#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ৩০
#রিধিরা_নূর
আফরান হাত সরাতেই নূর আবারও নিঃশব্দে ঠোঁট নাড়ছে। আফরান তার দিকে তাকানো মাত্রই অপ্রস্তুত হয়ে আশেপাশে তাকাতে লাগলো। আফরান ভাবান্তর না করে বেঞ্চ টেনে বসল। নূর বসতে নিলে আফরান থামিয়ে দেয়।
আফরান — আমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে এসো।
নূর — আমি আপনার চাকর না। (মুখ ফিরিয়ে নিল)
আফরান — ওহ্ আচ্ছা। এসাইনমেন্ট বোধহয় লাগবে না তোমার।
নূর — আইসক্রিম? আপনি শুধু বলুন। আইসক্রিম কেন পুরো হিমালয় এনে দিব। (দাঁত চেপে)
আফরান — ওহ তাই? তাহলে এক কাজ কর। আইসক্রিম বাদ দাও। হিমালয় নিয়ে এসো আমার জন্য।
নূর হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। সে তো এমনিই কথার কথা বলেছিল। এই উগান্ডার প্রেসিডেন্ট দেখি সিরিয়াসলি নিয়েছে। নূর কিছু বলার পূর্বেই আফরান একটি ফাইল বের করল। মনোযোগ সহকারে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে৷ আড়চোখে নূরের চেহারা দেখে ভীষণ হাসি পাচ্ছে। কিন্তু এই মূহুর্তে হাসা যাবে না। গম্ভীর মনোভাব নিয়ে ফাইলের দিকে তাকিয়ে বলল,
আফরান — দশ মিনিট সময় দিলাম। এর মধ্যে যদি হিমালয় আনতে না পার তাহলে শাস্তি উপভোগ করার জন্য তৈরি হয়ে যাও।
নূর দৌড়ে বেরিয়ে গেল। সে যাওয়া মাত্রই আফরান উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো। নূর পড়ল দুশ্চিন্তায়। মুখ ফসকে ঠাস করে বলে ফেলল হিমালয় এনে দিবে। হিমালয় কি বরফের টুকরো নাকি। যে বললেই এনে দিবে। একটা খুরাফাতি আইডিয়া তো বের করতে হবে।
.
আলিফা,সিমা মিলে আমরিন,পুষ্পকে খেপাতে লাগলো।
সিমা — জানিস আমাদের অগোচরে কিছু মানুষের চেনাচিনি হচ্ছে। (পুষ্পকে উদ্দেশ্য করে)
আলিফা — আর কিছু মানুষ মাই লাভ, মাই জান, মাই হার্ট, ফুসফুস এসব হচ্ছে। শুধু আমি এক অসহায় হাড্ডি। যারে কেউ পাত্তা দেয় না।
মাঝখানে পড়ে মেহের দুইদিকের মজা নিচ্ছে। পুষ্প, আমরিন মাথা নিচু করে আছে। লজ্জায় মাথা তুলছে না। আমরিনের মনে কিছু অনুভূতি হলেও আছে। আর লজ্জাবতী অল্পতেই লজ্জায় লাল হয়ে যায়। কিন্তু পুষ্প? হঠাৎ তার এতো লজ্জা লাগছে কেন? ভেবে যেন লজ্জার পরিমাণ আরও বাড়ছে।
সিমা — তা ম্যাডাম। চেনাচিনি কতটুকু পৌঁছল?
পুষ্প চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই সিমা মুখ চেপে হাসছে। ক্লাসে বসে হাসলে এখন নির্ঘাত স্যারের কথা শুনতে হবে।
স্যার — আমরিন?
আমরিন — ইয়েস মাই লাভ। (বলে মুখ চেপে ধরল।)
মৃদু স্বরে বলায় কেউ খেয়াল করে নি। কিন্তু তার পাশে বসা সিমা শুনে ফেলল। শোনা মাত্রই অট্টহাসি হাসতে লাগলো। আমরিন লজ্জায় পারছে না মাটি ফাঁক করে ঢুকে যেতে।
স্যার — সিমা? কি সমস্যা? হাসছ কেন? (কড়া স্বরে)
সিমা — সরি। সরি স্যার। (হাসি থামছেই না। পাশ থেকে আমরিন চিমটি দিল। ব্যাথা পেয়েও হাসি থামার নাম গন্ধ নেই।)
স্যার — তোমার জন্য পুরো ক্লাসের ডিস্টার্ব হচ্ছে। হয় হাসি বন্ধ কর নাহয় ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাও। (সিমা হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল।) আমরিন তোমার বইটি লাইব্রেরিঅ্যানকে দিয়েছি। তার কাছ থেকে নিয়ে নিও।
আমরিন মাথা দুলালো। আলিফা খোঁচা মেরে সিমাকে জিজ্ঞেস করল হাসছে কেন? সিমা কারণ বলার পর আলিফা,পুষ্প, মেহেরও হাসছে।
.
আফরান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় গুনছে। দশ মিনিট সময় দিয়েছিল। যা শেষ হতে চলেছে। বাঁকা হাসি দিয়ে উল্টো গণনা করছে।
আফরান — 10,9,8….3,2
1 বলার পূর্বেই হঠাৎ ঝড়ের মতো আফরানের কোলে বসে পড়ল এক ছাত্র। আফরান এবং ছেলেটি অবাক হয়ে একে অপরের দিকে চোখাচোখি করছে। আফরান ছেলেটিকে ঠেলে উঠে দাঁড়াল।
আফরান — হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিজ। এসব কোন ধরনের আচরণ।
ছেলেটি — আমি কিছু জানি না। এই মেয়েটি আমাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে এসেছে।
আফরান পাশে তাকিয়ে দেখে নূর হাঁপাচ্ছে।
আফরান — নূর। এসব কি?
নূর — হিম..হিমালয় হাসান। আপনি হিমালয় আনতে বলেছিলেন না। এই হলো হিমালয়। গলা ফাটিয়ে চিল্লিয়ে এই হিমালয়কে খুঁজে পেয়েছি। এবার একে কোলে নিয়ে বসে থাকেন। গেলাম আমি। ওকে বাই।
আফরান নূরের হাত চেপে ধরল। ছেলেটিকে ইশারায় যেতে বলল। যাওয়ার সময় ছেলেটি নূরের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাল। আফরানের কাছে গিয়ে কানে কানে বলল,
ছেলেটি — ভাই। আমার মনে হয় আপনার গার্লফ্রেন্ডের মাথার স্ক্রু ঢিলা। সময় থাকতে ব্রেকআপ করে নিন।
আফরান সরু দৃষ্টিতে তাকাতেই ছেলেটি দ্রুত পায়ে হেটে চলে গেল। এবার তার দৃষ্টি নূরের দিকে। বলার মতো কোন ভাষায় খুঁজে পাচ্ছে না। নূরকে যদি গোল আঁকতে বলে তাহলে সে পেঁচিয়ে জিলাপি বানিয়ে দিবে। তাই এই বিষয় নিয়ে কথা বলে লাভ নেই।
আফরান — কোথায় চললে? তোমার ডিউটি এখনো শেষ হয়নি। আমার জন্য টমেটো ফ্লেভারের অরেঞ্জ জুস নিয়ে এসো।
নূর — এ্যাহহ! (ভ্যাবাচেকা খেয়ে) টমেটো ফ্লেভারের অরেঞ্জ জুস? এটা কোন দেশের খাবার? নিশ্চয় উগান্ডার জাতীয় খাবার। আর আপনি হলেন উগান্ডার প্রেসিডেন্ট। তাই এমন আজব জুস চাইছেন।
আফরান — (আমার কাজ তোমাকে বিরক্ত করা। এবার বুঝবে কত ধানে কত চাল।) জি উগান্ডার রাণী সাহেবা। এবার গিয়ে দ্রুত আমার জুস নিয়ে আসেন। জলদি।
.
ছেলেরা ক্যান্টিনে বসে আছে। ইয়াশ ক্যামেরা হাতে মেহেরের ছবিগুলো দেখছে। ডিলিট করবে কি করবে না বিভ্রান্তিতে আছে। মেহের তো না বলেই দিয়েছে। তাহলে এই ছবি রেখে কি লাভ। ছবিগুলো ডিলিট করতে গিয়েও থেমে গেল। নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে দেখছে। এমন মনোরম এক দৃশ্য মুছতে ইচ্ছে করছে না। মোছার দরকার-ই বা কি। থাক না স্মৃতি বাক্সে জমা হয়ে। মুচকি হেসে ক্যামেরা রেখে দিল।
ইয়াশ — তা…. (সবাই তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।) কি?
রিহান — প্রথমে মেহেরের সাথে কথা বলেছিস। একান্তে। তারপর থেকে মুখটা পঁচা কুমড়োর করে বসে আছিস। আর এখন বিনা কারণে মিটিমিটি হাসছিস। ব্যাপার কি? প্রেমে ট্রেমে পড়লি নাকি?
ইয়াশ — নো। আমি ওই মেহেরের প্রেমে পড়ব। কখনো না।
রিহান — আমি তো মেহেরের নাম নেয়নি। (স্ট্রো দিয়ে জুস টান দিল)
ইয়াশ — তোর ইশারা কোন দিকে খুব ভালো করে বুঝি।
নূর ধুমধাম করে ক্যান্টিনে প্রবেশ করল। সবাই হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেদিকে নূরের কোন ধ্যান নেই। রাগ তার উপর গ্রাস করে আছে।
নূর — ভাইয়া। টমেটো ফ্লেভারের অরেঞ্জ জুস দেন।
লোকটা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। অন্যদিকে নূরকে আসতে দেখে ছেলেরা তার দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ এমন জুস চাওয়ায় তারা হতভম্ব হয়ে আছে।
ওয়াসিম — রিহান। তোর বোন এলিয়েন নয়তো?
রিহান — শাট আপ।
ওয়াসিম — না মানে এমন আজব জুস অর্ডার দিল। মনে হয় মঙ্গলগ্রহে এমন জুস পাওয়া যায়।
নূর — অবাক হওয়ার কিছু নেই ভাইয়া। উগান্ডার জাতীয় খাবার। উগান্ডার প্রেসিডেন্ট দ্যা গ্রেট আফরান অর্ডার দিয়েছে। একটু তাড়াতাড়ি দেন।
রিহান আড়চোখে ওয়াসিমের দিকে তাকাল। ওয়াসিম ভয়ে ঢোক গিলে মুখ ফিরিয়ে নিল।
লোকটা — দুঃখিত আপু। আমাদের এখানে তেমন কোন জুস নেই। আপনি উগান্ডায় অর্ডার করুন।
নূর — ইচ্ছে করছে ওই খাচ্চোরকে-ই উগান্ডা পাঠিয়ে দেয়। এক কাজ করুন অরেঞ্জ জুসের মধ্যে টমেটো সস মিশিয়ে দেন। যদি পারেন ইঁদুরের বিষও দিয়েন। (রেগে)
লোকটা — দুঃখিত আপু আমি কারো হত্যা করতে চায় না।
নূর — ধুরর ভাই মজা নিয়েন না। তাড়াতাড়ি দেন।
নূর জুস নিয়ে চলে গেল। ছেলেরা ঝাটকার উপর শকড হয়ে বসে আছে। একটু পর নূর আবারও এলো।
নূর — ভাইয়া। কাঁচা মরিচ ফ্লেভারের হট চকলেট দেন। (দাঁত কিড়মিড় করে)
লোকটা আরেক দফা টাস্কি খেল। হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
লোকটা — কাঁচা মরিচ ফ্লেভারের হট চকলেট? কাঁচা মরিচ ঝাল হয় আর চকলেট মিষ্টি হয়। দুইটার কম্বিনেশন কীভাবে?
নূর — ওই যে উগান্ডার প্রেসিডেন্ট। তাড়াতাড়ি দেন।
লোকটা — আমাদের মেনুতে এমন কোন খাবার নেই।
নূর — হট চকলেটের মধ্যে ২০-৩০ টা কাঁচা মরিচ দিয়ে দেন।
লোকটা অবাক চোখে তাকিয়ে তাই করল। নূর হট চকলেট নিয়ে চলে গেল।
আহিল — ভাই কি হচ্ছে এসব?
আরিফ — তুই যেখানে আমরাও সেখানে। তুই না জানলে আমরা জানব কি করে?
আহিল — কিন্তু আফরানের কি হলো হঠাৎ। এসব কোন দেশের খাবার অর্ডার দিচ্ছে।
বলতে না বলতে নূর ধুম ধড়াম করে আবারও হাজির।
নূর — ভাইয়ায়ায়া। (চেঁচিয়ে)
লোকটা আঁতকে উঠল। নিশ্চয় আবারও উগান্ডার খাবার অর্ডার করতে এসেছে। ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল।
নূর — স্ট্রবেরি ফ্লেভারের টক বার্গার।
লোকটার মাথা ঘুরান্তি দিয়ে উঠল। ঢলে পড়ে যেতে নিলে নূর ধরে ফেলে। লোকটা নিভু নিভু চোখে তাকাল।
লোকটা — আপু আপনি আমার জায়গায় আসুন। যা করার করুন। যেমন খাবার চায় নিয়ে যান। টাকা লাগবে না। আপনার জন্য একদম ফ্রী। কিন্তু এসব আজব খাবারের নাম বলে আমার উপর টর্চার করবেন না। দোহাই লাগে। মাফ চায়, দোয়াও চায়।
নূর — ভাই টর্চার আপনার উপর না আমার উপর হচ্ছে। আপনার বেদনা, আমার বেদনা দুজনের জন্যই এক বদনা সমবেদনা। এখন প্লিজ তাড়াতাড়ি স্ট্রবেরি ফ্লেভারের টক বার্গার দেন।
এবার লোকটা নিজেকে সামলাতে না পেরে পড়ে গেল। নূর আশেপাশে চোখ বুলিয়ে জোর পূর্বক হাসি দিল। স্ট্রবেরি ক্রিম, লেবু গোল করে কেটে বার্গার বানিয়ে নিয়ে গেল।
আহিল — আজ নির্ঘাত আফরানের পেট খারাপ করবে। সবাই ওর কাছ দূরত্ব বজায় রেখে থাকিস৷ নাহলে দুষিত বিস্ফোরণ আমাদের উপর হবে। (সবাই মুখ ঢেকে নিল।)
নূর ক্লান্ত হয়ে আফরানের দিকে বার্গার এগিয়ে দিল। মেঝেতে বসে পড়ল।
আফরান — আর কি অর্ডার দেওয়া যায়? (চিন্তার ভান করে)
নূর — আপনি মানুষ নাকি এলিয়েন? এসব খাবার খেতে আপনার একটু খারাপ লাগছে না। নাম শুনেই আমার বমি পাচ্ছে। আর আপনি এসব খাচ্ছেন কি করে? এমনি এমনি খাচ্চোর বলি না। (বিড়বিড় করে)
আফরান — আবার বিড়বিড় করছ। এবার এই বার্গার তুমি খাবে।
নূর — নায়ায়া। সরি। সরি। আর বিড়বিড় করব না। (মুখ চেপে ধরল)
আফরানের ভীষণ হাসি পাচ্ছে। হাসি নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে।
আফরান — আমার জন্য পানি নিয়ে এসো। (গম্ভীর স্বরে)
নূর — কোন ফ্লেভারের?
আফরান — নরমাল পানি নিয়ে এসো। (জোর গলায়)
নূর — নরমাল পানি? আমি তো ভেবেছিলাম গু ফ্লেভারের পানি অর্ডার দিবে। (বিড়বিড় করে)
আফরান — আবার বিড়বিড় করছ? (রেগে)
নূর উঠে দৌড় দিল। এদিকে আফরানের হাসি দেখে কে। পেট চেপে ধরে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
.
ক্লাস শেষে মেয়েরা বেরিয়ে এলো। নূরকে দৌড়াতে দেখে অবাক হলো। তড়িঘড়ি সেদিকে গেল। ছেলেরা হতভম্ব হয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। এখন আবার কোন ফ্লেভারের খাবার অর্ডার দিতে এসেছে। নরমাল পানি অর্ডার দেওয়ায় বিষয়টা তাদের কাছে অস্বাভাবিক লাগলো।
ক্যান্টিনে এসে সিমার নজর পড়ল ছেলেদের উপর। আমরিনের কাঁধে থাপড়ান দিয়ে ইশারায় আহিলকে দেখাল।
সিমা — ওই দেখ তোর লাভ। আহিল ভাইয়া। আমরিন আপনাকে ভীষণ মিস করছে। (আমরিনকে ধাক্কা দিল আহিলের কাছে)
আহিল — (আমরিনকে ধরে) তাই বুঝি। আমি তো সবসময় আছি তোমার জন্য। (আমরিন সরে দাঁড়াল।) আমার লজ্জাবতী। এভাবে লজ্জা পেও না গো।
আরিফ তাকাতেই আলিফা ভেঙচি কেটে মুখ ফিরিয়ে নিল। আরিফের কপাল কুচকে গেল। মেহের-ইয়াশ একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল।
পুষ্প — কিছু হয়েছে? সবার চেহারার বারোটা বেজে আছে কেন?
রিহান — বিস্ফোরণের আতঙ্কে আছে সবাই।
পুষ্প — মানে!
রিহান সব বলার পর মেয়েরা ন্যাক্কারজনক ভঙ্গিমা করতে লাগলো।
সিমা — এসব খাবার? ওয়াক। এর চেয়ে বিষ অনেক ভালো।
ওয়াসিম — তুমি বিষ খেয়েছ? (অবাক হয়ে)
সিমা রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই হাত দিয়ে চুল ঢেকে আরিফের পেছনে লুকিয়ে পড়ল। সিমা মুচকি হাসলো।
.
.
নূর আফরানকে পানির বোতল এগিয়ে দিল। আফরান ভাব নিয়ে পানি নিল। ভাবছে কীভাবে নতুন করে অত্যাচার করা যায়।
আফরান — নূ….
নূর ঢলে পড়ল। আফরান তড়িঘড়ি নূরের কাছে এলো।
আফরান — নূর। কি হয়েছে?
নূরের পা থরথর কাঁপছে। আফরান পায়ে হাত দিয়ে দেখে পা দুটো বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আছে।
আফরান — নূর। তোমার পা ঠান্ডা কেন? কি হয়েছে? (ভয়াতুর হয়ে)
নূর — সিড়ি দিয়ে অনবরত দৌড়ানোর কারণে পা নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে।
আফরান — পাগল তুমি? কে বলেছে তোমায় দৌড়াতে। আর কত সহজে বলছ কথাটা। (কপালে নজর পড়ল।) তোমার কপালে কি হয়েছে? ব্যাথা পেয়েছ কখন?
নূর — ওই দিন দৌড়াতে গিয়ে দেয়ালে ধাক্কা লেগেছিল।
আফরান — তুমি…। সবসময় এতো দৌড়াদৌড়ি কর কেন? ছোট বাচ্চা না এখন তুমি।
নূর — একে তো আপনার জন্য হয়েছে এসব। আর আপনি উল্টো আমাকেই কথা শোনাচ্ছেন।
আফরান কিছু বলল না। কারণ দোষ তারই। মজা করতে গিয়ে একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলল। আফরান নূরকে কোলে নিয়ে বেঞ্চে বসালো। নূর হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। আফরান কিছু না বলে নূরের পা মালিশ করতে লাগলো।
নূর — কি করছেন ছাড়ুন। একটু পর এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। (জোর দিয়ে পা নাড়াতে পারছে না।)
আফরান — চুপ কর। পা দুটো ঠান্ডা হয়ে আছে। রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।
সবাই মিউজিক হলে এসে দেখে আফরান নূরের পা মালিশ করছে। সবার মুখ হা হয়ে আছে।
ওয়াসিম — ও ভাই। আমরা ভেবেছিলাম ওইসব খাবার খেয়ে আফরানের পেট খারাপ করবে। কিন্তু এখন দেখি পেট না মাথা খারাপ হয়েছে। নূর আফরানের সেবা করবে ভেবেছিলাম কিন্তু এখানে আফরান উল্টো নূরের সেবা করছে৷
আরিফ — শাট আপ ইয়ার। বিষয়টা দেখতে দে।
নূর — হয়েছে এবার ছাড়ুন। (সোজা হয়ে দাঁড়াল) সবাই এখানে?
ওয়াসিম কাছে এসে আফরানকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। কপালে হাত দিয়ে জ্বর আছে কিনা দেখছে৷
আফরান — কি? (বিরক্ত হয়ে)
পুষ্প — কি হচ্ছে এসব।
নূর — আমার পা নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিল তাই উনি মালিশ করছিল।
সিমা — উনি? হাউ কিউত।
নূর — চুপ কর ফকিন্নি মাইয়া। থাপরাইয়া মুতাই দিমু।
সিমা — তোরে লাত্থাইয়া হাগাই দিমু।
আফরান — ভাষার কি ছিরি। এসব কোন ধরনের ভাষা।
নূর — সেই যা-ই হোক। এবার আমার এসাইনমেন্ট দেন।
আফরান — সময় এখনো শেষ হয়নি। পায়ের বাহানা দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছ? তোমার শাস্তি এখনো বাকি। যা পরে শোধ করব।
আহিল — এসব বাদ দে। আগে বল তোর পেট নাকি খাজা বাবার ডেক। তোর পেটে ওইসব খাবার হজম হয়েছে কি করে? বমি পায়নি?
আফরান — ছিঃ! ওসব খাবার খাব আমি? ডাস্টবিনে সব।
নূর — তাহলে আমাকে এভাবে দৌড়ালেন কেন?
আফরান — তোমার শাস্তি ছিল।
বেঞ্চের উপর বার্গার ছিল। নূর বার্গারটা নিয়ে অর্ধেক আফরানের মুখে ঢুকিয়ে দিল। কি বাজে স্বাদ। আফরান সাথে সাথে ওয়াক করে ফেলে দিল।
নূর — খুব ট্যাশ। তাই না।
আফরান বাকি অর্ধেক নূরের মুখে দিল।
আফরান — খেয়ে দেখ কেমন ট্যাশ।
নূর — ওয়াক থুহ্। অসভ্য,অভদ্র,নির্লজ্জ, বেহায়া, খাচ্চোর, খাটাশ, খবিশ, বিলাতি বক, কুংফু পান্ডা কোথাকার। (বিড়বিড় করে)
আফরান — দাঁড়াও তুমি। তোমার বিড়বিড় করা ছোটাচ্ছি।
ডাস্টবিনে কাছে যেতেই নূর দৌড়ে চলে গেল।
.
পড়ন্ত বিকেলে জানালার দ্বারে মেহের নিশ্চুপ বসে আছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে৷ রক্তিম আকাশে ধূসর মেঘ উড়ছে। এক নজর পাশে থাকা বাবার দিকে তাকাল। ছোট বেলা থেকে দেখে আসছে দিন রাত পরিশ্রম করে তাদের জন্য অর্থ উপার্জন করত। কিন্তু পরিস্থিতির নির্মমতায় আজ সব কিছু পাল্টে গিয়েছে। বাবার চিকিৎসার, সংসারের টানাপোড়েন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে মেহের। টিউশনি করেও সব চাহিদা পূরণ হয়না।
মেহের — (ইয়াশের অফারের কথা কি চিন্তা করা যায়? সে তো বলেছিল মাত্র দুই দিনের ব্যাপার। ভালো একাউন্টও দিবে। এতে তো খারাপ কিছু নেই। তাহলে কথা বলে দেখি। কিন্তু ইয়াশের ফোন নাম্বার তো নেই। নূরকে বলি রিহান ভাইয়ার কাছ থেকে ইয়াশের নাম্বার নিয়ে দিতে।)
নূরকে ফোন দিয়ে ইয়াশের নাম্বার নিল। দ্বিধাবোধ করছে। কারণ সকালেই ইয়াশকে কড়াভাবে না করে দিয়েছিল৷ এখন যদি ইয়াশ কটু কথা বলে? দ্বিধাবোধ কাটিয়ে ফোন দিল।
ইয়াশ পরিচালকের সঙ্গে কথা বলছে।
ইয়াশ — আসলে স্যার আমি চেষ্টা করেছি।
পরিচালক — তোমাকে যতই বিশ্বাস করি তুমি ততই আমাকে নিরাশ কর। এমন অ-পেশাদারী কাজ করলে তোমার ক্যারিয়ারের জন্য বিপদজনক হবে।
ইয়াশ — স্যার আমি… হ্যালো? হ্যালো?
ফোন কেটে দিল। তখনই আননোন নাম্বার থেকে ফোন এলো।
ইয়াশ — হ্যালো?
মেহের — হ্যা…হ্যালো! আমি.. মেহের।
ইয়াশ — কি জন্য ফোন দিয়েছ? (রেগে)
মেহের — আসলে.. সকালে আপনি বলেছিলেন না প্রোগ্রামে আমার ছবি পেইজে দেওয়া হবে।
ইয়াশ — সকালে তো খুব বলেছ। এখন পরিচালক আমাকে কথা শোনানোর পর তোমার চিন্তা এলো? (রেগে। ফোন কেটে দিল।)
মেহের চোখ টলমল করছে।
ইয়াশ পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে আবারও রাজি করালো। এই সুযোগ সে কোনভাবে হাত ছাড়া করতে চায় না। বেশ কিছুক্ষণ পর মেহেরকে ফোন দিল।
ইয়াশ — কালকে ভার্সিটিতে এসে আমার সঙ্গে দেখা করবে। (কড়া গলায়)
মেহের — হুম। (মনে মনে বেশ প্রফুল্লিত হলো।)
.
রাতে ফোন হাতে নিয়ে রিহান এবং পুষ্প দুজনেই অপেক্ষা করছে কবে যে অপর প্রান্ত থেকে মেসেজ আসবে। কিন্তু কেউ-ই নিজ থেকে মেসেজ দিচ্ছে না। পূর্বে খুব সহজেই টেক্সট করত যখন একে অপরের সম্পর্কে জানা ছিল না। এখন জানার পর দ্বিধাবোধ করছে। যদি বিষয়টা তাদের ভাই-বোন জানে তাহলে এক বিদঘুটে পরিস্থিতি তৈরি হবে। কিন্তু তাদের মাঝে যে অদ্ভুত এক টানের সৃষ্টি হয়েছে তা তারা নিজেরও উপলব্ধি করতে পারছে। কথা বলতে না পেরে অস্থির হয়ে পড়ছে।
পুষ্প — মেয়েদের মধ্যে লজ্জা একটু বেশিই থাকে। কিন্তু রিহান তো ছেলে। সে কি পারে না আগে টেক্সট করতে। (বলে ডাটা অফ করে দিল।)
রিহান — মেসেজ দিব? না জানি পুষ্প কি ভাববে আমাকে নিয়ে। কি ভাববে? আগেও কথা বলেছি তাহলে এতো দ্বিধা কীসের? (ফোনে তাকিয়ে দেখে পুষ্প অফলাইন)
গ্রুপ চ্যাটে ওয়াসিম টুং করে মেসেজ দেয়। রিহান মেসেজ দিতেই শুরু হলো তাকে খোঁচা দেওয়া।
আহিল — গাইজ। একটা বিষয় খেয়াল করেছিস? রিহান ইদানিং ভীষণ ব্যস্ত। অনলাইনে থেকেও মেসেজ দেয় না।
ওয়াসিম — শুধু তাই? গভীর রাত অবধি অনলাইনে থাকে।
আফরান — নিশ্চয় কোন মেয়ের সাথে লাইন মারছে। কি রে রিহাইন্না। মেয়েটা কে রে?
সবাই উরাধুরা হাহা ইমোজি দিচ্ছে। রিহান চুপ হয়ে আছে। সকলের মনে একটাই কথা। “মেয়েটা তোর বোন।”
.
.
.
চলবে