আলোয় অন্ধকার পর্ব-৪৪ শেষ পর্ব

0
4447

#আলোয়_অন্ধকার🍁
#Roja_islam
#part 44 (শেষ আংশ)

টিয়া স্তব্ধের বিস্ময় ডেনিয়াল চলে যাওয়ার ৫ মিনিট পরেও কাটেনি। ওরা ডেনিয়ালের যাওয়া দিকে তাকিয়ে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে রইলো! এক সময় ছোট্ট আরিয়ান স্তব্ধের কোলে ছোট্ট ছোট্ট হাত পা নাড়াচাড়া করতে শুরু করল এবং মুখে অদ্ভুত শব্দ করে পুচকের ঘুম ভেঙে গেছে জানান দিলে স্তব্ধের ধ্যান ভাঙে ডেনিয়ালের বিস্মিত কাণ্ড থেকে!

স্তব্ধ কখনওই আরিয়ানাকে প্রপারলি কোলে নিতে পারেনা! ছোট্ট আরিয়ানের হাত পা দেখলেই স্তব্ধ ওর ভয় করে কোলে নিতে, এত ছোট্ট ছোট্ট কোমল, নরম হাত পা ও ধরলে যদি ব্যাথা পায়! সেটা নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে যায় স্তব্ধ আরিয়ানাকে কোলে নিতে গেলে! বেবিদের সংস্পর্শে স্তব্ধের আসার সৌভাগ্য আগে কখনওই হয়নি! কখনও কোনও বেবি ওর আশেপাশেই ও পায়নি! সব সময় পড়াশোনা আর জব নিয়েই ব্যাস্ত জীবন পার করেছে! বাচ্চাদের সংস্পর্শে নিজের ছেলে দিয়েই যাত্রা শুরু! ডেনিয়ালের চিন্তায় স্তব্ধ এমনিতেই প্যানিক ছিলো। ছোট্ট আরিয়ানের নড়াচড়া দেখে ও আরও প্যানিক হয়ে গেলো! ডেনিয়ালের ব্যাপার টা ব্রেন থেকে গায়াব হয়ে গেলো যেন। একরাশ চিন্তা ভোর করলো ছেলেকে নিয়ে! অস্থির কণ্ঠে বলতে শুরু করলো,
–” টিয়া নিশ্চয়ই ডেনিয়াল কোলে নেওয়ায় আমার ছেলে ব্যাথা পেয়েছে! দেখো কেমন করছে! প্লিজ কিছু করো?”

টিয়া হতভম্ব হয়ে গেলো স্তব্ধের কথায়! ছেলেটা বরাবরই বাচ্চাদের বিষয়ে কাঁচা! সে যতই পাওয়ারফুল পুলিশ অফিসার হোকনা কেন! নিউ পেরেন্টস হিসেবে টিয়া মোটামুটি হলেও স্তব্ধ একদমি বোকা! মানে এমন এমন কথা বলবে! যেউ কেউ হতবিহ্বল হয়ে যাবে এবং পরমুহূর্তেই ঘর কাঁপিয়ে হাসবে। এই যেমন এখন বলছে! বেবিকে কোলে নিলে বেবি ব্যাথা পায়? আশ্চর্য কথা বার্তা। বাবা হিসেবে ওভার পজেসিভ ছেলেকে নিয়ে সব সময় ! যেখানে ডেনিয়াল খুব সুন্দর করে আরিয়ানকে ক্যারি করেছে! ব্যাথা পাওয়ার প্রশ্নই আসেনা। টিয়া চোখে পানি নিয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,
–” তুমি পৃথিবীর সব থেকে বোকা বাবা! কোলে নিলে বাচ্চা ব্যাথা কিভাবে পাবে? ওকে তো ডেনিয়াল ফেলে দেয়নি! ”

স্তব্ধ অস্থির গলায় বলল,
–” আর ইউ শিওর? তাহলে ও এমন করছে কেন?”

টিয়া দেখলো স্তব্ধ ভয়ে ঘেমে গিয়েছে ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে! মুখটা ফ্যাকাসে শুকনো দেখাচ্ছে! টিয়া স্তব্ধের সামনে দাঁড়িয়ে ওর কপালের ঘাম মুছে দিয়ে স্তব্ধের গাল টেনে দিয়ে বলল,
–” কিউট ড্যাডি হু! আরিয়ান একদম ঠিক আছে ঘুম ভেঙে গিয়েছে তাই নড়াচড়া করছে! ইনফেক্ট ডেনিয়াল তোমার থেকে সুন্দর করে আমার বাবুকে ক্যারি করেছে। তুমিই এখনও ঠিক করে ছেলেকে কোলে নিতে পারলেনা! ”

স্তব্ধের ফ্যাকাশে শুকনো মুখটা টিয়ার কথা শুনে হতাশায় আরও চুপসে গেলো! সেটা টিয়ার চোখ এড়ালোনা। টিয়া হেসে দিলো এতে মুগ্ধ কন্ঠে বলল,
–” উফফ এত কিউট কেন তুমি! ইউ আর বেস্ট ড্যাড ইন’দ্যা ওয়াল্ড স্তব্ধ!”

কিউট বলায় স্তব্ধের লাল মুখটা আরও লাল হয়ে গেলো যেন। ক্ষেপে গিয়ে স্তব্ধ গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
–” আমার বাবু নয় আমাদের! ঠিকাছে?”

টিয়া এবার হো হো করে হেসে উঠলো! স্তব্ধ কখনওই টিয়ার মুখে ডেনিয়ালের কোনও কথাই সহ্য করতে পারেনা। জেলাসি টাইপ হাসব্যান্ড হয়ে যায়! টিয়ার তখন আরও বেশি কিউট লাগে স্তব্ধকে! প্রতিদিনের ছোট খাটো নকঝক করে নরমাল ভাবে স্তব্ধ উপরে চলে গেলো আরিয়ানকে নিয়ে। আর টিয়া কিচেনে ঢুকে গেলো। যেন কিছুই হয়নি কিন্তু দুজনের মনেই চলছে ঝড়। যার আভাস দিয়ে কেউ কাউকে কষ্ট দিতে চায় না! টিয়া কিচেনে ঢুকেছে ঠিকি কিন্তু কোনও কাজ করতে পারছেনা পুরোনো কথা পুরোনো অতীত স্মৃতি হয়ে চোখের সামনে ভাসছে বারবার। আর যাই হোক তিক্ত অতীত ভুলা যায় না…

যেদিন স্তব্ধ টিয়াকে ওর বাড়ি নিয়ে যায়। সেদিনি রাতেই ডেনিয়াল পালিয়ে যায়। স্তব্ধ সেটা যানতে পেরে হতবাক স্তব্ধ যদিও জানতো ডেনিয়াল পালাবে কিন্তু এত দ্রুত সেটা ভাবেনি। স্তব্ধের প্ল্যান পুরোপুরি ফ্লপ ছিলো সেটা ও বুঝতে পারে এবং টিয়ার লাইফ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পরে যায়! এদিকে টিয়ার ফ্যামিলি কিছুতেই স্তব্ধকে মেনে নিবেনা। তাদের ভাষ্যমতে স্তব্ধই তাদের মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে! তারা কিছুতেই স্তব্ধকে জামাতা হিসেবে মেনে নিবে না। তারা টিয়া স্তব্ধের বিয়েটাও মানতে চায় না! টিয়া নিজেও মা বাবাকে বুঝিয়ে পারেনি। স্তব্ধ, টিয়ার কোনও কথাই শুনতে নারাজ তারা। টিয়াদের বাড়ি থেকে স্তব্ধকে বের করে দেয় টিয়াকে আটকে রাখা হয়! স্তব্ধ উপায় না পেয়ে শুরু হতে সব আরাফকে বুঝিয়ে বলার পর সে হেল্প করে স্তব্ধকে! টিয়াকে সেদিন রাতেই স্তব্ধের সাথে মা বাবার আড়ালে লুকিয়ে পাঠিয়ে দেয় স্তব্ধের সাথে! আর কিছু করার ছিলো না আরাফের অন্তত ওর বোন বেঁচে থাকবে সেই আশায় বাবা মার বিরুদ্ধে গিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে সে বাধ্য হয়েছিলো!

তারপর স্তব্ধ টিয়াকে নিয়ে ১ মাস লুকিয়ে দেশেই থাকে! কিন্তু সময়টা হয়তো খুব খারাপ ছিলো স্তব্ধের কঠিক পরিক্ষার চলছিলো এই জীবন যুদ্ধে জয়ি হওয়ার! প্রিয় মানুষটাকে সেইফ রাখার!

ডেনিয়াল পালিয়ে কোথায় গিয়েছে জানতোনা স্তব্ধ। কিন্তু স্তব্ধ কোথায় ছিলো সেটা ওর কাছের লোকজন গুলো জানতো তার মধ্যে একজন অভিজিৎ ও ছিলো সেই পুলিশ অফিসার। যাকে স্তব্ধ দেশে না থাকা কালিন! নিজ পরিবারের সুরক্ষার জন্য সেট করে গিয়েছিল। যেন ডেনিলাল কোনও ক্ষতি না করতে পারে, আস্ফি, কবিরের! সেই অফিসার অভিজিৎকে ডেনিয়াল টাকা দিয়ে নিজের মুখ খুলাতে বাধ্য করে। টাকার লোভেই অভিজিৎ স্তব্ধের ঠিকানা দিয়ে দেয় ডেনিয়ালকে। অতঃপর স্তব্ধ, টিয়ার উপর আচমকা হামলা করতে ক্ষুব্ধ ডেনিয়াল একদিন দেড়িও করেনি!

পরদিনি পৌঁছে যায় স্তব্ধের ঠিকানায়! সেদিন আস্ফি ছিলো স্তব্ধ টিয়ার সাথে রাজশাহীতে। ঠিক আজকের মতোই দরজা খুলে ডেনিয়ালকে সামনে দেখতে পেরেছিল টিয়া। হতভম্ব টিয়া সেদিনও নড়বার শক্তি হারিয়েছিল। ডেনিয়ালের ভয়ংকর দৃষ্টি টিয়ার সকল শক্তি যেন শুষে নিয়েছে… আর ডেনিয়াল সেটাই কাজে লাগায় যেন! রুমে ঢুকেই টিয়াকে নিজের সাথে জরিয়ে ধরে এবং স্তব্ধকে শুট করার চেষ্টা করে! টিয়া ভয়ে স্তম্ভিত হয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে.. তখন স্তব্ধ সোফায় বসে ছিলো। হুট করে হামলা করায় আর টিয়াকে এভাবে দেখে স্তব্ধ ভরখে যায়। ও কি করবে তখন বুঝতে পারছিলো না। তাই কথার মধ্যে ডেনিয়াল কে ব্যাস্ত রাখে স্তব্ধ। আর আস্ফিকে ইশারা করে কিছু… ডেনিয়াল কথার জালে ফাসলেও রেগে যায় এবং দ্বিতীয় দফায় শুট করতে হাত উঠায়.. ঠিক তখন আস্ফি পিছন থেকে ডেনিয়ালের মাথায় জোরে আঘাত করে। আগে থেকেই ওর মাথায় স্তব্ধের দেওয়া জখম থাকায় ডেনিয়ালের জন্য অল্প আঘাতই যথেষ্ট ছিলো। সেখানে আস্ফির সর্বশক্তি দিয়ে মারা আঘাতে সাথে সাথে মাথা ধরে আর্তনাদ করে উঠে ডেনিয়াল সেই অবস্থায় ও চিৎকার করে একটা কথাই বারবার বলতে থাকে আহত কণ্ঠে,
–” ছাড়বোন তোমাকে ছাড়বোনা স্তব্ধ!”

অবশেষে জ্ঞান হারায় ডেনিয়াল। স্তব্ধ নির্মিমেষ দৃষ্টিতে টিয়ার ভয়ার্ত মুখটা একবার দেখে। ডেনিয়ালকে সেই অবস্থায় সেই ফ্ল্যাটে ফেলে আস্ফি টিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। এমনিতেও সেদিন তাদের ইতালির ফ্লাইট ছিলো। ভিসা, টিকেক এসবের জন্যেই আসলে ১মাস দেশে থাকতে হয়েছিলো! তার পর দুজন দুজনের পরিবার ছেড়ে ইতালি কবিরের বন্ধুর ঠিক করা বাসায় উঠে শুরু হয় নতুন জীবন। দুজনের একাকিত্ব এর জীবন। দু পরিবারের ভালোর জন্যই স্তব্ধ কারোর সাথে যোগাযোগ রাখেনি। আর ফোনে কথা হলেই বাকি? স্বচক্ষে দেখার ছোয়ার ব্যাপারটা বুঝি সত্যি ভিন্ন! সেটা স্তব্ধ টিয়া পেতো কই? কিন্তু এসব নিয়ে ভাববার সময় ও খুব একটা পেতোনা। ডেনিয়াল পিছু ছাড়েনি ওদের। ইতালিও চলে আসে সে। স্তব্ধ সেটা বুঝতে পারতো যখন কিছু লোক লাগাতার তাদের ফলো করতো। তাই এখান থেকে সেখানে লুকানোর উপর আর এক আতংকিত জীবনের উপরেই ছিলো তারা! স্তব্ধের জন্য এসব কিছুই ছিলোনা কিন্তু টিয়ার জন্য সব যেন অভিশপ্ত হয়ে দাঁড়ায়। স্তব্ধ ওকে সামলে নেয়! টিয়ার স্তব্ধের ভালোবাসা অপেক্ষা করতে পারেনি নিজেকে মানিয়ে নিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছিলো ঠিক তখন ও জানতে পারে ও প্রেগন্যান্ট। দেশ ছাড়ার তখন ৮ মাস তখন টিয়া স্তব্ধের জীবনে নতুন অতিথির খবর আসে তখন স্তব্ধ টিয়া সব ভুলে মমি ড্যাডি হওয়ার খুশিটা ইঞ্জয় করতে শুরু করলো। আ
হাসি খুশি আর স্তব্ধের জ্বালাত্বন আর টিয়ার ছোটো খাটো রাগের মধ্যেই দিন যাচ্ছিলো! তখন থেকেই এখানে ওখানে পালিয়ে বেরানোটাও ইঞ্জয়ই করতে শুরু করলো এক প্রকার। তার পর টিয়ার ডেলিভারির ৬ মাস আগ যাবত স্তব্ধ টিয়াকে নিয়ে আবার নিউইয়র্ক থাকতে শুরু করে। এখানে আসার আগেই প্রথম বারের মতো স্তব্ধ আস্ফিকে ফোন দেয় ও বাবা হবে জানায় এবং সবাইকে জানাতে বলে অদের জন্য যেন প্রে করে সবাই। আস্ফি তখন ভীষণ খুশি মনেই মেয়ে বাবু হলে আরিয়ানা, এবং ছেলে বাবু হলে আরিয়ান রাখতে বলে দেয় নিজের নামের সাথে মিলিয়ে। অদের সেদিন এটুকুই কথায় হয় অন্যসব কথা জানার জিজ্ঞেস করার ইচ্ছে থাকলেও প্রবলেম হতে পারে আস্ফির এবং অদের তাই রেখে দেয়। আর যোগাযোগ করেনি কারোর সাথে ! স্তব্ধ টিয়ার ডেলিভারির সময় প্রচণ্ড ভয়ে ছিলো যদি এই সময় ডেনিয়াল এটাক করে তাহলে টিয়াকে নিয়ে ও পালাতে পারবেনা! টিয়া তখন খুব দুর্বল ছিলো অসুস্থ ও ছিলো সব কিছু মিলিয়ে স্তব্ধ প্রচন্ড ভয় টেনশনে ছিল ও কোনও রিস্ক নিতে চায়নি!

তখন সব ভালো ভাবেই মিটে যায়! কিন্তু আজ ডেনিয়াল হঠাৎ করে কিভাবে চলে এলো এবার স্তব্ধ হয়তো এমটা হবে টের পায়নি! তানাহলে আবার কোনও নতুন দেশ এবং নতুন শহরে থাকতো ওরা! হঠাৎ টিয়া কিছু একটা ভেবে দৌড়ে উপরে গেলো!

আরিয়ান বেডে খেলছে একা একাই স্তব্ধ ওর পাশে উল্টো হয়ে শুইয়ে আরিয়ানাকে এক দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে! আরিয়ান মুখে অদ্ভুত সব শব্দ করে যাচ্ছে আর উপরে তাকিয়ে হাসছে! টিয়া দৌড়ে এসে স্তব্ধের উপর শুয়ে পরলো। তারপর কটমট করে বলল,
–” তুমি এত বড় রিস্ক কি করে নিলে?”

স্তব্ধ শীতল কণ্ঠে বলল,
–” আমি দেখতে চাইছিলাম আমাদের পেয়ে ও কী করে?”

টিয়া অবিশ্বাস্য স্বরে বলল,
–” আই কান্ট বিলিভ স্তব্ধ… তার মানে তুমি সত্যি জানতে ও আসবে?”

স্তব্ধের পুনোরায় শান্ত গলা,
–” হ্যাঁ আমি ওকে চান্স দিয়েছি বলেই ও আসতে পেরেছে!”

টিয়া আনমনেই বলে ফেলল,
–” যদি ও আমাকে দেখেই শুট করে দিতো?”

স্তব্ধ এবার বাঁকা হেসে বলল জানালার দিয়ে তাকিয়ে বলল,
–” তোমাকে মারতোনা ও কখনোই! কিন্তু আমাকে শুট করবে না আশা করিনি!”

টিয়া প্রচণ্ড বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো স্তব্ধের দিকে! নিজে নিজেই ভেবে উঠলো ও! স্তব্ধ কি করে পারলে তুমি এটা করতে? এমনটা করলেই কি আমি নরমাল লাইফ পেতাম কখনও? ঐ সাইকোটা দিতো সেটা করতে ডেনিয়াল সব সময় আমাকে তার বন্দী করতে চেয়েছে! আর আরিয়ান তোমাকে ছাড়া নরমাল লাইফ দিয়ে আমি কি করতাম? তোমাকে হারিয়ে নরমাল লাইফ আমি ভাবতে পারি? আজ ডেনিয়াল চেঞ্জ না হলে নিশ্চয়ই সব শেষ হয়ে যেত? এতো বড় রিস্ক তুমি কি করে নিতে পারলে স্তব্ধ! আমি কখনওই তোমাকে ক্ষমা করবোনা স্তব্ধ তোমার এই বেপরোয়া সিদ্ধান্তের জন্য!

টিয়া চট করেই স্তব্ধের উপর থেকে উঠে দাঁড়ালো! মুহূর্তে বাবা ছেলেকে রেখে রুম ত্যাগ করলো! টিয়া ভাবতে পারছেনা কিছু ক্ষণ আগে ঠিক কি হতে পারতো! স্তব্ধ শুয়ে শুয়ে ডেনিয়ালের পরিবর্তন টা ভাবছে। টিয়ার ডেলিভারির পরপরই কিয়াশার বাবা ওকে ডেনিয়ালের মাফিয়া জগত ছেড়ে দেওয়ার নিউজটা দেয়। প্রচন্ড অবাক হয় স্তব্ধ এবং ৬ মাসে আর কোনও ভাবে ওদের বিরক্ত করতে না দেখে স্তব্ধ ভেবে নেয় এবার ও একটা রিস্ক নিবে। টিয়াকে আর ওর বেবিকে ও একটা নরমাল লাইফদিতে চায় যে-কোনও মূল্যে সেটা।

তখন ডেনিয়ালের আরও বহু পরিবর্তন সম্পর্কে ও খোঁজ পায়। তাইতো একমাস ধরে যখন ওকে ডেনিয়াল ফলো করছিলো স্তব্ধ যেনেও কিছুই করেনি! আজ বাড়িতে ঢুকতে স্তব্ধ নিজেই ওকে ব্যাবস্থা করে দিয়েছে নিজে নিজে আগে আগে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়ে । ডেনিয়ালের অজান্তেই স্তব্ধ ওকে হেল্প করেছে! কিন্তু গাড়িতে বসে সিসিটিভি ফুটেজ এ ঠিকি নজর রাখছিলো স্তব্ধ! প্ল্যান এটাই ছিলো টিয়াকে ডেনিয়াল নিয়ে যেতে চাইলে ও পুলিশ কে কল করে বাড়িতে ঢুকবে। ডেনিয়াল তখন ওকে শুট করবে এবং পুলিশ ডেনিয়ালকে ধরে ফেলবে। কিন্তু এসব কিছুই হলোনা! টিয়ার কাছে যাওয়া পর্যন্ত ঠিক থাকলেও আরিয়ানাকে কোলে নিতে দেখে সব এলোমেলো হয়ে যায় ওর। তাই ত প্ল্যান বাদ দিয়ে। ঢুকে যায় বাড়ি আগেই যদিও ও ভেবেছিল ডেনিয়াল ওকে মেরে ফেলবে। এবং যখন পুলিশ এসে ওকে ধরবে টিয়া, আরিয়ান তখন একটা নরমাল লাইফ পাবে নিশ্চিত! কিন্তু ডেনিয়াল ওকে আজ চমৎকার বিস্মিত করেছে…

স্তব্ধজানে টিয়া ওকে ভুল বুঝবে আজকের জন্য কিন্তু কিছুই করার নেই। ও কিছুতেই টিয়াকে আরিয়ানকে এভাবে দেখতে পারছিলো না! পরিবার প্রিয়জন থেকেও তাদের কেউনেই, সহানুভূতি নেই মায়া নেই ভালোবাসা নেই। হ্যাঁ স্তব্ধ না থাকলে টিয়া কষ্ট পেতো কিন্তু এভাবেও তো আর চলতে পারেনা? স্তব্ধ এর শেষ করতে চাইছিলো শুধু সেটা নিজেকে শেষ করে হলেও। আর এতে ও ভুল কিছু দেখছে না! আর যাইহোক নিজের সন্তানকে ও নিজের মতো এই খুনখারাপি এমন জঘন্যতম একটা জীবন দিতে চায়না। নিজের বাবার মতোই বাধ্য হয়ে! শত্রুদের জন্য ও ওর বাবাকে দেখেছে কষ্ট পেতে। কোনও প্রকার অন্যায় না করেও। শুধু মাত্র কাজের প্রতি লয়াল ছিলো বলে। ওর মাকে মেরেও ফেলেছিলো তারা। ছেলেকে বাঁচিয়ে রাখতে স্তব্ধকে নিজে হাতে ধরে বন্ধুক চাঁলাতে শিখিয়েছেন ওর বাবা। যদিও কবির ওর ভালোর জন্যই সব করেছিলেন কিন্তু স্তব্ধ কখনওই এমন জীবনে শান্তি পায়নি। কবিরের দিক চেয়ে শুধু ভালো থাকার অভিনয় করে গিয়েছে।তাই ও নিজের সন্তানকে এমন জীবন দেওয়ার থেকে মরে গিয়ে শান্তি দিতে চায় এর জন্যে ও টিয়াকেও কষ্ট দিতে পারে। হ্যাঁ আরিয়ানের ব্যাপারে স্তব্ধ আজীবন স্বার্থপর হবে কিন্তু নিজের মতো বন্ধুক চালাতে দিবে না অন্যসব নরমাল বাচ্চাদের মতো একটা নরমাল লাইফ দিবে ও আরিয়ানকে! ভগ্য যখন বাঁচিয়ে দিয়েছে ওকে এর মধ্যে আর কোনও ত্রুটি ও রাখবেনা! বাকি রইলো টিয়া ওর ভালোবাসায় টিয়া পাখি মেল্ট হতে বাধ্য!

ভেবেই মুচকি হেসে আরিয়ানের কপালে চুমু খেলো ফিসফিস করে ছেলেকে বলল,
–” খুব দ্রুত তুমি তোমার বাড়ি তোমার দেশে ফিরে যাবে বাবু! আই লাভ ইউ মাই লিটল প্রিন্স!”

——–

সময় পরিবর্তনশীল কিছু মানুষের জীবন বরাবরই হুট করেই পরিবর্তন হয়ে যায়। এলোমেলো হয়ে যায় একধারে চলতে থাকা জীবন নামক কাঠি! আজ আকাশে ভরা তাঁরার মেলা! গুম মেরে আছে পৃথিবী। না আছে বাতাস না আছে শান্তি কেমন যেন ভীষন্ন ভাব। একা দৃষ্টিতে বারান্দায় বসে তাকিয়ে আছে আকাশ পানে কিয়াশা.. কি আশ্চর্য দু-বছর যাবত কারো ছন্নছাড়া জীবন সামলে হাপিয়ে উঠে যখনি ও এখানে বসে এই আকাশর দিকে তাকায় তাঁরাই দেখতে পায় শুধু চাঁদ যেন হারিয়ে গিয়েছে! হুট করেই তাচ্ছিল্য হাসে কিয়াশা। ওই চাঁদ টাও ওকে ধরা দিতে নারাজ। ঠিক সুখ পাখিটার মতোই। ওর জীবনে দুবছর হলো সুখের সাথে দেখা সাক্ষাৎ নেই। তাই হয়তো চাঁদের দেখা পায়না ও! নিজের এহেন ভাবনায় দীর্ঘশ্বাস ফেলল কিয়াশা। মানুষ কষ্টে বহু উল্টো পালটা ভাবে ও নিজেই অর্থহীন কথাবার্তা ভাবছে! নিশ্চয়ই ওই আকাশে আঁধারে লুকিয়ে মস্তবড় চাঁদটা? হুট করেই কিয়াশা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে….

আস্ফি রোজকার মতোই প্রচণ্ড ড্রিংকস করে বাড়ি ফিরেছে! নেশায় বুদ হয়ে এলোমেলো পায়ে কোনও রকম বেডে গিয়ে পরলো ও। পাশেই একটি নারী দেহ শুয়ে.. তার শরীর থেকে থেকে কেঁপে উঠছে! আস্ফির সে দিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই! ও বেডে পরেই ঘুমিয়ে গেলো। কিয়াশা ধীরে উঠে বসলো আস্ফির ঘুমন্ত নিশ্বাস ভারী শুনে। যখনই বেড ছাড়তে যাবে পেছন থেকে হাত টান পরলো কিয়াশা তাতে গিয়ে পরলো আস্ফির বুকের উপর! কিয়াশা নিজেকে ছাড়াতেচেষ্টা করতেই কিয়াশাকে নিচে ফেলে আস্ফি কিয়াশার উপরে উঠে! জোরালো কণ্ঠে রাগিত্বক কণ্ঠে বলল,
–” কোথায় যাচ্ছো?”

কিয়াশা ভ্রু কুঁচকে বলল,
–” ছাড়ো আমাকে আস্ফি! প্লিজ….?”

আস্ফি কিয়াশার কথায় পাত্তা দিলো বলে মনে হলো না! পুনোরায় নির্লিপ্ত কণ্ঠে চেঁচিয়ে বলল,
–” আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো.. তা তাহলে কেন নিজের ভালোবাসা দিয়ে পিউকে ভুলিয়ে দিচ্ছো না? কে..কেন?”

আস্ফির হঠাৎ এহেন চিৎকার শুনে ভয় পেলেও নিজেকে সামলে কিয়াশা রেগে দীগুন ঝাজালো কন্ঠে বলল,
–” কারণ আমি সেটা চাইনা! আর আপনিও পিউকে ভুলতে পারবেন না তাহলে কেন আমাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন…..?”

আস্ফির নেশা কাটানোর জন্য কিয়াশার এই কথাটা যেন যথেষ্টই ছিলো। মুহূর্তে নেশা কেটে আস্ফির ভয়ানক রাগ হলো। আর তার প্রতিদিন কার রাগ কমাতে তো কিয়াশা আছেই। কিয়াশা নিজেও বুঝতে পারলো ও এভাবে কথা বলে ঠিক করেনি! তাই নিচু মাথা সামান্য তুলে আস্ফির দিকে তাকালো অগ্নিকেও হার মানাবে আস্ফির রাগি চেহারা! ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো নিজের ছাঁড়াতে ব্যাস্ত হতেই আস্ফির বাম হাত ওর পেছনের চুল চেপে ধরলো। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে কিয়াশা দ্রুত বলল,
–” ন..নো আস্ফি…”

আস্ফি রোজকার মতোই কিয়াশার বাধা মানলো না! কিয়াশা কথাটা বলে পরমুহূর্তেই ওর ঠোঁটে আস্ফির ঠোঁটের তীক্ষ্ণ স্পর্শ পেলো! যদিও ব্যাপারটা নতুন নয় দুবছর ধরেই আস্ফির অতীতের তীক্ষ্ণ রাগের শিকার ও হচ্ছে। কিন্তু রাগটা কিসের সেটা আজও ও জানে না! তবুও আজ প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে! আস্ফি যখন প্র‍তিদিনকার মতো ওর শরীরে মেতে! তখন কিয়াশা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে চিৎকার করে কাঁদছে। আস্ফি সবটা শুনতে বুঝতে পারলেও রাগের বসে থামছেনা! কিয়াশা কাঁদতে কাঁদতে কিছু একটা বলতে চাইলো পারলোনা! তার আগেই আস্ফি ওর মুখ চেপে ধরেছে। অর্থাৎ আর কোনও প্রতিক্রিয়াই কিয়াশা করলো না! তবে আজকের জন্য যা ক্ষতি হওয়ার হয়তো আস্ফিরি হবে ও তো একটা পুতুল মাত্র এখন!

আজ দুদিন ধরে কিয়াশা অসুস্থ ব্যাপার টা আস্ফি না ধরতে পারলেও। কবির বুঝলো কিয়াশার সাথে আস্ফি কিছু করেছে। এবং ওর কিছু হয়েছে।। তবুও আস্ফিকে উনি কিছু বললেন না। কিয়াশা আস্ফির বিয়ের পর কবির আর আস্ফির সাথে কথা বলেন না। কেননা উনিও পিউয়ের ব্যাপার টা জানতেন! যদিও আস্ফি কম চেষ্টা করেননি কবিরের সাথে কথা বলতে কিন্তু কবির মানেনি। কিয়াশাকে এক প্রকার জেদ ধরে জোর করেই বিয়ে করেছিলো আস্ফি সেটা স্তব্ধ যাওয়ার এক মাস পরেই। তারপর দুবছর আর ঢাকা ভুলেও যায়নি আস্ফি। ছেড়ে দিয়েছে পিউকে পিউয়ের মতো সেটাও আস্ফির একটা জেদি ধরে নিয়েছেন কবির। উনি ভেবে পান না উনার কোমল হৃদয়ের চঞ্চল আস্ফির হঠাৎ মৃত্যু কিভাবে হলো? ছেলেটা এতো গম্ভীর স্তম্ভিত হঠাৎ কিভাবে হয়ে উঠলো? যাক পিউতো অজান্তেই বেঁচে গিয়েছে কিন্তু ছেলেটা শুধু শুধু ধরে বেধে কিয়াশার সুন্দর জীবন টাকে নষ্ট করছে। তবে কিয়াশাও কি জন্যে এসব মেনে নিচ্ছে কবির আজো বুঝে পায় না! কিয়াশা কঠিন মনের মেয়ে ওর মন পড়ার সাধ্য কবিরের নেই তেমন তবে আন্দাজ করতে পারে কি জন্যে মেনে নিচ্ছে আস্ফির অহেতুক জেদ?

হাজার জল্পনা কল্পনা ভাবতে ভাবতে আস্ফির বেড রুমের সামনে এসে টোকা দেন কবির তৎক্ষনাৎ দরজা খুলে কিয়াশা কবিরকে দেখে ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বলতে শুরু করে,
–” আঙ্কেল তুমি কেন এতদূর আসতে গেলে ডাকলেই যেতাম আমি! এসো ভেতরে এসো…!”

কবির বিরক্ত স্বরে বলল,
–” আমার কোনও শখ নেই এই রুমে বসে বসার। আমি জানি তোর শরীর ভালো নেই। তাহলে এতক্ষণে তিনবার আমার রুমে চা পৌঁছে যেতো! চল ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাবো তোকে! তৈরী হয়ে নে!”

কিয়াশার খারাপ মন হুট করেই ভালো হয়ে গেলো যেন। নিজ বাবার মতো কবিরের ও একি সুর দেখে। কিয়াশা হেসে দিলো বলল,
–” আমার কিচ্ছু হয়নি কাকে একদম ঠিক আছি আমি! তুমি নিচে যাও গিয়ে বসো.. ধীরে ধীরে হ্যাঁ! আমি এখুনি চা করে নিয়ে আসছি! চা খেয়ে বুঝবে আমি কতটা ফিট!

কিয়াশার খারাপ মন হুট করেই ভালো হয়ে গেলো যেন। নিজ বাবার মতো কবিরের ও একি সুর দেখে। কিয়াশা হেসে দিলো বলল,
–” আমার কিচ্ছু হয়নি কাকে একদম ঠিক আছি আমি! তুমি নিচে যাও গিয়ে বসো.. ধীরে ধীরে হ্যাঁ! আমি এখুনি চা করে নিয়ে আসছি! চা খেয়ে বুঝবে আমি কতটা ফিট!”

কবির ভালোই বুঝলেন কিছু হলেও শিকার মেয়েটা করবেনা। মেয়েটাও বড্ড জেদি! আচ্ছা আস্ফি কিয়াশার জীবনসঙ্গী হবে বলেই কি আস্ফির এতো পরিবর্তন। বলা হয় স্বামী স্ত্রী নাকি একি ধাঁচের হয়! এই যেমন এখন কবিরের কাছে আস্ফি কিয়াশা দু’জনকেই জেদি ঘাড়ত্যাড়া বলেই মনে হচ্ছে উনার! কবির কিয়াশার কথার পিঠে আর কথা বাড়ালেন না। নিচের দিকে যেতে শুরু করলেন। স্তব্ধ না আসা পর্যন্ত হয়তো কিছুই ঠিক হবেনা! দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো বুক চিরে। সেই উত্তপ্ত নিশ্বাসের সাথে মিশে হাজার কষ্ট, অভিযোগ, ছেলেকে না বলতে পারা হাজার জমে থাকা কথা! হঠাৎ আস্ফি ও বাড়ি নেই দেখে মনটা দীগুন চিন্তিত হলো। যতোই কথা না বলুন কিছু লাফাঙ্গা বন্ধু জুটিয়েছে সিলেট এসে সকালে বেরিয়ে সারাদিন আড্ডা রাতে ড্রিংকস তারপর বাড়ি ফিরে ভোর রাতে। উনি সবি জানেন কিন্তু আস্ফি ভাবে কবির ভোর রাতে জেগে থাকেনা নিশ্চয়ই তাই তখন বাড়ি ফিরে কিন্তু কবির সবি টের পায়। তবুও কিছুই বলেনা! এই পর্যায়ে এসে কবির কিছু বলতেও চায়না। এতে বেয়াদবি করে বসে ছেলে মেয়ে। কবির অপেক্ষায় আছে আস্ফি নিজেই ভয়ে ঠিক হয়ে যাবে। কবিরের ভয়ে আস্ফি এই ভোর রাতে আসা ভয় টুকুও নিজ হাতে নষ্ট করতে ইচ্ছুক নয়। তাই প্রাণপনে শুধু স্তব্ধ ফিরে আসার অপেক্ষা করছেন। যদিও আসবে নাকি কবির জানে না!

সারাদিন সব ঠিক ঠাক চললেও রাতে কিয়াশা সবাইকে লুকিয়ে হস্পিটাল গেলো। আস্ফি যেহেতু বাড়ি নেই। আর কবির ঘুমে কেউ টের পায়নি। কিন্তু পরদিন বিকেলে কবির কিয়াশার সাথে চা খাচ্ছিলো ড্রইং রুমে বসে। তখন দুজনকেই অবাক করে দিয়ে বাড়িতে ঢুকলো। ছোট্ট ফুটফুটে বাচ্ছা কোলে টিয়া স্তব্ধ! কবির তাদের দেখা মাত্র দাঁড়িয়ে পরেছিলো প্রথমে। কিন্তু ছোট্ট আরিয়ানের দিয়ে চোখ পরতে। ধপ করে সোফায় পুনোরায় বসে গিয়ে বুকে হাত দিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলেন উনি। কিয়াশার চোখেও পানি চলে এসেছে সত্যি বলতে এমনটা আদৌ কখনও হবে ও ভাবেনি! সত্যি আজকের মতো এতোবড় চমক অপেক্ষা করছিলো ওদের জন্য সত্যি অভাবনীয়! স্তব্ধ বাবার অবস্থা দেখে দ্রুত বাবার সামনে বসলেন এবং মুহূর্তে আরিয়ানকে বাবার কোলে তুলে দিলেন! কবির একবার আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে হু হু করে উঠলেন। অর্থাৎ নাতীকে কোলে নিয়েই স্তব্ধকেও এহাতে জোরিয়ে ধরে কেঁদে দিলেন।

টিয়া কিয়াশার পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছে। নিশ্চয়ই এখানে অন্য কোনও ছেলে হলে বাবাকে ধরে কেঁদে দিতো তা না বাবা কাঁদছে আর সে বসে? আস্তো পাথর! কিন্তু আফসোস এটাই দুবছর সংসার করেও আমি সেটা বুঝিনি। স্তব্ধ আমি কিছুতেই তোমার সাথে আর কথা বলবোনা! সে যাই হোক! ভেবেই ভেংচি কাঁটলো। তারপর কবির কিছুটা শান্ত হতে টিয়া গিয়ে কবিরের সাথে কথা বলল সালাম করলো। কবির আজ মহা খুশি উনার চোখ মুখে উচ্ছ্বাস উপচে পরছে!

কিয়াশা ব্যাস্ত হয়ে অদের রুমে পাঠালো ফ্রেশ হতে। তারপর অদের খাবার দাবারের ব্যাবস্থা করে রুমে গেলো আস্ফিকে ফোন দিতে। স্তব্ধ টিয়া ওকে খুঁজছে। এবং কবির ওকে ফোন দিয়ে জানাতে বলেছে স্তব্ধ এসেছে…!

দুবছরে তৃতীয় বার আস্ফির নতুন নাম্বারটায় কোল লাগালো কিয়াশা! খুব একটা ফোন দেওয়ার দরকার পরলেও কিয়াশা করেনা আস্ফিকে ফোন! দু-তিনবার ফোন দিয়েও যখন আস্ফিকে পেলো না তখন ম্যাসেজ করে দিলো ও সবটা! ব্যাস ওর দ্বায়িত্ব শেষ।

তখনই হুট করে ওর রুমে ঢুকে টিয়া! মেয়েটার মুখ লাল হয়ে আছে। কিয়াশা কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই টিয়া তাচ্ছিল্য হেসে বিদ্রুপের স্বরে বলল,
–” কিভাবে পটায় ফেললে আস্ফিকে? ”

কিয়াশা স্তব্ধ হয়ে রইলো! টিয়া রেগে অনেক কিছু বলছিলো কিয়াশাকে কিন্তু ও বোবার মতো শুধু দাঁড়িয়ে রইলো কিছু বলল না! এক সময় টিয়া ছুটে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। কিছু সময় আগেই স্তব্ধ টিয়াকে কবির আস্ফির বিয়ের কথা জানিয়েছে। টিয়ার মতো স্তব্ধ ও অনেক সময় স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলো। ওর ভাই এমন করবে ভাবেনিও। যদিও স্তব্ধ বাবার কথা বিশ্বাস করেছে কিয়াশার দোষ নেই এতে কিন্তু টিয়া মানেনি। টিয়া কিয়াশার চোখে দেখেছে আস্ফির জন্য কিছু সেটা বহু আগেই! তাই ও দোষ একা আস্ফির দিতে পারছেনা। কথায় আছে এক হাতে তালি বাজেনা। কিয়াশা চেয়েছে বলেই বিয়ে করতে পেরেছে আস্ফি ওকে! তবে কথাটা অনেক অংশেই সত্য তাই তো কিয়াশা টিয়াকে একটা প্রতিউত্তর ও দিতে পারেনি!

টিয়া নিচে যেতে স্তব্ধ কবির এবং আরিয়ানকে নিয়ে। ঐ বাড়ি ত্যাগ করে ঢাকা ফিরে আসে! সব জানার পর আস্ফির প্রতি রাগ হওয়া হয়তো স্বাভাবিক। একটা মেয়ের জীবন নিয়ে এভাবে মজা করার মানেই হয়না। ঢাকা পৌঁছে টিয়া পিউয়ের বাসায় যায় সবাইকে নিয়েই। কিন্তু বাসায় গিয়ে কারোর দেখা পায় না। প্রতিবেশিদের থেকে জানতে পারে। অনার্স ফাইনালের পরি। পিউয়ের পরিবার কোথাও একটা চলে গিয়েছে। কোথায় গিয়েছে জানেননা তারা!

টিয়া কেঁদেই দিয়েছিলো সব শুনে। ভালোবাসার মানুষের থেকে পাওয়া কষ্ট কতটা তীব্র হতে পারে সেটা টিয়া ভালো জানে। নিশ্চয়ই পিউ অনেক কষ্ট পেয়ে শহর ছেড়ে দিয়েছে? স্তব্ধ কোনও রকম বুঝিয়ে টিয়াকে তার বাড়ি নিয়ে যায়! পিউয়ের কষ্ট উপলব্ধি করে টিয়া সারা রাস্তা গভীর ভাবনায় ডুব দেয়! ভেবে নেয় স্তব্ধ আর নিজের মধ্যে কখনওই দূরত্ব আসতে দিবেনা। টিয়া বিচ্ছেদের মতো আর কোনও কষ্ট সহ্য করতে পারবেনা। যা হয়েছে সব অতীত! এই অতীত আলোয় ছড়াতে দিবেনা। সেটা থাকবে একান্ত অন্ধকারে। আলোয় অন্ধকার!

তিন বছর পর……
কাশ্মীরি পাহারের চূরায় দাঁড়িয়ে,
স্তব্ধ একাধারে টিয়ার কপালে চুমু খেয়ে যাচ্ছে। খাওয়া মধ্যম কারণ হলো। সে আবার বাবা হতে যাচ্ছে…..!
মনে মনে একটাই প্রে একটা ছোট্ট টিয়া চাই ওর!

কিছু দূর দাঁড়িয়ে আরিয়ান চূড়ায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলছে আই লাভ ইউ ড্যাড মম!
আরিয়ানের চিৎকার করে বলা কথা গুলো আকাশ ময় পায়চারি করে বেরিয়ে অদের কাছে বার বার ফিরে আসছে! টিয়া খিলখিল করে হাসছে সেই হাসি গুঞ্জন করছে পাহাড়ের গায়ে গায়ে। স্তব্ধ মুগ্ধ হয়ে বুকময় ভালোবাসার ঝড় নিয়ে দেখছে ওর সাদা চোখউলীকে! আজীবন দেখে যাবে আলোয় অন্ধকারে!

‘সমাপ্ত’

[ আমি জানি পছন্দ হবেনা কারোর! অনেক প্রশ্ন থাকবে! সবটাই ইচ্ছা কৃত এই গল্পে অন্যসব গল্পের মতো চটপটা নয়। বেশ বোরিং। তাই এর এন্ডিং ও বোরিংই হবে৷ তবে গুড নিউজ এটাই হচ্ছে এর দ্বিতীয় পার্ট আসবে। সেখানে শুধু পিউ, আস্ফি, কিয়াশা থাকবে তাই তাদেরকে এভাবেই এখানে এন্ড করলাম!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here