সেই সন্ধ্যা পর্ব-২২

0
1585

#সেই_সন্ধ্যা
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_২২
.
ডাক্তার শব্দটা শুনতেই সকালের মনে পরলো তার ডাক্তার সাহেবের কথা। পরক্ষণেই আজ সকালের কথা মনে পরতেই এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো ওর মুখে। আসমার কথা কানে আসতেই ধ্যান ভাঙলো সকালের।
-“মা তুমি তো এখানে সেই কখন এসেছো। এখনো কিছু খাও নি নিশ্চয়ই?”
সকাল মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বোধক জবাব দিল। আসমা বললেন,
-“তুমি এখানে বসো। আমি এখুনি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি। রেহেনা তুমি ওর সাথেই থাকো।”
রেহেনা ঠিক আছে বলে সকালের পাশে যেয়ে বসে পড়লেন। সকাল আশেপাশে তাকিয়ে বাড়িটা দেখতে দেখতে রেহেনাকে বললো,
-“মাম্মা বাড়িটা পুরোনো আমলের মনে হচ্ছে দেখে। অনেক ইউনিক।”
-“হ্যা। বাড়ির ডিজাইনটা অনেক পুরোনো। তবে বাড়িটা পুরোনো নয়। আসমা আপার হাজবেন্ডের এরকম ডিজাইনের বাড়ি খুব পছন্দ ছিল। তাই তিনি নিজেও এমন করে বানিয়েছেন বাড়িটা।”
-“আসমা আন্টিদের বাড়ি এটা?”
-“হ্যা।”
-“তাহলে বিয়ে এখানে হচ্ছে যে!”
-“আসমা আপার ভাইয়ের বাসাটায় কাজ চলছে। আর এ-র মধ্যে বিয়ের তারিখ পরে যাওয়ায় এখানেই সব আয়োজন করা হয়েছে।”
-“ওহ আচ্ছা।”
কথার মাঝে আসমা হাতে করে একটা ট্রে-তে বিভিন্ন রকমের খাবার নিয়ে এলেন। পাস্তা, লাড্ডু, নাড়ু, সন্দেশ, পায়েস, সেমাই, হালুয়া ইত্যাদি সব খাবার দেখে সকালের চোখ কপালে উঠে যাওয়ার মতো অবস্থা। কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে সকাল জিজ্ঞেস করলো,
-“এত খাবার কে খাবে!”
-“কেন তুমি।”
-“আন্টি আমি এতটুকু একটা মানুষ, আর আমার এতটুকু একটা পেটে এত খাবার আঁটবে কি করে?”
-“তোমরা হলে আজকালের ছেলেমেয়ে। তোমাদের এই বয়সে খাওয়া-দাওয়া করা উচিৎ বেশি বেশি করে। তোমার হাল দেখেছো? এত শুঁকনো হলে চলে!”
-“কিন্তু আন্টি….”
-“কোনো কিন্তু না। সবটুকু খাবার শেষ করবে। আমি যেন একটা কিচ্ছুও পড়ে থাকতে না দেখি বাটিতে।”
সকাল অসহায় চেহারা বানিয়ে বেশ কয়েকবার বোঝানোর চেষ্টা করলো আসমাকে। কিন্তু আসমা নিজের কথায় অটল। তাই বাধ্য হয়ে সকাল কাঁদো কাঁদো চেহারা নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। আসমা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সকালকে সবগুলো খাবার খাওয়ালো। খাওয়া শেষ হতেই সকাল ক্লান্ত হয়ে বললো,
-“আমার খাওয়া বেশি হয়ে গিয়েছে। নড়তেও পারছি না আমি।”
আসমা সকালের অবস্থা বুঝতে পেরে বললেন,
-“দোতলায় যেয়ে একদম শেষের রুমটা দেখবে খালি আছে। সেখানে যেয়ে বিশ্রাম নাও তুমি। চাইলে ঘুমিয়েও নিতে পারো। তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তুমি অনেক ক্লান্ত।”
-“ঠিক আছে আন্টি ধন্যবাদ। কিন্তু আন্টি, দয়া করে এরপর থেকে আমাকে ব্ল্যাকহোল মনে করে এত খাবার খাইয়ো না। নাহলে আমাকে এই দুনিয়ায় আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।”

আসমা হেসে ফেললেন সকালের কথায়। সকাল আসমার বলা নির্দেশনা অনুযায়ী একটি রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল। কিন্তু ওর চেহারায় বিভ্রান্তির ছাপ স্পষ্ট। দু’পাশে দু’টো রুম। ও কোন রুমটায় যাবে সেটাই তো বলে নি আসমা আন্টি। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দু’টো রুমের দরজা ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে ১০,২০ গুণে বাম পাশের রুমটায় ঢুকে পরলো ও। রুমে ঢুকে দরজা চাপিয়ে দিয়ে সামনে তাকাতেই অজানা ভালো লাগায় মনটা ছেয়ে গেল সকালের। রুমের সবকিছুই সাদা রঙের। সকাল আর কিছু না ভেবে এক দৌড়ে যেয়ে খাটে উঠে কম্বলের নিচে ঢুকে পরলো। খুব সুন্দর একটা ঘ্রাণ আসছে কম্বল আর বালিশ থেকে। সকাল আর চিন্তা-ভাবনা না করে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
সন্ধ্যা ৬ টা বেজে ৭ মিনিট। স্নিগ্ধ বাড়িতে ঢুকে আশেপাশে তাকিয়ে নিজের মা’কে খুঁজে চলেছে। বাড়ি ভরতি মেহমান দেখে একটু অস্বস্তি লাগলেও তা হজম করে নিচ্ছে ও। রান্নাঘরে যেয়ে ভেতরে উঁকি দিতেই মা’কে দেখতে পেলো স্নিগ্ধ। সেখানে দাঁড়িয়েই তাকে ডাকতে লাগলো সে। একটু বাদেই স্নিগ্ধর মা এসে বললেন,
-“তুই এসে গিয়েছিস!”
-“হ্যা। কিন্তু এত জরুরি তলব কিসের জন্য সেটা বলো। আর এক মিনিট! তোমার শরীর ঠিক আছে? তোমার কিছু হয় নি তো!”
-“না আমার কিছু হয় নি। আমি একদম ঠিক আছি।”
-“আর বাবা!”
-“তোর বাবাও ঠিক আছে।”
-“ওহ আচ্ছা। তাহলে এত জরুরি তলব কেন?”
-“জরুরি তলব কেন মানে! আজ তোর বোনের বিয়ে স্নিগ্ধ। তোর মামা এই পর্যন্ত কতবার তোকে খুঁজেছে সে খেয়াল আছে তোর! অন্তত আজকের দিনটাতে ছুটি নিতে পারতি। সে যাক গে, তুই এখন কোথাও যাবি না। চুপচাপ নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে তৈরি হয়ে নিচে আয়। ঘন্টাখানেক পর বরযাত্রী চলে আসবে।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে যাচ্ছি আমি।”
-“হ্যা তাড়াতাড়ি যা।”

অ্যাপ্রোন আর স্টেথোস্কোপ হাতে ঝুলিয়ে স্নিগ্ধ সিঁড়ির কাছে আসতেই দেখতে পেলো অনন্যা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে। স্নিগ্ধ বিরবির করে বললো, “উটকো ঝামেলা একটা। এখন এসে আমার মাথা চিবিয়ে খাবে। অসহ্য!” বলতে না বলতেই অনন্যা এসে স্নিগ্ধর একহাত জড়িয়ে ধরে খুশি হয়ে বললো,
-“কেমন আছো স্নিগ্ধ? আমি তোমাকে সেই কোন সকাল থেকে খুঁজে চলেছি। অথচ তুমি আজও হসপিটালে গিয়ে বসেছিলে। আজকে আপুর বিয়ে উপলক্ষে তো ছুটি নিতে পারতে তাই না!”
-“অনন্যা আমি এখন প্রচুর ক্লান্ত। ঘরে যেয়ে ফ্রেস হয়ে একটু বিশ্রাম করতে চাইছি। তুমি তোমার আপুর কাছে যাও। বিয়ের সময় তো আমাদের আবার দেখা হবেই। তখন নাহয় আমরা কথা বলবো।”
-“ওহ স্যরি… তুমি যে মাত্র এসেছো আমি তা একদম ভুলে গিয়েছিলাম। চলো আমি তোমাকে তোমার রুম পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসি।”
স্নিগ্ধ বিরক্ত হয়ে বললো,
-“আমি এ বাসায় নতুন না অনন্যা। এ বাসার প্রতিটা কোণা আমি ভালোমতো চিনি। তুমি তোমার কাজে যাও। আমি চলে যেতে পারবো।”
অনন্যার হাত ছাড়িয়ে স্নিগ্ধ সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল। স্নিগ্ধর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অনন্যা বিরবির করে বললো,
-“এখন তো নীলাম নেই তোমার জীবনে। তাই তোমাকে আমার হতেই হবে। আমার বুঝ হওয়ার পর থেকে আমি শুধু তোমাকেই ভালোবেসেছি স্নিগ্ধ।”

স্নিগ্ধ রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিল। পুরো অন্ধকার হয়ে আছে রুমটা। কিন্তু এখনো হালকা আলো জানালা ভেদ করে রুমে এসে পড়ছে। স্নিগ্ধ রুমের লাইট জালানোর প্রয়োজন মনে করলো না। অ্যাপ্রোনটা চেয়ারের সাথে ঝুলিয়ে রেখে স্টেথোস্কোপটা টেবিলে নামিয়ে রাখলো। আলমারি থেকে একটা টি-শার্ট, ট্রাউজার আর টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। গোসল করে ফ্রেস হয়ে মাথা মুছে টাওয়ালটা বেলকনিতে মেলে দিয়ে রুমে এসে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিল। হালকা ঠান্ডা ঠান্ডা লাগায় কম্বলটা গায়ে দিয়ে উবু হয়ে শুতেই পাশে কারো আভাস পেয়ে এক লাফে উঠে বসলো সে। কম্বল টান দিয়ে সরিয়ে দিতেই খেয়াল করলো একটি মেয়ে তার বিছানার একপাশে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। স্নিগ্ধ চোখ দু’টো বড় বড় করে তাকালো। চুলগুলো সব এলোমেলো হয়ে আছে। কয়েকটা চুল মুখের ওপরে থাকায় চিনতে পারছে না মেয়েটিকে। পরক্ষণেই বিছানার পাশে থাকা জানালার পর্দাটা টান দিয়ে সরিয়ে দিতেই স্নিগ্ধ থমকে গেল। সেই ঘন কালো লম্বা চুল, দু’হাত ভরতি কালো চুড়ি… স্নিগ্ধর মুখ থেকে আপনা-আপনি বেরিয়ে গেল, “মিস বিকাল!” বিষ্মিত নয়নে তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধ সকালের দিকে। এক’পা দু’পা করে পিছিয়ে এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল স্নিগ্ধ। নিচে যেয়ে আসমা বেগমে ডাকতে লাগলো সে। আসমা আসতেই স্নিগ্ধ উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-“মা আমার ঘরে আমার খাটে একটি মেয়ে ঘুমিয়ে আছে। সে কে? আর আমার রুমেই বা কি করছে?”
-“ওহ হো! আমি তো তোকে বলতেই ভুলে গিয়েছি। নিপার বিয়ের জন্য এসেছে ওরা। মেয়েটির নাম সকাল। ও অনেক ক্লান্ত ছিল বলে আমি ওকে তোর রুমে ঘুমোতে বলেছিলাম।”
-“নিপা আপুর বিয়েতে এসেছে! কিন্তু ওদের তো চিনি না আমি। কে ওরা?”
-“তোর মামীর দূর সম্পর্কের আত্মীয় হয়। কিন্তু তোর মামীর থেকে আমার সাথে সকালের মায়ের সম্পর্ক বেশি ভালো। জানিস, মেয়েটা না খুবই মিষ্টি। দেখতে অসম্ভব সুন্দরী। একদম অপ্সরীদের মতো।”
স্নিগ্ধ তার মায়ের কথা শুনে মনে মনে বললো, “আমার থেকে ভালো ওকে কে চিনে! আমি ওকে এতদিন ধরে চিনি আর যখনি ওকে দেখি, প্রতিবারই ওর ওপর মুগ্ধ হই। আর আমার মা কয়েক ঘন্টার পরিচয়েই মুগ্ধ হয়ে আমাকে মিস বিকালকে চেনাতে এসেছে!”
-“তুই রাগ করিস না বাবা ওকে তোর ঘরে থাকতে দিয়েছি বলে।”
-“না মা ঠিক আছে।”
রেহেনা বেগম আসমা বেগমকে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে এগিয়ে এলেন। স্নিগ্ধকে দেখে উনি অবাক হয়ে বললেন,
-“বাবা তুমি!”
আসমা বললেন,
-“ও আমার ছেলে স্নিগ্ধ। আপনি কি ওকে চিনেন?”
রেহেনা বললেন,
-“চিনবো না! ও-ই তো দু’বার আমার মেয়ের প্রাণ বাঁচিয়েছে। বর্তমানে সকাল আর ও তো একই মেডিকেলে আছে।”
আসমা অবাক হয়ে বললেন,
-“তাই না-কি! স্নিগ্ধ তুই সকালকে চিনিস?”
-“হ্যা চিনবো না কেন? আমারই তো স্টুডেন্ট।”
রেহেনা বেগম হাসি মুখে বললেন,
-“দেখেছো, আমরা একে অপরের কত পরিচিত। অথচ এতদিন তা জানতামই না।”
-“জ্বি আন্টি। আচ্ছা আন্টি আপনারা গল্প করুন। আমি ওপরে যাই। আমার একটু কাজ আছে।”
-“আচ্ছা বাবা।”

স্নিগ্ধ নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিল। বিছানার এক পাশে কম্বল জড়িয়ে আরামে ঘুমোচ্ছে সকাল। স্নিগ্ধ এসে সকালের পাশে বসে এক আঙুল দিয়ে সকালের মুখের ওপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দিল। কি মায়াবী মুখ। এই নূরানী চেহারা থেকে তো চোখ সরানোও দায়। স্নিগ্ধ হালকা ঝুঁকে সকালকে গভীরভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। নাহ! এ দেখার কোনো শেষ হবে না। এই মেয়ের মধ্যে কোনো খুঁত নেই। নিঃসন্দেহে প্রতিটি ছেলেই মনে মনে এমন একজন সুন্দরীকে নিজের জীবনে চায়। কিন্তু পায় ক’জন! আর সকাল তো নিজ থেকেই ধরা দিতে এসেছে স্নিগ্ধর কাছে। কিন্তু স্নিগ্ধ নিজের দ্বিধার কারণে না পারছে সকালকে আঁকড়ে ধরতে আর না পারছে একেবারে ছেড়ে দিতে। সকালকে আঁকড়ে ধরতে গেলে মনে হয় নীলামের সাথে সে অন্যায় করছে। আর সকালকে ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবলে মনে হয় বুকের ভেতরটা কেউ খামচে ধরে আছে। দু’দিক থেকেই স্নিগ্ধ ফ্যাসাদের মধ্যে পড়ে গেছে। এসব ভাবনা সাইডে রেখে আবারও সকালকে দেখতে লাগলো স্নিগ্ধ। যেন এ-র থেকে জরুরি কাজ আর দ্বিতীয়টি নেই এখন। ঘুমের মাঝে হালকা নড়ে উঠতেই স্নিগ্ধর নাকের সাথে সকালের নাক স্পর্শ করলো। এতে ঘুমের মাঝে থাকা সকালের কিছু অনুভব না হলেও স্নিগ্ধর বুকটা ঢিপঢিপ করতে লাগলো। দ্রুত সোজা হয়ে বসলো সে। আশেপাশে তাকিয়ে উঠে যেয়ে রুমের লাইটগুলো জালিয়ে পর্দা টেনে দিল। আবারও দাঁড়িয়ে থেকে কিছুক্ষণ সকালের দিকে তাকিয়ে থেকে আলমারি থেকে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল স্নিগ্ধ।
ঘুম ভাঙতেই সকাল নিজেকে কম্বলের নিচে আবিষ্কার করলো। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে আশেপাশে তাকিয়ে বালিশের পাশে হাতিয়ে ফোনটা খুঁজে নিলো। মোবাইলে সময় দেখে নিয়ে আবারও চোখ বন্ধ করে বসে রইলো। ঘুমে এখনো ঢুলুঢুলু অবস্থা তার। হঠাৎ পরিচিত কণ্ঠে “শুভ সন্ধ্যা” কথাটা কানে ভেসে আসতেই চমকে উঠলো সকাল। তাড়াতাড়ি চোখ মেললো সে। চোখের ঘুম নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। আশেপাশে তাকিয়ে সামনে তাকিয়েই থমকে গেল সকাল। চোখ দু’টো ভালো করে কচলে তাকালো। কিন্তু নাহ! এ কোনো স্বপ্ন নয়। সত্যি সত্যিই স্নিগ্ধ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে লেগে রয়েছে তার সেই চমৎকার হাসিটা। যে হাসি দেখলেই সকালের সমস্ত খারাপ লাগা গুলো হারিয়ে গিয়ে একরাশ ভালো লাগায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় মনটা। সকাল মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধর দিকে। আজ প্রথমবার স্নিগ্ধকে সে ফর্মাল গেটআপ বাদে পাঞ্জাবিতে দেখলো। এত্ত সুদর্শন পুরুষও আছে দুনিয়ায়! স্নিগ্ধর সব থেকে আকর্ষণীয় জিনিসটা হলো তার দাঁড়ি। খুব সুন্দর স্টাইল করে কাট দেয়া দাঁড়িটায়। হঠাৎ সকালের খেয়াল হলো ওরা তো বিয়ে বাড়িতে। তাহলে এখানে স্নিগ্ধ এলো কি করে? না’কি সত্যি সে স্বপ্ন দেখছে? চট জলদি ও বিছানা থেকে নেমে ড্যাবড্যাব করে স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে থেকে এগিয়ে গেল তার দিকে। দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে কাঁপা কাঁপা হাতে স্নিগ্ধর গাল স্পর্শ করলো সে। স্নিগ্ধ অবাক হয়ে তাকালো সকালের দিকে। সকালও চমকে উঠলো স্নিগ্ধকে স্পর্শ করতে পেরে। বিষ্মিত হয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,
-“ডাক্তার সাহেব আপনি সত্যি সত্যি এখানে!”
স্নিগ্ধ হেসে ফেললো সকালের কথায়। বললো,
-“তো এতক্ষণ কি স্বপ্ন মনে হচ্ছিল আমাকে?”
সকাল মাথা নাড়িয়ে হ্যা বোধক জবাব দিল। স্নিগ্ধ হাসলো। বললো,
-“জ্বি আমি সত্যি এখানে।”
-“কিন্তু কীভাবে? আমি তো আম্মুর সাথে একটা বিয়েতে এসেছি। তাহলে আপনি এখানে আসবেন কীভাবে?”
-“ওহ হো ম্যাডাম! ভালো করে আশেপাশে একটু নজর বুলিয়ে দেখুন রুমের দিকে।”
স্নিগ্ধর কথা অনুযায়ী ভালো করে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সকাল। দেয়ালের দিকে তাকিয়েই ওর চোখ দু’টো ছানাবড়া হয়ে গেল। রুমের দেয়ালে স্নিগ্ধর অসংখ্য ছবি টানানো। এ-র মানে কী? এটা কি তাহলে স্নিগ্ধর রুম! চোখ বড় বড় করে আবারও স্নিগ্ধর দিকে তাকালো সকাল। স্নিগ্ধ হেসে বললো,
-“তুমি আমার মামার বড় মেয়ের বিয়েতে এসেছো। আর এতক্ষণ আমার রুমে আমার বিছানায় আরাম করে ঘুমিয়েছো। তা ঘুম ভালো হয়েছে তো মিস বিকাল!”
সকাল কি বলবে কিছুই বুঝতে পারলো না। ও তার মানে এতক্ষণ যাবৎ স্নিগ্ধর রুমে স্নিগ্ধর বিছানায় ঘুমিয়েছে! আর এই বাসাটা স্নিগ্ধদের! সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো স্বপ্নের মতো লাগছে সকালের কাছে। এখনো বিষ্ময় কাটেনি ওর।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here