ফাগুন প্রেম পর্বঃ ৪৯

0
533

#_ফাগুন_প্রেম
পর্ব: ৪৯
লেখনীতে : Bornali Suhana
💛
💛
বাইরে আসতেই দূর থেকে লাইটের আলোয় ইভানকে দেখতে পাচ্ছে বর্ণালী। আশেপাশে মানুষজনের আনাগোনা অনেক বেশি। সবার চোখকে ফাঁকি দেয়া সম্ভব না। তবুও একরকম দৌড়ের উপর গাড়ির পাশে চলে যায় দুজনে। রুমু গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে বর্ণালীকে ভেতরে যেতে বলে। বর্ণালীর তাকানো দেখেই রুমু ভয় পেয়ে যায়। মনে হচ্ছে যেনো রুমু তাকে কোন নদীতে ঝাপ দিতে বলেছে। ইভান গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। বর্ণালী চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। রুমু একটু একটু করে তাদের থেকে সরে যাচ্ছে। আবারো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। বর্ষাকালে এই বৃষ্টি কোন সময় অসময় দেখে না। হুটহাট শুরু হয় যায়। নিজের হাত দিয়ে নিজের এপাশ ওপাশ ঢেকে বৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে বর্ণালী। ইভান ওর হাত ধরে একটা গাছের ছায়ায় নিয়ে যায়। রুমু ততক্ষণে গাড়িতে উঠে বসেছে। এই বৃষ্টিতে ভিজলে নিশ্চিত ওর জ্বর আসবে। আর এই মুহুর্তে সে অসুখ বাঁধাতে চায় না। এমনিতেই আশেপাশের সবাই ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত। দুজনে পাশাপাশি নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে। ইভানের গা বর্ণালীর শরীরের সাথে লাগতেই ওর থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে দাঁড়ায়। বৃষ্টির পানিতে ভিজে ঠান্ডা লাগছে। এই পানিটা এতো ঠান্ডা কেন! বরফের পানি গলে যতটা ঠান্ডা হয় তার চেয়েও বেশি ঠান্ডা এই পানি। আর কিছুক্ষণ থাকলে ঠান্ডা লেগেই যাবে। বর্ণালী যেইনা যেতে চাইলো ইভান ওর হাত ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে দাঁড় করায়। এমনিতেই শীতে কাঁপছিলো ইভানের এভাবে কাছে নেয়ায় ওর কাঁপুনি আরো বেড়ে যায়। নীচের ঠোঁট খুব বেশি কাঁপছে ওর। ইভান ওকে আরো কাছে টেনে নেয়। গাছের পাতা হতে টুপটুপ করে পানি বর্ণালীর চোখের উপর পানি পড়তেই চোখ বন্ধ করে নেয়। আবার খুলে উপরে গাছের দিকে তাকায়। পানি চোখ থেকে গাল বেয়ে চিবুকের একটু ডান পাশে আসতেই ইভান ঠোঁট স্পর্শ করায়। ও শিউরে ওঠে চোখ বন্ধ করে নেয়। শার্টের কলারের পাশে হাত দিয়ে খামচে ধরে। ঠোঁটের স্পর্শ গভীর থেকে আরো গভীর হচ্ছে। আলতো করে কোমড়ের পাশ থেকে ডান হাত ধীরে ধীরে উপরের দিকে তুলতে লাগে ইভান। শক্ত হতে লাগে বর্ণালীর হাতের মুঠো। ইভানের ঠোঁট চিবুকের নিচে নামতে থাকে। গলা থেকে কানের পাশে নিয়ে আলতো করে ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে। উষ্ণ নিশ্বাসের একেকটা স্পর্শ যেনো একেকটা কথা বলছে।
-“এবার তো বলো ভালোবাসি…..”
কানের মাঝে এমন একটা কথা আসতেই বর্ণালী চোখ খুলে খালি গলায় ঢোক গিলে। আবারো চোখ বন্ধ করে গভীর নিশ্বাস নিয়ে ইভানকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে ঠেলে দেয়। ছিটকে গিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা খায় সে। পড়েই যাচ্ছিলো হাত দিয়ে ধরে নেয়। বর্ণালীর জান বেরিয়েই যাচ্ছিলো। ইভানের পড়ে যাওয়া দেখে হালকা স্বরে ইভান বলে এগিয়ে আসতে গিয়েও থমকে যায় ওর হাতের ইশারায়। ইভান হায় তুলে এগুতে না করে। কনুয়ের পাশে জ্বলছে ওর মনে হয় ছিলে গেছে। চোখে জল নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। সে গাড়িতে উঠতেই রুমু বলে,
-“কি হলো ইভান?”
-“কিছু না রুমু। ওর কাছে যাও তুমি, আমি বাসায় যাচ্ছি।”
-“তোমার কনুইয়ের পাশে তো অনেকটা জায়গা ছিলে গেছে, রক্ত বেরুচ্ছে।”
-“হুম ভালোবাসার দেয়া আরেকটা উপহার।”
কথাটা বলেই ইভান মৃদু হাসে। রুমুর আর বোঝার বাকি নেই বর্ণালী আবারো উল্টো কিছু করেছে। তাই আর কোন কথা না বলে বেরিয়ে যায় গাড়ি থেকে। সাথে সাথে ইভান স্টার্ট দিয়ে চলে যায়। বর্ণালী ঠায় দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছে। আজ যে সে আরো একবার তার ভালোবাসাকে কষ্ট দিয়ে দিলো।
-“ন্যাকা কান্না করছিস কেন?”
রুমুর কথায় কোন জবাব দেয়না সে। তার কোন জবাব দেয়ার নেই। যেভাবে আজ ইভানকে কষ্ট দিয়েছে তারপর ওর কান্না করাটা মানায় না। তাহলে কেন সে কান্না করছে! তার এই কান্নাকে তো যে কেউই ন্যাকা কান্না বলবে।
-“তুই ইভানকে কষ্ট দিয়ে কি খুশি আছিস? নিজেও তো কান্না করছিস। তাহলে কেন ওকে এভাবে কষ্ট দিস তাও বারবার। সে তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে তাই তো তোর হাজার অবহেলা, অবজ্ঞাকে ভুলে আবারো ফিরে আসে তোর কাছে। এটা তুই কেন বুঝতে চাস না?”
বর্ণালী কোন কথা না বলে ভেতরে যাবার জন্য পা বাড়ায়।
-“পালাচ্ছিস আমার এই প্রশ্নগুলো থেকে নাকি নিজের অনুভূতি থেকে?”
তাও একটা শব্দ বের করে না সে এমনকি দাঁড়ায়ও না। ভেতরে ঢুকতেই দেখে ওর কাজিনরা বেশ জমে গেছে গানের কলি খেলায়। ওকে দেখেই জয় এগিয়ে আসে। কিন্তু মাঝখান দিয়ে জেনি এসে পড়ে।
-“আরে আপু ভিজলে কীভাবে?”
-“আরে ওই রুমু নিয়ে ভিজিয়ে দিলো।”
-“হ্যাঁ রে আমার প্রচন্ড ইচ্ছে করছিলো বৃষ্টিতে ভেজার।”
রুমু পেছন নিজের চুল ঠিক করতে করতে থেকে জবাব দেয়। জেনি বর্ণালীর একদম কাছে এসে বলে,
-“এই জয় ছেলেটা এমন চিপকো কেন?”
-“কেন? কী করছে?”
-“আরে যেইনা দেখলো তোমরা বাইরে গেছো বারবার জিজ্ঞেস করতেছিলো যে, কোথায় গেলে আর কতবার বাইরে যাবার জন্য উঠলো। কিন্তু আমি কি আর কম নাকি? এই চিপকোটাকে এমনভাবেই চিপকাইছি যে আর উঠতে পারেনাই হিহি।”
বর্ণালী জয়ের দিকে তাকিয়ে রুমে চলে যায়। জয় ওর পিছু যেতে নিয়েও থমকে যায়। রুমু সব কান পেতে শুনছিলো। জেনির কথায় খুশি না জয়ের উপর রাগবে বুঝতে পারছেনা। তবে আজকে মেয়েটা কাজের মতো কাজ করেছে।
-“যা একটা কাজ করেছিস না পিচ্চিটা। আয় বুকে আয়৷ না থাক পরে আসবি নে এখন ভিজে গেছি।”
জেমি থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা দুজনই তাকে রেখে চলে যায়।
রুমু চুল ঠিক করতে করতে সামনের দিকে যাচ্ছিলো ওমনি সজিবের সাথে ধাক্কা খায়। সজিবও ভিজে আছে। রুমুর হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ কি এমন হলো যে এভাবে ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে! কিছুই বুঝতে পারছেনা।
-“সজিব কী করছো? এভাবে কেন টানছো? কী হলোটা কী তোমার?”
তার কোন কথার উত্তর না দিয়ে নিজের রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। দরজার সাথে রুমুকে ঠেকিয়ে ওর একদম মুখের কাছে মুখ এনে বলে,
-“ইভানের সাথে বর্ণ কী করছিলো হ্যাঁ? আর তুই ইভানের গাড়িতে বসে ওদের পাহারা দিচ্ছিলি? তোর কি মাথায় সামান্যতম বুদ্ধি নেই? এতোটাই মাথামোটা তুই? আমার বোনকে তুই নষ্ট করছিস? এই সেই ছেলে না যার জন্য বর্ণ এতোটা দিন ঘরবন্দী ছিলো?”
-“ছাড়ো সজিব। কী করছো?”
-“আমি কী করছি? করেছিস তো তুই। তুই আমার বোনের সাথে এভাবে করতে পারলি? ওর থেকে বয়সে একটা ছোট ছেলের সাথে ওকে প্রেম করতে সুযোগ করে দিচ্ছিস?”
-“ছাড়ো সজিব। আমার হাতে ব্যাথা পাচ্ছি। আমার কথা শুনো আগে।”
-“কী শুনবো হ্যাঁ? আর কি শুনাবি তুই?”
রুমুর চোখ দিয়ে অবিরত জল ঝরছে। সজিব ওর হাত এমনভাবে ধরেছে যে ওর হাতে স্পষ্ট লাল দাগ হয়ে গেছে। রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। আর সইতে না পেরে রুমু সজিবকে ধাক্কা দিয়ে দেয়। চোখের জল মুছে এক হাতে অন্য হাত ঘষতে লাগে। সজিবের এমন রুপ সে কখনোই দেখেনি। সজিব আবারো তেড়ে আসে ওর দিকে। দু’বাহু ধরে দরজায় চেপে ধরে বলতে লাগে,
-“কাল পর্যন্ত সময় দিলাম। আমি যেনো আমার বোনকে ওই ছেলের সাথে না দেখি।”
রুমুর চোখ দিয়ে এখন প্রায় রেগে আগুন বের হচ্ছে। ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। রাগের সময় তাকালে অনেকের চোখ বড় হয় কিন্তু ওর চোখ বরাবরই ছোট হয়। হাত জ্বালা করছে ওর। কিন্তু না এবার তাকে আর চুপ থাকলে হবেনা। অনেক সহ্য করেছে আর না।
-“পেয়েছো কি তুমি হ্যাঁ? নিজে প্রেম করলে কিছুনা আর তোমার বোন প্রেম করলেই সমস্যা না? ভালোবাসা কি বোঝো? ইভান বর্ণকে ভালোবাসে আর বর্ণ ভালোবাসে ইভানকে। আর এটা তোমার মেনে নিতেই হবে।”
রুমুর এমন কথায় সজিবের হাত আরো শক্ত হয়ে আসে। দাঁত চেপে ব্যাথা সহ্য করছে সে। কলিজার টুকরো বান্ধবীর জন্য এই ব্যাথা তো কিছুই নয়। সে আরো ব্যাথা সহ্য করতে পারবে। সজিবের চোখ লাল হয়ে গেছে। চোখে জল টলমল করছে। তীব্র রাগে কাঁপছে সে। রুমুর এতোটাই কাছে এসেছে যে ওর ভেজা চুল থেকে জল গড়িয়ে রুমুর মুখে গলায় বেয়ে পড়ছে। রাগে সে বুঝতে পারছেনা কি করছে না করছে।
#______চলবে………..

Previous
https://www.facebook.com/103632171307142/posts/130367665300259/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here