ভালোবাসার চেয়েও বেশি 💞পর্ব-৫৪

0
8579

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৫৪

★ সকাল ৮টা
জানালা দিয়ে আসা সকাল বেলার মিষ্টি রোদ ঘরে ঢুকতেই নূরের ঘুম ভেঙে গেল। এমনিতে নূরের ঘুম ভোর বেলাই ভেঙে যায়। তবে কাল সারারাত আদিত্যের ভালোবাসার অত্যাচারে নূর ঘুমাতে পারেনি। ভোর পাঁচটার দিকে একটু ঘুমিয়েছে।

ঘুম ভাঙতেই নূরের কানের কাছে ঢিপঢিপ আওয়াজ শুনতে পেল। নূর আস্তে করে চোখ খুলে তাকালো। সামনে তাকাতেই আদিত্যের উন্মুক্ত বুক দেখতে পেল। নূর একটু পাশে ফিরতে গিয়ে দেখলো ও নড়তে পারছে না। কারণ আদিত্য ওকে হাত পা দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। যেন ছেড়ে দিলেই কোথাও হারিয়ে যাবে। নূর খেয়াল করলো ওদের দুজনের গায়ে একটা চাদর ছাড়া আর কিছুই নেই। কাল রাতের কথা মনে করতেই নূর লজ্জায় লাল হয়ে গেল।

নূর মাথাটা একটু উপরে তুলে দেখলো আদিত্য গভীর ঘুমে মগ্ন। ঘুমন্ত অবস্থায় কতো সুন্দর লাগছে আদিত্যকে। সিল্কি চুলগুলো ফ্যানের বাতাসে কপালে ওড়াউড়ি করছে। গালে আর গলায় লিপস্টিকের দাগ লেগে রয়েছে। যা দেখে নূর লাজুক হাসলো। তারপর আদিত্যের দিকে মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে আদিত্যের গালে আলতো করে হাত বোলাতে লাগলো। আজ এই মানুষটার জন্য আমার জীবনে এতো সুখের দিন এসেছে। যার আমি কখনো কল্পনাও করিনি। আজ নিজেকে অপয়া না বরং দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি সুখী আর ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। কারণ আমি তোমাকে পেয়েছি। কথাগুলো ভেবে নূর আদিত্যের খোলা বুকে একটা চুমু খায় তারপর আদিত্যর বুকে নাক ঘষে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে।

আদিত্যও নড়ে উঠে নূরকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। নূরের হঠাৎ সময়ের কথা মনে হলো। নূর দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ৮-৩০ বেজে গেছে। নূর চোখ বড়ো বড়ো করে মনে মনে ভাবলো, এতবেলা হয়ে গেছে আর আমি টেরই পেলাম নাহ? কিন্তু আমি উঠবো কিভাবে? আদিত্য তো আমাকে একদম আটকে দিয়েছে। নূর আস্তে করে আদিত্যের হাতটা নিজের ওপর থেকে সরানোর চেষ্টা করলো যাতে আদিত্যর ঘুম না ভাঙে। কারণ আদিত্যের ঘুম ভেঙে গেলে, নূর আদিত্যের সামনে লজ্জায় পরে যাবে। অনেক কষ্টে নূর আদিত্যের প্যাঁচ থেকে বেড়িয়ে আসতে সক্ষম হয়। নূর একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে,চাদরের ভেতর থেকেই বিছানার নিচে হাত দিয়ে এদিক ওদিক হাতিয়ে পড়ার জন্য কিছু খুজতে থাকে। নূর হাতের কাছে আদিত্যের শার্টটা খুঁজে পায়। নূর তাড়াতাড়ি করে ওটাই পরে নেয়। শার্ট পরা শেষে নূর উঠতে নিলেই আদিত্য নূরের হাত ধরে টান দিয়ে আবার বালিশে শুইয়ে দেয়। তারপর উপর ঝুঁকে এক হাত দিয়ে নূরের মুখের ওপর আসা চুলগুলো সরিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে, আঙুল দিয়ে নূরের গালে স্লাইড করে ঘুমো ঘুমো চোখে তাকিয়ে নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠলো।
…..কোথায় যাচ্ছ প্রাণপাখীটা হুম? সকাল সকালই নিজের বরকে রেখে চলে যাচ্ছ,এটা কি ঠিক?

নূর যে ভয়টা পাচ্ছিলো সেটাই হলো। এখন কিভাবে ছাড়া পাবে ও?

আদিত্য মুচকি হেসে আবার বলে উঠলো।
…..আমি যখনই ভাবি যে তোমার সব রুপ বোধহয় দেখা শেষ। তখনই তুমি তোমার নতুন কোথাও রুপ দেখিয়ে আমাকে সারপ্রাইজ করে দাও।

….মা মানে?

….মানে সকাল সকাল তোমার এই ঘুমো ঘুমো চেহারা। উফফ একদম কাতিলানা। হ্যাঁ আগেও একবার দেখেছি তোমার এই চেহারা। তবে আজকেরটা অন্যরকম । আজকে তোমার চেহারায় এক অন্যরকম উজ্জ্বলতা দেখা যাচ্ছে। এটা হয়তো কাল রাতে আমার ভালোবাসার কামাল। বায়দা ওয়ে আমার শার্টে কিন্তু তোমাকে অনেক হট লাগছে।

আদিত্যের কথায় নূর লজ্জায় লাল হয়ে, কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো।
….অ অনেক বে বেলা হয়ে গেছে। এখন উঠতে দেও প্লিজ?

আদিত্য আরও একটু ঝুকে নূরের নাকের সাথে নাক ঠেকিয়ে লো ভয়েসে বলে উঠলো।
…. তো বেলা হয়েছে তো কি হয়েছে? তুমি তোমার হাসব্যান্ড এর সাথে শুয়ে আছ। যতক্ষণ ইচ্ছে ততক্ষণ আমরা শুয়ে থাকতে পারি। এতে সমস্যার কি আছে?

নূর বিনতীর সুরে বললো।
….প্লিজ যেতে দেওনা?

আদিত্য নূরের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে নেশা ভরা কন্ঠে বললো।
….ঠিক আছে যেতে দেব। আগে আমার মর্নিং কিস দিয়ে দেও। তাহলে যেতে দেব।

নূর চোখ বড়ো বড়ো করে বললো।
….কিহ্

….কি না জ্বি। এন্ড নাও গিভ মি মাই চুম্বি।

….ক কিন্তু আমিতো এখনো ব্রাশ করিনি। বাশি মুখে কিভাবে?

….তাতে কি হয়েছে? আমি তোমার সাথে সব ধরনের চুম্বনের মজা নিতে চাই।
কথাটা বলেই আদিত্য নূরের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে সময় নিয়ে একটা চুমু খেল।

চুমু দেওয়া শেষ হলে নূর বলে উঠলো।
….এ এখন তো ছাড় প্লিজ?

….নাহ ছারবোনা।

….কেন?

আদিত্য গায়ের চাদর টা কোমড়ে পেঁচিয়ে নিয়ে নিচে নেমে দাঁড়িয়ে, নূরকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে বললো।
….কারণ আমি তোমাকে নিয়ে যাবো।
কথাটা বলেই আদিত্য নূরকে কোলে তুলে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগুলো।

ওয়াশরুমে এসে আদিত্য নূরকে ফ্লোরে নামিয়ে দিল। তারপর একটা নতুন ব্রাশে টুথপেষ্ট লাগিয়ে নূরের হাতে দিল ব্রাশ করতে।

নূর মুচকি হেসে বললো ।
…..তুমিতো আমাকে এমন ভাবে ট্রিট করছো, যেন আমি কোনো ছোট্ট বাচ্চা। আমার কাজ আমি একাই করতে পারবো।

….আমি জানি তুমি পারবে। কিন্তু আমি চাই না তুমি করো। তোমার জন্য এসব করতে আমার অনেক ভালো লাগে। এখন থেকে আমি যতক্ষণ বাসায় থাকবো, তোমার সব কাজ আমি করে দেব বুঝেছ? এখন বেশি কথা না বলে ব্রাশ করে নেও। নূর মাথা ঝাকিয়ে ব্রাশ করা শুরু করলো।

ব্রাশ করা শেষে আদিত্য নূরকে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে দিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিল। তারপর দুজন একসাথে শাওয়ার নিল। এরমধ্যে নূরের সাথে আদিত্যের নানা রকমের দুষ্টুমি তো আছেই।

শাওয়ার শেষে আদিত্য নিজে একটা তোয়ালে কোমড়ে পেচিয়ে, আরেকটা তোয়ালে নূরকে পরিয়ে দিল। তারপর আবার নূরকে কোলে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এলো।

আদিত্য নূরকে হালকা গোলাপি রঙের একটা জামদানী শাড়ি পরিয়ে দিল। তারপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….আজ আমার বউকে আমি নিজের হাতে সাজাবো।
কথাটা বলে আদিত্য নূরকে সাজাতে শুরু করলো।

নূর শুধু অবাক নয়নে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মানুষটা আর কতো ভাবে ভালোবাসবে আমাকে? আমি কি তার মতো করে কখনো ভালোবাসতে পারবো?

সাজানো শেষে আদিত্য কাবার্ড থেকে একটা ছোট বক্স বের করে আনল। নূরের সামনে এসে বক্সটা খুলে একটা ডায়মন্ডের লকেট বের করে নূরের গলায় পরিয়ে দিল। তারপর একজোড়া ডায়মন্ডের ছোট কানের দুল বের করে নূরের কানে পরিয়ে। এরপর একজোড়া ডায়মন্ড পাথর বসানো সোনার চুরি নূরের হাতে পরিয়ে দিল। সব পরানো শেষে আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….এগুলো কাল রাতেই দিতে চেয়েছিলাম, তোমার গিফট হিসেবে। কিন্তু মনে ছিলনা। তাই এখন দিলাম। এখন থেকে এগুলো সবসময় পরে থাকবে বুজেছ?

নূর মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো।

আদিত্য দুই হাতে নূরের মুখটা আগলে ধরে বললো।
….আজ আমার প্রাণপাখী টাকে একদম বউ বউ লাগছে। আজ আমার পৃথিবীটা সত্যি সত্যিই নূরের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের কপালে একটা চুমু দিয়ে নূরকে জড়িয়ে ধরলো। নূরও দুই হাতে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো।

কিছুক্ষণ পর আদিত্য নূরকে ছেড়ে দিয়ে বললো।
….ওহো আমিতো ভুলেই গেছি। কতবেলা হয়ে গেছে, তোমার নিশ্চয় ক্ষুধা পেয়েছে। তুমি একটু ওয়েট করো আমি কিচেন থেকে তোমার জন্য কিছু বানিয়ে আনছি।

নূর বলে উঠলো,
…. আমি থাকতে তুমি কেন নাশতা বানাবে? তুমি বসো আমি এখুনি নাশতা বানিয়ে আনছি।

….উহু, আমি বলেছিনা?আমি বাসায় থাকা অবস্থায় সব কাজ আমি করবো। এখন চুপচাপ বসো আমি নাশতা বানিয়ে আনছি।

….কিন্তু?

….কোনো কিন্তু না। আমি যখন বলেছি তখন নাশতা আমিই বানাবো। নো মোর আর্গুমেন্ট।
কথাটা বলেই আদিত্য চলে গেলো।

নূর বেচারি আর কি করবে? আদিত্যের সাথে কি আর ও পারবে? তাই চুপচাপ বসে রইলো।

আদিত্য নাশতা বানিয়ে নূরকে নিজের হাতে খাইয়ে দিল।নূরও আদিত্যকে খাইয়ে দিল। খাওয়া দাওয়া শেষে আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….এখন একটু রেস্ট করো। তারপর আমরা এখান থেকে সরাসরি রিসিপশন পার্টির ভেন্যুতে চলে যাবো।

নূর মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো।
———————————

সন্ধ্যা ৭-৩০
রিসিপশন পার্টি পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে। গেস্টরাও আসা শুরু হয়ে গেছে। নূরের বাবারা মাত্রই এসে পৌঁছেছে। আদিত্য ওদের জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল।
ওরা গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে ঢুকছে।

আবির, তাসির আর সায়েম একজায়গায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো। নূরের বাবাদের আসা দেখে সেদিকে তাকিয়ে দেখলো, রবি কোট প্যান্ট পরে একদম জেন্টেলম্যান সেজে এসেছে। ওঁরা খেয়াল করলো রবি একটা মেয়ের হাতে হাত ধরে আসছে। রবি আবিরদের দেখে ওদের কাছে এগিয়ে আসলো। তারপর ওদের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..তো, কেয়া হালচাল বৎস গণ?

আবির মুচকি হেসে বললো।
….জ্বি গুরুজি, বাচ আপকি কৃপা।

রবি ওর সাথে থাকা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো ।
….নিনা বেবী, তুমি যেয়ে ওদিকে বসো। আমি একটু পরে আসছি।

নিনা মুচকি হেসে বললো।
….ঠিক আছে, তুমি যেমনটা বলো।
কথাটা বলেই নিনা ওখান থেকে চলে গেলো।

নিনা চলে যেতেই রবি ওদের দিকে তাকিয়ে এটিটিউড নিয়ে বললো।
….দেখেছ, আমি বলেছিলাম না? আমার গার্লফ্রেন্ড আমার কথায় ওঠে আর বসে।

সায়েম বলে উঠলো।
….জ্বি জ্বি বাবা আপ ধাইন্য হো আপনি মহাজ্ঞানী, বীরপুরুষ, সুপুরুষ,।

নিজের এতো প্রশংসা শুনে রবি ফুলে বেলুন হয়ে যাচ্ছে।

আবির বলে উঠলো।
….আরে আমিতো বলি আপনি পুরুষই না।

রবি থতমত খেয়ে বললো।
…মানে?

….মানে আপনি মহাপুরুষ।

….ঠিক আছে, ঠিক আছে। এবার থাম তোমরা। আমার আবার নিজের প্রশংসা শুনতে ভালো লাগে না। যাইহোক আমি এখন যায় আপুর সাথে দেখা করে আসি। তোমাদের সাথে পরে কথা হবে।
কথাটা বলেই রবি ওখান থেকে চলে গেল।

একটু পরে সব লাইট বন্ধ হয়ে গেলো। আর একটা স্পট লাইট এসে পড়লো সিঁড়ির ওপর। যেখান দিয়ে আদিত্য নূরের হাত ধরে ধীরে ধীরে নেমে আসছে। দুজনকে একসাথে এত সুন্দর মানিয়েছে যে সবাই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
আজ দুজনেই এক কালারের ড্রেস পরেছে। আদিত্য পড়েছে রয়াল ব্লু কালারের রাউন্ড কলার ওয়ালা ব্লেজার আর প্যান্ট। আর নূর পড়েছে রয়াল ব্লু কালারের লেহেঙ্গা। নূরের মাথার ওড়নাটা নিচে ফ্লোর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। দুজনকে দেখে মনে হচ্ছে মেট ফর ইচ আদার কাপল।সবাই ওদের দেখে করতালি দিচ্ছে।

আদিত্য নূরের হাত ধরে নিয়ে এসে স্টেজে বসালো। নিজেও ওর পাশে বসলো। নূরের বাবারা এসে ওদের সাথে দেখা করে গেল। তারপর ধীরে ধীরে সব গেস্টরা এসে ওদের অভিনন্দন জানাতে লাগলো। আর নূর আর আদিত্যের সাথে নানান পোজে ছবি তুলতে লাগলো ।

এভাবে অনেকক্ষণ ধরে সবার সাথে ছবি তুলতে তুলতে নূরের কেমন যেন মাথা ব্যাথা করছে। তবুও মুখে হাসি রেখে সবার সাথে ছবি তুলছে।
তবে আদিত্য ঠিকই বুঝতে পারছে। আর বুঝতে পেরে আদিত্য আবিরের দিকে ইশারা করে কিছু একটা বুঝালো। আবিরও মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো।

একটু হঠাৎ আবারও সব লাইট বন্ধ হয়ে গেলো। সবাই একটু চমকে গেল। কিছুক্ষণ পরেই একটা স্পট লাইট স্টেজের সামনে হলের মাঝখানে পড়লো। যেখানে আদিত্য গিটার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কানে ছোট মাইক লাগানো। নূর একটু চমকে গিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখলো আদিত্য নেই। আদিত্য উঠে গেলো? আমিতো টেরই পেলাম না।

নূরের ভাবনার মাঝেই আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….দিস ওয়ান্স ফর ইউ, মাই লাভ।
কথাটা বলে আদিত্য গিটার বাজিয়ে গাওয়া শুরু করলো

♬ বুলাবে তুঝে ইয়ার আজ মেরি গালিয়া
♬ বাসাউ তেরে সাঙ্গ মে আলাগ দুনিয়া
♬ বুলাবে তুঝে ইয়ার আজ মেরি গালিয়া
♬ বাসাও তেরি সাঙ্গ মে আলাগ দুনিয়া

♬ না আয়ে কাভি দোনমে জারাভি ফাসলে
♬ বাস এক তু হো,এক মে হু অর কোয়ি না
♬ হায় মেরা সাবকুছ তেরা তু সামাঝ লে
♬ তু চাহে মেরে হাক কি জামিন রাখলে
♬ তু সাসো মে ভি নাম তেরা লিখ দে
♬ মে জিউ জাব জাব তেরা দিল ধারকে

♬ তুজছে মেরা ইয়ে জি নেহি ভারতা
♬ কুছ ভি নেহি আসার আব কারতা
♬ মেরি রাহ তুজ ছে,মেরি চাহ তুজ ছে
♬ মুঝে বাস এহি রেহ জানা

♬ লাগি হে তেরি আদাতে মুঝে জাবছে
♬ হায় তেরে বিন পাল ভি বারাছ লাগতে
♬ বুলাবে তুঝে ইয়ার আজ গালিয়া
♬ বাসাও তেরে সাঙ্গ মে আলাগ দুনিয়া

(এতটুকু গেয়ে আদিত্য গিটার রেখে নূরের কাছে এসে নূরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে নূরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। নূর মুচকি হেসে আদিত্যের হাতে হাত রাখল। আদিত্য নূরের হাত ধরে ধীরে ধীরে স্টেজের নিচে এসে আবার আগের জায়গায় দাঁড়াল। তারপর নূরের ডান হাতটা নিজের কাঁধে রাখল।আর নিজের বাম হাতটা আলতো করে নূরের কোমড়ে রেখে, আরেক হাত নূরের হাতের ভেতর দিয়ে ধীরে ধীরে নাচতে নাচতেগাইলো)

♬ জো হোভে তু উদাস মেনু দেখ হাসদে
♬ তু চাহে মেরে হাক কি জামিন রাখলে
♬ তু সাসো মে ভি নাম তেরা লিখ দে
♬ মে জিউ জাব জাব তেরা দিল ধারকে

♬ তুজছে মিলা তো সিখা মেনে হাসনা
♬ আয়া মুঝে সাফার মে ঠেহেরনা
♬ মে তো ভুল গাই দুনিয়া কা পাতা
♬ ইয়ারা জাব ছে তুঝে হে জানা

♬ হে তু হি দিল জা হে মেরি আব সে
♬ ভে জিকর তেরা না যায়ে লাব ছে
♬ বুলাবে তুঝে ইয়ার আজ মেরি গালিয়া
♬ বাসাউ তেরে সাঙ্গ মে আলাগ দুনিয়া

♬ জো হোভে তু উদাস মেনু দেখ হাসদে
♬ তু চাহে মেরে হাক কি জামিন রাখলে
♬ তু সাসো মে ভি নাম তেরা লিখ দে
♬ মে জিউ জাব জাব তেরা দিল ধারকে

♬ পিয়ার দি রাভা উত্থে ইয়ার তু লে আয়া
♬ মেনু জিনে দা মাতলাব আজ সামাঝ আয়া
♬ পারায়া মুঝে কারনা না তু সোনেয়া
♬ চান্না মে তু তুর জানা

গান শুনতে শুনতে নূর আদিত্যের মোহে হারিয়ে গেছে। বিভোর হয়ে তাকিয়ে আছে আদিত্যের দিকে। আশেপাশের কোনকিছুর খেয়াল নেই ওর। মনে হচ্ছে ওরা দুজন ছাড়া এখানে কেউ নেই। নূর ধীরে ধীরে নাচতে নাচতে নিজের মাথাটা আলতো করে আদিত্যের বুকে এলিয়ে দিল।

আদিত্যের এত সুন্দর গান আর ওদের কাপল ডান্স দেখে সবাই জোরে জোরে করতালি দিয়ে উঠলো।
করতালির শব্দে নূর বাস্তবে ফিরে এলো। লজ্জায় তাড়াতাড়ি করে আদিত্যের কাছ থেকে একটু সরে দাঁড়াল।
————–

রাত -১১টা
রিসিপশন পার্টি শেষে সবাই আবার বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। আজকে আদিত্য আর নূর ওদের সাভারের বাড়িতে যাবে।

আদিত্য নূরের হাত ধরে বাসার দরজার সামনে এস দাঁড়াতেই, সানা বলে উঠলো।
….আরে দাঁড়াও দাঁড়াও ভাইয়া এভাবে না, তুমি ভাবিকে কোলে নিয়ে ভেতরে ঢুকবা।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….হোয়াই নট। এটাতো আমার ফেবারিট কাজ।

কথাটা বলেই আদিত্য নূরকে কোলে তুলে নিল। নূর এদিকে সবার সামনে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।
সায়েম শিস বাজিয়ে উঠলো।আবির সবকিছু ভিডিও করছে।

আদিত্য নূরকে কোলে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিল। তারপর নিজেও ওর পাশে সোফায় বসে পড়লো।

কিছুক্ষণ পর আদিত্যের বাবা ওখানে এসে দাঁড়াল। নূর উঠে আদিত্যের বাবার পায়ে সালাম করতে নিলে, আদিত্যর বাবা নূরকে থামিয়ে দিয়ে বললো।
….আরে আরে কি করছো? পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে নেই। এমনিতে মুখে সালাম দিলেই হয়। আর তাছাড়া তুমি আমার মেয়ের মতোই। তাই এসব ফর্মালিটি করতে হবে না।

নূর মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো।

আদিত্যের বাবা তার হাতে থাকা গহনার বক্স থেকে একটা নেকলেস বের করে নূরের গলায় পরিয়ে দিয়ে বললো।
…..তোমার শাশুড়ী বেঁচে থাকলে সেই নতুন বউকে গ্রহণ করে নিতো। কিন্তু সেতো আর নেই তাই আমাকেই করতে হচ্ছে। এটা তোমার শাশুড়ীকে বিয়ের সময় আমার মা দিয়েছিল। আর আজ তোমাকে দিলাম। সবসময় সুখী থাকো।

আদিত্যের বাবা সানার দিকে তাকিয়ে বললো।
…রাত অনেক হয়েছে। নূর মাকে ওদের রুমে নিয়ে যাও।

সানা মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো।

আদিত্যের বাবা চলে যেতেই সানা নূরকে আদিত্যের রুমে নিয়ে গেল। নূর ঢুকে নূর এদিক ওদিক তাকিয়ে রুমটাকে ঘুরে ঘুরে দেখলো। রুমের দেয়ালে আদিত্যের বড়ো একটা ছবি টানানো আছে। নূর বেডের দিকে তাকিয়ে দেখলো, আজকেও বেডটাকে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। যা দেখে নূর লজ্জায় পরে গেলো।

একটু পরে আদিত্যও রুমের দিকে যেতে লাগলো। রুমের সামনে এসে দেখলো, দরজার সামনে সানা,নিশি,সায়েম আর আবির দাঁড়িয়ে আছে।
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কিরে তোরা এখানে বডিগার্ডের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ঘুমাবি না তোরা? সর এখান থেকে আমাকে যেতে দে।

সানা বলে উঠলো।
…..ভেতরে যেতে হলে ট্যাক্স ভরতে হবে।

….মানে? কিসের ট্যাক্স?

আবির বলে উঠলো।
….আলে লে লে, ট্যাক্স কি বোঝনা তাইনা? তুই কি ভেবেছিলি, তুই কাল একা একা বাসর করে ফেলেছিস দেখে কি আজও পার পেয়ে যাবি? কখনোই না। ভালোই ভালোই আমাদের পাওনা দিয়ে দে। নাহলে আমরা এখান থেকে এক পাও সরছি না।

…..ওঁকে ফাইন, কি চাস বল?

…..বেশি কিছু না, শুধু পঞ্চাশ হাজার টাকা মাত্র।

….ওয়াট, পাগল হয়ে গেছিস তোরা? পঞ্চাশ হাজার টাকা তো এমন ভাবে চাচ্ছিস যেন পাঁচ টাকা দামের ললিপপ চাচ্ছিস। আর আমি কি এতো ক্যাশ নিয়ে ঘুরি নাকি?

…..তোর কাছেতো এই সামান্য টাকা ললিপপের মতোই। এতো কথা না বলে দিয়ে দিলেই হয়ে যায়। ক্যাশ না থাকলে কার্ড হলেও চলবে।
আবির আদিত্য কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো।
….নাহলে রাত কিন্তু শেষ হয়ে যাচ্ছে?

আদিত্য এবার একটু গলা খাঁকারি দিয়ে পকেট থেকে একটা ক্রেডিট কার্ড বের করে দিয়ে বললো ।
…..ঠিক আছে, ঠিক আছে। এই নে কার্ড, এখান থেকে ক্যাশ করে নিস। এখন সর এখান থেকে।

সবাই কার্ড পেয়ে হইহই করতে করতে ওখান থেকে চলে গেলো।

আদিত্য দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। ভেতরে ঢুকে দেখলো নূর ওর নেকলেস খোলার চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। আদিত্য ধীরে ধীরে নূরের পেছনে দাঁড়িয়ে বললো।
…..এনি প্রবলেম প্রাণপাখী? আই ক্যান হেল্প ইউ।

হঠাৎ আদিত্য আসায় নূর একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। লজ্জায় মাথা নিচু করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো।
….আ আসলে নেকলেসটা খুলতে পারছি না। পেছনে চুলের সাথে পেচিয়ে গেছে।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….দেখি আমি করে দিচ্ছি।

আদিত্য নূরের পিঠের ওপর থেকে চুল সরিয়ে নেকলেসের হুক খোলার চেষ্টা করছে। হুক খোলা হয়ে গেলে আদিত্য নেকলেসটা গলার পেছন থেকে নামিয়ে দিল। আর নূর সামনে থেকে সেটা ধরে নিয়ে আস্তে করে রেখে দিল। নেকলেস খোলা শেষে আদিত্য নূরের গলার পেছনে ঠোঁট চেপে ধরে চুমু দিল। সাথে সাথে নূর কেঁপে উঠলো। আদিত্য এবার নূরের এক কানের দুল খুলে দিয়ে কানে চুমু খেল। একই ভাবে আরেক কানের দুল খুলে দিয়ে চুমু খেল। নূরের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। দুই হাত দিয়ে লেহেঙ্গা খামচে ধরে আছে। আদিত্য নূরের পিঠে লেহেঙ্গার ফিতা একটানে খুলে দিয়ে, নূরের পিঠে চুমু খেতে লাগলো।

নূর আর সহ্য করতে না পেরে ওখান থেকে চলে যেতে নিলেই আদিত্য পেছন থেকে নূরের ওড়নার আঁচল টান দিয়ে নিজের বুকে এনে ফেলে। পেছন থেকে নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরে, নূরের কানের কাছে মুখ নিয়ে নেশা ভরা কন্ঠে বললো।
…..কোথায় যাচ্ছ প্রাণপাখি?

নূর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো।
…..চে চেঞ্জ করে আসি।

…..চেঞ্জ করার কি দরকার? এমনিতেও তো সব খুলতেই হবে। তুমি জানো আমাকে এখানে আসার জন্য ওই বাঁদরদের পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে আসতে হয়েছে। তাই আমি একদমই সময় নষ্ট করতে চাই না। কারণ আজকের সময়টা এতো টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। সেটা সুদে আসলে উসুল করতে হবে।

কথাটা বলেই আদিত্য নূরকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিয়ে এগিয়ে গেল। আর নূর সবসময়ের মতো লজ্জায় আদিত্যের বুকে মাথা গুঁজল।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here