তুইতেই আমি🏵পর্বঃ২০

0
1944

🏵তুইতেই আমি🏵
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ২০
🍁🌼🍁
আহান ব্যালকুনির দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ইচ্ছের ব্যাকুলতা স্থির চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
ইচ্ছে আহানকে দরজার সাথে দেখে চমকে উঠল।কি স্থির চাওনি তার।তার চোখেই বুঝি ইচ্ছের লজ্জার সমাপ্তি। এভাবে তাকিয়ে না থেকে উঠে আহানের কাছে যায়।
— আহান কখন এলেন। আমাকে ডাকেন নি যে।রাত একটা বাজে কই ছিলেন আপনি? যদি ঘুমিয়ে যেতাম?
— টেনে তুলতাম
— টেনে তুলে?
আহান হাতের ফোনটা পাশের টেবিলের উপরে ফুল দানির সাথে ঠেস দিয়ে রাখলো। এরপরে আহানের চোখ ইচ্ছের দিকে।আহান আগাচ্ছে ইচ্ছে পিছাচ্ছে।
— এখন যা করবো তাই করতাম। ছুয়ে দিতাম এখানে এখানে এখানে( ইচ্ছের গালে ঠোঁটে গলায় হাত দিয়ে দেখাচ্ছে)
আরও অনেক জায়গায় ছুয়ে দিতাম।
ইচ্ছে আর আগাতে পারছে না।পিছনে বিছানা তাই ইচ্ছে বিছানায় বসে পরল।আহানের কন্ঠ তার একটুও সুবিধার ঠেকছে না।
— আহান আপনি কি ড্রিংকস করেছেন? আপনার শার্ট টাও জায়গায় জায়গায় ভিজে আছে।মুখ দিয়ে গন্ধ আসছে।
এবার আহান ইচ্ছেকে ধাক্কা দিয়ে শুইয়ে দিলো। লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে ইচ্ছের পেটের উপর চড়ে বসলো।
— ইচ্ছু পাখি আমি কি করতাম বল?
— কি করতেন মানে? তার মানে আপনি সত্যিই….???
— হ্যা বেশি না একটু।(দুই আঙুল দিয়ে দেখিয়ে) ।প্রথম বার তো তাই একটা কে কেমন দুটো দুটো দেখছি।যাক ভালোই হলো আজ যা দেখবো ডাবল ডাবল।(চোখ টিপে)
আহান বাচ্চাদের মতো হাত তালি দিচ্ছে।ইচ্ছের মনে হচ্ছে তার পেটের উপরে এক অদ্ভুত প্রাণী বসা।কারণ সে কখনো আহানকে মুডি ভাব ছাড়া দেখে নি তাছাড়া ভালোবাসাময় কথা আর মাঝে মাঝে ফাজলামো আর শাসন । কিন্তু নেশা করে বাচ্চামো…
ইচ্ছের মাথা চক্কর দিচ্ছে।এই পাগলকে এখন সামলাবে কি করে? দুইদিন পরে নাকি এই ছেলের সাথে বিয়ে…ভাবা যায়?
— পাখি রে?এ পাখি(ইচ্ছের গাল চাপরে)
ইচ্ছের মনে হচ্ছে ওর গালে ভুমিকম্প শুরু হয়েছে।
— এ পাখি শুন না শুন
— হ্যা হ্যা শুনছি শুনছি আগে থাপড়ানী বন্ধ করুন তারপর বলুন
— আমি না খেতে চাই নি।মানে হয়েছে কি,,, হয়েছে কি হয়েছে?(আহানের কথা বেজে বেজে যাচ্ছে)হ্যা মনে পরেছে।আমার আজ তোর খোলা পিঠ মানে শুধু শাড়ি ব্লাউজে দেখে মাথায় কি যেনো হয়ে গেলো।বুঝলি(ইননোসেন্ট ফেস করে)।জানিস আমি তোকে রাতে অপেক্ষা করতে বলেছিও ছুয়ে দেয়ার জন্য কিন্তু আমার মনে হলো দুই দিন পরেই তো বিয়ে।আর তার আগেই ছুয়ে দেয়া কেমন না?কিন্তু আমার ভিতরের দুষ্ট আহানটা কিছুতেই মানছে না জানিস তো।তাই নেশা করলাম।ওই ফাজিল শয়নের কাছে এসবের কালেকশন অলওয়েজ থাকে ওকে দিয়েই আনিয়েছি।ছাদে দিয়ে খেলাম ভাবলাম খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বো কিন্তু দ্যাখ তুই আমার সামনে এসে গেলি।কিভাবে এলি রে?নাকি আমি এলাম।বিশ্বাস কর আমি হাইড করতাম না। তোকে পরে ঠিক বলে দিতাম যে ড্রিংকস করেছি।ভিডিও করেও রেখেছিলাম।তোর কাছে আমি কিছু লুকাই বল?
— আপনি নেশা করে ব্যালকুনি লাফিয়েছেন?????যদি পরে যেতেন?এটা ভাবতেই আমার বুক ধক করে উঠল।আহানকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলাম।শক্ত করে গলা জরিয়ে ধরলাম।
এমন করেন ক্যান আপনি? ভয় লাগে তো।এতো ডেসপারেট হতে নেই।
— কেমন করি?পাখি বিলিভ আমি ব্যালকুনি লাফাই নি।তুই আমার সামনে এসেছিস।এখন তোকে আমি আমার থেকে কিভাবে বাচাই?আমার যে খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে খুব।আয় না ভালোবাসি আয় না।দুদিন বাদেই তো বিয়ে।আয়
আহানের নেশাক্ত গলায় ইচ্ছে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।এই মাতাল কি শুনবে তার কথা? এই অবস্থায় বুঝানোও তো আদোও সম্ভব না।
এদিকে আহান গলায় অনবরত চুমো দেয়ার কারণে ইচ্ছে শরীর ঠান্ডা হয়ে এসেছে।হাত পা কাপছে।
— ইচ্ছু কাপছিস কেন? ভয় পায় না।আমি ভালোবেসে দিচ্ছি। এখনই ভয় কমে যাবে।
আহা যার ভয়ে হাত পা কাপছে সে আমার ভয় নিভাতে আসছে।আর ভয় নিভানোর কি প্রক্রিয়া? ভালোবেসে ভয় কমাচ্ছি।তাও যেমন তেমন ভালোবাসা না
আহান আর ভাবার সময় দিলো না তার চুমোর চপাশ চপাশ শব্দে আমি অস্থির হয়ে গেছি । আর না পেরে বললাম
— আহান আস্তে আস্তে।বিশ্বাস করেন এই শব্দে আব্বু আম্মুর ঘুম ভেঙে যাবে।
সে গম্ভির কন্ঠে জানালেন
উঠতে দেয়া মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা।সেই ভুল আহান করবে না।বুঝলি।চুক চুক করে চুমু দিচ্ছি কেমন?
এবার আমার চরম হাসি পেল।
কি জানি এরপরে আহানের নেশাক্ত চাহনি যেনো দিগুণ হয়ে গেল।শাড়ি টেনেটুনে খুলে ফেললো। তার শেষ কথা”উপর হয়ে শুয়ে পর তোর খোলা পিঠ দেখবো ”
**ভালোবাসায় মুড়িয়ে দাও গো মোরে
ছেড়ো না কভু অবচেতনে**
রাতে আর ইচ্ছের ঘুম হয় নি।এক সেকেন্ডের জন্যও চোখ এক করতে পারে নি আহানের যাতনায়।এটা
কি? ওটা কি? সেটা কি? এটা সুন্দর ওটা সুন্দর সব সুন্দর এসব প্রশ্ন করে করে ইচ্ছের মাথা পাগল করে দিয়েছে।নেশাখোরদের সাথে কেন সংসার টেকে না তা ইচ্ছে হারে হারে টের পেয়েছে।তবে আহানের বাচ্চামি ভালো লাগে নি তা না।
আহান ঘুমিয়েছে ঘন্টা খানিক হবে হয়তো। রাতটা সপ্নের মতো ছিলো তার কাছে। গভীরতা তেমন হয় নি যেটুকু হয়েছে একটা মেয়ের জন্য প্রথম বারের জন্য কম না।আজানের সময় ইচ্ছে ঘুমিয়ে পরলো।
লাগাতার শব্দযুক্ত দরজা টাকাটাকিতে আহানের ঘুম ভেঙে গেল।পাশের ফোনটা অন করে দেখে দশটা বাজে।চোখ কচলাচ্ছে আর তার মনে হচ্ছে রুম টা তার না।পাশের শোয়া মানুষটাকে দেখে আহান আকাশ থেকে পরেছে।সারা রাত এসব করেছে সে মাতাল হয়ে?ইচ্ছে কষে থাপ্পড় মারেনি তাকে? তারপরেই মনে হলো ওইটা যে হাবলা। এসব ভাবার সময় নেই নেই।কিন্তু ওই যে কথায় আছে পুরুষ চোখ। আহান না চাইতেও বার বার ইচ্ছের দিকে চোখ পরছে।চোখ ভরে দেখতে ইচ্ছে করছে।ঘুমন্ত অস্পর্সী।
আবারও মাথায় আসলো সময় নেই। আহানের ডাক হয়তো পড়ে নি কারণ সে বেলা করেই ঘুমায়।কিন্তু ইচ্ছের দরজা কিছুক্ষণ পর পর ভাঙি ভাঙি পালা হচ্ছে।
আহান ইচ্ছেকে ডাকলো।
— ওই বান্দর ওঠ।ওঠ
প্রচন্ড ধাক্কায় ইচ্ছে চোখ খুললো।মুহুর্তেই নিজের অবস্থায় নিজেকে আড়াল করতে ব্যস্ত সে।
আহান উল্টো ঘুরে বসেছে কিন্তু সেকেন্ডে সেকেন্ডে ঘুরে তাকাচ্ছে।
— রাতে ঠিক ঠাক করে ঘুমাতে পারিস নি??? দেখাতে হবে যে আমার সাথে তোর কি হয়েছে।দে দে হুক আমি আটকে দিচ্ছি।
আহান ইচ্ছের ব্লাউজের পিঠের হুক আটকে নিজের শার্ট টা হাতে নিয়ে বিছানা ছাড়লো।দুজনের মধ্যেই দৌড়াদৌড়ি অবস্থা। আহানের ফোন টা টেবিলে দেখে ইচ্ছে আহানের হাতে ফোন টা ধরিয়ে দিয়ে তাড়া লাগিয়ে বললো ” তারাতারি যান”
— মিস হয়ে গেলো রে কিছু মনে নেই আমার( অনাথ বাচ্চাদের মতো মুখ করে)
— আহান আপনি যাবেননননন
–যাচ্ছি যাচ্ছি
আহান ব্যালকুনির দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এসে ইচ্ছের কপালে চুমু দিয়ে টাইড হাগ করলো। তারপরে ব্যালকুনি লাফিয়ে চলে গেলে ইচ্ছে দরজা খুলে দিলো।
–হ্যা রে আপু এতো বেলা তো করিস না।এতো বেলা করলি যে?(আয়ান)
ইতোমধ্যেই নিধি রুমে ঢুকে গেছে।
— রাতে কি শাড়িটাও খুলে ঘুমাতে পারো নি নাকি? শাড়ি টার অবস্থা কি করেছো? আমার কতো পছন্দের শাড়ি জানো না?।
খাবার রেডি আছে খেয়ে ভার্সিটি যাও।
গোসল সেরে খাওয়া দাওয়া করে ভার্সিটি যাচ্ছি। ইম্পর্ট্যান্ট একটা ক্লাস আছে।মেরুন কালারের থ্রিপিচ মেরুন হিজাব।হাল্কা লিপ্সটিক।ব্যাস।আহান বাইক নিয়ে গেটেই অপেক্ষা করছে।কফি কালারের টিশার্ট চোখে সানগ্লাস।খোচা দাড়ি ফরসা মুখ।এক্কেবারে চকলেট।খেয়ে ফেলতে মন চাচ্ছে। এই চকলেট বয়টা আমার ভাবতেই মন নেচে উঠছে।বাইকে উঠেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
— বাপরে তোর দেখি সাহস বেড়েছে।রাতে এমন কি করেছি যে তোর সাহস এর টেমপারেচার বেড়ে গেছে?
–জানি নাহ
আমি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
— রাতে তাহলে ভয়ানক কিছু করেছি।একটা ভয়ানক ব্যাপার বল তো…
— বলবো না।
আহান দুষ্ট হেসে বললেন আচ্ছা।আজ ক্লাস করবো না ঘুরবো খুব ঘুরবো।
মিষ্টি হেসে তার কানে ঠোঁট ছোয়ালাম।
আহানও হেসে উঠলেন।
বাইক চলেছে উদ্দেশ্যহীন ভাবে।আজ অনেক জায়গায় ঘুরালেন।নিজের বন্ধুমহলের কাছে আমাকে বউ বলে পরিচয় করিয়ে দিলেন।একটা মেয়ে দৌড়ে জড়িয়ে ধরলো আমাকে।উৎসুক গলায় বললো
— আরে আপু তুমি? কেমন আছো? তোমার কতো পিক দেখেছি।জানো আপু আহানের বাচ্চাকে প্রপোজ করতে করতে হাপিয়ে গেলাম আমি। এক পর্যায় আমার বর্তমান বয়ফ্রেন্ডও আহানকে রাজি হতে বললো। কিন্তু আহানের এক কথা আমার একটা মিষ্টি, ছোট্ট, গুলুমুলউ বউ আছে। বন্ধু বন্ধুর মতো থাক।নইলে ধরে আর একটা প্রেম করিয়ে দিলো।কি হুমকি শুনলে তো?আর তারপর আমার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে প্রেম হলো। ও ই খবর দিলো তুমি এসেছো।আসলেই আপু তুমি গুলুমুলু সুন্দরী ফিট একটা মেয়ে।তাই তো আহানের চোখ আমার দিকে পরল না
আমি মেয়েটার কথার মাঝে ভালো আছি বলার জন্য ফাকা জায়গা পেলাম না। আমার তাকে এক প্রকার চরম বাচাল মনে হলো। আহানের রিজেক্ট করার প্রধান ও অন্যতম কারণ যে মেয়েটার বাচালতা তা আমি ভালোই বুঝতে পারছি । তাও শান্ত ভাবে কথা বললেও হতো।আমার গাল টেনেটুনে হাত ঝাকিয়ে কিছু রাখছে না। গাল ব্যাথা হয়ে গেছে আমার।
এবার আহানই বলে ফেললো ” আম্মা রে ছেড়ে দে বউটা তোর ঝাকাঝাকিতে গায়ের এনার্জি সব হারিয়ে ফেলবে রে ।আজ অনেক ঘুরতে হবে। অনেক এনার্জি দরকার আর তুই যদি…. ।”
সেখান থেকে বেড়িয়ে আহানের পছন্দ মতো সব জায়গায় গেলাম।সবুজের মাঝে শুধু দুইজন মানুষ নিরিবিলি রাস্তা জাস্ট ওয়াও, নদীর স্রোতের পানিতে দুইজনের পা ভিজিয়ে হাটা। আরও কতশত সুন্দর মুহুর্ত জানান দিলেন আমাকে তিনি ……
সারাদিন ঘুরে হাজারো সৃতি জমা করে দুইজন বাসায় ফিরলাম।খেয়েদেয়ে আবার ঘুম।
সন্ধ্যা ৭টা ১০।নিধি এই নিয়ে দুইবার ডেকে গিয়েছে ইচ্ছেকে।
ইচ্ছে বাবা মায়ের রুমে যেতেই। আব্দুর রাহমান তাকে পাশে বসালেন।
নিধি তার মেয়েকে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলেন
— তুই আহানকে ভালোবাসিস?
— হ্যা আম্মু
— সত্যি?
— হ্যা আম্মু
— ভালোবাসিস ভালো কথা।কিন্তু তোকে একটা কথা বলতে চাই,,,
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here