#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ৩৮
#রিধিরা_নূর
আফরানের ফাইনাল সেমিস্টার পরিক্ষার ছয় মাস বাকি। তোড়জোড় করে এখন পরিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংগীত যেন আফরানের জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে। সংগীত তার আসক্তি ছিল। এক ধাক্কায় সব ছুটে গেল।
নোট তৈরির জন্য আফরান লাইব্রেরির কোণে নির্জনে বসল। সংগীত থেকে নিজেকে দূরে রাখতে যথাসাধ্য নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করে। মনোযোগ দিয়ে নোট করছে এমন সময় পাশ থেকে বিকট শব্দ পেল। অমঙ্গল আভাস পেয়ে তড়িঘড়ি সেদিকে গেল। তাকিয়ে দেখে নূর লাফাচ্ছে। কাছে গিয়ে বুঝতে পারল নূর বই নেওয়ার চেষ্টা করছে। উচ্চতার কারণে নাগাল পাচ্ছে না। আফরান বিরক্তি ভঙ্গিতে বলল,
আফরান — ভুটকি। নাগাল পাচ্ছে না যখন কারো সাহায্য চাইতে পারে বা চৌকির উপর দাঁড়িয়ে নিতে পারে। কিন্তু না নিজে একাই একশ।
নূর ব্যাঙের মতো লাফিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সফল হচ্ছে না। আফরান বিরক্ত হয়ে নূরের কাছে গেল।
আফরান — কি চাই?
নূর — এক কেজি পেয়াজ, দুই কেজি আলু, দশ টাকার কাঁচামরিচ….
আফরান — কি বলছ এসব? এটা লাইব্রেরি কাঁচাবাজার নয়। (হতভম্ব হয়ে)
নূর — ওহ্ তাই! লাইব্রেরিতে কি চাই? বই। সেটাই নিতে চাইছি।
আফরান — সবসময় ত্যাড়া জবাব। তোমার মুখ থেকে কি সোজা কথা বের হয় না? কি বই চাইছ তাই জিজ্ঞেস করেছি। বল আমি নিয়ে দিচ্ছি।
নূর — আপনি কেন নিবেন? প্রয়োজন আমার আমি নিব। হুহ্! আসছে সুপারম্যান। ঢং।
আফরান বিরক্ত হয়ে চৌকি এনে দিল।
আফরান — চৌকির উপর দাঁড়িয়ে এরপর নাও।
নূর — যদি পড়ে যায়?
আফরান — পড়বে না। আমি আছি। তুমি পড়ার আগেই ধরে ফেলব।
নূর — যদি ধরতে না পারেন? তাহলে তো পড়ে যাব।
আফরান — পড়ে যাওয়ার ভয়ে কি হাটা বন্ধ করে দিবে? এক্সিডেন্টের ভয়ে রাস্তায় চলা বন্ধ করে দিবে? ছোট বেলায় অনেক পড়েছ, পড়তে পড়তে চলতে শিখেছ। এখনও যদি পড়ে যাও তাহলে আবার উঠে দাঁড়াবে। এমন না যে তুমি শিশু। যথেষ্ট বড় হয়েছে। ভালো মন্দ জ্ঞান আছে। একবার না পারিলে দেখ শতবার। এই শিক্ষা ভুলে গিয়েছ?
নূর ভেটকি মাছের মতো হাসি দিয়ে ধীর গতিতে হাততালি দিতে লাগলো।
নূর — বাহ্! জ্ঞানী বাবা বাহ্! আপনার মধ্যে এতো জ্ঞানের ভান্ডার এলো কোত্থেকে? (তাচ্ছিল্য করে)
আফরান — হোয়াট ডু ইউ মিন?(ভ্রু কুচকে)
নূর — আমি সত্যি জানতাম না আপনি এতো দূর্বল। একেবারে হাই-ফাই, ফুল অব এটিটিউড, ড্যাশিং হয়ে চলেন। কিন্তু আপনি একটা ভীতু ডিম। জানেন ভার্সিটির সেই প্রথম দিন থেকে দেখে এসেছি আপনার কাঁধে ঝুলন্ত সেই গিটার। আপনাকে খোঁজার জন্য কোথাও যেতে হয়না। মিউজিক হলে আপনাকে সবসময় দেখতাম। সুর তুলতেন, গানের গুনগুন শব্দ শুনতাম। রিহান আমাকে বলেছে সেই অনেক বছর ধরে আজ পর্যন্ত আপনি গিটারটা যত্নসহকারে আগলে রেখেছেন। কাউকে ছুঁতে দিতেন না। মিউজিক আপনার প্যাশন, আপনার স্বপ্ন, আপনার ক্যারিয়ার সব। তাহলে আজ কি হলো? কোথায় আপনার সেই প্যাশন? স্বপ্ন পূরণের তীব্র ইচ্ছা। কোথায়? আপনি আমাকে বলছেন, “একবার না পারিলে দেখ শতবার”। সিরিয়াসলি! আপনি চেষ্টা করেছেন শতবার? একটি গান ফ্লপ হয়েছে বলে আপনি সংগীতই ছেড়ে দিলেন। “Failure is the pillar of success” অর্থাৎ “ব্যর্থতা সফলতার স্তম্ভ”। আপনি একবার ব্যর্থ হয়েছেন বলে হার মেনে নিচ্ছেন। বরঞ্চ এই ব্যর্থতাকে সিড়ি বানিয়ে সফলতার শিকরে পৌঁছান৷ একটু তাকিয়ে দেখুন এখনকার প্রজন্ম যাদের আদর্শ মানে তাদের অতীত কেমন ছিল। কেউ এমনি এমনি সফলতা অর্জন করেনি। দীর্ঘ পরিশ্রম করের ব্যর্থতাকে হার মানিয়ে সফলতা অর্জন করেছে।
আফরান বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সারাক্ষণ খিটখিট করা ইমম্যাচিউরড নূর এমন পরিপক্ব মানুষের ন্যায় কথা বলতে ভাবতেই অবাক লাগছে।
নূর নিজেও অবাক। নিজের কাঁধে মৃদু থাপড়ান দিতে লাগলো।
নূর — (ওয়াও। নূর ইউ আর জিনিয়াস। আমি এতো ভালো মোটিভেশনাল স্পিচ দিতে পারি। উফফ। আমাকে তো নোবেল পুরষ্কার দেওয়া উচিৎ।)
নূর জ্ঞানীদের ন্যায় ভাব নিল। আফরান কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। নূর ভ্রু নাচিয়ে তাকাল। আফরান কিছু না বলেই চলে গেল। নূর থ’মেরে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের গলা শুকিয়ে এতো ভারি ভারি শব্দ ব্যবহার করে প্রেরণাদায়ী বক্তব্য দিল। কিন্তু এই উগান্ডার প্রেসিডেন্ট শুনেও না শোনার মতো করে উপেক্ষা করে চলে গেল।
নূর — খাচ্চোর। (রেগে)
বুক শেলফের চিপার মধ্য থেকে একদল মানুষ সুরসুর করে বেরিয়ে এলো। জানেনই তো একদল মানুষ গুলো কে। সবার মুখে নিরাশার ছাপ।
.
.
যে যার শ্রেণি কক্ষের দিকে অগ্রসর হলো। আলিফা ব্যাগ থেকে ফোন নিচ্ছিল পাশ ফিরতেই আরিফের হাতের ধাক্কা লেগে আলিফার ব্যাগ পড়ে যায়। ব্যাগের জিনিসপত্র ছড়িয়ে পড়ে।
আরিফ — আ’ম সরি।
আরিফ আলিফার জিনিস তুলে নিতে সাহায্যের হাত বাড়ায়। আরিফ যেই জিনিস ধরতে যায় তার পূর্বেই আলিফা ছিনিয়ে নেই। আরিফ নীরবে তাকিয়ে আছে আলিফার দিকে। আলিফার চেহারায় কোন ভাবান্তর নেই। এই মূহুর্তে তার মতো ব্যস্ত যেন আর কেউ নেই। বেশ মনোযোগ দিয়ে সব গুছিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু একবারও আরিফের দিকে তাকাল। অবশেষে তাকাল। মৃদু স্বরে বলল “ইটস ওকে”। মৃদু হাসলো। কিন্তু এই হাসি যেন আরিফের বুকে তীরের ন্যায় বিঁধল। বুকের ভেতর চিনচিন করে উঠল। অজানা লোকের মতো তুচ্ছ করল তাকে।
আলিফা উঠতে নিলে আরিফ তার হাত চেপে ধরে। আলিফা উঠতে গিয়েও উঠতে পারল না। কৌতূহল দৃষ্টিতে আরিফের দিকে তাকাল।
বাকিরা একে অপরের দিকে চোখের ইশারায় একে অপরকে বিদায় জানালো। এই মূহুর্তে তাদের একা ছেড়ে দেওয়ায় শ্রেয়।
আরিফ — কি হয়েছে তোমার?
আলিফা — কি হবে?
আরিফ — শেষ কবে তুমি আমার সঙ্গে কথা বলেছ মনে আছে?
আলিফা — হ্যাঁ! অবশ্যই আছে। ঠিক আট মাস নয় দিন পূর্বে। ভার্সিটির গেইটের বাইরে আমি আপনার কাছে এসেছিলাম। আপনার ওয়ালেট দিতে। কিন্তু আপনার কাছে সময় ছিল না আমার ভিত্তিহীন কথা শোনার। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আপনার মতো ব্যস্ত মানুষের সময় নষ্ট করে লাভ নেই। আমার কথা গুলো ভিত্তিহীন, আমার অনুভূতিও ভিত্তিহীন, আমি মানুষই ভিত্তিহীন। (বলে হাসলো)
আরিফ অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল। মনে পড়ল সেই দিনের কথা। সেদিন রিকশায় তার ওয়ালেট পড়া অবস্থায় পেয়েছিল। কিন্তু তখনও ভাবান্তর করল না। আজ বুঝতে পেরেছে সব।
আলিফা — আমার ক্লাস আছে আমি যায়।
আরিফ হাত ছাড়লো না। আলিফা ছাড়াতে নিলে আরও শক্ত করে চেপে ধরে। আলিফা ব্যাথা পাচ্ছে কিন্তু কিছু বলছে না।
আরিফ — আমি কেমন তা তুমি জানো। গম্ভীর, কথা কম বলি। তুমি শুধু আমার বাহ্যিক রূপ দেখেছ। আমার গম্ভীর ব্যক্তিত্ব দেখেছ। এবং সেই রূপেরই প্রেমে পড়েছ। আমার সম্পর্কে, আমার অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিত্বের সম্পর্কে জানো না। আমার বাবা নেই। ছোট দুই বোন আছে, মা আছে। তাদের নিয়েই আমার পরিবার। এবং এটাও জানো ইয়াশ আমার চাচাতো ভাই। কিন্তু আমার দুনিয়া সীমাবদ্ধ। পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করি এতেই সংসার চলে। তুমি দিন দুপুরে আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছ। কিন্তু বাস্তবতা দেখনি। আমি এমনই। স্বল্পভাষী। কারণ আমি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি না।
আলিফা — কে বলল আপনাকে আমি এসব জানি না। আমি সব জানি। এবং আপনার ছাত্র নাহিদ আমার মামাতো ভাই। আপনি জানেন আমাদের প্রথম দেখা হয় ভার্সিটিতে। কিন্তু না। তার অনেক আগেই আমি আপনাকে দেখেছি। যখন মাধ্যমিক শেষে মামার বাড়ি গিয়েছিলাম। তখন ক্রাশ নামক অখাদ্য খেয়েছিলাম। এরপর ভার্সিটিতে দেখা হয়। আপনাকে যেমন ভেবেছিলাম স্বভাবে তেমন বিপরীত। চুপচাপ, গম্ভীর। এরপর আপনার সম্পর্কে নাহিদের কাছ থেকে জানি। হ্যাঁ! বলতে পারেন আপনার বাহ্যিক রূপ দেখে আপনার প্রেমে পড়ি। কিন্তু আপনার অভ্যন্তরীণ জেনে আপনাকে ভালবাসি। সেদিন আপনার কথায় ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম। অভিমান হয়েছিল। কিন্তু আপনি অভিমান ভাঙাননি। তাই অভিমান বেড়েই চলেছিল৷
আরিফ — আমি স্পষ্টভাষী মানুষ। তাই সোজাসাপ্টা বলছি। এসব প্রেমালাপ, সারপ্রাইজ দেওয়া, ডেইটে নিয়ে যাওয়া, রাত জেগে কথা বলা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি এমনই। এসব প্রেম সম্পর্ক আমার দ্বারা হবে না। পারবে আমার জন্য অপেক্ষা করতে। ফাইনাল সেমিস্টার শেষে ভালো একটি চাকরি পাওয়া, নিজেকে তৈরি করার জন্য কম হলেও তিন বছর লাগবে। পারবে তত দিন আমার জন্য অপেক্ষা করতে?
অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আলিফা মাথা দুলালো। আরিফ মুচকি হাসলো।
আরিফ — যাও ক্লাসে।
আলিফা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
আলিফা — (হাও আনরোমেন্টিক। ঘেঁচড়া কোথাকার।)
আরিফ — আগেই বলেছিলাম। আমি এমনই।
আলিফা লজ্জা পেয়ে দৌড়ে চলে গেল। আরিফ বাঁকা হাসলো। পিছন ফিরে দেখে ওয়াসিম,রিহান, আহিল, ইয়াশ গম্ভীরমুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ওয়াসিম — এই চলে তোর মনে? মামা তলে তলে টেম্পু চালাও। হাহ্!
আরিফ — তোমরা যে রেলগাড়ি চালাও আমি কিছু বলেছি?
ইয়াশ — ভাই আমি না। ওরা। আমি এখনো পিওর সিঙ্গেল।
আরিফ ইয়াশের কাঁধে হাত রাখল।
আরিফ — রাত জেগে ফোনে যে মেহেরের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং কর তা আমি আমার রুম থেকে শুনতে পায়। ভুলে যেও না আমাদের বারান্দা সংলগ্ন। (ভ্রু নাচালো)
ইয়াশ বিষম খেয়ে কাশতে লাগলো। এবার সবাই আরিফকে ছেড়ে ইয়াশের পেছনে লাগলো।
.
.
আলিফা লাজুক ভঙ্গিতে বসে আছে। হাতের আঙুল নিয়ে খেলছে। একটু পর পর মুচকি হাসছে। খেয়াল হতেই তাকিয়ে দেখে নূর ও বাকিরা গালে হাত দিয়ে তার দিকে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে। আলিফা জোর পূর্বক হাসি দিল। মাথা চুলকাতে লাগলো। কিন্তু কারো দৃষ্টি নড়লো না।
নূর — কি রে মিস ছ্যাঁকাখোর। তোর ছ্যাচড়াগিরি আবার শুরু হয়ছে। তাই না?
আলিফা আড়চোখে তাকাল।
নূর — এসব চোখাচোখি না করে ব্যাপার কি তা বল।
স্যার — কি হচ্ছে এখানে?
নূর — স্যার এদিকে বোঝাপড়া হচ্ছে। (বেখেয়ালি হয়ে বলল পরক্ষণে খেয়াল হতেই জিবে কামড় খেল) না মানে।
সবাই ক্লাসের দিকে মনোযোগী হলো। আলিফা মুখ টিপে টিপে হাসছে।
.
.
কলিংবেল বাজতেই মরিয়ম বেগম দরজা খুললেন। আফরানকে দেখে বেশ অবাক হলেন। আবার খুশিও হলেন। আজ আফরানের চেহারায় বিষন্নতা নয় বরং খুশির ঝলকানি দেখতে পেল। আফরান মুচকি হাসলো।
আফরান — মা। এক গ্লাস গরম পানি আর মধু দিবে?
আনন্দে মরিয়ম বেগমের চোখ ভরে এলো। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছেন।
আফরান আলমারি খুলে এক নজর তাকাল তার গিটারের দিকে। হাত বাড়াতে হাত কাঁপছে। আলতো করে চোখ বুজে নিল। কানে টিংটিং শব্দ প্রতিধ্বনি হচ্ছে। খুব চেনা এই শব্দ। বুকের বাপাশে হাত রেখে অনুভব করছে এই ধ্বনি। কোথায় শুনেছে এই ধ্বনি? ভাবতে লাগলো। চোখের সামনে ভাসছে ফুরফুরে শীতল হাওয়ায় ওয়াইন্ড চিমন দুলছে। তারই টিংটিং শব্দ। কোথায় যেন দেখেছে এই ওয়াইন্ড চিমন, শুনেছে এই শব্দ।
আফরান — নূর।
নূরের বারান্দায় দেখেছিল। মনে পড়তেই আফরান মুচকি হাসলো। কাঁপা হাতে গিটার হাতে নিল।
♪♪♪♪
“””যার ছবি এই মন এঁকে যায়,
যার কথা ভেবে দিন কেটে যায়,… …..(২)
সেকি জানে শুধু তাকে
ভালোবাসে আমার হৃদয়।
যার ছবি এই মন এঁকে যায়।”””
কাজল কালো দুটি চোখে
সে যখনই আমায় দেখে,
পড়েনা চোখেতে পলক
আর আসেনা কথা মুখে।
তার চলে যাওয়া, ফিরে একটু চাওয়া
এই বুকেতে ঝড় তুলে যায়..
…..ঐ…..
বলবো কবে তাকে ডেকে
আমি তোমাকে ভালোবাসি,
করেছে পাগল আমাকে
ওগো তোমার ওই মিষ্টি হাসি।
কবে জানবে তুমি, কবে বলবো আমি
কেউ আছে গো তোমার আশায় ..
যার ছবি এই মন এঁকে যায়
যার কথা ভেবে দিন কেটে যায়,
সেকি জানে শুধু তাকে
ভালোবাসে আমার হৃদয়।
যার ছবি এই মন এঁকে যায়।
♪♪♪♪♪
আচমকা পুষ্প নূরকে জড়িয়ে ধরে। নূর অবাক হয়ে তাকায়।
পুষ্প — দ্যাটস হুয়াই আই লাভ ইউ সো মাচ। আমার জানপাখি। (জড়িয়ে ধরে দুলছে)
নূর কিছু না বুঝে তাকিয়ে আছে পুষ্পর দিকে। পুষ্প এক গাল হেসে ফোন এগিয়ে দিল। আফরানের একটু আগে গাওয়া গানের ভিডিও। নূর মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় শুনছে গান। সম্পূর্ণ ভিডিও-তে আফরান চোখ বুজে আছে। মাঝে মাঝে এক গাল হেসে দেয়। উফফ সেই হাসিতে যেন নূরের দম আটকে আসছে। খোঁচা খোঁচা দাড়ি, এলোমেলো চুলে বেশ লাগছে। হঠাৎ চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে গেল। ভিডিও শেষে যখন দেখল “Thank you Miss Khitkhit”।
হঠাৎই নূরের লজ্জা হতে লাগলো। আজব। এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে? এই ভেবে আবারও লজ্জা পেল। ফোনের রিং হতেই ধ্যান ভাঙল। আচেনা নাম্বার।
নূর — হ্যালো?
আফরান — মিস খিটখিট। আমি ভার্সিটির বাইরে ডানের মোড়ে অপেক্ষা করছি। কাউকে কিছু না বলে চুপচাপ চলে এসো।
আফরান ফোন কেটে দিল। নূর ফোন এখনো কানে দিয়ে আছে। হঠাৎ বুকের ভেতর ধুকপুকানি শুরু করল। গলাটা শুকিয়ে আসছে।
নূর — গাইজ আমার কিছু কাজ আছে। আমি আসি। ওকে বাই।
কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল। রিহানের ডাকে থেমে গেল। অস্থির হয়ে পিছন ফিরে তাকাল।
নূর — (রিহান কি কিছু আন্দাজ করতে পেরেছে?)
রিহান — ওই দিকে কোথায় যাচ্ছিস? রাস্তা এদিকে।
নূর জোর পূর্বক হেসে সেদিকে গেল। সবাই অবাক চোখে নূরের দিকে তাকাল। হঠাৎ আবার ওর কি হলো? ভাবছে সবাই।
নূর গেইটের বাইরে এসে কাঁপতে লাগলো। যতই সামনের দিকে এগুচ্ছে ততই তার হৃদস্পন্দন বাড়ছে। সামনে তাকাতেই পা দুটো অচল হয়ে গেল। আফরান গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো। বাঁকা হাসি দিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। ফোন রিং হতেই নূর তড়িঘড়ি ফোন রিসিভ করল।
নূর — হ্যালো?
আফরান — দাঁড়িয়ে আছ কেন?
নূর — (অবাক হয়ে তাকাল) না মানে… আসছি।
.
.
.
চলবে
বিঃদ্রঃ গল্প কাল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এমবি না থাকার কারণে দেওয়া হয়নি।