আমার_আদরিনী আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম) পর্ব-৩০

আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-৩০
দরজায় খিল আঁটকে বসে আছে তুলিকা। অতিরিক্ত ভয়ে শরীর কাঁপছে তার। ঘুরে ফিরে মাথায় একটা’ই প্রশ্ন আসছে, তিয়াসা কি শেষ অব্দি তার মেয়েকেও কেঁড়ে নিলো? বোন হয়ে বোনের সব কেঁড়ে নিয়েও খ্যান্ত হলো না? শেষে তার সন্তানকেও? ডুকরে কেঁদে ওঠে তুলিকা। তার আর যন্ত্রণা গুলো সহ্য হচ্ছে না। এর চেয়ে হয়তো তার মরণ ভাল ছিল। মরে গিয়েও তার সব সুখ কেঁড়ে নিয়ে গেল তিয়াসা। আজ প্রথম তুলিকার ভিষণ ক্ষোভ জন্ম নেয় নিজের বোনের প্রতি।
পাশের ঘরে থেকে শোনা যাচ্ছে সাদিদ তিয়ানাকে জিজ্ঞেস করছে কি করে সে এসব জানলো?’
“সোফায় মাথা নিচু করে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে তিয়ানা। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরছে। তিলাত দরজা সামনে দাঁড়িয়ে দরজা ধাক্কিয়ে মা’কে ডেকে যাচ্ছে। সাদিদ তিয়ানার পাশে বসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,
__‘তিয়া মা তুমি কি করে এসব জানলে? ‘
ফুঁপিয়ে ওঠে তিয়ানা। জলে চিকচিক করা চোখ নিয়ে বাবার দিকে তাঁকায় সে। কেঁদে দিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। সাদিদ পরম যত্নে মেয়েকে আগলে নেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে বলল,
__‘বললে না কি করে জানলে?’
__‘ কিছু মাস আগে রাতে যখন মেঘ ভাইয়াদের বাড়িতে খেতে গিয়েছিলাম আমরা তখন তোমার আর পাপ্পির কথা শুনে ফেলি আমি। তুমি যখন পাপ্পিকে চগাদের দাঁড়িয়ে সব বলছিলে সিড়ির রুম থেকে আমি শুনে নেই সব।”
মেয়ের কথা শেষে দীর্ঘশ্বাস গেকে সাদিদ। এটা তো হওয়ার’ই ছিল এক দিন না এক দিন তো জানিতো’ই তিয়ানা। কিন্তু, আজ তার তুলিকার জন্য বড্ড কষ্ট হচ্ছে। বুকের ভিতির কেমন খা খা করছে। তিয়ানা বাবার বুক থেকে মাথা তুলে প্রশ্ন করলো,,
__‘আমার মা খুব খারাপ ছিল তাই না আব্বু?’
উত্তর দেয় না সাদিদ। মেয়ের মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাঁকিয়ে থাকে সে। বোনের কথা গুলো শুনে সেখানে আর দাঁড়ায় না তিলাত। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরে। ভিতরের ক্ষত গুলো কেমন তাজা হয়ে উঠলী আবার। নিজের মায়ের (তিয়াসা) আরও বেশি ক্ষোভ জন্ম নেয় তার। আজ মানিষটা না থেকেও তাদের সংসারে আগুন লাগালো।’
সাদিদকে চুপ থাকতে দেখে তাকে হালকা ঝাঁকিয়ে জানতে চাইলো তিয়ানা। সাদিদ মেয়ের মুখের দিকে তাঁকিয়ে মৃদু হেসে উত্তর দিলো,
__‘খারাপ ছিল না। শুধু দু’জন ভালোবাসার মানুষের মধ্যে ঢুকে পরেছিল। যার ফলাফল অনুসারে আমাদের সবার জীবন আজ এতটা অগুছালো।’
সাদিদের বলা শেষে উঠে নিজ ঘরে গিয়ে খিল আঁটকে দেয় তিয়ানা। সাদিদ খানিকক্ষণ মেয়ের ঘরের দরজার দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থেকে নিজ ঘরের দিকে এগিয়ে যায়।’

‘অতীত’
সেদিন সাদিদের ঘুম ভাংগার পর তার কিছু মনে না থাকলেও নিজের অবস্থা দেখে সাথে নিজ ঘরে কাউকে না দেখলেও এটুকু বুঝে যায় গত কাল রাতে তার সাথে কেউ ছিল। তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়েছে প্রথম সন্দেহটা তার তিয়াসার প্রতি’ই হয় কারণ তিয়াসা এর আগেও একবার সুযোগ নিয়েছিল। রাগ হয় সাদিদের রেগে তিয়াসার ঘরে গিয়ে তিয়াসাকে ধমকেও আসে। তিয়াসা জানতো সে ছিল না আর সে না থাকলে এই বাড়িতে দ্বিতীয় তুলিকা। তাহলে তুলিকা’ই হবে হয়তো। তবে তিয়াসা সাদিদের ভুল ভাংগায় না সে। নিজের সংসার খুয়ানোর ভয়ে। দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে সাদিদের বিভিন্ন কটু কথা গুলো হজম করে নেয় সে। কিন্তু, বিপত্তি বাঁধে মাস দেড়েক পর যখহন তুলিকা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হস্পিটালাইজ হয়। এবং জানতে লারে সে মা হতে চলেছে। থমকায় তিয়াসা তুলিকা নিজেও বিস্মিত হয়। তিয়াসা জানতো সে ভুল করেছে এরপর যা সে করবে সেটাও তার ভুল’ই বটে কিন্তু কী করার ছিল তার? সাদিদ তাকে মেনে না নিলেও তাদের সংসার জীবনের ততদিনে বহুবছর পার হয়ে গিয়েছিল। তাদের একটা সন্তানও ছিল। তাকে মেনে না নিলেও সাদিদ তার তিলাতকে কখনো দূরে সরাইনি মেনে নিয়েছিল সে তিলাত। এবার যদি সাদিদ জেনে যায় তুলিকার গর্ভে তার সন্তান বেড়ে উঠছে। সাদিদকে সে কখনো’ই আর পাবে না। তিয়াসা সেদিন নিজের সংসার বাঁচাতে দ্বিতীয় বার তুলিকার পায়ে পরে ভিক্ষা চায় সাদিদকে। বরাবরের মতো সেদিনও তুলিকা বোনকে’ই বেঁছে নেয়। মেনে নেয় তিয়াসার কথা। আমেরিকা চলে যাওয়ার বাহানা করে আলাদা ফ্লাট নিয়ে আলাদা থেকে যায় সে। এদিকে তিয়াসা নিজেকে সাদিদের সামনে প্রেগন্যান্ট দাবি করে। সব কিছু’ই মৌমিতার দৃষ্টি গোচরে ছিল। এমনকি তুলিকার সিজার অব্দি সে করেছিল। এবং তুলিকা নিজের সন্তানকে বোনের হাতে তুলে দেয়। যা সবটায় আট বছর বয়সি মেঘালয় জেনে যায়। সেদিন স্কুল থেকে সোজা মায়ের হস্পিটালে চলে আসে মেঘালয়। মায়ের কেবিনের সামনে এসে’ই সবটা দেখে ফেলে সে, তার আন্টি আম্মু নিজের সন্তানকে কি করে বলিদান দিতেছিল। মেনে নিতে না পারলেও কাউকে সেটা জানতে অব্দি দেয় না মেঘালয়। সে সত্যিটা জানে নিজের মধ্যে’ই গোপন রাখে বিষয়টা। ‘

‘বর্তমান’
হস্পিটালে তিয়ানাকে কোলে নিয়ে ছোটাছুটি করছে তিলাত। হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেকে তিয়ানা। পানির ছিটাতেও জ্ঞান ফিরছিলো না তার। ভয় অএয়ে যায় তিলাত তৎক্ষনাৎ বোনকে কোলে তুলে হস্পিটালে চলে আসে সে। তিয়ানাকে কেবিনে দিয়ে করিডোরে থাকা চেয়ারে বসে পরে তিলাত। ততক্ষণে তুলিকাও এসে পরে। মায়ের উপস্থিতি টের পেয়ে বসা অবস্থাতে’ই মা’কে ঝাঁপটে ধরে তিলাত। চোলহ থেকে তার জল গড়িয়ে পরে। মনে মনে প্রতিজ্ঞাও করে, মেঘালয়কে তার বোনে কাছে ঘেষতে অব্দি দেবে না সে। আজ মেঘালয়ের জন্য তার বোনের এই অবস্থা। ছেলের পিঠে, মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তুলিকা। নিজেকে উদ্ভ্রান্তের মতো লাগছে তার। তার সুখের সংসারটা কেমন ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে। এটা তো তার কাম্য ছিল না। এত কষ্ট কেন তার? পৃথিবীর সব যন্ত্রণা, সব কষ্ট যন্ত্রণা কী শুধু তার আর তার সন্তানদের জন্য’ই?
মায়ের থেকে সরে গিয়ে মা’কে পাশে থাকা চেয়ারে বসে তিলাত। তুলিকা পাথরের মতো বসে থাকে। ভালো করে মা’কে পর্যবেক্ষণ করে তিলাত। মনে হলো, তার মা এ ক’দিনে কেমন বুড়িয়ে গিয়েছে। চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেকে তিলাত। মেঘালয়ের প্রতি জমে থাকা রাগটা যেন তীর তীর করে বাড়ছে তার। নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে পরেছে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় সে। হাত কচলে করিডরের এ মাথা থেকে ‘ও” মাথা অব্দি হাটতে থাকে নিজের রাগটাকে আয়তত্ত্বে আনার জন্য। তবে হেটে মেঘালয়ের কেবিন অব্দি এসে’ই মাথা বিগড়ে যায় তার। ভিতর থেকে খিল খিল করে হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। নিজেকে আঁটকাতে না পেরে মেঘালয়ের কেবিনের দরজায় জোরে ধাক্কা দিয়ে ঢুকে পরে সে।
বৃষ্টির সাথে কোনো একটা বিষয় নিয়ে কতগা বলতে বলতে হাসছিলো মেঘালয়। তখন কেবিনের দরজা জোরে ধাক্কানোর শব্দে ঘুরে তাকিয়ে দেখে তিলাত এসেছে। তিলাত কে দেখে মুখের হাসির রেখাটা বড় করে বলল,,
__‘হঠাৎ তুই? আয় বস।’
তিলাত একবার বৃষ্টি নামক মেয়েটার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে মেঘালয়ের দিকে তাকায়। রাগে সামনে থাকা টেবিলকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় সে। তিলাতের এহনো কান্ডে রেগে যায় মেঘালয় তবে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজেকে সংযত করে সে। বৃষ্টি হতভম্ব হয়ে যায় চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ভিতু চোখে তিলাতকে দেখে সে। তিলাত দেখতে ভয়ংকর লাগছে রাগে ফর্সা মুখ লাল হয়ে গিয়েছে। শরীর কাঁপছে তিলাত বড় বড় শ্বাস ফেলে রেগে চিল্লিয়ে বলল,,
__‘তোর জন্য আমার বোন আজ হস্পিটালাইজড আর তুই এখানে বসে এই মেয়েটার সাথে হাসি ঠাট্টা করছিস।’
তিয়ানার অসুস্থতার খবরে চোখেহের দৃষ্টি শীতল হয়ে আসে মেঘালয়ের। অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
__‘মানে?
মেঘালয়ের প্রশ্নে তাচ্ছিল্য হাসে তিলাত। তাচ্ছিল্য স্বরে বলল,
__‘ভালোবাসিস নাকি আমার বোনকে? এই ভালোবাসার নমুনা ?

চলবে?
(আজ কেমন যেন লেখা শেষ’ই হচ্ছিলো না। 😑😑 কেউ ছোটো ছোটো বলবেন না। বিয়ে টিয়ের মধ্যে লিখতেছি এই অনেক আমার জন্য 😑😑) আর হ্যা রিচেক করিনি। দেরী হয়ে গেছে তাই)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here