আলোয় অন্ধকার পর্ব-২৫

0
1504

#আলোয়_অন্ধকার🍁
#Roja_islam
#part 25
সকালে টিয়ার ঘুম থেকে ভাঙতেই চোখ মেলে ভীষণ লেভেলের একটা ঝটকা খেলো। রসগোল্লার মতো চোখ বানিয়ে টিয়া সামনে ব্যাক্তির দিকে তাকিয়ে রইলো! ব্যাক্তিটি আর কেউনা স্তব্ধ! টিয়ার ঘাড়ে মুখ গুঁজে তাকে জরিয়ে ধরে স্তব্ধ শান্ত নিষ্পাপ বাচ্চার মতো ঘুমিয়ে আছে। টিয়ার হার্ডবিট মুহূর্তে দ্রুত গতিতে চলতে লাগলো। স্তব্ধে ভারী নিশ্বাস তার গলায় পড়ছে। তার উপর মাথাতেও সব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে টিয়ার। তাও টিয়া বুঝতে চেষ্টা করছে স্তব্ধ এখানে কেনো? স্বপ্ন দেখছে নিশ্চয়ই টিয়া? তা না হলে স্তব্ধকে নিজের এতো কাছে কোনদিন আবিষ্কার করবে টিয়া কল্পনাও করেনি? তাহলে সেটাই ডাইরেক্ট স্বপ্ন হয়ে গেলো কি করে?

টিয়া ভাবলো নড়লেচড়লে এই স্বপ্ন ভেঙে যাবে। কারণ সে আর স্তব্ধকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে চায়না! স্তব্ধের তো বৌ আছে! কিন্তু কালকে স্তব্ধ বললো তার বৌ থাকলে তাকে বিয়ে করতোনা তাহলে? ইশশ ভাবতে পারছেনা টিয়া! মাথা ফেটে যাচ্ছে! মনে হচ্ছে এতোসব ভেবে টিয়া মেন্টালি সিক হয়ে যাচ্ছে! এত এত কনফিউশান তাকে পাগল করে দিচ্ছে।

এতসব চিন্তা করতে থাকা টিয়ার নড়াচড়ায় স্তব্ধে অতিশান্তির ঘুমটা ভেঙে যায়। সে তড়িৎ গতিতে চোখ খুলতেই মুগ্ধ হয়ে যায় টিয়াকে দেখে ঘুম ঘুম চেহারা যেনো সদ্য ফোটা নিষ্পাপ ফুল! স্নিগ্ধ লাগছে টিয়াকে.. কিন্তু কাল রাতে টিয়ার অদ্ভুত বিহেভিয়ার করলো…..! কাল রাতের কথা ভেবতেই.. রাতের সব দৃশ্য স্তব্ধের চোখে স্পষ্ট ভেসে উঠে। আর দ্রুত স্তব্ধ এক লাফে বেড থেকে উঠে দাড়ায়!

এতক্ষণ টিয়া ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো স্তব্ধের খোলা চোখের দিকে চোখ বড়বড় করে৷ এবার স্তব্ধ উঠে দাড়াতেই টিয়া বুঝলো এটা স্বপ্ন নয় স্তব্ধ তার সাথে এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলো এটা চিরন্তর সত্যি। ভেবেই টিয়া নিজেও লাফ দিয়ে দাড়িয়ে পড়লো স্তব্ধের সামনে। আর দিলো এক চিৎকার৷

চিৎকার এতটা জোরেই দিয়েছে যে স্তব্ধ তার চোখ বন্ধ করে ফেলেছে বিরক্তিতে! এক হাত উঠিয়ে দুই আঙুলের সাহায্যে কপালে স্লাইড করতে থাকে স্তব্ধ তার বিরক্তি লাগছে সব এই মুহূর্তে। টিয়া চিৎকার করার পড়েও যখন দেখলো স্তব্ধ তার সামনেই এবার টিয়া শিওর হলো। এটা স্তব্ধই আর তাকে সত্যি জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিলো স্তব্ধ।

টিয়া রেগে বললো,
— আপনি এখানে কি করছেন?? আই মিন আমার রুমে??

কপাল থেকে হাত নামিয়ে স্তব্ধ এবার চোখ পাকিয়ে গরম চোখে তাকায় টিয়ার দিকে। একটা জোরে শ্বাস নিয়ে৷ টিয়ার সামনে আঙুল তুলে গম্ভীর গলায় হিসহিসিয়ে বলে উঠে,
— আজ থেকে তোমার এই রুম থেকে বেরুনো বন্ধ!

টিয়া স্তব্ধের গম্ভীর গলার স্বরে ভয় পেলেও রুম বন্ধি থাকতে হবে বলায় চুপ থাকতে পারলো না উত্তেজিত কণ্ঠে বললো,
— আমি রুম বন্দী কেনো থাকবো? আমি ভুল কিছু করিনি….আমি বাড়ী যাবো প্লিজ! আমায় নিয়ে চুলুন প্লিজ!

স্তব্ধের এবার কপালের রগ ফুলে উঠে টিয়ার বিহেভিয়ার এ। তীক্ষ্ণদৃষ্টি নিক্ষেপ করে টিয়ার একদম কাছে গিয়ে দাড়ালো সে। টিয়া কথা গুলো বলে মাথা নুইয়ে ছিলো। মাথা উপরে তুলে স্তব্ধকে এতটা কাছে দেখে টিয়া পিছিয়ে যেতে নিলেই স্তব্ধ টিয়ার দু বাহু চেয়ে ধরে শক্ত করে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,
— তুমি নিজের মর্জিতে আমার লাইফে এসেছো! এখন আমি যা বলবো তাই তোমায় করতে হবে তোমায়! তুমি বাধ্য করতে ফ্যামিলি ভুলে যাও। এন্ড আমার লাইফ থেকে যেতেও হবে আমার মর্জিতে! তাই বারবার বাড়ী যাবো বাড়ী যাবো আমার সামনে বলবা না! গট ইট?

কথাটা বলে স্তব্ধ আর এক মিনিট দাড়ায় না রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায়! রাতের কথা মনে পরতেই স্তব্ধের মাথা ঠিক নেই সে খুব বড় ভুল করেছে রাতে আবেগের বসে বিবেকও ভুলে গেছে সে৷ এরকম ভুল তার ধারা হয়েছে স্তব্ধ ভাবতে পারছেনা…

টিয়া নিস্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে! টিয়া বুঝলো না এতটা রাগার মতন সে কি করলো? সে তো কিছুই করেনি! বরং স্তব্ধ শুয়ে ছিলো তাকে জরিয়ে ধরে! তাহলে দোষ তো স্তব্ধের তাইনা? কিন্তু শান্তি কে পেলো সে! কেনো তাকে আবার রুম বন্দী থাকতে হবে? ফ্যামিলি ভুলতে হবে! সে ফ্যামিলি কি করে ভুলবে? এটা কখনও সম্ভব নয়৷ সে বাড়ী যেতে চায়… যেভাবেই হোক…. এসব ভেবতেই টিয়ার মাথা কেমন ঝিম মেরে গেলো। ঘুড়িয়ে উঠলো মাথা হঠাৎই। টিয়া মাথা দুই হাতে চেপে ধরে বললো,
— ইশশ মাথা ফেটে যাচ্ছে আমার। এতটা জঘন্য ফিলিং কেনো হচ্ছে? স্তব্ধ….

বলতে বলতে টিয়া বেডে শুয়ে পড়লো। নরম বেড টায় অনেকটা চেপে ঢুকে গেলো টিয়া.. স্তব্ধ তার বারান্দায় গিয়ে সোফায় ধুপ করে বসে পড়ে! রাতের স্তব্ধ আর সকালের স্তব্ধের থিংকিং গুলো মিলছে না। রাতে স্তব্ধের মনে হচ্ছিলো সময় টা থেমে যাক। চিরকাল এর জন্য থেমে যাক। সকালে স্তব্ধের মনে হচ্ছে সময়টা এসেছিলোই কেনো? সেই কিছু বছর আগে টিয়া তার লাইফে এসেই সব এলোমেলো করে দিয়েছিলো। সামলাতে পারেনি স্তব্ধ নিজেকে পিছলিয়ে গিয়েছিলো তার পাথর মন টিয়ার ভালোবাসার উপর। সেই পিছলিয়ে যাওয়ার জন্যই টিয়ার আজ এতটা বিপদ! নিজেকে শক্ত করেছিলো স্তব্ধ কিন্তু কাল রাতটা না এলেই পারতো নয়কি? টিয়া আর কতটা এলোমেলো করতে চায় স্তব্ধকে? ভবিষ্যতে কি হবে স্তব্ধ জানেনা কিন্তু স্তব্ধ দূরে থাকতেই চায় টিয়ার থেকে। এতেই টিয়ার ভালো! আর টিয়ার ভালোর জন্য স্তব্ধ সবকিছুই পারে, পারবে,পেরেছেও!

স্তব্ধের আকাশে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে! হয়তো মহান সৃষ্টি কর্তার নিকট তার চাওয়া…..। স্তব্ধের ফোনটা বেজে উঠে রুমে! স্তব্ধ দ্রুত উঠে দাড়ায় নিজেকে একটু শান্ত করে রুমে ঢুকে দরকারী কল ভেবে দ্রুত রিসিভ করতে যায়! বেড থেকে ফোন হাতে নিয়ে অবাক হয় স্তব্ধ।

একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসছে! স্তব্ধ ভাবছে স্ক্রিনে তাকিয়ে কিছু একটা! কল এসেই যাচ্ছে অনবরত! স্তব্ধ শেষে ফোন পিক করে কানে রাখে! কিন্তু সে নিশ্চুপ!

ঐপাশ থেকে একটা গম্ভীর ভারী গলা ভেসে আসে,
— আই নিড টিয়া … ২৪ ঘণ্টার মধ্যে… আদারওয়াইজ টনি মরবে!!

ডেনিয়াল কথাটা বলে অপেক্ষা করছিলো স্তব্ধ কিছু বলবে কিন্তু স্তব্ধ লাইন টা কাট করে দিয়েছে। মানে ডেনিয়ালের সাথে কথা বলতে স্তব্ধ ইচ্ছুক নয় অর প্রয়োজন বোধ করেনি? ভেবেই ডেনিয়াল তার হাতের ফোনটা গায়ের জোরে দূরে ছিঁটকে ফেলে দেয়৷ বিড়বিড় করে ডেনিয়াল,
— নাও আই ডেস্পারেটলি নিড মিস টিয়া..

ডেনিয়াল তার বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলো। পিছনে তার গার্ড। ডেনিয়াল তারদের কিছু বলে ফ্রেস হতে যায়। গার্ডরা চলে যায়৷

এদিকে ডেনিয়াল এর কথায়,
মুহুর্তে স্তব্ধের মাথায় ধাউধাউ করে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। ডেনিয়ালের কথায় যা বুঝার স্তব্ধ বুঝে গেছে টনির নাম শুনেই… স্তব্ধ ভীষণ রেগে থাই গ্লাসে একটা ঘুষি মারে শরীলের সব শক্তি দিয়ে। রাগে স্তব্ধ হাফসাফ করছে। নিজেকে সামলে … দ্রুত ফোন লাগায় কাউকে। সেই অবস্থাতেই বেরিয়ে যায় রুম থেকে। আঘাত পাওয়া হাত দিয়ে টপটপ করে কিছু তাজা রক্ত গড়িয়ে পড়ে স্তব্ধের হাত থেকে সে দিকে বিন্দু পরিমাণ খেয়াল নেই স্তব্ধের…!
.
.
আস্ফি চিন্তিত ও গম্ভীর মুখে কবির খানের রুমে ঢুকে! তার মাথায় ঢুকছে না কিছুই। সব দিক দিয়ে বাজে খবর আসছে শুধু। আর কবিরের কোন খবর নেই তাতে! আস্ফির রাগ জেনো থামছেইনা।

কবির পোর্টার এর সাথে কথা বলছিলো৷বেডে শুয়ে। আসলে কবির বলছে পোর্টার বিরক্ত হয়ে শুনছে কবিরের কথা। সেটা পোর্টার এর নুইয়ে রাখা মাথা দেখেই বুঝা যাচ্ছে! আস্ফি কবিরের রুমে ঢুকে এই সিন দেখে চেচিয়ে উঠে,
— কাবির সিং তুমি একটা কুকুর কে ডিস্টার্ব করছো বসে বসে?? তোমার ছেলে বিপদে কিছু করো! তা না কুকুর এর সাথে সময় নষ্ট করছো তুমি!! হাউ…..!

আস্ফি কথা সম্পূর্ণ করতে পারেনি।
পোর্টার এর শরীলে মনে হয় কেউ গরম পানি ছুঁড়ে মারলো! সে উঠে তীব্র গতিতে আস্ফির সামনে ঘেউ ঘেউ করতে লাগলো। আস্ফি বুঝলো সে ভুল কথা বলে ফেলেছে। রং জায়গায়। পোর্টারকে কেউ কুকুর ডাকলে সে রেগে যায়! আস্ফি দ্রুত ফ্লোরে বসে পোর্টারকে আদর করতে করতে বললো,
— সরি মাই বয়! সরি! ভুল হয়ে গেছে আর কখনো হবে না। ক্ষমা করে দাও!

পোর্টার ক্ষমা করলো বলে মনে হলো না। কিন্তু সে কিছুটা শান্ত হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো মুখটা কালো করে। তাতেই আস্ফি হাফ ছেড়ে বাচলো৷ কবির এর দিকে তাকিয়ে দেখলো। কবির এবার ফোনে গেমস খেলতে বিজি হয়ে গেছে! আস্ফি রেগে তেড়ে গেলো কবির এর সামনে। আস্ফি আবার বললো,
— কবির আমি তোমায় কিছু বলছি! ভাইয়া প্রবলেমে আছে….!

কবির এবার গেমস খেলতে খেলতেই বলে উঠে,
— স্তব্ধ আমার ছেলে। ওর কারোর প্রয়োজন নেই!

আস্ফির চিন্তিত কণ্ঠ,
— কবির এতটা ওভার কনফিডেন্স ভালো নয়। ডেনিয়াল গ্লোবার কে তুমি জানো?? তাহলে এগুলা কিভাবে বলছো??

কবিরের ডোন্ট কেয়ার ভাব জবাব,
— হ্যাঁ বলছি কারণ আমার চিন্তা নেই ওকে নিয়ে। আমি জানি স্তব্ধ পারবে.. সব পারবে৷ স্তব্ধ টিয়াকে নিয়েই ফিরবে দেখিস!

আস্ফি রেগে বললো,
— কবির….

কবির আস্ফিকে বলতে না দিয়ে ঝাড়ি দিয়ে বললো,
— আরে ছাড়তো! আমার তো তোকে নিয়ে চিন্তা হয়। গার্লফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে গিয়ে গার্লফ্রেন্ড এর ভয়ে মই দিয়ে পালাস! তোর কি হবে আস্ফি একটা মেয়েকে ভয় পাশ? ছিঃ তুই আমার ভাইয়ের ছেলে ভাবতেই লজ্জা করছে৷ যা নিজের টা ভাব ভাইয়ের চিন্তা বাদ দে!

আস্ফি কবিরের কথায় বোকা বনে গেলো। ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো কবিরের দিকে সে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। তার কি বলা বা করা উচিৎ বুঝতে পারছে না আস্ফি। তবে কবিরের এই কথায় সে লজ্জা পেয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। আস্ফি মনে মনে মুগ্ধকে ইচ্ছামত কিছু গালি দিলো। ঐ রাতের কথা কবিরকে বলে দেওয়ার জন্য।

বিড়বিড় করলো আস্ফি,
— শালা ইডিয়ট ছেলে হয়েও পেটে কিছুই থাকে না! আজ তোর খবর আছে মুগ্ধ!

কবির ফোন থেকে চোখ তুলে আস্ফির দিকে তাকিয়ে হাসলো একটু তারপর বললো,
— ওকে গালি দিয়ে কি হবে? তুমি নিজেই তোর গার্লফ্রেন্ড এর গালি….

আস্ফি আর এক সেকেন্ড দাড়ালো না কবিরের রুমে! কবির হাসিতে ফেটে পড়ল। আস্ফির ফেইস দেখে।

.
চলবে!
[গল্প লিখবো না আর এটা সত্যি। বাট আলোয় অন্ধকার শেষ করবো শিওর দিলাম। আপনাদের মন খারাপ ভালো লাগছেনা আমার ইনবক্সে অনেকে ইমোশনাল করে দিচ্ছে তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ৷ তবে ধৈর্য ধরে পড়বেন। দুই-তিন দিন পড় পড় গল্প দিবো! আর সঠিক সময়ে শেষ করে দিবো। এর বেশি আর কিছু বলার নেই। অনেক প্যারায় মধ্যে লেখা দ্রুতই শেষ করার চেষ্টা করবো গল্পটা😑 ধন্যবাদ এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য যে ত্যাড়া মাইয়াডা তার সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হয়েছে ❤ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here