Child_Of_Night Part-21

0
1515

#Child_Of_Night
Writer: Tanjima Islam

__________________[21]___________________

প্রায় সাথেসাথেই নীলচে-সবুজ রঙা আলো গুলো চক্রাকারে চারিদিকে ছিটকে গিয়ে মার্বেল খচিত দেয়ালে আছড়ে পড়লো। কক্ষটা মৃদু কেপে উঠল। আঁতকে উঠল নীরা। মহিলাটা অশ্রাব্য ভাষায় নীরা’কে গালি দিতে লাগল। তার চোখেমুখে স্পষ্ট আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।

সে নীরা’কে ফেলেই পেছন ফিরে ছুটে গেল কোথাও। সেইসাথে সাথেই কক্ষের দরজা বন্ধ হয়ে গেলো। নীরা আতংকিত চোখে কক্ষের চারিদিকে তাকিয়ে বের হওয়ার পথ খুজতে লাগল।

কিন্ত কোথাও এক চিড় ফাকও নেই বের হওয়ার। নীরা অনুভব করল মেঝের সেই ফাটলে আরও কিছু চিড় ধরছে! কিন্তু মিলিয়ান কোথায়!? শূন্যে মিলিয়ানকে দেখতে না পেয়ে আরেক দফা আঁতকে উঠল নীরা। পুরো কক্ষে শুধু সে একাই আছে। তার থেকে হাত কয়েক উঁচুতে ভেসে বেড়াচ্ছে সেই নীলচে-সবুজ রঙা আলো!

_____________________________

গাড়ি থেকে নামার আগেই একটা তীব্র ঝাকুনি অনুভব করল মরিস আর সোফিয়া। যেন একমুহূর্তে মাটি কেপে উঠল, সেইসাথে দুলে উঠল তাদের গাড়িটাও। সোফিয়া অবাক হয়ে বলল,

—–” এটা কি ছিলো!?

—–” আর্থকুইক!

কিছুটা উদ্বেগ প্রকাশ পেলো মরিসের কন্ঠে। সোফিয়া দ্রুত পায়ে গাড়ি থেকে নেমে কটেজের বারান্দায় তাকিয়ে দেখল, সেই লোকটাকে আর দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু একটু আগেও তো লোকটা ওখানেই পায়চারি করছিলো। কোথায় গেলো সে!? সোফিয়া নামার পরপরই মরিস নেমে এলো গাড়ি থেকে।

—–” চল ভেতরে যাই।

সোফিয়ার কথা শুনে মরিসও তাতে সায় দিয়ে এগিয়ে চলল কটেজের দিকে। হটাৎ করেই শীতটা যেন আরও জাকিয়ে বসেছে। আকাশে সূর্য আড়াল করে ঘনিয়ে আসছে তীব্র কুয়াশা। লেকের পাড়ের সবুজ গাছপালা গুলো যেন ধূসর রঙ ধারণ করতে শুরু করেছে।

দুজনে কটেজের বারান্দায় এসে ওক কাঠের মজবুত দরজায় ঝোলানো আংটা ধরে নক করল। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না। এমনকি বেশ কিছুক্ষণ পরও দরজাটা কেউ খুলল না!

—–” চল, অন্য কোনো দিক দিয়ে ভেতরে যাওয়ার পথ আছে কি দেখি।

সোফিয়া সায় দিতেই মরিস দ্রুত পায়ে বারান্দা থেকে নেমে কটেজের পেছনের দিকে এগিয়ে গেলো। সোফিয়া কটেজের বারান্দা থেকে নামতে গিয়ে দেখল, কটেজের ধার ঘেঁষে একটা কাঠের দরজা দেখা যাচ্ছে। সোফিয়া দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে দেখল দরজায় হাতল বা আংটা জাতীয় ধরার মতো কিছুই নেই। একেবারে সমতল। সোফিয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে ধারালো কিছু খুজতে লাগল, যা দিয়ে দরজাটা ভাঙার ব্যবস্থা করা যাবে।

মরিস কটেজের পেছনে এসে সামনে এগোনোর পথ খুজে পাচ্ছেনা। লতানো গাছপালা দিয়ে ঝোপ হয়ে আছে পেছনটা। কিন্তু নিচের মাটি দেখে বোঝা যাচ্ছে, এখানে নিয়মিত চলাচল হয়। তাহলে কি এটা কোনও অদৃশ্য দেয়াল!?

এমন অদ্ভুত চিন্তা মাথায় আসতেই মরিসের নিজের ওপরেই বিরক্ত লাগছে। এরমধ্যে অদৃশ্য দেয়াল আসবে কোত্থেকে? এদিকে আকাশটাও কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়ছে। ঘন কুয়াশায় ছেয়ে যাচ্ছে চারপাশটা।

অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে আবারও কটেজের সামনে চলে এলো মরিস। কিন্তু সোফিয়া গেলো কোথায়? মরিস ঘুরে লেকের পাড়ে এসে দেখল, সোফিয়া একটা হাতলবিহীন দরজায় পাথর দিয়ে ভাংতে যাচ্ছে।

মরিস দ্রুত এগিয়ে গিয়ে সোফিয়ার হাত চেপে ধরতেই, সোফিয়া ভূত দেখার মতো চমকে উঠল। মরিস কিছু বলবে তার আগেই সোফিয়া মরিসের বাম হাতের কবজি চেপে দরজার ধারে এক কোনায় লুকানোর মতো করে বসে পড়ল।

ঘটনার আকস্মিকতায় মরিস হতভম্ব হয়ে গেলেও পরক্ষণেই দেখতে পেলো, এক ঝাক বাদুড় এগিয়ে আসছে কটেজটার দিকে। অতিকায় সেসব বাদুড় গুলোকে দেখে মুহুর্তের জন্য আঁতকে উঠল মরিস। বাদুড় এতবড় হতে পারে তা জানা ছিলো না তার।

ছোট থেকে সে ছোট আকৃতির বাদুড় দেখেছে। বনজঙ্গলে অবশ্য মাঝারি আকৃতির বাদুড় দেখা যায়। অতিকায় বাদুড় গুলো চক্রাকারে উড়তে উড়তে হটাৎ করেই কুয়াশার আড়ালে মিলিয়ে গেলো।

—–” বাদুড় গুলোর চোখ দেখেছিস!?

সোফিয়ার আতংকিত কন্ঠঃ পেয়ে চমকে তাকালো মরিস। সোফিয়া আশেপাশে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বুলাতে বুলাতে বলল,

—–” এখানে কিছু একটা ঘটছে। অস্বাভাবিক কিছু!

—–” সোফি! আমাদের যে করেই হোক ভেতরে যাওয়ার পথ খুজতে হবে।

সোফিয়া মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ জানালো। পেছনে সেই দরজাটার দিকে তাকিয়ে আবার বলল,” এই দরজাটা ভাংতে হবে।

—–” ভাংতে হবে মানে কি? ভাংতে হলে তো সামনে সদরদরজাটাই ভাংলে হয়। এটা ভাঙ্গার কি প্রয়োজন!?

—–” সদর দরজা যেই মজবুত! ভাংতে গেলে ধরা পড়ে যাবো শিওর! তারচেয়ে এটা ভাঙ্গাই সহজ হবে। দরজাটা বেশি পুরাতনও না, কিন্তু নড়বড়ে ধরনের।

মরিস দরজাটার দিকে তাকালো। সোফিয়া ঠিকই বলেছে, দরজাটা আসলেই নড়বড়ে। কিন্তু ভাংবে কিভাবে!? মরিস পাশে পড়ে থাকা ছোট-বড় পাথর গুলো দেখে বলল,

—–” এসব দিয়ে ভাঙ্গা যাবে না।

—–” তাহলে!?

সোফিয়া আশাহতের মতো তাকিয়ে বলল কথাটা। মরিস বসা থেকে উঠে খুব সন্তর্পনে দ্রুত পায়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। সোফিয়া সেখানেই বসে রইলো। সে বুঝতে পারছেনা মরিস ঠিক কি করতে চাচ্ছে।

_________________________________

সিমেট্রির সরু লম্বা পথ দিয়ে এগিয়ে চলেছে বিশপ আন্দ্রেস। কিছুদূর সামনেই সারলোট পলের সমাধি খুড়ছে দুজন লোক। খোন্তা, কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে চলেছে সদ্য সমাধিস্থ করা সমাধিটা। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে, ফাদার এন্ড্রু। তাকে বেশ বিচলিত দেখাচ্ছে। সে ভেবে পাচ্ছেনা তার ধারণা কি সত্যিই নাকি শুধুই ভ্রম!?

বিশপ আন্দ্রেস ফাদারের পাশে এসে দাড়ালো। তার চোখেমুখেও অজানা আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। কপালে চিন্তার ভাজ। এন্ড্রু কিছুটা ইতস্ততভাবে বলল,

—–” বিশপ! যদি মেয়েটা সত্যিই

এন্ড্রুর কথা শেষ হওয়ার আগেই বিশপ থমথমে গলায় বলল, ” শান্ত হও এন্ড্রু।

এন্ড্রু আর কিছু বলল না। তবে সে শান্ত হতে পারছেনা। অজানা আতংকে তার চোখমুখ শুকিয়ে যাচ্ছে বারবার। লোক দুটো বেশ দক্ষ হাতেই সমাধিটা খুড়ে চলেছে। তবে বেশি সময় নেওয়া যাবে না। বিকেল হলেই গীর্জায় লোকজন এসে পড়বে। তার আগেই সমাধি আবার ঢেকে দিতে হবে। আন্দ্রেস ঘাড় ঘুরিয়ে গীর্জার ঘড়ির দিকে তাকালো। এখন দুপুর দুইটা বাজে।

____________________________

কক্ষের ছাদে উড়তে থাকা নীলচে-সবুজ রঙা আলো গুলোর দিকে নীরা আর তাকিয়ে থাকতে পারছেনা। কেমন যেন ঘোর লাগছে তার। টাল খাচ্ছে তার সমস্ত শরীর।

কক্ষের এ দেয়াল থেকে ও দেয়ালে আছড়ে পড়ছে সে। নাকে অদ্ভুত একটা মিষ্টি ঘ্রাণ লাগছে। কিসের ঘ্রাণ এটা? কক্ষে তো কোনো ফুল গাছ নেই। এমনকি বাইরে থেকে আলো বাতাস প্রবেশরও পথ নেই তাহলে!?

নীরা টাল সামলাতে না পেরে ধপ করে মার্বেলখচিত সেই মেঝেতে পড়ে গেলো। চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে আসছে তার। না ঘুম না জাগা অবস্থাতেই সে দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বুজল। সেই মিষ্টি ঘ্রানটা ধীরে ধীরে ঝাঝালো হয়ে উঠছে! ঘ্রানটা যেন তার অক্সিজেনের ঘাটতি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে ক্রমশ।

সেই অবস্থাতেই নীরা শুনতে পেলো মাটি কাপানো বিকট একটা শব্দ। পরপর দুইবার! কক্ষের দরজা কি খুলে গেছে? কেউ কি তাকে বাচাতে এসেছে!? কে আসবে? ওরহান নাকি মরিস!? নীরা অবচেতন মনে বলে উঠল,

—–” নাহ, মরিস তুমি এসো না। আমি এক ভয়ানক বিপদে পা দিয়েছি। জানিনা এখান থেকে বেচে ফিরতে পারবো কি না। তুমি ফিরে যাও মরিস।

কক্ষের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল ওরহান। সে ভাবতেও পারেনি নীরা এমন একটা ভয়ানক কাজ করে বসবে। তাহলে সে নিজেই তার সাথে আসতো। কক্ষের দেয়ালে হেলান দেওয়া অবস্থায় নীরা’কে দেখতে পেয়ে তড়িৎ গতিতে ছুটে গেলো ওরহান।

দ্রুত পালস পরীক্ষা করে দেখল, নীরা বেচে আছে। কিন্তু স্বস্তি পেলো না সে। নীরা’কে যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে বের করতে হবে। সে এদিক ওদিক তাকিয়ে কক্ষের ছাদে সেই নীলচে-সবুজ রঙা আলো দেখে চোয়াল শক্ত করে বলল,

—–” বৃথা চেষ্টা করিস না মিলিয়ান। তুই এখান থেকে পালাতে পারবি না।

ওরহান দৃষ্টি নামিয়ে নীরার দিকে তাকাতেই চমকে উঠল। নীরা উঠে বসেছে। চোখ বুজে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে সে! ওরহান দ্রুত ঘাড় ঘুরিয়ে ছাদের দিকে তাকালো। সেই নীলচে-সবুজ রঙা আলো গুলো নেই!

ওরহান কিছু বুঝে ওঠার আগেই নীরা তার গলা চেপে শূন্যে তুলে ধরল! ওরহানের বুঝতে বাকি নেই, মিলিয়ান নীরা’কে আবিষ্ট করেছে! নীরা ওরহানকে এক ধাক্কায় কক্ষের দেয়ালে ছুড়ে মারলো। আছড়ে পড়লো ওরহান।

প্রায় সাথেসাথেই কোত্থেকে এক ঝাক বাদুড় এসে কক্ষের ছাদে চক্রাকারে উড়তে লাগল। নীরা চোখ বন্ধ অবস্থাতেই একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,

—–” আমি একা এখান থেকে বের হতে পারবো না। কিন্তু কারোর শরীরের মাধ্যমে তো নিশ্চয়ই পারবো, তাই না ওরহান!?

ওরহান মেঝে থেকে উঠে কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বলল,” নীরা তোকে কোনোদিন ক্ষমা করবে না! ও তোকে দেখার জন্যই এখানে এসেছিলো। আর তুই

ওরহানকে মাঝপথে থামিয়ে নীরা চেচিয়ে উঠলো, ” নীরা! নীরা! নীরা! তোর এত চিন্তা কেন নীরা’র জন্য!? পছন্দ করিস নীরা’কে!?

নীরা’র ঠোঁটের কোণায় বিদ্রুপাত্মক হাসি ফুটে উঠেছে। বাদুড় গুলো মানুষরূপী ভ্যাম্পায়ারে পরিণত হয়ে নীরা’কে ঘিরে দাড়ালো। তাদের চোখেমুখে স্পষ্ট রাগ আর আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।

তাদের বুঝতে বাকি নেই ওরহানই নীরা’কে এখানে নিয়ে এসেছে। ভ্যাম্পায়ার গুলো মন্ত্রবলে নীরা’কে বন্দী করতে গেলে ওরহান তাদের থামিয়ে বলল,

—–” থামুন সবাই! আগে নীরা’র শরীর আবিষ্টমুক্ত করতে হবে। নয়তো ও মারা যাবে!

ভ্যাম্পায়ারদের মধ্যে একজন ওরহানের উদ্দেশ্যে চেচিয়ে উঠলো, ” তাহলে কোন সাহসে আপনি মেয়েটাকে এখানে নিয়ে এসেছেন!?

ওরহান কিছু বলতে পারলো না। কি বলবে সে নিজেই জানেনা। নীরা’কে বাচাতে গিয়ে সে নিজেই তাকে বিপদে ফেলেছে। এবার অন্যজন ক্ষেপে উঠল,

—–” এই মেয়েটার জন্যেই এতো দেরি করেছিস তুই। নাহলে কবেই শয়তানটাকে ধ্বংস করে দিতাম!

ওরহানের অসহায় মুখখানা দেখে নীরা খিলখিল করে হেসে বলল, ” কি হল ওরহান!? বাচাবে না তোমার নীরা’কে!?

ওরহান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। চোখ জোড়ায় যেন ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠেছে তার।

____________________________

মরিস গাড়িটা ঘুরিয়ে লেকের ধারে নিয়ে গেছে যাতে কেউ তাদের উপস্থিতি টের না পায়। লেকের এক পাশে একটা লোক বসে ঘাস কাটা মেশিনে কি যেন করছে। তার পাশে শাবল, কোদাল ধরনের বেশ কিছু ধারালো জিনিসপত্র দেখতে পেলো মরিস।

ওখান থেকে দুটো নিলেই দরজাটা ভাঙ্গা যাবে। মরিস লেকের পাড়ে পায়চারি করতে করতে লোকটার দিকে নজর রাখছে। সে কি লোকটার কাছে গিয়ে চাইবে? নাকি অপেক্ষা করবে লুকিয়ে জিনিস গুলো নিয়ে আসার জন্য?

মরিসের ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে লোকটা তার মোটরবাইকে উঠে ফেরিঙ্গাসি লেক থেকে বেরিয়ে গেলো। এটাই সুযোগ। মরিস বিন্দুমাত্র দেরি না করে একরকম ছুটে গেলো সেই জিনিসপত্রের দিকে। শাবল, কোদাল না নিয়ে দুটো কুড়াল নিয়ে সে আবার ছুটে এলো।

সোফিয়া মরিসের অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে দরজার এক কোনায় একটা ফোকর দেখে, মাথা নিচু করে ভেতরে দেখার চেষ্টা করল। কিন্ত ভেতরে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে পেলো না সে। এই দরজা খুললে আদৌ কি তারা নীরা’র কাছে পৌছাতে পারবে!?

হটাৎই দরজা খোলার শব্দ পেয়ে দরজা থেকে ছিটকে সরে এলো সোফিয়া। ভেতর থেকে কেউ দরজা খুলছে? সে কোথায় যাবে এখন? মরিস তো এখনও এলো না!

হাতলবিহীন দরজাটা খুলে সেই মধ্যবয়সী মহিলা বেরিয়ে এলো। বাইরে বেরিয়ে সে মন্ত্রবলে দরজাটা বন্ধ করে দিতে যাবে, তার আগেই সোফিয়া পেছন থেকে একটা খাবলা পাথর দিয়ে মহিলার মাথায় আঘাত করল। কিন্তু মহিলা মাথায় আঘাত পেয়েও পড়ল না। সে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে আস্তে-ধীরে সোফিয়ার দিকে ফিরে তাকালো।

মহিলার সেই চুনি পাথরের ন্যায় জ্বলন্ত চোখ জোড়া দেখে আত্না কেপে উঠল সোফিয়ার। একটা মানুষের চোখ কিভাবে এতো ভয়ংকর হতে পারে ভাবতে পারলো না সে। মহিলাটা এক থাবায় সোফিয়ার গাল টিপে ধরে তার চোয়াল ফাক করল।

সাথেসাথেই তার চোয়াল ভেদ করে বেরিয়ে এলো এক জোড়া তীক্ষ্ণ শ্বদন্ত। সোফিয়ার মনে হল এ কোনো সাধারণ মহিলা না, মানুষরূপী পিশাচিনী! ভয়ে আতংকে সোফিয়ার চোখমুখ রক্তশূণ্য হয়ে গেছে। চিৎকার দিতে চেয়েও সে পারছেনা। যেন তার কন্ঠঃ নালীতে শক্ত কিছু আঁটকে আছে।

মহিলাটা তার শ্বদন্ত জোড়া সোফিয়ার ঘাড়ের কাছে নিতে যাবে ঠিক তখনই মরিসের কুড়াল গেথে গেলো তার মাথায়। খুলি ভেদ করে একেবারে মগজ বেরিয়ে এসেছে শয়তানটার।

সোফিয়ার গাল হালকা হয়ে এলো। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষরূপী পিশাচিনীটা হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেলো মাটিতে। মরিস এক মুহুর্ত হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সে জানেনা কাকে মেরেছে। কিন্তু সে খুন করেছে এটা ভাবতেই তার রক্ত হিম হয়ে যাচ্ছে।

সোফিয়াও পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। আরেকটু হলেই তার প্রাণটা বেরিয়ে যাচ্ছিলো প্রায়। মরিসের হাত থেকে কুড়ালটা পড়ে গেলো। আরেক দফা আঁতকে উঠল সোফিয়া। আতংকিত চোখে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।

_____________[চলবে]_____________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here