আলোয় অন্ধকার পর্ব-১৮

0
1893

#আলোয়_অন্ধকার🍁
#Roja_islam
#part 18
হঠাৎ স্তব্ধ ভ্রু কুঁচকে বললো,
— ডেনিয়াল গ্লোবার! সে মেয়েদের মারতে পছন্দ করে কেনো??

টনি কাধ ঝাকিয়ে বললো,
— শুধু মেয়েদের নয় সে নিজের সৎ বোনকে নিজে হাতে মেরেছে!! এবং প্রতিদিন তার বেড় পার্টনারকে সেনিজ হাতেই মারে!

স্তব্ধ টনির এই কথায় একটুও অবাক হলো না! স্তব্ধ চুপচাপ সামনে বোর্ডের দিকে তাকিয়ে ! সেটা দেখে টনির মাথায় বাজ পড়লো! সে স্তব্ধকে এই কথাটা বলতো না। বলেছে এটা বুঝাতে যে হয় তো ডেনিয়াল এতক্ষণে মেরেও ফেলেছে টিয়াকে! কিন্তু না স্তব্ধ কোন রিয়াক্টই করলোনা টনির কথার! হয়তো বুঝেনি তার কথা ভেবেই টনি দীর্ঘ শ্বাস ফেললো!

স্তব্ধ আর কিচ্ছু বললো না! রুম থেকে শান্ত ভাবে বেরিয়ে গেলো! তারপর বাড়ী থেকে গাড়ী নিয়ে কিছুক্ষণ এলোপাতাড়ি ড্রাইভ করে একটা বাড়ে গিয়ে বসে ডিংস্ক অর্ডার করে ডিংস্ক করতে লাগলো!

স্তব্ধ ওর মাথা কি চলছে বুঝার চেষ্টা করছে দূরে থেকে তাকিয়ে টনি! সে স্তব্ধের পিছু পিছু এসেছে! কারণ স্তব্ধকে এখন একদমি একা ছাড়া যাবে না! কিন্তু থেকেই বা লাভ টা কি? এই বান্দাকেতো টনি বুঝতেই পারছেনা। স্তব্ধ ঠিক করছেটাকি? টনির মাথায় কিছুই ঢুকছেনা সে আর না ভেবে! আস্তে আস্তে নিজেও একটা ডিংস্ক নিয়ে স্তব্ধের পাশে বসলো! স্তব্ধের তাতে হেলদোল নেই সে তার মত গটগট করে একের পড় এক ডিংস্ক করেই যাচ্ছে!

বারে যে যার মত হাসি তামাসায় মেতে আছে কাউর দিকে কাউর নজর নেই। একটু পড়ে স্তব্ধের চোখ যায়! তার পাশের টেবিলে একটা মেয়ে একা একা বসে গিলে যাচ্ছে ড্রিংস্ক। স্তব্ধ মেয়েটাকে ভালো করে দেখলোও না চোখ সরিয়ে নিলো। স্তব্ধ আবারও ড্রিংস্ক করতে মনোযোগ দিলো৷ টনিও আশেপাশে দেখছে! আশপাশে দেখছে বললে ভুল হবে সে সুন্দরী মেয়েদের দেখছে। স্তব্ধ সেটা বুঝতে পেরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে টনির দিকে তাকিয়ে আছে! টনি ঘাড় ঘুরাতেই স্তব্ধের চাহুনি দেখে ভয়ে উঠে বাড় থেকেই চলে গেলো কাশতে কাশতে! টনির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো স্তব্ধ তখনি পাশের টেবিলের মেয়েটা উঠে স্তব্ধের টেবিলে বসলো৷ তাতে স্তব্ধ সূক্ষ্মভাবে এক নজরে দেখলো মেয়েটিকে!

ধবধবে ফর্সা মেয়েটি, সোনালী কোকরানো চুল, চোখের মনি টাও কেমন ব্রাউন কালার!গোলাকার মুখমণ্ডল এর এই মেয়েটি! কালো একটি টপ্স পড়ে আছে! মেয়েটি কেমন ড্যাব ড্যাব করে স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে আছে হাসি মুখে! মেয়েটার এভাবে হাসি মুখে তাকিয়ে থাকতে দেখে স্তব্ধ উঠে বাড়ের অন্য দিকে চলে গেলো। মেয়েটি স্তব্ধের পেছন পেছন যাচ্ছে স্তব্ধ বুঝতে পারে তাই সে বিরক্ত হয়ে বাড়ের বাইরে চলে গেলো!

স্তব্ধ গটগট করে হেটে গাড়ীর কাছে যাচ্ছে! পেছন থেকে মেয়েটি চিৎকার শুনতে পাচ্ছে স্তব্ধ! কিন্তু সে গিয়ে গাড়ীতে বসে পড়ে সে বসতেই টনি গাড়ী স্টার্ট দিয়ে দেয়!

মেয়েটি তখনও চিৎকার করে বলছে,
— হে.. হই স্টোপ! হেই…! শাট! চলে গেলো?

মেয়েটি স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে ভাবছে এতো সুন্দরী একটা মেয়ে ছেলেটাকে ডাকলো। পেছন ফিরে তাকাবে দূর! একটু ফ্লাট ও করলো না! জীবনে প্রথম এমন অপমানিত হলো মেয়েটি! সে একটা ছেলেকে ডেকেছে আর ছেলেটা তার দিকে ফিরেও তাকালো না! যেখানে ছেলেরা তার সাথে কথা বলতে আসে সেখানে এই ছেলে…..

মেয়েটি মৃদু চিৎকার করে বললো,
— ড্যাম ইট!

বলেই সে আবার বাড়ে ঢুকে গেলো! স্তব্ধ চোখ বুঝে গাড়ীতে বসে আছে! টনি স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে বললো,
— আর ইউ ওকে স্যার!

স্তব্ধ উত্তর দিলো না কিছুক্ষণ পড় বললো,
— আমি তোমার ছোট আমায় স্যার বলবে না!

টনি কিছু বললোনা এই কথার উত্তরে কারণ টনি বুঝে গেছে বেশী কথা স্তব্ধ পছন্দ করে না৷ আর স্তব্ধ তার সাথে কিছু শেয়ারও করবেনা ইনফেক্ট কাউর সাথেই হয়তো করেনা! টনি সুন্দর ভাবে ড্রাইভ করে বাড়ী এসে গাড়ী থামাতেই স্তব্ধ বেরিয়ে উপরে নিজের রুমে চলে গেলো৷ কিছুক্ষণ একা একা বেডে বসে রইলো স্তব্ধ। বেশকিছু ক্ষণ কিছু একটা ভেবে ফোন বের করলো পকেট থেকে আস্ফিকে কল লাগালো স্তব্ধ! একবার রিং হতেই আস্ফি ফোন পিক করলো!

স্তব্ধ কিছু বলার আগেই আস্ফি বললো,
— হ্যালো ভাইয়া? তুমি ফোন দিলে তাহলে দুইদিন হয়ে গেলো৷ আর ইউ ওকে ভাই! ভালো আছো তো তুমি??

স্তব্ধ বোধ হয় আস্ফির মুখে এই কোথা গুলো শুনতেই ফোন দিয়েছিলো৷ স্তব্ধ চুপ করে আছে ফোন কানে রেখে। ঐদিকে আস্ফি ভাইয়ের গলা শুনতে না পেয়ে ছটফট করছে এটা সেটা বলছে!

— ভাই আর ইউ দ্যায়ার?? হ্যালো??

স্তব্ধ এবার দ্রুত জবাব দিলো,
— আমি ভালো আছি আস্ফি কাম ডাউন! তুই ঠিক আছিস? জেসিয়ার কোনও গুড নিউজ?

আস্ফি হতাশা ভরা কণ্ঠে বললো,
— নো ভাই জেসিয়া ঐ একি অবস্থা!! তুমি বলো টিয়া…..

আস্ফি বলার আগেই স্তব্ধ বললো,
— তুই জেসিয়ার খেয়াল রাখিস! আমি রাখছি!

আস্ফিকে কিছু বলতে না দিয়ে স্তব্ধ ফোন কেটে দিলো! হোয়াটসাপ এর গিয়ে বাবাকে ভিডিও কল দিলো! দুইবার দেওয়ার পড় কল রিসিভ হতেই স্তব্ধ বললো,

— বাবা পোর্টার কই ওকে দাও কথা বলবো!

কবির ছেলের কণ্ঠ শুনেই বুঝলো স্তব্ধের মন খারাপ৷ সে আর কথা না বাড়িয়ে দিচ্ছি বলে। পোর্টারকে ডাকলো জোরে কিছুবাদে পোর্টার লেজ নাড়িয়ে নাড়িয়ে রুমে ঢুকে কবিএ৷ পোর্টার এর সামনে ফোন ধরতেই পোর্টার ঘেউ ঘেউ করতে লাগলো স্তব্ধকে দেখে। স্তব্ধ শুধু দেখছে পোর্টারকে। স্তব্ধ কিছু বলছেনা দেখে পোর্টার ঘেউ ঘেউ বন্ধ করে কবির এর হাত থেকে ফোন কামড় দিয়ে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো! কবির ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে দেখলো পোর্টার এর যাওয়া।

কবির মনে মনে বললো,
— কুকুরের কথা বলতেও প্রাইভেসি চাই??

পোর্টাল অন্য একটি রুমে এসে ফোন ফ্লোরে রেখে সুন্দর করে পা গুটিয়ে বসে চেয়ে থাকে স্তব্ধের দিকে৷ স্তব্ধও এবার বললো,
— কেমন আছো পোর্টার??

পোর্টার উত্তরে ঘেউ ঘেউ করলো না৷ স্তব্ধ বুঝলো পোর্টার কথা বলবেনা! স্তব্ধ পোর্টারকে ভিডিও কলে রেখেই বেডের সাইডে ফনটা রাখলো৷ তারপর টিয়ার ফোন হাতে নিয়ে ওর পিক দেখে কিছুক্ষণ বেডে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

সকালে ঘুম ভাঙলো স্তব্ধের পোর্টারের ঘেউ ঘেউ ডাকে! স্তব্ধ ফোন হাতে নিয়ে বললো,
— থ্যাংক ইউ পোর্টার জাগিয়ে দেওয়ার জন্য! গুড মর্নিং!

পোর্টার উত্তরে ঘেউ ঘেউ করলো। স্তব্ধ বায় বলে কেটে দিয়ে উঠে ল্যাপটপ নিয়ে বসে কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করে কাকে যেনো কল দিলো!

টিয়ার ঘুম ভাঙতেই চোখ খুলে সব অন্ধকার দেখতে পেলো। অন্ধকার বললে ভুল হবে পুড়ো রুম জুড়ে কালো রঙ পেইন্ট করা ফ্লোরে উপর পাশের দিকে রুমে কোন আসবাবপত্র নেই একদম খালি রুম ! টিয়ার এসব দেখে।কালকের কথা মনে পড়তেই দ্রুত উঠে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলতে লাগলো টিয়া!

— ডেনিয়াল?? প্লিজ ওপেন দ্যা ডোর! আমি এই রুমে থাকতে পারবোনা মাথা ঘুরছে প্লিজ আমি আর কিছু বলবোনা শুধু এই রুম থেকে বের করুন প্লিজ??

অনেকক্ষণ ওয়েট করেও টিয়া কাউর শব্দ পেলোনা! এবার পিছন ফিরে তাকালো রুমের দিকে টিয়া। রুমে শুধু একটা নীল লাইট জ্বলছে আর বাকি সব কালো। টিয়ার মাথা ঘুরছে! কিন্তু টিয়া আর কাদলো না ভয় পেতে পেতে টিয়ার এখন কিছুই খারাপ লাগে না এতো। টিয়ার হাত, ঠোঁট ব্যাথা করছে কালকের ব্যাথা পাওয়ার জন্য! কাল গাড়ী থামতেই ডেনিয়াল টেনে হিঁচড়ে তাকে এই রুমে ফেলে যায়। আর খবর নেই। টিয়া রাতেও অনেক ডাকা ডাকি করেছে কেউ খুলেনি খাবার ও দেয়নি। টিয়ার এখন খুব খিদে পাচ্ছে৷ এবার টিয়া কাদতে লাগলো।

কাদতে কাদতেই টিয়া বলছে,
— স্তব্ধ কই আপনি? আর পারছিনা তো….

দুইদিন চলে গেলো টিয়া না রুম থেকে বেরুতে পেরেছে না রুমে কেউ এসেছে৷ টিয়া একি অবস্থায় ফ্লোরে কুকরিয়ে শুয়ে আছে!না খাওয়া না শাওয়ার কিছু করতে পারেনি সে! টিয়া বুঝতেও পারেনি সে কত সময় ধরে এই রুমে আছে অথচ দুইদিন চলে গেছে!

এদিকে ডেনিয়াল এর মাথা চটে আছে আজ তিন দিন! কারণ বিডিতে স্তব্ধকে পাওয়া যাচ্ছে না।ডেনিয়ালের প্রশ্ন তবে স্তব্ধ গেলো কই?? আমেরিকা এলেও তো এয়ারপোর্টে থেকে জানতে পারতো কিন্তু আসেনি স্তব্ধ এয়ারপোর্টে থেকে এটাই ইনফরমেশন পেয়েছে তার লোকেরা! ডেনিয়াল ধরতে চায় স্তব্ধকে! কিন্তু স্তব্ধের প্রফেশন, পাওয়ার কিছু সম্পর্কেই ডেনিয়াল এর ধারণা নেই। যে স্তব্ধ ঠিক কতটা লড়াই করার ক্ষমতা রাখে তার সাথে। তাই নিজেকেই বুঝতে পারছেনা ডেনিয়াল সে স্তব্ধের সাথে পারবে তো???

তবুও ব্যাপার টা কম বেশী পাওয়ার এর নয়। ব্যাপার টা এরকম৷ সে যদি নাই জানে তার শত্রুর ক্ষমতা কতদূর তাহলে নিজেকে শত্রুর থেকেও ভালোভাবে তৈরী করবে কিভাবে?

ডেনিয়াল নিজের রুম থেকে নিচে যাচ্ছিলো! স্মোক করতে করতে! টিয়ার রুমের দিকে চোখ পড়তেই।সিগারেট ফেলে আবার উপরে উঠে টিয়ার রুমের দিকে গেলো! টিয়ার রুমের দরজা খুলতেই দেখতে পেলো টিয়া একদম বিড়ালের বাচ্চাদের মতো গুটিসুটি মেরে ফ্লোরে শুয়ে আছে!ডেনিয়াল টিয়ার কাছে গিয়ে এক হাটু ফ্লোরে রেখে বসলো! টিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ! তারপর টিয়ার গালে হাত রাখতেই টিয়া উঠে বসে পড়ে হুরমুরি৷ ডেনিয়ালকে দেখে টিয়া দেয়ালের সাথে চেপে বসে করুন কণ্ঠে বললো,
— কিছু কথা বলার শাস্তি এতো জঘন্য ভাবে দিচ্ছেন??

ডেনিয়াল টিয়ার একদম কাছে গিয়ে বসে টিয়ার কাটা ঠোঁটের পাশে হাত দিয়ে স্লাইড করতে করতে বললো,
— বুঝালাম তোমায় বেশী কথা বলার ফল কতটা ভয়ংকর হতে পারে! নেক্সট টাইম আমার সাথে কথা বলার আগে কি বলছো ১০ বার ভাববে গট ইট?

কথা গুলো ডেনিয়াল টিয়ার ঠোঁটের দিকে তাকিয়েই বলছিলো কথা শেষ হতে… ডেনিয়াল টিয়ার ঠোঁটের দিকে নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিতেউ। টিয়া হঠাৎ আবারো ডেনিয়ালের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়! ডেনিয়াল মাথা নিচু করে চোয়াল শক্ত করে চোখ বন্ধ করে আছে হাত মুঠিব্ধ করে। টিয়া বুঝতে পারে সে আবারও ভুল করেছে।ভয়ে কাপতে কাপতে কেদে দেয় টিয়া৷ ভাবতেই টিয়ার গায়ে কাটা দিচ্ছে টিয়ার ঐদিনের মতন গলা চেয়ে ধরবে না তো ডেনিয়াল। ডেনিয়াল কিছু বলার আগেই! টিয়া উঠে দাড়িয়ে পড়ে। ডেনিয়াল তার রাগ কন্ট্রোল করতে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে তাতে টিয়ার ভয়ে দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো!

টিয়া বেরুতেই ডেনিয়াল উঠে দাড়িয়ে দেয়ালে একটা ঘুষি মারে। এক হাত দিয়ে মাথায় স্লাইড করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে গিয়ে এদিক ঐদিক তাকিয়ে ডেনিয়াল অবাক হয়ে যায়..

চলবে
[বড় করে লিখেছি 😋 তাও জানি বলবেন আপু 😭 ছোট হইছে বড় করে দিবেন 🌚 হ্যাঁ আগে দুই লাইন লিখতাম ভালো লাগতো এখন ৩ লাইন লিখি তাও বড় চাই 😐 এটাই পাঠক সমাজ একটু পেলে আর একটু খুজি 🐸। যাই হোক গঠন মূলক কমেন্ট করুন এতে নেক্সট পার্ট আরো সুন্দর হবে ❤ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here