🏵তুইতেই আমি🏵
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ১৮
🍁🌼🍁
এরপরে আহান প্রতিদিন সময় সুযোগ বুঝে পেটের দাগ স্থায়ি করতো।দিনে যতবার দেখা হতো কথার একেবারে শেষ বেলায় নিয়ম করে একটা কামড়,একটা চুমু আর কিছুক্ষণ পেটের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের রুমে দৌড় দিতেন।নিজের রুমের দরজা আটকেই মেসেজ দিয়ে বলতেন তোর ঐ সর্বনাশা পেট আমায় আর দেখাবি না।পরের দিন নিজেই আবার মোরামোরি করতে করতে নিজেই দেখে নিতেন।
খুনশুটি ভালোবাসা সব মিলিয়ে কেটে গেলো একটা বছর।আহানের অনার্স প্রথমবর্ষ শেষ প্রায়। ফাইনাল এক্সাম শেষ।আমিও তৃতীয়বর্ষ উঠে যাব।আহানের কারণে কোনো ছেলেই পিছু নেয়ার সাহস পায় নি। প্রায়ই আমার ক্যাম্পাসে এসে পুরো ক্যাম্পাস হাত ধরে হাটবে সামনে যাকেই দেখবে তাকেই বলবে “এটা আমার বিয়ে করা একমাত্র বউ । নজর দিবেন না খেয়াল রাখতে পারেন কিন্তু খেয়াল দূর থেকে রাখবেন কাছে থেকে না।মনে রাখবেন”
আমাদের ক্যাম্পাসের বেশির ভাগ মেয়েরা তখন হা করে আহানেরর দিকে তাকিয়ে থাকে আর আমাকে একা পেলেই জিজ্ঞেস করে “ছোট ছেলেটাকে পটালে কিভাবে? পাগল কেন এতো তোমার জন্য?শুয়ে পাগল বানিয়েছ?” চোখ টিপে
আহানকে বলতেই সেই মেয়ের জবাব আহান দিয়েছিল খুব খারাপ ভাবেই।মেয়েটার বিষয় বেশ কিছু ইনফরমেশন জোগার করে পরের দিন পুরো ক্যাম্পাসের সামনে মেয়েটাকে মুখের কথায় এতো অপমান করেছিলো যে মেয়েটা ২য় বার আর আমার সামনে আসে নি।
এইতো সব মিলিয়ে ভালোই কাটছে দিন।কখনও বকাবকি কখনও আবার থাপ্পড় আর সবমসময় একবুক ভালোবাসা। চাইলেই ভালোবাসার গভীরতা বাড়ানো যেতো। কিন্তু আহান খুবই সংযমি ছেলে।নিজেই বলতেন” ছেলেদের উপর অতি ভরসা করবি না।মেয়ে মানুষের সৌন্দর্য্য এমন হয় যে অতি ভালো চরিত্রের ছেলেও দিক হারিয়ে ফেলবে। আমিও হারিয়ে ফেলি আর তখনই তোর থেকে দৌড়ে পালাই”বুঝলি?
এতো কিছুর মাঝে আমাদের ব্যাপারটা শুধু আয়ান জানে বাসার কাউকেই জানানো হয় নি।আহানের কড়া নিষেধে আয়ান ইশালকেও বলে নি।
———–
প্রত্যেকবারের মতো এবারও আমাদের জন্মদিন একসাথে আমাদের বাসায় সেলিব্রেট করা হচ্ছে।কিন্তু আহানের কড়া নিষেধ এ বাইরের কাউকেই এইবার ইনভাইট করা হয় নি বাসায়।
সন্ধা ৬ টা।আমি আয়ান উপরের তলার রুমে টিভির রিমোট নিয়ে টানাটানি করছি।আমাদের ঝগড়া দেখার দর্শক হচ্ছে ইশাল। আম্মু ভালো মা রান্নায় ব্যস্ত।জন্মদিনে শুধু ঘরের মানুষ থাকবে কিন্তু তাতে কি রান্নার আইটেমে কমতি রাখছে না দুই বান্ধবী ।
আব্বু ভালো বাবা নিচতলার বসার ঘরে গল্প জুরে বসেছেন।আহান বাইরে ছিলো। কখন এসেছেন কে জানে। রুমে ঢুকেই আয়ানকে আমার চুল টানতে দেখে আয়ানকে কয়েকবার চুল ছাড়তে বললো “কিরে আয়ান বুড়ো হয়েছিস এখনও মেয়েটার চুল টানিস”
আয়ান চুল টানায় এতো ব্যস্ত যে আহানের কথা কানেই নিচ্ছে না
— ভাই আমি এই শয়তানিকে ছাড়বো না।
— অই শালা কি বললি??? দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বউ আমার। দাড়া তোকে দেখাচ্ছি।
আহান ঝটাপট করে ইশালের চুল টেনে ধরলো সাথে মুখ টাও চেপে ধরলো যাতে ইশালের বাশমার্কা গলা নিচ পর্যন্ত না যায়।
— আয়ান দ্যাখ এইবার তো ছাড়বি তাই না?এইবার তোমার কলিজাতে লাগতেছে তাই না? ভ্রু নাচিয়ে
আয়ান আমার চুল ছেড়েই অনুনয়ের গলায় বললো”ভাই বাচ্চা মেয়ে তার উপর আপনার বোন। বোনরে কেউ মারে?”
–লাইনে আসছো মিয়া কেমন লাগে? ইচ্ছু তোর বোন না?
— ভাই ভুল হইছে ইচ্ছার বাচ্চার ঠ্যাং ধইরা মাফ চেয়ে নেব ভাই। ইশালরে ছাড়েন বাচ্চা মেয়ে।এমনিও ওর মাথায় গোবর…ম্যাথ বুঝেই না।মাইয়াটার চুল টানলে বুদ্ধি সব যাবে ফিজিক্সও আর বুঝবে না ভাই ছাড়েন
— আমি এখনও বাবা হই নাই।হইলে বাচ্চার পা ধরিস। এখন ইচ্ছুর টা ধর
এতক্ষণ পরে ইশাল বলে উঠলো
— ভাইয়া ইচ্ছাপুর সাথে তুমি রিলেশন করো?
আহান ইশালের চুল ছেড়ে বললো
— হুম। ভাবি পছন্দ হইছে?
হেসে হেসে জবাব দিলো
— হুম ননদ ভাবি হয়ে গেলে পছন্দ তো ডাবল হয়ে যায়।
ইশালের কথায় আমি আর আহান থ মেরে গেলাম।নাইনে পড়া মেয়ে কি বলছে।ইশাল বরাবরি ভাইয়ের কাছে খুব ফ্রি।তাই কথাটা বলতে একটুও মুখে বাধেনি। বরং আমার আর আহানের সম্পর্কের কথা শুনে সাহস পেয়েছে।এদিকে আয়ান মাথা চুলকে চোরের মতো কেটে পরার সুযোগ খুজছে।তখনই আহান আয়ানের কান টেনে ধরলো। আমিও বা বাদ যাই কেন? আমিও অন্য কানটা ধরলাম
— শালা পটিয়ে ফেলেছিস আমার বোনটাকে?
— শালা ভাই তুমি যে আমার বোনকে পটিয়েছ?
— কি সা্হস আমাকে শালা বলে? দেখছিস ইচ্ছে?
— শালাকে শালা বলতে সাহস লাগে নাকি ভাই?ইশাল পটে গেছে। বেশি কষ্ট করতে হয় নি
— আচ্ছা বুঝলাম কিন্তু তোকে আমি না করছিলাম না? তোর বোনের প্রেমের বয়স হয়েছে।আমার থেকেও বড় ইচ্ছু।ইশালের কি হয়েছে?ইভেন তোর নিজেরই তো হয় নাই।
— প্রেম কিছু মানে না বস
— তোর পাকনা কথা বের করছি দারা।এই ইশু তুই তো আমাকে সবটা শেয়ার করিস এটা বলিস নি কেন?
— বলতে চেয়েছি ভাইয়া। কিন্তু আয়ান ভাইয়া বলতে দেয় নি
আহান হেসে দিলেন।আমিও হাসছি।এটা ভেবে যে একটু একটু বাচ্চারাও প্রেম করছে।ইশাল খুব আশা নিয়ে জিজ্ঞেস করলো
–ইচ্ছাপু আয়ান ভাইয়ার সাথে নাকি আমার বিয়ে ঠিক করা?
— হুম আপু। কিন্তু তোরা তো খুব ছোট বড় হয়ে নে বিয়ে দিয়ে দেব তোদের কেমন?(গাল টেনে)
ইশাল অভিযোগের সুরে বললো
— আপু আয়ান ভাইয়ার একরাশ মেয়ে বান্ধবী। আয়ান ভাইয়া খুব পঁচা। ওদের সাথে সারা দিন ঘুরাঘুরি করে
— ওই মাইয়া আমি এখনও করি নাকি?(আয়ান)
— আগে তো করতা।
আয়ান আহানের দিকে তাকিয়ে বললো
— ভাই এই মাইয়া জাতটা এতো প্যারার ক্যান?দিনের আঠারো ঘন্টা বলি যে আমার মেয়ে ফ্রেন্ডগুলো ভালো। ওদের সাথে সম্পর্ক নাই আমার। তাও…. কি একটা অবস্থা ভাই
–এই জন্যই বলছিলাম অন্তত ইশাল এইচএসসি টা শেষ করুক।ও বাচ্চা মেয়ে বুঝে কি?তোদের মধ্যে না আছে বুঝ ব্যবস্থা না আছে ম্যাচুরিটি ( আহান)
আয়ান কিছুক্ষণ মাথা চুলকে ভেবে ইশালের দিকে তাকিয়ে বললো
— ওই শুন তোর এইচএসসি শেষ হোক তারপরে আবার তোরে প্রপোস করবো কেমন? তখন আবার প্রেম করবো। আপাতত আমাদের প্রেমকে এখানেই ব্যান করলাম।(দুই হাত দিয়ে ক্রোস ইশারা দিয়ে)
— আয়ান ভাইয়া তোমার সাহস তো কম না। তুমি আমাকে অপমান করতেছ
–আল্লাহ তুই অপমানের কি দেখলি আবার?আল্লাহ আমারে বাচাও এই ডাইনির কাছ থেকে
ইশাল তখনি আয়ানের পিঠ খামচে চুল টেনে আয়ানের অবস্থা নাস্তানাবুদ বানিয়ে ফেলেছে।মুখে একটাই কথা” নতুন মেয়েদের সাথে প্রেম করবা করাচ্ছি দাড়াও”
এদিকে আহান আমি হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছি।আহান কিছুক্ষন পর পর ইশালকে বলতেছে” বোন গুড শট”
আয়ান ইশালের হাত কোনোমতে অাটকে ধরে।বললো ভাই আমি এইটারে নিয়া যাই? তোমগো সামনে এই পাগলের মাথার সিট আমি কমাতে পারবো না।
–অই আমার বোন।সাবধানে। অকাজ করবি না একদম
— তুমি আমার বোনের সাথে কি করো আমি কিন্তু জানি।আমিও তোমারে বাধা দি না তুমিও দিতে পারো না ভাই। রাষ্ট্রীয় অধিকারে বাধা দেয়ার ক্ষমতা কারো নাই
আয়ান ইশালকে টেনেটুনে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।
আমি লাফিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলাম।আহান আমাকে পিছন থেকে শোয়া অবস্থায় টেনে গায়ের উপর ফালালেন।
— আল্লাহ তোর গায়ের ওজন বাড়ছে রে ইচ্ছু। ৫০ কেজি নিজের গায়ের উপর পরলো।আমি বেচে আছি? চেক কর তো
— আহান মাত্র পঞ্চাশ।পচাবেন না একদ্ম ।ছারুন ওরা রুমের মধ্যে কি করছে দেখবো আমি
নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি।
— তার থেকে আমি করে দেখাই ওওরা কি করছে।নিজের টাই না হয় দ্যাখ।বলেই ঠোঁটের উপর চপাশ করে কিস করে দিলো। মুখ উঠিয়ে মুখে মেকি হাসি ঝুলিয়ে দিলেন
মেয়েরা এটা করলেই শান্ত হয়ে যায় বুঝলি?বাঘিনী বিড়লনী হয়ে যায়।
আমার শরীর থরথর করে কাপতে শুরু করে দিয়েছে।তার সব ছোঁয়াই যেন প্রথম ছোয়ার মতো। কখনও পুরনো মনে হয় না। লজ্জায় আর চোখ খুলছি না। ঠোঁট জোরা মুখের ভাজে আটকে দিয়েছি।।আসলেই বোকা আমি বাচ্চাদের কাহিনি দেখতে যাচ্ছিলাম। লজ্জা লজ্জা
আহা৷ নাকে নাক ঘষে হাতে একটা গিফট ধরিয়ে দিয়ে বললেন হ্যাপি বার্থডে পাখি। আমিও ওনার নাকে নাক ঘষে বললাম হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ঠু আহান।
আমাকে বুকে নিয়েই উঠে বসলেন।তারাহুরো গলায় বললেন “শাড়ি পরাবো তোকে আয়”
চলবে,