ভালোবাসি প্রিয় পর্ব-৩৭

0
1134

#ভালোবাসি_প্রিয়
(রিপোস্ট)
পর্ব_৩৭
©জারিন তামান্না .

কিছুদিন পর,

গা ম্যাজম্যাজ করছে পলকের। কোমড়টাও ভার হয়ে আছে। নড়তেচড়তেও বড্ড কাহিল লাগছে তার। রাতেও খায়নি কিছু।সিফাত দুই তিনবার বলেছিল কিন্তু পলক বারবার না করায় জোর করেনি আর। ঘরে এসে শুয়ে আছে সোজা হয়ে।পেটের উপর বালিশ দিয়ে ভার দিয়ে রেখেছে সে। শুরুর দুই তিনটা দিন যেন জাহান্নাম সমান যায় তার।

সিফাত ঘরে এসে শোয়ার প্রস্তুতি নিতেই পলককে ঠিক হয়ে শুতে বললো। কিন্তু,পলক তার জায়গা থেকে নড়লো না। তাকে তাড়া দিয়ে আবারও বললো সিফাত,
_কি হলো আসুন?
_আজ এখানেই থাকবো আমি। প্লিজ!
পলকের এহেন কথা শুনে ভ্রু কুচকে গেল সিফাতের। কারণ,পলক নিজে থেকে সিফাতের কাছে না গেলেও, সিফাতের এহেন কাজেও বাঁধা দেয় না কখনো। একদিন রাতে অবশ্য সে আপত্তি তুলেছিল। বলেছিল,
_আপনি রোজ রোজ এভাবে বালিশ রাখেন কেন শুনি?
পলকের প্রশ্নে কিছুসময় চুপ করে তাকিয়েছিল সিফাত তার দিকে। তারপর বলেছিল, যেদিন এখানকার বালিশটা আপনি নিজেই সরিয়ে রাখবেন সেদিন উত্তর পেয়ে যাবে।তখন আমিও আর এভাবে বালিশ রাখবো না। রাখার প্রয়োজনই হবে না একচুয়ালি !

সিফাতের এহেন কথায় আর কিছু বলার মত খুঁজে পেল না পলক। চুপচাপ শুয়ে পড়েছিল রোজকার মতই। আর তারপর থেকে কখনোই সে আর কিছুই বলেনি এই নিয়ে। কিন্তু, আজ পলকের এমন অনুরোধের কারণটা ঠিক বুঝলো না সিফাত। হঠাৎ খেয়াল করলো পলকের পেটের উপর বালিশ চেপে রেখেছে সে। সেটা দেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেল সিফাত। পলক বুঝলো না সামান্য দূরে শুতে চেয়েছে বলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার কি হলো!

কিন্তু,সিফাতের পিছু পিছু যেতেও পারলো না সে। প্রচন্ড ব্যাথা করছে তার পেটে। তাই চুপচাপ শুয়ে সিফাতের অপেক্ষা করতে লাগলো।

কিছুক্ষণ পর ঘরে ফিরে এলো সিফাত। একহাতে হট ওয়াটার ব্যাগ আর অন্য হাতে একগ্লাস শরবত নিয়ে। ঘরে এসে দেখলো পলক জড়সড় হয়ে পেট চেপে একপাশ হয়ে শুয়ে আছে। ঘরের লাইট অন করতেই তার আলোয় চোখ মেলে তাকালো পলক। সিফাতকে দেখে অবাক হলো বেশ। জিজ্ঞেস করলো,
_কোথায় গিয়েছিলেন আপনি? একরাত আপনার কাছ ঘেঁষে শুবো না বলে কি এভাবে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে হয়?!
পলকের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে শরবতটা সাইড টেবিলের উপর রেখে, ব্যাগটা বিছানার এক কোণায় রাখলো সিফাত। তারপর, পলককে বললো,
_দেখি…উঠে বসুন তো একটু।
_কেন?
_দরকার আছে। বলে নিজেই পলকের পিঠে হাত রেখে তাকে উঠিয়ে বসালো। তারপর, শরবতের গ্লাসটা পলকের হাতে দিয়ে বললো খান এটা।
_এটা কি? অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো পলক।
_লেবুর শরবত। কড়া করে চিনি দিয়েছি। এটা খেলে ব্যাথা অনেকটা কমে যাবে। তারপর,,গরম পানির ছ্যাক দিলে আরাম লাগবে আপনার।
সিফাতের এহেন কথায় চোখ বড় বড় হয়ে গেল পলকের। তা দেখে সিফাত বললো,
_Its a natural process of woman’s body. লুকানো বা লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। নিন, শেষ করুন এটা।
পলক পুরো থতমত খেয়ে গেল সিফাতের কথায়। লজ্জায় গুটিয়ে গেল একেবারে। সিফাত যে এভাবে বুঝে যাবে ব্যাপারটা সেটা মোটেও আশা করেনি পলক। তার ওপর কেমন সেবা করছে তার। লজ্জায় মরি মরি অবস্থা হলো পলকের। শরবতের গ্লাসটা হাতে নিয়ে বসে রইলো সে,,মুখে আর দিতে পারছে না। লজ্জা পাচ্ছে ভীষণ। পলকের এমন অবস্থা দেখে সিফাত বুঝলো লজ্জা পাচ্ছে সে। তাই তার পাশে বসে নিজেই মুখে তুলে দিলো শরবতের গ্লাসটা। বললো, খেয়ে নিন। পলকও চুপচাপ চুমুক দিল তাতে। শরবত খেতে খেতেই সিফাত তাকে বললো,
_কখন হয়েছে এটা? খুব বেশি খারাপ লাগছে কি?
পলক লজ্জায় শেষ। মুখ ফুঁটে কিছু বলবে তো দূর।
_কিছু জিজ্ঞেস করেছি আপনাকে।
_ সন্ধ্যা থেকে।বেশ কাঁচুমাচু করে বললো পলক।
_ আপনার হাজবেন্ড হই আমি মৃন্ময়ী। আমার কাছে কোন কিছু নিয়ে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই আপনার। যে কোন সমস্যা, যে কোন অসুবিধা সব নির্দ্বিধায় বলবেন আপনি আমাকে। আপনার বিষয়ে খুঁটিনাটি সব জানার অধিকার কিন্তু আছে আমার।
_জ্বী। শরবতটা শেষ করে বললো পলক। পলকের হাত থেকে খালি গ্লাসটা নিয়ে সাইড টেবিলের উপর রাখলো সিফাত। তারপর,পলকে সোজা করে শুইয়ে দিয়ে গরম পানির ব্যাগটা তার তলপেটের উপর দিয়ে দিল। গা’য়ে চাদর টেনে দিয়ে উঠে গেল বিছানা থেকে। ঘরের আলো নিভিয়ে বিছানায় এলো শোয়ার জন্য। আজ আর পলককে জোর করলো না রোজকার মত শোয়ার জন্য। বরং সে নিজেই এগিয়ে এসে পলকের কাছ ঘেঁষে শুলো। সেটা টের পেয়ে অবাক কন্ঠে পলক বললো,
_আপনি এখানে শোবেন?
_হ্যাঁ! নাকি আজ পুরো বিছানাটাই চাই আপনার?
_না..মানে, আমি তো সুস্থ নই,,এমন অবস্থায় আমার কাছেই শোবেন আপনি?
_আপনি অসুস্থও নন মৃন্ময়ী। আর এটা খুবই ন্যাচারাল একটা ব্যাপার। এটা নিয়ে এত কিসের সংকোচ হচ্ছে আপনার সত্যিই বুঝতে পারছিনা আমি!
_না..আসলে আমি বলছিলাম কি..
_কি?
_আপনার অস্বস্তি লাগবে না আমার কাছ ঘেঁষে শুতে?
_নাহ। বলেই সাইড টেবিলের ল্যাম্পটা সুইচ অফ করে দিল সিফাত। একপাশ হয়ে পলকের মুখোমুখি হয়ে শুয়ে আলতো করে হাত রাখলো পলকের পেটে। মাথায় বিলি কেটে দিতে দিতে বললো,
_আপনাকে একটা গল্প বলি মৃন্ময়ী! পলক কৌতুহলী হয়ে ঘাড় কাত করে সিফাতের মুখোমুখি হলো সিফাতের কথা শোনার জন্য।তার চোখে কৌতুল দেখে মুচকি হাসলো সিফাত।তারপর বলতে শুরু করলো,
_ আমার তখন ১১/১২ বছর বয়স। সেবার বছর রোজার সময় একরাতে খেয়াল করলাম সবাই সেহরি খেতে এলেও রুকু আপা এলো না। আমি আপাকে ডাকতে যেতে চাইলে মা বাঁধা দিয়ে বললো, আপা রোজা থাকবে না। আমি বুঝলাম না কিছু,,কিন্তু কিছু বললামও না। সকালে আপার রুমে গিয়ে দেখি মা আপাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছেন। আমাকে দেখে আপা বেশ লজ্জা পেলেও মা কিছু বললেন না আমায়। আমি আপাকে জিজ্ঞেস করলাম,আপা তোর কি শরীর খারাপ? বাবা কে বলি ডাক্তারকে খবর দিতে? মা বললেন, আপার একটু শরীরটা খারাপ সিফাত। কিন্তু, এর জন্য ডাক্তার লাগবে না। ৪/৫ দিন পরে এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। তারপর, খাওয়া শেষ হলে আমাকে বললো তার সাথে নীচে যেতে। নীচে যাওয়ার পর মাকে দেখলাম একটা ব্যাগে গরম পানি ভরতে। পানি ভরতে ভরতেই মা বললো,
_তোমার আপা অসুস্থ নয় বাবা। এত চিন্তা করো না।
_তাহলে আপা রোজা কেন রাখলো না, মা?
_কারণ আল্লাহ তাকে কিছুদিনের ছুটি দিয়েছেন। নামায রোজার মত সব ইবাদত থেকে। প্রতিটা মেয়েকেই একটা সময়ের পরে এমন ছুটি দেয় আল্লাহ প্রতি মাসেই। এই ছুটিতে তারা নিজেদের প্রস্তুত করে একটা বিশেষ আর পৃথিবীর সুন্দরতম একটা কাজের জন্য। তুমি তো এখন ছোট বুঝবে না সবটা। যখন আরেকটু বড় হবে তখন বুঝবে সব। কিন্তু,,সব সময় মনে রাখবা এইটা কোন অসুখ না। মেয়েদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে বরাদ্দ করা একটা প্রক্রিয়া। এটা ভালো দৃষ্টিতে দেখবে সবসময়। একটা মেয়েকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয় এই সময়টা। তাই এই সময়টা খুব যত্নের প্রয়োজন মেয়েদের। বুঝলে?
_হ্যাঁ, মা।
_যাও,,এটা তোমার আপাকে দিয়ে আসো। মুচকি হেসে বললেন মিসেস. রেহনুমা।
তারপর যখন আপার কাছে গেলাম,,আপাকে বললাম,
_তোর কি খুব কষ্ট হচ্ছে আপা? মা বলেছে এটা কোন অসুখ না।কিন্তু, খুব যত্ন লাগবে এখন তোর। তুই আমাকে বলিশ কখন কি লাগবে, আমি এনে দিবো তোকে। তুই বেশি বেশি রেস্ট নিবি, ওকে?

আমার কথা শুনে সেদিন হেসেছিল আপা। কিন্তু,তারপর থেকে প্রতিবারই মায়ের সাথে সাথে আমিও আপার যত্ন নিতাম এই সময়টায়। তারপর, যখন বড় হলাম। ক্লাস নাইনে উঠি বায়োলজি বইতে পড়ে জেনেছি এটা নিয়ে। নিজের মা বোনের প্রতি কনসার্ন থেকে পরিবর্তে আরও জেনেছি ইন্টারনেট ঘেঁটে। তাই, আমি বুঝি কতটা ইম্পর্ট্যান্ট আর সেনসেটিভ ইস্যু এটা। সারার বেলায় তো আমিই ওকে যাবতীয় সব এনে দিতাম প্রায় সময়।খেয়াল রাখতাম ওর। আর আপনি তো আমার স্ত্রী,মৃন্ময়ী! আমার অস্তিত্বে অংশীদার। ভবিষৎতে আমার সন্তানের মাও আপনিই হবেন ইন শাহ আল্লাহ।আর একটা সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য এটা কতটা ইম্পর্টেন্ট একটা প্রসেস এটা নিশ্চয় অজানা নয় আপনার! আপনারা মেয়েরা কত কত সেক্রিফাইস করেন এই সন্তান জন্মদানের জন্য। এত এত বছর পিরিয়ডের মত একটা ব্যাপারকে সহ্য করে নিজেদের শরীরকে প্রস্তুত করেন। একটা ভ্রুণকে নিজের গর্ভে ধারণ করার জন্য এত এত বছর এত শারীরিক কষ্ট সহ্য করেও স্বাভাবিক জীবন মেইন্টেইন করেন।তাই এই সময়টায় এইসব যত্ন আপনাদের প্রাপ্য মৃন্ময়ী। আর সব কিছুর উর্ধ্বে আপনার ভালো খারাপ সব অবস্থাতেই আপনি একই থাকবেন আমার কাছে। আমার স্ত্রী হিসেবে, আমার একান্ত ব্যক্তিগত নারী হয়ে। তাই আপনার যে কোন প্রয়োজন, সমস্যা,অসুবিধা নিঃসংকোচে বলবেন আপনি আমাকে। আমি আমার সাধ্য মত চেষ্টা করবো সেটার সাথে ডিল করার। বুঝেছেন আপনি?
পলক কিছু বললো না, কেবল শক্ত করে তাকে জড়িয়ে রাখা সিফাতের হাতটা ধরলো শক্ত করে। আর পলকের এই কাজটাই সিফাতকে খুব ভালো করেই বুঝিয়ে দিল তাকে তার মৃন্ময়ীর মনের কথাটা।

পলকের কপালে চুমু দিয়ে সিফাত বললো, রাতে কিছু প্রয়োজন হলে ডেকে দিবেন আমাকে। এখন ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ঘুম হলেই অনেকটা বেটার ফিল করবেন আপনি।

শরবতটা খাওয়ার পরে ব্যাথা কিছুটা কমেছে পলকের। গরম ছ্যাক দেওয়ায় অনেকটাই আরাম লাগছে তার। আর সিফাতও পাশে আছে, তাই নিশ্চিন্তে চোখ বুঝলো সে ঘুমানোর জন্য।

____________________________________

৩ মাস পর,

দেখতে দেখতে কেটে গেছে অনেকগুলো দিন।বেশ সুখেই যাচ্ছে সিফাত পলকের বিবাহিত জীবন। অন্তরার ডেলিভারি হয়েছে গত মাসে। ছেলে সন্তানের মা হয়েছে সে। ছেলেটা দেখতে নিলয়ের মতই হয়েছে। তাকে প্রথম দেখে খুব কেঁদেছিল অন্তরা। নিলয় না থাকলেও তার অংশকে পৃথিবীর বুকে সুস্থভাবে আনতে পারেছে সে। আর এর জন্য সিফাত আর পলকের কাছে কৃতজ্ঞ অন্তরা। এই পরিবারটা তাকে ফিরিয়ে না দিলে একা একা খুব বেশিই কঠিন হয়ে যেত তার পক্ষে এই সন্তানকে এভাবে পৃথিবীর আলো দেখানো। তাই অন্তরা বলেছিল বাচ্চাটা যেন প্রথমে পলক নয় তো সিফাতের কোলেই দেওয়া হয়। বাচ্চাটাকে কোলে নেওয়ার পর সিফাতের মুখটা দেখেছিল পলক। কি আদুরে উচ্ছ্বাসিত একটা মুখ হয়েছিল সিফাতের। বাচ্চার প্রতি কতটা দূর্বল.. কতটা স্নেহশীল একজন মানুষ সিফাত..খুব করে বুঝেছিল পলক। বাচ্চাটার ডাকনাম সিফাতই রেখেছে। নিলয়ের সাথে মিলিয়ে নাম দিয়েছে নিয়ন। নিয়নকে আদর করতে করতে একসময় পলককেও সে বলে বসেছিল, মৃন্ময়ী.. আমি না ঠিক ডিসাইড করতে পারিনা যে ছেলে বেবি বেশি সুন্দর নাকি মেয়ে বেবি। তাই আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে আমাদের বেবি হলে ছেলে মেয়ে দুটোই যেন হয়। পলক চোখ বড় বড় করে বলেছিল, টুইন?! সিফাতও দাঁত ক্যালিয়ে হেসে বলেছিল তার টুইন বেবিই চাই। কিন্তু,বাচ্চার কথা শুনে পলকের মনে হয়েছিল সিফাত খুব করে চায় তারও একটা বেবি আসুক এবার। কিন্তু,বিয়ের সবে ২ মাস।আর সিফাত আর পলকের সম্পর্কও এখনো আগায়নি। তাই তখন এই ভাবনাটাও মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছিল পলক। কিন্তু,বিপত্তি বাঁধলো যখন সিফাতের দাদী এলেন তাদের বাড়িতে।
___________________________________

রুকুর দ্বিতীয় সন্তান আসতে চলেছে পৃথিবীতে। ২’৫ মাসের প্রেগন্যান্ট সে। সবাই খুব খুশি। রুকুর কথা শুনে তার সাথে দেখা করতে আলম ম্যানশনে এসেছেন সিফাতের দাদী। মূলত গ্রামের বাড়িতেই থাকেন তিনি। মাঝে মধ্যে এসে থেকে যান ছেলের কাছে।সিফাতের বিয়ের সময় উমরা হজ্বে গিয়েছিলেন। একবার বিয়ে পিছিয়েছে, তার জন্য আবার বিয়ে পিছাবে এমনটা তিনি চাননি।তাই তাকে ছাড়াই ফিক্সড ডেটেই পলক আর সিফাতের বিয়েটা হয়েছে। হজ্ব থেকে ফেরার পর তিনি এখানেই এসেছিলেন। পলক আর সিফাতদের সাথে দেখা করে গেছেন। কিন্তু,পলকের গা’য়ের রঙ নিয়ে বেশ আপত্তি করেছেন তিনি। যদিও সিফাত বুঝিয়েছিল, তারপরেও তিনি খুব একটা পছন্দ করেননি পলককে। ইশতিয়াক আলম খুব একটা কথা বলেন না পলকের সাথে। খারাপ ব্যাবহার না করলেও একটা দূরত্ব রেখেই চলেন। সারাও তাই করে। ভালোভাবে কথা পর্যন্ত বলে না পলকের সাথে। কিন্তু,রেহনুমা, রুকু খুব আদর করে পলককে। আর সিফাত তো আছেই সব সময়। আদরে ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখে তাকে।

সিফাতের দাদীর নাম সুরাইয়া আলম। ৬৭ বছর বয়সী এই মহিলা এখনো বেশ শক্তপোক্ত। কথাও বার্তাও বেশ স্পষ্ট। রুকু আলম ম্যানশন এসেছিল বিকালে। তাকে নিয়ে হল রুমে বসে কথা বলছিলেন তিনি। পলক চা নাস্তা নিয়ে এসেছে সবার জন্য। রুকুর পছন্দের পাস্তাও নিজ হাতে রান্না করেছে। ইয়ানার পছন্দের চিকেন রোলও নিজ হাতেই বানিয়েছে পলক। হলরুমের একটা সোফায় বসিয়ে নিজ হাতেই তাকে খাইয়ে দিচ্ছিল পলক। তখনই বাচ্চা নিয়ে কথা বলতে বলতে সুরাইয়া আলম বললেন,
_তোর তো তাও এইটা দ্বিতীয় বাচ্চা রে রুকু। আমার সিফাতের যে কবে একটা বাচ্চা হবে। কবে যে আল্লাহ আমারে বড় দাদী হওয়ার ভাগ্য দিবো কে জানে।
_আল্লাহ যখন দিবে ইন শাহ আল্লাহ সব হবে দাদী। -রুকু বললো।
_আর কবে হইবো! সিফাতের তো আর বয়স কম হইলো না। আর চাকরি বাকরি করা বউ আনছে সিফাত। সেই কি এত সহজে বাচ্চা লইবো! তোর বাপের এই বয়সেই দুই বাচ্চার বাপ হইয়া গেছিল। আর সিফাতের একটাও হইলো না।
_আমার আর সিফাতের মধ্যে তো খুব একটা বয়সের ফারাক নাই দাদী। পিঠাপিঠিই আমরা প্রায়। তাই বাবা ওই অল্প বয়সেই দুইজনের বাবা হয়ে গিয়েছিল।
_তুই চুপ থাক রুকু। আমার ছেলে আমি জানি না কিছু?
সিফাত তো বউ কইতেই পাগল।নিজেই পছন্দ কইরা বিয়া করলো। সে না কইলো কিন্তু বউয়ের তো উচিৎ এইবার একখান বাচ্চা নেওন। শেষের কথাগুলো একপ্রকার পলককে শুনিয়ে শুনিয়েই বললেন তিনি। পলক সেসব শুনেও কিছু বললো না।চুপচাপ ইয়ানাকে খাইয়ে দিতে থাকলো।
_আহ! দাদী…সবে মাত্র বিয়ে হলো ওদের। এখন পর্যন্ত হানিমুনেও যেতে পারেনি ওরা। বছর দুই এক বছর অন্তত যাক। পরে না হয়..
_আরে থাম তুই। সিফাতের বয়স কি পইড়া থাকবো নাকি। কবে বাচ্চা কাচ্চা হইবো আর কবে মানুষ করবো। একমাত্র নাতি আমার। তার ঘরে বংশের বাতি না দেইখা গেলে মইরাও তো শান্তি পামু না আমি।
_আল্লাহ যেটা দেয় সেটাই তো অনেক আম্মা। ছেলে মেয়ে দুই-ই সমান। -রেহনুমা বললেন।
_তুমি তো কইবাই। তোমার তো ছেলে মেয়ে সবই আছে। যদি সিফাত না থাকতো তাইলে ঠিকই আফসোস করতা। তারপর তিনি সরাসরি পলককে উদ্দেশ্য করে বললেন,
_শোনো,নয়া বউ…..বাচ্চা কাচ্চা হইলো স্বামীর আদর সোহাগের ফল। যার ঘরে যত বাচ্চা আল্লাহ কইছেন তার ঘরে আল্লাহর রহমত বেশি। তয়, আজ কাইল তো কেউ দুই একটার বেশি নিবারই চায় না। আর সিফাত তো বাচ্চা কাচ্চার লাইগা অস্থির এক্কেরে।আমগোর ইনুরে কত্ত আদর করে দেখছো? ওরও তো ইচ্ছা করে নিজের একখান বাচ্চাও ওরও হইক।কিন্তু তোমার লাইগা মনোয় ওই মুখ ফুইটা কইতেও পারেনা যে ওর একখান বাচ্চা লাগবো। তয়, তুমি তো বউ, বুঝো না? নাকি তুমিই বাচ্চা নিবার চাও না? আজকাইল তো কত পদ্ধতিই বাইরোইছে মাইয়া মানুষের বাচ্চা না হওনের লাইগ্গা। যত তাড়াতাড়ি পারো আমারে সুখবর শোনাও। বুঝলা?
_জ্বী দাদী। খুব শান্তস্বরে বললো পলক।

____________________________________

কয়েকদিন পর,

রাত ১১ ‘০০ মিনিট।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছিল সিফাত। হাতমুখ ধুতে গিয়ে ভিজে গেছে খানিকটা। আয়নায় খেয়াল করলো আজও বিছানার সাইড দিয়ে পায়চারী করছে পলক। সিফাত বুঝলো কোন একটা কিছু চলছে পলকের মথায়। চুল মুছতে মুছতেই জিজ্ঞেস করলো,
_কি সমস্যা মৃন্ময়ী?
পলকের গতি থেমে গেল সিফাতের এহেন প্রশ্নে। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে চোরাচোরা গলায় বললো, কিছুনা।
_কিছু তো অবশ্যই। না হলে এভাবে ইঁদুরের মতো পায়চারি করতেন না আপনি।
_আচ্ছা, আপনার কি আমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে না? লজ্জা সংকোচ সব ছাপিয়ে খুব দ্রুত বেগে বললো কথাটা পলক। তার কথা শুনে বেশ অবাক হলো সিফাত। বললো,
_কাছে পেতে ইচ্ছে করবে না কেন? আর আপনি তো কাছেই থাকেন আমার।
_না..ওভাবে না।আসলে.. পুরো কথাটা বলতে পারছে না পলক। ভয়, লজ্জা, সংকোচ সব এসে খুব জোর ঘিরে ধরেছে তাকে। বেশ ইতস্তত করছে সে।
_তো কিভাবে? অবাক স্বরে প্রশ্ন করলো সিফাত।
_স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে যেমন হয় সেভাবে। বেশ ইতস্তত করে বললো পলক। আসলে সিফাত পলকের সম্পর্কটা খুব ভালো হলেও পূর্ণতা পায়নি এখনো। সিফাত নিজে থেকেই চায়নি এসব। পলককে সময় দিতে চায় সে। কিন্তু, সিফাতের দাদী ইদানীং খুব মানসিক চাপ দিচ্ছে পলককে বাচ্চা নেওয়ার জন্য।রোজ দিন কথা শোনায় তাকে। তাই না পারতে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সব লজ্জা ভয় ভেঙে সিফাতের কাছাকাছি যাওয়ার। নিজেকে সমর্পণ করার।কিন্তু,লজ্জা সংকোচে সরাসরি বলতে পারছে না তাকে কিছু।

পলকের কথায় সিফাত বুঝলো পলক কি বলতে চাইছে। আচমকা এমন একটা ব্যাপারে পলকের নিজে থেকেই কথা বলায় বেশ খটকা লাগলো তার। তোয়ালেটা চেয়ারের উপর রেখে চিরুনিটা হাতে নিতে নিতে বললো,
_এখনো এসবের সময় হয়নি মৃন্ময়ী!
_সময় হয়নি মানে? স্ত্রী আমি আপনার। আমাকে কাছে টানার জন্য সময় অসময়ের কি আছে। আপনি যখন ইচ্ছা চাইতে পারেন। অধিকার এটা আপনার।আর যাই হোক, আপনার তো একটা চাহিদা আছে। হাজার হোক পুরুষ মানুষ আপনি!

পলকের কথা শুনে বিস্ময়ে হতবিহ্বল সিফাত। শান্ত শিষ্ট, ধীর স্বভাবের তার মৃন্ময়ী যে এভাবেও কথা বলতে পারে সেটা তার ভাবনাতীত ছিল। আর শেষের কথা দুটোয় বেশ মেজাজ খারাপ হলো সিফাতের। তাও নিজেকে সংযত করে শান্ত স্বরেই বললো,
_হ্যাঁ,,পুরুষ আমি। বিবাহিত পুরুষ।আপনাকে ভালোবাসার পরে প্রেমিক পুরুষও বটে। তাই স্ত্রী বা প্রেমিকার প্রতি এসবের চাহিদা থাকাটাও স্বাভাবিক আমার এবং সেটা আছেও । এটা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্তই। কিন্তু,স্বামী বা প্রেমিক পুরুষ হলেও আমি কামুক পুরুষ নই। নইলে জীবনের ৩৩ বছর এভাবে একা কাটানোর পরেও বিয়ে করে স্ত্রী হিসেবে আপনাকে ঘরে আনার কোন প্রয়োজন আমার ছিল না।আর তাছাড়া,বিয়ে ছাড়াও সাফওয়ান সিফাতের মত পুরুষের জন্য নারী সঙ্গের অভাব হবে না নিশ্চয় ?

পলকের চোখ টলমল করছে। শেষের কথাগুলোই সিফাত ঠিক কি মিন করেছে সেটা পলক বেশ বুঝতে পেরেছে।একজন স্ত্রী হয়ে স্বামীর কাছে এমন কথা শোনাও ভীষণ কষ্টকর।পলকের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হলো না। তারপরেও, নিজেকে শক্ত রেখে বললো,
_স্ত্রীই যখন বলছেন আর চাহিদাও আছে বলছেন তাহলে কেন বুঝে নিচ্ছেন না নিজের অধিকার?

পলকের কন্ঠ ভার হয়ে আসছে। তার শুনে সিফাতও বুঝলো যে কষ্ট পেয়েছে পলক তার কথায়। কিন্তু,এখন সে নরম হবে না পলকের প্রতি। শক্তভাবে তাকে সামলাতে হবে সবটা। তাই, কিছুটা কঠিন গলায়ই বললো,
_আপনি এখনো প্রস্তুত নন মৃন্ময়ী!
_ক্যা..কেএএএ..বলেছে আমি প্রস্তুত নই? আমি প্রস্তুত। আপনি করুন আপনার যা করার। -ভার ভার গলায় বললো পলক।

পলকের এহেন গোঁ ধরা কথায় এবার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হলো সিফাতের। সে বুঝতে পারছে না কেন আজ এমন করে কথা বলছে পলক। এটা তো তার স্বভাব নয়। কিন্তু,,পলককে যে কথায় বোঝানো যাবে না সেটাও বেশ বুঝতে পারলো সিফাত। তাই তাকে বোঝানোর অন্য ফন্দি আটলো সে। বললো,
_আচ্ছাহ?!
_হ্যাঁ! খুব কষ্টে বললো পলক। কান্নার দমকে গলা ভার হয়ে এসেছে তার। কিন্তু,সে কিছুতেই কাঁদতে চাইছেনা এই মূহুর্তে। সিফাতের সামনে আর প্রকাশ করতে চাইছে না নিজের কষ্টটা। সে যদি বুঝতে পারে পলকের এহেন কথার পেছনে কি কারণ,,তাহলে খুব রাগ করবে সে। পলককে কিছু বলুক আর না বলুক দাদীকে ঠিক শুনিয়ে দিবে কিছু না কিছু। সিনক্রিয়েট হবে অহেতুক। তাই সে শক্তপোক্ত থাকার জোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।

_ok, fine. Then let’s try it.. বলেই সে এগিয়ে গেল পলকের দিকে।
পলক ভয় পাচ্ছে। কিন্তু, নিজেকে স্বাভাবিক রাখার যথা সম্ভব চেষ্টা করছে সে।একটাসময় সিফাত তার খুব কাছে এসে দাঁড়ালো।মুগ্ধ নয়নে দেখলো পলকের ভয়ার্তক মুখটা। মুচকি হাসলো সে। তারপর, এক হাতে পলকের গালে স্লাইড করতেই ঈষৎ কেঁপে উঠলো সে। তা দেখে আবারও জিজ্ঞেস করলো সিফাত,
_Are you sure, Mrinmoyi? should I go ahead?
_হ্য..এ..এ..হ্যাঁ। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো পলক।
তার এহেন একগুঁয়েমি দেখে মেজাজ খারাপ হলেও বেশ হাসিও পেল সিফাতের।পলক ভাংবে তবুও মচকাবে না।পলককের এই স্বভাবটাও বেশ মুগ্ধ করে সিফাতকে।

নিরবে আবারও হাসলো সে।তারপর,দু হাতে পলকের মুখখানি আঁজলায় তুলে নিল আলতো করে। পলকও তাকিয়ে আছে তার মুখপানেই। টলমল করছে তার শান্ত নিবিড় চোখজোড়া । সেই সাথে চোখ মুখে ছেয়ে আছে ভয়,লজ্জা,সংকোচ। তবুও কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে,নিজেকে সিফাতের কাছে সমার্পণ করবে বলে। সিফাত এর সবটাই দেখলো, বুঝলোও। তারপরেও, আরও খানিকটা এগিয়ে গেল পলকের দিকে।সিফাতের উষ্ণ নিশ্বাস আছড়ে পড়ছে পলকের চোখে মুখে।সিফাত পলকের খুব কাছে গিয়ে পলকের ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াতেই চোখ বন্ধ করে ফেললো পলক। দু’ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়লো তার পদ্মপাতার জলের মতো টলটলে গাল বেয়ে।সেই উষ্ণতা ছুঁয়ে দিল সিফাতকেও।খুব যত্ন করে তবে ছোট করেই চুমুটা দিল সে পলকের ঠোঁটে। সিফাতের এমন আলতো স্পর্শে আরও কাঠ হয়ে গেল পলক। ভেতর ভেতর কাঁপছে সে। ঠোঁট ছেড়ে পলকের মুখপানে চাইতেই মিটমিটেয়ে হাসতে লাগলো সিফাত,পলকের ওই বন্ধ চোখের ভয়ার্তক মুখটা দেখে। ভীষণ রকম আদুরে গলায় বললো,
_বলেছিলাম তো আগেই! প্রস্তুত নন আপনি। আর আপনি তো ভালোও বাসেন না আমাকে। তাই আমার স্পর্শগুলোতে ভালোবাসা থাকলেও সেটা গ্রহণ করতে পারছেন না আপনি। কিন্তু, তাপরেও যদি আমি এগিয়ে নিয়ে যাই এই মূহুর্ত, এই সম্পর্কটাকে, আমার স্পর্শে ভালোবাসা থাকলেও.. আপনার স্পর্শে বিন্দুমাত্র ভালোবাসা খুঁজে পাবো না আমি।যেটা মোটেও তৃপ্তিদায়ক হবে না।না আমার জন্য আর না আপনার জন্য। তো অযথা কি দরকার…সংকোচ, ভয়, জড়তা নিয়ে ভালোবাসাহীন এমন একটা সম্পর্কে জড়ানোর! শুধু শরীরের টানে এক হয়ে কি লাভ মৃন্ময়ী যদি মনেই অতৃপ্তি থেকে যায়?

পলক চুপ।সিফাতের প্রশ্নের পিঠে দেবার মত কোন উত্তর নেই তার কাছে। নিজের এহেন নির্বোধ আচরণের কারণে ভীষণভাবে লজ্জিতও সে সিফাতের কাছে। বড্ড ছোট লাগছে তার নিজের কাছে নিজেকেই। সিফাত যে কতটা বোঝদার, সহানুভূতিশীল,পরিপক্ক স্বভাবের মানুষ সেটা এতদিনে বেশ বুঝে গেছে পলক। তারপরেও,তার সাথে এই ব্যাপারে খোলামেলা আলাপ আলোচনা না করে এমন নির্বোধের মত আচরণ করাটা ঠিক হয়নি তার,সেটা এখন খুব করে বুঝতে পারছে সে। তাই ভীষণ রকম লজ্জা লাগছে তার সিফাতের মুখোমুখি দাঁড়াতেও। কিছু বলা তো অনেক দূরের কথা।

পলককে এভাবে চুপ থাকতে দেখে সিফাত বুঝলো, ডোজ কাজে দিয়েছে। তাই, পরিস্থিতি সামলে নিতেই সে বললো,

_বেশ রাত হয়েছে মৃন্ময়ী। এবার আসুন..ঘুমাবেন। বলেই পলককে ছেড়ে বিছানার দিকে পা বাড়ালো সে। বিছানা বালিশ সব ঠিকঠাক করে পলককে তাড়া দিল শুতে আসার জন্য।

এতক্ষণ একা একা দাঁড়িয়ে নিরবেই অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছিল পলক। এবারেও সে পরাস্ত হলো সিফাতের কাছে। সে তো নিজের সব ভয়, লজ্জা, সংকোচের সাথে একরকম যুদ্ধ করেই সিফাতের কাছাকাছি যেতে চেয়েছিল। সিফাতকে তার অধিকার বুঝিয়ে দিয়ে দাদীর কথা রাখতে চেয়েছিল।তাই তো এমন নির্লজ্জের মত সিফাতকে এসব বলেছে সে।কিন্তু,,সিফাত তো ঠিকই বুঝে গেছে সব। ফিরে গেছে নিজ থেকেই।
_কি হলো আসুন?
সিফাতের তাড়া পেয়ে চোখ মুখে বিছানায় গেল। জায়গা মত শুতেই রোজকার নিয়মে খানিক ভঙ্গ দিয়ে একটা অন্যরকম কাজ করলো সিফাত আজ। পলককে জড়িয়ে না ধরেই তার মাথায় বিলি কাটতে কাটতে বললো,

_আমার অধিকার আমৃত্যু আমারই থাকবে মৃন্ময়ী। তাই সময়,সুযোগ মত সেই অধিকারের ব্যাবহার আর প্রয়োগও আমিই করবো। আপনাকে সেটা বলার বা বুঝিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।আমাদের মাঝে মানসিক সম্পর্কটা ভালোভাবে তৈরী হোক আগে, তারপর নিজেদের সম্পর্কটাকে পূর্ণতা দিবো আমরা। আর আজ আপনি ঠিক কি কারণে এমন করলেন জানি না তবে এটুকু আমি ঠিক বুঝেছি এসব আপনার চাওয়া ছিল না। আর আপনাকে পুরোপুরিভাবে নিজের করে পাওয়ার জন্য আমার কেবল আপনার সম্মতি আপনার চাওয়াটাই চাই। সেটা যত সময়ই লাগুক।এটাই আমার ইচ্ছে। আর অন্যকারও ইচ্ছেতে কিছু করার মানুষ যে আমি নই এটা নিশ্চয় ভালো করেই জানেন আপনি?
_হু।
_তাহলে এমন স্টুপিডিটি করবেন আর কখনো?
_না।
_এই তো গুডগার্ল। বলেই পলকের কপালে গভীরভাবে এঁকে দিল তার প্রেমময় স্পর্শ। তারপর, পলকের কামিজের কাটা অংশের ফাঁক গেলিয়ে সরাসরি ওর পেটে হাত রাখলো আজ। এই প্রথম নিজের শরীরে এভাবে সিফাতের স্পর্শ পেতেই ঝংকার দিয়ে উঠলো পলকের শরীর। সিফাতের দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে ছিল সে। সিফাতের মুখোমুখি হতেও যে লজ্জা লাগছে তার আজ। কিন্তু, সিফাতের এমন স্পর্শে চকিতেই ঘাঁড় ঘুরিয়ে চোখ বড় বড় করে সিফাতের দিকে চাইলো সে। তা দেখে সিফাত মিটমিটে হেসে বললো,

_সময় দিচ্ছি ঠিক আছে, তবে ব্যাপারটা আপনার জন্য সহজ করে দিতেও কিন্তু কোন কমতি রাখবো না আমি। বলেই দুষ্টু হেসে চোখ মারলো সিফাত। তারপর, হাত বাড়িয়ে সুইচ অফ করে দিল টেবিল ল্যাম্পটাও। চোখ বুঝলো ঘুমানোর জন্য।

পলক পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল সিফাতের এহেন কথা আর কাজে। মনে মনে বললো, কি মানুষ রে বাবা! এই রাগ,এই সোহাগ তো মূহুর্তেই দুষ্টুমূর্তির রূপ তার। ক্ষণে ক্ষণে মুড সুয়িং করে এর। পেঙ্গুইন একটা। বলেই মনে মনেই একটা ভেংচি কাটলো সিফাতকে সে।

_এভাবে আমাকে নিয়ে না ভেবে ঘুমোন মৃন্ময়ী। স্কুল আছে তো সকালে। ঘুম ঠিকঠাক না হলে খারাপ লাগবে। বলেই এ পলককে ওভাবে চেপে ধরেই একটানে আরও খানিকটা কাছে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল একপ্রকার। তারপর, চোখ খুলে পলকের দিকে ঝুঁকে ছোট্ট করে আবারও একটা চুমু খেলো পলকের ঠোঁটে । বললো, এখন ট্রায়াল সেমিস্টেরে শুধু চুমু খেয়েই কাজ চালাচ্ছি, তবে সময় হলে পুরোটাই খেয়ে নিবো আপনাকে। বলেই দুষ্টু হেসে পলকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো সে।

পলক থতমত খেয়ে গেছে সিফাতের কথার এহেন ছিড়ি দেখে। এই সিফাতকে সে চেনে না। সিফাতের মত ভদ্রসভ্য মানুষও যে এই ধাঁচের রোমান্টিক পার্সোন হতে পারে সেটা পলকের ধারণা বাইরে ছিল পুরোপুরি।

একটা ফাঁকা ঢোক গিললো পলক। তারপর,মনে মনে বললো, ট্রায়ালের এর কি ছিড়ি রে বাবা! এরপর, জানলাভেদ করে আসা বাইরের অবাছা আলোতেই সিফাতের ঘুমন্ত মুখটা দেখলো একবার। মুচকি হেসে বললো, captain of my life. তার দিকে তাকিয়ে চোখ বুঝলো সেও।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here