আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-৩২
সাদিদ তুলিকাকে উদ্দেশ্য করে ক্ষিপ্ত মেজাজে বলে,
__‘আজ তিয়ানা তোমার নিজের সন্তান না বলে এটাকে তুমি মেনে নিচ্ছো তুলিকা। বুকে হার রেখে বলতো তিয়ানা তোমার নিজের সন্তান হলে কি এটা মেনে নিতে?’
সাদিদের এমন প্রশ্নে হোহো৷ করে হেসে ওঠে মেঘালয়। মেঘালয়ের হঠাৎ হাসি দেখে সবাই সবাইক হয়। মেঘালয় হাসি থামিয়ে বলল,,
__‘আমি তো জানি তিয়ানা আন্টিম্মুর’ই সন্তান। নিজের পেটের সন্তান।’
মেঘালয়ের এমন কথায় সবাই হতভম্ব হিয়ে যায়। সাদিদ বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
‘মানে?’
বাঁকা হাসে মেঘালয়। তুলিকাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
__‘আন্টিম্মু! আজও চুপ থাকবে?’
থতমত খায় তুলিকা। চোখ জ্বালা করে তার, ওঠে বুকের ভিতর ঝা ঝা করছে কেমন। উত্তর না দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিজ ঘরে গিয়ে দরজায় খিল দেয় সে। তুলিকার ঘরের দিকে একবার তাঁকিয়ে মৌমিতাকে বলে মেঘালয়,,
__‘তুমিও চুপ থাকবে আম্মু?
একটু থেমে জোড়ে জোরে তুলিকাকে শুনিয়ে বলে মেঘালয়
__‘ ওকে ফাইন! বলো না। আন্টিম্মু যেমন নিজ সন্তানকে পেয়েও সারাজীবন তার ‘সন্তান না’ শুনতে হয়েছে সেটা সামনে তার সন্তান তিয়ানার জন্যও অপেক্ষা করছে। আমি আমার সন্তানকে নিয়ে নেব। এত দিন নিজে ছিলে এখন থেকে নিজের মেয়েকেও তোমার মতো সন্তান হারা দেখার জন্য প্রস্তুত হও।’
থেমে শ্বাস ফেলে হাক ছেড়ে তুলিকাকে শুনিয়ে বলে মেঘালয়,
__‘আমি তুলিকা রায়হানের মতো উদার মনের নই যে, নিজ সন্তানকে অন্যের সুখের জন্য ত্যাগ করবো।’
মেঘালয়ের এহনো কথায় কেঁপে ওঠে তিয়ানা। ঘরের ওপাশে দরজার খিল আটকে ফ্লোরে বসে চোখের অশ্রুবিসার্জন দেয় তুলিকা।’
চলে যেতে নেয় মেঘালয়। তিলাত পিছু ডেকে আঁটকে দেয় তাকে। সন্দিহান কন্ঠে বলল,
__‘সব সত্যটা বলে যা মেঘ। যা জানিস! সব’
মেঘালয় পিছু ফিরে তিলাতের করুণ মুখের দিকে তাঁকিয়ে মৃদু হেসে সোফায় বসে। সাদিদকে বলে,,
__‘এই টুকু বলছি আংকেল। তিয়ানা আপনার আর আন্টিম্মুর সন্তান। এই সত্যিটা আমার আম্মুও জানে। বাকিটা আপনি তাদের থেকে জেনে নিবেন। ‘
বলে, তিয়ানার দিকে একবার তাঁকিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায় মেঘালয়।
‘ভাইয়ের কাঁধে মাথা রেখে ঘুনিয়ে আছে তিয়ানা। সত্যিটা জানতে পেরেছে সে। খানিক্ষন আগে মৌমিতা তাদের সব সত্যিটা জানিয়েছে। সেটা জানার পর তিয়ানা কষ্ট পেলেও তিলাত খুব খুশি হয়। এইটুকু ভেবে তার আম্মুর নিজের কেউ আছে। একে বারে হেরে যায়নি সে। কিছুটা প্রাপ্তি হলেও পেয়েছে সে জীবনে। কিন্তু নিজের মায়ের (তিয়াসার) প্রতিও তার কিছুটা রাগ জন্ম নেয় তিলাতের। কিন্তু পরক্ষ ভাবে ভাবতে গেলে তার মা যেটা করেছে। যেকোনো মেয়ে’ই নিজ সংসার বাঁচাতে সেটা করতো। কোনো মেয়ে’ই নিজ সংসার ভাংতে চায় না।’
‘সাদিদের সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে তুলিকা। সাদিদ রক্তচক্ষু নিয়ে তাকে দেখছে। সব জানা শোনার পর রাগে মাথার রগ ছিড়ে যাচ্ছে যেন সাদিদের। শুধু ঘুরে ফিরে মাথায় একটা প্রশ্ন আসছে,
__‘তুলিকা তাকে এত ভাবে ঠকালো?’
সারাজীবন তাকে এভাবে অন্ধকারে ঠেলে রাখলো?’
নিজের রাগকে ককন্ট্রোলে রাখতে পারে না সাদিদ। তুলিকার ডান হাতের বাহু ধরে তাকে ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
__‘আমাকে এতো ভাবে না ঠকালে খুব বেশি খারাপ হতো? এতো গুলো বছর ধরে অন্ধকারে রাখলে? কী দোষ আমার? তোমাকে ভালোবাসাটা’ই কি আমার দোষ ছিল? তাই তার শাস্তি সরুফ এসব? তোমরা দু’বোন মিলে আমার জীবনটা পুরু ছারখার করে দিলে। আমার সন্তানদেরও তোমাদের এই খেলার থেকে ছাড়লে না?’
বুক ফেটে কাঁন্না আসছে সাদিদের। নিজেকে একজন অসহায় মানুষ মনে হচ্ছে যে সারাজীবন একজন নারীকে ‘ভালোবেসে’ তার ধোঁকা খেয়ে জীবন পারল করলো।
বহুকষ্টে কণ্ঠনালি থেকে শব্দ বের করে সাদিদ,
__‘আমাকে এভাবে ধোঁকা না দিলেও পারতে তুলি। সারাজীবন আমি তোমাকে ভালবাসার ফল অনুসারে ধোঁকা পেলাম।’
বেশ কিছুদিন কেঁটে যায় পরিস্থিতিও অনুকূলে আসে। তিলাতের সাথে অবন্তীর প্রেমেও খুব ভাল চলছে। শুধু অপেক্ষা বিয়ের। এর মধ্যে তিলাত অবন্তীর ব্যাপারে তুলিকাকেও জানিয়েছে। তুলিকা গিয়ে অবন্তীকে আন্টিও পড়িয়ে এসেছে। শুধু বিয়ের অপেক্ষা। সব ঠিকঠাক হলেও ঠিক হয় ‘তিমেঘের’ সম্পর্ক। মেঘালয়ের সাথে তিয়ানার দেখাও হয় না বহুদিন। তবে সে আলাপ পায় মেঘাল্প্য প্রতিদিন আসে তার বাড়িতে। নানা রকমের খাবার নিয়ে আসে। আসবে নাই বা কেন! তার পেটে যে মেঘালয়ের সন্তান বেড়ে উঠছে। তাই নিজ সন্তানের জন্য হেলদি খাবার নিয়ে আসে। ইদানিং তিয়ানার মনে ভয় ঢুকেছে। দিন যত গড়াচ্ছে তার ভয়ও ততোটা বাড়ছে। শুধু একটা’ই ভয় তার মেঘালয় যদি তার সন্তানকে তার থেকে কেঁড়ে নেয়। ভাবলে’ই কলিজা ছোটো হয়ে যায় তিয়ানার। তখন মায়ের কোলে মাতগা রেখে বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। মেয়ের মুখের দিকে তাঁকাতে পারে না তুলিকা। মেয়েটা শোকে দিন দিন চিমটে যাচ্ছে। কিন্তু! কী’ই বা করবে সে? মেঘালয় তো অন্যকাউকে ভালোবাসে। শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কিছু’ই করার নেই তার। সাদিদও দিন দিন মুড়িয়ে যাচ্ছে। নিজেকে দোষ দিচ্ছে সে। কেন তারাহুরো করে মেয়ের বিয়ে দিলো সেদিন। সেও বা কি করতো? মেয়ের মুখ থেকে মেঘালয়কে ভালোবাসার কথা শুনে অপেক্ষা করতে চায় না সাদিদ। তার ভয় হচ্ছিল যদি তিয়ানার জীবনটাও তার মতো ভালবাসাহীন হয়! সেই ভয়ে তারাহুরো করে মেঘের সাথে এক প্রকার জোড় করে তিয়ানার বিয়ে দিয়েছিল। মেয়ের ঘরের সামনে যায় কিন্তু ঘরে গিয়ে মেয়ের মুখের দিকে তাঁকানোর সাহস পায় না সাদিদ। নিজেকে দোষি মনে হয় তার। ভালো করতে গিয়ে নিজের মেয়ের এত বড় ক্ষতি করলো সে?
তবে সাদিদ নিজেও বুঝতে পারেনি মেঘালয়ের মতামত না নিয়ে’ই অভীক তাকে ‘হ্যা’ বলেছিল।
“পড়ার টেবিলের উপর ডিভোর্স পেপারটা রেখে থম মেরে চেয়ারে বসে আছে তিয়ানা। হাতে কলম কিন্তু সাহস করে সাইন করতে পারছে না সে। বারবার মনে হচ্ছে সাইনটা করলে’ই সে মেঘালয়ের থেকে দূরে সরে যাবে। পরক্ষণে ভাবে সে,,
__‘কোনো দিন কি সে মেঘালয়ের কাছের ছিল? যে এখন এই সাইনের মাধ্যমে দূরে সরে যাবে।’
বুকের ভিতর ভাড়ি হয়ে আসে তিয়ানার। খুব কাঁন্না অয়ায় তার। কিন্তু সে কাঁদবে না, সে কাঁদতে চায় না ওই পাষান মানুষটার জন্য এক ফোটা চোখের জলও সে ফ্বলতে চাচ্ছে না। কিন্তু, আজ- কাল তার চোখও তার সাথে বেইমানি করছে। যখন তলহন সে না চাইতেও চোখ দিয়ে জল বের হয় তার। কাঁন্না করে সে। আজও করলো খুব কাঁদলো শত চেষ্টা করে নিজের কাঁন্না গুলোকে আঁটকাতে পারে না তিয়ানা। দু’হাতে নিজের পেট জড়িয়ে কেঁদে দেয় তিয়ানা। কেঁদে কেঁটে নাকের পানি চোখেরর পানি এক করে ফেলে সে। পরে কাঁন্না থামলে এক পলকে হাতে কলম তুলে গটগট করে নিজের নামটা লিখে দেয় সে। হাত প্রথমে একটু কাঁপলে নিজের মনকে শক্ত করে সে। তবে মনে মনে এটাও প্রতিজ্ঞা করে তিয়ানা। নিজ সন্তানকে সে মেঘালয়ের হাতে কোনোদিন তুলে দেবে না। যতদিন সে নিজে বেঁচে আছে ততদিনে সে কখনো তার সন্তানকে কেঁড়ে নিতে দেবে না। মেঘালয় তাতে যত’ই যা করুক না কেন!
চলবে?
{আজ কাল আমার যেন কি হইছে। একদম’ই লেখালেখি করতে ইচ্ছে করছে না। লেখাও মন মতো হচ্ছে না। কেমন যেন ক্ষাপ ছাড়া হচ্ছে। আপনাদের কেমন লাগছে জানি না কিন্তু আমার মনে হচ্ছে লেখার তাল আউলে ফেলছি আমি। কেমন যেন উল্ট পাল্ট হচ্ছে। যাক রিচেক করা হয়নি দেরী হলো তাই।)