিয়ে গেছে! ডেনিয়াল যে জ্যাক এর বলা বিবরণ এর থেকেও জঘন্য কাজ করবে তার সাথে তাতে সন্দেহ রাখেনা সে। তাই দ্রুত ফোন কেটে দিলো সে মৃত্যুর ভয় ঢুকেছে তার মনে! সে পালাবে এখান থেকে! আমেরিকা থাকবেই না সে ডেনিয়াল জেনো খুঁজেও তাকে না পায়! ভেবেই ফোন বেডে ফেলে কাবার্ড থেকে কাপড় বের করে লাগেজ এর ঢুকাতে লাগলো কায়রা! জ্যাক কায়রা ফোন কেটে দিয়েছে দেখে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়! তার মাথা কাজ করছেনা টিয়াকে কি করে ডেনিয়ালের সামনে আনবে সে?

এদিকে ডেনিয়ালের ঐখানে বেশীক্ষণ থাকা সম্ভব নয় তার শত্রুর অভাব নেই! তাই সে কার স্টার্ট দিলো বাড়ীর উদ্দেশ্য! রাগে ডেনিয়ালের ফর্সা মুখ লাল টকটকে মরিচের মতো লাল হয়ে গেছে! সে খুব স্পীডে ড্রাইভ করে বাড়ী এলো! এসেই হলে বসে সার্ভেন্টকে বললো তাকে ড্রিংক্স দিতে! ডেনিয়াল সোফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে ক্রমাগত পা নাড়িয়ে যাচ্ছে সে! এটা এক প্রকার রাগ কমানোর চেষ্টা যাকে বসে! ডেনিয়ালের দৃষ্টি তার হাতে একটা হলুদ রঙা কাগজের নোট সেখানে গোটাগোটা হাতে আমেরিকান ভাষায় লিখা,
— আমার জিনিস আমি নিয়ে যাচ্ছি পিছু নিও না নিলে! এবার আর তোমায় ছাড়বো না!

ডেনিয়াল এই নোট এর মানে বুঝতে চেষ্টা করছে! কিছুক্ষণ ভাবার পড় সে তার ঈগল মার্কা বাঁকা হাসি দিয়ে নিজেও বিড়বিড় করে বললো,
— হুম জিনিস? দেখা যাক সেটার কি হয়!

সার্ভেন্ট ডিংক্স সাজিয়ে ট্রেতে করে ডেনিয়ালের সামনে রাখতেই। চকচকে একটি গ্লাসে ডেনিয়াল উইস্কি ঢেলে খেতে লাগলো!
ডেনিয়ালের একটু আগের সব রাগ জেনো চলে গিয়েছে! সে দুই হাত সোয়ার কাধের উপড়ে ছড়িয়ে দিলো মাথাও সোফায় ছেড়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই টিয়ার মুখটা দেখতে পেলো…..

টিয়ার জ্ঞান ফিরতেই চোখ খুলে সে সব অন্ধকার দেখতে পেলো তার মুখে কালো টুপির মতো দেওয়া পুড়ো মুখ গলা অবধি ডাকা টিয়া। উঠে বসতে চেষ্টা করেই বুঝতে পারলো! হাত পা এমনকি মুখটাও বাধা! তাই চেয়েও কথা বলতে পারছেনা টিয়া উম্ম উম্ম করে যাচ্ছে শুধু! টিয়া মনে মনে ভাবছে,
— ইয়া আল্লাহ আবার কি অবস্থায় ফেললে আমায়?? ডেনিয়াল কি আমায় গাড়ী থেকে নামতে দেখে ওভাবে গলা চেপে নিয়ে এসে এভাবে বেধে রেখেছে! উফফ কেনো নামতে গিয়েছিলি টিয়া তুই! স্তব্ধকে তো পেলিই না উল্টো এই সব শাস্তি আল্লাহ জানে ঐ ঈগল টা এভাবে কয়দিন রাখে আমায়। গট প্লিজ হেল্প প্লিজ..

টিয়া কিছুক্ষণ মুচরামুচরি করলো কিন্তু কিছুই করতে পারলো না! বরং হাতে প্রচুর ব্যাথা পেলো! তাই টিয়ার হাত মুখ বাধা থাকায় মনে মনে বকবক করতে করতে আবার এক সময় ঘুমিয়ে গেলো! সে আশেপাশের কিছুই দেখতে পেলো না! সে কোথায় আছে কি অবস্থায় আছে!

এদিকে পিউ এর গাঁ রাগে কাঁপছে আজ ৭দিন ৭দিন হলো আস্ফির কোনো খোঁজ নেই বললেই চলে একদম যেমন লা পাত্তা হয়ে গেছে আস্ফি ফোন সেই থেকে অফ আর অন একবারের জন্যও পাইনি পিউ। পিউ আবার গিয়েছিলো আস্ফিকে খুঁজতে স্তব্ধের বাড়ীতে কিন্তু কাক পক্ষী ও মনে হলোনা ঐবাড়ী আছে! মেই ডোরে বিশাল তালা ঝুলানো দেখে পিউ ফিরে এসেছে! পিউ বুঝলনা আস্ফি গায়াব স্তব্ধইবা কই?? আর আস্ফি সে নাকি ভালোবাসে তাকে তাহলে এ কেমন ভালোবাসা সামান্য কথায় একদম যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো তার সাথে এভাবে? এ কেমন ভালোবাসা আস্ফির? তাকে এভাবে কষ্ট কেনো দিচ্ছে সে? হ্যাঁ সেও কষ্ট দিয়েছে আস্ফিকে কিন্তু তখন তো পিউ আস্ফিকে ভালোবাসতোনা কিন্তু এখন তো বাসে আর তার যে খুব কষ্ট হচ্ছে কেনো বুঝতে পারছেনা আস্ফি একটি বার ফোন দিলেও তো পারে!

পিউ এর মনে রাগ, অভিমান, আর প্রচুর ক্ষোভ এর পাহাড় জমে গিয়েছে আস্ফির জন্য!

রাগ কারণ আস্ফি কিছুই বললো না তাকে! স্তব্ধ কে? সেই স্তব্ধের কি হয়? টিয়া কোথায়! টিয়ার মা বাবাকে পিউ প্রতিদিন গিয়ে খাইয়ে আসে ঐদিনের পড় থেকে। টিয়ার মা বাবার অবস্থা টিয়ার চিন্তায় ভালো না সে না গেলে তারা কিছুই খায়না দিন দিন ভেঙে পড়ছে তারা! আর আস্ফি কিছুই বললো না এই স্তব্ধের ব্যাপারে!

আর অভীমান পিউকে একটা ফোন নিদে খোঁজ না নেওয়ার! আর এসব এর থেকে মনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে পিউএর সে যদি এবার পায় আস্ফিকে তো বালাতকার করবে বালাতকার ! ঐ থ্রি ইডিয়ট মুভিতে যেমন আমির খান প্রিন্সিপাল এর বালাতকার করেছিলো। টিয়াও সেই ভাবে আস্ফির বালাতকার করবে!

পিউ মনে মনে আস্ফিকে পঁচা পানিতে চুবিয়েও মন মানলো না! আস্ফিকে তার সামনে চাই বুকে যে বড্ড যনত্রনা হচ্ছে! পিউ বেডে সোজা হয়ে শুয়ে এসব ভাবছিলো। এবার উলটো হয়ে বালিশে মুখ গুঁজে পিউ ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো। খুব কান্না পাচ্ছে পিউ এর খুব কষ্ট হচ্ছে!

টিয়ার ঘুম ভাঙতেই উঠে বসে হাই তুলতে তুলতে! কিন্তু দুই হাত তুলেও সাথে সাথে নামিয়ে নেয় সে! হাতে প্রচুর ব্যাথা! টিয়া ব্যাথায় আহ করে আর্তনাদ করে উঠে! এবার উঠে দাঁড়াতে নিলে বুঝতে পারে! সারা শরীর খুব ব্যাথা হয়ে আছে। হাতে পায়ে ধরে দেখে! দড়ি দিয়ে বাধার কারণে রক্ত জমাট বেধে সেগুলো ব্যাথা হয়ে আছে! টিয়া আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়িয়ে আশেপাশে দেখে টিয়া বুঝলো এটা একটি বিশাল মার্সটার বেড রুম টিয়া বোধ হত রুমটাতেই ক্রাশ খেলো! এবার টিয়া হেটে হেটে রুম টা দেখতে লাগলো!

ডেনিয়াল তাকে এই নিয়ে তিনটা বাড়ীতে রেখেছে! তিনটা রুমি টিয়ার খুব পছন্দ হয়েছে! একদম ফাইভস্টার হটেলের মতো সব গুলা রুম ছিলো! শুধু ঐ কালো রুম টা বাদদিয়ে ওটা টিয়ার জন্য জাহান্নাম ছিলো! কতটা ছটফট টিয়া করেছে ঐ রুম থেকে বেরুতে সেটা সেই শুধু জানে! দুই দিন ঐ রুমে থেকে তার ২০০ দিন লেগেছে! টিয়া এবার একটা বিশাল আয়নার সামনে দাঁড়ালো!

টিয়া তার গলায়, নিজের পায়ে, হাতে লাল রক্ত জমাট বাধার দাগ দেখতে পেলো! নিজের গলায় হাত দিয়ে একটু ছুঁয়ে দিয়ে নিজেই ওহ করে উঠে চোখ বন্ধ করে। যেই আবার চোখ খুলে আয়নায় তাকায় টিয়া আকস্মিক হয়ে বিস্মিত হয়ে আয়নায় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়! টিয়া যেনো মূর্তি হয়ে গেছে পেছনের ব্যাক্তিটিকে দেখে!

পেছনে স্তব্ধ দাঁড়িয়ে আছে ঘাড় এক্টু বাঁকা করে তার দিকেই তাকিয়ে! পড়নের হোয়াইট শার্ট আর শর্ট জিন্স পড়া হাটু অব্ধি! পড়নের শার্টটার হাতা কুনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা! শার্টের সব গুলা বুতাম খোলা! লোম হীন বুক এর এক্টু নিচের সিক্স প্যাক গুলাও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে! মাথা ভর্তি সিল্কি চুল গুলো কপালে পড়ে আছে! চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে অনেক দিন পড় শান্তির ঘুম ঘুমিয়েছে একদম ফ্রেস লাগছে দেখতে!

টিয়া স্তব্ধকে আয়নায় খুঁটিয়ে নাটিয়ে দেখে টিয়া হাসলো একটু এই ভেবে যে সে আবারো স্বপ্ন দেখছে কারণ কিছুক্ষণ আগে স্বপ্নে এই ছাড়ুকে দেখেই টিয়ার এতো শাস্তি পেতে হলো কেনো সে নেমেছিলো গাড়ী থেকে! ভেবেই আবার নিজের হাতের দিকে তাকালো ইশশ কি খারাপ অবস্থা বজ্জাত ডেনিয়াল কত জোরেই না হাত দুইটা বেধেছে তার…. এই টুকু ভাবতেই নিজের ঘাড়ে কাউর শীতল হাতের স্পর্শ পেলো টিয়া। টিয়া এবার আয়নায় তাকালোনা আয়নায় তো স্বপ্ন দেখে তাই টিয়া ভয়ে ভয়ে পিছনে ফিরলো কিন্তু আবারো স্তব্ধকেই দেখতে পেলো! মানে সত্যি স্তব্ধ তার সামনে?

স্তব্ধ টিয়ার অবাক হওয়ার দিকে লখ্য না করে! নিজের চুল গুলো হাত দিয়ে একটু ঠিক করে নিজের হাত উঠিয়ে! টিয়ার ঘারে আবার মলম ছোঁয়াতেই টিয়া ভীষণ শক পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে স্তব্ধের বুকে লুটিয়ে পড়লো। স্তব্ধ দ্রুত টিয়াকে নিজের এক হাত পেঁচিয়ে ধরে রাখলো নিজের বুকে! না হলে টিয়া পড়ে যাবে!

স্তব্ধ টিয়ার বন্ধ চোখের দিকে একবার তাকিয়ে স্তব্ধ নিজের হাতের মলম টা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে টিয়াকে দুইহাতে ঝাপটে জরিয়ে ধরলো যেনো কতদিনের অবশান আজ ঘটেছে সে পেরেছে টিয়াকে ফিরিয়ে আনতে! স্তব্ধ এভাবে টিয়াকে জরিয়ে ধরে আছে যেমন নিজের ভেতর ঢুকিয়ে নেবে জরিয়ে ধরার তৃষ্ণা যেনো মেটারি নয়! স্তব্ধ বিড়বিড় করলো,
— ইয়ে ব্যাক্ত ইয়েহি রুক যায়ে…..

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here