#ফাগুন_প্রেম
পর্ব: ৫৫
লেখনীতে: Bornali Suhana
💛
💛
বর্ণালী আসলেই এখন লজ্জায় পড়ে গেছে। কেন যে সে ওই মুহুর্তে এমন একটা কাজ করতে গেলো নিজেও বুঝতে পারছেনা। ইভানকে সে এখন কী বলবে! ইভান ওর চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে হুট করেই খোঁপাটা খোলে চুল ছেড়ে দেয়। বর্ণালী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে।
-এটা কি করলে ইভান?
-আমার তোমার খোলা চুলই পছন্দ বেশি।
-মানে কী? কেন?
-মানে হলো, যখন তোমার চুলগুলো খোলা থাকে তখন আমি তোমার চুলের গন্ধ নিতে পারি। তোমার চুলের গন্ধে যে আমি মাতোয়ারা হয়ে যাই বাসন্তী।
-হয়েছে তোমার? যাই আমি?
-উহু যে কারণে চুল খোলে দিলাম তা না করেই যেতে দিবো নাকি?
-মানে কী?
-এখন আমি আমার বাসন্তীর চুলের গন্ধ নিবো।
-ই….ইভান এখানে এসব না প্লিজ।
-ঠিকাছে রুমে চলো সেখানে সব করে নিবো।
-ছিঃ ইভান।
-আমি ছিঃ না? তাহলে এবার ছিঃ কাজগুলোই করি?
-নো ইভান, ছাড়ো। ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।
-ঠিকাছে খারাপ কিছুই করো। আচ্ছা তুমি কিছু দেখো নি?
-কী দেখিনি?
-সত্যিই দেখো নি?
-কী দেখবো ইভান?
-তোমার শরীরে কোন দাগ দেখো নি?
বর্ণালী ইভানের কথা শুনে যতটা না অবাক হয় ততটাই লজ্জায় মরে যাচ্ছে। এভাবে কেন কথা বলে এই ছেলে!
-কী হলো? দেখোনি?
-উহু।
-চলো আমার সাথে।
-কোথায়?
-আহা চলো না, ভয় নেই কিছু করবো না শুধু একটা জিনিস দেখাবো।
ইভান বর্ণালীর হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। দুই তলায় উঠে গেস্ট রুমে যায়, যেটা ঈশার জন্য বুক করা হয়েছে।
-এখানে কেন এলাম?
-ওয়েট।
দরজা বন্ধ করে তাকে আয়নার সামনে নিয়ে দাঁড় করিয়ে ইভান ওর পেছনে দাঁড়ায়। আয়নার মাঝেই দুজন দুজনকে দেখছে।
-কী দেখবো তাড়াতাড়ি দেখাও।
-হু দেখাচ্ছি, তুমি চুপচাপ দাঁড়াও।
আলতো করে ইভান তার ডান হাতটা দিয়ে বর্ণালীর পেটের উপর থেকে শাড়ী সরাতে লাগে। ও চট করে তার হাত ধরে বললো,
-ক….কী করছো ইভান?
-হুস, বললাম না চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে? দেখো আগে তারপর কথা বলো।
-কিন্তু…..
-হুস।
ইভান ওর ঠোঁটের উপর আঙুল চেপে চুপ করিয়ে দেয়। বর্ণালী বাধ্য মেয়ের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কী দেখাতে চায় ইভান ওকে?
ইভান আবারো শাড়ি সরাতে লাগলে ও আয়নায় কি তাকাবে উলটো চোখ বন্ধ করে নেয়। হাতের স্পর্শ পেতেই যেনো পুরো শরীর শিউরে ওঠে। হৃদস্পন্দন একদম দ্রুত হয়ে যায়।
-চোখ খুলে দেখো একবার।
বর্ণালী আলতো করে চোখ খুলে আয়নার দিকে তাকাতেই ইভান নীচের দিকে দেখার জন্য ইশারা করে। ও নীচের দিকে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ওর পেটের মাঝে “ইভর্ণ” লেখা। মুহুর্তের মধ্যে বর্ণালীর হৃদস্পন্দন থমকে যায়। কাল তাহলে ইভান এটা লিখেছিলো! এজন্যই পার্লারের মেয়েটা বারবার ওর দিকে তাকিয়ে হাসছিলো। চোখ বন্ধ করে ইভানকে একটা ধাক্কা দেয়। ইভান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
-তুমি এটা দেখো নি? সত্যি?
-কেন এমন করলে ইভান? এজন্য পার্লারের মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বারবার হাসছিলো। কি লজ্জাটাই না দিলে আমায়!
ইভান এখনও হাসছে। বর্ণালীর ঠোঁটে লজ্জামাখা হাসি ফোটে ওঠে যা ইভানের চোখ এড়ায়নি। এক দৌড়ে এসে বর্ণালীকে শক্ত করে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে। ওর মুখটা গিয়ে ইভানের বুকের মাঝে ঠেকে।
-আমার হৃদস্পন্দন শুনতে পারছো বাসন্তী?
-হু।
-জানো কি বলছে এই হৃদস্পন্দন?
-হু।
-কী বলছে?
বর্ণালী চোখ বন্ধ করে বললো,
-তোমার বাসন্তীর কথা।
-ভালোবাসি বাসন্তী।
-হু জানি।
-তুমিও তো বলো একবার।
-সময় হলেই বলবো।
-আর সেই সময়টা কখন আসবে?
-অপেক্ষা করো হয়তো খুব শীঘ্রই আসবে নয়তো অনেক দেরিতেই।
-চলো না বিয়ে করে ফেলি।
-হু চলো।
ইভান চোখ খুলে বর্ণালীর দু’বাহু ধরে বুক থেকে তুলে জিজ্ঞে করে,
-সত্যি? চলো তাড়াতাড়ি।
বর্ণালী চোখ বড় বড় জিজ্ঞেস করে,
-মানে কি?
-মানে হলো তোমার মত বদলানোর আগেই চলো বিয়ে করে ফেলি।
-পাগল হয়েছো?
-পাগল অনেক আগেই হয়েছি। চলো না বিয়ে করে ফেলি।
-হইছে চলো, সবাই হয়তো আমাদের খুঁজছে।
-আগে বিয়ে করবো তারপর যাবো।
-ইভান জেদ করো না প্লিজ।
-আমি যে জেদি তা তো তুমি জানোই। বিয়ে করবো মানে বিয়ে করবো।
-আচ্ছা তা কীভাবে বিয়ে করবে? আর বিয়ে করে বউকে খাওয়াবে কী? পরাবে কী?
-সে সময় আসলে দেখা যাবে। আমার বাবার সবই তো আমার জন্যই। আমিও বাবার বিজনেস দেখবো। সো তোমায় এসব নিয়ে ভাবতে হবেনা। এখন আমরা বিয়ে করবো আমাদের মতো।
-আমাদের মতো বিয়ে মানে?
-আমি ফারহান আহমেদ ও সাহারা ইসলামের ছেলে ইভান আবির আহমেদ ৫০লাখ টাকা কাবিন রেখে আমার বাসন্তীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করিলাম, আলহামদুলিল্লাহ কবুল, কবুল, কবুল। এবার তুমিও বলো।
-মানে কি? এই হয়ে গেলো বিয়ে?
-আহা বলো না হয়ে যাবে।
-আচ্ছা আমি বাবা হাবিব হাসান, মা শারমিন বেগমের মেয়ে বর্ণালী আবির সোহানা আমার বসন্তপথিককে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করিলাম। আলহামদুলিল্লাহ কবুল, কবুল, কবুল।
ইভান বর্ণালীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকের মাঝে।
-ইভান চলো না এবার যাই। সবাই অপেক্ষা করছে।
-হু যাবো তো। বিয়ে হলো এখন বাসর করবো না?
-মা…….মানে কি?
বর্ণালীর ডান গালে চুমু খেয়ে বললো,
-ভালোবাসি বাসন্তী। এটা তো শুধু আমাদের মনের সাথে মনের বিয়ে ছিলো। যেদিন সবার উপস্থিতিতে আমাদের বিয়ে হবে সেদিনই বাসর করবো।
বর্ণালী আলতো হেসে চোখ নামিয়ে নেয়। ইভান ওর চিবুকে হাত রেখে মুখ তুলে বলে,
-এবার আমার পাওনাটা দিয়ে দাও।
-কিসের পাওনা?
ইভানের দৃষ্টি বর্ণালীর ঠোঁটের দিকে। ডান হাতের বৃদ্ধাঙুলি দিয়ে স্পর্শ করতেই ও চোখ বন্ধ করে ঘন নিঃশ্বাস নিতে লাগে। ইভানের হাত ধরে বলে,
-এ…..এখন না ইভান। এখন চলো নিচে যাই।
-ঠিকাছে চলো।
ইভান যেতে নিলেই বর্ণালী ওর হাত ধরে নিজের দিকে ফেরায়।
-শুনো না,
-বলো বাসন্তী।
-রাগ করলে?
-রাগ করছি বললে কি আমার পাওনা মিটিয়ে দিবে? কখনো তো তুমি নিজেও আমায় কিস করতে পারো। তা তো করো না।
বর্ণালী কোন কথা না বলেই ইভানের দিকে এগিয়ে আসে। পা আলগা করে উঁচু হয়ে ইভানের সমান হয়ে গলা জড়িয়ে ধরে।
-তুমি এতো লম্বা হলে কেন? দেখো তোমার সাথে আমায় একদম মানায় না। আমি তোমার থেকে কত খাটো।
ইভান ওর কোমড়ের দু’পাশে দু’হাত রেখে বলে,
-আমার তোমায় এভাবেই ভালো লাগে। যখন ইচ্ছে কোলে তুলে নিতে পারবো, তুমি আমার হৃদস্পন্দন শুনতে পারবে আর যখন আমার ঠোঁটে তোমার ঠোঁট থাকবে তখন তুমি আমার পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াবে। ঠিক এভাবেই আমি তোমার কোমড়ে হাত রাখবো। আমার হাত তোমার শরীরে ভালোবাসার ছবি আঁকিবুঁকি করবে।
ইভানের কথায় বর্ণালী জুতো খুলে তার পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ায়। ওর চিবুকের সাথে নিজের নাক নিয়ে ঠেকায়। ওর উষ্ণ নিঃশ্বাস এসে ইভানের গলায় ছড়িয়ে পড়ছে। বর্ণালী তার চিবুকের নীচে দাড়ির উপর চুমু এঁকে দেয়। ইভানের হাত ওর কোমড়ে শক্ত করে ধরে। কেঁপে উঠে ও সেখানেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ায়। কীভাবে করবে সে পুরো শরীর যেনো জমে গেছে।
-তোমার ইচ্ছে না হলে কোন সমস্যা নেই বাসন্তী, পরেও করতে পারো তুমি। চলো নীচে যাই।
ইভান ওর হাত গলা থেকে সরাতে চাইলে সে ছাড়ে না। আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। চোখ খুলে ইভানের দিকে তাকিয়ে নিজের কাঁপা কাঁপা ঠোঁটজোড়া তার ঠোঁট স্পর্শ করায়। দু’চোখ বন্ধ করে দুজনেই অন্য এক জগতে হারিয়ে গেছে। যেখানে ভালোবাসার সাগরে পা ভেজাচ্ছে দুজনে। তৃষ্ণা মেটাচ্ছে মনের। ইভানের হাত ধীরে ধীরে উপরের দিকে তুলতে লাগে। বর্ণালী শক্ত করে ওর ঘাড়ের পেছনে চুল খামচে ধরে।
হুট করে কোন কিছুর শব্দে ইভান ওর ঠোঁট ছেড়ে দেয়। বর্ণালীর চোখ এখনও বন্ধ। আলতো করে ওর কপালে চুমু এঁকে বলে,
-লিপস্টিকটা ঠিক করে নাও।
লজ্জায় ও উলটো দিকে ঘুরে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে। ইভান ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুলের গন্ধ নিতে নিতে বলে,
-কী করেছো তুমি আমায়? আমি যে তোমার মাঝেই থাকতে চাই সবসময়। আমি পাগল হয়ে গেছি তোমার জন্য। আমাকে ছেড়ে যেও না কখনোই বাসন্তী আমি মরে যাবো তোমায় ছাড়া।
-হুস, চুপ করো ইভান। এমন কথা যেনো আর দ্বিতীয়বার না শুনি। তুমি যাও নীচে আমি আসছি।
-না একসাথে যাবো।
-একসাথে গেলে সমস্যা আছে তো তুমি যাও আমি আসছি।
-ওকে তাড়াতাড়ি এসো।
ইভান যেতেই বর্ণালী চুল আর শাড়ি ঠিক করে ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে নিচে চলে আসে৷ ততক্ষণে সজিব ও ঈশার বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেছে। রুমুকে খুঁজতে গেলে দেখে আইনানের সাথে বসে গল্প করছে। রুমুকে আইনানের সাথে দেখে চোখের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে বর্ণালী। মনে মনেই ভাবছে “যদি আইনান ভাইয়ার সাথে রুমুর বিয়ে হয়ে যেতো! দুজনকে মানাবেও ভালো।”
বর্ণালীকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুমু উঠে এসে ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
-এভাবে তাকিয়ে না থেকে খেতে চল। আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে।
-হু চল জান।
-রোমান্স শেষ হলো তাহলে?
-মা….মানে?
-আমাকে খুব বোকা ভাবো না?
বর্ণালী আর কথা না বলে মুচকি হেসে রুমুর হাত জড়িয়ে ধরে খাবার টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়।
.
.
ঈশাকে নিয়ে আসা হয়েছে সজিবের বাসায়। ঈশা না যতটুকু কেঁদেছে তার চেয়ে বেশি কেঁদেছে ইভান। ওর বন্ধুর মতো বোন আজ অন্যের ঘর বাঁধবে। সাহারা ইসলাম ও ফারহান আহমেদ সন্ধ্যা পর আসবেন বলেছেন। সন্ধ্যা তো হয়েই গেলো এখনও কেন আসছেন না সেই ভাবনাই করছে ঈশা। সজিবের রুম ওর পূর্ব পরিচিত হলেও আজকে নতুন লাগছে। নানা ধরনের ফুল, পাতা দিয়ে সম্পূর্ণ রুম সাজানো হয়েছে। বিছানায় গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে আছে। আজকে এই বিছানায় সজিবের সাথে ঘুমাতে হবে তার। কত স্বপ্নই না দেখেছিলো এই দিনটার কিন্তু সত্যি হলেও এই সত্যিটা তার কাছে যেনো বিষাদময় লাগছে। দরজায় খট করে শব্দ হতেই ঈশা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। সামনে কয়েকটা হাসি হাসি মুখ দেখতে পাচ্ছে, যাদের হাসি দেখে ওর ঠোঁটের কোণেও হাসির রেখা ফোটে ওঠে।
💛
💛
#______চলবে……….
Previous
https://www.facebook.com/103632171307142/posts/131278278542531/