“হালাল প্রেম”
পর্ব- ৬৪
(নূর নাফিসা)
.
.
তার মন বলছিলো ইফাজ এসেছে রাস্তায়, তাই ফোন করে এখানে আসতে বলেছে। কিন্তু এতো বড় একটা সারপ্রাইজ রেখেছে, সেটা ভাবেনি!
মোটামুটি বড়সড় একটা হলুদ ঘুড়ি। তার উপর আর্ট করা, “শুভ হলুদ ছোঁয়া”। সে উঁকি দিয়ে নিচে তাকাতেই দেখলো চারজন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। সাফওয়ানা ফোন কানে দিয়ে বললো,
“আপনি এতো রাতে এখানে কেন?”
“তোমার হলুদ ছোঁয়ায় অংশগ্রহণ করতে এলাম।”
সাফওয়ানা হেসে বললো,
“তাহলে সন্ধ্যায় চলে আসতেন।”
“এখনই চুরি করে আসতে হলো, আবার সন্ধ্যায়!”
“ঘুড়ি এ পর্যন্ত পৌছালো কিভাবে!”
“উপরের গ্যাসবেলুনগুলো কি তোমার চোখে পড়ছে না?”
সাফওয়ানা লক্ষ্য করে দেখলো ঘুড়ির উপর লাভ শেপ পাঁচটা বেলুন বাঁধা। সে বুঝতেই পারেনি এই গ্যাসবেলুনগুলো ঘুড়িকে উড়িয়ে নিয়ে এসেছে। সে বললো,
“আ’ম সো এক্সাইটেড! থ্যাংক ইউ সো মাচ।”
“মোস্ট ওয়েলকাম। নিচের রশিটা ধরো। আমি ছেড়ে দিলে কিন্তু উড়ে যাবে।”
“এটা আমি এখন নিবো কিভাবে! গ্রিলের ফাঁকে তো আসবে না!”
” তাহলে ছেড়ে দেই।”
“না…!”
ইফাজ হেসে বললো,
“নিচে চলে এসো।”
“ওকে, চেষ্টা করছি।”
সাফওয়ানা উৎফুল্লতার সাথে বারান্দা থেকে এসে ডিঙিয়ে পা ফেলে রুম থেকে বের হতে লাগলো। যতটা গতিতে এসেছিলো, তার চেয়ে তিনগুণ বেশি গতিতে বেরিয়ে এলো। শুধু ভয় ছিলো, না জানি তাদের উপরেই পড়ে যায়! যাক, এ যাত্রায় সে সফল হলো। ফ্ল্যাট থেকে সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে বের হলেও, বাইরে এসে জোভানের চোখে ধরা পড়ে গেলো! জোভান একা একা ছাদ থেকে নেমে আসছে। সাফওয়ানা দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে গেলো! জোভান বললো,
“কোথায় যাচ্ছো?”
সাফওয়ানা আবার দরজা মুখি হতে হতে বললো,
“কোথাও না, ভাইয়া।”
জোভান ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বললো,
“নিচে যাবে?”
সাফওয়ানা বুঝতে পেরেছে জোভান নিশ্চয়ই জানে তারা এসেছে। আর সে-ও নিচেই যাচ্ছিলো হয়তো। তাই আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো,
“যেতাম একটু।”
“যাও। দুমিনিটের মধ্যে চলে এসো।”
সাফওয়ানা নিচে নেমে গেলো আর সে লজ্জা পেয়েছে বিধায় জোভান নিচে না গিয়ে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করলো। ইফাজকে সাদা পাঞ্জাবী ও গোল্ডেন কটি তে দারুণ লাগছে তাই মুচকি হাসলো সাফওয়ানা এবং আবার তাদের সালাম দিলো। এখানে মিরাজ আছ, সাথে আছে আরও অচেনা দুজন। একজন পরিচয় দিলো ইফাজের ফ্রেন্ড আরেকজন পরিচয় দিলো তার কাজিন। মিরাজ বললো,
“ফাঁসি, চলো কিডন্যাপ করতে এসেছি তোমাকে।”
“আব্বুর কাছে অনুমতি নিয়েছেন?”
সকলে হেসে উঠলো আর মিরাজ বললো,
“কিডন্যাপ করতে আবার অনুমতির প্রয়োজন হয়?”
“কিডন্যাপ তো এভাবে বলেও করে না।”
“এহ! বউ একখান পাইতাছোস! জব্বর চালাকরে ভাই!”
বলতে বলতে ইফাজের কাঁধ চাপড়ালো। ইফাজ মুচকি হেসে ঘুড়ির রশিটা টেনে ছোট করে ঘুড়িটা নিচে নামিয়ে আনলো এবং সাফওয়ানার হাতে দিতে দিতে বললো,
“সাবধানে নিয়ে যেয়ো। আবার তুমি উড়ে যেয়ো না।”
ইফাজের কাজিন বললো,
“ধুর, ভাইয়া! তাহলে তুমি আছো কি জন্য? উড়ে গেলে উদ্ধার করবা না?”
সাফওয়ানা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো এবং বললো,
“বাসায় আসুন সবাই।”
ইফাজ বললো,
“নাহ, এখন জগিং করার সময়। তুমি ঘুমাও গিয়ে। নাহয় ফটোশুটে পেত্নীর দেখা পাওয়া যাবে। অলরেডি, হাফ ইঞ্চি গর্তে চলে গেছে চোখ।”
“যাক।”
মিরাজ বললো,
“ভাবি আপনি চলে যাওয়ার সময় কাঁদবেন না?”
“না।”
“বাবারে! বিয়ের কত শখ! আমি তো আরও প্রিপেয়ার হচ্ছিলাম আপনার সাথে কাঁদবো বলে!”
“টাকা খরচ করে সেজে আবার কান্না করবো! এতো ঠেকা পড়েনি। আমারটা সহ আপনি কেঁদে নিয়েন।”
“এইটা নাকি নতুন বউ! তার নাকি বিয়ে! কেউ বিশ্বাস করবে!”
সাফওয়ানা মুখ চেপে হাসলো মিরাজের কথায়। এদিকে জোভান চলে এলো নিচে। এসেই সাফওয়ানার উদ্দেশ্যে বললো,
“শেষ হয়নি দু’মিনিট?”
“এহ! আমি কি ঘড়ির টাইম ধরে এসেছি।”
ইফাজ বললো,
“কড়া গার্ডে রাখছেন দেখছি!”
“ভাইয়ের গার্ড কড়া না হলে চলে? আজই তো শেষ। ছাদে তাকিয়ে দেখ, গার্ড আরও পাকাপোক্ত।”
সবাই ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখলো,শারমায়া, সুষনা ও আরিফ দাঁড়িয়ে আছে রেলিংয়ের পাশে। ইফাজ বললো,
“তাহলে আর চুপিচুপি এসে লাভটা কি হলো!”
আরও মিনিট পাঁচেক কথা বলে তারা বাইকে চলে গেলো। দুই বাইকে এসেছিলো চারজন। জোভান বলছিলো তাদের বাসায় আসতে, কিন্তু আসবে না তারা। সাফওয়ানা ঘুড়ি আর বেলুন নিয়ে জোভানের সাথে ছাদে চলে গেলো। এগুলো নিয়ে স্টেজে ফোনে কিছু ছবি তুলে কয়েক মিনিট পর তারা ঘুমাতে চলে এলো।
অতঃপর বিয়ে। সকাল থেকেই সাজুগুজুতে ব্যস্ত হয়ে দুপুরে তারা কমিউনিটি সেন্টারে। বিদায়কালে সকলের কি কান্না! এতো আনন্দে মেতে থাকা সাফওয়ানার শেষ বেলায় এতো কান্না দেখে সকলেই বিস্মিত! তার কান্নাই যেন আরও সবাইকে কাঁদিয়ে দিয়েছে। প্রোগ্রাম শেষে মেহমানদের মধ্যে কেউ কেউ চলে গেছে আবার কেউ কেউ রয়ে গেছে।
সন্ধ্যায় কান্না করার পর থেকেই মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছিলো। এমনিতেই খেতে পারে না আবার বিয়ে বাড়ি, সারাদিন খাওয়াদাওয়ারও ঠিক ছিলো না। আর দূর্বলতায় রাতে শারমায়া মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। পাশে খালামনি থাকায় কোনোমতে ধরতে পেরেছে। সরাসরি মেঝেতে পড়লে প্রচুর ব্যাথা পেতো! ড্রয়িংরুমে মিটিং চলছিলো রিসিপশনে যাওয়ার ব্যাপারে। জোভান সেখানেই ছিলো। খালামনির হাকে সে দৌড়ে এসেছে এবং বাকিরাও বেরিয়ে এসেছে যে যেখানে ছিলো, সকল রুম থেকে। শারমায়ার শ্বশুর শ্বাশুড়িও এখানে ছিলো। তার মাথায় পানি দেওয়ার পর জোভান কোলে তুলে তাকে রুমে এনে বসিয়েছে। কিসের আর মিটিং করবে, তার সেবাযত্নে পাড় করে দিলো প্রায় আধ-ঘন্টা। খাওয়াদাওয়ার পর অনেকটা সুস্থ সে।
পরনের শাড়ি আর গহনাপত্র চেঞ্জ করেনি শারমায়া। তবে সাজুগুজু মুছে গেছে। রাতে ঘুমানোর সময় জোভান ফ্রেশ হতে বাথরুমে গেলে শারমায়া আলমারিটা খুলে দোপাট্টা বের করে মাথায় দিলো যেটা পাঁচ বছর আগে বিয়েতে পড়েছিলো। অতঃপর নাকের নোলক টানাও পরে নিলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলো মেকাপ ছাড়াই তাকে বউ বউ দেখাচ্ছে। জোভান এসে তাকে দেখে মুচকি হাসলো এবং তার ক্লান্ত চেহারায় চুমু একে দিলো। শারমায়া তাকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। জোভান বললো,
“ঘুমাবে না?”
“উহু।”
“দুদিনে শরীরের কি হাল করেছো দেখেছো?”
“তুমি দেখেছো না? এতেই হবে।”
জোভান হেসে বললো,
“হুম, দেখেছি বলেই তো ট্রিটমেন্টে রাখতে চাইছি।”
“ইফাজ ভাইয়ার কাছে কল করে জিজ্ঞেস করো না, সাফুটা এখনো কাঁদছে কি না?”
“বললাম তো কথা, একটু আগে।”
“তখনও কাঁদছিলো। এখন আবার বলো।”
জোভান ফোন হাতে নিতে নিতে বললো,
“আহা! তাদের ফার্স্ট নাইটে বারবার কল করে ডিস্টার্ব করার দরকার আছে!”
“একদম ফাজলামো করবা না। কল দিতে বলেছি, কল দাও। মেয়েটা দুপুরেও খায়নি কিছুই। আপু জোর করে একটুখানি জর্দা খায়িয়েছে শুধু।”
জোভান কল দিতেই রিসিভ করলো ইফাজ,
“হ্যালো? তুই আসবি আজ?”
“না। সাফওয়ানা খেয়েছে কিছু?”
“হ্যাঁ, খেয়েছে।”
“কাঁদছে এখনো?”
“একটু পর কল করছি। অনলাইনে থাকিস।”
কথাটা বলেই কল কেটে দিলো ইফাজ। তারা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়ে শুয়ে শুয়ে গল্প করছিলো দুজন। প্রায় বিশ মিনিট পর জোভানের ফোনে টুংটাং শব্দ হলো। জোভান ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ইফাজ ভিডিও পাঠিয়েছে। ভিডিও প্লে করে দেখলো ইফাজদের বাসার স্টেজে ইফাজ ও সাফওয়ানার কাপল ডান্স ভিডিও! শারমায়া জোভানের বুকের উপর থেকে মাথা তুলে ফোন হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো। কিছুক্ষণ পূর্বেও যে মেয়েটা কাঁদছিলো সে এখন হেসে হেসে নেচে বেড়াচ্ছে! জোভান শরীর কাপিয়ে হেসে তার মাথাটা টেনে আবার পূর্ব অবস্থায় রেখে বললো,
“তোমরা এদিকে কান্না করো আর ওদিকে তারা ডান্স করে।”
শারমায়াও খিলখিলিয়ে হেসে বললো,
“এটা আসলেই পাগল! শ্বশুর বাড়ি গিয়েই কেউ ডান্স করে!”
“বাধ্য বউ। তাকে অফার করেছে বিধায়ই তো করছে ডান্স।”
এটা দেখা শেষ না হতেই আরও কয়েকটা ভিডিও এলো। এর মধ্যে মিরাজ ও তার বউকেও দেখা যাচ্ছে। শারমায়া বললো,
“তোমার ফ্রেন্ড জাত আরও বেশি পাগল। রাত ক’টা বাজে, এখনো তারা নাচানাচি করে। দুইটা দিন যাবত যা শুরু করেছে, কিভাবে পারে! টায়ার্ডনেস বলতে কি কিছু নেই? এরচেয়ে ভালো বিনা আয়োজনে বিয়ে।”
“আমাদের বিয়েই ভালো ছিলো, তাই না?”
“ইশ! ভালো আর আটে না! ভিডিওতে দেখিনি, একএকজনের কি আমেজ!”
“প্রোগ্রামের কথা বলেছি? আমাদের বিয়ের কথা বলেছি। ফার্স্ট ম্যারেজ ডে তে তো তোমার আমার সময়ই কাটলো না একসাথে।”
“হুম, ওটাই ভালো।”
“জান, আমার যে কি কষ্ট হচ্ছিলো তখন! না পারছিলাম বাবাকে বলতে আর না পারছিলাম তোমাকে সাথে নিয়ে যেতে। তারউপর তোমার কি লজ্জা! সরাসরি তো না ই, একটু শান্তি মতো ফোনেও কথা বলতে পারলাম না। রাতের অর্ধেকটা সময় পর্যন্ত ছটফট করছিলাম, আরেকবার কল দিয়ে তোমাকে জ্বালাতন করি। তুমি ঘুমাচ্ছো ভেবে আর করিনি।”
শারমায়া নিচু শব্দে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো অতঃপর ভিডিও গুলো দেখতে লাগলো।
পরদিন রিসিপশন প্রোগ্রামে শারমায়া যেতে চাইছিলো না তার শরীরের কন্ডিশন খারাপ থাকায়। কিন্তু তাকে একা বাসায় রেখে তার মা-ও যাবে না, জোভানও যাওয়ার আনন্দ পাচ্ছে না। কিন্তু তাদের যাওয়াটাও প্রয়োজন। তাই জোভানই সাপোর্ট করলো তাকে সাথে যেতে। প্রোগ্রাম যেহেতু ইফাজের বাসায়, তার সমস্যার সমাধানের ব্যবস্থা করা যাবে। জুলেখা ইয়াসমিনও আশ্বাস দিলেন, উনারা তো আছেনই সাথে। আল্লাহর রহমতে কিছু হবে না। বের হওয়ার সময় সুষনা তাকে একটা ট্যাবলেট খায়িয়ে নিলো বমি যাতে না হয়। শারমায়া ভাবছিলো সালোয়ারকামিজ পরবে গরমের জন্য। এদিকে জোভান আবার বলে দিলো শাড়ি পরতে। তিনদিন যাবত তাকে শাড়ির উপরই রাখছে এবং দেখছে আর দেখছে তবুও নাকি তার তৃপ্তি আসে না! শারমায়া বাধ্য স্ত্রীর ন্যায় শাড়িই পরে নিলো। বিনিময়ে জোভানের মুচকি হাসিটা তার বড় পাওয়া। তাছাড়া এখন নিজেরও ভালো লাগছে কেননা বিবাহিত সব মেয়েরাই শাড়ি পরেছে। ওদিকে ছোট চাচ্চু আর সোয়াদকে দেখলো একই ডিজাইনের পোশাকে এবং চাচীমার শাড়ি ও জুথিকার জামার রঙ একই রকমের। আবার ইফাজদের বাসায় এসে জেভা আপুদের সাথে দেখা হওয়ার পর দেখলো নিলয় ভাইয়া ও আহনাফের পোশাক একই ডিজাইনের। তা দেখে মুচকি হেসে জোভানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
“আমি সেই দিনের অপেক্ষায়, যেদিন তোমার আর শিকুর ড্রেসও একই ডিজাইনের হবে।”
সকালে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ছিলো, দুপুরের দিকে আবার আবহাওয়া পরিষ্কার। ইফাজের বাসায় এসে স্টেজে পেলো সাফওয়ানাকে। এতোক্ষণ যাবত ফটোশুট চলছিলো তাদের। বাবার বাড়ির লোকজনদের দেখে অতি খুশিতে এক প্রকার দৌড়ে নামতে লাগলো সে। খালামনি ধমকাচ্ছে ধীরে ধীরে নামার জন্য, কে শোনে কার কথা! সে দ্রুত নেমে এসে শারমায়াকে জড়িয়ে ধরলো। অতঃপর খালামনি ও সুষনা আপুকে। জোভান, বাবা ও মা’কে পেছনে তার শ্বাশুড়ির সাথে কথা বলতে দেখে সে সেখানে গিয়েই মাকে পেছন থেকেই জড়িয়ে ধরলো। শারমিন মুচকি হেসে পেছনে হাত বাড়িয়ে তার মাথায় হাত বুলালো। ইফাজ এগিয়ে এসে তার শ্বশুর শ্বাশুড়িকে সালাম করলো। তা দেখে সাফওয়ানাও করলো। শারমিন বলে দিলেন,
“আজ করলে তো করলেই, আর করো না। পা ছুঁয়ে সালাম করা ঠিক না। বাবামায়ের দোয়া সবসময়ই থাকে সন্তানের উপর।”
ইফাজ মুচকি হাসলো। সাফওয়ানার চোখে পানি দেখে জেভা বললো,
“আরে আরে! এখন কি আবার শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কান্না শুরু হবে নাকি!”
সাফওয়ানা খিলখিলিয়ে হেসে উঠে রুমাল দিয়ে চোখ মুছে নিলো। এতো প্রিয়জনদের দেখা পাওয়ার আনন্দের কান্না। অতঃপর শারমায়ার সাথে কথা বলতে বলতে সাফওয়ানা তাদের রুমে এলো। সজ্জিত রুমে খাটের উপরে দেয়ালে আটকানো নকশা করা সাদা রঙের ঘুড়ি। ঘুড়িতে লেখা শারমায়া মনে মনে পড়লেও সুষনা শব্দযোগেই পড়ে নিয়েছে, “মোস্ট ওয়েলকাম ইন মাই লাইফ।” শারমায়া বললো,
“এখানেও ঘুড়ি!”
সাফওয়ানা খিলখিলিয়ে হেসে উঠে বললো,
“হুম, গত রাতে দিয়েছে এটা।”
“যা, এবার মন ভরবে ঘুড়ি উড়িয়ে।”
জোভানের সাথে ইফাজ রুমে আসতে আসতে শেষ কথা শুনে বললো,
“রাতে বললাম, চলো ছাদে গিয়ে ঘুড়ি উড়াই। গেলোই না।”
শারমায়া জবাব দিলো,
“ঘুড়ি উড়াবে কখন, ডান্স করতে করতেই তো রাত কেটে গেছে।”
ইফাজ ও সাফওয়ানা উভয়েই লজ্জা পেয়ে মুখ চেপে হাসলো। শারমায়ার খাওয়াদাওয়া রুমেই চললো, সাথে ছিলেন সুষনা ও জুলেখা ইয়াসমিন। জোভানকে অন্যদের খেয়ালের জন্য বাইরে যেতে হয়েছে শারমায়ার মাকেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। খাবার কি খাবে, সুষনার ধমক খেতে খেতেই শারমায়ার পেট অর্ধেক ভরে গেছে। সব মিলে যতটা ভেবেছিলো ততোটা খারাপ লাগেনি শারমায়ার। বরং সকলের কেয়ারনেস ও গল্পগুজবে ভালোই কেটেছে সময়। আরেকজন তো আছেনই, প্রতি পাঁচ-দশ মিনিট অন্তর অন্তর তাকে খুঁজে খুঁজে দেখে যায় সে সুস্থ আছে কি-না।