ফাগুন প্রেম পর্বঃ ৬১

0
537

#_ফাগুন_প্রেম
পর্ব: ৬১
লেখনীতে: Bornali Suhana
💛
💛
বর্ণালীর এখন খেয়াল হয় ও তো রাত্রে ইভানের সাথে চ্যাট করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। কথাটা মনে হতেই মনটা খারাপ হয়ে গেছে ওর। চোখে জল টলমল করছে। ইভান সারারাত জেগে ওর অপেক্ষা করছিলো আর সে কিনা ঘুমাচ্ছিলো। কিন্তু সে তো জানতোই না ইভান তাকে আসতে বলেছে। জানলে অবশ্যই আসতো। বর্ণালী চোখের জল মুছে বললো,
-তুমি আমার মেসেজের রিপ্লে না পেয়ে কেন এখানে আসলে?
-আরেহ! এখন আমার দোষ না? কি মেয়েরে বাবা! চ্যাট করতে করতে কেউ এভাবে ঘুমায়?
-আমি কি করতাম! আমার ঘুম কখন, কীভাবে আসছে আমি নিজেই জানিনা।
-আচ্ছা ঠিকাছে বাদ দাও।
-সরি ইভান, আমার জন্য তোমাকে সারারাত অপেক্ষা করতে করতে এখানেই ঘুমাতে হলো।
ইভান দোলনা থেকে নেমে ফ্লোরে বসে পড়ে ওর সামনে। বর্ণালীর দুটো হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,
-ইট’স ওকে তো, তুমি তো আর জানতে না যে আমি তোমায় আসতে বলেছি আর তোমার জন্য এখানে অপেক্ষা করছি। জানলে তো অবশ্যই আসতে। আমার ভুল হইছে আগে তোমার রিপ্লে এর অপেক্ষা করা প্রয়োজন ছিলো।
বর্ণালী ইভানের সামনে ফ্লোরে বসে যায়। এখনও সূর্যটা দেখা যাচ্ছে না। সকালের আকাশটা খানিকটা মেঘলা থাকায় সূর্যটা ঢাকা পড়ে গেছে। বর্ণালীকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে ইভান ধীরে করে বললো,
-হেই সুইটহার্ট! এভাবে চুপ করে থাকলে তোমায় খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে হয়।
বর্ণালী হেসে দিয়ে বললো,
-তো কে না করেছে? খেয়ে ফেলো….
বর্ণালী কথাটা শেষ করার আগেই ইভান তার মুখ বন্ধ করে দেয়। ওর ঠোঁটের উপর তার ঠোঁট অবস্থান করছে। হুট করেই এমন কিছু হবে ভাবেও নি। ইভান ওর কোমড়ে হাত দিয়ে আরো কাছে টেনে নেয়। নিজের অবস্থান ঠিক রাখতে না পেরে বর্ণালী ইভানের বুকের উপর লুটিয়ে পড়ে আর ইভান ফ্লোরে গিয়ে পড়ে। পিঠে কিছু একটার আঘাত পেতেই কাৎ হয়ে বর্ণালীকে ফ্লোরে শুইয়ে দেয়। ছোট ছোট চুলগুলো বর্ণালীর মুখের উপর এসে পড়েছে। ঠোঁটের চলনের সাথে চুলগুলো বর্ণালীর মুখের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাচ্ছে। কেমন সুড়সুড়ি লাগছে ওর কিন্তু আবেশে একহাতে জড়িয়ে ধরে তার পিঠের উপর হাত দিয়ে খামচে ধরে। আলতো করে ইভানের হাত ওর কোমড়ের পাশ দিয়ে উপরের দিকে উঠতে লাগে। এসব স্পর্শই বর্ণালীকে ভেতর থেকে কাঁপিয়ে তুলছে। ঠোঁটের চলন আরো গভীর হচ্ছে। ইভানের ঘাড়ের উপরের চুলগুলো একহাতে মুঠোয় নিয়ে নেয়। ঠোঁট ছেড়ে গলায় নিয়ে মুখ ডুবিয়ে নানারকম স্পর্শে মাতোয়ারা করে দিচ্ছে বর্ণালীকে। নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না ও, কষ্ট হচ্ছে। খুব করে কাছে না পাওয়ার কষ্ট এটা। ওর এই মুহুর্তে ইচ্ছে করছে এই পাগলটার ঘরে সত্যি সত্যি বিয়ে করে বউ সেজে আসতে। ইভানের হাতের স্পর্শ ওর উন্মুক্ত পিঠের উপর পায়। এক সম্পূর্ণ শরীরের রক্ত যেন দ্রুত বইতে শুরু করে। নিশ্বাস প্রবলভাবে ঘন হয়ে এসেছে। ইভানের মাথার ছোট ছোট চুলগুলো ওর নিশ্বাসের সাথে লেগে সরে যাচ্ছে মুখের উপর থেকে আবারো সেই নিশ্বাস নেয়ার সাথে ফিরে আসছে নিজের অবস্থানে। খোঁচা খোঁচা দাড়ি বর্ণালীর গলার আশেপাশে এসে ঠিক যেন কাটার মতো লাগছে৷ ব্যথায় উহ করে আওয়াজ হতেই ইভান মাথা তুলে বর্ণালীর মুখের দিকে তাকায়। চোখ কুঁচকে বন্ধ করে আছে। ঠোঁটজোড়া মুখের ভেতর পুরে নিয়েছে। হাতটা আলতো করে তার উন্মুক্ত পিঠ থেকে বের করে আনে। গালের উপর রেখে চাপ দিতেই ঠোঁটজোড়া ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে। ইভান নিজের মুখের ভেতর ওর ঠোঁট পুরে নেয়। কিছুক্ষণের জন্য যেন দুজনের নিশ্বাস থমকে যায়। বাতাস শা শা শব্দ করে বইছে। দুজনের শরীর ছুঁয়ে দিতেই শিউরে উঠছে। আলতো করে ওর ঠোঁট ছেড়ে ফ্লোরে পিঠ ঠেকিয়ে শুয়ে পড়ে ইভান। আবারো পিঠে কিছু লাগতে দেখে একটা পাথর। পাথরটা হাতে নিয়ে শুয়ে পড়ে। বর্ণালী হাত-পা গুটিয়ে অন্যপাশে ফিরে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকে। ইভান ওকে টান দিয়ে নিজের বুকের উপর এনে শুইয়ে দেয়। তুমি এখানে ঘুমাবে সবসময় অন্য কোথাও না।
ও কোন কথা না বলেই মাথা তুলে ইভানের গলায় চুমু এঁকে দেয়। বুকের উপর মাথা রাখতে যাবে তখনই ছাঁদের সিঁড়ির দরজায় চোখ পড়ে ওর কারো ছায়া যেন দেখতে পায়। মনে হচ্ছে এখানে কেউ দাঁড়িয়ে ছিলো। সন্দেহ সত্যি হলে কি হবে! যদি আসলেই কেউ দেখে থাকে ওদের এই অবস্থায়! তাহলে কী হবে!
বর্ণালী ইভানের হাত ছাড়িয়ে ওর বুকের উপর থেকে উঠে সোজা হয়ে বসে চুল, জামা, ওড়না ঠিক করতে লাগে। ইভানও উঠে বসে বললো,
-কী হলো?
-কিছুনা, আমি নিচে যাচ্ছি তুমি কিছুক্ষণ পর নিচে নেমে সোজা তোমার রুমে চলে যেও।
-আচ্ছা! কেন?
বর্ণালী ইভানের গাল টেনে দিয়ে বললো,
-আমি বলেছি তাই।
উঠতে যাবে তখনই ইভান ওর হাত ধরে ফেলে। বর্ণালী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-কী হলো?
-কিছুনা।
-তাহলে?
ইভান আলতো অরে বর্ণালীর বুকে চুমু দেয়। সাথে সাথে ও চোখ বন্ধ করে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দ্রুত সিঁড়ির পানে হাঁটতে শুরু করে। ইভান আবারো পেছন ডেকে বললো,
-ভালোবাসি বাসন্তী।
বর্ণালী হেসে হেসে দ্রুত পায়ে নিচে নামছে। সিঁড়ি পাড় করে নিচে নামতেই ঠাস করে ওর গালে একটা থাপ্পড় পড়ে। হুট করে গালে এতো জোরে চড় পড়তেই বর্ণালী নিজের অবস্থান ঠিক রাখতে পারেনা। সিঁড়ির উপর গিয়ে চিৎ হয়ে পড়ে। চোখে ঝাপসা দেখছে ও। মাথা তুলে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কোনদিকে তাকাবে বুঝতে পারছে না। কয়েকবার চোখ খুলে আবার বন্ধ করে গালে হাত দিয়ে মাথা সোজা করে উপরের দিকে তাকায়।
-মা……হ!
-মুখ দিয়ে যে শব্দ বের করেছো তা মুখের ভেতরই রেখে দাও।
-আন্টি আপনি!
-কি খুব অবাক হচ্ছো আমাকে এখানে দেখে? আমার ঘরে আমি যেখানে সেখানে যাবো কিন্তু তুমি! তুমি এখানে কী করছো? এটা তো তোমার ঘর না যে তুমি যেখানে সেখানে যাবে।
বর্ণালীর হাত পা কাঁপছে। ওর সামনে ইভানের মা মিসেস সাহারা ইসলাম দাঁড়িয়ে আছেন। তার মানে ও ভুল দেখেনি। যার ছায়া দেখেছিলো সে আর কেউ না ইভানের মা ছিলেন। বর্ণালী সিঁড়ি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-আসলে আন্টি,
-চুপ, একদম চুপ। লজ্জা করেনা নিজের চাইতে ছোট ছেলের সাথে এভাবে মেলামেশা করতে? ছিঃ ছিঃ আমার বাচ্চা ছেলেটাকে নষ্ট করে দিচ্ছো। এসবই শিখেছো? এই তুমি না টিচার? এসব বাচ্চা ছেলেদের কি ক্লাসে এসবই শিখাও? আরে না তোমাকে তো স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে শুনেছিলাম। তাহলে লোকেদের কথাই সত্যি আমি আরো বিশ্বাস করিনি।সাহারা বেগম কপালে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে লম্বা নিশ্বাস নিয়ে আবারো বলতে লাগলেন,
-আল্লাহ! কি ভুলটাই না করেছি। তোমার নামের যতটা খারাপ কথা শুনেছি তাহলে সব সঠিক। তোমাকে কলেজের কোন একটা বাচ্চা ছেলের সাথে একদিন আপত্তিকর অবস্থায় দেখে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে এটাও সঠিক তাই না? এখন এসেছো আমার ছেলেকে ফাঁসাতে? আরে পৃথিবীতে আর ছেলে পেলে না? আমার অবুঝ বাচ্চাটাকেই কেন? তোমার জন্য কি নিজের থেকে বড় নাহলে তোমার সমবয়সী ছেলের অভাব পড়েছে? পড়লে বলো আমরা তোমার জন্য ছেলে খুঁজে বিয়ে করিয়ে দিবো তাও ভালো, স্ট্যান্ডার্ড পরিবারে।
বর্ণালীর চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। নীচের দিকে অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে আছে সে। চোখের জলের গতি একনাগাড়ে পড়ে যাচ্ছে। যা ভয় করছিলো তাই সত্যি হতে চলেছে। আজকে সেই বয়সের ব্যবধানটা এসেই গেলো তাদের সম্পর্কের মাঝে। চোখের পানি নীরবে ফেলে ভাঙা ভাঙা গলায় বললো,
-আন্টি আপনি,
-শোন মেয়ে, পরিষ্কারভাবে শুনে রাখো কথাটা মাথায় গেঁথে নিও, আমি আমার মুখের ভাষা তোমার জন্য কটু বা খারাপ করতে চাচ্ছি না। তবে হ্যাঁ আজকের পর আমি তোমাকে আমার মেয়ের ননদ হিসেবেই যেন দেখি আমার ছেলের বউ হিসেবে নয়।
কথাটা বলেই সাহারা বেগম হনহন করে সেখান থেকে চলে যান। বিরবির করে হাজারো গালি দিচ্ছেন বর্ণালীকে। যে গালিগুলো সাহারা ইসলাম চোখের আড়াল হওয়ার আগপর্যন্ত বর্ণালী শুনতে পারছিলো।
💛
💛
#______চলবে……….

Previous
https://www.facebook.com/103632171307142/posts/132840301719662/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here