তুইতেই আমি🏵পর্বঃ১৯

0
2029

🏵তুইতেই আমি🏵
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ১৯

🍁🌼🍁

আমাকে বুকে নিয়েই উঠে বসলেন।তারাহুরো গলায় বললেন “শাড়ি পরাবো তোকে আয়”

— শাড়ি? কিন্তু…

— উহ আয় না

আমাকে আর কিছুই বলার সুযোগ না দিয়ে টানতে টানতে আমার রুমে নিয়ে এলেন।

দরজা আটকে চোখ টিপি মারলেন।
— আহান আপনার হাবভাব সুবিধার ঠেকছে না

আহান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন

— না ঠেকলে নাই।
এর পরেই দুষ্ট হাসি।

— আয় তুই আমি শাড়ি সিলেক্ট করি।ব্লাক শাড়ি আছে তোর?

— হুম আছে

— ওটা নিয়ে আয়

— ওটার সাথে ব্লাক কালারের ব্লাউজ ম্যাচিং নেই

— ব্লাউজ লাগবে না

— মানেহ (ইতিমধ্যেই আমার চোখ উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে)

–মানে ব্লাউজ লাগবে না

— আহান আমি কেদে দিব কিন্তু

— কাদলে চলে? বললি কালো ব্লাউজ নেই।এখন তো আর বানানো সম্ভব না তাই না?সো রেড কালারের ব্লাউজ পর।

আমি বড়সরো নিশ্বাস ছাড়লাম

— ও আচ্ছা তাই বলেন

— তোর নিজের মনেই দোষ বুঝলি

— যত দোষ আমার তাই না?

— হ্যা যত দোষ ইচ্ছিপাখি ঘোষ

আহানের মুখে হাসি ধরছে না।তারপরে থেমে গেলেন গম্ভির গলায় বললেন চেন্জ কর

— হ্যা যাচ্ছি ।

ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতে নিলাম তার আগেই আহানের গলা

— রুমের মধ্যে পাল্টা। শাড়ি বাথরুমের মধ্যে পড়তে অসুবিধা হয়। আমি বরং গিয়ে পান্জাবী পরে আসি।

আহানের পান্জাবী পাল্টাতে তেমন সময় লাগে নি।তাই সে দ্রুতই ব্যালকুনি লাফিয়ে রুমে চলে এসেছে।রুমে এসে ইচ্ছের অবস্থায় আহান ফ্রিজড।ধীর পায়ে এক পা দু পা করে আগাচ্ছে ইচ্ছের দিকে।

আহানের উপস্থিতি এখনও ইচ্ছে টের পাই নি।তাই তার কোনো তাড়া নেই।পেটিকোট আর ব্লাউজ পরে আছে মাত্র।ব্লাউজের পিছনের হুক আটকানো নিয়ে যুদ্ধ করছে কিন্তু আটকাতে পারছে না।আহান এতো তাড়াতাড়ি এসে যাবে তা সে কল্পনায়ও ভাবে নি।

আহানের চোখ ইচ্ছের খোলা পিঠে।পিঠে হাত দিতে যেয়েও হাত কাপছে। আবার ফিরিয়ে নিচ্ছে হাত।এক পর্যায় ইচ্ছের পিঠে চুমু খেয়ে নিল।ইচ্ছে লাফিয়ে পিছন ফিরলো

— আহান আপনি ক ক কখন এলেন।

ইচ্ছে চেয়ারের উপর দিয়ে শাড়ি তুলে নিজের সামনে ধরলো।আহানকে দেখে ইচ্ছের হাত পা এতো পরিমাণ কাপছে যে নিচে বসে পরল।

— চোখ বন্ধ করুন প্লিজ আমার দম আটকে আসছে।

আহান ইচ্ছের দুই বাহু ঝাকিয়ে বললো
— হুস। খেয়ে ফেলছি না তোকে কিন্তু যতটুকু ইচ্ছে জেগেছে পূরণ না হলে আমার ঘুম হারাম হয়ে যাবে।অশান্ত হয়ে যাবো রে পাখি। প্লিজ

আহানের কথায় নিজেকে শান্ত করছে ইচ্ছে।কি আছে তাতে? আহানই তো দেখেছে তাকে,,,
ইচ্ছে নিজেকে কন্ট্রোল করার ট্রাই করছে।

আহান ইচ্ছের দুই হাত ধরে টেনে উঠিয়ে আয়নার বিপরীত দিকে মুখ করে দাড় করালো। ইচ্ছের হাত শাড়িটা হাত থেকে ছাড়িয়ে চেয়ারে রাখলো।

–একটু কম্প্রমাইজ করবি একটা দিন? আমি কিছু ভুল করতে চাই।তবে তার জন্য তুই পস্তাবি না ওয়ারেন্টি গ্যারান্টি আজই পাবি । কাগজপত্র চুক্তি নামা আজই তোর সামনে দিয়ে দেব।আমাকে একটু ভরসা কর।আমার ইচ্ছে যে আজ প্রবল.. এতোদিন পারলেও আজ পারছি না আমি ইচ্ছাগুলোকে দমিয়ে রাখতে।

ইচ্ছে কিছু বলছে না নিচের দিকে তাকিয়ে আছে একরাশ লজ্জা নিয়ে।
— পাখি তোকে অনেক আবেদনময়ী লাগছে জানিস?আবেদনময়ীর ইংরেজি কি বল দেখি

আহানের এই সময়ের মজা আমি একদম নিতে পারছি না।আমার কাপাকাপি ক্রমশই বারছে।

— আরে উই আর এডাল্ট নাও।আমার বিশ চলছে তোর বাইশ।কুল কুল পাখি,, ভয় পাচ্ছিস কেন?
আমি আজ পর্যন্ত তোর ভয় পাওয়ার মত কিছু করেছি?

ইচ্ছে অস্ফুটস্বরে বলে উঠল
— আমি ভয় পাচ্ছি না আহান।কিন্তু এমন কেন হচ্ছে আই ডোন্ট নো।

— তাহলে বুঝতে হবে সাভাবিক ব্যাপারগুলো হচ্ছে। (মুখ টিপে হেসে)আচ্ছা আমার পাখিটা ভয় পাচ্ছে না তো শক্ত করে জড়িয়ে ধরুক তো দেখি

ইচ্ছে সাথে সাথে জড়িয়ে ধরলো। আহান নেশাক্ত গলায় বললো তোর সৌন্দর্য তে পুরছিলাম আমি।তাই নিজের মাঝেই লুকিয়ে ফেলতে চেয়েছিলাম।এখন দেখছি ছোঁয়ায় আমাকে ছাই করে দিচ্ছে।।পাগল হয়ে যাবো আমি।এত সুন্দর হতে নেই বুঝলি।এতো সুন্দর হতে নেই।

আহান জড়িয়ে ধরে ইচ্ছের খোলা পিঠের হাত বুলাচ্ছে।আর আয়নায় ইচ্ছের খোলা পিঠ দেখে চোখ পোড়াচ্ছে

— তোর পিঠের ভাজটা আমায় খুব টানছে রে খুব

আহানের প্রত্যেক কথায় ইচ্ছে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে।অবস্থা এমন যে পারলে বুকে ঢুকে যায়।

আহান আর দেখতে পারছে না।দেখতে পারছে কিন্তু ধৈর্য শক্তি ক্রমশই কমছে তার।তাড়াতাড়ি করে ইচ্ছের ব্লাউজের হুক আটকে দিলো।তারপরে ইচ্ছেকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।কপালে চুমু একে বললো। কপালে টিপ পরবি না।মেকআপ করবি না। লাল লিপ্সটিক পরবি।আর হালকা সাজ সব তো আর আমি জানি না…যা যা লাগে দিয়ে নিচে চলে আয়।আমি আছি বাইরে।এটা বলে এক সেকেন্ডও দাঁড়ায় নি আহান।

শিরিন আর নিধি ছেলে মেয়ের জন্মদিনের জন্য কিছুই কমতি রাখে নি।ড্রয়িংরুম খুব সুন্দরভাবেই সাজানো হলো। খুব সুন্দর একটা কেক। চকলেট ফ্লেবারের। যেহেতু ইচ্ছে চকলেট কেক পছন্দ করে। তাই আহানের অপছন্দ সত্ত্বেও সেটাই অরডার দিয়েছে।ইচ্ছে আহানের সত্তায় ঢুকে গেছে।এক মুহুর্ত ভাবতে পারছে না ইচ্ছেকে ছাড়া। ইচ্ছেকে শিরি দিয়ে নামতে দেখে ইশাল দৌড়ে আনতে গেলো।

— কি সুন্দর লাগছে গো তোমায় আপু

ইশালের গাল টেনে সৌজন্যমূলক হাসি দিল।

— তোকেও সুন্দর লাগছে ইশাল।

— থ্যাঙ্কিউ আপু

আহান বলে উঠল” কিরে পাগল তোকে তো দেখছি দারুণ লাগছে ।”

মনে মনে ভাবছি” এই হচ্ছে সাধু সন্ন্যাসী বাবা যে নিজে আগেই আমার সাজ দেখেছে তাও এখানে ফাপর মারছে”

আয়ান আহানের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো ” কি ভাই তুমি সাজাইলা নাকি? ইচ্ছের মুখের গ্লেস এমন তাতেই বুঝা যাচ্ছে বয়ফ্রেন্ডের সাজ্” বলে আয়ান কিটিকিটি হাসছে।

আহান আয়ানের কান ধরে বললো “হ্যা ইশালের সাজ টাও কেমন বিএফ বিএফ লাগছে”

— কি যে বলেন ভাই লজ্জা লাগে।

শিরিন চিল্লিয়ে উঠল “ওরে আল্লাহ আমার মা টারে কি সুন্দর লাগছে।নিধি দ্যাখ একটা গুলুমুলু পরীর মালিক তুই।আমার আহানের ছোট হলে আজই বউ করে নিয়ে যেতাম”
আহান ইচ্ছেকে চোখ টিপলো।আমি লজ্জায় লাল হচ্ছি।ইশাল আয়ানও মুখ টিপে হাসছে।

ইচ্ছের মা নিধির মুখটা কেমন চুপসে গেলো।

শিরিন আর কথা না বাড়িয়ে আহান আর আমাকে কেক কাটতে বললেন।

আহান আর ইচ্ছের কাছে প্রত্যেক বছরের চেয়ে এবার একসাথে ছুরি ধরে কেক কাটতে এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে।প্রাপ্তি অার পূর্ণতায় ছেয়ে গেছে মন।হাজারো ভালোবাসা, ভালোলাগা, সপ্ন উঁকি দিচ্ছে তাদের মনে।

আহানের মনে আনন্দ আরও।সে আজ ইচ্ছেকে আরও একটা সারপ্রাইজ দিবে।কেক খাওয়া নাচ গানের পরে সবাই খাওয়ার টেবিলে একসাথে খেতে বসেছে।

শিরিন নিধি এগিয়ে দিচ্ছে নিজেরাও খাচ্ছে। আয়ান ইশাল টেবিলের নিচে পায়ের উপর পা রেখে আই কন্টাক করছে আর খাচ্ছে।আহান আয়ানের পায়ে একটা লাথি মেরে গলা খাকারি দিয়ে বললো।

— আমার একটা কথা আছে আম্মু, সেটা আজ শেয়ার করতে চাই।ভালো মা ভালো বাবা আব্বু সবাই শুনবে

ইচ্ছে কিছুই আন্দাজ করতে পারছে না তাই মন দিয়ে খাচ্ছে।খানিকটা কান পাতেনি তা না

— হুম বাবা বল তুই কি বলবি( নিধি)

আহান খানিকটা উশখুশ করে একটা বড় নিশ্বাস নিলো।একদমে বলে ফেললো

— আমি ইচ্ছুকে বিয়ে করতে চাই ভালো মা

আহানের কথায় আমার গলায় খাবার অাটকে গেলো। কোনোমতে পানি খেয়ে নিজেকে সামলালাম।আহান মাথায় হাত দিয়ে হালকা করে মারছে আর বলছে গলায় কিভাবে অাটকালি।বড় হবি না তুই।
আমি আহানের দিকে গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে আছি।
আর সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।

আহান সবার দিকে তাকিয়ে আবার বললো “আমি ইচ্ছেকে বিয়ে করতে চাই ”

আহানের বাবা মায়ের মুখে হাসি ফুটল।কিন্তু নিধি আর আব্দুর রাহমানের মুখে হাসি ফুটল না।অজানা কারণেই তাদের মুখ গম্ভীর হয়ে গেলো

শিরিন একরাশ সস্তির নিশ্বাস নিয়ে হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলেন” আহান ইচ্ছে কি রাজি আছে?

আহান খাচ্ছে আর জবাব দিচ্ছে

–ইচ্ছের থেকেই জেনে নাও

ইচ্ছের আর বলতে হলো না।আয়ান লাফ দিয়ে বলে উঠে “ভালো মা ওদের এক বছরের বেশি সময় ধরে রিলেশন চলছে”
ইচ্ছে এবার লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে।
শিরিন শব্দ করেই বলে উঠে “আলহামদুলিল্লাহ।তাহলে তো দেখছি বিয়ে দিতে হয়।এ নিধি আমার ছেলের ফিউচার নিয়ে তো তোর চিন্তা নেই তাই না। দিয়ে দে তোর মেয়েটাকে তারাতারি বুঝলি? ”

নিধি অনিচ্ছাকৃত হাসি ছুড়ে দিলেন যা শিরিনের কাছে স্পষ্ট।

— ভালো মা আমি তাড়াতাড়ি বিয়ে করবো বলে দিলাম।কাল বললে কাল

নিধি আবারও হালকা হাসলো।
–হ্যা তোদের দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি হচ্ছে আমি কথা দিলাম। (শিরিন)
–থ্যাঙ্কিউ আম্মু। আর আয়ান তোর রিলেশনের কয়মাস চলছে বলে দে সবাইকে( আহানের দিকে তাকিয়ে)

আহানের কথায় এবার সবাই হা হয়ে যায়। ইশাল খাবার রেখেই দৌড় লাগায়। নিধি আর শিরিন আয়ানের দুই কান টেনে ফেলে।দুইজনই বলে ওঠে “ওরে পাকনা পটিয়ে ফেলেছিস”

সবার মধ্যে একটা হাসির রোল পরে যায়।

বিদায়ের সময় আহান ইচ্ছের কানে কানে বলে যায় “শাড়ি চেন্জ করবি না।কিছুক্ষণ পরেই আসছি আমি”

তারপরে আর পিছনের দিকে তাকায় না।আহানের ছায়াটুকু সরে যাওয়ার পরে ইচ্ছে নিজের রুমে চলে আসে একরাশ অস্থিরতা নিয়ে।কি হবে?রাতে কেন আসবে? আজকে এতো কেন চমকাচ্ছে আমাকে?” এসব ভাবনা মাথায় অনবরত হামলা করে যাচ্ছে।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here