সেই_সন্ধ্যা পর্ব_৪৯

0
2166

#সেই_সন্ধ্যা
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_৪৯
.
কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে ফোনে গান শুনছে আর গেমস খেলছে মেঘ। আজ ওর ছুটি। মিহু বাসায় নেই। অফিসে গেছে একটা কাজে। শাহনাজ বেগম রুমে এসে মেঘের সামনে একটা খাম নামিয়ে রেখে কান থেকে টান দিয়ে ইয়ারফোন খুলে ফেললেন। মেঘ বিরক্ত হয়ে তাকালো মায়ের দিকে।

-“কি হলো মা? গেমস খেলছিলাম তো আমি!”
-“তোকে কখন থেকে ডাকছি আমি? কানে ইয়ারফোন গুঁজে রাখলে শুনবি কি করে?”
-“কি হয়েছে সেটা বলো।”
-“এই খামটা মিহুর জন্য এসেছে। ও আসলে ওকে দিয়ে দিস।”
-“কিসের খাম এটা?”
-“আমি কি জানি?”
-“আচ্ছা দিয়ে দিব।”

মেঘ ফোন রেখে খামটা হাতে তুলে নিলো। খামের উপরের লেখা দেখে বুঝলো এটা হেডকোয়ার্টার থেকে এসেছে। নিজের কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে খামটা খুলে ফেললো মেঘ। কাগজটা বের করে পড়তেই চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। মিহুর উপর প্রচুর রাগ উঠতে লাগলো ওর। মেঘ রেগে নিজের মায়ের কাছে গেল। মেঘকে রান্নাঘরে ঢুকতে দেখে হেসে ফেললেন শাহনাজ বেগম।

-“এখানে কি করিস তুই?”
-“তোমার আদরের বউমা কি করেছে তুমি জানো?”
-“না তো। কি করেছে মিহু?”
-“মা, ও ট্রান্সফার নিয়েছে। এই খামে ওর ট্রান্সফার লেটার এসেছে।”
-“এটা যে মিহুর ট্রান্সফার লেটার তা জানতাম না আমি। তবে ও যে ট্রান্সফার নেয়ার জন্য অ্যাপ্লাই করেছিল সেটা জানতাম।”
-“কিহ! তুমি জেনেও কিছু বলোনি ওকে? আর আমাকে কেন কিছু জানাওনি?”
-“মিহু চায়নি কাউকে জানাতে। ও চেয়েছিল একেবারে যাওয়ার সময়ই জানাবে সবাইকে। আর আমি ওকে কিছু বলিনি তার কারণ আমারও মনে হয় এখন তোদের আলাদা হয়ে যাওয়া উচিৎ। কম তো হলো না! পুরো দশটা বছর পাড় করলি তোরা একে অপরের সাথে। তারপরও কেউ কাউকে একটুও ভালোবাসতে পারলি না। ভালোবাসা তো দূরে থাক সহ্যই করতে পারিস না তোরা একে অপরকে।”
-“(….)”
-“মিহু ইচ্ছে করে ট্রান্সফার নিয়েছে। আর…

মেঘ মায়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-“আর?”
-“আর মিহু বলেছে ডিভোর্স পেপার রেডি করতে। মিহু আর এই বাসায় থাকুক বা তোর জীবনে থাকুক সেটা তোর দীদা চাইছে না। উনি মিহুকে বলেছেন যাতে ও তোকে মুক্তি দেয়। উনি আবার তোর বিয়ে দিবেন নিজের পছন্দ করা মেয়ের সাথে। তাই এই পদক্ষেপ নিতে চাইছে মিহু।”
-“হোয়াট? ডিভোর্স! ইম্পসিবল!”

মেঘ প্রচন্ড রেগে যায় মায়ের কথা শুনে। রাগে ওর মুখটা লাল হয়ে গেছে। শাহনাজ বেগম বুঝলেন ছেলে তার ফেঁসে গিয়েছে মিহুর মায়ায়। মনে মনে হাসলেন উনি। এতদিন তো এটাই চেয়ে এসেছেন। মুখে গম্ভীর একটা ভাব ফুটিয়ে তুলে বললেন,
-“কি ইম্পসিবল?”
-“আমি ওই শাঁকচুন্নিকে কখনোই ডিভোর্স দিব না।”
-“কেন দিবি না? তোদের মাঝে তো সাপে নেউলে সম্পর্ক। একজন আরেকজনকে সহ্যই করতে পারিস না। এর থেকে ডিভোর্স নিয়ে নেয়া ভালো না! ডিভোর্স হয়ে গেলে যে যার পছন্দ মতো জীবনসঙ্গী খুঁজে নিতে পারবি।”
-“আমার জীবনসঙ্গী আছে। ওই শাঁকচুন্নিই আমার জীবনসঙ্গী। আমার অন্য কাউকে লাগবে না। তোমার ওই নটাংকিবাজ বউমা এই বাসা ছেড়ে বের হওয়ার জন্য একবার শুধু বাইরে পা রেখে দেখুক আমি ওর কি হাল করি! আমিও মেঘ। বউকে কীভাবে আটকে রাখতে হয় তা আমার জানা আছে।”

মেঘ রাগে গজগজ করতে করতে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। সোজা ছাদে চলে এসেছে ও। যার প্রেমে পড়ে দিন-রাত ও কষ্ট পায়, যাকে পেয়েও না পাওয়ার বিরহে সিগারেটের ধোঁয়াকে ও আকাশে উড়ায়, যাকে ভালোবেসেও তাকে বলতে পারে না বা কাছে টানতে পারে না, তবুও এত দুঃখ হয় না ওর। অথচ আজ শুধু তার চলে যাওয়ার কথা শুনেই মনে হচ্ছে বুকের ভেতরে কেউ এসিড ঢেলে দিয়েছে। রাগে দুঃখে নিজের মাথার চুল ধরে টানতে লাগলো মেঘ।

-“কেন বোঝে না এই মেয়েটা যে আমি ওকে ভালোবাসি! এতটা কষ্ট কেন দেয় ও আমাকে? আমার থেকে দূরে গেলে কি খুব বেশি ভালো থাকতে পারবে ও? আমাকে যদি পছন্দ না-ও করে তা-ও ওকে আমার সাথেই থাকতে হবে। দরকার পড়লে জোর করে রেখে দিব। তা-ও যদি না থাকতে চায়, তবে ওর ওপর আমি জোর করে নিজের অধিকার খাটাতে দু’বার ভাববো না। তোমাকে আমার সাথে থাকতেই হবে মিহু। বিকজ আই লাভ ইউ।”

পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে রেলিং এর উপর পা ঝুলিয়ে বসলো মেঘ। সিগারেট জ্বালিয়ে পাশে লাইটার নামিয়ে রাখতে গেলে রূপসাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও কিছু বললো না। এই বিল্ডিংয়ের পাঁচ তলায় থাকে রূপসা। মেয়েটা মেঘেরও আরও একটা টাইমপাস অর্থাৎ গার্লফ্রেন্ড। রূপসা মেঘের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
-“তুমি আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে কেন?”
-“আমার মুড ভালো না রূপসা। তুমি প্লিজ বাসায় যাও।”
-“তোমার মুড ভালো না শুনেও আমি বাসায় চলে যাবো! কখনো না। তুমি বলো কি করলে তোমার মুড ভালো হবে?”
-“একটু একা থাকলে আমার মুড এমনিই ভালো হয়ে যাবে। তোমাকে এত ব্যস্ত হতে হবে না।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে। চলে যাচ্ছি আমি।”

মেঘ কিছু না বলে একধ্যানে সামনে তাকিয়ে সিগারেট ফুঁকতে লাগলো। রূপসা চলে যাচ্ছে সেটা টের পেয়েছে মেঘ। রূপসা ছাদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দুষ্টু হাসলো। এখন ওর উদ্দেশ্য হলো যে করেই হোক মেঘের মুড ঠিক করা। তার জন্য আগে মেঘকে একটু ভয় দেখাবে। মেঘ ভয় পেলে তা দেখে ও হাসবে। আর ওর হাসি দেখেই মুড ভালো হয়ে যাবে মেঘের। এই রকমই কিছু একটা ভেবেছে রূপসা। পা থেকে জুতো খুলে রেখে খালি পায়ে একদম নিঃশব্দে মেঘের পেছনে এসে দাঁড়ালো ও। একটু হেসে জোরে ‘ভাও’ বলে চিল্লিয়ে উঠলো। হঠাৎ কানের সামনে এসে এভাবে চিৎকার দিলে যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। মেঘের ক্ষেত্রেও তার বিপরীত কিছু হলো না। ভয়ে হাত থেকে সিগারেটটা পড়ে গেল। নিজের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পেরে নিচে পড়ে যেতে গেলেই একজোড়া হাত ওকে ধরে ফেললো। মেঘ পাশে তাকিয়ে মিহুকে দেখে স্বস্তি পেলো। মিহুর হাত ধরে রেলিং থেকে নিচে নেমে গেল মেঘ।

মেঘকে নিচে নামিয়ে উল্টো ঘুরে রূপসার গালে কষিয়ে করে একটা থাপ্পড় মেরে দিল মিহু। গালে হাত রেখে ভীত চেহারায় মিহুর দিকে তাকালো রূপসা। মিহু রেগে বললো,
-“তোমার এই ফাজলামোর কারণে আজ কি হয়ে যেতে পারতো তুমি জানো! তুমি দেখলে ও রেলিং এর উপর বসে আছে। একটু এমন তেমন হলেই নিচে পড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে তোমার উচিৎ ছিল ওকে এখান থেকে নামতে বলা। তা না করে তুমি এসেছিলে ওকে ভয় দেখাতে। এখন কি আমি ধরে নিবো যে তুমি এটাই চাইছিলে যে ও নিচে পড়ে যাক!”
-“(….)”
-“আজকের পর থেকে যদি আর কোনোদিন তোমাকে আমি ছাদে দেখেছি তাহলে তোমার একদিন কি আমার একদিন।”

মেঘ চুপ করে দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে মিহুর দিকে। রূপসাকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিহু রূপসার থেকে চোখ সরিয়ে পেছন ঘুরে মেঘকে একটা থাপ্পড় মেরে দিল। মেঘ গালে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে গেল।

-“ইডিয়ট কি আমি তোমায় এমনি এমনি বলি! রেলিং বসার জায়গা? যদি কিছু হয়ে যেতো আজকে! আর কোনোদিন যদি ওখানে বসতে দেখেছি তোমাকে, তাহলে আজকে তো শুধু একটা থাপ্পড় দিয়েছি! এরপর যে কি করবো আমি তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।”

মেঘের গায়ে হাত তোলায় রূপসা রেগে গেল। ও চেঁচিয়ে বললো,
-“তুমি কোন সাহসে ওর গায়ে হাত তুললে?”
-“কেন? ওকে মারায় তোমার লেগেছে বুঝি!”
-“তুমি ওর বাসায় এসে ওকেই থাপ্পড় মারছো আর আমি ওর গার্লফ্রেন্ড হয়েও চুপচাপ দেখবো?”
-“ওহ আচ্ছা! তুমি ওর গার্লফ্রেন্ড?”

রূপসার কথা শুনে মেঘ অসহায় গলায় কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গিতে বললো,
-“মিহু আসলে…
-“ইউ জাস্ট শাট আপ।”

রূপসা তীক্ষ্ণ গলায় বললো,
-“ভদ্রভাবে কথা বলো ওর সাথে।”
-“লিসেন! আ… কি নাম তোমার?”
-“রূপসা।”
-“হুম। লিসেন রূপসা! ও হতে পারে তোমার বয়ফ্রেন্ড। আর তাই আমি ওকে কিছু বললে তোমার গায়ে লাগছে। কিন্তু কি বলোতো! আমার ওকে এসব বলার অধিকার আছে। কারণ আমি ওর ওয়াইফ। ওকে!”
-“(….)”

মেঘের দিকে ঘুরতেই দেখে মেঘ এখনো গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রচুর বিরক্ত হলো মিহু। ও বাসায় ঢোকার সময় নিচে থেকে ছাদের দিকে তাকিয়ে খেয়াল করেছিল রূপসা মেঘের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তার জন্য ও আসেনি এখানে। ও এখানে এসেছে মেঘকে এভাবে বাইরে পা ঝুলিয়ে বসে থাকতে দেখে। ছাদের সিঁড়িতে আসতেই রূপসাকে জুতো খুলতে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলেছিল। কিন্তু পরে যখন দেখলো রূপসা চুপচাপ মেঘের পেছনে দাঁড়িয়ে ভয় দেখানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনি ও তাড়াতাড়ি ছাদে চলে আসে। মিহু শুধু ভাবছে ও যদি ঠিক সময়ে না আসতো তাহলে বড় একটা অঘটন ঘটে যেতে পারতো।

মিহু মেঘের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে যেতে গেলেই ওর হাত ধরে ফেললো মেঘ। পেছন ঘুরে রাগী চোখে তাকালো মিহু। মেঘ গাল থেকে হাত সরিয়ে রূপসার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“রূপসা তুমি বাসায় যাও এই মুহূর্তে। আমাকে যেন দ্বিতীয়বার বলতে নাহয় কথাটা।”

রূপসা কথা না বাড়িয়ে মুখ গোমড়া করে চলে গেল। মিহু হাত ছোটানোর চেষ্টা করলে মেঘ আরও শক্ত করে চেপে ধরলো ওর হাত। মিহুকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো। দাঁতে দাঁত চেপে মেঘ বললো,
-“তুমি ট্রান্সফার কেন নিয়েছো?”
-“তুমি কি করে জানলে?”

অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো মিহু। হাত ছেড়ে কোমড় ধরে পেছনে ঠেলে মিহুকে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে ধরে মেঘ ওর সামনে একদম ওর গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। হালকা শিউরে উঠলো মিহু। ঢোক গিলে বললো,
-“ছাড়ো আমাকে।”
-“আগে বলো ট্রান্সফার কেন নিয়েছো?”
-“এমনি।”

মিহু চোখ নিচে নামিয়ে শান্তস্বরে কথাটা বলতেই মেঘ রেগে গেল। রাগী গলায় বললো,
-“এমনি কেন? কি সমস্যা হচ্ছে এখানে?”
-“কোনো সমস্যা হচ্ছে না।”
-“তুমি কোথাও যাচ্ছ না এখান থেকে।”
-“তুমি বলার কে? আমি একশো বার যাবো হাজার বার যাবো।”
-“আমি তোমার হাজবেন্ড। আর আমি যখন একবার বলেছি তুমি কোথাও যাচ্ছ না, মানে যাচ্ছ না।”
-“আমি তোমাকে ডিভোর্স দি…

আর কিছু বলতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো মিহু। মেঘ সরে এসে মিহুর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“প্রথম ওষ্ঠ চুম্বন কেমন লাগলো?”
-“হোয়াট দ্যা… ইডিয়ট! কি করলে এটা তুমি?”
-“বউয়ের ঠোঁটে চুমু খেয়েছি। এতে কারো কোনো সমস্যা তো হওয়ার কথা না।”

মিহু যে প্রচুর রেগে গেছে তা মেঘ বুঝতে পারছে। কারণ চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে মিহু। মুখটা লাল হয়ে গেছে। এমনটা মিহু তখনি করে যখন ও প্রচন্ড রেগে যায়। হালকা হেসে মিহুর কানের সামনে গিয়ে মেঘ ফিসফিসিয়ে বললো,
-“ভালোবাসি মিহু। আই লাভ ইউ।”

নিমিষেই এক শীতল হাওয়া বয়ে গেল মিহুর শরীরে। এতক্ষণ যে রাগটা মেঘের উপরে ছিল তা গায়েব হয়ে গেল। চোখ খুলে মেঘের দিকে তাকাতেই মেঘ ওর হাত দুটো ধরে হাতে চুমু দিল। মিহু শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেঘের দিকে তাকিয়ে।

-“তুমি যেদিন প্রথম হোস্টেল থেকে বাড়ি ফিরে এলে সেদিনই তোমাকে দেখে ভালো লেগে যায় আমার। কিন্তু তুমি যখন বলো যে আমাদের ভেতরে কোনো সম্পর্ক থাকবে না, শুধু নাম মাত্র স্বামী-স্ত্রী থাকবো আমরা, তখন অনেক খারাপ লেগেছিল আমার। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম তোমার কথায়। তবুও নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম। কিন্তু তোমার উপর একটা রাগ বসে যায় আমার। যার জন্য হাজারো মেয়ের সাথে রিলেশন করে ফেলি। অবশ্য সেগুলো শুধুই টাইমপাস ছিল। তোমার সাথে ঝগড়া করতাম যাতে কিছুক্ষণ তোমাকে সামনে রেখে মন ভরে তোমাকে দেখতে পারি সেজন্য। ভালো লাগা থেকেই আস্তে আস্তে তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি। কথাটা কখনো বলার সাহস পাইনি তোমায়। যদি আমায় ভুল বুঝো! কিন্তু আজ না বলে থাকতে পারলাম না। আজ তুমি আমায় ভুল বুঝলেও আমার কিছু যাবে আসবে না। কারণ তুমি আমায় ভালো না বাসলেও তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে। আমি তোমাকে আমার থেকে দূরে যেতে দিব না।”
-“(….)”

মিহু কিছু না বলে চুপ করে মেঘের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষের চোখ কখনো মিথ্যে বলে না। চোখের ভাষা সহজে সবাই বুঝে না। যারা বুঝে তারা ঠকে না। মেঘের চোখের ভাষা বুঝতে অসুবিধা হলো না মিহুর। স্পষ্ট নিজের জন্য ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে ওই চোখে। এতদিন যেই চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা দেখার অপেক্ষা করছিল, আজ সেই অপেক্ষার অবসান ঘটলো। হ্যা আজ মেঘও মিহুকে ভালোবাসে। কথাটা জানতে পেরে কতটা খুশি লাগছে মিহুর তা বলে বোঝাতে পারবে না কাউকে।

মিহুকে চুপ করে থাকতে দেখে মেঘ বললো,
-“এখন থেকে এসবের অভ্যাস করে নাও। কারণ তোমার জামাইয়ের রাগ আর জেদ সম্পর্কে নিশ্চয়ই তোমার ধারণা আছে! একবার যখন সে বলেছে যে সে তোমাকে কোথাও যেতে দিবে না, মানে কোথাও যেতে দিবে না।”

পা দিয়ে জোরে একটা পাড়া দিল মেঘের পায়ে মিহু। মেঘ ব্যাথা পেয়ে সরে গেলেই কষিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে দিল মেঘের গালে। মেঘ ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ উঁচু করে রেগে তাকালো মিহুর দিকে। মিহু দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“শালা তুই কতদিন অপেক্ষা করিয়েছিস আমাকে তুই জানিস? এই থাপ্পড়টা তো কম হয়ে গিয়েছে তোর জন্য। আরও কতগুলো দেওয়া উচিৎ ছিল। ফাজিল জানি কোথাকার। তোর মতো বলদা পোলা আমি আর একটাও দেখি নাই, যে কি-না বিয়ের দশ বছর পর নিজের বউকে ভালোবাসি বলে। ইডিয়ট তো আর এমনি এমনি বলি না তোরে। আমাকে পুরো চারটা বছর অপেক্ষা করাইছিস তোর মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্য। বজ্জাতপোলা ভালোবাসে কিন্তু সেইটা না বলে মনে মনে রাখে উনি।”

মেঘ হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে আছে মিহুর কথা শুনে। মেয়েটা কি হুট করে পাগল-টাগল হয়ে গেল না-কি! মিহু বুঝতে পারলো মেঘ এখনো নিজের বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারছে না ওর কথাগুলো শুনে। হাসলো মিহু। মেঘের নাক টেনে দিয়ে কানে কানে বললো,
-“আমিও ভালোবাসি। অনেক বেশি ভালোবাসি। কিন্তু হ্যা! তোমার যতগুলো গার্লফ্রেন্ড আছে সবার সাথে ব্রেকাপ করতে হবে। নাহলে আমাকে পাবে না।”

মেঘ আরেক দফা বিস্মিত হলো। এবার যেন সে স্ট্রোক করবে এমন অবস্থা। মিহু একটু জোরেই হেসে দিল। আর কিছু না বলে মেঘকে সেভাবে দাঁড় করিয়ে রেখে চলে যেতে গেলে মেঘ খপ করে ওর হাতটা ধরে ফেলে। মিহু পেছন ঘুরে ভ্রু নাচিয়ে ‘কি’ জিজ্ঞেস করতেই হাত ধরে টান দিয়ে ওকে নিজের বুকে এনে ফেললো মেঘ। একহাতে মিহুর চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিতে দিতে বললো,
-“সত্যি ভালোবাসো!”
-“কি মনে হয়?”
-“মনে হয় না ভালোবাসো। নাহলে এত নিষ্ঠুর হতে না আমার প্রতি।”
-“যাবো না-কি বাসা ছেড়ে!”
-“চেষ্টা করে দেখতে পারো।”
-“কীভাবে আটকাবে আমায় শুনি!”
-“ভালোবেসে আটকাবো। এত ভালোবাসা দিব যে তুমি যেতেই চাইবে না।”
-“আচ্ছা! এতদিন যে কোথায় লুকিয়েছিল এই ভালোবাসাগুলো ওপরওয়ালাই জানে।”

মিহুর ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে মিহু মেঘকে বাঁধা দিয়ে বললো,
-“আমরা ছাদে দাঁড়িয়ে আছি মেঘ। কেউ দেখে ফেললে লজ্জায় পড়তে হবে পরে।”
-“তা অবশ্য মন্দ বলো নি। বাসায় চলো। সেখানে গিয়ে শান্তিতে একটু ভালোবাসবো তোমায়।”

মিহুর হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগলো মেঘ। ওর পাগলামি দেখে হেসে দিল মিহু।

চলবে….

নোটঃ মাথা ব্যাথা আর জ্বরের কারণে লিখতে গিয়ে মন বসাতে পারিনি আজ। খুব কষ্টে এইটুকু লিখেছি। মেঘ-মিহুর কাহিনিটা পুরো শেষ করে দিলাম এই পর্বে। এর পরের পর্বগুলো গল্পের মেইন ক্যারেক্টারদের নিয়েই হবে। হ্যাপি রিডিং।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here