সুপ্ত ভালোবাসা❤পর্ব-১৫

0
1430

#সুপ্ত_ভালোবাসা

#পর্ব_১৫

#Tahmina_Akther

-তো বল তোদের দুজনের মাঝে মিল মোহাব্বত আছে তো?

আমি এই কথা শুনে নানুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। উনি তাহলে এই কথা বলার জন্য আমাকে টেনে নিয়ে এসেছে এই রুমে।

-কি রে চুপ করে কি ভাবিস? নাকি এখনো আমার নাতিকে ভালোবাসতে পারসি নি হিয়া?

আমি আর চোখ তুলে চেয়ে নানুর দিকে তাকাতে পারলাম না। কিভাবে বলব আমি এখনো যে অভিককে ভালোবাসতে পারিনি?

-নানু, আসলে তুমি তো সব জানো তাই না? আমি চেষ্টা করছি যেন অভিককে ভালোবাসতে পারি কিন্তু আমি পারছি না।
বেশ হতাশের সুরে বললো হিয়া।

নানু শোয়া থেকে উঠে বসলেন। তারপর আমার হাত ধরে বললেন,

-আরে পাগলি ভালোবাসা কখনো চেষ্টা করে হয় না। ওটা ব্যস এমনিতেই হয়ে যায়।
যখন ভালোবাসা হবে তখন টেরও পাবি না কিভাবে হলো? কিন্তু, তোদের দুজনের এখন বিয়ে হবে সারাজীবনের জন্য দুজন এক হয়ে যাবি ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না জীবনের সকল উত্থান-পাত্থান একসাথে তোদের দুজনকে জয় করতে হবে।
তবে কি জানিস ভালোবাসায় শুধু একজনের ভালোবাসা দিয়ে কিছুই হয় না দুজন দু’জনকে সমানভাবে ভালোবাসলে জীবনের সব তিক্ততা একসময় মধুতে পরিণত হয়।
হয়তো ভাবছিস আমি কেন তোকে এইসব বলছি? আমি জানি আমার অভিককে কখনো এইসব বলে দিতে হবে না। কারণ, সে যখন বুঝেছে তোকে ভালোবাসে ঠিক তখনি সে তার পরিবারকে বলেছে। এই কাজটাই বা ক’জন করে? তুই বুদ্ধিমতি মেয়ে আশা করি তুই অভিকের ভালোবাসাকে সম্মান করবি।

আমি বেশ মনোযোগ দিয়ে নানুর কথা গুলো শুনছি। আসলেই তো অভিক তার জায়গা তার ভালোবাসাকে প্রাপ্য স্থানে রেখেছে আর আমি সামান্য ওর ভালোবাসাকে গ্রহন করতেও ভয় পাচ্ছি। কিন্তু, কেন এর উত্তর আমার জানা নেই?আর উত্তর থাকলেও আমার জানতে ইচ্ছে করে না।

—————-

ছাদ থেকে নেমে অভিক বাড়ির বাগানে চলে এলো যেখানে হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে। অভিক সব খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে সব ঠিক মতো হচ্ছে কি না। সবকিছুই হিয়ার পছন্দসই সাজনো হচ্ছে।
অভিকের পেটে বেশ খুদা অনুভব হচ্ছে তাই বাড়ির ভিতরে ঢুকে রান্নাঘরে উঁকি দিলো। তার মা আর হিয়ার মা আরো কয়েকজন মিলে রান্নাবান্না করছে, কেউ সবজি কাটছে তো কেউ মসলা ব্লেন্ড করছে। অভিক আস্তে করে ওর মা’কে ডাক দিলো। ছেলের ডাক শুনতে পেয়ে জায়ের কাছে রান্নার দায়িত্ব দিয়ে ছেলের কাছে এসে দাড়ালো।

-কি হয়েছে বাবা? ডাকছিস কেন? কিছু লাগবে?

-আসলে, মা বেশ খুদা লেগেছে। রান্না হয়েছে কিছু হয়ে থাকলে খেতে দাও তো। আবার একটু পরেই মার্কেটে যেতে হবে।

-তুই যেয়ে গোসল করে ফেল ততক্ষণে রান্না হয়ে যাবে।আর শোন তোর নানুকে, হিয়াকে আর তোর বন্ধুদের সাথে করে নিয়ে আসিস খাবার টেবিলে।

-নানু আবার কখন এসেছে মা? আমাকে বললে না যে?নানু কই?

-এইতো একটু আগেই এসেছে। হিয়ার সাথে কি যেন কথা আছে তাই ওকে নিয়ে উপরের ঘরে চলে গেলো।হয়তো আমার রুমে আছে দেখ গিয়ে। আমার কাজ আছে আমি যাই তুই চলে আসিস সবাইকে নিয়ে।
বলেই মা চলে গেলো আর আমি চললাম গোসল করতে এরপরে যাবো নানুর খোঁজে।

————-

আমি আর নানু কথা বলছিলাম আর হাসছিলাম। আমাদের হাসির কারণ হলো অভিক। ওর বন্ধুরা যে ওকে নিয়ে মজা করেছিলো ছবি নিয়ে তাই বলছিলাম নানুর সঙ্গে। এরই মাঝে কে যেন দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো?

অভিক এসেছে বেশ ভালোভাবে লক্ষ্য করতে দেখলাম ও হয়তো মাত্রই শাওয়ার নিয়ে এসেছে। সামনের ছোট চুল গুলো ভিজে লেপ্টে আছে সারা কপাল জুড়ে। গায়ের সাদা পাঞ্জাবিও দেখছি হালকা ভিজে আছে। বেশ স্নিগ্ধ দেখাচ্ছিলো ওকে।
হটাৎ আমার কাধে কারো ধাক্কা পেতেই সম্বিত ফিরে পেলাম। তাকিয়ে দেখি নানু আমার দিকে চেয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে এতক্ষণে খেয়াল এলো আমার কি করছিলাম আমি!

অভিক এগিয়ে এসে ওর নানুর কোলে মাথা পেতে শুয়ে পড়লো। আর ওর নানুও নাতিকে দেখে অনেক খুশি হলেন বোধহয়।

-কি রে ভাই তোর তো খবরই নাই। নাকি তোর ফুলরে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছিস?

-কি যে বলো না নানু তোমাকে কি ভুলা যায়। তবে আমার যে একখান মিষ্টি বৌ তাকে দেখলে কি আর দুনিয়া দারির খবর থাকে বলো তুমি?

বেশ ইনোসেন্ট মার্কা লুক নিয়ে কথাগুলো বললো অভিক। আর আমি ওর কথা শুনে লজ্জায় মরে যাচ্ছিলাম।

আমি উঠে চলে যেতে চাইলাম কিন্তু আমার ওড়না ধরে আঁটকে ফেললো অভিক।
আমি বেশ কয়েকবার ওর হাত থেকে ওড়না ছাড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, ও যেন আরোও জোরে
ওড়না হাতের মুঠোয় নিয়ে রেখে দেয়।

-এত জোড়াজুড়ি করে লাভ নেই,ফুল। এখানে এসে বসো। আমরা সবাই একসঙ্গে দুপুরের খাবার খাবো।

কি আর করার অগত্যা নানুর পাশে এসে বসলাম। নানু আমাদের কান্ড দেখে হাসছে আর বলছে,

-কে বলে আমার নাতি তোর চেয়ে বয়সে ছোট? তুই তো দেখি ওর কথায় এই রুম থেকে বের হতি পারিস না হিয়া।

-নানু বয়সে বড় হল হয় না বুঝলে একটু জ্ঞানীও হতে হয়। আর আমাদের ফুলের সেই জ্ঞান নেই। তবে আমি ফুলকে দিয়ে যতকিছু করাতে পারিনা কেন? শুধু একটি জায়াগায় পারিনা, আর তা হলো ওকে আমি জোর করতে পারিনা আমাকে ভালবাসার জন্য।
ওকে আমি বলতে পারিনা, যে ফুল তুমি আমায় ভালোবাসো।

আমি অভিকের কথাগুলো শুনে মাথা নিচু করে ফেললাম। আসলেই ওর আমার প্রতি ভালোবাসা দেখলে নিজের কাছেই ছোট হয়ে যাই, লজ্জিত হই।

-হয়েছে এত কাব্যিক কথার দরকার নেই। তোরা বস আমি গোসল করে আসি। নামাজের সময় চলে যাচ্ছে।

বলে উঠে চলে গেলেন অভিকের নানু। অভিক এবার শোয়া থেকে উঠে বসলো। এরপর, হিয়াকে ডাকলো,

-ফুল, এই ফুল।

-বলো, শুনতে পাচ্ছি।

-তুমি তো মুখ নিচু করে রেখেছো এভাবে কি আর কথা বলা যায়?

-এবার হয়েছে বলো কি বলবে?
অভিকের চোখে চোখ রেখে বললো হিয়া।

-সকাল থেকে একবার তোমার মুখটি কাছ থেকে দেখতে পারিনি তাই একটু দেখলাম।
শুনো, খাওয়াদাওয়ার একটু পর আমরা সবাই মার্কেটে যাবো। তৈরি হয়ে থেকো।

-আমি মার্কেটে যেয়ে কি করবো?

-কি করবে মানে? তোমার বিয়ের কেনাকাটা তুমি করবে না তো কে করবে? তাছাড়া আবির, সাঈদ, মিরা আর তিয়ানাও সাথে যাবে।

-আচ্ছা, যাবো।

-একটা কথা জিজ্ঞেস করি ফুল? সত্যি করে বলবে কিন্তু?

-হু সত্য বলবো। আগে শুনি তুমি কি বলবে?

-আমাকে এখনও ভালোবাসতে পারোনি তাই না?

অভিকের কথা শুনে একটু অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। কি জবাব দিবো আমি ওকে? যখন ও আমাকে বলেছিলো, এই বিয়ে ভেঙে দিবে আমিই তখন ওকে বলেছিলাম আমি ওকে বিয়ে করতে রাজি আছি। তবে কেন যে আজও ওকে ভালোবাসতে পারিনি?

-ফুল তুমি আজও চুপ করে থাকবে? তবে চিন্তা করো না। আমি তোমায় আর ব্যাপারে কিছু বলবো না। শুধু আমার বিয়ে করা বৌ হলেই চলবে। অন্তত হাশরে যেন আল্লাহর কাছে তোমায় স্ত্রী হিসেবে পাই। এরচেয়ে, বড় চাওয়া আমার নেই।

-কি চাওয়ার নেই অভিক?

অভিক আর হিয়া তাকিয়ে দেখে ওদের নানু ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে ওদের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অভিক কথা ঘুরিয়ে বললো,

-বলছিলাম কিছু একটা। তোমার কি আরও দেরি হবে?

-হ্যা নামাজ শেষ করে নেই। তোরা যেয়ে খেয়ে নে। আমি আসছি।

অভিক হু বলে হিয়ার হাত ধরে রুম থেকে বেরিয়ে। পড়লো। দুজনের হাত পরস্পরের স্পর্শে দুজনের ভাবনা ভীষণ রকমের আলাদা।

কেউ ভাবছে, ফুলের এই হাত ধরে রাখারও আমার যোগ্যতা নেই তবুও আল্লাহ চেয়েছেন বলে পেরেছি।
আরেকজন ভাবছে,এই হাত ছুয়ে আজ তোমাকে কথা দিলাম অভিক তোমাকে পৃথিবীর সেরা সুখি মানুষের তালিকায় রাখবো। কারণ, তুমি যে আমার বড্ড স্নেহের!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here