#ফাগুন_প্রেম
পর্ব: ৫৮
লেখানীতে: Bornali Suhana
💛
💛
ঈশা আর দাঁড়ায় না। চোখ-মুখ শক্ত করে রুম থেকে বাইরে চলে আসে। বর্ণ ও বাকি সবাই রেডি হলো কিনা দেখতে যায়। রুমে এসে দেখে বর্ণালী রেডি হয়ে ফোনে কথা বলছে আর বাকিরা মেকাপ করতে মহাব্যস্ত। ওদের মেকাপ দেখে হেসে দেয় ঈশা। মেকাপের জিনিসগুলো আনতে হবে। বিয়ের সময় কিছুই আনা হয় নি।
-কার সাথে কথা বলছিস?
বর্ণালী পেছন ফিরে ঈশাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। ঈশা কিছুই বুঝতে পারছে না। নিধি আর জেনিও মেকাপ রেখে তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। হুট করেই ওর কি হলো কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না।
-বর্ণালী কী হয়েছে তোর?
-রুমু,
-রুমু! কী হয়েছে ওর?
-রুমু চলে গেছে।
– চলে গেছে মানে? কোথায় গেছে?
– ও এখান থেকে চলে গেছে।
-কেন কোথায়?
-ওর জব হয়ে গেছে, সেজন্য সিলেট চলে গেছে।
-কিহ!!!
কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিবেশটাতে স্তব্ধতা ছেয়ে গেছে। ঈশার মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছে না। নিস্তব্ধতার মাঝে শুধু বর্ণালীর হেচকি তোলার শব্দ কানে বাজছে৷ ঈশার চোখের কোণ বেয়ে জল আসতে না আসতেই দু’হাতের বৃদ্ধাঙুলি দিয়ে মুছে দেয়। দীর্ঘ একটি নিশ্বাস নিয়ে হাসির চেষ্টা করে বর্ণালীর দু’বাহু ধরে বললো,
-চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।
-কিন্তু ও তো কোন উপায়ে যোগাযোগই করছে না।
-তোর সাথে ও যোগাযোগ না করে থাকতেই পারবে না দেখে নিস।
-এমনই যেনো হয়।
– হ্যাঁ হবে, এবার রেডি হয়ে নে।
-আর কী রেডি হবো? আমি তো রেডিই।
-মানে কী! এভাবে যাবি তুই?
– হ্যাঁ তো?
– এই ড্রেসটা চেঞ্জ কর আমার মা। ওখানে কেউ তোকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
বর্ণালী লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়।
-আহারে আমার লজ্জাবতী ভাবী।
-ঈশা, তুইও না।
-আমিও না কী! তোদের রোমান্সের সুযোগ করে দিবো দেখিস। এবার দাঁড়া আমি ড্রেস চুজ করে দেই।
ঈশা আলমিরা থেকে সম্পূর্ণ সাদা রঙের একটা ড্রেস, প্লাজো আর লাল রঙের কাতান কাপড়ের একটা ওড়না বের করে দেয়।
-নে এবার পরে নে।
বর্ণালী ড্রেস পরে এসে হিজাব পরতে নিলেই ঈশা ওর হাত ধরে বললো,
-এখানে চুপচাপ বস আমি তোকে রেডি করে দেই।
-কিন্তু,
-কোন কিন্তু না।
ঈশা তাকে হালকা মেকাপ করিয়ে কানে দু’জোড়া ঝুমকা পরিয়ে দিলো। তারপর ওড়না কাঁধের এক পাশ দিয়ে পিন করে দেয়। চুলগুলো খোলা রেখে অনেকাংশ দু’দিকে ছড়িয়ে ওর গালে চুমু এঁকে দিয়ে এক চোখ মেরে বললো,
-ভাইয়ের আগে আমিই চুম্বন করলাম সুন্দরী।
বর্ণালী ঈশার মাথায় একটা চাপড়ে আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নেয়।
.
.
মেয়ের আগমনে বাড়িতে যেনো প্রাণ ফিরে এসেছে। উৎসবমুখর পরিবেশে রূপ নিয়েছে। আশেপাশের সবাই ওদের দেখতে এসেছে। হরেকরকম রান্না করা হয়েছে নতুন জামাইয়ের জন্য। সজিব ভিজে বিড়ালের মতো এক জায়গায় বসে আছে। আর সবাই তাকে ঘিরে বসেছে। নিজেকে এখন চিড়িয়াখানার গাধা মনে হচ্ছে। সে যতবারই চিড়িয়াখানায় গেছে ততবারই গাধাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখছে। কিন্তু গাধাটা অনেক সুন্দর ছিলো। কি সব ভাবছে এসব সে! তার মানে কি সে গাধা! ঈশার বেশ মজা লাগছে সজিবকে এভাবে দেখে। জামাই আদর ভালো করে উপভোগ করুক। ভেংচি মেরে নিজের রুমে চলে যায়। ইভান এই মাত্র বাইক নিয়ে এসে ঢুকেছে। কোনরকম বাইক পার্ক করেই গাড়ির আয়নায় চুল ঠিক করে দৌড়ে ভেতরে ঢুকে। বর্ণালী মাত্র সোফা থেকে উঠে ঈশার কাছে যাচ্ছিলো তখনই ইভান ড্রয়িংরুমে দৌড়ে ঢোকার কারণে পা স্লিপ খেয়ে একদম ওর মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। আরেকটু হলে ওকে নিয়েই ফ্লোরে পড়ে যেতো। ইভানের হাসি থামছেই না। দ্রুত নিশ্বাস নিচ্ছে। বর্ণালীর হৃদস্পন্দন যেনো থমকে গেছে মুহুর্তের জন্য। জিভ আলতো করে ঠোঁটে ছুঁইয়ে চোখ বড় বড় করে খালি গলায় ঢোক গিলে লম্বা নিশ্বাস ছাড়ে। ওড়নাটা ঠিক করতে করতে ইভানের পাশ কাটিয়ে উপরে উঠে যায়। ইভানকে আজ এতো আকর্ষণীয় লাগছে কেন ওর কাছে! চোখ ফেরানো মুশকিল ছিলো। ঘামে ভিজে সাদা টি-শার্ট ওর গায়ের সাথে লেগে আছে৷ চুলগুলো কপালে এসে পড়েছে। আর ঠোঁটে সেই খুন হবার মতো হাসি। চোখ গভীর সমুদ্র যেখানে একবার হারালে তার তল খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাকে দেখামাত্রই শরীরের শিরা দিয়ে একটা শিহরণ বয়ে গিয়েছিলো। ইচ্ছে করছিলো তার কপালে ওই ঘামে ভেজা চুলগুলো সরিয়ে আলতো করে একটা ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিতে। ইভানের দৃষ্টি বর্ণালীর উপরই থমকে গেছে। পেছন থেকে যেনো একদম একটা পরী লাগছে ওকে। চুলগুলো ওর হাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে দোল খাচ্ছে। ওড়নাটা ফ্লোর পরিষ্কার করার জন্য যথেষ্ট মনে হচ্ছে।
-হেই ইভু!
জেনির ডাকে ইভান বর্ণালীর অনুপস্থিতি টের পায়। এতোক্ষণ ভাবছিলো এখনও তার সামনে দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু সে যে অনেক আগেই চলে গেছে খেয়ালই করেনি। জেনির ও নিধির কাছে গিয়ে হায় বলে হাত মেলায় দুজনের সাথে। সজিব বুক মেলানোর জন্য উঠে দাঁড়াতেই ইভান বললো,
-দুলাভাই ঘেমে একাকার হয়ে গেছি আগে ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর কোলাকুলি করবো।
-হাহা আচ্ছা শালাবাবু।
ইভান ১০টা সিঁড়ি লাফে উঠে যায়। ঈশার রুমে ঢুঁ মেরে দেখে বর্ণালী ওখানে নেই। ঈশার ওয়াশরুমের দরজা লাগানো। ঈশা হয়তো ওয়াশরুমে। আগে ফ্রেশ হয়ে নিক তারপর বোনের সাথে দেখা করে নিবে। নিজের রুমে ঢুকে দরজা লক করেই ইভান টি-শার্ট খুলে ছুঁড়ে মারে বিছানায় কিন্তু টি-শার্টটা গিয়ে পড়ে বর্ণালীর মুখে। মুখ থেকে টি-শার্ট সরিয়ে হাতে নিয়ে একদৃষ্টিতে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। চওড়া মসৃণ লোমহীন বুক দেখে নিজের বুকটা ধুকধুক করতে শুরু করে ওর। ইভান ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। বর্ণালী অনেকটা অপ্রস্তুতকর অবস্থায় পড়ে গেছে। একদিকে ইভানকে দেখতে মন চাচ্ছে কিন্তু অন্যদিকে এইমুহূর্তে ও লজ্জাজনক পরিস্থিতির স্বীকার। চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে গলা ঝেড়ে আমতা আমতা করে বললো,
-স….সরি, আসলে ঘুরতে ঘুরতে ভুল করে তোমার রুমে এসে পড়েছি।
-ভুলে এসেছো কিন্তু সঠিক রুমেই এসেছো।
-আ….আমি যাচ্ছি পরে কথা হবে।
-বাসন্তী দাঁড়াও।
বর্ণালী তাড়াহুড়ো করে দরজাটা খুলেই রুম থেকে বেরিয়ে আসে। এমনভাবে দরজা খুলেছে যে এখনও দরজার পাখা নড়ছে। ইভান পিছু পিছু কয়েকবার ডাকে দাঁড়ানোর জন্য। কিন্তু বর্ণালীর হাত-পা কাঁপতে শুরু করেছে। এখানে আর দাঁড়ানো যাবে না। ইভান দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁত দিয়ে নীচের ঠোঁট কামড়ে মিটিমিটি হাসছে।
💛
💛
#______চলবে……….
Previous
https://www.facebook.com/103632171307142/posts/131832905153735/