আমার_আদরিনী আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম) পর্ব-৩১

আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-৩১
তিয়ানার হাত নিজের হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে তার পাশে বসে আছে মেঘালয়। তিয়ানা তখনও চেতনাহীন। মেয়েটার দিকে ভালো করে দৃর্ষটি রাখে মেঘালয় এ ক’দিনে কেমন শুকিয়ে গিয়েছে। চোখের নিচেও কাকি জমেছে কিছুটা। মেয়েটা কি রাতে ঘুমায় না?
কেবিনের বাইরে করিডর এ রাখা চেয়া বসে রাগে ফোস ফোস করছে তিলাত। মেঘালয়কে তিয়ানার কাছে যেতে দেয়াটা তার একদম’ই পছন্দ হয়নি। মায়ের ভয়ে কিছু বলতেও পারছে না সে। বোনের আশে পাশেও মেঘালয়কে সে সহ্য করতে পারছে না। মেঘালয়কে দেখলেও তার গায়ে জ্বালা পোড়া শুরু হয়। কিন্ত্য, মেঘালয়’ই তার জানপ্রানের বন্ধু ছিল। সময়ের সময়ের সাথে সাথে তাদের বন্ধুত্বেও ফাটল শুরু হয়েছে। ফাটল হবেও বা না কেন, কোনো ভাই কি নিজের বোনের দুঃখ, কষ্ট সইতে পারে? আর যে এই দুঃখ, কষ্টের কারণ তাকেও কি করে সইবে সে?

পেটে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে তিয়ানা। চোখ থেকে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরে তার। তবে পেট থেকে হাত দু’টো সরিয়ে গাল গড়িয়ে পরা জল মুছে না সে। তার পাশে’ই টুলে বসে আছে মেঘালয় নিস্তব্ধ হয়ে৷ তার যেন বিশ্বাস’ই হচ্চগে না সে বাবা হতে চলেছে। তিয়ানার ওই ছোট্ট পেটে নাকি তার সন্তান। তিয়ানার পেটের দিক দেখে চোখ সরায় না মেঘালয়। এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকে সে। ওই খানে নাকি তার বেবি আছে। হাত বাড়িয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে তিয়ানার পেটে হাত রাখে মেঘালয়। অনুভূতিতে কেঁদে দেয় মেঘালয়। ভাড়ি অবাক হয় তিয়ানা। মেঘালয় কাঁদছে? তার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে সে কখনো মেঘালয়কে কাঁদতে দেখেনি। আজ দেখছে। কিন্তু মেঘালয় কাঁদছে কেন? প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে তিয়ানার। তবে মুখ ফুটে বলে না। তার বলতে ইচ্ছে করে না। মেঘালয়ের সাথে কথা বলতেও আজ কাল ইচ্ছে করে না তার। মাঝে ভাবে, সে কি অনুভূতি শূন্য হয়ে গেল?
মেঘালয় হালকা হেসে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে প্রশ্ন করে,,
__‘তিনু! ডক্টর কি ঠিক বলল? তোর এই ছোট্টো পেটে কি আমার বাবু আছে?’
মেঘালয়ের করা প্রশ্নে বুকে তোলপাড় শুরু হয় তিআনার। আড়চোখে মেঘালয়ের দিকে তাঁকায়ও বার কয়েক। তবে উত্তর দেয় না সে। মেঘালয়ও উত্তর অপেক্ষা না করে বলতে থাকে,
__‘আচ্ছা! বাবুকে আমি ফিল করতে পারবো? তোর পেটে কান পাতলে ‘ওকে’ অনুভব করা যাবে? ‘ও’ মেয়ে হবে নাকি ছেলে? তিনু ডক্টর কি সত্যি’ই বলেছে তোর পেটে আমার বাচ্চা আছে?’
মুখে কিছু না বললেও মনে মনে মুখ বাঁকায় তিয়ানা। সাথে বকাঝকাও করে বেশ,
__‘এমন ভাব করছে যেন আমি ডক্টর কে ঘুষ খাইয়ে মিথ্যে বলছি।’
নিজ মনে ব্যঙ্গ করে বলে তিয়ানা,,
__‘তিনু ডক্টর কি ঠিক বলল, তোর পেটে কী সত্যি’ই আমার বাচ্চা? ক্যান ভাই? আমি কী অন্যের বাচ্চা পেটে নিয়ে ঘুরছি নাকি? খারুস একটা। ‘

‘তিয়ানাকে হস্পিটাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে দিন তিনেক হলো। তিন দিন’ই মেঘালয় প্রতিদিন একবার করে এসে যায়। এসে ঘন্টার পর ঘন্টা তিয়ানার সাথে হাজারও বকবক করলেও তিয়ানা মুখ থেকে কোনো কথা বের করতে পারে না সে। এমন যে, তিয়ানা তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। এবং ঠিক তাই। তিয়ানা তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। কারণ তিয়ানা শুধু তার সাথে কথা বলছে না বাকি সবার সাথে হেসে হেসে দাত বের করে কথা বললেও তার সাথে গোমড়া মুখ করে হলেও কথা বলে না। তাতে একটু বেশি’ই কষ্ট লাগে মেঘালয়ের কিন্তু সে সেটাকে পাত্তা দেয় না। যখন তার টার্ম আসবে সে সুদে আসলে উসুল অবশ্য’ই করবে সবটা। এখন নিজের লক্ষে পৌঁছানোর জন্য চুপ করে থাকতে হচ্ছে তাকে। আর ওই বাদরির বাদরামি গুলোও সহ্য করতে হচ্ছে। এ ক’দিন সে অনেক অনেক হেলদি খাবার কিনে এনেছে বউটার জন্য কিন্তু তার আনা খাবার ছুয়ে অব্দি দেখেনি।

‘‘তিয়ানাদের বাসায় ড্রইং রুমে বসে আছে সবাই। আজ একটা ফয়সালা হবে মেঘ-তিয়ানার সম্পর্কের এভাবে টেনে নিয়ে যাওয়া যায় না। তাই সাদিদ আর অভীক মিলে বৈঠক বসায়। তিয়ানা সোফার এক কোণে মায়ের সাথে লেগে গুটিসুটি মেরে মাথা নিছু কররে বসে আছে৷ তার সোজাসুজি সোফায় বসে আছে মেঘালয়। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে দেখে যাচ্ছে তিয়ানাকে। অয়ারলে সে এই মেয়েটাকে কাঁচা চিবিয়ে খেত এখন। এতদিন ধরে তাকে ইগ্নোর করার ফল বুঝাতো হারে হারে।
অভীক সবার দিকে একবার তাঁকিয়ে নিয়ে গলা খাকাড়ি দিয়ে মেঘকে উদ্যেশ্য করে প্রশ্ন করে,,
__‘মেঘ তুমি কি চাচ্ছো?’
মেঘালয় তিয়ানার দিকে কটমট করে তাঁকিয়ে থেকে নির্লিপ্ত কন্ঠে উত্তর দেয়,
__‘আমি আমার গার্লফ্রেন্ডকে চাচ্ছি আব্বু।’
মেঘালয়ের এমন উত্তরে তিয়ানার মনে হলো তার মুকের উপর কেউ পাথর রেখে দিয়েছে। বহু কষ্টে কাঁন্না আঁটকে ঢোক গিলে সে।
মেঘালয়ের এমন উত্তরে সবাই নড়েচড়ে বসে। তিয়ানা প্রেগন্যান্ট তারপরও কেন মেঘাকয় সেই এক’ই কথা বলছে। অভীক থমথমে কন্ঠে বলে,
__‘তিয়ানা প্রেগন্যান্ট জানা সত্যে’ও কেন এসব বলছো তুমি?’
__‘আমি তো আমার সন্তানকে ফেলে দিচ্ছি না বা তিয়ানাকেও। আমি শুধু এটা বলতে চাচ্ছি আমি বৃষ্টিকে ছাড়তে পারছি না। ‘
মেঘালয়ের এমন উত্তরে তিলাতের মাথায় রাগ চটে যায়। নিজের হাত খামচে নিজেকে কন্ট্রোলে রাখে।’
মুখ খুলে তুলিকা গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
__‘তাহলে তুমি কি চাও?’
__‘আমি বৃষ্টিকেও বিয়ে করতে চাচ্ছি।’
মেঘালয়ের এহনো কথায় রেগে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় তিলাত। রাগে ফোস ফোস করে উত্তর দেয় সে,
__‘আমার বোন সতীনের ঘর করতে পারবে না।’.
__‘তাহলে, ডিভোর্স হওয়াটা’ই বেটার হবে।’
নিরলস, গম্ভির কন্ঠে উত্তর দেয় মেঘালয়। মেঘালয়ের কথাটা কানা যাওয়া মাত্র চোখের কোণ থেকে জল গড়িয়ে পরে তিয়ানার। আপনা-আপনি পেটে হাত চলে যায় তার। অবাক, বিস্মিত দৃষ্টিতে নিজের স্বামীর দিকে তাঁকায় তিয়ানা। বুকের ভিতরটা কেমন ভারী হয়ে আসে তার। ‘
‘ মেঘালয়ের উত্তর কেউ হজম করতে পারে না। হতবাক হয়ে মেঘালয়কে দেখে সবাই। মৌমিতা হতভম্ব হয়ে নিজের ছেকের মুখের দিকে চেয়ে থাকে। মেঘ তো তিয়ানাকে ভালোবাসে। ভালোবেসেও কেন এসব করছে?
তিয়ানাকে একবার দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুলিকা। হতাসা কন্ঠে বলে সে,,
__‘বেশ তুমি যা চাচ্ছো তাই হবে। ডিভোর্স হবে।’
সাদিদ ধমকে উঠে বলে,,
__‘কি বলছো তুমি? মেঘের সাথে সাথে তোমার মাথাটাও গেছে?’
__‘যায়নি তবে যাবে। এমন একটা সম্পর্কে আমি আমার মেয়েকে রাখবো না।’
তিয়ানাকে ধরে নিজের সাথে আগলে জিজ্ঞেস করে তুলিকা,
__‘আম্মা বল তুই কি চাস? মেঘ যা চাচ্ছে তুইও কি তাই চাচ্ছিস?’
তিয়ানা মৃদু হেসে মেঘালয়ের চোখের দিকে তাঁকায় মেঘালয় এতক্ষণ তাকে’ই দেখছিল। তিয়ানার চাহনি দেখে থতমত খেয়ে দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরায়। হাসে তিয়ানা। হেসে মাথা নাড়িয়ে বলল,
__‘উনি যখন ডিভোর্স চাচ্ছেন। তো ডিভোর্স’ই হবে।’
অভীক মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলে,
__‘যদি এটাই তোমারর শেষ কথা হয়। আমার উত্তরও শুনে রাখো আমিও তোমাকে ত্যাগ করবো।’
মেঘালয় হেসে উত্তর দেয়,,
__‘আমি আমার ভালোবাসা ছাড়তে পারবো না আব্বু। আংকেল, আন্টিম্মু তো খুব ভালো করে জানে ভালোবাসার মানুষকে ছাড়া বাঁচা কতটা কঠিন। আশা করছি তারা অন্তত বুঝবে আমাকে।’
তুলিকা এক হাতে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে সাদিদের দিকে একবার তাঁকিয়ে বলে,
__‘বুঝি, আর বুঝি বলে’ই তোমার প্রস্তাব টা আমরা মেনে নিলাম। আশা করছি, আমার মেয়েও মেনে নিবে। তোমাদের ডিভোর্স হবে।’
__‘থ্যাংকস! আন্টিম্মু তুমি অন্তত বুঝলে। আমার একটা শর্ত আছে, তিয়ানার সাথে আমার ডিভোর্স হলেও আমি নিজ সন্তানকে ছাড়বো না। তিয়ানার গর্ভে থাকা সন্তানের উপর যতটা তিয়ানার অধিকার আছে ঠিক ততটা আমারও আছে।
‘তুলিকা মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দেয়,
__‘তোমার শর্তও মেনে নিলাম। কারণ এই সন্তানের উপর আমার মেয়ের না তোমারও অধিকার আছে।’
সাদিদ তুলিকাকে উদ্দেশ্য করে ক্ষিপ্ত মেজাজে বলে,
__‘আজ তিয়ানা তোমার নিজের সন্তান না বলে এটাকে তুমি মেনে নিচ্ছো তুলিকা। বুকে হার রেখে বলতো তিয়ানা তোমার নিজের সন্তান হলে কি এটা মেনে নিতে?’
সাদিদের এমন প্রশ্নে হোহো৷ করে হেসে ওঠে মেঘালয়। মেঘালয়ের হঠাৎ হাসি দেখে সবাই সবাইক হয়। মেঘালয় হাসি থামিয়ে বলল,,
__‘তিয়ানা তো আন্টি আম্মুর’ই সন্তান। নিজের পেটের সন্তান।’

চলবে?
( কি লিখছি জানি না রিচেকও করিনায়। মেবি ভালো হয়নি। আর হ্যা গল্প শেষের পথে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here