আলোয় অন্ধকার পর্ব-১৯

0
1977

#আলোয়_অন্ধকার🍁
#Roja_islam
#part 19
ডেনিয়াল নিচে এসে অবাক হয়ে দেখে টিয়া হল রুমের সোফায় বসে আছে হাতে গান.. কিন্তু দৃষ্টি ডেনিয়াল এর দিকেই! ডেনিয়াল প্রথমে টিয়ার হাতে গান দেখে প্রচণ্ড ভয় পেলেও পরক্ষণেই মনে পড়লো টিয়া তো আর গান চালাতে জানে না! ডেনিয়াল স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে টিয়ার পাশে সোফায় গিয়ে বসলো। ডেনিয়াল বসতেই টিয়া বললো,

— খিদে পেয়েছে প্লিজ….

বলতে বলতেই টিয়া জ্ঞান হারিয়ে সোফায় পড়ে গেলো! ডেনিয়াল কোলে তুলে নিলো টিয়াকে। তারপর একটা রুমে নিয়ে শুইয়ে দিলো৷ ডক্টর ডাকলো ডেনিয়াল যদিও সে জানে টিয়া দুই দিন না খেয়ে ছিলো তাই এমন হয়েছে! ডক্টর এসে দেখে গেলো টিয়া প্রচুর দুর্বল। ডক্টর মেডেসিন দিয়ে গেলো। হাতের ব্যাথায় ব্যান্ডেজ করে দিয়ে গেলো!

বিকেলে…
সুপ হাতে ডেনিয়াল রুমে ঢুকে দেখে টিয়া বসে আছে বেডে আধশোয়া হয়ে। ডেনিয়াল টিয়ার হাতে সুপের বাটি ধরিয়ে দিয়ে বললো,
— খেয়ে নাও এনার্জি দরকার তোমার! থাপ্পড় মারার পানিশমেন্টের জন্য তৈরী হও!

টিয়া ভদ্র মেয়ের মতো মাথা দুলিয়ে সুন্দর করে বসে খাওয়া শুরু করলো! ডেনিয়াল অবাক হলো টিয়ার বিহেভিয়ারে সে ভেবেছিলো টিয়া কিছুবলবে তাকে..ডেনিয়াল সোফায় বসে টিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। টিয়া খাচ্ছে যদিও ভেজিটেবল সুপ! আর টিয়ার ভেজি সুপ একটুও পছন্দ নয় তাও আজ খাচ্ছে! আজ মনে হয় যা পাবে তাই খাবে সে এমন ভাবে খাচ্ছে! তবে টিয়া খাচ্ছে সুপ ঠিকি ভাবছে অন্য কিছু। এই মুহূর্তে মায়ের হাতের চিংড়ি মাছের ঝোল খাচ্ছে তাই ভাবচ্ছে টিয়া! টিয়ার মার কথা মনে পড়তেই আর খেলো না টিয়া রেখে দিলো পাশের টেবিলে সুপের বাটিটা! টিয়া নিশব্দে কাঁদছে! চোখের পানি বারবার মুছে ফেলছে তাও গাল চোখের পানিতে ভিজে যাচ্ছে!

ডেনিয়াল টিয়ার মনের গহীনে কি চলছে বুঝতে না পারলেও৷ টিয়া যখন খাচ্ছিলো ডেনিয়াল দেখতে পায় টিয়ার হাত প্রচণ্ড কাপছিলো যার ফলস্বরূপ টিয়া খেতেই পারছিলো না ঠিক করে!একটু খাচ্ছিলো বাকিটা পড়েই যাচ্ছিলো বাটিতে যেজন্য টিয়া কাদছে ভেবে ডেনিয়ালের খুব খারাপ লাগছে! মেয়েটা খিদের চোটে খেতে পারছেনা বুঝে! সে উঠে টিয়ার পাশে গিয়ে বসে টিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ মুছে দিলো! তারপর নিজেই সুপের ভাটি হাতে নিয়ে। নিজেই টিয়াকে খাইয়ে দিতে লাগলো৷ টিয়া আর কিছু বললো না। কাদতে কাদতে খেলো!

আরো দুইদিন চলে গেলো! টিয়ার এই দুইদিন খুব যত্ন নেয় ডেনিয়াল! খাওয়া দাওয়া, ঘুম সব কিছুর! আপাদত টিয়া নিজেকে একটু সুস্থ বোধ করছে! ডেনিয়াল টিয়ার সাথে টুকটাক কথা বলার চেষ্টা করেছে দুদিনে! কিন্তু পারেনি! কারণ রুম বন্দী রাখার পড় থেকে টিয়া আরো ভয় পায় ডেনিয়ালকে! টিয়া দূরে দূরে থাকতে চায় ডেনিয়ালের থেকে!

সন্ধ্যায় টিয়া বারান্দায় সোফায় বসে আছে। নখ কামড়াচ্ছে আর ভাবছে! ডেনিয়াল এর ঐদিনের কথায় টিয়া ভেবেছিলো স্তব্ধ এসেছে তাকে বাঁচাতে আমেরিকা! কিন্তু কই তার কাছেতো এখনো আসেনি স্তব্ধ! কবে যাবে সে বাড়ী এখান থেকে? আর যে ভালো লাগেনা এখনে থাকতে! কতদিন বাবা মাকে দেখা হয়না কতদিন ভার্সিটি যাওয়া হয় না। পিউ আস্ফির ঝগড়া দেখা হয়না। আরাফের সাথে আড্ডা দেওয়া হয় না রাতে…

টিয়া যখন নখ কামড়ে এসব ভাবতে ব্যস্ত তখন ডেনিয়াল এসে বসে টিয়ার পাশে টিয়ার সে দিকে কোন খেয়াল নেই সে তার ভাবনায় ব্যস্ত! ডেনিয়াল টিয়ার নখ কামড়ানো দেখে নাক মুখ কুচকে বললো,

— তোমার ফেভারিট খাবার কি নখ?? এভাবে নখ কামড়াচ্ছো কেনো?

টিয়া অন্যমনস্ক হয়ে বলে ফেললো,
— নখ নয় আইসক্রিম…

ডেনিয়াল দেখলো টিয়া এখনো অন্যদিকেই তাকিয়ে কথাটা বলেছে। ডেনিয়াল এবার ধমক দিয়ে বললো,
— তুমি কি ভাবছো??

ধমকে টিয়া সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে পড়লো। ডেনিয়ালকে দেখে আমতা আমতা করে বললো,
— ক..কই কিচু ন..না তো!! আপনি কখন এলেন এখানে?

ডেনিয়াল রেগে বললো,
— এখুনি! কেনো তোমায় বলে আসতে হবে??

টিয়ার দ্রুত জবাব,
— নো নো.. সরি আমি দেখিনি আপনাকে তাই আর কি…

ডেনিয়াল বললো,
— সীট!!

টিয়া কথা না বেরিয়ে বসলো! ডেনিয়াল আবার বললো,
— তাহলে তোমার ফেভারিট খাবার আইসক্রিম??

টিয়া মাথা নাড়িয়ে বললো,
— নো ফুচকা!!

ডেনিয়াল ভ্রু কুঁচকে বললো,
— এটা আবার কি?

টিয়া ডেনিয়াল এর কথায় অবাক হলো। বলে কি এই ছেলে ফুচকা চিনেনা? এই খাবার কে না চিনে এমন এলিয়ে আদো আছে? তারপর টিয়ার মাথায় এলো এটা তো আমেরিকা। আর ডেনিয়াল আমেরিকান একটা ছেলে সে কি করে ফুচকা চিনবে? এসব ভেবে টিয়া বললো,
— আপনি চিনবেন না! কারণ আমেরিকায় এই খাবার পাওয়া যায় না!,

ডেনিয়াল নড়েচড়ে বসে বললো,
— এমন অদ্ভুত নামের খাবার না থাকাই ভালো! নাম টাই কেমন অদ্ভ! খেতে জানি কেমন হয় গড নোস!

টিয়া রেগে বললো,
— আপনি ফুচকা নামটা বলতে পারছেন না তাই অদ্ভুত লাগছে। কিন্তু খাবার টা খুবি মজা! আইসক্রিম থেকেও বেশী!

ডেনিয়াল কাধ ঝাকিয়ে বললো,
— যাই হোক তুমিতো এই অদ্ভুত নামের মজার খাবারটা আর খেতে পারবেনা!

টিয়া দ্রুত বললো,
— কেনো??

ডেনিয়াল টিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
— কারণ তুমি আর বিডিতে যেতে পারবে না তাই!

টিয়া অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো এই কথা শুনে টিয়ার চোখে পানি চলে এসেছে! গড়িয়ে পড়ার বাকি! ডেনিয়াল বুঝলো টিয়ার মন খারাপ হয়ে গেছে এই কথা শুনে তাই সে বললো,
— তুমি বাইরে গিয়ে আইসক্রিম খেতে চাও??

টিয়া অবাক হয়ে ডেনিয়ালের দিকে তাকালো,
— আপনি নিয়ে যাবেন বাইরে ??

ডেনিয়াল বাঁকা হেসে টিয়ার হাত ধরে উঠে হাটা দেয়! টিয়াকে সু পড়ে আসতে বলে ডেনিয়াল নিজের রুমে যায়। টিয়া হোয়াই জিন্স আর এশ কালার লুজ একটা টিশার্ট পড়ে ছিলো শুধু হোয়াই সু পড়ে টিয়া নিচে গেলো! ডেমিয়াল এখনো নিচে নামেনি! টিয়া উপরে তাকিয়ে ধাক্কা খেলো৷ ব্ল্যাক জিন্স আর ব্ল্যাক টিশার্ট এর উপর ব্ল্যাক জেকেটে ডেনিয়ালকে অসম্ভব হ্যান্ডসাম লাগছে! তার উপর সোনালী চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে যেটা হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে ডেনিয়াল নিচে নামছে! হঠাৎ টিয়া অন্যদিকে ফিরে যায় এই শয়তান ছেলেকে দেখার মানেই হয়না! ডেনিয়াল নিচে এসে টিয়ার হাত ধরে বাড়ী থেকে বেরুলো! তারপর টিয়াকে নিয়ে গাড়ীতে উঠে বসলো। আজ ডেনিয়াল কোন গার্ড নিলোনা সাথে! জ্যাক যেতে চাইলে ডেনিয়াল বললো,
— আই ক্যান হেন্ডেল জ্যাক!

জ্যাক আর কিছু বললো না। গাড়ী স্টার্ট দিলো! টিয়া তো চুপ থাকতে পারেনা টিয়া সামনে তাকিয়েই হঠাৎ বলে উঠে,
— আমি যদি পালিয়ে যাই তো??

ডেনিয়াল টিয়ার কথাটা শুনেই গাড়ী চালানোর স্পীড বাড়িয়ে দিলো স্পীডে ড্রাইভ করতে করতেই বললো,
— যেখানেই পালাবে বের করে নিজের কাছে এনে..!

টিয়া ভয়ে ভয়ে বললো,
— এনে?

ডেনিয়াল টিয়ার দিকে ভীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
— এনে নিজ হাতে মারবো! ইয়েস আই উইল কিল ইউ! যেভাবে প্রতিদিন একটা মেয়েকে মারি ঠিক সে ভাবে!

টিয়া প্রচুর ভয় পেলো ঘাম ছুটে গেছে তার। মানে কি? প্রতিদিন ডেনিয়াল একটা মেয়ে মারে?? এটা যেনো হজম হচ্ছেনা টিয়ার ভাবতেই বুক ধুকপুক করছে একটা খুনির সাথে সে এতদিন ছিলো। কিছুক্ষণ পর কি ভেবে টিয়া ভয়ে ভয়ে হাল্কা হেসে বললো,
— আমি পালাবো না ! তাই মিথ্যা বলে আমায় ভয় দেখাতে হবে না!

ডেনিয়াল জানালার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো! যা টিয়ার চোখ এড়ায়নি৷ এই ঈগলের বাঁকা হাসি! বড্ড বিপদ জনক লাগে টিয়ার! টিয়া আর কিছু বললো না কপালের ঘাম মুছে টিয়া জালানার দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে গেলো মুহূর্তে। সাথে সাথে পাশ ফিরে ডেনিয়ালের দিকে তাকালো টিয়া! না ড্রাইভিং এই মন ডেনিয়াল এর৷ টিয়া দ্রুত আবার জানালার দিকে তাকালো! কিছুই দেখতে পেলোনা! টিয়া দুই হাত জানালার গ্লাসে রেখে আশে পাশে দেখলো। কই গেলো গাড়ীটা?? এখুনিতো দেখেছিলো স্তব্ধ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে খুব জোরে একটা কালো কার ড্রাইভ করছিলো! টিয়া ছটফট করতে লাগলো দেখার জন্য আবার গাড়ীটা! এটা সত্যি স্তব্ধ ছিলো….

ডেনিয়াল টিয়ার ছটফট দেখে বললো,
— আর ইউ ওকে মিস??

টিয়া ডেনিয়াল এর স্বরে ঠাণ্ডা পাথরে পরিনত হলো চুপ করে বসে রইলো ভয়ে ৷ তবে ঠাণ্ডা বরফ যেমন গলে গলে একদুফোটা করে পানি পড়ে। তেমনি টিয়ার শরীর থেকে ঘাম ঝড়ছে! টিয়ার ভয়ে বুক ঢিপঢিপ করছে! সে যা দেখলো তা কি সত্যি দেখলো না কল্পনা বুঝতে পারছেনা টিয়া। তবে এটা বুঝতে পারছে ডেনিয়ালের সামনে এই মুহুর্তে স্তব্ধ খানের নাম কিছুতেই নেওয়া যাবেনা! টিয়া প্রে করছে যেনো এটা স্তব্ধই হয়! সে যেনো এই ঈগল এর হাত থেকে বাঁচতে পারে কিন্তু টিয়া তখনো জানেনা তার কপালে আরও দুঃখ আছে!

ডেনিয়াল যায়গা মত এসে গাড়ী থামিয়ে টিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো ঘেমে গেছে টিয়া! এসি গাড়ীতেও ঘামছে কেনো মেয়েটা?ভেবেই সে বলল,
— মিস আর ইউ ওকে?? ঘামছো কেনো এভাবে??

ভাবনায় থাকা টিয়া ভয়ে তুতলিয়ে গেলো ডেনিয়াল কে কি বলবে ভেবে,
— আ…সলে…

টিয়া চেয়েও কথা বলতে পারেনা! টিয়ার কেনো যেনো খুব ভয় করছে খুব ! টিয়ার এই অবস্থায় দেখে ডেনিয়াল কিছুই আচ করতে পারলোনা! টিয়া কিছু বলতে পারছেনা দেখে সে বললো,
— রিলাক্স তুমি গাড়ীতেই থাকো! আমি আইসক্রিম নিয়ে আসি খেলে হয় তো তোমার ভালো লাগবে!

টিয়া ডেনিয়াল এর কথায় শুধু মাথা দুলালো! ডেনিয়াল চলে গেলো! ভয়ে টিয়ার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে! ডেনিয়াল যেতেই টিয়া বড় বড় শ্বাস নিলো৷ টিয়ার এটা ভেবেই ভয় করছে! স্তব্ধ ডেনিয়াল এক সাথে হলে ঠিক কি হতে পারে! স্তব্ধকে তো সে আগেই চিনে! আর ডেনিয়ালকে যতটুকু টিয়া চিনেছে ডেনিয়াল খুবি ডেঞ্জারাস লোক যদি স্তব্ধের ক্ষতি করে দেয়!

এসব ভাবতে থাকা টিয়া গাড়ী থেকে নামলো কালো গাড়ীটা আশেপাশে আছে কি না দেখতে! একটু সামনেই একটা রেস্টুরেন্টে উপরে আইসক্রিম হাউজ লেখা টিয়া বুঝলো ডেনিয়াল সেখানেই আছে! টিয়া আশপাশে দেখলো! না কালো গাড়ীটা নেই! টিয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। কারণ টিয়া সেটা কল্পনাই ভেবে নিলো !

টিয়া এবার একটু নিঃশ্বাস নিয়ে ভাবলো গাড়ীতে বসে থাকাই ভালো যদি ডেনিয়াল বাইরে বেরুনোর জন্য আবার কিছু করে তাকে! এটা ভেবে টিয়া যেই আবার গাড়ীতে বসবে তখনি টিয়া বুঝলো কেউ পেছন থেকে টিয়ার গলা চেপে ধরেছে…

চলবে!
[ গাইছ কালকে পেইজের একটা কমেন্ট পড়লাম এক পাঠিকার! কমেন্টটা এমন ছিলো যে আমি নাকি অতান্ত! অহংকারী লেখিকা! তার এই কমেন্ট পড়ে আমার কোন খারাপ ভালো লাগেনি! এটা ভেবে যে সে আমায় চিনেই না যেহেতু কতকিছুই ভাবতে পারে তাই না? এই ভাবনা থেকেই একটা কথা মাথায় এলো! যেহেতু আমায় চিনে না জানেনা! আমায় তিনি অহংকারী কি ভেবে বললো৷ কালকের গল্পের শেষের নোট টুকু পড়ে? তো সেটা যে আমি মজা করে লিখেছি সেটা মেইবি সবাই বুঝেছো? না বুঝোনি? তো বলি যারা বুঝেছো বুঝেছো! যারা বুঝোনি বা আমার নোট পড়ে খারাপ লেগেছে তাদের কাছে দুঃখিত! এবং তোমাদের এটাও বলবো আমার কথা না বুঝলে বলবে। কিন্তু আমাকে না চিনে না যেনে জাচ করতে আসবে না! আমি কি সেটার উপাধি দিতে আসবেন না! কারণ এটা ঠিক নয়! অনেক কিছু বলে ফেললাম কাউর কাছে খারাপ লাগলে দুঃখিত ❤]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here