#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৭১
★ পাঁচ মাস পর
♬ তেরে জানে কা গাম অর না আনে কা গাম
♬ ফির জামানে কা গাম কেয়া কারে
♬ রাহা দেখে নাজার রাত ভার জাগ কার
♬ পার তেরি তো খাবার না মিলে
♬ বহত আয়ি গায়ি ইয়াদে
♬ মাগার ইসবার তুম হি আনা
♬ ইরাদে ফিরসে জানে কি
♬ নেহি লানা তুম হি আনা
♬ মেরি দেহলিস সে হোকার
♬ বাহারে যাব গুজারতি হে
♬ এহা কেয়া ধুপ কেয়া সাবান
♬ হাওয়ায়ে ভি বারাছ তি হে
♬ হামে পুছো কেয়া হোতা হে
♬ বিনা দিল কে জিয়ে জানা
♬ বহত আয়ি গায়ি ইয়াদে
♬ মাগার ইসবার তুম হি আনা
♬ ইরাদে ফিরসে জানে কি
♬ নেহি লানা তুম হি আনা
♬ ওও ও ও ও ও
♬ কোয়ি তো রাহা ও হোগি
♬ জো মেরে ঘার কো আতি হে
♬ কারো পিছা সাদাও কা
♬ শুনো কেয়া কেহনা চাহতি হে
♬ তুম আয়োগে মুঝে মিলনে
♬ খাবার এভি তুম হি লানা
♬ বহত আয়ি গায়ি ইয়াদে
♬ মাগার ইসবার তুম হি আনা
♬ ইরাদে ফিরসে জানে কি
♬ নেহি লানা তুম হি আনা
♬ মারজাভা আ আ
♬ মারজাভা আ আ আআ
দূর কোথা থেকে গানটা ভেসে আসছে। ফ্লোরে আদিত্য পড়ে আছে বেহুশ অবস্থায়। বুকের মাঝে নূরের একটা শাড়ী জড়িয়ে ধরে আছে। জানালার পর্দাগুলো বাতাসে উড়ে আদিত্যর উপর দিয়ে বাড়ি খাচ্ছে।
একটু পরে আবির আর তাসির আদিত্যের বাসার লক খুলে ভেতরে ঢুকলো। ডক্টরকে সাথে করে নিয়ে এসেছে ওরা। ভেতরে ঢুকে বাসার অবস্থা দেখে বুঝতে পারলো ওরা যে আদিত্য কাল আবারও ভাংচুর করেছে। ওরা ডক্টরকে সোফায় বসতে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে আদিত্যের রুমে গেল। রুমে গিয়ে দেখলো আদিত্য মেঝেতে পড়ে আছে। আদিত্যের কাছে যেয়ে দেখলো। হাত পায়ের জায়গায় জায়গায় কেটে গিয়ে রক্ত জমে আছে। এসব দেখে ওরা খুব একটা অবাক হলো না। কারণ এসব দেখে দেখে ওরা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আদিত্য নিজেকে শাস্তি দেওয়ার জন্য নিজেকেই আঘাত করে। ও ভাবে ওর জন্যই আজ নূর হারিয়ে গেছে। ও যদি নূরকে ছেড়ে না যেত তাহলে নূর ওর কাছেই থাকতো।
নূর হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে এসব যেন আদিত্যর নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে। আদিত্য এই বাসায় একাই থাকে। সবাই ওঁকে অনেক বলেছে সবার সাথে সাভারের বাসায় থাকতে, কিন্তু ও শোনেন। আদিত্য বলে এখানে নূরের ঘ্রাণ মিশে আছে। তাই ও এখানেই থাকবে। সেদিনের পর নূরকে অনেক খুজেও পাওয়া জায়নি। আদিত্যের তো শুধু নিঃশ্বাসটাই চলছে, তাও শুধু এই আশায় যে ও একদিন না একদিন অবশ্যই নূরকে খুঁজে পাবে। সারাদিন পাগলের মতো শুধু নূরকে খোঁজে, আর রাত হলে নেশায় মাতাল হয়ে নিজেকেই এভাবে শাস্তি দেয়। তারপর বেহুশের মতো পরে থাকে। এই পাঁচ মাস ধরে এভাবেই চলছে। বাকি সবাই চেয়েও কিছু করতে পারে না। কিই বা করার আছে ওদের? নূরকে ছাড়া যে আদিত্য বেঁচে আছে এটাই তো ওদের কাছে অনেক।
তবে এই আশাটাও যে কতদিন থাকবে তা জানা নেই ওদের। মাত্রাতিরিক্ত নেশা,খাবার দাবারের অনিয়ম আর অতিরিক্ত মেন্টাল স্ট্রেস এর জন্য আদিত্যের শারীরিক অবস্থা দিনে দিনে অবনতি হচ্ছে। ওর হার্টটাও অনেক দূর্বল হয়ে গেছে। বিপি হাই হয়ে গেছে। ডক্টর বলেছে যে কোনো সময় আদিত্য স্ট্রোক করতে পারে। আর স্ট্রোক করলে আদিত্যের সারভাইভ করার পারসেন্টটেস অনেক কম। কিন্তু তবুও আদিত্যকে কখনো ডাক্তারের কাছে নেওয়া যায় না। তাইতো ডাক্তারকেই ওর কাছে নিয়ে আসতে হয়।
আবির আর তাসির একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজেদের চোখের পানি মুছে নিল। তারপর ফাস্ট এইড বক্স এনে আদিত্যের রক্ত গুলো পরিস্কার করে দিতে লাগলো। আদিত্যকে বেডে উঠালো না ওরা। কারণ আদিত্য মানা করেছে। আদিত্য বলে যেদিন ও ওর প্রাণপাখীকে খুঁজে পাবে সেদিন ও নূরকে বুকে নিয়ে ঘুমাবে। তার আগে ও বেডে শুবে না।
কিছুক্ষণ পরে তাসির ডক্টর নিয়ে এলো আদিত্যের কাছে। ডক্টর আদিত্যকে চেক আপ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো।
….দেখুন আমি আগেও বলেছি। এভাবেই চলতে থাকলে ওনাকে বাঁচান কঠিন হয়ে যাবে। ওনাকে এসব ছাড়তে হবে নাহলে কোনো কাজ হবে না।
তাসিররা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা ঝাকালো। কিছুক্ষণ পরে ডক্টর চলে গেল।
————–
নূর খিলখিল করে হেসে আদিত্যের সামনে দৌড়াচ্ছে আর বলছে।
…..হি হি আদিত্য ধরো আমাকে ধরো।
আদিত্যও হেসে নূরের পেছনে ছুটতে ছুটতে বলছে।
….প্রাণপাখী এখুনি ধরে ফেলছি তোমাকে দাড়াও।
হঠাৎ নূরের সামনে অন্ধকার নেমে আসতে লাগলো। নূর অন্ধকারের ভিতরে হারিয়ে যেতে লাগলো। আদিত্য ভয় পেয়ে গেল। নূর আদিত্যের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো।
….আদিত্য বাঁচাও আমাকে। আমি হারিয়ে যাচ্ছি। আদিত্য বাঁচাও আমাকে আদিত্য।
বলতে বলতে অন্ধকার গ্রাস করে নিল নূরকে।
আদিত্য নূরের দিকে দৌড়ে যেতে যেতে চিল্লিয়ে উঠলো।
….নূররররর
আদিত্য নূরের নাম নিয়ে চিল্লিয়ে চোখ খুলে উঠে বসলো। উঠে বসে জোরে জোরে হাঁপাতে লাগলো। ঘেমে পুরো শরীর ভিজে গেছে।
আবির আর তাসির ওখনেই সোফায় বসে ছিল। আদিত্যের চিল্লানি শুনে ওরা দৌড়ে আদিত্যের কাছে এসে বললো।
…কি হয়েছে আদি?এভাবে চিল্লালি কেন?
আদিত্য ওদের কথায় কান না দিয়ে নিজের মতো অস্বাভাবিক বলতে লাগলো।
….ন নূর নূর আমার প্রাণপাখী আমাকে ডাকছে। আমাকে যেতে হবে।
কথাটা বলে আদিত্য উঠতে নিলেই আবির আর তাসির ওর দুই হাত ধরে আটকে দিয়ে বললো।
….শান্ত হ আদি। কি করছিস?কেউ ডাকছে না তোকে। তুই কোনো স্বপ্ন দেখেছিস।
ওদের কথা আদিত্যের কানেই যাচ্ছে না। ও মতো যাওয়ার জন্য উগ্রত হচ্ছে। তাসির এবার রাগী কন্ঠে চেচিয়ে বলে উঠলো।
….বাচ্ আদি অনেক হয়েছে তোর পাগলামি। কি করছিস তুই? সবকিছুর একটা লিমিট আছে। আর কতো? তোর কি নিজের জানের মায়া নেই? তুই নিজেই যদি না বাঁচিস তাহলে নূরকে দিয়ে কি করবি? তোর জন্য কি শুধু নূরই সব?আমাদের কোনো মূল্য নেই তোর কাছে? তোর চিন্তায় যে আমরা মরছি সেটার কোনো দাম নেই? তুই জানিস তোর চিন্তায় চিন্তায় আঙ্কেল কতো অসুস্থ হয়ে পড়েছে?
আদিত্য আবার ফ্লোরে শুয়ে পড়ে আহত করুন কন্ঠে বললো।
….তো কি করবো বল? আমি কি ইচ্ছে করে এসব করি? আমার বুকটা চিরে যদি তোদের দেখাতে পারতাম, তাহলে বুঝতে পারতি এই বুকে কতো যন্ত্রণা। মনে হয় কেউ ধারাল ছুড়ি দিয়ে আমার বুকের ভেতর অনবরত আঘাত করেই যাচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে যায় আমার। এই হাত পায়ের রক্ত তো কিছুই না। আমার বুকের ভেতর এর থেকে হাজার গুণ বেশি রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমার প্রতিটা নিঃশ্বাস হাজার বার করে নূরের নামের মালা জপতে থাকে। নিঃশ্বাস টা চলছে শুধু নূরকে দেখার আশায়।
আদিত্যের কথায় ওদের চোখে পানি চলে এলো। আবির চোখের পানি মুছে জোরপূর্বক হেসে বলল।
….কিন্তু ভাই ভাবি যখন এসে তোর এই অবস্থা দেখবে, তখন তার কেমন লাগবে বল? তুই তো জানিসই ভাবি কেমন, তোকে এভাবে দেখে কেঁদে কেটে আমাদের বাড়ি ভাসিয়ে দিবে।
আদিত্য কষ্টের হাসি দিয়ে বললো।
….হ্যাঁ এটা তুই ঠিকই বলেছিস। আমার ছোট্ট ছোট্ট ব্যাপারেও আমার পাগলিটা কেঁদে কেটে নদী বানিয়ে ফেলে। পাগলিটা মজাও বোঝে না। জানিস সানা আর তাসিরের এঙ্গেজমেন্টের দিন নূর ভেবেছিল আমি ওর ওপর রাগ করেছি। আর তাই ও কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছিল। নিজের হাত ঘষে ঘষে চামড়া তুলে ফেলেছিল। অথচ দেখ এখন কতো নিষ্ঠুর হয়ে গেছে? আজ এতদিন হয়ে গেল ও আমাকে ছেড়ে রয়েছে। একবার আমার কথা মনে পড়ছে না ওর। একবারও ভাবছে না আমি ওকে ছাড়া কিভাবে বেঁচে আছি। নাহয় একটু ভুলই করে ফেলেছিলাম। ওকে রেখে চলে গিয়েছিলাম। তাই বলে কি আমাকে এভাবে শাস্তি দিবে?
কথা বলতে বলতে আদিত্যের চোখ ভরে আসলো। গলা কাপতে লাগলো। আদিত্য হঠাৎ উঠে বসে আবিরের পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো।
…..প্লিজ ভাই তোদের পায়ে পড়ি, তোরা আমার নূর আমার প্রাণপাখীকে এনে দেনা। আমিযে আর সহ্য করতে পারছি না। আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ তোরা এনে দেনা আমার নূরকে। আমি প্রমিজ করছি আমি এসব ছেড়ে দেব, আবার আগের মতো হয়ে। একবার শুধু আমার নূরকে এনে প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
আদিত্যকে এভাবে কাঁদতে দেখে আবির আর তাসিরের বুকটা ছিড়ে যাচ্ছে। যে ছেলেকে জীবনে কখনো কোনদিন কাঁদতে দেখেনি। সবসময় স্ট্রং আর সেল্ফ কনফিডেন্ট থেকেছে। সেই ছেলেকে আজ এভাবে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে দেখে ওরা সহ্য করতে পারছে না। আবির আর তাসির দুজন একসাথে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে ওরাও কেঁদে দিল। আবির আদিত্যর চোখ মুছে দিয়ে বলে উঠলো।
….তুই কাঁদিস না ভাই। আমরা অবশ্যই ভাবিকে খুঁজে বের করবো দেখে নিস।
আরো কিছুক্ষণ থেকে আবির আর তাসির চলে গেল। আর আদিত্য বেড়িয়ে পড়লো ওর প্রতিদিনকার কাজে, ওর প্রাণপাখীকে খুঁজতে।
———
বিকাল ৫টা
আবির মাত্রই অফিস থেকে এসেছে। রুমে ঢুকে দেখলো তানি টুলের ওপর দাঁড়িয়ে কাবার্ডের ওপর থেকে কিছু পারার চেষ্টা করছে। এটা দেখে আবির রাগী কন্ঠে বলে উঠলো।
….তানি,,,ওখানে কি করছ তুমি? ওখান থেকে পরে গেলে কি হবে তুমি জান। বলেছিনা এইসময় তোমাকে সাবধানে থাকতে আর তুমি কিনা এসব করে বেরাচ্ছ?কোনো কাজ থাকলে বাসায় কাজের লোক আছে তাদের বললেই তো হয়।
কথাগুলো বলতে বলতে আবির তানির হাত ধরে বেডের ওপর এনে বসালো।
তানি মুখ ছোট করে বললো।
….সরিই। আসলে উপরে আমার একটা ব্যাগ ছিল ওটাই পারছিলাম। আর চিন্তার কি আছে? মাত্র তিনমাসই তো হয়েছে।
… একদম ফালতু কথা বলবে না।তুমি প্রেগন্যান্ট এটা কোনো মজা না বুজেছ? তিনমাস হোক আর একদিনই হোক তোমাকে । সাবধানে থাকতে হবে তোমাকে। আমি তো আর সবসময় বাসায় থাকতে পারবোনা।
তানি মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো।আবির বলে উঠলো।
….আচ্ছা এখন বলো লাঞ্চ করেছ?
…হ্যাঁ করেছি
….বিকালের নাস্তা করেছ?
তানি মাথা ঝাকিয়ে না বুঝাল।
আবির বলে উঠলো।
…. ঠিক আছে তুমি বসো। আমি ফ্রেশ হয়ে তোমার জন্য নাশতা নিয়ে আসছি।
কথাটা বলে আবির ড্রেসিং টেবিলের সামনে যেয়ে নিজের শার্ট খুলতে লাগলো।
তানি অবাক নয়নে কিছুক্ষণ আবিরের দিকে তাকিয়ে রইল। কতো বদলে গেছে ওর আবির। আগের আবির আর এই আবিরের মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ। আবির হঠাৎ করেই অনেক ম্যাচিওর আর রেসপন্সিবল হয়ে গেছে। নূর হারিয়ে যাওয়া আর আদিত্যর এমন অবস্থার পর থেকে আবিরই বিজনেসের সব দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে নিয়েছে। এখন আর আবির সেই আগের মতো হাসি আনন্দ করে না। কথায় কথায় জোক্স মারে না। কেমন গম্ভীর হয়ে গেছে। শুধু আবিরই না পুরো বাড়ির সবাই যেন হাসতে ভুলে গেছে। আদিত্যের বাবা আদিত্যের চিন্তায় চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পুরো বাড়িতে যেন শোকের ছায়া পড়েছে।
এসব ভাবতে ভাবতে তানির চোখেও পানি চলে এলো। তানি উঠে গিয়ে আবিরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….আমি জানি তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে তাই না?
আবির তানির দিকে ঘুরে তানিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল।
…ভাইয়ের কষ্টের সামনে আমার কষ্টটা কিছুই না তানি। ভাইকে দেখলে কষ্টে বুকটা ফেটে যায় আমার।জীবন্ত একটা লাশ হয়ে গেছে ও।শুধু নিঃশ্বাস টাই চলছে ওর।জানো আমার সেল্ফরেসপেক্ট ভরা ভাইটা আজ আমার পা ধরে বাচ্চাদের মতো কাদছিল। ওর নূরকে এনে দেওয়ার জন্য। জানো নিজেকে তখন দুনিয়ার সবচেয়ে অসহায় ব্যাক্তি মনে হচ্ছিল।
তানি আবিরের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো।
….তুমি চিন্তা করোনা আমরা আমাদের নূরকে অবশ্যই পেয়ে যাব। তখন সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে।
….দোয়া করো জলদিই যেন পাই। নাহলে যে আমার ভাইটাকে বাঁচান যাবে না তানি।
——
রাত ১১টা
আদিত্য মদের বোতল হাতে নেশায় ধুত হয়ে ঢুলতে ঢুলতে বাসায় ঢুকলো। আজ আরও একটা দিন ও ব্যার্থ হাতে ফিরল। নূরকে খোঁজার জন্য আদিত্য এমন কোনো পন্থা নেই যা ও অবলম্বন করেনি। নূরের হারানো বিজ্ঞপ্তির পোস্টার সব জায়গায় লাগিয়ে দিয়েছে। শহরের মেইন পয়েন্ট গুলোতে বড়ো বড়ো সাইজের পোস্টার লাগিয়ে রেখেছে। যত পত্রিকা নিউজ চ্যানেল সোশ্যাল মিডিয়া সব জায়গায় নূরের হারনো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রেখেছে। দেশের প্রায় সব হাসপাতাল, পুলিশ স্টেশনে খোঁজ করেছে। তবুও কোথাও নূরের খোঁজ পাইনি। সারাদিন শেষে যখন আদিত্য খালি হাতে বাসায় ফেরে তখন মনে হয় ওর পৃথিবীটাই থেমে গেছে।
আদিত্য ঢুলতে ঢুলতে বেডের পাশে টি-টেবিলের সামনে যেয়ে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো। চোখ দুটো ভীষণ লাল হয়ে আছে ওর। টি টেবিলের ওপর থেকে নূরের ছবিটা হাতে নিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বললো।
….আর কতো শাস্তি দিবে আমাকে প্রাণপাখী? প্লিজ এবারতো মাফ করে দাও। ফিরে এস আমার কাছে । আই প্রমিজ আর কখনো তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা।দেখ তোমার রাজকুমার কতো কষ্টে আছে। তোমার কি আমার ওপর একটুও দয়া হচ্ছে না? এতটা নিঠুর হইও না প্রাণপাখী। আমার যে আর সহ্য হচ্ছে না এই যন্ত্রণা। প্লিজ নিঃশ্বাস টা বন্ধ হওয়ার আগে ফিরে এসো। নাহলে হয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে প্রাণপাখী। প্লিজ ফিরে এসো প্লিজ প্লিজ প্লিজ,,,,,
বলতে বলতেই আদিত্য নূরের ছবি বুকে জড়িয়ে শুয়ে পরলো।
পরদিন সকাল ১১টা
আদিত্য রোজকার মতো নূরকে খোঁজার মিশনে বের হয়েছে। আদিত্য একটা রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে রাস্তার দেয়ালের সাথে নূরের পোস্টার লাগাচ্ছে। হঠাৎ আদিত্য দেখলো ওর লাগানো পোস্টারের ওপর দিয়ে অন্য লোক পোস্টার লাগাচ্ছে। এটা দেখে আদিত্য রেগে গিয়ে ওই লোকের পোস্টার ছিড়ে ফেলে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো।
….হেই ইউ, হাউ ডেয়ার ইউ? তোর সাহস কি করে আমার পোস্টারের ওপর দিয়ে অন্য পোস্টার লাগানোর? দেখছিস না আমি এখানে পোস্টার লাগিয়েছি? তুই যেয়ে অন্য কোথাও লাগা যা।
লোকটি তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো।
….আরে ভাই তোমার এই পোস্টার অনেক দেখেছি। এতদিন ধরে লাগাচ্ছ, ফিরে কি পেয়েছ তোমার বউকে? হুহ্ আর কখনো পাবেও না। দেখ গিয়ে কার না কার সাথে ভেগে গেছে। আর নাহলে কোথাও মরে আছে। তাই শুধু শুধু এসব লাগিয়ে লাভ নেই।
কথাটা শোনার সাথে সাথে আদিত্যর পায়ের রক্ত যেন মাথায় উঠে গেল। সারা শরীরে আগুন ধরে গেল ওর। আদিত্য রাগে তেড়ে যেয়ে লোকটির কলার ধরে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললো।
….কিহ্?কি বললি তুই? তোর সাহস কি করে হলো এটা বলার? তোকেতো আমি শেষ করে ফেলবো।
কথাটা বলে আদিত্য লোকটিকে এলোপাতাড়ি ঘুষি লাথি মারতে লাগলো।মারতে মারতে লোকটার নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো। তবুও আদিত্য মেরেই যাচ্ছে। ওর মাথায় যেন রক্ত চড়ে গেছে। আশেপাশের লোকজন এসে ভীড় হয়ে গেল। সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে। আদিত্য মারতে মারতে লোকটাকে আদমোরা করে ফেলেছে, তবুও থামছে। হঠাৎ ওখানে পুলিশ চলে এলো। পুলিশ এসে আদিত্যকে টেনে সরাতে নিলেও আদিত্য তেড়ে এসে পা দিয়ে লোকটাকে মারতে লাগলো। অনেক কষ্টে পুলিশ টেনেটুনে আদিত্যকে নিয়ে গেল।
পুলিশ আদিত্যকে ভালো করেই চেনে। তাই সে আদিত্যের বাসায় ফোন দিয়ে জানিয়ে দিল। সাথে সাথে আবির তাসিরকে নিয়ে পুলিশ স্টেশনে গেল। অনেক কষ্টে টাকাপয়সা দিয়ে আদিত্যকে ছাড়িয়ে আনল।
গাড়িতে বসে তাসির বলে উঠলো।
….আদি এসব কি? এভাবে কেউ কাওকে মারে?তুই জানিস আরেকটু হলে লোকটা মারা যেত? তখন তোর ওপর মার্ডার কেস হয়ে যেত বুঝতে পারছিস তুই ব্যাপার টা?
আদিত্য বলে উঠলো।
….কিহ্?তারমানে ওই রাসকেল টা মরেনি? তুই গাড়ি থামা আমি এখুনি ওটাকে শেষ করে আসবো।
….তুই পাগল হয়ে গেছিস?তোকে কি বুঝালাম আর তুই কি বুজলি?
….তুই জানিস ওই রাসকেলটা নূরের ব্যাপারে কি ননসেন্স বলছিল? ও বলছিল নূর নাকি কারো সাথে ভেগে গেছে,নয়তো কোথাও ম,,,
আর বলতে পারলো না আদিত্য। এইটুকু বলতেই ওর কন্ঠ কেঁপে উঠল। একটু থেমে আদিত্য আবার বলে উঠলো।
….একটা কথা মনে রাখবি সবাই। নূর বেঁচে আছে বলেই আমার নিঃশ্বাস এখনো চলছে। নূরের কিছু হয়ে গেলে আমার নিঃশ্বাসও বন্ধ হয়ে যেত বুজেছিস?
….ওকে ওকে আমার বাপ বুঝতে পেরেছি। তোর সাথে কথায় পারবো না আমরা। আগেই পারতাম না। এখনতো আরও মেন্টাল হয়ে গেছিস।
গাড়ি চলতে চলতে সিগনালে এসে থামলো। আদিত্য বাইরে তাকিয়ে আছে। ওর নজর গেল কিছুদূরে একটা বাইকে বসে থাকা একটা ছেলে আর মেয়ের ওপর। হয়তো স্বামী স্ত্রী হবে। হঠাৎ মেয়েটার কাছে কিছু একটা দেখে ভ্রু কুঁচকে আসলো আদিত্যের। ভালো করে খেয়াল করে দেখতেই আদিত্যের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল। আদিত্য তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে বাইকের দিকে যেতে লাগলো।
আদিত্যকে এভাবে যেতে দেখে আবির আর তাসির পেছন থেকে ওকে ডাকতে লাগলো। আদিত্য যেতে যেতে হঠাৎ সিগনাল ছেড়ে দিল। আর বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। আদিত্য পেছনে পেছনে দৌড়াতে লাগলো। একসময় বাইকটা অনেক আগে চলে গেল। আদিত্য রাস্তায় বসে পড়ে হাঁপাতে লাগলো। তাসিররা গাড়ি সাইড করে আদিত্যের কাছে দৌড়ে এসে বললো।
…কিরে পাগল হয়ে গেছিস তুই? এভাবে রাস্তার মাঝখানে দৌড়াচ্ছিস কেন?
আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে বললো।
…আমি একটা বাইককে ধরতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু পারলাম না। তবে আমি বাইকের নাম্বার নোট করে রেখেছি। তাড়াতাড়ি চল।আমাদের ওই বাইক ওয়ালাকে ধরতে হবে।
তাসির বলে উঠলো।
….কিন্তু হয়েছেটা কি? সেটাতো বল? কি আছে ওই বাইকে?
….দেখ এতো কিছু বলার টাইম নেই আমার কাছে। আমি তোদের পড়ে বলবো। এখন তোরা যাবি আমার সাথে, নাহলে আমি একাই যাবো।
…ওঁকে ওকে চল যাচ্ছি।
চলবে……