সেই সন্ধ্যা পর্ব-২৩

0
1725

#সেই_সন্ধ্যা
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_২৩
.
সকাল কি বলবে কিছুই বুঝতে পারলো না। ও তার মানে এতক্ষণ যাবৎ স্নিগ্ধর রুমে স্নিগ্ধর বিছানায় ঘুমিয়েছে! আর এই বাসাটা স্নিগ্ধদের! সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো স্বপ্নের মতো লাগছে সকালের কাছে। এখনো বিষ্ময় কাটেনি ওর। এত বিষ্ময় হজম করতে না পেরে বেচারি সকাল পড়ে যেতে গেলেই স্নিগ্ধ দ্রুত সকালের হাত ধরে ফেললো। এবার বিষ্ময় কেটে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেল সকালের সারা শরীরে। সকালের হৃদ স্পন্দনগুলো দ্রুত বেগে চলতে লাগলো। স্নিগ্ধ সকালের দিকে তাকাতেই দেখলো সকাল ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ওই চোখে রয়েছে অফুরন্ত ভালোবাসা। এত গভীরতাও কারো চোখে থাকতে পারে তা সকালকে না দেখলে জানতেই পারতো না স্নিগ্ধ। এই নিষ্পাপ চাহনিতে হাজার বার ডুবতেও আপত্তি নেই ওর। সকাল স্নিগ্ধর চোখ থেকে নিজের চোখ সরিয়ে নিচে তাকালো। আর কিছুক্ষণ ওই নেশাগ্রস্ত মাদক চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলে ও নিজের হুঁশ হারিয়ে ফেলবে। আড়চোখে স্নিগ্ধর দিকে আবার তাকাতেই দেখলো স্নিগ্ধ এখনো তার নেশাগ্রস্ত চাহনি মেলে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। মুহুর্তেই গলা শুকিয়ে গেল সকালের। ভীষণ লজ্জা লাগছে ওর এই চাহনি দেখে। গাল দু’টো গরম হয়ে এসেছে। স্নিগ্ধ সকালের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওর হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো। সকাল চমকে তাকালো স্নিগ্ধর দিকে। তার এক হাত সকালের এক হাত ধরে রেখেছে, আরেক হাত সকালের কোমড়ে আবদ্ধ। হঠাৎ স্নিগ্ধর কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারলো না সকাল। সকালের দিকে ঝুঁকে টুপ করে ওর গালে একটা চুমু দিয়ে বসলো স্নিগ্ধ। সকাল ‘থ’ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দু’টো বড় বড় করে স্নিগ্ধর দিকে বিষ্মিত দৃষ্টিতে তাকাতেই স্নিগ্ধ ওর আরেক গালে চুমু দিয়ে বসলো। এবার সকালের হৃদ স্পন্দন চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে এসেছে প্রায়। হঠাৎ সকালকে ছেড়ে দিয়ে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো স্নিগ্ধ। সকাল বোকার মতো তাকিয়ে আছে। স্নিগ্ধর হাসি দেখে আর চুমুর কথা ভেবে লজ্জায় আশেপাশে তাকিয়ে ওয়াশরুমটা দেখে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল সকাল। তা দেখে স্নিগ্ধ আরও জোরে হেসে দিল। হুট করে স্নিগ্ধর কি হয়ে গিয়েছিল তা স্নিগ্ধ নিজেও জানে না। কিন্তু সকালের লজ্জা মিশ্রিত চেহারা দেখে ও লোভ সামলাতে পারে নি বলেই সকালকে কাছে টেনে তার লাজে রাঙা লাল গাল দু’টোতে চুমু দিয়ে বসলো সে। কিন্তু সকালের চেহারার অভিব্যক্তি দেখে না হেসে পারলো না। এখনো হাসি থামে নি ওর।
সকাল ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিষ্ময় আর লজ্জায় শরীর কাঁপছে তার। তখনকার চুমুর কথাটা ভাবতেই একহাত নিজের গালে চলে গেল সকালের। এখানে স্নিগ্ধর ঠোঁটের স্পর্শ রয়েছে। কিন্তু স্নিগ্ধ এমনটা কেন করলো? তবে কি এই স্পর্শ দ্বারা স্নিগ্ধ নিজের মনের কথা বোঝাতে চাইলো! নাহ এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। কারণ স্নিগ্ধ বলেছিল সকাল নিজের মনের কথাটা স্নিগ্ধকে জানালে স্নিগ্ধও তার মনের কথাটা জানাবে। অর্থাৎ যদি মনের কথাটা জানানোরই হতো তবে মুখেই বলতো স্নিগ্ধ। তাহলে এই চুমু কেন? ভাবতে লাগলো সকাল।
স্নিগ্ধ ঘড়িতে সময় দেখে নিলো। এখন তার হাসিটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে ওয়াশরুমের দরজার সামনে যেয়ে আস্তে করে দু’টো টোকা দিয়ে বললো,
-“ম্যাডাম কি আজকে বের হবেন না বলে পণ করেছেন! না মানে লজ্জা কি এখনো লাগছে! আমার জানা মতে আজ নিপা আপুর বিয়ে। তো লজ্জা তো তার লাগার কথা। আপনি এত লজ্জা পাচ্ছেন কেন মিস বিকাল?”
স্নিগ্ধর কথা শুনে সকালের যেমন লজ্জা লাগলো আবার হাসিও পেলো। কিছু না বলে বেসিনের সামনে গিয়ে কল ছেড়ে মুখে বেশ কয়েকবার পানির ঝাঁপটা দিয়ে বেরিয়ে এলো। স্নিগ্ধ সরে দাঁড়ালো। সকাল মাথা নিচু করেই বললো,
-“একটা টাওয়াল দিন মুখটা মুছবো।”
স্নিগ্ধ বেলকনিতে গিয়ে নিজের টাওয়াল এনে সকালের হাতে দিল। সকাল সেটা দিয়ে মুখ মুছে স্নিগ্ধকে ফিরিয়ে দিল। ড্রেসিং টেবিলের ওপর থেকে চিরুনি নিয়ে চুলগুলো আঁচড়ে নিলো। ওড়নাটা ঠিক করে ফোনটা হাতে নিয়ে মিনমিনে গলায় বললো,
-“সকাল মাম্মার কাছে যাবে।”
এবার স্নিগ্ধ হাসতে গিয়েও হাসলো না। স্নিগ্ধ দরজার সামনে গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে সকালকে বললো,
-“লেডিস ফার্স্ট।”

সকাল মুচকি হেসে বের হলো রুম থেকে। স্নিগ্ধও রুমের দরজা লাগিয়ে সকালের পেছন পেছন বের হলো। সকাল নিচে গিয়ে রেহেনার পাশে দাঁড়ালো। স্নিগ্ধ সিঁড়ির একপাশে প্যান্টের পকেটে হাত রেখে সিঁড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সকাল আড়চোখে স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে দেখে স্নিগ্ধ ফোন টিপছে কিন্তু মুখে তার সেই পাগল করা মুচকি হাসিটা রয়েছে। রেহেনা সকালকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে বললেন,
-“এরকম মুখ লটকিয়ে বসে আছো কেন?”
-“তো একা একা কি করবো?”
-“তোমার স্নিগ্ধ স্যার তো এখানেই আছেন। উনার সাথে যেয়ে গল্প করো। উনার সাথে তো তোমার বেশ ভালোই সখ্যতা আছে আমার জানা মতে।”
-“তা মোটামুটি আছে।
আসমা বললেন,
-“হ্যা মা তুমি স্নিগ্ধর কাছেই যাও। ওর সাথে যেয়ে গল্প করো। এখন ও একদম ফ্রি আছে।”
-“আচ্ছা আমি উনার কাছেই যাচ্ছি।”
-“হুম যাও।”

সকাল মনে মনে বললো, “মাম্মা তুমি তো আর জানো না যে তোমার মেয়ের, ডাক্তার সাহেবের সাথে শুধু সখ্যতাই নয় আরো অনেক কিছু আছে। যদি কোনোদিন জানতে পারো যে আমি উনাকে প্রপোজ করেছি, সেদিন তুমি কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে আমি সেটাই ভাবছি।” সকাল চুপিচুপি স্নিগ্ধর পেছনে এসে দাঁড়িয়ে উঁচু হয়ে স্নিগ্ধ ফোনে কি করছে, তা দেখার চেষ্টা করছে। স্নিগ্ধ হালকা গলা ঝেড়ে বলে উঠলো,
-“জাসুসি করতে হলে সামনে থেকে করো। পেছন থেকে উঁকি দিচ্ছো কেন?”
স্নিগ্ধর কথায় থতমত খেয়ে গেল সকাল। আমতা আমতা করে বললো,
-“ক..কই! আমি তো এমনি মানে….”
-“হুম দেখেছি আমি, তুমি এমনি না কেমনি কি করছিলে।”
-“বেশ করেছি উঁকি দিয়েছি। কি করবেন আপনি? হুহ!”
-“আপাতত কিছু করছি না। যখন করার তখনই করবো।”
-“যখন করার তখনই করবো মানে! কি করবেন?”
-“টপ সিক্রেট।”
-“ধুর!”
-“তুমি যে এখানে এসেছো, বলে এসেছো তোমার আম্মুকে?”
-“জ্বি। আপনার আম্মু আর আমার মাম্মা মিলে আমাকে ধাক্কিয়ে পাঠিয়েছে আপনার কাছে গল্প করার জন্য। যাতে আমি বোরিং ফিল না করি।”
স্নিগ্ধ ফোনটা পাঞ্জাবির পকেটে ঢুকিয়ে সকালের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আমার আম্মু কি তোমাকে নাম ধরে ডাকে?”
-“না তো।”
-“তাহলে কি বলে ডাকে?”
-“মা।”

স্নিগ্ধর মুখের হাসি কিছুটা প্রসারিত হলো। তার মানে স্নিগ্ধর মা সকালকে ভীষণ পছন্দ করেছেন। আর তিনি নিশ্চয়ই আজ রাতে তার ঘরে আসবেন সকালের ব্যাপারে কথা বলতে। কারণ স্নিগ্ধর স্পষ্ট মনে আছে একবার তার মা তাকে বলেছিল, যে মেয়েকে স্নিগ্ধর বউ হিসেবে তার পছন্দ হবে শুধু সেই মেয়েকেই তিনি মা বলে সম্বোধন করবেন। তাই আজ পর্যন্ত নিজের মা, শ্বাশুড়ি মা আর নীলাম ছাড়া এই প্রথম কোনো মেয়েকে তিনি মা বলে সম্বোধন করলেন। স্নিগ্ধর মুচকি হাসি দেখে সকাল প্রশ্ন করলো,
-“আপনি হাসছেন কেন অযথা?”
-“অযথা হাসছি না। কারণ আছে বলেই হাসছি।”
-“কি কারণ?”
-“টপ সিক্রেট।”
-“আপনি কি জানেন আপনি একটা পঁচা লোক! আমার কোনো কথার সোজা জবাব আজ পর্যন্ত পাইনি আপনার কাছে।”
স্নিগ্ধ হেসে সকালের গাল টেনে দিয়ে বললো,
-“ওলেলে…”
-“সকাল বাচ্চা না।”

কথাটা বলেই সকাল মুখ ফুলিয়ে ফেললো। স্নিগ্ধ হেসে দিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে সকালের হাত ধরে ছাদের দিকে হাঁটা দিল। সকাল কিছু না বলে স্নিগ্ধর পেছন পেছন যেতে লাগলো। ছাদে ঢোকার আগে স্নিগ্ধ ছাদের বাতিগুলো জ্বালিয়ে দিল। সকাল খেয়াল করলো, ছাদের ওপরে আরো একটা ছাদ আছে। অর্থাৎ দোতলা ছাদ। স্নিগ্ধ সকালকে নিয়ে দোতলা ছাদে চলে এলো। সকাল ছাদে উঠতেই অবাক হয়ে গেল। দোতলার পুরোটা ছাদ ভরতি বিভিন্ন রঙের গোলাপ ফুলের গাছ রয়েছে। প্রত্যেকটা গাছে গোলাপ ফুটে আছে। সকাল খুশিতে মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। স্নিগ্ধ বললো,
-“পছন্দ হয়েছে?”
-“ভীষণ! আমি এত রঙের গোলাপ আগে কোনোদিনও দেখি নি।”
-“এখানে মোট চৌদ্দ রঙের গোলাপ গাছ আছে। লাল, কালো, সাদা, নীল, সবুজ, আকাশি, কমলা, হালকা গোলাপি, গাঢ় গোলাপি, হালকা হলুদ, গাঢ় হলুদ, গাঢ় বেগুনি ও হালকা বেগুনি রঙের মোট চৌদ্দটি রঙের গোলাপ গাছ। আর পাশে যে ফুল গাছ গুলো দেখছো, সেগুলোও গোলাপ ফুল। তবে ওটাকে কাঠগোলাপ বলা হয়। আর অপর পাশে যে দু’টো গাছ দেখছো ওগুলো হলো রংধনু গোলাপ আর তিনরঙা গোলাপের গাছ। তার পাশে রয়েছে ল্যাভেন্ডার রোজ। এটাও গোলাপ ফুল।”
-“এত গোলাপ গাছ আপনি কোথায় পেলেন?”
-“ডাক্তারি কাজে শেষবার যখন বিদেশে গিয়েছিলাম তখন নিয়ে এসেছিলাম এগুলো। গোলাপ আমার ভীষণ পছন্দের। তাই একটা ছোটখাটো বাগান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু নিজের কাজে এত ব্যস্ত থাকি যে ঠিক মতো সময় দিতে পারি না এখানে। কিন্তু এখন আম্মু এগুলোর দেখাশোনা করে।”
-“ডাক্তার সাহেব শুনুন না!”
সকাল বেশ আহ্লাদীস্বরে ডেকে উঠলো স্নিগ্ধকে। স্নিগ্ধ তার দিকে তাকাতেই কিউট বাচ্চাদের মতো চেহারা বানিয়ে বললো,
-“গোলাপ সকালেরও ভীষণ প্রিয়। আপনার কাছে তো সবগুলো গাছ তিন-চারটা করে আছে। সকালকে সবগুলো গাছ থেকে একটা করে দিবেন প্লিজ! সকালও তার বাসার ছাদে লাগাবে। অনেক যত্ন করবে গাছগুলোর।”
স্নিগ্ধ হেসে ফেললো সকালের কথা বলার ধরন দেখে। মেয়েটা এত কিউট কেন? স্নিগ্ধ মনে মনে কথাটা ভেবে মুখে বললো,
-“আচ্ছা তুমি বাসায় যাওয়ার সময় আমি তোমার গাড়িতে তুলে দিব গোলাপ গাছগুলো।”
-“সত্যিই!”

স্নিগ্ধ তাকে গোলাপ গাছগুলো দিবে শুনে সকাল যে কতটা খুশি হয়েছে তা তার চোখ-মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। স্নিগ্ধ হেসে মাথা নাড়লো। সকাল খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। সকালের এই ছোট ছোট বিষয়ে খুশি হয়ে যাওয়া দেখে স্নিগ্ধ মাঝে মাঝে অনেক অবাক হয়, আবার ভালোও লাগে। সকালের যে বিশেষ কোনো চাহিদা নেই তা স্নিগ্ধ সকালের সাথে থেকেই বুঝেছে। পাগলিটা সামান্য চকলেট পেলেই অনেক খুশি হয়ে যায়। আবার আজ গোলাপ গাছ পেয়ে কত খুশি সে। সকালের ছোট থেকে ছোট কাজকর্মগুলো স্নিগ্ধ ভীষণ ভাবে মুগ্ধ করে। সকাল যখন হাত নাড়িয়ে চোখ দু’টো সামান্য বড় বড় করে কথা বলে, বেশ আকর্ষণীয় লাগে তখন তাকে। আবার যখন লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে মুচকি হাসে এবং একহাত দিয়ে মুখের সামনে থাকা ছোট চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দেয় তখনো বেশ আকর্ষণীয় লাগে তাকে। সকালের এই জিনিসগুলো স্নিগ্ধ খুব করে উপভোগ করে।
নিচ থেকে হৈচৈ এর আওয়াজ কানে ভেসে আসতেই সকাল বললো,
-“ডাক্তার সাহেব মনে হয় বরযাত্রী চলে এসেছে। চলুন না আমি দেখবো। আমি আগে কখনো কারো বিয়ে দেখি নি।”
-“আচ্ছা চলো।”
সকাল কিছু না ভেবেই স্নিগ্ধর হাত ধরে এক প্রকার দৌড়েই নিচে নেমে গেল। স্নিগ্ধও হেসে তার পেছন পেছন গেল। নিচে এসে দেখলো কিছু মেয়েরা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে বরকে ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে। সকাল কপাল কুঁচকে বললো,
-“বরকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না কেন ওরা?”
-“কারণ ওরা বরের কাছ থেকে আগে টাকা আদায় করবে। তারপর বরকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিবে।”
-“টাকা কেন?”
-“এটা একটা নিয়ম বলতে পারো। বর আসলে তাকে কনের বোনেরা এবং বান্ধবীরা মিলে দরজার বাইরে আটকে রাখে। যে পর্যন্ত না তাদের প্রাপ্য তারা পাচ্ছে, সে পর্যন্ত বরকে ভেতরে ঢুকতে দিবে না।”
-“বাহ! বেশ মজার তো।”
-“হ্যা। তুমি চাইলে তুমিও ওদের সাথে যেয়ে জয়েন করতে পারো।”
-“না আমি এখানেই ঠিক আছি।
স্নিগ্ধ হেসে বললো,
-“আচ্ছা।”

পরশ একা একা চুপচাপ রাস্তায় হাটছে। মনটা তার ভীষণ খারাপ। চোখের সামনে ভেসে উঠছে শুধু সকালের সেই মিষ্টি হাসি। এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো সে। চোখ মেলে পায়ের সামনে থাকা একটা ছোট্ট ইটের টুকরো দেখে সেটাকে পা দিয়ে লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দিলো। অন্যমনষ্ক হয়ে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে এতটা পথ চলে এসেছে খেয়ালই করেনি। ঝগড়ার আওয়াজ ভেসে আসছে কোথা থেকে যেন। রাস্তার অপর পাশে তাকিয়ে দেখলো একটা ছেলে আর একটা মেয়ের মাঝে কথা কাটাকাটি হচ্ছে প্রচুর। হয়তো তাদের মাঝে কোনো ঝামেলা হয়েছে। পরশ গুরুত্ব না দিয়ে হাতঘড়ি দেখে উল্টো দিকে ঘুরে চলে যেতে গিয়েও থেমে গেল। কি যেন মনে হতেই মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ভালো করে খেয়াল করতেই ভ্রু কুঁচকে ফেললো পরশ। আশেপাশে তাকিয়ে রাস্তা পাড় হয়ে ওদিকে গেল সে।
আফি অশ্রুসিক্ত রাগী চোখে পলাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“তুমি আগে জানতে না এটা যে তোমার মা কালো মেয়ে পছন্দ করে না!”
-“আফি তুমি বুঝতে চাইছো না কেন?”
-“কি বুঝবো আমি! তুমি কি ভেবেছো তোমার উদ্দেশ্য আমি এখন বুঝতে পারছি না? তুমি যে শুধুমাত্র আমার দেহ ভোগ করার জন্য আমার সাথে সম্পর্কে ছিলে সেটা আমি এখন বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি।”
-“ভালো তো! বুঝতে যখন পেরেছো তখন আমাকে কেন ডেকেছো?”
-“আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না আমি তোমার মতো একটা বাজে ছেলের সাথে কি করে সম্পর্কে জড়িয়ে গেলাম! তুমি যখন রুমডেট করার জন্য জোর করছিলে আমাকে তখন আমার উচিৎ ছিল তোমাকে আমার পায়ের জুতা খুলে পেটানো।”
-“মুখ সামলে কথা বলো আফি। তুমি জানো না আমি চাইলে কি কি করতে পারি তোমার সাথে। আর একটা বাজে কথা বললে তোমার এমন হাল আমি করবো যা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। সেদিন তো তোমার সম্মতিতে তোমার সাথে রুমডেট করেছি। কিন্তু আজ যদি আর একটা বাজে কথা বলো আমার নামে তাহলে তোমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করতেও দু’বার ভাববো না আমি।”
কথাটা শেষ করার আগেই কেউ একজন খুব জোরে ঘুষি মারলো পলাশের মুখে। আফি পাশে তাকিয়ে পরশকে দেখে চমকে উঠলো। পরশ পলাশের কলার ধরে দাঁড় করিয়ে রেগে বললো,
-“ইউ ব্লাডি হেল। তোর সাহস কি করে হলো একটা মেয়ের ব্যাপারে এই ধরনের কথা বলার? বল!”

পরশ আরো দু’টো ঘুষি মেরে দিল পলাশের মুখে। আফি দু’হাতে মুখ চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আকস্মিক ঘটনায় সে বিষ্মিত হয়ে আছে। পরশ যেসব গালাগালি করছে পলাশকে তা শুনে আফি আরেক দফা বিষ্মিত হলো। এত বাজে গালি কেউ কিভাবে অন্য একটা মানুষকে দিতে পারে! কিন্তু আপাতত আফির কাছে সেসব কোনো ব্যাপার না। পরশ যেভাবে পলাশকে পেটাচ্ছে তাতে কিছুক্ষণের মধ্যে এখানে পুলিশ এসে যাবে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। ইতিমধ্যেই ভিড় জমে গেছে চারিপাশে। আফি আর কিছু না ভেবে পরশের হাত ধরে টেনে তাকে থামতে বললো। কিন্তু পরশ শুনছে না সে-কথা। আফি এবার কেঁদেই দিল। কান্নার আওয়াজ শুনে পরশ থেমে গেল। আফির তাকিয়ে দেখে আফি কেঁদে কেঁদে একহাত দিয়ে তাকে টানছে আর থামতে বলছে। পরশ রেগে পা দিয়ে পলাশের পেটে জোরে একটা লাথি মেরে আফির হাত ধরে ভিড়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে গেল।
পরশ রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে আফির হাত ধরে টেনে নামালো রিকশা থেকে। জায়গাটা ভীষণ নিরিবিলি। অনেক কাপলরা ঘুরতে এসে নিজেদের মতো সময় কাটাচ্ছে। এখন যে রাত তার কোনো রেশ নেই এদের মাঝে। পরশ ঝারা দিয়ে আফির হাত ছেড়ে আশেপাশে তাকাতে লাগলো। রাগটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে ভেবে পাচ্ছে না সে। শেষে আফির কাছে যেয়ে দু’হাতে আফির বাহু চেপে ধরে বললো,
-“তুমি জানো যখন পলাশ তোমাকে ঠকিয়েছে, তখন তার সাথে আবার দেখা করতে গিয়েছো কেন? তাও আবার এই রাতেরবেলা! যদি সত্যি সত্যি তোমাকে পলাশ তুলে নিয়ে যেতো তখন কী করতে? বলো তখন কী করতে তুমি!”
পরশ আফির বাহু চেপে ধরায় ব্যাথা পাচ্ছিল সে, কিন্তু এখন এত কঠোরভাবে ঝারি খাওয়ায় আফি আর চুপ থাকতে পারলো না। নিজের চাপাকান্নাটা আর আটকে রাখতে পারলো না। আফিকে কাঁদতে দেখে পরশ একটু নরম হলো। আফির বাহু ছেড়ে দিয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিকে।

চলবে….

নোটঃ গতকাল দিই নি বলে আজ একটু বড় করে দিলাম। কেউ বকা দিবা না কিন্তু🥺 নাহলে আমি রাগ করবো😤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here