#ফাগুন_প্রেম
পর্ব: ৫৪
লেখনীতে: Bornali Suhana
💛
💛
রুমুর ফোনে রিং হতেই স্ক্রিনে তাকিয়ে নাম্বার দেখতেই ওর ঠোঁটের কোণের হাসিটা যেনো কোথাও হারিয়ে যায়। ওদেরকে কথা বলতে রেখে ফোন নিয়ে আড়ালে গিয়ে রিসিভ করে।
-হ্যাঁ বলো
-………….
-কখন?
-………….
-সব ঠিকাছে তো?
-……………….
-আচ্ছা, পরে কথা হবে রাখছি।
কল কেটে পেছনে তাকিয়ে বর্ণালী আর ঈশাকে দেখে অনেকটা ঘাবড়ে যায় রুমু। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে ঠোঁটের কোণে ইয়া বড় হাসি ঝুলিয়ে ওদেরকে জড়িয়ে ধরে। দুজনেই অবাক হয়ে ওকে ছাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
-কি হইছে তোর?
-কই কি হইছে?
-কার সাথে কথা বলছিলি? আর কি ঠিক আছে কিনা জিজ্ঞেস করলি?
-ওহ হ্যাঁ আরে ওই ভাবী ছিলো। সে পরশু তার বাড়ি যাবে তো তার সাথে বাড়িতে যেতে বলছে।
-যাবি?
-দেখি কি করা যায়। সেই ভাইয়ার বিয়ের সময় গিয়েছিলাম আর যাইনি। সে যতবারই যায় আমায় বলে কিন্তু ব্যাস্ততার কারণে যেতে পারিনা আমি।
কথা শেষ করতেই সবাই হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে ছাঁদ থেকে নেমে আসে। যাবার সময় ঘনিয়ে এসেছে। সজিব নীচে এসে ঈশার দিকে তাকাতেই ঈশার হাসি মুহুর্তেই উড়ে যায়। রুমু আলতো করে সরে যায় ওদের পাশ থেকে। সজিবের সামনে আসতেও যেনো ওর কেমন অস্বস্তি লাগছে। ইভান একটু একটু করে সরে বর্ণালীর সাথে একেবারে ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে। বর্ণালী মাথা উপরের দিকে নিয়ে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। এভাবে তাকানোর মানে হচ্ছে সে ওর থেকে যেনো সরে দাঁড়ায়। কিন্তু ইভান কি আর কারো কথা শুনার পাত্র! সে ঈশার কথা ছাড়া কখনোই কারো কথা শুনেনা। সবার ভীড়ে হুট করেই বর্ণালীর হাত ধরে নিজের হাতের ভেতর নেয়। কয়েকবার হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে নাছোড়বান্দা হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। ওর হাতের তালুতে ইভান তার আঙুল দিয়ে কিসব আঁকিবুঁকি করছে। এমন স্পর্শে ওর সুড়সুড়ি লাগছে। চট করে এক ঝাটকায় হাত ছাড়িয়ে নেয়। ইভান মিটিমিটি হাসছে। বর্ণালীর যে সুড়সুড়ি আছে তা ওর জানা ছিলো না। না জানি এখনও আরো কত কিছু তার অজানা।
👇
ঈশা গাঢ়তর গোলাপী রঙের লেহেঙ্গা পরে বউ সেজে বসে আছে। ভারী গয়নার ওজনে যেনো ও নিজেই ডুবে যাবে। সজিবকে আজ সে নিজের করে পাচ্ছে অথচ কেন জানি ওর মাঝে বিন্দুমাত্র খুশি কাজ করছে না। হয়তো সজিবের ওই কাণ্ডটাই তাকে খুশি হতে দিচ্ছে না।
বর্ণালী
এদিকে সজিবরা বের হয়ে গেছে ম্যারেজ হলের উদ্দেশ্যে। সবাইকে বরণ করে ভেতরে নিয়ে আসা হলো। বর্ণালীর চোখ ইভানকে খুঁজছে। গেলো কই পাগলটা? খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লাগে। চোখ তুলে তাকাতেই দেখেন ইভান। লাল রঙের শেরওয়ানিটায় তাকে এতো আকর্ষণীয় লাগছে কেন! চোখ সরানোই মুশকিল। এতোদিন বর্ণালীর যাকে বাচ্চা ছেলে মনে হতো হঠাৎ করেই যেনো এই বাচ্চা ছেলেটা একজন সুদর্শন পুরুষ হয়ে উঠেছে। গালের মাঝে খোচাখোচা দাড়ি। ঘাড়ের খানিকটা উপরে বিস্তৃত ব্রাউন কালার করা সিল্কি চুল। সামনের দিকে চুল অনেকটা লম্বা হওয়ায় চোখের উপর এসে পড়ে আবার হাত দিয়ে উল্টিয়ে নেয়। এখনও ওর চুলগুলো চোখের উপর এসে পড়েছে। বর্ণালীর ইচ্ছে করছে সরিয়ে দিতে। ইচ্ছেকে কখনো দাবিয়ে রাখতে নেই, পূরণ করে নেয়াই ভালো। পা দু’টো ফ্লোর থেকে আলগা করে একহাত দিয়ে ইভানের কাঁধে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে অন্য হাতে ওর চুলগুলো চোখের উপর থেকে সরিয়ে দিতে লাগে। ইভান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তার বাসন্তীর দিকে। টকটকে লাল শাড়ি, আঁচলটা খোলা রেখেছে। চুলগুলো খোঁপা করে তাতে গেঁথে দিয়েছে কাঁঠালি চাঁপাফুল। সামনের দিকে লেয়ার কাট করা চুলগুলো খোলা রেখেছে। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক আর কাজল বিহীন চোখে কেমন নেশা নেশা লাগছে। বর্ণালীর এতোটা কাছে আসা যেনো মুহুর্তের মধ্যেই ওর সবকিছু ওলট-পালট করে দিলো। ইচ্ছে করছে তার ওই লাল গোলাপের দু’টি পাপড়িতে ঠোঁট বসিয়ে দিতে। চোখ বন্ধ করে গন্ধ নিতে। এই মুহুর্তে বর্ণালীর ঠোঁটকে তার কাছে লাল গোলাপের পাপড়িই মনে হচ্ছে।
আশেপাশের সবকিছু ভুলে ইভানের দু’হাত বর্ণালীর কোমড়ে নিয়ে রাখতে যাচ্ছে হুট করে কোথা থেকে জেনি এসে হাজির হয় তাদের মাঝে। সেও এসে ইভানের চুল মিছেমিছি ঠিক করে দেয়ার ভান করে।
-হ্যান্ডসাম লাগছে বস।
বলেই হিহিহি করে হেসে দেয়। বর্ণালী পা নামিয়ে ইভান থেকে সরে কানের পেছনে সামনে আসা চুলগুলো গুঁজে দিতে দিতে আশেপাশে তাকায়। অনেকেই এদিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জা আর ভয়ে ওর কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে। জেনি ওর হাত ধরে সেখান থেকে নিয়ে ঈশার কাছে যায়। রুমু ওর হাত ধরে কিছুটা পেছনে সরে গিয়ে বললো,
-এভাবে সাবার সামনে শুরু করে কেউ?
-আসলে আমি বুঝতে পারিনি কি করছি না করছি। আমার কোন হুঁশই ছিলো না।
-হ্যাঁ তা থাকবে কেন? ইভান কাছে আসলেই তুই তো আর নিজেতে থাকিস না।
– আসলে!
-হয়েছে আর আসলে আসলে করতে হবেনা। মানুষজনের একটু খেয়াল রাখিস। ইভানের মা-বাবা তোদের দিকেই তাকাচ্ছিলো। না জানি কিছু বুঝলো কিনা!
-সরি রুমু।
-আমায় সরি বলে কী হবে?
-না মানে!
-ঠিকাছে বাদ দে এখন এসব। যা হবে পরে দেখা যাবে।
ঈশার দু’পাশে দুজনে বসে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ইভানও তাদের ছবি তুলছে। কিন্তু ও যতটা ছবি তুলছে সবই একা বর্ণালীর। ফোনের ম্যাসেজ টোন বেজে উঠতেই ওপেন করে দেখে ইভানের ম্যাসেজ।
-একবার হলের করিডোরে আসবে?
ম্যাসেজ দেখেই বর্ণালীর শরীরে একটা শীতল হাওয়া বয়ে যায়। ইভানের দিকে তাকাতেই দেখে ও ঠোঁট নাড়িয়ে প্লিজ বলছে।
-আসছি
ম্যাসেজ পাঠিয়ে ইভানের দিকে চোখ দিয়ে ইশারায় বলে ফোন দেখতে। ম্যাসেজ ওপেন করতেই ওর খুশি কে দেখে! আর এক মুহুর্তের জন্যও দাঁড়ায় না। সোজা করিডোরে চলে যায়। এখানে মানুষের আনাগোনা কম। বর্ণালী ওয়াশরুমের কথা বলে উঠে যায়। জেনি আর রুমু একে ওপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে ফিক করে হেসে দেয়, সাথে ঈশাও। তারা জানে বর্ণালী কোথায় যাচ্ছে। করিডোরে আসতেই ইভানকে দেখে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে এক পা উপরে তুলে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখেই সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
-বলো।
-কি?
-কেন ডাকলে?
-রোমান্স করার জন্য।
-ইভান এই মুহুর্তে তুমি এসবের কোন কিছু করবেনা। ধুর ছাই! আমিও যে তোমার কথায় কেন আসি! যাচ্ছি।
-যেতে দিলে তো যাবে।
হেচকা টানে ওর হাত ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় ইভান। বর্ণালীর হৃদস্পন্দন থমকে গেছে।
-ই….ইভান ছাড়ো।
-তখন কি করছিলে?
-ক…কখন কি করছিলাম?
-সবার সামনে আমার চুল ঠিক করে দিচ্ছিলে কেন? লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে ফেলেছো?
বর্ণালী আসলেই এখন লজ্জায় পড়ে গেছে। কেন যে সে ওই মুহুর্তে এমন একটা কাজ করতে গেলো নিজেও বুঝতে পারছেনা। ইভানকে সে এখন কী বলবে! ইভান ওর চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে হুট করেই খোঁপাটা খোলে চুল ছেড়ে দেয়। বর্ণালী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে।
💛
💛
#____চলবে………
Previous
https://www.facebook.com/103632171307142/posts/131205805216445/