আলোয় অন্ধকার পর্ব-৩০

0
1722

#আলোয়_অন্ধকার🍁
#Roja_islam
#part 30
মুখে উষ্ণ গরম নিশ্বাস বার বার পরায়। ঘুমের মধ্যেই অস্বস্তিকর বোধ করছে টিয়া। তার সাথে হাল্কা কপাল কুঁচকে যাচ্ছে, নড়াচড়াও ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এবার অসহ্যকর এবং অতিবিরক্ত হয়ে টিয়া টিপটিপ করে চোখ মেলে তাকালো। কিন্তু অদ্ভুত হলো। টিয়া চোখ বন্ধ অবস্থায় যেমন সব অন্ধকার ঘোলাটে দেখছিলো। ঠিক তেমনি চোখ মেলেও অন্ধকার’ই দেখছে সব। তাতে বেশ ভয়ও মনে উঁকি দিচ্ছে টিয়া’র। কারণ টিয়া অন্ধকার সহ্য করতে পারেনা। অন্ধকার টিয়া’র সব থেকে বড় শত্রু। দুর্বল শরীরে টিয়া ছটফট করতে গিয়েও পারছেনা তবে তার ভয় বারছে হাত-পা রীতিমতো কাঁপছে টিয়া’র। মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো।

–” স্তব্ধ..! ”

এতোক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে টিয়া’র প্রতিটা পদক্ষেপ দেখছিলো ডেনিয়াল। ডেনিয়ালের দৃষ্টি তীক্ষ্ণতায় ভরা হলেও। টিয়া’র ছটফট ভাব, কাঁপা কাঁপা ঠোঁট অন্ধাকেও বেশ তৃপ্তির সাথে মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করছিলো ডেনিয়াল৷ তার এটা ভেবে’ই কেমন ভালো লাগছে টিয়া তার হাজতে আছে। তার আয়াত্তে আছে এটা ভাবতে’ই ডেনিয়ালের ঠোঁটে কৃত্রিম বাঁকা হাসি ফুঁঠে উঠে। সবি ঠিক ছিলো কিন্তু টিয়া’র মুখে অস্ফুট স্বরে হলেও স্তব্ধ নাম’টা সহ্য হলোনা তার। চোয়াল শক্ত হয়ে কপালের রগ’টাও মুহূর্তে ফুলে উঠলো ডেনিয়ালের৷ সে টিয়া চোখ মেলতেই কিছু’টা দূরে গিয়ে বসে ছিলো বেডে। এবার সে উঠে একটা হিংস্রতায় ভরা হাসি দিয়ে ধীর পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। বাইরে দিয়ে দরজা লক করে।

এদিকে টিয়া’র ছটফট ভাব রীতিমতো বাড়ছে। কারণ চারদিকে অন্ধকার ঘোলাটে ছায়া নিতে পারছেনা টিয়া। কলিজা পর্যন্ত তার দুরুদুরু করছে ৷ উঠে বসার শক্তি টিয়া পাচ্ছেনা। এতোদিনের বিদ্ধস্ত জীবন পার করে কাল এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে টিয়ার সাথে সব মিলিয়ে টিয়া একদম ভেঙে পরেছে৷ যদিও এই মুহূর্তে টিয়া’র জীবন ঠিক কেমন তার আইডিয়াও নেই তবুও। তার শরীর তো সব যন্ত্রণা ভোগ করেছে। তাই শরীরেও সেই শক্তি অবশিষ্ট নেই কালকের ঘটনা’র পর অন্তত। টিয়া শুধু চোখ বন্ধ করছে আর খুলছে হাজার চেয়েও টিয়া উঠে একটু আলোর সন্ধান মিলাতে পারছেনা। এই মুহূর্তে টিয়া’র কিছু মনে পরছেনা শুধু এইটুকুই মাথায় আছে সে অন্ধকার নিতে পারছেনা তার আলো চাই৷ না হয় সে মরেই যাবে। টিয়া জানে আলো চাইলে তাকে উঠতে হবে। লাইট অন করতে হবে ম কিন্তু সেই শক্তি না থাকায় টিয়া কেঁদে উঠে চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। কাঁপতে কাঁপতে টিয়া কুকড়ে উঠে। টিয়া মা… বলে চিৎকার করে কেঁদে দেয়। টিয়া’র থেকে অসহায় এই মুহূর্তে কেও নেই। কেও না।

ডেনিয়াল টিয়া’র রুমের দরজায় পাশে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। টিয়া’র আর্তচিৎকার ডেনিয়াল এর মুখে কেমন প্রশান্তি’র হাসি ফুঁটিয়ে তুলছে৷ সেই হাসি মুখে রেখে ডেনিয়াল বিড়বিড় করলো,
–” তুমি স্তব্ধ’কে ভুলতে বাধ্য! আমি করবো তোমাকে বাধ্য! যেভাবেই হোক না কেনো.. তুমি ভুলবে স্তব্ধ’কে! আদার ওয়াইজ তোমাকে মার্ডার করতেও আমার হাত কাঁপবে না। মিস টিয়া…! ”

ডেনিয়াল এতোকিছু’র পরে ওভাবে’ই টিয়া’কে খালি, বদ্ধ, আলোহীন রুম টায় একা ফেলে চলে যায়। সে টিয়া’র সর্বস্ব কেরে নিয়েও তাকে শাস্তি দিচ্ছে স্তব্ধ নাম মাত্র উচ্চারণ করার। কি আছে টিয়া’র ভাগ্যে বাকি জীবন?

না চাইতেও আস্ফি’র চোখের কোণবেয়ে এক ফোটা পানি পরে যায়। পিউ এর কল দেখে। কেনো জেনো ভালো ঠেকছে না এই মুহূর্তে পিউ এর কল.. আস্ফি আর না ভেবে দ্রুত রিসিভ করে কলটা। আর সাথে সাথে’ই পিউ এর কড়া কণ্ঠ শুনতে পায় সে।

পিউ চিৎকার করে বলছে,
— ” আস্ফি টিয়া কোথায়?? তুই আমাকে বলেছিলি আস্ফি টিয়া ফিরে আসবে! কোথায় সে?? তুই বলেছিলি সব বলবি আমাকে সময় হলে। সেই সময় কি হয়নি এখনও?? আরে আস্ফি টিয়া’র মা এখানে হসপিটালে মরে যাচ্ছে মেয়ে করে। আঙ্কেল বুকে হাত দিয়ে বলে যে কোনও সময় খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে…..! ”

থেমে যায় পিউ বসে পরে হসপিটালের বারান্দায় থাকা চেয়ারে ফোন কানে রেখেই। হঠাৎ ‘ই শব্দ করে কেঁদে উঠে পিউ। সেই কান্না’র শব্দে আস্ফি চোখ খিঁচে হাত শক্ত করে মুঠিবদ্ধ করে রাখে। সে প্রিয়জদের এতো কষ্টে মেনে নিতে পারছে না। আবার চাইলে কিছু করতেও পারছে না..!

পিউ ধীর কণ্ঠে আবার বলে উঠে,
— ” আস্ফি?? প্লিজ কিছু একটা কর। দুদিন ধরে আন্টি শুধু টিয়া টিয়া করে যাচ্ছে পাগলের মতো করে যাচ্ছে। খাওয়ানো যাচ্ছেনা৷ এমনিতেই তাদের অবস্থা ভালো না। ওরা মরেই যাবে……..! ”

পিউ’কে তার কথা শেষ করতে না দিয়েই আস্ফি ধমকের স্বরে চিৎকার করে বলে উঠে,
— ” কিচ্ছু হবেনা অদের। টিয়া আসবে তুই অদের পাশে থাক শুধু। ”

বলেই আস্ফি ফোনটা ঠুস করে কেটে দেয়। আস্ফি ফোন কেটে দিয়েছে বুঝতে পেরে পিউ ব্যাস্ত হয়ে বলে উঠে,
— ” হ্ হ্যালো… হ্যালো আস্ফি…..! ”

টিয়া’র ভাই আরাফ পিউ এর কাধে হাত রেখে বলে উঠে,
— ” পিউ?? আর ইউ ওকে?? কার সাথে কথা বলেছো?? কাদছো কেনো এভাবে শব্দ করে ? ”

পিউ চমকে উঠে আরাফ এর কথায়। দ্রুত উঠে দাড়িয়ে বলেভ উঠে,
— ” আ্য’ম ওকে। একচুয়ালি আমার এক ফ্রেন্ড কে দুদিন ধরে ফোনে পাচ্ছিলাম না। আন্টি আঙ্কেল এর খবর’টা দিতে….. বাট ও কেটে দিলো তাই কান্না পাচ্ছে! ”

আরাফ ভ্রু কুঁচকে বললো,
— ” হোয়াট?? ও শুনেনি তাতে কাদতে হবে?? ”

পিউ আরাফ এর কথা শেষ হতেই বললো,
— ” আরাফ তুমিকি আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আমার কথা শুনছিলে?? আই মিন শুনেছো কিছু? ”

আরাফ পিউ এর থেকে এমন প্রশ্ন আশা করেনি এই মুহূর্তে। তবে সে কিছু একটা আঁচ করতে পেরে বললো,
— ” নাহ শুনি তো….! ”

পিউ ধীর কণ্ঠে বললো,
— ” অহ! ”

আরাফ এর কথায় পিউ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। সে চায়না আস্ফি’র ব্যাপারে আরাফ বা টিয়া’র ফ্যামিলি কেও জানুক। তাহলে আস্ফি ঝামেলায় পরতে পারে। পিউ যতক্ষণ আস্ফি তাকে সব খুলে বলছে৷ ততক্ষণ চুপচাপ থাকতে চায়। কারণ আর যাইহোক পিউ জানে আস্ফি বা স্তব্ধ টিয়া’র খারাপ কিছু করতে পারেনা! হাজার টা ভেবে আরাফ এর থেকে ভীত দৃষ্টি লুকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে পিউ দ্রুত ভিতরে যেতে নিলেই আরাফ বললো,
— ” তুমি কি কিছু লুকাচ্ছো আমাদের থেকে টিয়া’র ব্যাপারে? ”

পিউ যদিও আরাফ এর কথায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলো কিন্তু আরাফ এর এই প্রশ্নে পিউ এর হাত পা রীতিমতো কাঁপছে অজানা ভয়ে৷ পিউ স্ট্রেইট দাঁড়িয়ে’ই আছে নড়ছেনা। দেখে আরাফ পিউ এর কুনুই চেপে ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে নিচের দিকে। পিউ এর ভয়ে মুখ দিয়ে শব্দ উচ্চারণ হচ্ছে না। সে কিছু বলতেও পারছেনা আরাফ’কে! শুধু ভীত দিশাহীন ভাবে পা চালিয়ে যাচ্ছে এলোমেলো ভাবে আরাফ এর সাথে।

আমেরিকার সময়ে রাত ১২ টা বাজে। টিয়া সেই অন্ধকার রুমেই কাঁদতে কাঁদতে দূর্বলতায় ঘুমিয়ে পরেছিলো আবারও। ডেনিয়াল কিছু শপিং ব্যাগ হাতে রুমে ঢুকে৷ ব্যাগ গুলো কাবার্ডে রেখে। টিয়া’র দিকে গভীর ভাবে তাকায় বিদ্ধস্ততা টিয়া’র ছোট্ট মুখটায় ফুঁটে আছে। এক নজর যে কেও দেখলে বলবে টিয়া প্রচণ্ড রকম ক্লান্ত। ডেনিয়াল আস্তে ধীর পায়ে টিয়া’র পাশে বেডে গিয়ে বসলো৷ কিছুক্ষণ টিয়া’র ছোট্ট মুখটা প্রাণ ভরে দেখে৷ আলতো স্পর্শে টিয়া’র গালে হাত রাখলো সে৷ ধীরে ধীরে গালে স্লাইড করে। ঘুমে আচ্ছণ্ণ টিয়া’কে নিচু কণ্ঠে ডাকতে লাগলো সে,
— ” মিস টিয়া? মিস! ”

উঠবে দূর টিয়া সামান্য নড়ল ও না। একি ভাবে ঘুমিয়ে সে। ডেনিয়াল বুঝলো টিয়া’র ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। সে দেরি করলোনা৷ জ্যাক’কে ফোন করলো সে।

— ” ইয়েস স্যার? ”

শান্ত কণ্ঠে ডেনিয়ালের জবাব,
— ” ডক্টর পাঠাও আমার রুমে! কুইক। ”

জ্যাক দ্রুত বললো,
— ” ও.. ওকে স্যার! ”

ডেনিয়াল ফোন না কেটে কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যেই আবার বললো,
— ” আমার এন্ড মিস টিয়া’র বিয়ের ব্যাবস্থা করো যতদ্রুত সম্ভব। গট ইট? ”

জ্যাক বড়সড় একটা ঢোগ গিলে বললো,
— ” ইয়েস স্যার! ”

জ্যাক এর আর কিছু বললার সুযোগ কিংবা অবস্থায় রইলো না। একেতো ডেনিয়াল ফোন কেটে দিয়েছে। আর সে ডেনিয়াল টিয়া’কে বিয়ে করবে শুনে তার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছে। হবে নাই বা কেনো। যে ছেলে ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড করে মেয়েদের মেরে ফেলে সেই ছেলেই একটা মেয়ে’কে বিয়ের কথা বলছে? কিভাবে সম্ভব। আর এই মেন্টালি সিক আধপাগল ছেলেটার স্ত্রী হয়ে টিয়া’র কি অবস্থা হবে? তা ভাবতেই জ্যাক এর ঘাম ছুটছে কপাল বেয়ে এসি রুমের মধ্যেও..!

ডেনিয়াল একদৃষ্টিতে তাকিয়ে টিয়া’র দিকে বাঁকা হেসে বললো,
— ” ইউ হ্যাভ টু বি মাইন! ”

চলবে!

[ অনেক দিন পর লিখলাম। অবশ্যই আপনাদের মতামত আশা করছি৷ উৎসাহ দিয়ে পাশে থাকবে। আর হ্যাঁ ওয়েট করানোর জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ❤ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here