Child_Of_Night Part-30

0
1014

#Child_Of_Night
Writer : Tanjima Islam

__________________[৩০]__________________

বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় ফ্লাইট ছিলো নীরা’দের। সাড়ে আট ঘন্টা জার্নি করে ঢাকা থেকে ইস্তানবুল এসে প্লেন ল্যান্ড করল। প্লেন থেকে নেমে নীরা ট্রলি নিয়ে হাটতে হাটতে ফোন স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল সকাল সাতটা পয়ত্রিশ বাজে।

—–” আব্বু! আম্মু! চলো আগে ব্রেকফাস্ট করে নিই। তারপর ক্যাব ডাকবো।

এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে বাবা-মাকে নিয়ে কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকল নীরা। খালি টেবিল দেখে তিন জনে তিনটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসল। ফ্রেশ হওয়া দরকার। নীরা তার বাবা-মাকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে ওয়েটারকে ডাক দিল।

সাথেসাথেই ছুটে এলো একজন ওয়েটার। বিদেশি মানুষ দেখে সে ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করল। উচ্চারণ নিখুঁত না হলেও মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে।

—–” ওয়েলকাম ম্যাম! কি নেবেন বলুন!

নীরা মেন্যু কার্ড দেখল। জার্মানিতে গিয়ে প্রথম প্রথম যেসব অখাদ্য খেতে হয়েছিলো সেই তুলনায় এখানকার খাবার যথেষ্ট রুচিসম্মত আছে। তার খেতে সমস্যা হবে না।

কিন্তু তার বাবা-মা খেতে পারবে কি না সন্দেহ। নীরা’র বাবা-মামা জার্মানিতে যে এক সপ্তাহ ছিলো, প্রায় প্রতিদিনই তারা বাসায় নিজেরা রান্না করে খেয়েছে।

বিদেশে এলে প্রথম সমস্যা হয় এই খাদ্যাভ্যাস নিয়ে। নতুন পরিবেশ, সম্পূর্ণ ভিন্ন খাবারদাবার! স্বস্তিতে খাওয়াও যায় না! আবার না খেয়েও থাকা যায় না! যেভাবেই হোক অসুস্থ হতেই হবে! নীরা অনেক বেছে বেছে তুর্কিশ চা, অমলেট আর ভেজিটেবল স্যুপ অর্ডার দিল।

তুর্কিরা সাধারনত বড়সড় আকারে সকালের নাস্তা খেতে পছন্দ করে। একটি প্রচলিত তুর্কি সকালের নাস্তায় থাকবে পনির (বেয়াজ পেনির, কাসার ইত্যাদি), ঘি, জলপাই, ডিম, টমেটো, শসা, জ্যাম, মধু এবং কেম্যাক, সুকুক (তুর্কি সসেজ যা ডিম দিয়ে নির্দিষ্ট ভোক্তারা খেয়ে থাকেন), পাশ্তিরমা, বোরেক, সিমিত, পোগাসা এবং স্যুপ।

সকালের খাবারের একটি বিশেষত্ব হচ্ছে মেনেমেন যা টমেটো, সবুজ মরিচ, পেঁয়াজ, জলপাই তেল এবং ডিম দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। অনেক স্থানে সকালের নাস্তায় তুর্কি চা পরিবেশন করা হয়।

ব্রেকফাস্ট সেরে বাবা-মাকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলো নীরা। এখন বাজে আটটা দশ। ইস্তাম্বুল থেকে ইজমির যেতে লাগবে সাড়ে চার ঘন্টা। যেতে যেতে দুপুর হয়ে যাবে। নীরা একটা ট্যাক্সি ক্যাব ভাড়া করে জিনিসপত্র নিয়ে উঠে বসল।

ট্যাক্সি চলতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণ পরপরই জ্যামে আটকা পড়ছে তাদের ট্যাক্সি। নীরা বিরক্ত হলেও কিছু বলল না। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে তার। একটু ঘুমিয়ে নেয়া যাক।
.
_______________________
.
.
.
বেলা সাড়ে বারোটার দিকে ইজমির এর তেসিসাত রোডে এসে থামল নীরা’দের ট্যাক্সি ক্যাবটা। মায়ের ডাকাডাকিতে নীরা’র ঘুম ভাংলো। সারাটা পথ সে বেঘোরে ঘুমিয়েছে। একটানা জার্নিতে মুহিদুল আর নাজনীনও ক্লান্ত হয়ে পড়েছে খুব।

ট্যাক্সি থেকে নেমে নীরা’র মামির সেই চাচাতো বোন জান্নাত’কে কল দিল নাজনীন। এদিকে মুহিদুল আর নীরা মিলে ট্যাক্সি থেকে ব্যাগপত্র নামাচ্ছে। ব্যাগপত্র নামিয়ে ভাড়া মিটিয়ে দিল মুহিদুল। ট্যাক্সি চলে গেলো। নীরা ট্রলি নিয়ে রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল চারপাশটা।

পাহাড়ি রাস্তার মতো এখানকার রাস্তা উঁচু থেকে ক্রমশ নিচুতে চলে গেছে বহুদূর। রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি বহুতল ভবন। রংবেরঙের পেইন্ট করা বাড়িঘর গুলো দেখতে ইটালির ভেনিস শহরের মতো লাগছে।

পথচারীরা চলতে চলতে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। যেন একদল এলিয়েন এসে পড়েছে তাদের জগতে। নীরা তাদের দেখেও না দেখার ভান করে মায়ের দিকে তাকালো।

নাজনীন ফোনে জান্নাতের সাথে কথা বলছে। এই এলাকারই বাসিন্দা জান্নাত। নাজনীন ফোনে কথা বলে রাখতেই একজন মধ্যবয়সী মহিলা এগিয়ে এলো তাদের দিকে,

—–” আসসালামু আলাইকুম আপা! সেই কখন থেকে আপনাকে ফোন দিচ্ছি, এসে পৌছুলেন কি না! আপনার ফোন পেয়েই কথা বলতে বলতে চলে এসেছি।

—–” ওয়ালাইকুম আসসালাম আপা! ফোন ব্যাগে ছিলো, তাই খেয়াল করিনি।

ক্লান্তিমাখা মুখে মলিন হেসে বলল নাজনীন। জান্নাত এসে নাজনীন এর সাথে কোলাকুলির মতো করে(তুর্কিশ সৌজন্যতা) এবার মুহিদুল আর নীরা’র দিকে তাকালো। মুহিদুল সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করল।

নীরা হাসিমুখ ধরে রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। মহিলাটা যেন নীরা’র দিকে সরাসরি না তাকিয়েও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বুলাচ্ছে নীরা’র ওপর। জান্নাত নীরা’কে উদ্দেশ্য করে বলল,

—–” এসো নীরা! জার্নিতে অনেকে টায়ার্ড হয়ে গেছো মনে হচ্ছে। গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নেবে।
.
_______________________
.
.
.
হলুদ রঙের পেইন্ট করা দোতলা বাড়ি। সাদা রঙ করা জানালা আর দরজা গুলোয়। মেইন ডোর খুলে ভেতরে ড্রয়িং রুম। এক পাশে কিচেন ডাইনিং আর গেস্টরুম। আরেক পাশ দিয়ে সিড়ি উঠে গেছে দোতলায়।

নিচতলায় গেস্ট রুমে মুহিদুল আর নাজনীনকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। নীরা’কে নিয়ে ওপরতলায় এলো জান্নাত। ওপরতলায় উঠে তিনদিকে তিনটা বেডরুম, আর অন্য পাশে গ্লাস টানা বড় একটা ব্যালকনি!

নীরা’কে নিয়ে মেয়ের রুমে ঢুকল জান্নাত। রুমটা বেশ পরিপাটি করে গোছানো। একটা সিংগেল বেড, কিন্তু দু’জন শোয়া যাবে। বেডের এক পাশে পড়ার টেবিল চেয়ার আর আলমারি। অন্য পাশে ড্রেসিং টেবিল রাখা।

—–” এটা আমার মেয়ে, ওজগে’র রুম। একসাথে বেড শেয়ার করে থাকতে অসুবিধা হবে না তো?

—–” না না, সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার মেয়ে মানে, ওজগে’র যদি সমস্যা হয়!

কিছুটা ইতস্ততভাবে বলল নীরা। জান্নাত স্মিত হেসে বলল, ” আমার মেয়ে আমার মতো না, একেবারে ওর বাবার মতো হয়েছে। বড্ড মিশুকে স্বভাবের। ওর কোনো সমস্যা হবে না। ওতো আরও এক্সাইটেড, তোমরা আসছো শুনে।

স্মিত হাসল নীরা। জান্নাত নীরা’র ট্রলি ব্যাগটা রুমে ঢুকিয়ে বলল, ” ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও, কিচেনে রান্না হচ্ছে। আমি যাই!

——” আন্টি!

জান্নাত রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো। নীরা’র ডাকে ফিরে এসে বলল, ” হুম বলো!

—–” ওজগে কোথায়?

—–” ও তো স্কুলে। ১টায় ছুটি হয়, কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে।

—–” আচ্ছা।

জান্নাত চলে গেলো। নীরা ব্যাগ থেকে এক সেট ড্রেস বের করে নিয়ে ঢুকল ওয়াশরুমে। লম্বা শাওয়ার নিতে হবে। শরীর ম্যাজম্যাজ করছে ভীষণ।
.
_________________________
.
.
.
গোসল করে বেরিয়ে চুল মুছতে মুছতে রুম থেকে বেরিয়ে এলো নীরা। ওপরতলায় কেউ নেই নিচতলা থেকে নাজনীন আর জান্নাতের কন্ঠঃ শোনা যাচ্ছে। খোশগল্পে মেতেছে দু’জন। নীরা হাটতে হাটতে সেই বড় ব্যালকনিতে এসে দাড়ালো। এখানে কাপড় নাড়ার কোনো ব্যবস্থা নেই।

কাপড় নাড়তে কি ছাদে যাবে? জার্মানিতে তো কাপড় ধোয়ার ঝামেলা এড়াতে সবসময় ড্রাই ওয়াশ করতে দিতো। বাংলাদেশে ফিরে আবার সেই কাপড় ধুয়ে ছাদে দেওয়া অভ্যেস হয়েছে। নীরা তোয়ালে হাতে নিয়ে নিচতলায় কিচেনে এসে ঢুকল।

মাংস রান্নার দারুণ স্মেল বের হচ্ছে। জান্নাত প্যান থেকে সবজি (মাংস দিয়ে রান্না করা) নিয়ে পাত্রে ঢালছে। পাশে একটা পাত্রে গরম ভাত রাখা। নীরা’কে দেখে নাজনীন বলল,

—–” নীরা’মা! খাবার গুলো একে একে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে রাখ তো।

নীরা এগিয়ে যেতেই জান্নাত তার হাতে ভাতের পাত্র তুলে দিল। নীরা ভাতের পাত্র রেখে এসে সব্জির পাত্র নিয়ে গেলো। নাজনীন সালাদ (রসুন, লবণ ও শসার টুকরো দিয়ে তৈরী করা পাতলা দইয়ের পদ) এগিয়ে দিল নীরা’র দিকে। নীরা সালাদ নিয়ে ডাইনিং এ রাখতেই কানে এলো কলিংবেলের শব্দ।

—–” ওজগে এসেছে বোধহয়।

কিচেন থেকে জান্নাতের কন্ঠঃ শোনা গেলো। নাজনীন খুলতে গেলে নীরা বলল,” তুমি প্লেটে খাবার দাও, আমি দেখছি।

দরজা খুলে দেখল, কালো চুলে দুপাশে বেনি করা, স্কুল ড্রেস পরে ব্যাগ কাধে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ে। নীরা’কে দেখে সে মিষ্টি হেসে বলল,

—–” আপু তোমরা এসে গেছো!?

অস্পষ্ট বাংলায় বলল মেয়েটা। চেহারায় জান্নাত আন্টির সাথে বেশ মিল আছে। এই তাহলে ওজগে! নীরা ভেবেছিলো জান্নাত আন্টি ছাড়া কেউ হয়তো বাংলা বলতে পারেনা।

ওজগে ভেতরে ঢুকে দরজা লক করে বলল,” আমি আজ স্কুলে যেতে চাইনি, তোমরা আসবে বলে। কিন্তু আম্মু বলল, তোমরা আসার আগেই নাকি আমার স্কুল শেষ হয়ে যাবে।

কথাটায় মৃদু রাগ মিশে আছে মনে হল। নীরা কিছু বলার আগেই জান্নাত এক বাটি স্যুপ নিয়ে ডাইনিং টেবিলে রাখতে রাখতে বলল,

—–” ওরা তো আর এক্ষুনি চলে যাচ্ছে না, থাকবে কদিন। পড়া শেষে যত খুশি আড্ডা দিস।

মুখ ভেংচি কাটল ওজগে। নাজনীন স্মিত হেসে তার বেনি করা চুলে হাত বুলিয়ে বলল,” আম্মু তো ঠিকই বলেছে ওজগে মামনি! আমরা এসেছি বলে তুমি পড়াশোনায় ফাকি দিলে কিন্তু আমরা আবার চলে যাবো! এখন যাও, ফ্রেশ হয়ে এসো।

ওজগে গাল ফুলিয়ে নীরা’র হাত ধরে ওপরে যেতে যেতে বলল,” তোমরা গেলে যাও, নীরা’পু থাকবে।

নীরাও অগত্যা ওপরে উঠে এলো। ওজগে মেয়েটাকে তার বেশ ভালো লেগেছে। যেমন মিষ্টি দেখতে তেমনি দুষ্টু। ওজগে’র দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হটাৎ তার মিলিয়ানের কথা মনে পড়ল। দুটো বছর কেটে গেছে! নদীর স্রোতের মতো চলে গেছে সময়।

শুধু মনে হয় যেন, এই তো সেদিনের কথা। মিলিয়ানকে নিয়ে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এলো নীরা। তারপর প্রতিদিন তাকে স্কুলে দিয়ে আসা নিয়ে আসা।

স্কুলে কি কি হল না হল সব এসে বলতো মিলিয়ান। মাম্মাম মাম্মাম করে ডাকতো সারাক্ষণ! মিলিয়ান বেচে থাকলে, আজ সেও ওজগে’র মতো বড় হয়ে যেতো!

—–” নীরা’পু! তুমি একটু ওয়েট করো আমি এক্ষুনি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

ওয়াশরুমে ঢুকল ওজগে। নীরা স্মিত হেসে মনেমনে বলল, ” আজও বাচ্চা দেখলে তোমাকে খুব মনে পড়ে মিলিয়ান। মনে হয় যেন, ওদের মধ্যে আমি তোমাকে দেখতে পাই! মাফ করে দিও বাবা! মাম্মাম তোমাকে রক্ষা করতে পারিনি!

চোখে জল জমেছে নীরা’র। পুরনো ক্ষত গুলো আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে! নীরা পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। মুক্ত বাতাস প্রয়োজন! ব্যালকনিতে গিয়ে রেলিঙের ধারে ঝুকে পড়ল নীরা।

দুপুর হয়ে গেছে। প্রখর রোদের মাঝে বইছে হালকা হাওয়া। নীরা কিছুক্ষণ বুক ভরে শ্বাস নিল। এখন অনেকটা স্বস্তি লাগছে।

—–” ওহ, তুমি এখানে? আমি আরও নিচে যাচ্ছিলাম ডাকতে!

ওজগে’র কন্ঠঃ পেয়ে পেছন ফিরলো নীরা ওজগে এগিয়ে এসে তার হাত ধরে নিচে যেতে যেতে বলল, ” ২টা বাজতে যাচ্ছে, চলো খেয়ে নিই। সবাই অপেক্ষা করছে।
.
____________________________
.
.
.
জলপাই তেল দিয়ে রান্না করা সব্জিটা খেতে বেশ দারুন লেগেছে মুহিদুলের। সে নাজনীনকে বলেছে যেন, সে জান্নাত আপার কাছ থেকে রেসিপিটা শিখে নেয়।

নাজনীনেরও সব্জিটা ভালই লেগেছে কিন্তু মুহিদুলের খাওয়ার আগ্রহ দেখে, সে কিছুতেই এই রেসিপি শিখবে না বলে ঠিক করেছে।

নীরা’র কাছে সব খাবারই ভালো লেগেছে। মানতে হবে মহিলার হাতের রান্না বেশ দারুন। যদিও মায়ের হাতের রান্না করা বাঙালি খাবারই বেশি পছন্দ তার।

দুপুরে খেয়ে যে যার রুমে চলে গেলো সবাই। ওজগে নীরা’কে নিয়ে রুমে এসে বলল,

—–” আপু এখন তুমি ঘুমিয়ে নাও। আম্মু বলেছে, দুপুরে যেন তোমাকে বিরক্ত না করি। তবে বিকালে আমরা ঘুরতে বের হবো ঠিকাছে!?

—–” ঠিকাছে বের হবো। কিন্তু তুমি এখন ঘুমাবে না!?

—–” না, না। আমার অনেক পড়া বাকি। এখন শেষ করে নিই। রাতে আমি আবার তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি তো।

ওজগে চেয়ার টেনে বসে হোমওয়ার্ক করতে লাগল। নীরা শুয়ে শুয়ে তাকিয়ে রইলো ওজগে’র দিকে। ওজগে’র সেদিকে খেয়াল নেই। সে একমনে হোমওয়ার্ক করতে ব্যস্ত।

তাকে দেখে বারবার মিলিয়ানের কথা মনে পড়ছে নীরা’র। মেয়েটার হাবভাব কথাবার্তা অনেক কিছুই মিলিয়ানের সাথে মিলে যায়। যেন সে মিলিয়ানেরই আরেক রূপ!
.
_______________________
.
.
.
বিকাল হতেই নীরা’কে নিয়ে এলাকায় ঘুরতে বেরিয়েছে ওজগে। আশেপাশের প্রতিবেশীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। নীরা টুকটাক তুর্কিশ ভাষা বলে কুশল বিনিময় করছে তাদের সাথে। ওজগেই শিখিয়েছে তাকে শব্দ গুলো।

বাংলাদেশের পাড়াপ্রতিবেশি সম্পর্কের মতই দারুণ সম্পর্ক এদের মধ্যে। এলাকাটায় গ্রোসারি সুপারশপ থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুই আছে। একটু এগোলে মেইন টাউন। পায়ে হেটেই যাওয়া যায়।

—–” আচ্ছা ওজগে! তুমি কখনো বাংলাদেশে গেছো!?

—–” উহু! আম্মু যায় বছরে একবার। আমি আর আব্বু এখানে থাকি।

—–” তোমরা যাও না কেন?

—–” আব্বু বিজনেস নিয়ে ব্যস্ত থাকে খুব। একবার ইস্তাম্বুল একবার বুরসা আবার ইজমির! যাওয়ার সময় কই তার? রাতে বাসায় ফিরে সকালে আবার চলে যায়। শুক্রবারটা একসাথে কাটায় শুধু।

—–” ও আচ্ছা। কিন্তু তুমি যাও না কেন? তুমি তো আন্টির সাথে যেতে পারো। আমাদের দেশটাও অনেক সুন্দর!

—–” তুরস্কের চেয়েও!?

কৌতুহলী হয়ে বলে উঠল ওজগে। নীরা হেসে বলল, ” একটার সাথে আরেকটা তুলনা করা যায় না। একেক দেশের একেক রকম সৌন্দর্য্য।

—–” ওও!

—–” হুম, অনেক সুন্দর সুন্দর বেড়ানোর জায়গা আছে।

—–” আমার তো যেতে মন চায়। কিন্তু ভাইয়া আমাকে কোথাও যেতে দেয়না। তাই আব্বু আম্মুও কিছু বলে না!

কিছুটা মন খারাপ করে বলল ওজগে। নীরা অবাক হল বেশ। ওজগে’কে কোথাও যেতে দেয়না মানে কি?

—–” কেন?

ওজগে হাটতে হাটতে থেমে গেলো। সেই সাথেসাথে থেমে গেলো নীরা’ও। ওজগে হটাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল কেন নীরা বুঝতে পারছেনা। বিকেলের আলো ফুরিয়ে আসছে। পশ্চিমে অস্ত যাচ্ছে সূর্য। কাছাকাছি কোনো মসজিদ থেকে আযানের ধ্বনি ভেসে এলো। মাগরিবের আযান দিচ্ছে!

নীরা গলায় পেচানো স্কার্ফটা ভালো করে মাথায় দিয়ে নিল। ওজগেও মাথায় স্কার্ফ দিতে দিতে বলল, ” আযান দিচ্ছে! চলো আপু, বাসায় ফিরে যাই।

মাথা নাড়ল নীরা। দু’জনে এবার বাসায় ফেরার পথ ধরল। ফিরতি পথে ওজগে বা নীরা কেউই কোনো কথা বলল না। ওজগে হটাৎ করেই কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে।
.
________________________
.
.
.
ঘড়িতে রাত দশটা বাজতে যাচ্ছে। এশার নামাজে দাড়িয়েছে জান্নাত আর নাজনীন। ড্রয়িং রুম থেকে মুহিদুল আর ওজগে’র বাবা ওসমানে’র কন্ঠঃ শোনা যাচ্ছে।

ওপরতলায় রুমে পড়ছে ওজগে। নীরা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে ব্যস্ততম নগরী ইজমিরে’র দিকে।

দিনের তুলনায় রাতে ইজমির শহর দেখতে দারুণ লাগে। রাস্তা জুড়ে ল্যাম্পপোস্টের হলদে আলো। দূরে কৃত্রিম আলোয় ঝলমল করতে থাকা ব্রিজ! তার ওপর দিয়ে ছুটে চলা গাড়ির শব্দ!

—–” আপু!

ওজগে’র কন্ঠঃ পেয়ে ঘাড় ফেরালো নীরা। ওজগে এসে দাড়ালো তার পাশে।

—–” তোমার পড়া শেষ!?

মাথা নাড়ল ওজগে। মানে তার পড়া শেষ। নীরা আবারও বাইরে তাকালো।

—–” তোমার ভাইয়া’কে তো দেখলাম না!

—–” ভাইয়া ইস্তাম্বুলে। কাল নাহয় পরশু আসবে।

—–” ও আচ্ছা।

নীরা কিছুটা স্বস্তি পেলো মনেমনে। ওজগে’র ভাই আসার আগ পর্যন্ত নিশ্চিন্তে একটু ইজমির ঘুরে বেড়ানো যাবে।

_____________[চলবে]____________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here