#সুপ্ত_ভালোবাসা
#পর্ব_১৯
#Tahmina_Akther
-কি নিষ্ঠুরভাবে কথা বললো এই পাষানটা!খালি ও আমাকে ভালোবাসে বলেই এভাবে কথাগুলো বলতে পারে। হু আর কথাই বলবো না। সে থাকুক তার ভালোবাসার অহমিকা নিয়ে।
মনে মনে কথাগুলো বলছে হিয়া তার কেন যেন বেশ রাগ হচ্ছে অভিকের উপর?
-কি হলো বললে না যে আমি মরে গেলে তোমার কি?
-সাঈদ ভাই সামনেই একটা পার্লার আছে আমাকে ওখানে নামিয়ে দিয়েন।
অভিকের কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে বললো হিয়া।
-এই তুমি আমার কথার উত্তর দিচ্ছো না আবার বলছো পার্লারে যাবে? এই সন্ধ্যায় পার্লারে কি? এই সাঈদ কোথাও গাড়ি থামাবি না সোজা বাড়ির পথে যা।
-সাঈদ ভাই আমি যা বলছি তাই করুন নয়তো ভালো হবে না বলছি।
-উফফ, তোমরা দু’জন থামবে কি শুরু করলে বাচ্চাদের মতো?হিয়া পার্লারে যাবে ঠিক আছে তাহলে আমরাও যাই তোমার সাথে. তোমার কাজ শেষ হলে না হয় একসাথে বাড়িতে ফিরবো?
– না তোরা চলে যা আমি যাবো ওর সাথে। ও কি করবে দেখি?
অভিক বেশ রেগে আছে ওর কথা শুনেই বুঝতে পারলো বাকি তিনজন। তাই আর কেউ কথা বাড়ায় নি।
আর হিয়া মনে মনে ইচ্ছেমতো বকে যাচ্ছে অভিককে।
কাঙ্ক্ষিত জায়গা নেমে পড়লো হিয়া আর অভিক। সাঈদ আর মিরা চলে গেলো বাড়ির পথে কারন গাড়িতে বেশ গয়নাগাটি আছে।
হিয়া আগে আগে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো আর ওর পিছে পিছে অভিক আসছে। ভিতরে যেতেই একটি মেয়ে এগিয়ে এলো ওদের দিকে তারপর বললো,
-আসসালামু আলাইকুম ম্যাম। হাউ ক্যান আই হ্যাল্প ইউ?
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।আসলে আমি নাক ফুঁড়াতে চাই।
-ওকে ম্যাম আপনি বসুন।
মেয়েটি চলে গেলো হিয়া বসে পড়লো আর অভিক হিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে
-তোমাকে আমি মাঝে মাঝে বুঝতে পারিনা আবার মাঝে মাঝে মনে হয় তোমার সবই আমার জানা। আমাকে তুমি ভালোবাসা অথচ স্বীকার করতে চাও না।
তবে আজ কেন অচেনা একজনের হুমকিতে তুমি আমাকে হারানোর ভয়ে কাঁদো?
এটা কি শুধুই মায়া নাকি ভালোবাসা!
ফুল, একদিন অবশ্যই তুমি বলবে আমাকে ভালোবাসো হয়তো সেইদিনটি বেশি দূরে নয়!
এরইমধ্যে হিয়া অভিককে ডাক দিলো।অভিক এগিয়ে গেলো ওর দিকে।হয়তো এখন নাক ফুঁড়াবে?আচ্ছা, ফুল কি ভয় পাচ্ছে?
-কি হয়েছে ফুল?
-ম্যাম বেশ ভয় পাচ্ছেন কাইন্ডলি যদি আপনি উনাকে একটু সাহস দিতেন?
অভিক হেসে ফেললো এত সাহস নিয়ে এলো আর এখন সেই সাহস ফুড়ুৎ হয়ে গেলো। হিয়ার মাথায় হাত দিতেই অভিকের কোমড় দু-হাত দিয়ে জড়িয়ে মুখ গুজে ফেললো।
-ফুল ভয় পেলে নাক ফুঁড়াবার দরকার নেই বাড়িতে চলো। আর এখন যদি নাক ফুঁড়াও তবে ব্যাথায় তোমার জ্বর চলে আসবে তখন গায়ে জ্বর নিয়ে বিয়ে করতে হবে আর যদি না পারো তবে বিয়ে আরো পরে করতে হবে। তুমি কি চাও বিয়ে আরো পরে হোক?
-না আমি চাই না। কিন্তু নাক তো ফুঁড়াতেই হবে। তুমি আমার হাত ধরে রাখো আমি পারবো। এবার আর ভয় পাবো না। আপনি আসুন আমি পারবো এবার।
অভিক আর মহিলাটি হেসে ফেললো। এগিয়ে গিয়ে নাক ফুঁড়িয়ে দিলো হিয়ার। হিয়া ভয়ে অভিকের হাতে এমন চাপ দিয়েছে বেচারার হাতে হিয়ার নখের দাগ বসে গেছে। হিয়ার নাক বেশ লাল হয়ে গেলো। চোখের পানিতে ওর চোখ তখন টলমলে। তবুও মুখে এক চিলতে হাসি যেন বিশ্ব জয় করতে পেরেছে।
হিয়া আর অভিক বেরিয়ে এলো। একটি সিএনজি নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হলো। পথিমধ্যে সিএনজি থামিয়ে হিয়ার জন্য ঔষধ কিনলো অভিক। যদি রাতে ব্যাথা বেড়ে গেলো?
বাড়িতে পৌঁছতে হিয়ার না এগিয়ে এসে বললো,
-কি রে এত দেরি করলি যে? এই তুই কি নোজপিন পড়েছিস হিয়া?নাক ফুঁড়িয়েছিস নাকি?
বেশ অবাক সুরে বললেন।
-হ্যা তোমার মেয়ের নোজপিন পড়ার শখ জেগেছে তাই। এখন ওকে কিছু খাইয়ে এই ঔষধ গুলো খাইয়ে দিও।
হিয়ার মা ঔষুধ হাতে নিয়ে হেসে ফেললেন অভিকের কথা শুনে।
-আচ্ছা, তোরা হাতমুখ ধুয়ে আয় টেবিলে খাবার দিচ্ছি। আর অভিক শোন
-জি, বড় মা
-খালাম্মা কি বলেছে মনে আছে তোদের?
অভিকের মন পড়লো আজ রাতের পর থেকে আর হিয়ার সাথে দেখা করা যাবে না। এইটুকু তো মেনেই নেয়া যায় যখন সে চিরজীবনের জন্য আমার হবে!
-হ্যা মনে আছে। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে চলে যাবো। মা আর বাবা কি গিয়েছে?
-হুম সাথে তোর নানুও। এখন তাড়াতাড়ি যা। সকালে বেশ কাজ আছে।
অভিক আর হিয়া ওদের যার যার রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে রাতের খাবার খেয়ে চলে এলো।অভিক তার রুমে থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে গেস্টহাউজে রেখে আসলো। এরপর কি মনে করে বাড়ির ভিতরে এসে ছাদে চলে এলো।পকেট থেকে সিগারেট বের করে কি মনে করে নিচে ফেলে দিলো। কারণ, ফুল এসব ছাইপাশ খেতে বারণ করেছে।
পকেট থেকে মোবাইল বের করে তার বাবাকে কল দিয়ে বললো,
-বাবা একটু কষ্ট করে ছাঁদে আসতে পারবে জরুরি কথা ছিলো।
-আচ্ছা আমি আসছি।
খানিকক্ষণ বাদেই চলে এলেন রোকন জামান। তিনিও বেশ চিন্তিতবোধ করেছেন। কারণ এতরাতে ছেলে কি এমন কথা বলবে ?
– কি রে বাবা কিছু সমস্যা হয়েছে?
-আসলে বাবা ফুলের ব্যাপারে বেশ জরুরি কথা ছিলো। আর এতে তোমার সাহায্যে লাগবে।
একদম প্রথমদিনের ম্যাসাজ হতে আজকের ম্যাসেজের সবকিছু বললো। কিন্তু, হিয়া যে একটি ম্যাসেজের কথা গোপন করেছে অভিক তা জানতেই পারলো না।
-বেশ জটিল ব্যাপার, আচ্ছা তোর কাছে নাম্বারটি আছে?
-হ্যা আছে।
-তাহলে আমি খবর নিচ্ছি কার নামে রেজিষ্ট্রেশন করা এই নাম্বার। তোরা কোনো চিন্তা করিস না শুধু বিয়েতে ধ্যান রাখ বাকিটা আমি সামলে নিবো। আমিও তো দেখি কার এত সাহস এসআই রোকন জামানের ছেলের ক্ষতি করবে। যা শুয়ে পড় গিয়ে।
অভিক তার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। কারণ তার বাবা যে তার পরম বন্ধু। সব কিছুর সমাধান যেন
তার বাবার কাছে থাকে।
রোকন জামান ছেলের কান্ডে হেসে ফেললেও পরমূহর্তে চিন্তায় পড়ে গেলেন, কে এরকম ক্ষতি করতে চাইবে অভিকের আর হিয়াকে বা চিনে কিভাবে? আর আজ এত বছর পর কেন ফিরে এলো এতদিন কোথায় ছিলো?
আল্লাহর কাছে এই বিপদ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য দোয়া চাইছেন।
রাত বাজে দুটো হিয়া তখন ঘুমিয়ে কাদা হঠাৎ ওর মোবাইলে টুং করে একটি মেসেজ এলো।হিয়া ঘুম থেকে জেগে গেলো। মোবাইল হাতে নিয়ে মেসেজটি পড়লো, সেখানে লেখা
“কাল তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। আর এই সারপ্রাইজ হবে তোমার জীবনের সেরা সারপ্রাইজ”
#চলবে