#Child_Of_Night
Writer: Tanjima Islam
__________________[23]__________________
অনেক চেষ্টা করেও হেনাকে এক গ্লাস পানিও খাওয়াতে পারছেনা রবার্ট। সারলোটের বিছানায় ডল গুলোকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে হেনা। চুল গুলো উষ্কখুষ্ক হয়ে আছে। কাদতে কাদতে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া দুচোখে শূন্য দৃষ্টি।
পলক পড়ছে না। থেকে থেকে নিঃশ্বাস ফেলছে সে। এক গ্লাস স্যালাইন আর ভেজিটেবল স্যুপ নিয়ে ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে আছে রবার্ট। সে ভেবে পাচ্ছেনা কি করবে। এভাবে না খেয়ে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে যাবে হেনা। একে তো সন্তান হারানোর শোক আবার শোকাহত স্ত্রীকে সামলানো।
সিমেট্রি থেকে ফিরে একবারের জন্যও সারলোটের ঘর থেকে বের হয়নি হেনা। কিছু বললে উত্তর দিচ্ছেনা। একা একাই কথা বলছে। শেষে অবস্থা বেগতিক হলে কি করবে রবার্ট!? হেনা’কে ডেকে ডেকে একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে রবার্ট ট্রে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। ডাইনিং টেবিলের ওপর রেখে সে কপালে হাত ঘষতে ঘষতে চেয়ারে বসে পড়ল।
এভাবে সে হেনাকে সামলাতে পারবে না। তার নিজেরই খাওয়াদাওয়া উঠে গেছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো যেন এখনও হিসেব মিলাতে পারছেনা। পরশু থেকে আবার অফিস যেতে হবে। নাহলে পরে চাকরিটাও থাকবে না।
রবার্ট অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিল, হেনা’কে সে তার গ্রামের বাড়ি ব্রেম এ পাঠিয়ে দেবে। ব্রেম এর প্রাকৃতিক পরিবেশ, চারিদিকে পাহাড় ঘেরা সবুজ সমারোহ যার মাঝে বয়ে গেছে নদী। হেনা কিছুদিন ওখানে থাকলে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
কলিং বেলের শব্দ পেয়ে রবার্ট এর ভাবনায় ছেদ পড়ল। না চাইতেও চেয়ার ছেড়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো সে। এখন এই ভরদুপুরে কে এসেছে কে জানে! দরজা খুলতেই আগাগোড়া সাদা আর লাল মিশ্রিত আলখাল্লা পরা একটা বৃদ্ধ লোককে দেখতে পেলো। গলায় রূপোর ক্রাইস্ট লকেট, মাথায় গোল সাদা টুপি।
—–” বিশপ! আপনি এখানে!?
কিছুটা অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করল রবার্ট। আন্দ্রেস স্মিত হেসে বলল, ” দুঃখীত, এই অসময়ে বিরক্ত করলাম!
—–” সমস্যা নেই। ভেতরে আসুন।
আন্দ্রেস ভেতরে ঢুকে চোখ বুলাতে লাগল চারিদিকে। রবার্ট দরজা লক করে আন্দ্রেসকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে এলো।
—–” বসুন!
আন্দ্রেস সোফায় বসল। তার অপজিটের সোফায় বসল রবার্ট। দেয়াল ঘড়িতে দুপুর দুইটা সাতান্ন বাজে। আন্দ্রেস ক্রাইস্ট লকেটটাতে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
—–” আপনার মেয়ের ব্যাপারে কিছু জানার আছে।
—–” মানে!?
রবার্ট অবাক হয়ে জানতে চাইলো। সারলোটের ব্যাপারে কি জানতে চাইছে বিশপ!? হটাৎ মনে পড়ল ফাদার এন্ড্রুর কথা। সেও সারলোটের ব্যাপারে কি যেন বলছিলো।
—–” সারলোট মারা যাওয়ার আগে কি তআর সাথে অস্বাভাবিক কিছু ঘটেছিলো?
রবার্ট কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। মিউনিখ যাওয়ার আগের রাতেও তো সবকিছু স্বাভাবিকই ছিলো। তেমন কোনো অস্বাভাবিকতা নজরে পড়েনি তার। কিন্তু পরদিন সকালেই সারলোটের রক্তশূণ্য ফ্যাকাসে অবস্থা দেখে দ্রুত হসপিটালাইজ করা হয়েছিলো।
—–” আপনি ঠিক কি বলতে চাচ্ছেন বিশপ!? সারলোটের মারা যাওয়ার সাথে অস্বাভাবিক কিছু ঘটার কি সম্পর্ক!?
রবার্ট এর কথায় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল আন্দ্রেস। ব্যাপারটা রবার্টকে কিভাবে বোঝাবে সে ভেবে পাচ্ছেনা। রবার্ট কি আদৌ বুঝবে নাকি
—–” বিশপ!?
রবার্ট এর ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ল তার। রবার্ট কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বিশপের দিকে। মনে হচ্ছে লোকটা কিছু একটা বলতে চাচ্ছে কিন্তু গুছিয়ে বলতে পারছেনা। তবে সেটা যে সারলোটের ব্যাপারে তা বুঝতে বাকি নেই তার। কিন্তু সারলোটের ব্যাপারে কি বলতে চাচ্ছে বিশপ!?
—–” আচ্ছা তোমার কি মনে হচ্ছে না যে, সারলোটের আকস্মিক মৃত্যুটা বেশ রহস্যজনক!?
রবার্ট এর কপালে চিন্তার ভাজ আরও গভীর হল। সত্যিই তো সারলোটের মৃত্যুর কোনো সঠিক কারণ জানা নেই তার। এমনকি ডক্টররাও সারলোটের অসুস্থতার কারণ বের করতে পারেনি।
রবার্ট কিছু বলছে না দেখে আন্দ্রেস নিজেই বলতে শুরু করল,” তোমার বিশ্বাস হবে কি না জানিনা। তবে আমি ব্যাপারটা তোমাকে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করছি। দ্যাখো, আমাদের এই পৃথিবীর বুকে লুকিয়ে আছে সহস্র বা তারও অধিক রহস্য। যার কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা নেই। কিছুটা বিশ্বাস আর অবিশ্বাস দিয়ে ঘেরা। যা যুগে যুগে বহু জাতি অনুসন্ধানের চেষ্টা চালিয়েছে। কেউ কেউ সফল হয়েছে আবার কেউ কেউ নিজের সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছে এসব রহস্য উদঘাটন এর উদ্দেশ্যে।
রবার্ট মনোযোগ দিয়ে বিশপের প্রতিটি কথা শুনছে। বুঝতে না পারলেও আন্দাজ করতে পারছে কিছু একটা।
—–” ঈশ্বর মানুষ আর শয়তান সৃষ্টির পর মানুষকে শয়তানের ধোকা থেকে বাচার জন্য বহু পদ্ধতি বাইবেলে লিপিবদ্ধ করেছেন। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া কেউই সেসব পন্থা অনুসরণ করেনি বা করেনা। সেকারণেই মানবজাতিকে বহুবার ধ্বংসের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তাই মানুষ ছাড়াও বাস্তবে অন্য সত্ত্বার অস্তিত্ব নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর সেসব সত্ত্বা মানুষের মাঝে প্রবেশ করে তার ক্ষতিসাধন করতে চায়।
রবার্ট এবার সরাসরি বিশপের দিকে তাকালো। তাহলে কি সারলোটের মৃত্যুর কারণ কোনো অদৃশ্য সত্ত্বা!?
—–” সারলোট বাচ্চা মেয়ে। আর শিশুদের ক্ষতি করা ওদের জন্য বেশ সহজ।
—–” আপনি কি বলতে চাচ্ছেন!? আমার মেয়েকে কোনো অদৃশ্য সত্ত্বা হত্যা করেছে!?
একরকম চেচিয়ে উঠলো রবার্ট। আন্দ্রেস মাথা দুলিয়ে বলল, ” বলতে চাচ্ছি না, বরং এটাই সত্যিই। কোনো না কোনোভাবে সারলোটকে
আন্দ্রেস এর কথা শেষ হওয়ার আগেই হেনার চিৎকার শোনা গেলো। রবার্ট আর আন্দ্রেস দ্রুত তাকিয়ে দেখল হেনা সারলোটের রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে কাদছে। এতক্ষণ সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনছিলো। রবার্ট দ্রুত ছুটে গেল হেনার কাছে।
______________________________
ওরহান নিজেকে নীরা’র থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার শরীর সায় দিচ্ছেনা। ওরহানের রক্তে ভেসে যাচ্ছে নীরা’র শরীর। নীরা শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে ওরহানকে। ওরহান ব্যর্থ হয়ে চেচিয়ে উঠলো,
—–” নীরা! আমার সময় শেষ হয়ে আসছে। আমি আর তোমাকে রক্ষা করতে পারবো না। প্লিজ তুমি পালিয়ে যাও!
—–” আমি পারবো না! তোমাকে এখানে ফেলে আমি যেতে পারবো না ওরহান!
—–” তোমাকে যেতেই হবে নীরা। মিলিয়ান তোমাকে আবারও আবিষ্ট করার আগেই পালাতে হবে। কারণ মিলিয়ান জীবিত কারোর শরীর ছাড়া এখান থেকে বের হতে পারবে না।
নীরা আর সহ্য করতে পারছেনা। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে তার। নিজেকে শেষ করে ফেলতে ইচ্ছে করছে। সে যদি মিলিয়ানকে দেখতে না চাইতো, তাহলে এসব কিছুই হত না। সব দোষ তার। শুধু অন্য কেউ কেন তার ভুলের মাশুল দেবে? সে নিজেও দেবে মাশুল। যদি মরতে হয়, সে ওরহানের সাথে এখানেই মরবে।
—–” তোমার বাবা-মা অপেক্ষা করছে নীরা! তোমাকে দেখার অপেক্ষায় আছে। তাদের মীরা ফেরেনি, কিন্তু তুমি ফিরে যাবে।
ওরহানের কন্ঠঃস্বর ঝিমিয়ে আসছে। শরীর আর সায় দিচ্ছেনা। নীরা চুপ করে তার শ্বাসপ্রশ্বাস এর শব্দ শুনছে। সেই শব্দে যেন মাদক মেশানো। নেশা লাগছে তার।
—–” মাম্মাম! তুমি এসেছো!?
চমকে উঠল নীরা। দ্রুত ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল, তার থেকে হাত কয়েক দূরে দাঁড়িয়ে আছে মরিস। তার চোখ জোড়া বন্ধ, ঠোঁটের কোণায় বিদ্রুপাত্মক হাসি!
—–” ম’মরিস! কি হয়েছে তোমার!?
নীরা’র কথা শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল মরিস। কি ভয়ংকর সে হাসি! নীরা’র মনে হল যেন আজরাইল হাসছে! হাসির ঝংকারে গায়ের রক্ত হিম হয়ে যাচ্ছে তার। মরিস হাসি থামিয়ে নীরা’র দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
—–” মাম্মাম! আমি তোমার মিলিয়ান। তুমি চিনতে পারছো না!?
আঁতকে উঠল নীরা। মিলিয়ান এবার মরিসকে আবিষ্ট করেছে!? মরিস নীরা’র দিকে হাত বাড়াতেই ওরহান মন্ত্রবলে মরিসকে ক্ষণিকের জন্য বন্দী করে ফেলল। লালচে সুতোর মতো রশ্নি পেচিয়ে ধরেছে মরিসকে। নীরা ওরহানের দিকে তাকালো। ওরহান তার অবশিষ্ট শক্তি দিয়ে মরিসকে আঁটকে বলল,
—–” নীরা পালাও! আমি বেশিক্ষণ ওকে ধরে রাখতে পারবো না।
নীরা কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। মরিসকে আবিষ্ট করেছে মিলিয়ান। এখন কি অন্যদের মতো সে মরিসকেও মেরে ফেলবে!? মরিস শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,
—–” আরে! তোর শরীরে এখনও শক্তি আছে দেখছি! এই শক্তি দিয়েই আমাকে এতদিন নিয়ন্ত্রণ করেছিলি নাহ!?
বলেই লালচে রশ্নি ছিড়ে ফেলল মরিস। সাথেসাথেই শেষবারের মতো রক্তবমি করে নীরা’র কোল থেকে ধপ করে মেঝেতে এলিয়ে পড়ল ওরহান। নীরা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে মরিসের দিকে।
—–” শয়তান! জাহান্নামে যা তুই! তোর জন্য আমার বোন সব হারিয়েছে! তোর জন্য আমার সব শেষ হয়ে গেছে! সব শেষ করে দিয়েছিস তুই! এবার আমাকেও শেষ করে দে!
নীরা গগনবিদারী চিৎকার দিতে দিতে মরিসের মুখোমুখি এসে দাড়ালো। মরিসের মুখ থেকে হাসির রেখা বিলীন হয়ে গেছে। নীরা’র চোখে ক্রোধের আগুন দেখতে পাচ্ছে সে। মরিসের হাত নিয়ে নিজের গলা চেপে ধরল নীরা।
—–” শেষ করে দে! আমি আর বাচতে চাই না! আমার জন্যই এসব হয়েছে! তুই না, আমিই ওরহানকে মেরেছি! ওর মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী!
মরিস থমথমে মুখে তাকিয়ে আছে নীরা’র দিকে। নীরা হাটু গেড়ে বসে পড়ল। কাদতে কাদতে মনে হচ্ছে তার গলার শিরা কেটে যাবে।
—–” মাম্মাম!
মিলিয়ানের কন্ঠঃ পেয়ে আস্তে-ধীরে মুখ তুলে তাকালো নীরা। মরিসের দেহ ছেড়ে সশরীরে তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে মিলিয়ান! নীরা’র চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ল। তার ছোট্ট মিলিয়ান দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে! যে কি না তাকে দিয়েই হত্যা করিয়েছে ওরহানকে!
—–” আমাকে ক্ষমা করে দাও মাম্মাম! আমি ওদের মারতে চাইনি। ওরাই আমাকে মেরে ফেলতে চাচ্ছিলো। আমি নিজেকে বাচাতেই
নীরা সর্বশক্তি দিয়ে দু’হাত মেঝেতে চাপড়াতে লাগল। এই জমিন ফাক হয়ে যায় না কেন? সে আর সহ্য করতে পারছেনা। মৃত্যু কেন তাকে গ্রাস করছে না এখনও!? আর কত যন্ত্রণা পেলে দমটা বের হবে!?
মিলিয়ান আর কিছু বলল না। নীরা’র কষ্ট দেখে তার কি হল কে জানে। সে একটা ধারালো ছুরি নিয়ে নীরা’র দিকে এগিয়ে দিতেই নীরা হেসে বলল,
—–” মেরে ফেলো! আমাকে মেরে ফেলো মিলিয়ান! আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। দম আঁটকে আছে আমার। এটা দিয়ে আমার দমটা একেবারে বের করে দাও।
বলে পাগলের মতো হাসতে লাগল নীরা। কিন্তু মিলিয়ানের মধ্যে কোনো পরিবর্তন ঘটল না। সে ছুরিটা নীরা’র হাতে দিয়ে বলল,
—–” আমাকে মুক্তি দাও মাম্মাম!
থমকে গেলো নীরা। কি বলল মিলিয়ান!? নীরা’র হাতে ছুরি ধরিয়ে মিলিয়ান হাটু গেড়ে নীরা’র সামনে বসে বলল,
—–” আমাকে কেউ চায় না। সবাই আমাকে শেষ করে দিতে চায়। আমি এই অভিশপ্ত জীবন চাই না! তুমি আমাকে মুক্তি দাও মাম্মাম!
—–” না!
চেচিয়ে উঠলো নীরা। ছুরি ফেলে সে মিলিয়ানের থেকে কয়েক ধাপ সরে গেলো। মিলিয়ানের চোখেমুখে স্পষ্ট অনুতাপ ফুটে উঠেছে।
—–” আমি পারবো না! পারবো না!
নীরা উদ্ভ্রান্তের মতো চিৎকার করতে লাগল। মিলিয়ান তার দিকে এগিয়ে গিয়ে আবারও হাটু গেড়ে বসে বলল,
—–” আমার সাথে কেন এমন হল মাম্মাম!? কেন আমার জন্ম মানুষের গর্ভে না হয়ে শয়তানের গর্ভে হল!?
মিলিয়ানের চোখে জল টলমল করছে। অব্যক্ত কষ্টের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তার চোখেমুখে। মিলিয়ান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
—–” মীরা মাম্মামও আমাকে চায়নি। একমাত্র তুমি সব জেনেও আমাকে বাচাতে এলে! আর দেখো, আমিই তোমার ভালবাসা কেড়ে নিলাম! আমি যদি তোমার নিজের সন্তান হতাম, তাহলে কি আমার সাথে এমন হত মাম্মাম!?
—–” চুপ কর!
দু’হাতে কান চেপে ধরে চেচিয়ে উঠলো নীরা। সে এখনও বেচে আছে কেন ভেবে পাচ্ছেনা। তার তো এতকিছুর পর মরে যাওয়া উচিৎ!
—–” আমি তোমার সন্তান হয়ে জন্মাতে চাই মাম্মাম!
চমকে উঠল নীরা। তার নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। সে যা শুনছে তা কি সত্যিই? নাকি মিলিয়ানের পাতা কোনো ফাদ!?
—–” তখন আমাকে কেউ হত্যা করতে চাইবে না। আর কোনো ভয় থাকবে না, তাইনা মাম্মাম!?
—–” চুপ কর মিলিয়ান!
নীরা কাদছে আর চিৎকার করছে। মিলিয়ান আবারও ছুরিটা নীরা’র হাতে দিয়ে বলল, ” তোমার চোখে আমার জন্য ঘৃণা আমি সহ্য করতে পারছিনা মাম্মাম! আমার এই খারাপ সত্ত্বাটিকে তুমি ধ্বংস করে দাও!
—–” পারবো না! আমি পারবো না মিলিয়ান!
নীরা অঝোরে কাদছে। চোখের জল শুকিয়ে গেছে তার। মাথা ভীষণ ব্যথা করছে। মনে হচ্ছে সে এখনই জ্ঞান হারাবে।
—–” তুমিই পারবে মাম্মাম! তুমি ছাড়া কেউ পারবে না!
নীরা মাথা নাড়িয়ে না বলছে বারবার। সারা শরীর হিস্টিরিয়া রোগীর মতো কাপছে শুধু। মিলিয়ান এবার ধৈর্য্য হারিয়ে চেচিয়ে উঠলো,
—–” তোমার বোনের মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী! তোমার বাবা-মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়েছি আমি তাকে। তার সন্তানের মৃত্যুর জন্যও আমিই দায়ী! তোমার ভালবাসাকেও আমিই কেড়ে নিয়েছি! তোমার সব কেড়ে নিয়েছি আমি!
নীরা আর সহ্য করতে পারলো না। চিৎকার করে সে মিলিয়ানের গলায় ছুরিটা সজোরে গেথে দিল। সাথেসাথেই শরীর থেকে মাথাটা আলাদা হয়ে গেলো মিলিয়ানের! নীলচে-সবুজ রঙা আলোয় আলোকিত হয়ে গেলো পঞ্চভুজাকৃতি কক্ষটা!
_____________________________
হেনা জ্ঞান হারিয়েছে। রুমে এনে তাকে বেডে শুইয়ে দিয়েছে রবার্ট। আন্দ্রেস দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। রবার্ট হেনার গায়ে ব্লানকেট টেনে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।
—–” আমি এখন আসি, এসব নিয়ে পরে কথা বলবো।
আন্দ্রেসকে বেশ বিচলিত দেখাচ্ছে। রবার্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ” আর কথা বলেও বা কি হবে বিশপ!? আমাদের মেয়ে তো আর ফিরে পাবো না।
—–” কিন্তু এতে করে যদি কাউকে প্রাণে বাচানো যায়
আন্দ্রেসকে মাঝপথে থামিয়ে রবার্ট বিরক্ত হয়ে বলল, ” এসব নিয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না। আমি যা জানি সব বলেছি। এখন আপনি যা ইচ্ছা করুন। কিন্তু সারলোটের সমাধি নিয়ে কিছু করবেন না। নয়তো আমি আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো!
আন্দ্রেস আর কিছু বলল না। সারলোটের সমাধি খোড়া হয়েছে শুনলে রবার্ট ঝামেলা বাধাবে। তারচেয়ে না বলাই ভালো। বিশপ আর বিন্দুমাত্র দেরি না করে পলদের বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। তাকে যতদ্রুত সম্ভব গীর্জায় ফিরে যেতে হবে। প্রার্থনার সময় হয়ে গেলে গীর্জায় লোকজন প্রবেশ করবে। তার আগেই সারলোটের লাশ সমাধিস্থ করতে হবে।
_________________[চলবে]_________________
বিঃদ্রঃ বেশ কিছুদিন গল্প না দেয়ায় পেইজের রিচ কমে গেছে। তাই পোস্ট করলে গল্প কারো সামনে যাচ্ছে না। সবাই বেশি বেশি লাইক কমেন্ট করুন এবং এক্টিভ থাকুন প্লিজ। আমিও এক্টিভ আছি। প্রতিদিন গল্প পোস্ট করছি। আজকের পর্ব পড়ে কেউ বকা দিয়েন না প্লিজ🥺
সবটা আমার সাজানো প্লট অনুযায়ী চলছে। আর শেষ পর্যন্ত দেখতে থাকুন, একটা ধামাকা হতে পারে। উহঃ আমার পেটে কোনো কথা থাকে না, সব গরগর করে বলে দিই। আর কিছু বলবো না🤫
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকুন🤗❤️