#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৪৬
★ আদিত্য-নূর আর বাকি সবাই আজ এসেছে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে বিয়ের শপিং করতে।
আদিত্যদের আসতে দেখে শপিং মলের ম্যানেজার দ্রুত ওদের কাছে এসে নম্র স্বরে বললেন।
….আরে আদিত্য স্যার আপনি আমাদের এখানে? বলুন আপনাদের কি সেবা করতে পারি?
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…. আপনাদের এখানকার বেস্ট বিয়ের কালেকশন দেখান আমাদের।
ম্যানেজার বললেন।
….জ্বি জ্বি অবশ্যই
ইট উইল বি আওয়ার প্লেজার। প্লিজ কাম উইথ মি।
আদিত্য নূরের হাত ধরে এগিয়ে গেল। বাকি সবাইও ওদের সাথে গেল।
ম্যানেজার ওদের একটা বড়ো শোরুমে নিয়ে গিয়ে বললেন।
….স্যার আপনারা এখানে বসেন। এখানে আপনাদের বেস্ট কালেকশন গুলো দেখানো হবে ।
আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে সবাইকে নিয়ে বসলো।
ম্যানেজার দশ বারো জন লোককে ডাক দিয়ে তাদের বললো।
…..তোমরা সবাই ওনাদের যা যা লাগবে সবকিছুর খেয়াল রাখো। ওনারা যেন কোনোভাবেই নারাজ না হন সেটার খেয়াল রাখবে।
লোক গুলো মাথা ঝাকিয়ে ওদের কাজে লেগে পরলো।
সবাইকে তাদের পছন্দ অনুযায়ী ড্রেস দেখাতে লাগলো।
আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
……তোমার যেটা ভালো লাগে সেটা নিয়ে নেও এখান থেকে।
নূর অসহায় মুখ করে বললো।
….আমি কখনো এভাবে শপিং করিনি। তাই আমি এসব ভালো বুঝি না। তুমিই সিলেক্ট করে দেওনা? তুমি যেটা পছন্দ করবে, আমি সেটাই নিবো।
আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে বললো ।
…ঠিক আছে। আমি পছন্দ করে দিচ্ছি।
তারপর আদিত্য একটা করে শাড়ি নূরের গায়ের ওপর রেখে দেখছে কোনটা মানায়।
সানা নিজের গায়ের ওপর একটা করে লেহেঙ্গা রাখছে আর তাসিরের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করছে যে,এটা কেমন।
তাসির সবার নজর এরিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে কখনো ভালো কখনো খারাপ বুঝাচ্ছে।
তানির সামনে তো যেটা পরছে, সেটাই লুফে নিচ্ছে। মনে হচ্ছে আজকের পরে দুনিয়া গায়ের হয়ে যাবে, আর ও এসব আর পাবে না।
আবির আর সায়েম একটু দূরে দাঁড়িয়ে এসব দেখছে আর বিরক্ত হচ্ছে।
আবির বলে উঠলো।
…..এদের দেখে মনে হচ্ছে এরা বিয়ে না, কোনো বিউটি কনটেস্টের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আচ্ছা বিয়েতে এতো সং সাজার কি আছে আমি বুঝিনা। লুঙ্গি আর ম্যাক্সি পরেও তো বিয়ে করা যায় তাইনা? নাকি এভাবে সং না সাজলে বিয়ে বৈধ হয় না?
সায়েম বলে উঠলো।
….কিযে বলো ব্রো? আরে মেয়েদের জন্য বিয়েটাই তো সবচেয়ে বড়ো বিউটি কনটেস্ট। কারণ মেয়েরা দেখতে যেমনই হোক না কেন। বিয়ের দিন সে সবার থেকে বেশি সুন্দর লাগে। সেদিন লাইমলাইট শুধু তার ওপরই থাকে । নিজেকে সেদিন কনটেস্টের উইনার ভাবে বুজেছ?
আবির ঠোঁট উল্টে বললো।
….হুমম, ভেরী বিগ থট। তুই তো দেখছি ভালোই রিসার্চ করে ফেলেছিস মেয়েদের নিয়ে। আই এ্যাম ইমপ্রেসড। লাইফে অনেক দূর যাবি তুই।
সায়েম দুই কানের লতিতে আঙুল ছুঁইয়ে বললো।
…..বাচ্ কাভি ঘামান্ড নেহি কিয়া।
ওদের কথার মাঝে তানি আবিরকে ডাক দিয়ে বললো।
….এই তুমি ওখানে কি করছ? এখানে এসো আমাকে হেল্প করো চয়েস করতে।
সায়েম দুষ্টু হেসে বললো।
….যাও ব্রো। তোমার ডাক পরে গেছে।
আবির তানির দিকে আসতে আসতে বললো।
…ইয়া বেবি আই এ্যাম কামিং।
আদিত্যর নজর পড়লো পাশে কাচের ভেতর সাজিয়ে রাখা একটা গোল্ডেন লেহেঙ্গার উপর। লেহেঙ্গাটা আদিত্যের অনেক পছন্দ হলো। আদিত্য একজন সেলসম্যানকে ডাক দিয়ে বললো।
……আমাকে ওই লেহেঙ্গাটা দেখান।
আদিত্যের কথামতো লোকটা কাচের ভেতর থেকে লেহেঙ্গাটা বের করে এনে আদিত্যের হাতে দিল।
আদিত্য লেহেঙ্গাটা নূরের কাঁধের উপর দিয়ে বললো।
….এটা অনেক সুন্দর মানিয়েছে তোমার উপর। এই লেহেঙ্গাটা ট্রাই করে দেখ।
নূর মিনমিন করে বললো।
…..কোথায় ট্রাই করবো।
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….চলো আমি তোমাকে ট্রায়াল রুম দেখিয়ে দিচ্ছি।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের হাত ধরে ট্রায়াল রুমের দিকে নিয়ে গেল।
তানিও কয়েকটি ড্রেস সিলেক্ট করে আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..আমি এগুলো ট্রাই করে আসি।
আবির দু্ষ্টু হেসে তানির কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বললো।
….কিউটি, তুমি চাইলে আমি তোমার ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে দিতে হেল্প করতে পারি। ইউ নো না, আই এ্যাম ভেরি হেল্পফুল পারসন।
তানি আবিরের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো।
…..ছিঃ অসভ্য।
কথাটা বলেই তানি ড্রেসগুলো নিয়ে চলে গেলো।
আবির হেসে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে অন্য দিকে গেল নিজের জন্য কিছু দেখতে। সায়েমও অন্য দিকে যেয়ে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো।
তাসির এই সুযোগে সানার কাছে এসে একটা লেহেঙ্গা বের করে, সানার হাতে দিয়ে বললো।
….দেখতো এটা পছন্দ হয় কি না? পছন্দ হলে ট্রাই করে দেখ।
সানা মুচকি হেসে বললো।
….আপনি যখন দিয়েছেন তখন অবশ্যই পছন্দ হবে আমার। চলুন এটা ট্রাই করে দেখি।
তারপর ওরা দুজনও উঠে ট্রায়াল রুমের দিকে গেল।
—–
বিশ মিনিট হলো নূর ট্রায়াল রুমে আছে। আদিত্য নূরের ট্রায়াল রুমের বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে। নূরের দেরী হচ্ছে দেখে আদিত্য আস্তে করে ট্রায়াল রুমের দরজায় নক করে বললো।
…..নূর হয়েছে তোমার? এতো দেরি হচ্ছে কেন? কোনো সমস্যা হয়েছে?
নূর ভেতর থেকে বলে উঠলো।
…..আ আসলে একটু সমস্যা হয়েছে। লেহেঙ্গার উপরের টপসটার ফিতায় গিট্টু লেগে গেছে। কিছুতেই খুলতে পারছি না। তুমি একটু তানি বা সানাকে ডেকে দিবে প্লিজ?
আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….ঠিক আছে আমি কাওকে ডেকে আনছি।
কথাটা বলেই আদিত্য ওখান থেকে চলে গেলো।
দুই মিনিট পর আদিত্য আবার এসে নূরের ট্রায়াল রুমের দরজায় নক করে বললো।
….নূর, ওরাতো সবাই ড্রেসের ট্রায়াল দিতে গেছে।
নূর মুখ ছোট করে বললো।
….ওহহ।
আদিত্য বলে উঠলো।
….তোমার যদি সমস্যা না হয় তাহলে আমি এসে তোমার হেল্প করে দেই?
নূর আমতা আমতা করে বললো।
….তু তুতুমি?
……হ্যাঁ তাছাড়া তো কোনো উপায় নেই। তুমি কতক্ষণ এভাবে এখানে আটকে থাকবে? তবে তুমি যদি কম্ফোর্টেবল না হও, তাহলে থাক।
নূর কিছু বললো না। দুই সেকেন্ড পরেই আদিত্য দেখলো নূর দরজার লকটা খুলে দিল। আদিত্য মুচকি হেসে দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকলো। ভেতরে ঢুকে সামনে তাকাতেই আদিত্য পুরো থমকে গেল। নূরকে এই লেহেঙ্গাটায় অসম্ভব সুন্দর লাগছে। আদিত্যের মনে হচ্ছে, ওর সামনে কোনো রুপকথার রাজকন্যা দাঁড়িয়ে আছে। চোখের পলক পরছে না ওর। মুগ্ধ অপলক দৃষ্টিতে হা তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।
নূর লজ্জায় মাথা নিচু করে শুধু লেহেঙ্গার ওড়নার কোণা ধরে আঙুলে নিয়ে প্যাঁচাচ্ছে আর, এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
একটু পরে আদিত্য নিজেকে একটু ঠিক করে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..কি সমস্যা হয়েছে দেখি?
নূর এদিক ওদিক তাকিয়ে ধীরে ধীরে উল্টো দিকে ঘুরে আমতা আমতা করে বললো।
…. পি পিঠের কাছে ফিতায় গিট্টু লেগে গেছে। খু খুলতে পারছি না।
আদিত্য নূরের কাছে এসে, হাত দিয়ে পিঠের ওপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে একপাশে রেখে, দেখার চেষ্টা করলো কোথায় গিট্টু লেগেছে?
আদিত্যর ছোঁয়ায় নূর কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে নিল।
এদিকে নূরের পিঠের দিকে তাকাতেই আদিত্যর অবস্থা বেহাল। লেহেঙ্গার উপরের টপসটার পিঠের সাইডের গলা বড়ো হওয়ায়, নূরের পিঠের অনেকক্ষাণি অংশ বেড়িয়ে আছে। নূরের ধবধবে ফর্সা মোলায়েম পিঠ দেখে আদিত্যের গলা শুকিয়ে আসছে। চরম নেশা ধরে যাচ্ছে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা যেন ওর কাছে অসম্ভব হয়ে পরেছে। আদিত্য হাত বাড়িয়ে নূরের পিঠের ফিতার গিট খুলে দিল। তারপর নূরের মোলায়েম উন্মুক্ত পিঠে হাত দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো।
নূরের এদিকে দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। আদিত্যর ছোঁয়ায় নূরের পিঠ ভাজ হয়ে আসলো। দুই হাত দিয়ে লেহেঙ্গা শক্ত করে খামচে ধরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো।
আদিত্য মুখ নামিয়ে নূরের পিঠে চুমু খেতে লাগলো। পিঠে চুমু খেতে খেতে উপরে ঘাড়ের দিকে উঠে এলো। ঘাড়েও গভীর ভাবে চুমু খেতে লাগলো। শিহরণে নূরের ঘাড়টা হালকা বাঁকা হয়ে গেলো। আদিত্য ঘাড়ে চুমু খেতে খেতে কানের কাছে এসে কানের লতিতে আলতো করে একটা কামড় দিল। পেছন থেকে নূরের পেটে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে, নূরের কানে একটা চুমু দিয়ে, লো ভয়েসে বলে উঠলো।
….পাগল করে দিবে তুমি আমাকে প্রাণপাখী। তোমার কাছ থেকে দূরে থাকা যে, আমার জন্য অনেক কষ্টদায়ক হয়ে উঠছে। জানি না এই কয়টা দিন কিভাবে কাটবে আমার? ইচ্ছেতো করছে এখুনি উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে তোমাকে বিয়ে করে ফেলি।
নূর আর সহ্য করতে না পেরে এক ঝটকায় আদিত্যের দিকে ঘুরে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে, বুকে মাথা রেখে হাঁপাতে লাগলো। ও নিজেও যে পুরোপুরি আদিত্যর হওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটার জন্য। যেদিন ও নিজেকে আদিত্যর কাছে সঁপে দিয়ে পুরোপুরি আদিত্যর হয়ে যাবে। নিজেকে আদিত্যর রঙে রাঙিয়ে তুলবে।
—————————-
তাসির অনেকক্ষণ ধরে সানার ট্রায়াল রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে সানার। ওর দেওয়া লেহেঙ্গায় সানাকে কেমন লাগবে দেখতে, সেটাই দেখার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। অবশ্য সানা নিজেও ওঁকে এখানে থাকতে বলেছে। কিন্তু সানার এতো দেরি দেখে তাসির দরজায় নক করে বললো।
….সানা, হলো তোমার? আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো? আমাকে এভাবে এখানে কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হতে পারে। তাড়াতাড়ি কর প্লিজ।
হঠাৎ দরজা খুলে সানা তাসিরের হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে ভেতর নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। সানার কাজে তাসির থতমত খেয়ে বললো।
….কি কি করছো সানা? কেউ দেখে ফেললে ঝামেলা হয়ে যাবে। আমাকে যেতে দেও প্লিজ।
সানা একটা আবেদনময়ী হাসি দিয়ে দুই হাতে তাসিরের গলা জড়িয়ে ধরে বললো।
….আপনি এতো বোরিং কেন বলুন তো? আমার ভাইয়াকে দেখুন, কতো রোমান্টিক সে। আপনি তো রোমাঞ্চের র ও জানেন না। আসলে আমার না ট্রায়াল রুমে রোমাঞ্চ করার অনেক শখ। আমি অনেক মুভিতে দেখেছি এটা। তাই আমি এখন রোমাঞ্চ করবো বুঝেছেন?
তাসির ঢোক গিলে বললো।
….দে দেখ কেউ চলে আসতে পারে। আমরা অন্য কোনো সময় নাহয় রোমাঞ্চ করবো কেমন?
তাসিরের এমন ভীতু চেহারা দেখে সানা হেসে উঠে তাসিরের গলা ছেড়ে দিয়ে বললো।
…..আপনাকে এই ভীতু চেহারায় না অনেক কিউট লাগে। হি হি..
তাসির সানাকে দেয়ালের সাথে আটকে দিয়ে বললো।
….তবেড়ে, আমার সাথে মজা করা না? দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।
কথাটা বলেই তাসির সানার কমড়ে হাত দিয়ে সুড়সুড়ি দিতে লাগলো।
সানা হাসতে হাসতে বললো।
….সরি সরি আর করবো না, আর করবো না। এবার ছেড়ে দিন প্লিজ। হি হিহি
—————————-
কাপড় চোপড় কেনা শেষে সবাই ফুড কর্নারে এসেছে খাওয়া দাওয়া করার জন্য। মেয়েরা সবাই বসেছে একপাশে, আর ছেলেরা সব একপাশে। খাবার অর্ডার দিয়ে বসে আসে।
তানির মাথায় হঠাৎ দুষ্টু বুদ্ধি এলো।তানি টেবিলের নিচ দিয়ে নিজের পা দিয়ে আবিরের পায়ে একটা খোঁচা দিল। খোঁচা দিয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে দেখলো, তার কোনো রিয়াকশন নেই। কিন্তু হঠাৎ সায়েম কাশতে শুরু করে দিল।
তানি এবার একটু জোরেই খোঁচা মারলো। কিন্তু তবুও আবিরের কোনো রিয়াকশন নেই।
এদিকে সায়েম লাভ দিয়ে উঠে তানির দিকে তাকিয়ে বললো।
….ভাবি আপনি যে নাম্বারে ডায়াল করছেন সেটা রং নাম্বার। দয়া করে সঠিক নাম্বারে ডায়াল করুন। আর আমার পা জোড়াকে পঙ্গু করেননা প্লিজ।
সায়েমের কথায় সবাই হেসে দিল। আর তানি বেচারি পারছেনা এখন মাটির ভেতর ঢুকে যেতে। সবার সামনে এভাবে লজ্জায় পরতে হলো।
নূর হাসতে হাসতে হঠাৎ পাশে তাকাতেই খেয়াল করলো, পাশের টেবিলের সব মেয়েগুলো আদিত্যর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে। কেউ কেউ আদিত্যকে দেখছে আর নিজেদের ভেতর হাসাহাসি করছে। যেন এর আগে কখনো ছেলেমানুষ দেখেনি। এসব দেখে নূরের প্রচুর রাগ লাগছে। ইচ্ছে করছে এখুনি যেয়ে সব কয়টার চোখ কানা করে দিতে। কতো বড়ো লুচু মেয়েগুলো। কিভাবে অন্যের হবু বরের দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জা শরম যেন সব বাসায় রেখে এসেছে।
নূরের কেন যানি আদিত্যর উপরও ভীষণ রাগ হচ্ছে। কি দরকার ছিল এতো সুন্দর হওয়ার? একটু কম সুন্দর হলেতো মেয়েরা আর এমন পিছু লাগতো না। নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে দেখলো, আদিত্য এটিটিউডের সাথে কার সাথে যেন কথা বলছে। আজ আদিত্যকে একটু বেশিই হ্যান্ডসাম লাগছে। নূর মনে মনে বললো, উনাকেতো দেখো কতো সেজেগুজে এসেছে। মনে হচ্ছে শপিংয়ে না। কোনো রেম্প শোতে মডেলিং করতে এসেছে, হুহ্।
নূরের ভাবনার মাঝেই খাবার চলে এলো।
সবাই খাচ্ছে, কিন্তু নূর না খেয়ে গাল ফুলিয়ে বসে আছে।
আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..কি হলো? তুমি খাচ্ছ না কেন? খাবার পছন্দ হয় নি? অন্য কিছু অর্ডার করবো তোমার জন্য?
নূর গাল ফুলিয়ে বললো।
…খাবোনা আমি। আমার ক্ষিদে নেই।
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
…..খাবেনা মানে? তুমি সেই সকালে ব্রেকফাস্ট করেছো।তারপর আর কিছুই খাওনি। দেখ তোমাকে আমি আগেই বলেছি। খাবার নিয়ে অনিয়ম কিন্তু আমি একদম মেনে নিব না। তাই কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে নেও।
নূর একবার মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে আবার আদিত্যের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বললো।
….বললাম না, আমার ক্ষিদে নেই? আমি খাবো না। তোমরা খেয়ে নেও। আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।
নূরের কথায় আদিত্য একটু অবাক হলো। মনে মনে ভাবলো, এর আবার কি হলো হঠাৎ করে?
তানি নূরের ব্যাপারটা ঠিকই বুঝতে পেরেছে।কারণ ও নিজেও খেয়াল করেছে, পাশের মেয়েগুলো ড্যাবড্যাব করে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে আছে। তানি সানার কানের কাছে মুখ নিয়ে নূরকে শুনিয়ে বললো।
….তুমি কি কোথাও কিছু পোড়ার গন্ধ পাচ্ছো?
সানা ভ্রু কুঁচকে বললো।
…মানে?
তানি সানাকে চোখের ইশারায় মেয়েগুলোকে দেখিয়ে, ব্যাপার টা বুঝালো। সানা বুঝতে পেরে দুষ্টু হেসে বললো।
….হ্যাঁ ঠিকই বলেছো। এখানকার পরিবেশ কেমন যেন গরম গরম লাগছে। আমারতো সেই গারমি গানটা মনে পরছে।
♬ ♬ ♬ ♬ হায় গারমি….
এদের কথা শুনে নূর চোখ গরম করে তানির দিকে তাকালো। তানি বেচারি আর কিছু না বলে চুপচাপ সোজা হয়ে বসে রইলো।
আদিত্য উঠে নূরের পাশে গিয়ে বসে বললো।
….ঠিক আছে চলো আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের প্লেট থেকে চামচে করে খাবার নিয়ে নূরের মুখের সামনে ধরলো।
নূর একবার আরচোখে মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলো, মেয়েগুলো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। যেন ওরা নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না, যে সাদমান শাহরিয়ার আদিত্য কোনো মেয়েকে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে।
নূর ওদের এমন অবস্থা দেখে বাঁকা হেসে আদিত্যের হাতে থাকা খাবার মুখে নিল। তারপর আদিত্যের হাতেই খাবার খেতে লাগলো।
তানি আর সানা দুই গালে হাত দিয়ে বললো।
….Awwwwwwww😱
নূর ওদের কথায় লজ্জা পেয়ে লাজুক হাসলো। আর আদিত্য মুচকি হাসলো।
আবির বলে উঠলো।
….. বাচ কর ভাই। তোদের এতো পেয়ার দেখে আমার আবার ডায়াবেটিস না হয়ে যায়।
সায়েম আপসোসের সুরে বলে উঠলো।
….ব্রো তোমার তাও গার্লফ্রেন্ড আছে। একবার এই অধমের কথা ভাবো। আমার মতো ব্যাচেলর একটা ছেলের সামনে এভাবে তোমরা খুল্লাম খুল্লা পেয়ার করলে, অনেক কষ্ট হয় ব্রো।
ওদের কথায় সবাই হেসে দিল।
খাওয়া শেষে উঠে দাঁড়িয়ে যেতে নিলেই, সানা নূরের কানে কানে বললো।
…ভাবি ওই মেয়েগুলোকে মজা দেখানোর একটা ভালো উপায় আছে আমার কাছে।
নূর সানার দিকে তাকিয়ে বললো।
…..মানে?
সানা দুষ্টু হেসে বললো।
…এখুনি দেখাচ্ছি।
কথাটা বলেই সানা নূরের পায়ের সামনে পা রাখতেই নূর হোঁচট খেয়ে পরে গেলো।
নূর আচমকা পরে যাওয়ায় একটু আওয়াজ করে উঠলো।
…আহহ্।
এটা দেখে আদিত্য সাথে সাথে দৌড়ে নূরের কাছে এসে নূরকে ধরে বিচলিত হয়ে বললো।
….কি হয়েছে? কিভাবে পরলে? বেশি ব্যাথা পেয়েছ? কোথায় লেগেছে? বলনা প্রাণপাখী?
নূর কিছু বলতে যাবে, তার আগেই সানা তড়িঘড়ি করে বললো।
…..ইশশশ ভাবি মনে হয় কতো ব্যাথা পেয়েছে? হয়তো উঠে দাড়াতেও পারবে না।
কথাটা বলেই নূরের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিল।
নূর বুঝতে পারলো এসব ওর প্ল্যান।
আদিত্য কোনো কিছু না ভেবে নূরকে পাঁজা কোলে তুলে নিল। নূরকে কোলে নিয়েই হাঁটা শুরু করলো।
পেছন থেকে সায়েম মুখে আঙুল দিয়ে শিস দিয়ে উঠলো। বাকি সবাই তালি বাজাতে লাগল।
নূর লজ্জায় আদিত্যর বুকে মুখ লুকালো। একবার মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলো সবগুলোর মুখের ওপর যেন বাজ পড়েছে। নূরের মনে মনে প্রচুর মজা লাগছে মেয়েগুলোকে এভাবে দেখে। নূর মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে আদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে আদিত্যের বুকে মাথা রেখে বিজয়ী হাসি দিয়ে মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো।
নূরের এসব কাজ আদিত্যর চোখ এড়ালো না। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে একবার মেয়েগুলোর দিকে তাকালো, আবার নূরের দিকে তাকালো। আদিত্য এতক্ষণে আসল ঘটনাটা বুঝতে পারলো। আর বুঝতে পেরে আদিত্য ঠোঁট কামড়ে মাথা নাড়িয়ে হেসে দিল।
তানি আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
….দেখেছ ভাইয়া কতো কেয়ারিং? তুমি আজ পর্যন্ত একবারও আমাকে কোলে নাওনি।
আবির বলে উঠলো।
….তো তুমিও কি নূর ভাবির মতো পাতলা নাকি? নিজের ওজন দেখেছ? তোমাকে উঠালে, আমিই উপরে উঠে যাবো।
ফট করে কথাটা বলে, আবির যখন বুঝতে পারলো ও কি বলে ফেলেছে। তখন জিহ্বায় কামড় দিয়ে ভয়ে ভয়ে তানির দিকে তাকালো।
তানি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে রাগে কটমট করে বললো।
….কিহহ?কি বললে তুমি? আমি মোটা? ঠিক আছে আজকের পরে আমার কাছে আবার এসো। তখন দেখাবো মজা হুহ্😠
কথাটা বলেই তানি ওখান থেকে গটগট করে চলে গেলো।
সায়েম বলে উঠলো।
….এটা কি করলে ব্রো? ঘুমন্ত বাঘিনীকে জাগিয়ে দিলে? এখন তো তোমাকে উপর ওয়ালাই বাচাতে পারে। আমার সমবেদনা তোমার সাথে ব্রো।
কথাটা বলেই সায়েমও চলে গেলো
আবির বিড়বিড় করে বললো।
….আব তেরা কেয়া হোগা আবির? সব তোর জন্য হয়েছে ভাই। কি দরকার ছিল এতো হিরোগিরি দেখানোর?নিজেতো হিরো সেজে চলে গেলে। আর এখানে আমাকে ফাঁসিয়ে গেলে। হায়, আমার কিউটি। তারপর আবিরও দৌড়ালো তানির পেছনে।
চলবে……