ফাগুন প্রেম 💛পর্ব: ০২

0
1269

💛 #_ফাগুন_প্রেম_ 💛
❤ লেখনীতে: Bornali Suhana ❤
💚 পর্ব: ০২ 💙
আজ অবশ্য প্রপোজ করার মতো দিন। প্রথমত আজ পহেলা ফাল্গুন মানে বসন্ত উৎসব তার উপর আজকে ১৪ই ফেব্রুয়ারি যাকে বলে ভালোবাসা দিবস। যদিও এসব আমি কখনোই মানি নি তবুও আজকে মানতে ইচ্ছে করছে।
`
ঈশা আর রানু বাইরে বের হয়েছে তাও রিকশা করে। সাহারা ইসলাম কতবার বললেন গাড়ি নিয়ে বের হতে কিন্তু ঈশা শোনার মত পাত্রী নয়। ও রিকশা করেই ঘুরতে চায়। অনেক্ষণ ধরে রিকশা চলছে। একটা শপিংমলের সামনে এসে রিকশা থামিয়ে দুজনে নেমে শপিং করতে ঢুকে গেলো। টুকটাক শপিং করে বেরিয়ে এলো। রানুর হাতে ৪টা ব্যাগ আর ঈশার হাতেও ৩টা ব্যাগ। রানু কতবার বললো,
-“বুমনি আমারে দেন না আমিই নিতে পারুম।”
কিন্তু ঈশা তা না শুনে নিজের হাতেই রেখেছে আর রানুকে বলেছে,
-“তুমি কত নেবে রানীসাহেবা আমাকেও কিছু নিতে দাও।”
ঈশা আর ইভান রানু কে রানীসাহেবা আর দীপুকে রাজাসাহেব বলে ডাকে। কেন জানি আলাদা একটা মায়া কাজ করে ওদের এই ডাকের মাঝে। ওরা এসে কিছু খাওয়ার জন্য একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকুলো। অনেক্ষণ ধরেই রানু খেয়াল করছে একটা সুদর্শন ছেলে ওদের পিছু নিয়েছে সেই শপিংমল থেকে।
-“বুমনি দেহেন না ওই ছেলেডা কহন থাইকা আমাগর পিছু নিছে।”
-“সেটা না হয় দেখবো কিন্তু তোমাকে না কতবার বলেছি এই ভাষায় কথা না বলতে?”
রানু একটু লজ্জা পেয়ে যায়। এক গাল হেসে বলে,
-“সরি বুমনি। আসলে মাঝে মাঝে খেয়ালই থাকেনা।”
-“হুম এখন ঠিক আছে। তা কোন ছেলেটা পিছু নিয়েছে?”
-“ওই যে দেখেন পাশের টেবিলে বসে কেমন ঢ্যাবঢ্যাব কইরা সরি করে তাকাচ্ছে।”
ঈশা এদিক ওদিক তাকিয়ে ওই টেবিলের দিকে নজর দিতেই দেখলো আসলেই ছেলেটা এদিকেই তাকিয়ে আছে।
-“রানীসাহেবা ছেলেটার মনে হয় তোমাকে পছন্দ হয়েছে।”
-“কি যে বলেন বুমনি। আমার কি এখন এমন বয়স আছে নাকি? হিহিহি।”
কথাটা হেসে উড়িয়ে দিলেও লজ্জায় রানুর গাল লাল হয়ে গেছে। ঈশার খুব মজা লাগছে এই বিষয়টা দেখতে। কিন্তু ঈশা খেয়াল করছে ছেলেটা বার বার ওর দিকেই তাকাচ্ছে। কেমন যেনো অসস্থি লাগছে ওর। কোনরকম খেয়েই ওরা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে। কিন্তু রিকশাতে উঠতেই দেখে ছেলেটা আরেকটা রিকশা নিয়ে ওদের পিছু পিছুই আসছে। ঈশার মাঝে এখন এই জিনিসটা খুব ভালোই লাগছে। প্রথম এমন কিছু হচ্ছে ওর সাথে যে কোন ছেলে এভাবে ওর পিছু নিয়েছে। বাসার সামনে এসে নামতেই ছেলেটা কিছুদূর ওর রিকশা থামিয়ে দেয়। বারবার ছেলেটার চোখের সাথে চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে। পরক্ষণেই দুজনে চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিচ্ছে। ঈশা রিকশা ভাড়া মিটিয়ে বাসায় ঢুকে গেলো। আর এখানে দাঁড়ানোর কোন কারণ নেই। হয়তো ওই অচেনা ছেলেটাও এতক্ষণে চলে গেছে।
`
ইভান অনুষ্টান শেষে গেটের সামনে বাইকে বসে আছে। হাতের এক আঙুলের মাঝে চাবি ঢুকিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরাচ্ছে। নিজের মাঝেই একটা আনন্দ বিরাজ করছে। বর্ণালীকে একবার দেখবে বলে বেচারা অনেক্ষন ধরে অপেক্ষা করে যাচ্ছে।।
রুমু সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে বর্ণালীর কাজ দেখছে। মেয়েটা এক হাতে কত সুন্দর করে কাজ সামলে নেয়। এই তো সেদিন ও এখানে আসলো। আজকে সবার প্রিয় একজন। প্রিন্সিপাল স্যার সবসময় ওকেই সবকিছুর দ্বায়িত্ব দেন। ওর মতো কেউ এতো সুন্দরভাবে দ্বায়িত্ব পালন করতে পারেনা।
-“কিরে চল কাজ তো শেষ।”
-“হুম চল।”
দুজনে একসাথে গেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যে নেমে আসতে আর বেশিক্ষণ নেই। সূর্যকুমার আর দেখা যাচ্ছেনা। হয়তো এই বিশাল বিশাল বিল্ডিংয়ের ওপারে লুকিয়ে নিয়েছেন নিজেকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের শহরে ডুব দেবেন। আর জেগে উঠবেন চন্দ্রাবতী। উনার আবার অনেক ক্ষমতা। তাইতো সবসময় সাথে কোটি কোটি দাসদাসী নিয়েই মহল থেকে বেরিয়ে আসেন। যাদের বলা হয় তারারাজি। আকাশের তো সেই কি রাজ কপাল। সবসময় সুখ আর সুখ। আর সুখী থাকবেই বা না কেন তার যে সূর্যের সাথে বন্ধুত্ব আর চাঁদের সাথে প্রেম আছে। কিন্তু না আজ আকাশ অন্য কথাই জানান দিচ্ছে। চাঁদের সাথে অভিমান করেছে। আজকে আর আকাশের বুকে মনে হয় চাঁদকে দেখা যাবেনা। আকাশের বুকে মেঘ জমে আছে। শুধু চাঁদের অপেক্ষা সে কখন এসে অভিমান ভাঙাবে আর আকাশ তার অভিমান কান্নার ছলে বৃষ্টিরুপে ঝড়িয়ে নিজেকে শান্ত করে নেবে। তার বুকে ঠাঁই দেবে আবারো চাঁদকে। আকাশটা যে বড্ড বেহায়া কখনোই চাঁদের সাথে অভিমান করে থাকতে পারেনা। মাঝে মাঝে সূর্যকুমারের সাথেও রাগ করে কিন্তু বন্ধুর সাথে কি আর রাগ করে থাকা যায়? কখনোই না। সূর্যকুমার খুব ভালোকরেই আকাশের রাগ ভাঙাতে জানে। এসব আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতেই বর্ণালী রুমুর হাত ধরে সিএনজি স্টেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ অনেক দেরি হয়ে গেছে বাসে করে গেলে আরও বেশি দেরি হয়ে যাবে বাসাতে পৌঁছাতে।
ইভান হা হয়ে রইলো বাসন্তী কিনা তাকে না দেখেই এড়িয়ে যেতে পারলো? সেও হাত ছাড়ার মতো নয়। বাইক নিয়ে পো পো ডাকিয়ে খুব ধীর গতিতে ওদের পেছন পেছন চলছে৷ রুমু খুব বিরক্তি নিয়ে পেছনে তাকিয়ে হেসে আবারো হাটা ধরলো। বর্ণালী কিছুটা অবাক হলো রুমুর কাজ দেখে।
-“কিরে কে ছিলো পেছনে? যাকে দেখে বিরক্তিকর চেহারাখানা হাস্যজ্বল হয়ে উঠলো?”
-“কে আর তোর বসন্তপথিক।”
-“পাগল নাকি? ও আমার হতে যাবে কেন?”
-“তোরই তো। দেখ তুই না নিলে আমাকে দিয়ে দে ভাই।”
-“কি মুশকিল। নে নারে ভাই কে তোকে না করলো? যা নিয়ে আমাকে উদ্ধার কর। ছেলেকে দেখেছিস? কি পিচ্চি একটা ছেলে এখনো দাড়ি উঠে নি আর এসেছে প্রেম প্রস্তাব নিয়ে।”
-“আরে কি বলছিস পিচ্চি কোথায়?”
-“আর ওই তো বললো কলেজে পড়ে।”
-“তো? ও কত কিউট। ওই যে তামিল হিরো আছেনা মাহেশ বাবু? ঠিক তার মতো।”
-“হ্যাঁ হ্যাঁ যা আমার এতো বিয়ের আগে বাচ্চা নিয়ে খেলার ইচ্ছা নেই। হাহাহা।”
-“দেখ ও কিন্তু মোটেও বাচ্চা নয়। ওর মাসসেলস দেখেছিস?”
-“তুই এতো কিছু দেখে নিয়েছিস এর মধ্যেই? আরে বয়সটা দেখ অন্ততপক্ষে। তোর তো আবার এসব বয়স-টয়স লাগেনা। ও তোর টাইপেরই ছেলে। তাই তো তখন কেমন বাই ইভু বলছিলি। ইভান থেকে ডাইরেক্ট ইভু। হুহ ঢংয়ে আর বাঁচিনা। যা প্রেম কর গিয়ে। কি যেনো বলছিলো হ্যাঁ ফাগুন প্রেম।”
-“সে না হয় পরে দেখা যাবে। কিন্তু তোর কেমন ছেলে পছন্দ শুনি?”
-” আমার তো খুব সাধারণ একটা বর চাই। যার সুন্দর চেহারা বা বডি না খুব সুন্দর একটা মন থাকবে। কিন্তু হ্যাঁ দাড়ি থাকতে হবে। এমন বাচ্চা টাইপের ছুলানো মোরগ না।”
-“হুম দেখ শেষে কিনা এমন হলো যে এই বাচ্চা ছেলের ফাগুন প্রেমে পড়ে গেছিস।”
-“তা কখনোই হবেনা।”
দুজনে একসাথে হেসে দিলো। ইভান এখন তাদের পাশে পাশেই চলছে। আর বার বার বর্ণালীকে দেখছে। মেয়েটা অসম্ভব সুন্দরী।
-“এই তোমার বাইক কি এর চেয়ে বেশি ফাস্ট চলেনা?”
রুমু ইভানকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো। বর্ণালী এক পলক তাকিয়ে মৃদু হাসলো।
-“চলে তো কিন্তু এতো সুন্দরী বসন্তকন্যাকে দেখে তো আমার বাইকটাও আমার কন্ট্রোলে নেই।”
-“হাহাহা তাই নাকি? কিন্তু সামনে তাকাও নয়তো আবার দেখো এমন না হলো যে উপরওয়ালার কাছে পৌঁছে গেছো।”
-“উহু এতো তাড়াতাড়ি তো নয়। বাসন্তীর সাথে প্রেম, বিয়ে, বাচ্চা, নাতী নাতনী সবকিছুই তো এখনো বাকী। আগে সব হোক তারপর না হয় উপরওয়ালা নিয়ে নিলেন।”
বর্ণালী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। পাগল নাকি ছেলেটা! যেখানে প্রেমের কোন আভাস নাই আর সে এখনি নাতী নাতনীর স্বপ্ন দেখছে! দুজনের পা থেমে গেছে দেখে ইভান বাইকের ব্রেক কষে।
-“কি হলো থেমে গেলে?”
-“তোমার নাতী নাতনীর স্বপ্ন দেখতে দেখতে আমরা সিএনজি স্টেশনে এসে গেছি।”
ইভান সামনে তাকিয়ে মাথা চুলকে লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বললো,
-“ওহ তাই নাকি! কি করবো বলো বাসন্তী যে আমায় পাগল করে দিয়েছে। আমি তো আর আমার মাঝে নেই রুমু। তোমার ফ্রেন্ডকে বলো না এই অধমের লাভ রিকুয়েষ্টটা এক্সেপ্ট করে নিতে।”
-“রুমু চলতো প্লিজ। দেখ সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আর যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে। আকাশের অবস্থা ভালো না।”
ইভান আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“হুম আকাশেরও আমার মত মন খারাপ।”
বলতে না বলতেই মেঘের বিশাল গর্জন শুনতে পাওয়া গেলো। বর্ণালী কেঁপে রুমুর হাত আঁকড়ে ধরে। ইভান বর্ণালীর ভীত চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে এভাবেও অনেক মোহময় লাগছে। ওরা সিএনজিতে উঠে গেছে দেখেই আবারো বাইকে স্টার্ট দিলো। তাদের এই সন্ধ্যে বেলা একা ছাড়া যাবেনা। তারউপর আকাশের অবস্থাও ভালো নয়। সিএনজি চলছে পাশে পাশে ইভান বাইক নিয়ে চলছে। মেঘ গর্জে ওঠে বৃষ্টি ঝরে পড়ছে। বর্ণালীর এই বৃষ্টি জিনিসটা সবসময় ভালো লাগে। কিন্তু আজ ভালো লাগছেনা। শুধু শুধু ছেলেটাকে বৃষ্টি ভিজিয়ে দিচ্ছে। এই ছেলেটা পাগল নাকি? এক দিনে কি কখনো ভালোবাসা হয় নাকি? এভাবে আঠার মতো লেগে আছে কেন আমার পিছু? দেখা যাবে কালকেই গায়েব হয়ে যাবে। বয়সটা কম দেখেই এমন পাগলামো করছে। স্কুল লাইফ থেকে এমন অনেক ছেলেই দেখেছে বর্ণালী৷ কিছুদিন পিছন পিছন ঘোরাঘুরি করে যখন পাত্তা দেয় না তখনি হারিয়ে যায় অন্য কারো হাত ধরে। কিন্তু তবুও কেন জানি আজ বর্ণালীর মনে ইভানের প্রতি মায়া কাজ করছে। এটা কি কোন সাময়িক মায়া? নাকি এই মায়া চিরন্তন?
এসব কিছুই এখন বর্ণালীর বুঝের বাইরে। শুধু বুঝতে পারছে যে ছেলেটাকে এভাবে ভিজতে দেখতে একটুও ভালো লাগছেনা।
বৃষ্টি থেমেছে কিন্তু ইভান পুরোপুরি ভিজে ঠান্ডায় জমে গেছে। হাত ও মুখে জমে থাকা পানি হাত দিয়ে মুছে নিলো। সিএনজি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে আছে ওরা পাশে দাঁড়িয়ে আছে ইভানও। রুমুর বাসা পাশেই একটুও হাঁটতে হয়না। এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তবুও ও বাসায় ঢুকে নি। যতক্ষণ না বর্ণালীকে একটা রিকশা খুঁজে দিচ্ছে ততক্ষণ তো যাবেই না। কিন্তু এই সময় একটা রিকশাও পাওয়া যাচ্ছেনা। যাও পাওয়া গেলো তারা যাবেনা। বৃষ্টির দিনে এই এক প্রবলেম রিকশা পাওয়া খুব মুশকিল। ইভান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সন্ধ্যা ৭টা বাজে। রুমুকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“আমার মনে হচ্ছে এই সময় রিকশা পাওয়া যাবেনা।”
-“সেটা আমারো মনে হচ্ছে। বর্ণালী তুই আজ আমার বাসায় থেকে যা।”
-“আরে না বাসায় সবাই টেনশন করবে। আমি বরং হেঁটেই চলে যাই। বেশিক্ষণ লাগবেনা।”
-“মাথা খারাপ তোর? বেশিক্ষণ লাগবেনা মানে কি? এখান থেকে ৫০টাকার ভাড়া তোর বাসা। আর বলছিস বেশিক্ষণ লাগবেনা?”
-“কিন্তু কিছু তো করারও নেই।”
ওদের কথা শুনে আর চুপ করে না থেকে এতক্ষণে ইভান বলে উঠলো,
-“চাইলে আমি হেল্প করতে পারি।”
-“তুমি কি হেল্প করবে?”
-“আমার সাথে তো বাইক আছে আমি তাকে পৌঁছে দিতে পারি।”
-“আরে হ্যাঁ সেটা তো খেয়ালই করিনি। যাহ বর্ণালী পাশেই তোর যাওয়ার ব্যাবস্থা রেখে দুজনে টেনশনে মরছি।”
বর্ণালী চোখ বড় বড় করে রুমুর দিকে চেয়ে আছে। কি আজব ও ভাবলো কিভাবে আমি এই ছেলেটার সাথে যাবো।
-“কি হলো? দাঁড়িয়ে আছিস যে?”
-“পাগল নাকি? ভাবলি কিভাবে আমি চেনা নেই জানা নেই একটা ছেলের সাথে বাইকে যাবো?”
-“তা বেগম সাহেবা বলছিলাম যে, এখানের সব রিকশাওয়ালা কি আপনার চেনা নাকি?”
-“চেনা না হলেও ওরা এখানের লোকাল।”
-“আমিও এখানের লোকাল ওকে? আর রিকশাওয়ালা তো খারাপও হতে পারে। আমি কিন্তু এতোটা খারাপ নই যতটা আপনি ভাবছেন।”
কি ভালোমানুষি দেখানো হচ্ছে বাহ! তুমি থেকে আপনিতে চলে এসেছে। কি আজব ছেলে!
-“দেখ বর্ণালী এর চাইতে কি তো কাছে আর কোন ভালো উপায় আছে? নেই তো? একটা রিস্ক নিয়েই নে।আর আমার মনে হচ্ছে ছেলেটা ভদ্র ফ্যামিলির। তাছাড়া আমাদের কলেজের স্টুডেন্ট হিসেবে পরিচিতই তো।”
-“কিন্তু….”
-“কোন কিন্তু না তুই যা। আর ইভান তোমার মোবাইল নাম্বারটা আমায় দিয়ে যাও।”
-“হ্যাঁ তুলে নাও মোবাইলে আমি বলছি।”
রুমু নাম্বার তুলে কল দিয়ে দিলো ইভানের ফোনে।
-“আমার নাম্বার সেইভ করে রেখে দিও আর হ্যাঁ ওকে নামিয়ে আমাকে একটা কল করে জানিয়ে দিও।”
`
একটু দূরত্ব বজায় রেখে বর্ণালী বাইকে বসেছে। এক হাত দিয়ে বাইকের পেছনে ধরে রেখেছে। এই প্রথম ও বাইকে উঠেছে। এর আগে কারো বাইকে চরে নি।
ইভানের তো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেয়ে গেলো। ভাবতেও পারেনি একদিনে এতো কিছু হয়ে যাবে। তাছাড়া প্রথম কোন মেয়ে তার বাইকে উঠে বসেছে তাও ওর মনের মানুষ। আজ পর্যন্ত ঈশাকেই বাইকে তুলে নি। দুজনেই খুব চুপচাপ বসে আছে। ইভান মাঝে মাঝে লুকিং গ্লাসে বর্ণালীকে দেখছে। যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে রাস্তাটা ওর চেনা। সকালেও এই রাস্তা দিয়ে ও এসেছে বাবার সাথে। শহর থেকে কিছুটা বাইরে যায় এই রাস্তা যেখানে ইভানের বাসা। হুট করেই বর্ণালী এক হাতে ইভানের পেটের দিকে শার্ট খামছে ধরে পিঠের মাঝে মাথা লুকায়। বর্ণালীর উষ্ণ নিশ্বাস গায়ের সাথে লেগে থাকা ভিজা শার্ট ভেদ করে পিঠে এসে লাগছে। ইভানের শরীরে যেনো ৪৪০ ভোল্টের শক লাগে। জীবনে এই প্রথম ওর এমন অনূভুতি হয়েছে। বুকটা ধুকপুক করছে। আসলে বজ্রপাতের আওয়াজে বর্ণালী ভয় পেয়ে এমন কাজ করেছে। যখন বুঝতে পারলো ও ইভানকে জড়িয়ে আছে তড়িঘড়ি করে ছেড়ে ঠিক হয়ে বসে। লজ্জায় আর ভয়ে চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা নিশ্বাস নেয়। ইভান ওর এমন চেহারা দেখে কেমন করে তাকিয়ে আছে। বর্ণালীর চোখ লুকিং গ্লাসে পড়তেই দেখে ইভান ওর দিকে চেয়ে আছে।
-“সা….সামনে তাকান। নয়তো কোন অঘটন ঘটে যেতে পারে।”
-“যা অঘটন ঘটার তা তো ঘটেই গেছে।”
লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নেয় দুজনেই। আবারো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। ইভান বাইক খুব ধীরে চালাচ্ছে। ইচ্ছে করছেনা এই পথটা শেষ হয়ে যাক। মন চাইছে আরো অনেক অনেক দূর এভাবেই দুজনে একসাথে থাকুক। কিন্তু তা আর হলো না।
-“থামুন এসে গেছি।”
-“এখানে?”
-“হুম।”
ইভান বাইক থামায়। বাম পাশে একটা পাকা দালানের উপর টিনের চাল দেয়া ঘর। অনেক বড় জায়গা জোরে আছে বাড়িটা। এক পাশে পুকুর অন্য পাশে একটা সুপারি বাগান। বর্ণালী নামতেই নিজের উপর কারো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বর্ষণ হতে দেখে। ওদের ডান পাশে সুন্দর সুঠাম দেহের একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। সামনের বাসার গেট থেকেই বের হয়েছে। বর্ণালী কিছুটা হচকচিয়ে যায়। তবু নিজেকে শান্ত করে বাসার দিকে পা বাড়ায়। কিছুদূর গিয়ে আবারো ফিরে আসে।
-“থ্যাংক ইউ।”
-“এখন তো বিশ্বাস হলো? আমি এতোটাও খারাপ নই।”
-“আসলে সরি।”
-“আরে বাপরে এতো দেখি থ্যাংকস আর সরির বন্যা বসিয়ে দিচ্ছ। থাক এসবের কিছুই লাগবেনা আমার। বাসায় যেতে বলবেনা?”
-“হু!”
বর্ণালী কিছুটা ভয় পেয়ে যায় এভাবে যদি একটা ছেলেকে বাসায় নিয়ে যায় তাও সন্ধ্যে বেলায় না জানি বাসার সবাই কত কি ভেবে নেয়। ইভানের বুঝতে বাকি থাকলো না।
-“হাহাহা সরি মজা করছিলাম। আসি তাহলে। কাল দেখা হবে।”
-“আচ্ছা।”
-“তার মানে কাল দেখা হচ্ছে?”
মেয়েটা আবারো ভয় পেয়ে যায়। না বুঝেই নিজের অজান্তে আচ্ছা বলে দিয়েছিলো। ইভান খুব করে খেয়াল করছে পাশের গেটের ছেলেটা ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। কিন্তু কেন! ছেলেটা বর্ণালীর দিকে কেমন রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।
-“আচ্ছা ভেতরে যাও। ভিজে যাচ্ছ তুমি। আর আমি চাইনা ভেজা শরীরে তাও সাদা শাড়িতে আমি ছাড়া অন্য কোন পুরুষ মানুষ তোমাকে দেখুক।”
এমন কথা শুনে ও চোখ কুচকে তাকায়। ঠান্ডায় কেমন কাঁপছে। শাড়ির আঁচল টেনে পিঠের দিকে পেচিয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করছে। একবার সামনে চেয়ে দেখলো সামনে দাঁড়ানো ছেলেটা এখনো ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
-“আসি আল্লাহ হাফেজ।”
-“হুম যেতে দিতে তো ইচ্ছে করছেনা তবুও যেতে দিতে হবে। যাও আল্লাহ হাফেজ।”
বর্ণালী আর কিছু না বলেই বাসার দিকে পা বাড়ায়। কাঠের তেরী গেট ঠেলে বর্ণালী বাসায় ঢুকে গেলো। দেখতে দেখতেই চোখের আড়াল। ইভান আর দাঁড়িয়ে না থেকে বাইক স্টার্ট দিলো। এক পলক ওই গেটের দিকে তাকিয়ে দেখলো ছেলেটাও আর নেই।
`
কলিংবেল চেপে ধরে আছে ইভান। রানু এসে দরজা খুলে দেয়।
-“ভাইয়ার এতো দেরি হইলো যে?”
-“ওই তো একটু দেরি হয়ে গেলো আর কি।”
আমার বাসায় সন্ধ্যা ৭/৮টা বাজলেই দেরি হয়ে যায়। মা বাবার কাছে এখনো ছোট বাবুই রয়ে গেছি। বর্ণালীর বাসা থেকে আমাদের বাসা প্রায় ২০মিনিটের রাস্তা। ভালোই হলো প্রতিদিন এক সাথে যাওয়া যাবে। এসব ভেবে ভেতরে ঢুকছিলাম। রানুকে জিজ্ঞেস করলাম,
-” মা আর বুমনি কোথায়?”
-“আম্মা আর বুমনি ওই তো টিভি দেখে। আপনি তো পুরাই ভিইজা গেছেন।”
-“হু ভিজবো না! বাইরে যা পরিমাণ বৃষ্টি।”
মা আমাকে দেখেই বললেন,
-“কি রে সকালে গেলি আর এখন আসলি? কোথায় ছিলি সারাদিন?”
-“কলেজে অনুষ্টান ছিলো মা। তাই দেরি হয়ে গেছে।”
-“তোকে দেখে তো অন্য কিছুই মনে হচ্ছে।”
-“মানে কি? কি মনে হচ্ছে?”
-“তোরা থামবি? যা তো ইভান চেঞ্জ করে আয়। ঠান্ডা লেগে যাবে নাহলে। এমনিতেই ভিজে আছিস।”
-“হ্যাঁ ভেজা বিড়াল।”
-“মা দেখো বুমনি শুধু শুধু আমার সাথে লাগছে।”
-“তুই আঠা নাকি যে তোর সাথে লাগবো?”
-“ইস ইভান যা না বাবা আর কথা না রুমে যা।”
ইভান আর কথা না বাড়িয়ে রুমে চলে এলো। শাওয়ার নেয়া প্রয়োজন নয়তো শরীর ভালো লাগবে না।
হাঁচি দিতে দিতে নিচে নেমে এলো ইভান। একে তো বৃষ্টিতে ভেজা তারউপর এখন শাওয়ার নিয়েছে। ঠান্ডা লাগারই কথা। এসেই ধুপ করে সোফায় বসে ঈশার থেকে রিমোট নিয়ে নেয়।
-“এই ভালো হবে না বলছি রিমোট দে।”
-“আরে ভালো স্টুডেন্টরা টিভি দেখে না যা গিয়ে পড়।”
-“খাবার দিচ্ছি টেবিলে খেতে আয় দুজনে।”
-“তোর একজন সাথী পেয়ে গেছি। তুই চাইলে মাকে বলে খুব শিঘ্রী বাসায় নিয়ে আসবো।”
-“বলিস কি? প্রথম দিনেই বৌ খুঁজে নিলি? দেখতে কেমন? বাড়ি কোথায়? থাকে কই? করে কি? পড়ালেখা করছে?”
-“আরে আরে ধীরে। একসাথে এতো প্রশ্ন! এসব জেনে লাভ নেই এর চেয়ে সরাসরি দেখে নিস।”
ঈশা সেখানেই স্তব্ধ হয়ে ছোট ভাইয়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। যেখানে ও এখনো প্রেমই করলো না আর সেখানে কিনা তারই ছোট ভাই বিয়ে করে বাসায় বউ নিয়ে আসার কথা বলছে।

#______চলবে…………
গত পর্বের লিংক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here