🏵তুইতেই আমি🏵
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ৯
🍁🌼🍁
আহান নিচের দিকে তাকিয়ে আছে অপরাধীর মতো। আমি কি করব কি বলবো বুঝতে পারছি না আস্তে আস্তে করে উঠে বসলাম। আজ নিজের বোকামির জন্য এমনটা হলো তাকেও লজ্জিত হতে হলো ।আমিও নিচে দিকে তাকিয়ে আছি।
আহান আস্তে করে সরি বললেন।এরপর বললেন ঘুমের অভিনয় করে ঠিক করিস নি একদম।উঠেই ব্যালকুনির দরজা খুলে নিজের ঘরে চলে গেলেন। আমি তাকিয়ে আছি আমার চমক কাটছে না একদম না। আমি ভাবছি এখনো ওটা লিপকিস ছিলো? লিপকিস খেতে এমন হয়?
তার মনের কথাগুলো জেনে আমার খুশিতে নাচতে মনে চাচ্ছে।কি করব কই যাব।পারলে তো ডানা থাকলে সারা আকাশ টাই ঘুরে আসতাম।ভালোবাসার কথাগুলো কি মিষ্টি হয়!!!!তার কথাগুলো খাওয়া গেলে এতক্ষণে আমার ডায়বেটিস হয়ে যেত ।কিন্তু আমি তো কিছু একটা খেয়ে ফেলেছি।হ্যা লিপকিস খেয়ে ফেললাম এবার আমার ডায়বেটিস হবে না তো?খুব চিন্তার বিষয় !!! ভাবতে হচ্ছে!!!!!
আমার মিষ্টি যে খুব পছন্দ। আর এর থেকে বড় কথা লিপকিস ও আর খেতে পারবো না। নাহ ডায়াবেটিস আসিস না আমার কাছে আমি মরে যাব।কি লজ্জার ব্যাপার লিপকিস খেতে পারবো না বলে মরে যাব বলছি।
সে কি লজ্জাগুলোও সাথে করে নিয়ে গেলেন নাকি!!!!!উহ মরেই যাব।
বসা অবস্থায় বিছানার সাথে মাথা মিলিয়ে দিচ্ছি আবার আবার উঠছি।উহ পাগল পাগল লাগছে।আমাকে সেও আমাকে সেও ভালো*** অনেক লজ্জা লাগছে। বিশ্বজয় করে ফেলেছি আমি আমার এমন খুশি লাগছে। কারণ সেই তো ছিলো আমার বিশ্ব।
দৌড়ে আয়নার সামনে গেলাম।টকটকে লাল লিপ্সটিক টা পরলাম। চুল গুলো খুলে দিলাম।আয়নার সামনে নিজেকে দেখছি বার বার।এমন পাগলামো কখনো করা হয় নি আমার। ইচ্ছে তো করছে দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরি। নাহ লজ্জার বিষয় মেয়ে মানুষ এর কিছু থাকুক না থাকুক লজ্জা ভরপুর থাকতে হয়।
🍁🌼🍁
এরপরে ৫ দিন আহানের খোঁজ নেই বাসায় গিয়েও পেলাম না। দরজা টাকিয়েও খুলাতে পারলাম না।৫ টা দিন এতো কষ্ট হয়েছে যা প্রকাশ করতে আমার ভাষা ব্যর্থ।কি জানি কতো দিন এভাবে করবেন।তার মধ্যে গিলটি ফিলটা খুব বেশি কাজ করে ছোটবেলা থেকেই হয়তো সেটাই আমার থেকে দূরে থাকার প্রধান কারণ। সেদিনের জন্য নিজেকেই বার বার দোষ দিচ্ছি। আসলেই একটু সুখের লোভ করতে নেই কখনোই।ভাগ্যে থাকলে সারা জীবনের জন্যই আসবে।একদিনের সুখের কারণে সারাজীবন হারানোটা বোকামির শামিল।
আজ আকাশটা খুব গম্ভীর । আমার মতো অভিমান জমেছে হয়তো আকাশের বুকে । আচ্ছা আকাশকে কে কষ্ট দিলো???বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।আজ খুব ভিজবো। ভিজে ভিজে কাদবো।এমনি কান্নার থেকে বৃষ্টির মধ্যে কান্নার প্রশান্তি সবচেয়ে বেশি হয়। যতটা শান্তি বৃষ্টির মধ্যে কেঁদে পেয়েছি ততটা শান্তি আমি কোনো কান্নায় পায় নি।আর এই শান্তি পাওয়া যায় হয়তো প্রিয়জনের বুকে।
🍁🌼🍁
শোকের মধ্যে আছি তাই সাদা জামাটা গায়ে পরলাম।তারপরে টুকটুক করে হাটতে হাটতে ছাদে পৌছালাম।ভালো মায়েদের ছাদের ওপাশ টায় একজন পকেটের মধ্যে হাত দিয়ে । গায়ে টি-শার্ট থ্রী কোয়াটার প্যান্ট,আর এলোমেলো চুল।আমার উল্টা দিকে ফিরে আছে। আমাকে দেখেনি সে এখনও।এটাই সুযোগ তাকে দুচোখ ভরে দেখে নেয়ার। সেদিনের রাতে অতটা কাছে এসে তারপরেই এতটা দূরে যাওয়া আমার এই অবুঝ মনটা মানতে পারে নি।নিজের থেকে ছোট এই ভেবে খুব লজ্জাও লাগছে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে তো আমিই তার কাছে ছোট ছিলাম।আর নিজের কাছেও বড়ো লাগেনি মূল কথ হতেই দেয় নি বড়ো।
ছাদের খুব পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।এরমধ্যেই আকাশের ডাক। আমি সত্যিই ভয় পেয়ে গেলাম।ভয় পাওয়ার মতোই ছিলো। কিন্তু মুখে শব্দ করিনি। সে শুনে ফেললে চলে যায় যদি শুধু এই ভয়ে।ভালোবাসা অজান্তেই কতো কি শিখিয়ে দেয় আমাদের। ভাবতে ভাবতেই আহানের গলা
–আকাশের ডাক ভয়ই যখন পাশ ভিজতে কেন আসিস
আমি ভাবছি আমাকে না দেখে পিছনে না ফিরে বুঝলো কিভাব আমি এসেছি?মনের টান? ধুর হয় নাকি এইটা কি বোঝেনা সে বোঝেনা নাটক?
তখনই আবার আহানের গলা।আমার দিকে ঘুরে বললেন
–আন্দাজ করে ছিলাম কারণ বৃষ্টি নামবে আর তুই ভিজবি না এটা কখনো হয় নি
–কিন্তু এসে গেছি তা কিভাবে বুঝলেন?
–দরজায় হালকা শব্দ হয়েছিলো । আর যখন নিরিবিলি পরিবেশে একা থাকবি ২য় ব্যক্তি আসলে তার উপস্থিতি অনুভব করা যায়।
–অহ আচ্ছা
একভাবে তাকিয়ে থেকে আমার কাছে আসছে আর তার সাথে দৌড়ে দৌড়ে বৃষ্টিও আসছে,, নিমিষেই ভিজিয়ে দিলো গা।আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি সে আমার দিকে।সে তাদের ছাদের পাশে এসে দাঁড়ালো।দুই ছাদের কর্ণারে দাঁড়িয়ে আমরা। কিছুটা দূরের কৃষ্ণচূড়া গাছ নিজের বেগেই দুলছে।দুরত্ব হাফ হাতও হবে না আমাদের মাঝে ।কি জানি কোন ঘোরে চলে গেলাম।ঘোর কাটলো তার হাতের ছোঁয়ায়। আমার ঠোঁটের কোণে হালকা হাসির রেশ পড়ল।হাতটা আবার সরিয়ে নিলেন তার হাতে কৃষ্ণচূড়ার পাতা।বুঝলাম এটা তুলতেই গালে হাত দিয়েছে।নীরবতা ভেঙে বলে উঠলাম
–কিছু বলছেন না যে
–কিছু বলার নেই
–আমাদের ছাদের আসুন না পিলিজ
–এসে কি হবে?
–কিছুইনা।আমি তো লাফাতে পারি না আসুন পিলিজ আসুন।
সে তাদের দরজার দিকে হাটা দিলেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম।এতো দিন পরে পেলাম আর এভাবে চলে যাবে? বার বার ডাকছি কিন্তু ফিরে তাকালেন না। দরজা পর্যন্ত গিয়ে দরজাটা বাইরে থেক আটকালেন।লাফিয়ে আমাদের ছাদের এলেন।আমাদের দরজাও বাইরে থেকে আটাকালেন কি করতে চাইছে আমি বুঝতে পারছি না।
তারপরে আমার দিকে হেটে হেটে এলেন।তৃপ্তির হাসি ফুটলো আমার মুখে।কারণ এখন তিনি কিছুক্ষনের জন্য আমার কাছেই থাকবে তার নিশ্চয়তা আমি পেয়ে গেছি।
হাত ধরে ছাদের মধ্যের দিকটায় এসে বসে পরলেন আমাকে নিয়ে।
–৫ দিন কোনো দেখা কেন দেন নি আহান?
–আজ তো দিলাম।
–জানালা দিয়ে হাত নেড়ে কতো ডেকেছি। জানালা খুলেন নি শুধু কি আমার ছটফটানি দেখেই মজা নিলেন?
–মজা নিলাম কে বললো?
–আজ ভুলে আমার সামনে পরলেন?
–হুম হয়তো
কি জানি ছোট্ট বুকটায় নিমিষেই অভিমান জমলো অনেকটা।উঠে পড়লাম। যাই বলে হাটা দিলাম।পিছন থেকে হাতে টান পড়লো। বসা অবস্থায়ই আমার হাত টেনে ধরেছেন।জিজ্ঞেস করলাম
—কি?
কিছু না বলেই টান দিয়ে বসিয়ে দিলেন।ব্যাথা পেলাম কিন্তু কিছু বললাম না। নিজের একদম কাছে বসিয়ে আমার কাধে মাথা দিতে গেলেন।কিন্তু লম্বা হওয়ার কারণে আরাম করতে না পেরে ঠেসে আমার মাথায় তার কাধে রাখলেন।আর এক হাত দিয়ে জড়িয়ে নিলেন।
মুখে কিছু বললাম না কিন্তু বুকে একরাশ সস্তিতে ভরে গেলো আমার।
–আম সরি ইচ্ছু
–এই ৫ দিনের জন্য
–না সেদিন রাতের জন্য আমার খুব গিলটি ফিল হচ্ছে।
এমনিই বিষয়টা আমার কাছে লজ্জার তাকে কি বলে সান্ত্বনা দেব তাই ভাবছি কিছু মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।কিন্তু কিছু তো বলতেই হবে।
–বাদ দিন আহান।আমার এই ৫দিনের জন্য সরি চাই
–কথা এড়িয়ে যাচ্ছিস।
–না তো
–অন্যের মনের কথা চুরে করে শোনাটা ব্যাড হ্যাবিট ইচ্ছু।
–সরি
হঠাৎ আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।আবার সাথেই সাথেই ছেড়ে দিলেন।
মুখ ফসকেই বলে ফেললাম ছাড়লেন কেন?
–দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছিস জানিস তা?
–কই না তো
— টানা দুদিন ঠোঁট ধরে টেনেছিস।ঘুমাতে গেলেও মুখে হাত কি স্বভাব এগুলো?
— মিথ্যা
–দেখেছি আমি।চুপ থাক।ঠিক করে বস তো
— বসেছি কেন?
আমার কোলে মাথা রেখে সটাং হয়ে সুরে পড়লেন।বললেন
-মুখে বৃষ্টি পরছে মাথা নুইয়ে রাখ যাতে মুখের উপর না পরে।
আমি সেভাবেই রাখলাম
–এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
–কই?
–আমি দেখেছি
–তাহলে তুইও তাকিয়ে ছিলি আমি তাকালে তো প্রবলেম দেখছি না।
নীরব হয়ে অন্য দিকে ফিরে বাতাসের কারণে গাছের দোল দেখছি।আর উনি আমার মুখের থুতনি বেয়ে যে সোজা পানি পরছে সেখানে মুখ আনলেন।না ছুয়েই আবার শুয়ে পরলেন ।দেখেও না দেখার মতো করে আছি
–ইচ্ছে
— হুম
–চুল কটা খুলে দে না,,,
তার আবদারের সুর যেন আমার মন ছুয়ে গেল।তরিঘরি করে হাত উঠিয়ে চুলের কাটা খুলতে লাগলাম।
উনি হঠাৎ ওড়না ধরে টান দিলো।কি হলো বুঝে ওঠার আগেই বললেন
–সরি ওড়না উঠে গেছিলো ভয় পাশ না।বৃষ্টি হচ্ছে নেশা করিনি যে উল্টা পাল্টা করবো।
আমার কিছু বলার ভাষা নেই।উনি উঠে বসলেন চুল টেনে বললেন বৃষ্টির দিনে সাদা জামা আর ছেলেদের সামনে যাওয়া দুটোই নিষিদ্ধ তোর জন্য।তারপর ছাদ লাফিয়ে হনহনিয়ে চলে গেলেন,,,,,,,
🍁🌼🍁
বৃষ্টি থামা পর্যন্তই ভিজলাম। থামলে নিচে নেমে এলাম।নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিচে এলাম হাঁচি দিতে দিতে।
কাউকে না দেখে চিল্লিয়ে বললাম
–আম্মু আমাকে গরম পানি করে দাও ঠান্ডা লেগেছে।
আয়ান আম্মুর রুম থেকে ডাক দিলো। গিয়ে দেঝি আহানের ফ্যামিলির সবাই আম্মুর রুমে।আহানের দিকে একপলক তাকিয়ে বললাম।
–কি হয়েছে সবাই জড়ো হয়েছো যে?
— তোর নানু অসুস্থ বুঝলি(আম্মু)
— কি বলো যাব না আমরা?
–হ্যা আহানের মা বাবা আমরা সবাই যাব।কিন্তু আহান বেকে বসেছে তার এডমিশনের ক্লাস নাকি শুরু হয়ে গেছে।অকে একা রেখে কিভাবে যাই বল তো(আম্মু)
–আমাদের এবার খালাম্মাকে দেখতে যেতেই হবে। তোর পরীক্ষার মধ্যে তখন যেতে পারলাম না এখন যদি আবার না যেতে পারি(ভালো মা)
–ইচ্ছে তো কয়দিন আগেই একবার গেছে(আম্মু)
আম্মুর মুখের কথা টেনে আহান বললেন
—হ্যা ভালো মা আমিও তাই বলছি। ইচ্ছে তো একবার গেছে আর যাওয়ার দরকার নেই।ও আমাকে রান্না করে খাওয়াবে(আহান)
এরপর আহান আমার দিকে তাকিয়ে ভয়ংকর বাকা হাসি দিলো,,
চলবে,