Ragging To Loving 2পর্ব-৩৫

0
2470

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ৩৫
#রিধিরা_নূর

নূর — একটা কথা বলি?

আফরান — হুম। বল।

নূর আফরানের পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। কেউ কারো দিকে তাকাল না। দুজনেই সামনে ফিরে শূন্যে তাকিয়ে আছে।

নূর — যাদের আরেঞ্জ ম্যারিজ হয় তাদের মধ্যে তো শুরু থেকেই ভালবাসা থাকে না। তাহলে তারা সারাটি জীবন একে অপরের সঙ্গে কীভাবে কাটায়?

আফরান — বিয়ের পর ভালবাসার চেয়ে দায়িত্ব বেশি থাকে। তখন একে অপরকে ভালবাসার চেয়ে তাদের দায়িত্ব নেওয়া বেশি প্রয়োজন। সময়ের সাথে সাথে একে অপরকে চিনে, জানে, পছন্দ-অপছন্দ, দোষ-গুণ সম্পর্কে জানে। কীসে তাদের খুশি লুকায়িত। একে অপরের ইচ্ছা পূরণ করার মাধ্যমে আন্তরিকতা তৈরি হয়। বিশ্বাস তৈরি হয়। তখন ভালবাসা থাক না থাক বিশ্বাস থাকে। সেই বিশ্বাসেই একে অপরকে আগলে রাখে। কারণ তারা চায় না সেই বিশ্বাস হারাতে। ভালবাসা এবং বিশ্বাস একে অপরের পরিপূরক। আমরা যাকে ভালবাসি তাকে বিশ্বাস করি। আবার এমনও হয় তাকে বিশ্বাস করি বলে ভালবাসি।

নূর — আপনি তো তার সাথে দুই বছর ছিলেন। তাহলে তার প্রতি আপনার মনে আন্তরিকতা তৈরি হয়নি?

আফরান — বলেছিলাম না। সময়ের সাথে তৈরি হয়। দুই বছর ছিলাম একসাথে কিন্তু দুই মিনিট মন খুলে কথা বলিনি। সে তার মডেলিং নিয়ে ব্যস্ত ছিল। আমি আমার মিউজিক নিয়ে। মাঝে মাঝে আলাপ হতো। কিন্তু কথা গুলো আমাদের নিয়ে নয় একান্ত পান্নাকে নিয়ে হতো। সে কি করেছে, কে কি বলেছে, পরিচালক, ডিজাইনার, ফটোগ্রাফার (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল) এগুলো-ই। না কখনো তার জীবন, তার ফ্যামিলি নিয়ে আলোচনা হলো। না আমার জীবন, ফ্যামিলি নিয়ে হলো। না কখনও তার পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে জানলাম। না সে আমার পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে জানল। আমাদের সম্পর্কে শুধু ফরমালিটির জন্য রিলেশন ট্যাগ দেওয়া হয়েছে।

দুজনেই নীরবতা বজায় রেখে দাঁড়িয়ে আছে।

নূর — একটা কথা বলি?

আফরান — হুম। বল।

নূর — আমরা কি স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারি না?

আফরান — হ্যাঁ! পারি তো। যদি তুমি খিটখিট না কর। (আড়চোখে তাকিয়ে)

নূর — আমি খিটখিট করি? তার মানে আপনি বলতে চান আমি ঝগড়াটে৷ আমি পাগল। যে বিনা কারণে ঝগড়া করে। আপনি পাগল, আপনার বউ পাগল, আপনার বাচ্চা-কাচ্চা পাগল। (রেগে)

আফরান — বাই দ্যা ওয়ে। বাচ্চা-কাচ্চা থেকে পুচ্চু পুচ্চির কথা মনে পড়ল। হাউ নিষ্ঠুর ইউ আর। এই জালিম, নিষ্ঠুর দুনিয়া থেকে রক্ষার জন্য তোমার পুচ্চু পুচ্চিকে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলে। কিন্তু তুমি একবারও তাদের খোঁজ খবর নাও নি। তারা কেমন আছে? কীভাবে আছে? মিস ঝুনঝুনি বেগম।

নূর — ঝুনঝুনি না টুনটুনি বেগম। (বলে ফিক করে হেসে দিল)

তার সাথে তাল মিলিয়ে আফরানও হাসছে৷ হাসতে হাসতে একে অপরের দিকে তাকাতেই হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় দুজনেই থমকে গেল। হাসতে হাসতে নূরের চোখের কোণে পানি জমে গেল। আফরান আলতো ছুঁয়ে বৃদ্ধ আঙুল দিয়ে কোণে জমে থাকা জল মুছে দিল। আফরানের উষ্ণ ছোঁয়ায় নূর পরম আবেশে চোখ বুজে নিল। অদ্ভুত অনুভূতির শিহরণে শিউরে উঠল। আলতো করে চোখ খুলে আফরানের দিকে তাকাল। আবারও হলো শুভদৃষ্টির মিলন।

“নূরের চোখের পাপড়ি পাতলা কিন্তু লম্বা। চোখের ডানপাশে ছোট্টো কালো তিল। মায়াবী চোখ জোড়ার মায়ায় বারবার আটকা পড়ে। যখন আলতো করে পলক ফেলে উফফ ঘোর লাগার মতো মাতাল করে তোলে। চোখ ফেরানো যেন দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়।” আচমকা আফরান নড়েচড়ে দাঁড়াল।কি ভাবছে এসব? এই কোন মায়ার মোহনজালে আটকা পড়েছে সে?

আফরানের নড়াতে নূরও অপ্রস্তুত হয়ে আশেপাশে তাকাতে লাগলো।

নূর — আমি বাকিদের দেখে আসছি। (দ্রুত পায়ে হেটে চলে গেল)

আফরান নিষ্পলক তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। আচমকা বুকের ভেতর ধুকপুকানি বেড়ে গেল। হৃদস্পন্দনের গতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেল। বুকের বাপাশে হাত রেখে চোখ বুজে নিল। চোখের সামনে ভেসে উঠল নূরের হাসি মাখা চেহারা, চঞ্চলতায় ভরা দুষ্টু হাসি, সাদা কুরতি পরা প্রথম দিনের সেই নিষ্পাপ চেহারা। পরিশেষে ভেসে উঠল লাল শাড়ী মোড়ানো মিষ্টি চেহারা অধিকারিণী পিচ্চি নূর। আপনা আপনি আফরানের ঠোঁটের কোণে হাসি রেখা ফুটে উঠল। আনমনে বলল, “আনন্দিতা”। আনন্দিতা নামটি উচ্চারণ করতেই আনন্দে তার মন প্রফুল্লতায় ভরে উঠল।

আচমকা কারো ঝাকুনিতে আফরানের ধ্যান ভাঙল।

ওয়াসিম — কি রে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমোচ্ছিস কেন?

আফরান তড়িঘড়ি চোখ খুলে আশেপাশে তাকাতে লাগলো। বিস্ময়কর দৃষ্টিতে ওয়াসিমের দিকে তাকাল। হঠাৎ কি হলো তার বুঝতে পারছে না। ওয়াসিম গাড়ি থেকে পানির বোতল নিয়ে আফরানের মুখে পানির ছিটা দিল।

ওয়াসিম — ছু মন্তর ছু! আফরানের ঘুম উড়ে যা ছুহ্!

আফরান — ওয়াসিম। (চিল্লিয়ে)

ওয়াসিম — তুই দাঁড়িয়ে ঘুমোচ্ছিস তাই জাগিয়ে তুলছি। (ভয়ার্ত স্বরে)
.
.
ইয়াশ — হ্যাঁ! গতকাল সব ছবি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মেহের — ওহ্। ভালো

ইয়াশ — মেহের? জানি আমাদের প্রথম আলাপ ভুল বোঝাবুঝি, বিবাদ দিয়ে শুরু হয়েছিল। এখন সব বিবাদ মিটিয়ে আমরা ভালো বন্ধু হতে পারি না।

মেহের — হুম। অবশ্যই পারি।

দুজনে মুচকি হাসলো। আলিফা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আরিফকে পর্যবেক্ষণ করছে।

আলিফা — (এই মানুষটার ভেতর কি হৃদয় নেই? আমি যে তার উপর ক্রাশিত, ভালবাসিত, প্রেমে পড়িত তা কি জানে না? জানে তো। সব জানে। জেনেও না জানার ভান করে আছে। এদিকে যে আমি তাকে বোঝানোর জন্য কত কিছু করি। আর সে আমার দিকে ফিরেও তাকাই না। তখন ইচ্ছে করে গুতা দিয়ে চোখ গেলে দেয়।)

মনে মনে ইচ্ছেমতো ধুয়ে দিল। আরিফের নজর পড়তেই জোর পূর্বক হাসি দিল। সাথে সাথে আরিফ চোখ ফিরিয়ে নিল। তা দেখে আলিফা রেগে ভেঙচি কাটলো।
.
.
আমরিন — কেউ একজন আমাকে বলেছিল। মনে যখন সামথিং সামথিং ফিলিংস আছে তখন মেনে নিতে সমস্যা কোথায়? পিয়ার কিয়া হে কোয়ি চোরি নেহি কি। ইসমে ডারনা কিয়া। (ভ্রু নাচিয়ে দুষ্টু হাসি দিল)

পুষ্প মাথা নিচু করে ফেলল। কারণ আমরিনের সময় কথাগুলো সে-ই বলেছিল। আসলেই তো কারো জন্য মনে অনুভূতি তৈরি হলে এতে অপরাধের কিছু নেই। ভালো লাগে রিহানের সাথে কথা বলতে, তার সাথে সুখ-দুঃখের কথা শেয়ার করতে। নির্ঘুম রাতগুলো তার সাথে কথা বলে কাটাতে। তার সাথে কথা বলা ছাড়া ঘুম আসে না। মনটা বিচলিত হয়ে পড়ে। কেন? যখন রিহান ছিল না তখন সবকিছু কত সহজ ছিল। না ছিল কোন টান, না ছিল অনুভূতি। তাহলে হঠাৎ তার আগমনে সব কিছু ওলট-পালট হয়ে গেল কেন?

রিহান স্তব্ধ হয়ে পুষ্পর দিকে তাকিয়ে আছে। পুষ্পর এভাবে মাথা নিচু করে ফেলা তার মনে নানান প্রশ্নের জাগান দিচ্ছে। তাহলে কি সত্যি পুষ্পর মনে তাকে নিয়ে কিছু আছে? ফোনের রিংটোনে ধ্যান ভাঙে।

রিহান — হ্যালো? এক্ষুনি আসছি।

দ্বিধান্বিত হয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়ল। আমরিনের কপালে ভাজ পড়ল।

আমরিন — পুষ্প। রিহান ভাইয়া আর তোর মধ্যে কি সত্যি কিছু আছে?

পুষ্প — জানি না।

আমরিন — তোদের মধ্যে নেই। কিন্তু তোর মধ্যে?

পুষ্প দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে মুচকি হাসলো। যা বোঝার আমরিন বুঝে নিল। সেও মুচকি হাসলো।

নূর — ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ! কীভাবে পারলি তুই এমনটা করতে। এই তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড। বেস্টফ্রেন্ড হয়ে অন্য বেস্টফ্রেন্ডকে এভাবে ধোকা দিলি।

পুষ্প — নূর আমার কথা শোন।

নূর — যা শোনার আমি শুনে নিয়েছি। ভাবতেই অবাক লাগছে তুই আমার সাথে এমন করলি। কোথায় আমি ভেবেছিলাম আমি একটা দেবর ওয়ালা জামাই বিয়ে করল। তোকে আমার দেবরানি বানাবো। আমি পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে তোকে অর্ডার দিব আর ঘরের সব কাজ তুই করবি। সেই তুই কিনা আমার ভাইয়ের সাথে লাইন মারছিস। ছ্যা ছ্যা ছ্যা।

আমরিন,পুষ্প দুজনেই অবাক হয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মূহুর্তে কেমন রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারছে না। নূর যেমন গম্ভীর স্বরে বলল সে মজা করে বলেছে নাকি গম্ভীর হয়ে তা বোঝার উপায় নেই। নূর ফিক করে হেসে দিল। এবার দুজনেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

নূর — কিন্তু এখন আমার প্লানিং এর কি হবে?

আমরিন — এক কাজ কর পুষ্প যেহেতু তোর ভাইয়ের সাথে লাইন মারছে সেহেতু তুইও ওর ভাইয়ের সাথে লাইন মার।

নূর — (হকচকিয়ে উঠল) নো, নেভার, কাবি নেহি। ওই উগান্ডার প্রেসিডেন্টকে? কখনও না।

আমরিন — বলা তো যায় না। কখন কি হয়।

নূর — তু..তুই চুপ কর। পুষ্প তুই বল। রিহানের সাথে তোর সেটিং হয়েছে কি করে?

পুষ্প — কোথায় হয়েছে? এক তরফায়।

নূর — ওই মাথা মোটা রিহাইন্না ছোট থেকেই এমন। মার না খাওয়া অবধি বুঝতে পারে না। এবার দেখ আমার খুরাফাতি আইডিয়ার কামাল।

পুষ্প — আইলাভিউ বেবি। (নূরকে জড়িয়ে ধরে)

আমরিন — আজ আমি বেস্টফ্রেন্ড না বলে।

নূর — এক্কেরে থাপরাইয়া মুতাই দিমু। তোরা সবাই আমার ফ্রেন্ড। সবাইকে আমি সমানভাবে ভালবাসি। ফ্রেন্ড মানেই বেস্ট। কাউকে আলাদা করে বেস্টফ্রেন্ড ট্যাগ দিতে হয় না। ফ্রেন্ড মানে ফ্রেন্ড। বেস্টফ্রেন্ড, ক্লোজ ফ্রেন্ড, গুড ফ্রেন্ড, জাস্ট ফ্রেন্ড এগ্লা কি ভাই। এগুলো ফ্রেন্ডের শাখা-প্রশাখা নাকি? যদি এসব ট্যাগ দিতে হয় তাহলে ভাই রে ভাই তোমাদের ফ্রেন্ডশিপ জাস্ট ফরমালিটির জন্য।

আমরিন — জ্ঞানী গুরুজী আপনার সমাচার পর্ব আজকের জন্য সমাপ্ত করুন।

নূর আড়চোখে তাকাল। পুষ্প,আমরিন খিলখিল করে হেসে উঠল।

লাইব্রেরিয়ান — সাইলেন্ট। (উচ্চস্বরে)

তিনজনে দৌড়ে পালিয়ে গেল।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here