#সেই_সন্ধ্যা
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_৪৭
.
হসপিটালের করিডোরে মোটামুটি বেশ ভালোই একটা জটলা বেঁধে আছে। সকাল, নীলাম, মিহু তিনজনই হসপিটালে এডমিট। তানিশা, শাহিন আর মেঘ আছে মিহুর জন্য। মেঘকে অনেক বেশি চিন্তিত লাগছে। ব্যাপারটা খেয়াল করেছে শাহিন। কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলো না ও। সকালের জন্য পলক, আখি আর রেহেনা বেগম আছেন। রেহেনা বেগম তো রীতিমতো কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন। পলকের চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে আরেকটু হলে কেঁদে দিবে ও। আখিও মোটামুটি ভালোই টেনশনে আছে। তবে ওর টেনশন সকাল, নীলাম দু’জনকে নিয়েই।
নীলামকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। ওর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। স্নিগ্ধ নিজেই নীলামের চিকিৎসা করছে। ওর চিকিৎসায় যাতে কোনো ত্রুটি না থাকে তার জন্য নিজেই দায়িত্ব নিয়েছে নীলামের চিকিৎসার। এখনো পর্যন্ত স্নিগ্ধকে আইসিইউ থেকে বের হতে দেখা যায়নি এক মুহূর্তের জন্য। আইসিইউর বাইরে নীলামের মা আর শিহাব বসে আছে। তারা নীলামের খবর পেয়ে অনেক অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। নীলাম যে বেঁচে আছে এই আশা করাই ছেড়ে দিয়েছিলেন উনারা। তবে আজ খবর পেয়ে অনেক শান্তি লাগছে। স্নিগ্ধর মা আসমা বেগম হসপিটালে এসে নীলামের মায়ের কাছে আগে না গিয়ে উনি সকালের মায়ের কাছে গেলেন।
-“আপা বউমা কেমন আছে?”
-“এখনো কোনো খবর পাইনি। আমার মেয়েটার উপর দিয়েই সব ঝড় কেন যায় আপা?”
-“চিন্তা করবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে। বউমা সুস্থ হয়ে যাবে খুব শীঘ্রই।”
রেহেনা বেগম কিছু বলার মতো খুঁজে পেলেন না। উনি নিজের মতো কান্নায় ব্যস্ত হয়ে গেলেন। আসমা বেগম এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে নীলামের মায়ের কাছে গেলেন। সকালের কেবিন থেকে ডক্টর বের হতেই রেহেনা বেগম, পলক আর আখি হুমড়ি খেয়ে পড়লো উনার উপর।
-“আমার বোন কেমন আছে?”
-“চিন্তা করবেন না। উনি ভালো আছেন। তবে একটু দেখে রাখবেন উনাকে। যথেষ্ট ভয় পেয়েছিলেন উনি পানিতে ডুবে গিয়ে। হয়তো এরপর থেকে পানি দেখলে অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারেন। আই মিন উনার সম্ভবত পানিতে ফোবিয়া হতে পারে। আমি শিয়র না। তবে আগেই সাবধান করে রাখলাম।”
ডক্টর বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। পলকরা সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। কেবিনের যাওয়ার অনুমতি দিতেই উনারা ভেতরে ঢুকে গেলেন।
মিহুর পাশে ওর হাত ধরে বসে আছে মেঘ। মিহু এখন গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে মিহুকে। মাথায় ব্যান্ডেজ করা। সেলাই পড়েছে অনেকগুলো। রক্তক্ষরণ বেশি হওয়ায় রক্ত দিতে হচ্ছে ওকে। শাহনাজ বেগম হন্তদন্ত হয়ে মিহুর কেবিনে ঢুকলেন। মেঘ নিজের মাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো। মিহুর অবস্থা দেখে কেঁদে ফেললেন শাহনাজ বেগম। মেঘ নিজের মাকে শান্ত করতে গেলে উনি রেগে মেঘের গালেই থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন। মেঘ গালে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে গেল।
-“তুমি আমায় মারলে কেন?”
-“এই চড়টা তোকে গতকাল দেওয়া উচিৎ ছিল। তোর জন্য আজ মেয়েটার এই অবস্থা।”
-“আজব! আমি কি করেছি?”
-“তুই গতকাল মিহুর গায়ে হাত তুলেছিলি কোন হিসেবে? তোর কারণে মেয়েটা কান্না করেছে। যে মেয়ে নিজের বাবা-মায়ের মৃত্যুর খবর শুনেও কান্না করেনি সেই মেয়েকে তুই গতকাল কাঁদিয়েছিস। ভেবে দেখেছিস একবার, কতটা কষ্ট পেয়েছে ও?”
-“হ্যা আমি মানছি আমার ঠিক হয়নি ওর গায়ে হাত তোলাটা। কিন্তু মা দোষ ওরও ছিল। ও দীদার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিল ভুলে যেওনা।”
-“না ভুলিনি। কারণ তোর দীদা যে ব্যবহার পাওয়ার যোগ্য মিহু তার সাথে সেই ব্যবহারই করেছে। যে মহিলা একটা মেয়ের মাতৃত্বের উপর আঘাত করে, তার সাথে আর যাই হোক ভালো ব্যবহার করা যায় না।”
-“মাতৃত্বের উপর আঘাত মানে?”
-“তুই তোর দীদাকে চিনিস না! উনি কেমন তা ভালো মতোই জানিস। গতকাল উনি মিহুকে যা নয় তাই বলেছে।”
-“কি বলেছে?”
শাহনাজ বেগম গতকালের ঘটনা খুলে বলতেই আরো একবার হতভম্ব হয়ে গেল মেঘ। বিনা দোষে মিহুর গায়ে হাত তোলায় নিজেকে বেশ নিকৃষ্ট মনে হচ্ছে তার। মেয়েটা ঠিক কতটা কষ্ট পেয়েছে তা আন্দাজ করতে পারছে ও। অনাথ বলে খোঁটা পর্যন্ত দিয়েছে। এই জন্য কি কখনো তাকে মাফ করবে মিহু? ভেবে পেলো না মেঘ।
দেখতে দেখতে তিন-চারদিন কেটে গেল। সকাল এখন আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ। সকালকে এতটা চুপচাপ আগে কখনো দেখেনি বাসার সবাই। মেয়েটা কারো সাথে একটা কথাও বলেনি এই তিন-চারদিনে। বাসার সবাই আরো বেশি অবাক হয়েছে স্নিগ্ধর কাজে। সকাল এত অসুস্থ জেনেও স্নিগ্ধ একবারও দেখতে আসে নি। কিন্তু আসমা বেগম প্রতিদিন এসেছেন দেখা করার জন্য। উনার কাছ থেকেই জানতে পারলো যে গত তিন-চারদিনে স্নিগ্ধ হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরেনি। তার প্রচুর কাজের চাপ রয়েছে। সেজন্য সকালের মা আর ভাই তেমন কিছু মনে করে নি। কিন্তু আখি আসমা বেগমের চেহারা দেখে বুঝে গিয়েছে যা বুঝার।
বিছানার এক কোণে বসে হাতের আংটি নিয়ে নাড়াচাড়া করছে সকাল। সে এখন পুরোপুরি ভাবে অনুভূতিহীন। স্নিগ্ধ নীলামকে পেয়ে ওকে ভুলে যাবে কখনো কল্পনাও করতে পারে নি। সেদিন হেলিকপ্টারের ভেতরে যখন লোকগুলো ওকে আটকে রেখেছিল, তখন সকাল দেখেছে নীলামকে জড়িয়ে ধরে স্নিগ্ধ কান্না করছে। খুব কষ্ট পেয়েছিল সেই সময়টায়। পরে যখন ওকে হেলিকপ্টার থেকে লোকগুলো ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল কিন্তু তখনো স্নিগ্ধর ওর দিকে মনোযোগ না আসায় সকাল প্রচন্ড অবাক হয়েছিল। এতটাই অবাক হয়েছিল যে পানির ভেতর ডুবে গিয়েও ওর কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না। সেদিন মেঘ ওকে না বাঁচালে হয়তো ও মরেই যেতো। বুকে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। স্নিগ্ধ যে ওর কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে তা বুঝতে পারছে সকাল। কিন্তু মন যে বড্ড অবুঝ। মন মানতে পারছে না স্নিগ্ধর দূরে সরে যাওয়াটা। খাটের সাথে মাথা হেলিয়ে, চোখ বন্ধ করে একা একাই বিরবির করতে লাগলো সকাল। ওর চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।
-“ভালোবাসায় এত কষ্ট, এত যন্ত্রণা! যদি আগে জানতাম তাহলে এই ভুলটা কখনোই করতাম না। আচ্ছা ভালোবাসলেই যে কষ্ট পেতে হবে এমন কোনো নির্দিষ্ট থিউরি আছে? আমার কি দোষ ছিল ডাক্তার সাহেব? কেন কোনো দোষ না করেও আমি দোষী হয়ে গেলাম? এতদিনে কি আমি একটুও আপনার মনে জায়গা করে নিতে পারিনি? মানলাম নীলাম আপনার প্রথম ভালোবাসা। আপনি এখনো ওকে ভালোবাসেন। কিন্তু তাই বলে আমাকে এভাবে ভুলে যাবেন! সকাল নামের যে কেউ একজন আপনার জীবনে ছিল তা ভুলে গেলেন এত সহজে! নিশ্চয়ই আমি আপনার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ছিলাম না কখনো। তাহলে আপনি যে আমার এতটা কাছে আসতেন সেগুলো কি ছিল? সব কি বাধ্য হয়ে করতেন? আমি জানি না আপনি কি করবেন এরপর। কিন্তু আমি এত সহজে আপনাকে ছাড়ছি না। আমিও অপর্ণা ইসলাম সকাল। অন্যসব মেয়েদের মতো নিজ মনে একা একাই সবকিছু চিন্তা ভাবনা করে নিজের ভালোবাসার মানুষকে ভুল বুঝে দূরে সরে যাবো এতটা বোকা আমি নই। আপনি কি চান তা আমি আপনার কাছ থেকেই জানবো। আপনি যদি আপনার নীলামের সাথে থাকতে চান তবে আমি কোনো বাঁধা দিব না। মুক্ত করে দিব আপনাকে। কারণ আমি চাইনা জোর করে কোনো সম্পর্ক গড়তে। কিন্তু মনে রাখবেন ডাক্তার সাহেব! আমার থেকে বেশি ভালো আপনাকে কেউ বাসতে পারবে না। এমনকি আপনার নীলামও না।”
নার্স হাতে একটা ট্রে-তে করে ওষুধপত্র নিয়ে কেবিনে ঢুকে দেখে সোফার এক কোণে বসে মাথা হেলিয়ে রেখেছে স্নিগ্ধ। কোনো রোগীর জন্য আগে কখনো স্নিগ্ধকে এতটা বিচলিত হতে দেখেনি হসপিটালের কেউ। যেহেতু এই মেয়ের জন্য স্নিগ্ধ এত বেশি চিন্তিত তাছাড়া মেয়েটা স্নিগ্ধর পরিবারেরও সদস্য তাই স্পেশাল কেউই হবে নিশ্চয়ই। এই ভেবেই বাকি নার্স আর ডক্টররাও অনেক বেশি খেয়াল রাখছে নীলামের। ট্রে পাশের টেবিলের উপর নামিয়ে রেখে নার্স এসে স্নিগ্ধর সামনে দাঁড়িয়ে স্নিগ্ধকে হালকা আওয়াজে ডাকতে লাগলো। হুট করেই চোখ মেললো স্নিগ্ধ।
-“স্যার আপনি আপনার কেবিনে গিয়ে বিশ্রাম নিয়ে নিন কিছুক্ষণ। আমি আছি এখানে। আপনি গত তিন-চারদিনে একবারও বাসায় যাননি। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করেন নি। এমনকি ঘুমান নি পর্যন্ত। এরকম চলতে থাকলে তো আপনি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়বেন। ম্যামের তো এখনো জ্ঞান ফেরেনি। তাই আপনি নিজের কেবিনে গিয়ে একটু বিশ্রাম করে নিন। উনার জ্ঞান ফিরলে আমি আপনাকে জানাবো।”
স্নিগ্ধ কথা বাড়ালো না। মাথা ঝাঁকিয়ে নীলামের দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেল নিজের কেবিনে। শরীরটা আসলেই চলতে চাইছে না। মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করছে। গত কয়েকদিনে না বাসায় গিয়েছে আর না বাসার কারো সাথে কথা বলেছে। নীলামের খুব সিরিয়াস অবস্থা ছিল। এখন মোটামুটি ঠিক আছে তবে এখনো পর্যন্ত জ্ঞান ফেরেনি। সকাল যতদিন হসপিটালে ছিল ততদিন নার্স আর ডক্টরদের কড়াভাবে জানিয়ে দিয়েছিল যাতে সকালের কিছু না হয়। কোনো প্রকার অসুবিধা যেন না হয় সকালের। কথাটা অবশ্য নার্স আর ডক্টররা ছাড়া আর কেউ জানে না। নীলামকে নিয়ে স্নিগ্ধ এতটাই ব্যস্ত ছিল যে সকালের সাথে একবারও দেখা করতে পারে নি। কেবিনে এসে অ্যাপ্রোনটা নামিয়ে রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বুঁজে নিলো ও। পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে ফোন বের করে কল দিল সকালের নম্বরে।
ফোনটা হাতে নিয়ে নম্বরের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে। স্নিগ্ধ নম্বর থেকে কল আসছে দেখে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো সকালের। চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে ফোন কানে ধরতেই ওপাশ থেকে স্নিগ্ধর রাগী কণ্ঠে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল। পরক্ষণেই চোখ দুটো আবারও ভিজে উঠলো পানিতে। কোনো কথা না বলে কল কেটে দিল। বালিশ আঁকড়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো সকাল।
-“যখন আমার সাথে কথা বলার সময়ই নেই আপনার তখন কেন কল দিলেন আমাকে? আমাকে কল দিয়েও নার্সদের সাথে চেঁচামেচি করছেন নীলামকে নিয়ে। আমার প্রতি কি আপনার কোনো দায়িত্ব নেই? এতগুলো দিনে একবারও আমার খোঁজ নিলেন না। আর আজ যখন কল দিলেন তখনো নীলামকে নিয়েই চিন্তা করছেন। আমার কষ্ট হয় বুঝেন না আপনি! কেন বুঝেন না আমাকে?”
বিছানার চাদর একহাতে মুঠ করে ধরে কাঁদতে লাগলো। এতক্ষণ নিজের মনকে বুঝালেও এখন আর পারছে না সকাল। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কথা বলতে হবে স্নিগ্ধর সাথে। এই ভেবেও কান্না থামলো না ওর।
খাবার হাতে নিয়ে রুমে ঢুকে মিহুকে তৈরি হতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো মেঘ। টেবিলের উপর প্লেট নামিয়ে রেখে বললো,
-“কোথায় যাচ্ছ এই অবস্থায়?”
-“অফিসে। আজকে আরিফুল ইসলামকে ধরতে হবে। টিলিকে তো ধরেই ফেলেছি। কিন্তু আরিফুল ইসলাম এখনো বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।”
-“তুমি কোথাও যাচ্ছ না। তোমার অবস্থা তুমি দেখতে পাচ্ছ না! কতটা অসুস্থ তুমি। মাথায় এত গুরুতর আঘাত পেয়েও কি করে এখন অফিসে যেতে চাও?”
-“লিসেন! আমি ঠিক আছি। এই সামান্য আঘাত কখনো আমাকে কাবু করতে পারবে না। শুধু মনের আঘাতগুলোই কাবু করে আমাকে। এখন সরো বের হতে হবে আমাকে।”
-“না। ডক্টর বলেছেন পুরো একমাস তোমাকে বেড রেস্টে থাকতে। এখনো তোমার মাথায় ব্যান্ডেজ রয়েছে। আর এখন আমি খাবার নিয়ে এসেছি। সেটা খাবে তুমি।”
-“জোরাজুরি আমার একদম পছন্দ নয়। কথাটা জেনেও তুমি আমার উপর জোর খাটাচ্ছ!”
-“হ্যা খাটাচ্ছি জোর। কারণ আমার অধিকার আছে তোমার উপর জোর খাটানোর।”
-“রিয়্যালি! ওহ প্লিজ হাসিও না আমাকে। অনেক ভালো কৌতুক ছিল। এখন সরো এখান থেকে। আমার মেজাজ খারাপ করবে না একদম।”
-“স্যরি ডিয়ার।”
মিহুর কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে এনে ওকে নিয়ে সোফায় বসে গেল মেঘ। ওর কোলে মিহুকে বসিয়ে একহাত দিয়ে মিহুর হাতসহ ওকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে যাতে বেশি ছুটোছুটি না করতে পারে। মিহু রেগে বম হয়ে গেছে। মেঘের দিকে এমনভাবে তাকালো মনে হচ্ছে এখনি গিলে খাবে মেঘকে ও। হাসলো মেঘ। মিহু কিছু বলার জনয় মুখ খুলতেই মেঘ খাবার ঢুকিয়ে দিল ওর মুখে। রাগে, দুঃখে কিছু বলতে না পেরে খাবার চিবুতে লাগলো মিহু। ওর খাবার চিবানো দেখে মেঘের মনে হচ্ছে মিহু খাবার না, ওকেই চিবুচ্ছে। মিহু যখনি কিছু বলার জন্য মুখ খুলে মেঘ তখনি খাবার ঢুকিয়ে দেয় মিহুর মুখে। এভাবেই সম্পূর্ণ খাবার খাইয়ে দিল মেঘ মিহুকে। খাবার শেষ হতেই মিহুকে ছেড়ে দিল মেঘ। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে কিছু না বলে উঠে গেল মিহু ওর কোল থেকে। মেঘের পায়ে নিজের পা দিয়ে জোরে একটা পাড়া দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
পুরো বাড়ি নিশ্চুপ হয়ে আছে। একটা সুঁই পড়লেও যেন স্পষ্ট আওয়াজ পাওয়া যাবে। ড্রইংরুমের সোফায় বসে কেঁদে যাচ্ছেন রেহেনা বেগম। পলক আর আখি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সকাল এতক্ষণ মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু আরিফুল ইসলামের স্বীকারোক্তি শুনে দাঁড়ানো থেকে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো ও। চোখের পানি যেন একদম শুকিয়ে গেছে ওর। একধ্যানে সামনে তাকিয়ে আছে। সবার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আরিফুল ইসলাম। কিছুক্ষণ আগেই সিআইডি অফিসাররা এসেছে সকালের পাপাকে গ্রেফতার করতে। কারণ জানতে চাইলে যখন তানিশা ওদের সব বলে তখন পলক ভীষণ ভাবে ক্ষেপে গিয়েছিল ওদের উপর। সকালও প্রচন্ড রাগে যা নয় তাই বলে ফেলেছে ওদের। কিন্তু যখন আরিফুল ইসলাম নিজ মুখে নিজের সমস্ত কুকীর্তির কথা স্বীকার করলেন তখন আর কেউ কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পেলো না। একের পর এক এত বড় ধাক্কাগুলো কীভাবে সামলে উঠবে সকাল?
-“আমিও তো তোমার মেয়ে পাপা! আমাকে তুমি সবসময় মাথায় তুলে রেখেছো। রাজকুমারীর থেকে কোনো অংশে কম আরামে রাখোনি। তুমি সবসময় এই পরিবারের জান বলতে আমাকে। যেসব মেয়েদের তুমি কিডন্যাপ করে বিদেশে পাচার করেছো তারাও তো তাদের পরিবারের জান ছিল তাই না! তাহলে কেন করলে এমন? যদি ওই মেয়েগুলোর জায়গায় আমি থাকতাম! তখন কেমন লাগতো তোমার? ওই মেয়েগুলো তোমার কেউ ছিল না বলে তুমি ওদের সাথে এরকম অমানুষিক আচরণ করতে পেরেছো তাই না!”
-“(….)”
আরিফুল ইসলামের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। যে মেয়ের চোখে এতদিন নিজের জন্য ভালোবাসা আর সম্মান দেখেছে, সেই মেয়ের চোখে আজ ঘৃণা দেখতে পাচ্ছে আরিফুল ইসলাম। নিজেকে খুবই নিকৃষ্ট মনে হচ্ছে তার। সকাল হঠাৎ চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। পলকের চোখ বেয়েও পানি গড়িয়ে পড়ছে। ও কিছু না বলে নিচে বসে জড়িয়ে ধরলো সকালকে। মেঘ, মিহু, তানিশা আর শাহিনের কাছে খুব খারাপ লাগলো ব্যাপারটা। কিন্তু ওদের কিছু করার নেই। মেঘ হ্যান্ডকাফ বের করতে গেলে মিহু ওকে আটকে দিল।
-“হ্যান্ডকাফ পড়ানোর দরকার নেই। উনি পালাবেন না। এমনিই নিয়ে চলুন উনাকে।”
মেঘ মাথা নাড়িয়ে আরিফুল ইসলামকে ওদের সাথে আসতে বললো। আরিফুল ইসলাম কোনো কথা না বলে চুপচাপ ওদের সাথে বেরিয়ে এলেন বাসা থেকে। বাসার বাইরে মিডিয়ার লোক ভিড় জমিয়েছে। তাদেরকে আটকে রেখেছে বাসার বডিগার্ডরা। আরিফুল ইসলামকে গাড়িতে উঠিয়ে উনাকে নিয়ে চলে গেল অফিসাররা।
বাসার সবার উপর নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সকাল চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে একসময় পলকের বুকেই অজ্ঞান হয়ে গেল।
চলবে….
নোটঃ ইনশাআল্লাহ যদি পারি তো রাতে ছোট একটা পর্ব দিব। আমি শিয়র না। তাই আগেই বলে দিলাম যদি পারি তাহলে দিব।