Ragging To Loving 2পর্ব-৩১প্রথম অংশ)

0
2129

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ৩১ (প্রথম অংশ)
#রিধিরা_নূর

পুষ্প আরেকবার ফোন চেক করল যদিওবা মেসেজ আসে। নিরাশার দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ফোন পাশে রাখতে টুং করে আওয়াজ হলো। রিহানের মেসেজ দেখে তড়িঘড়ি উঠে বসে। আচমকা সারা শরীর কাঁপতে লাগলো। হৃৎপিন্ডের ধুকপুক শব্দে অস্থিরতা আরও বাড়ছে। লজ্জা পাওয়া এবং ভালো লাগা একসাথে কাজ করছে। পুষ্প রিপ্লাই দিতেই শুরু হয় ভিত্তিহীন আলাপচারি। কিন্তু তবুও যেন ভালো লাগছে।
.
.
নূর দাদুর বাসায় পার্লি সঙ্গে আলাপ করছে। কাল সকাল সকাল রওনা দিবে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে।

পার্লি — সরি এই কয়দিন সময় দিতে পারিনি। ট্যুরের নানান কাজে আরফিকে সাহায্য করতে হয়েছে। এসে ক্লান্ত হয়ে যেতাম। তাই খেয়েই ঘুম। আবার সকালে উঠেই চলে যেতাম।

নূর — ইটস ওকে। যদি কোন সমস্যা হয় আমাকে ফোন দিও। দাদু দাদী ভীষণ চিন্তা করছে তোমার জন্য।

পার্লি — কোন সমস্যা হবে না। আরফি আছে তো আমার সঙ্গে। আরফির সঙ্গে থাকলে কোন সমস্যা হবে না।

নূর — আমি এখানে এসেছি দুই ঘন্টার বেশি হবে। কিন্তু তোমার প্রত্যেক কথা শুধু একটা নামেই আটকে যায়। আরফি।

পার্লি অপ্রস্তুত হয়ে আশেপাশে তাকাতে লাগলো। যেসব জামা-কাপড় গুছিয়ে ব্যাগে নিয়েছিল সব এলোমেলো করে বের করে ফেলছে। তা দেখে নূরের ভীষণ হাসি পেল।

নূর — পিয়ার কিয়া তো ডারনা কিয়া। চুপ চুপ কে আহে ভার না কিয়া। ভালবাসলে নাকি তা মানুষটার আচরণে বোঝা যায়। আরফির নাম নেওয়ার সময় তোমার চেহারায় যেই চমক আসে, ঠোঁটের কোণে যে হাসি আসে তাতেই বোঝা যায় তাকে কতটা ভালবাস।

পার্লি লাজুক ভঙ্গিতে তাকাল।

নূর — বিএফ। দেখ তোমার নাতিন লুকিয়ে প্রেম করে….(উচ্চস্বরে বলতেই পার্লি মুখ চেপে ধরে)

পার্লি — কি করছ এসব? (বিস্মিত হয়ে)

নূর খিলখিল করে হেসে উঠল।

.

ভার্সিটিতে গিয়ে মেহের ইয়াশের সাথে দেখা করল। নিজেদের মাঝে সব আলোচনা করে নিল। প্রথম দিনের ব্যবহারের জন্য ইয়াশ মেহেরকে সরি বলল। মেহেরও মুচকি হেসে সব গ্লানি বিমোচন করল।

আফরান উঁকিঝুঁকি দিয়ে নূরকে খুঁজছে। রিহানও এলো না এখনও।

সিমা — চল ক্লাসে যায়। তৃতীয় পিরিয়ডে নিহাল স্যারের ক্লাস। আজ আমাদের এসাইনমেন্ট নিবে। (ছেলেদের দিকে তাকিয়ে বলল) আপনাদের ক্লাস নেই? রোজ দেখি ভার্সিটিতে এসে আড্ডা দেন। হঠাৎ একদিন মনে হলে ক্লাসে যান।

আহিল — ভার্সিটিতে আবার ক্লাস? এটা স্কুল না যে ক্লাস করা বাধ্যতামূলক। ভার্সিটি মানে চিল করা। এসব ক্লাস করা সব স্কুলের ছাত্রদের কাজ। মাঝে মধ্যে উপস্থিতির জন্য ক্লাস করি। তাও প্রেজেন্ট দিয়ে পেছনের দরজায় বেরিয়ে পড়ি৷

আমরিন — কি মারাত্মক কাজ কারবার। (অবাক হয়ে)

সবাই হো হো করে হেসে দিল।

আলিফা — ক্লাস না করলে আসেন কেন?

আহিল — প্রথম প্রথম আমরাও তোমাদের মতো ভীষণ এক্সাইটেড ছিলাম ক্লাস করার জন্য। একবার ফার্স্ট টার্মিনাল এক্সাম দাও ক্লাসের এক্সাইটমেন্ট সব ফুটুস হয়ে যাবে। (হেসে)

আলিফা — তাহলে ততদিন ক্লাস করি। গেলাম আমরা।

আফরান — নূর কোথায়?

আলিফা — বলতে পারিনা। বলেছিল আসতে দেরি হবে।

আফরান — (হুম সব বুঝি আমি। যাতে আমি কিছু করতে না পারি আর সময় পেরিয়ে গেলে বাধ্য হয়ে ফাইল দিয়ে দেয় তাই দেরি করে আসছে।)

মেয়েরা চলে গেল ক্লাসের দিকে। হঠাৎ সিমা খেয়াল করল পিংকি মেয়েটা ওয়াসিমের দিকে আসছে। সিমা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।

পুষ্প — দাঁড়িয়ে আছিস কেন? চল ক্লাস শুরু হবে।

সিমা — তোরা যা। আমি অন্য ক্লাস নিয়ে আসছি।

বাকিরা ক্লাসে চলে গেল। সিমা দূর থেকে আড়ালে পিংকি এবং ওয়াসিমের কার্যকলাপ দেখছে। পিংকি সবার সাথে কথা বলছে। এরই মাঝে ওয়াসিমকে ডেকে একান্তে নিয়ে গেল। তা দেখে সিমার ভ্রু জোড়া কুচকে এলো। পিংকি লাজুক ভঙ্গিতে ওয়াসিমের দিকে তাকাল।

পিংকি — ওয়াসিম আসলে অনেক দিন ধরে তোমাকে কিছু বলতে চাইছি।

ওয়াসিম — হ্যাঁ! বল।

পিংকি — একচুয়ালি আই….

হুট করে সিমা তাদের মাঝে এসে দাঁড়াল। পিংকি হতচকিত হয়ে আছে। সিমা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ওয়াসিমের দিকে তাকাল। ওয়াসিম ভয়ে ঢোক গিলল। পরক্ষণে সিমা পিংকির দিকে নম্র চোখে তাকাল।

সিমা — হাই খালাম্মা। কেমন আছেন? ভাগিনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন বুঝি।

পিংকি — এক্সকিউজ মি। ওয়াসিম আমার ভাগিনা না। আমাকে খালাম্মা ডাকবে না। (রেগে) ওয়াসিম তো আমার… (লাজুক ভঙ্গিতে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেলল)

সিমা — ওয়াসিম চল। (ওয়াসিমের হাত আঁকড়ে ধরে)

পিংকি — এই মেয়ে তুমি ওর হাত ধরেছ কেন?

সিমা — আরে আমি ধরব না তো কি আপনি ধরবেন? খালাম্মা।

পিংকি — মানে কি? কেন ধরবে তুমি ওর হাত? ছাড়।

সিমার হাত ছাড়িয়ে নিতে নিলে সিমা আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরল। পিংকি ব্যর্থ হয়ে হাত ছেড়ে দিল।

সিমা — খালাম্মা। আমি ওর হাত কেন ধরব আপনি বুঝতে পারছেন না? (লাজুক ভঙ্গিতে ওয়াসিমের শার্টে আঁকিবুঁকি করছে)

ওয়াসিম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সিমার দিকে। কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই সিমা চিমটি দিল। ওয়াসিম বেদনা কাতর শব্দ করে চুপ হয়ে গেল। পিংকি ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সহ্য করতে না পেরে সিমাকে ধাক্কা দিয়ে ওয়াসিমের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয়।

পিংকি — দূরে থাক ওর কাছ থেকে।

সিমা আসতেই পিংকি আবারও ধাক্কা দেয়। সিমা তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিলে ওয়াসিম ধরে ফেলে।

ওয়াসিম — পিংকি! এসব কোন ধরনের আচরণ। সিমা যদি পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেত? (উচ্চস্বরে)

পিংকি — তাতে কি। তুমি ছাড় ওকে। দূরে থাক।

ওয়াসিম — তুমি আমাকে বলতে এসো না আমি কি করব না করব। (উচ্চস্বরে)

পিংকি — তুমি আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলছ কেন?

ওয়াসিম — আমি চাই না এভাবে কথা বলতে। তাই দয়া করে চলে যাও। (কড়া নির্দেশ দিয়ে)

পিংকি এক নজর সিমার দিকে তাকিয়ে চলে গেল। সিমা নির্বাক হয়ে ওয়াসিমের দিকে তাকিয়ে আছে। ভীতুর ডিমটা যে এতো রেগে যাবে ভাবেনি।

ওয়াসিম — কি? (আড়চোখে তাকিয়ে)

সিমা — তুমি সত্যি ওয়াসিম? না মানে ভয় পেয়ে দৌড় দেওয়া ওয়াসিম এভাবে রেগে যাবে ভাবিনি

ওয়াসিম — কলিজায় আঘাত লাগলে বিড়ালও বাঘ হয়ে যায়। তুমি পিংকির সামনে এমন আচরণ করছিলে কেন?

সিমা — তুমি আবার ওকে পিংকি বলছ? (রেগে)

ওয়াসিম — ওর নাম পিংকি। তো পিংকি না ডেকে কি ডাকব?

সিমা — গোলাপি ডাক। কমলাবানু ডাক। তোমার না খালাম্মা হয়৷ খালাম্মা ডাক। পিংকি ডাকবে না। তুমি পিংকি শুধু আমাকে ডাকবে।

ওয়াসিম — পিংকি ডাকলে তুমি নিজেই তো রেগে যাও। (নম্রস্বরে) আবার অন্য কাউকে পিংকি ডাকলেও চুল টান। রণচণ্ডী।

সিমা — কেন রেগে যায় নিজ থেকে বুঝে নাও। আর হ্যাঁ! আজীবন এই রণচণ্ডীকেই সহ্য করতে হবে। (হুমকি দিয়ে)

ওয়াসিম — কি আর করার। সব ভাগ্যের লিখন। (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে)

সিমা ফিক করে হেসে দিল। ওয়াসিমও হাসলো। না বলার মাঝেও ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটলো।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here