আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-২৬
সকালে তিয়ানা ঘুম থেকে উঠে দেখে মেঘালয় তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। ভুত দেখার মতো চমকে যায় তিয়ানা। এ কি করে পসিবল? মেঘালয় তাকে জড়িয়ে আছে তাও সম্ভব! হাত দিয়ে নিজে চোখ ডলে নেয় তিয়ানা। না! যা দেখছে সত্যি দেখছে সে। দম বন্ধ হয়ে আসে তিয়ানার। মেঘালয়কে ছাড়াতে নেয় সে। তিয়ানার নড়াচড়ায় ঘুম ভেংগে যায় মেঘালয়ের। চোখ পিট পিট করে তাঁকিয়ে ভ্রু কুচকে ঘুম ঘুম কন্ঠে তিয়ানাকে বলল,,
__‘অনেক রাতে ঘুমিয়েছি বউ। নড়াচরা করো না ঘুমোতে দাও।”
মেঘালয়ের এমন আচরন, এমন কথায় তিয়ানা হতবাক হয়ে যায়। মেঘালয়কে জোড়ে ঠেলে নিজের থেকে সরিয়ে উঠে বসে সে। ঘনঘন শ্বাস নেয় সে। মেঘালয় এত কাছে থাকায় দম আটকে যাচ্ছিলো তার। তিয়ানার ঠ্যালা ঠেলিতে ঘুম ভেংগে যায় মেঘালয়ের। শোয়া থেকে উঠে আসন পেতে বসে সে। তিয়ানার কোমড়ে হাত রেখে তাকে টেনে এনে নিজের কোলে বসিয়ে তিয়ানার ঘাড়ের চুল গুলো সরিয়ে গাড়ো ভাবে ঠোঁট ছুইয়ে তার ঘাড়ে থুতুনি রাখে মেঘালয়। মেঘালয়ের এসব অদ্ভুত কান্ডে মাথা ভনভন করে ওঠে তিয়ানার। পাগল হয়ে গেল নাকি! চোখ পাকিয়ে তাঁকায় তিয়ানা। মেঘালয়ের হাত নিজের কোমড় থেকে সরিয়ে মেঘালয়ের কাছ থেকে সরে যায় সে। হাত বাড়িয়ে মেঘালয়ের ঘাড়ে কপাল ছুঁয়ে দিয়ে বলল,,
__‘আপনার জ্বর টর হলো নাকি! কি সব করছেন। আমার মাথা ভনভন করছে। ‘
তিয়ানার কথায় শব্দ করে হেসে দেয় মেঘালয়। এমন যে তিয়ানা কোনো জোকস বলছে। তিয়ানা আহমক হয়ে চেয়ে থাকে। মেঘালয় আচমকা তিয়ানাকে শুয়ে দিয়ে তার উপরে উঠে যায়। হঠাৎ আক্রমনে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে যায় তিয়ানা। মুখ দিয়ে টা শব্দ না করে চেয়ে থাকে সে। মাথায় খেলছে না তার কিছু। মেঘালয় তিয়ানার নাকে কামড় দিয়ে বলল,,
__‘বউ রোম্যান্স করি? ‘
হেচকি উঠে যায় তিয়ানার। আমতা আমতে করে বলল সে,,
__‘আপনি কি কিছু খেয়ে ফেলছেন মেঘ ভাইয়া?’
মেঘালয় তিয়ানার ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দেয়। ব্যাথায় হালকা চেচিয়ে ওঠে তিয়ানা। ব্যাথিত কন্ঠে বলল,,
__‘কি করছেন? ব্যাথা পাচ্ছি আমি।’
দুষ্টু হাসে মেঘালয়। ঘাড়ে ঠোঁট ছুয়ে বলল,,
__‘আর একবার ভাইয়া বলে ডাকলে এর চেয়ে বেশি কিছু হবে।’
বলে মেঘালয় উঠে ওয়াসশ্রুমে চলে যায় ফ্রেস হতে তিয়ানা সেদিকে আহমক হয়ে চেয়ে থাকে। নিজ মনে ভাবে তিয়ানা,
__‘কি হলো এটা? কিছু একটা গন্ডগোল আছে।’
‘‘__আমাদের সম্পর্ক নিয়ে তোমার ভাবা উচিত সাদিদ।”
তুলিকার এমন কথায় ভ্রু কুচকায় সাদিদ। প্রশ্ন করলো,,
__‘মানে?”
হাসে তুলিকা। হেসে বলল,
__‘মানেটা তুমি ভালো জানো সাদিদ। আমি আর এসব এভাবে নিতে পারছিনা। ”
__‘কি নিতে পারছো না?’
তুলিকা সাদিদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,
__‘বুঝতে পারছো না? একুশটা বছর ধরে তোমার মানুষিক টর্চার গুলো নিতে পারছি না আর আমি। এবার আমার এসব থেকে মুক্তি চাই।’
তুলিকার শেষে বলা কথাগুলো শুনে রাগ হয় সাদিদের। তুলিকার হাত খামছে ধরে রাগ নিয়ে বলল,,
__‘আমি তোমাকে মানুষিক টর্চার করি নাকি তোমার দেয়া আঘাতের জন্য আমার পুরু লাইফ শেষ হয়ে গেছে।”
__‘আমার দোষ ছিল সাদিদ! সেই দোষের শাস্তি আমিও পেয়ে গিয়েছি এত গুলো বছর ধরে তারপরও আমার পাপ মোচন হয়নি।’
তুলিকার হাত মুচড়ে রাগি কন্ঠে উত্তর দেয় সাদিদ,,
__‘ এ জীবনে হবে না। সব কেঁড়ে নিয়েছো তুমি আমার থেকে শেষ যখন একটা সন্তান চেয়েছিলাম তখনও তুমি আমাকে সেটা দাওনি তুলি।’
তুলিকা শান্ত কন্ঠে বলল,,
__‘তিলাত, তিয়ানা ছিল।’
রাগে হিসহিসে বলে উঠে সাদিদ,
__‘ওরা তিয়াসার সন্তান তোমার না। আমার তোমার আমার সন্তান দরকার ছিল। তিলাত, তিয়ানাও আমাদের সন্তান তুলি কিন্তু আমার তোমার গর্ভের সন্তান দরকার ছিল। যে আমার চোখেরর সামনে একটু একটু করে বেড়ে উঠবে। যা আমি পাইনি তোমার থেকে।’
শ্বাস ঘোনো হয়ে আসে সাদিদের। থেমে শ্বাস নিয়ে কঠর কন্ঠে বলল,,
__‘মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি আমার জীবনের অভিশাপ। যা আমার জীবনে আসার পর থেকে কখনো সুখি হইনি আমি। আই হেইট ইউ।’
থমকায় তুলিকা! চোখ কোণে জল চলে আসে তার। ভাবে সে,
__‘সত্যি’ই কি সে সাদিদের জীবনের অভিশাপ? ‘
“
__‘আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন মেঘ ভাইয়া?’
মেঘালয় সোফায় বসে কিছু রিপোর্ট দেখছিল সাথে কফি খাচ্ছিল। এমন সময় তিয়ানা প্রশ্ন করলো। মেঘালয় রিপোর্ট থেকে চোখহ সরিয়ে তিয়ানার দিকে তাঁকায়। মেঘালয় তিয়ানার এমন প্রশ্নে কিছুটা অবাক হয়েছে। তিয়ানা দ্বিতীয় বার প্রশ্ন করলো,,
__‘আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন মেঘ ভাইয়া?’
মেঘালয় প্রশ্নের উত্তর না দিতে তিয়ানাকে পালটা প্রশ্ন করলো,
__‘তোর কেন মনে হলো?’
তিয়ানা ভাবশালীন ভাবে উত্তর দিলো,,
__‘এত দিন এক সাথে এক ঘরে থেকে মনে হলো।
থেমে কিছুটা আকুল কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
__‘কি হলো? বলুন! ভালোবাসেন আমাকে?’
মেঘালয় কফির মগ টি টেবিল উপর রেখে। হাতে থাকা ফাইল সোফার উপর রেখে দাঁড়ালো। তিয়ানার দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থেকে হেটে তিয়ানার পাশে এসে দাঁড়ালো। তিয়ানা এতক্ষণ জানালা দিয়ে বাইরে তাঁকিয়ে ছিল। পাশে মেঘালয়ের উপস্থিতি টের পেয়ে মেঘালয়ে দিকে তাঁকায় সে। মেঘালয় ঠোঁটের কোনো হাসির রেখা নিয়ে বলল,,
__‘ভালোবাসি’
মেঘালয়ের বলা ‘ভালোবাসি’ শব্দটা কানে যাওয়া মাত্র বুকে ধুকপুক শুরু হয় তিয়ানার। মেঘালয় তাকে ভালোবাসে! নিজেকে খুব সুখি মনে হলো হঠাৎ করে তিয়ানার। হো হো করে হেসে দেয় মেঘালয়। অবাক হয় তিয়ানা! অবাক চোখহ নিয়ে চেয়ে থাকে মেঘালয়ের মুখ পাণে। মেঘালয় হাসি বন্ধ করে আবার হেসে দেয়। যেন, সে হাসি আঁটকে রাখতে পারছে না। তিয়ানার বুকের ভিতর ধক করে ওঠে। মেঘালয়ের এমন হাসির মানে সে বুঝতে পারছে না। মেঘালয় হাসি থামিয়ে ট্রাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে কিছুটা তিয়ানার দিকে ঝুঁকে বলল,,
__‘কী ভাবছিস? ভালোবাসি?
তিয়ানা মুখ দিয়ে টা শব্দ না করে হতভম্ব হয়ে মেঘালয়কে দেখছে। বুকের ভিতর অজানা ভিয় হচ্ছে তার। তিয়ানাকে অবাক চোখে চেয়ে থাকতে দেখে বাঁকা হাসে মেঘালয়। জেসে বলল,,
__‘তোকে আগেও বলছি তিনু। তোকে আমি ভালোবাসি না। আমি ‘আদরিনী’ কে ভালোবাসি।’
নিজের কথা বলা চলে যেতে নেয় মেঘালয়। দরজার কাছে গিয়ে পিছন ফিরে বলল,,
__‘আর না ভালোবাসবো।’
মেঘালয়ের এহনো কথায় পাথর হয়ে যায় তিয়ানা। ধরে আসা কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
__‘তাহলে আমাদের মধ্যে যেটা এতদিন হলো?’
মেঘালয় চোয়াল শক্ত করে উত্তর দেয়,
__‘বউ হোস আমার। বিয়ে তো করেছি অধিকার তো দিতে হবে। এক মাস ধরে সংসার করছিস আমার সাথে। তাই অধিকার দিয়েছি তবে ভালোবাসা নয় আর না সেটা পাবি।’
ঘর ছেড়ে চলে যায় মেঘালয়। তিয়ানা ধপ করে ফ্লোরে বসে পরে। কি করবে সে? মেঘালয়কে সে ছাড়তে পারবে না আবার ভালোবাসা ছাড়াও থাকবে কি করে। যেখানে ভালবাসা নেই সেখানে থেকে কি লাভ? আচ্ছা! তার জীবনটাও কি তার মায়ের মতো হলো? সেও কি তার মায়ের মতো দু’জন ভালবাসার মানুষের মাঝখানে এসে পড়লো? মায়ের’ই মতো সারাজীবন ভালবাসাহীন বাঁচতে হবে তাকেও! মায়ের করা যাওয়া পাপে ধরলো তাকে? যাকে সে নিজের শরীর মন সব দিলো সে নাকি বলছে ভালোইবাসে না শুধু অধিকার। এই এক মাসে মনে হলো মেঘ তাকে ভালবেসে ফেলেছে। তাহলে, তার ধারনা ভুল।
চলবে?
(জানি না কেমন হইছে আমার মনে হলো ক্ষাপ ছাড়া হইছে আর হহ্যা এক মাসের লীপ নিয়েছি। তবে,, এক মাস আগে ‘তিমেঘের’ মধ্যে কি কি ঘটনা ঘটছে জানানো হবে,। আর রিচেক করিনি ভুল থাকতে পারে বানানে)