Ragging To Loving 2পর্ব-৩৯

0
2053

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ৩৯
#রিধিরা_নূর

নূরের পা কাঁপছে। ধুকপুক ধুকপুক শব্দে বারংবার কেঁপে উঠছে। হঠাৎ এতো ভয় হচ্ছে কেন ভেবে পাচ্ছে না। ব্যাগ নিয়ে মোচড়ামুচড়ি শুরু করল। গভীর নিশ্বাস নিয়ে সাহস নিয়ে এগিয়ে গেল। দু’পা এগুতেই কলার খোসায় পা পিছলে ধড়াম করে পড়ে।

নূর — আহহ আমার কোমর শেষ।

আফরান ভয়ে আঁতকে উঠল। কিন্তু তার পূর্বেই যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। নূর পিছলে পড়ার সময় ব্যাগ উড়ে ছিটকে পড়ে রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা কুকুরের উপর। কুকুরটা গর্জে বুক্কন দিয়ে উঠে। নূর ভয়ার্ত দৃষ্টিতে কুকুরের দিকে তাকাল। কুকুরটাও ভয়ংকর শব্দে বুক্কন দিতে লাগলো। নূর জোর পূর্বক হেসে হাত নেড়ে “হাই” বলল। কুকুরটা আরও গর্জে ঘেউ করে উঠল।

নূর — আয়ায়ায়ায়ায়ায়া…….

চিৎকার করে উঠে দৌড় দিল। আফরানকে বলল দ্রুত গাড়ি চালু করতে। আফরানও সাত পাঁচ না ভেবে গাড়ি চালু করল। নূর দৌড়াচ্ছে তার পিছে কুকুরটাও দৌড়াচ্ছে।

নূর — এবার বুঝতে পারলাম কেন এতো ভয় হচ্ছিল। কেন বুকের ভেতর ধুকপুক করছিল। কুত্তার দৌড়ানি খাবে তাই আগে থেকেই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছিল।

গাড়িতে উঠা মাত্রই আফরানকে ঝাঁকাতে লাগলো।

নূর — তাড়াতাড়ি তাড়াতাড়ি কুত্তা আসছে আমাকে কামড় দিবে।

ভয়ে নূর চোখ মুখ কুচকে ফেলে। কুকুর আসার পূর্বেই গাড়ি অনেক দূর এগিয়ে গেল। আফরান এক মনে ড্রাইভ করছে। মাত্রই কি হলো সব মাথার উপর দিয়ে গেল। গন্তব্য পাশ্ববর্তী হওয়ায় দ্রুত পৌঁছে গেল। আড়চোখে পাশে তাকিয়ে দেখে নূর হাত দিয়ে মুখ ঢেকে আছে। স্থির হয়ে সামনে তাকাল। পরক্ষণে ফিক করে হেসে দিল। অট্টহাসি শব্দে নূর হাত সরিয়ে পাশে তাকায়। আফরান পেট চেপে ধরে হাসতে হাসতে এক প্রকার গড়াগড়ি খাচ্ছে। নূর গাল ফুলিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল। কিন্তু আফরানের হাসিতে তার ভীষণ রাগ হচ্ছে। রেগে আফরানের মুখ চেপে ধরল।

নূর — হাসবেন না একদম।

কিন্তু আফরানের হাসি থামছেই না। নূর রেগে আফরানের হাতে কামড় বসিয়ে দিল। আফরানের ভাবান্তর নেই সে হেসেই যাচ্ছে। নূর রেগে গাড়ি থেকে নেমে গেল।

আফরান — নূর। কুকুর…..(চিল্লিয়ে)

নূর না তাকিয়ে উল্টো ফিরে দৌড়ে এলো।।

নূর — তাড়াতাড়ি তাড়াতাড়ি চল। কুত্তা আবার আসছে। (আফরানকে ঝাকিয়ে)

আফরান — (হাসি চাপা দিল) আমি বলছিলাম কুকুর আর আসবে না।

নূর অবাক হয়ে তাকাল। পরক্ষণে বুঝতে পারলো আফরান তার ভয়ের মজা নিচ্ছে।

নূর — আপনি খুব খারাপ। (অভিমান করে) এই রে আমার ব্যাগ রাস্তায় ফেলে এসেছি। আমার ফোন আর ১০৫ টাকা আছে ব্যাগে।

আফরান — পুষ্পকে বলেছি তোমার ব্যাগ নিতে।

সমুদ্রের ঢেউ ধেয়ে আসছে। নূর এক চোখ বন্ধ করে অন্য চোখে সেই ঢেউ দেখছে। সূর্যের আলোর ঝলকানিতে চোখ মেলে তাকাতে পারছে না। আফরান দু’হাতে ডাব নিয়ে এলো। একটি নূরকে এগিয়ে দিল। নূর ঢেউ দেখায় ব্যস্ত। আফরান মুচকি হাসলো। ছায়ামূর্তি দেখে নূর আফরানের দিকে তাকিয়ে ডাব নিল।

নূর — এবার বলুন কেন ডেকেছেন?

আফরান — ওও…উহুম…আ….

নূর — অআই বাদ দিয়ে অর্থবোধক শব্দ বলুন যাতে বুঝতে পারি।

আফরান — থ্যাংক ইউ।

নূর — সেটা ফোনেও বলতে পারতেন। মোস্ট ওয়েলকাম।

আফরান — ফোনেও বলতে পারতাম কিন্তু সামনাসামনি বলতে ইচ্ছে করল। তাই।

নূর — সামনাসামনি বলার হলে ভার্সিটিতে বলতে পারতেন। এখানে আসার কি প্রয়োজন ছিল?

আফরান — সবকিছুতে প্রয়োজন খুঁজতে নেই। মাঝে মাঝে অপ্রয়োজনে কিছু করতে ভালো লাগে।

আচমকা এক ফুটবল এসে নূরের মাথায় লাগে। হাত থেকে ডাব ছুটে পড়ে পায়ের উপর। ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে বসে পড়ল। আফরান বিচলিত হয়ে নূরের পাশে বসল।

নূর — আজকে আমার দিনই খারাপ। প্রথমে কুত্তার দৌড়ানি খেয়েছি, আর এখন দুই দুই আঘাত পেয়েছি। সব আপনার জন্য। কে বলেছিল আপনাকে আজ আমাকে এখানে আনতে? একের পর এক দূর্ঘটনা ঘটতেই আছে। না জানি আরও কি কি দেখতে হবে।

আফরান বিষম খেল। ব্যাথায় নূর ছটফট করছে। কি আর করার এমন অবস্থায় আর থাকা চলবে না। আফরান ড্রাইভ করে মাঝপথে নেমে কিছু আনতে গেল। নূর প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। খানিক বাদেই আফরান এসে একটি প্যাকেট আর পানির বোতল দিল।

আফরান — পেইন কিলার। খেয়ে নাও। ব্যাথা কমবে।
.
.
নূর আফরান তড়িঘড়ি হসপিটালে এলো। হসপিটালের বিছানায় রিহান উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। যন্ত্রণাদায়ক শব্দ করছে। নূর আফরান দুজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আফরান ড্রাইভ করছিল হঠাৎ পুষ্প ফোন করে দ্রুত হসপিটালে আসতে বলে। কি হলো কিছুই বলল না। এখন এসে এসব দেখে সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

আফরান — পুষ্প, কি হয়েছে রিহানের।

রিহান — শালা সব তোর জন্য হয়েছে।

ওয়াসিম — কারেকশন। শালা না সম্বন্ধী। বউয়ের বড় ভাই সম্বন্ধী হয় আর ছোট ভাই হয় শালা। আফরান পুষ্পর বড় ভাই। সেই হিসেবে আফরান তোর শালা না সম্বন্ধী হবে।

রিহান — ওয়াসিম চুপ কর….আহহহ…! এখানে কি জ্ঞাতি সম্পর্কের উপর জ্ঞান দিতে এসেছিস?

আফরান — কি হয়েছে বলবি কেউ?

পুষ্প — তুমি ফোন করার পর আমি নূরের ব্যাগ নিতে গিয়েছি। সাথে রিহানও গিয়েছে। কিন্তু রাস্তায় কুকুর ছিল। তুমি তো জানো আমি কুকুর কত ভয় পায়। তাই রিহান যায় ব্যাগ নিতে। হঠাৎ কি হলো কে জানে? কুকুরটা ভড়কে যায় এবং রিহানকে তাড়া করে। আর… (আড়চোখে রিহানের দিকে তাকাল)

আফরান — আর?

আহিল — কুত্তা এসে রিহানের পশ্চাতে কামড় দেয়।

নূর — রিহ….

নূর রিহানের কাছে যাচ্ছিল আফরান উল্টো দিকে ফিরতেই নূরের পায়ের উপর পা পড়ে। ব্যাথায় নূর কেঁদে দেয়।

নূর — মেরে ফেল আমায়, মেরে ফেল। না জানি আজ কার মুখ দেখে ঘর থেকে বের হয়েছিলাম। সকাল থেকেই একের পর এক দূর্ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। প্রথমে কুকুরের দৌড়ানি খেয়েছি, এরপর ফুটবলের আঘাতে মাথা ব্যাথা করছে, এরপর হাত থেকে ডাব পায়ের উপর পড়ে, আর এখন একই পায়ের উপর পা দিয়ে একেবারে পিষে দিয়েছে। না জানি এখন যদি বাইরে যায় তাহলে ট্রাক এসে একেবারে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।

আফরান — নূর! কি সব অলক্ষুণে কথা বলছ। (চেঁচিয়ে)

নূর — আপনি তো চুপই করুন। সব আপনার জন্যই হয়েছে।

নার্স এসে নূরকে রিহানের পাশের বিছানায় বসালো। পায়ের চামড়া উঠে গিয়েছে। নার্স এন্টিসেপ্টিক লাগানোর পূর্বেই নূর চিল্লাতে লাগলো। ওয়াসিম একবার নূরের দিকে তাকাল, একবার রিহানের দিকে তাকাল।

ওয়াসিম — আসলেই তোমরা দুইজন টুইন। রিহানও একটু আগে এভাবেই চিৎকার করছিল।

নূরের অটল সিদ্ধান্ত সে কিছুতেই এন্টিসেপ্টিক লাগাবে না। খোলা ক্ষতস্থানে ইনফেকশন হবে তাই নার্স তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু নূর বোঝার পাত্রী নয়।

আফরান এসে নূরের পাশে বসল। চোয়াল ধরে নিজের দিকে মুখ করল। আফরান নূরের চশমা খুলে নিল। নূর ভ্রু কুচকে তাকাল। আফরান নিষ্পলক তাকিয়ে আছে নূরের চোখে। গাঢ় কৃষ্ণ বর্ণের চোখ জোড়া, লম্বা চোখের পাপড়ি। চোখ দুটো বড় বড় করে যখন পলক ফেলল।

আফরান — হায়! নূর?

নূর নিঃশব্দে ভ্রু উঁচু করল। যার অর্থ সে প্রশ্ন করছে।

আফরান — নূর? আসলে আমি তোমাকে বলতে চেয়েছি যে, আমি… আমি…

নূর — আপনি একটা খাচ্চোর, খাটাশ, খবিশ, উগান্ডার প্রেসিডেন্ট, দেশি মুলা, বিলাতী বক। আমি জানি।

আফরান — সবসময় শুধু খিটখিট খিটখিট। ভালোই নাম দিয়েছি তোমার। মিস খিটখিট। সিস্টার, এক কাজ করুন। ওকে বড় একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে দেন। যাতে করে ওর খিটখিট বন্ধ হয়।

নূর আফরানের হাত খামচে ধরে।

নূর — না প্লিজ।

নার্স — হয়ে গিয়েছে। তেমন কিছু হয়নি। শুধু চামড়া উঠে গিয়েছে। পায়ে বালি থাকায় ইনফেকশন হতে পারে। এই মলম লাগালে ক্ষত সেরে যাবে।
.
.
পরের দিন ভার্সিটিতে_______________________

আমরিন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। কান্নার জন্য কিছু বলতে পারছে না। আহিল আমরিনের দুই গালে হাত দিয়ে মুখ উঁচু করে ধরল। বুড়ো আঙুল দিয়ে চোখের জল মুছে দিল। কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস করলে আমরিন কিছু বলে না। শুধু কাঁদছে।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here