#বিবর্ণ_জলধর
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ১৩
_____________
বিছানায় ভীত মুখ নিয়ে বসে আছে শ্রাবণ। জানালা থেকে মিষ্টি প্রভাত কিরণ এসে তার শরীর স্পর্শ করেছে। খোলা জানালা দিয়ে মৃদু সমীরণও এসে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে তাকে। শ্রাবণের মনোযোগ এখন গতকাল রাতের উপর। সারা রাত ভয় ভীতিতে ছিল সে। মিহিক যে মেয়ে তাতে তাকে মেরেও ফেলতে পারে এ ব্যাপারটুকু সে নিশ্চিত হলো। কাল কী একটু বললো, তার জন্য মিহিক ডাকাতের মতো এসে কাঁথা মুড়ি দিয়ে দিলো মাথায়। ভাগ্যিস কাঁথা প্যাঁচ দিয়ে দম বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেনি। সে তো ভেবেছিল মিহিক কাঁথাটা প্যাঁচিয়ে ধরে তাকে দম বন্ধ করে মেরে ফেলবে। না, থাকা যাবে না আর এখানে। আজ বিকালেই সে চলে যাবে বাড়ি। একা যাবে না, মিহিকসহ যাবে।
“আমরা কিন্তু আজ বিকালেই চলে যাব।”
রুমে উপস্থিত মিহিকের উদ্দেশ্যে বললো শ্রাবণ।
মিহিক চেয়ারে বসে একমনে নেইল কাটছিল, শ্রাবণের দিকে তাকালো সে। ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
“বিকেলে কেন? এখনই চলে যান। আমি কি নিষেধ করেছি?”
মেয়েটা এমন করে কথা বলে যা শ্রাবণের শুনতে একদম ভালো লাগে না। দজ্জাল একটা মেয়ের সাথে মা-বাবা বিয়ে দিয়েছে তার। সোজা করে কোনো কথা বলতে পারে না মেয়েটা। শ্রাবণ বললো,
“আমি একা তো যাব না, আপনিও যাবেন, তাই আগে থেকে জানিয়ে রাখলাম।”
মিহিক উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
“প্যাকিং কি শুরু করে দেবো?”
মেয়েটা এই কথাটাও শান্ত-স্বাভাবিক ভাবে বললো না। বলার ধরণটা দেখে গা জ্বলে গেল শ্রাবণের। সেও কাঠ কাঠ উত্তর দিলো,
“এখন শুরু করুন আর বিকেলে শুরু করুন, আমরা যাচ্ছি এটাই ফাইন্যাল।”
মিহিক ভ্রু কুঁচকে গম্ভীরভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল শ্রাবণের দিকে। তারপর হুড়মুড় করে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
শ্রাবণ এখনও বুঝে উঠতে পারছে না মিহিক এমন স্বভাবের কেন? মিহিকের মাঝে একটা ভালো স্বভাব লক্ষ্য করেনি সে।
কাল রুমকি অজস্র বার কল করেছে শ্রাবণকে। শ্রাবণ কল রিসিভ করেনি। কেন করেনি সে বিষয়ে নিজেই দ্বিধাগ্রস্ত সে। মিহিক নিষেধ করেছিল বলে? না কি তার নিজেরই কথা বলার মন ছিল না? উত্তর খুঁজে পায় না শ্রাবণ। সকাল আটটা পনেরোতে যথারীতি আবার কল আসে রুমকির। শ্রাবণ রিসিভ করে। ফোনের ওপ্রান্ত থেকে রুমকির বিজলি কণ্ঠ শোনা যায়,
“সমস্যা কী তোমার? কাল এতবার কল দিয়েছি তুমি কল রিসিভ করোনি কেন? ইতোমধ্যেই বউয়ের আঁচল ধরে চলতে শুরু করেছো? বাহ, অসাধারণ! আমাকে ভালোবাসার সাধ মিটে গেছে পুরোপুরি? বউয়ের আঁচল ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছিস এখন তুই!”
রুমকির কথা ছড়ির আঘাতের মতো কানে এসে লাগলো শ্রাবণের। সে বললো,
“বউয়ের আঁচল… এসব কী ধরণের কথা বলছো রুমকি? আমার আর মিহিকের বিয়ে হয়ে গেলেও, আমাদের মাঝে যে তেমন সম্পর্ক নেই এটা তো তুমি ভালো করেই জানো।”
“কী করে বিশ্বাস করবো যে তোর আর মিহিকের মাঝে তেমন সম্পর্ক নেই? এটা তো শুধু তুই বলেছিস। তোর মতো বাটপারের কথা কী করে বিশ্বাস করবো আমি?”
‘বাটপার’ ডাক শুনে শ্রাবণের অপমান বোধ হলো। তা সে প্রকাশ না করে বললো,
“বিশ্বাস করো, আর না করো এটাই সত্যি।”
“আমি মানি না। তুমি মিহিকের সাথে কথা বলাও আমাকে। ওর কাছে জিজ্ঞেস করেই জানবো ঘটনা কোনটা সত্যি।”
রুমকির অন্যায় আবদার সারা শরীরে ভয়ের জ্ঞাপন ছেয়ে দিলো শ্রাবণের। মিহিক কথা বলবে রুমকির সাথে? কাল তো মাথায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে দিলেও, কাঁথা পেঁচিয়ে দম বন্ধ করে মেরে ফেলতে চায়নি মিহিক। রুমকির সাথে কথা বলার জন্য অফার দিলে নিশ্চয়ই আজ কাঁথা পেঁচিয়ে মেরে ফেলবে একদম। প্রাণটা অকালে যাবে তার!
শ্রাবণ বললো,
“মিহিকের সাথে কথা বলাতে পারবো না তোমাকে।”
“কেন? পারবে না কেন? তোমার আসল রূপ ধরা পড়ে যাবে সেজন্য? একই সাথে বউ’ও রাখবে আবার গার্লফ্রেন্ডও রাখবে? ভালোই দুরন্ধর আছো দেখছি।”
শ্রাবণের আত্মসম্মানে বড়ো রকমের আঘাত হানলো রুমকির কথাগুলো। তবুও সে বোঝানোর চেষ্টার্থে বললো,
“দেখো, তুমি আমাকে ভুল ভাবছো। আমি…”
দরজা খোলার শব্দ হতেই থেমে গেল শ্রাবণ। মিহিককে দেখেই সে লাইন কেটে দিলো।
“কার সাথে কথা বলছিলেন?” বুঝতে পারার পরও প্রশ্নটা মুখে এসে গেল মিহিকের।
“আমি রুম…” উত্তর দিতে গিয়েও কণ্ঠ থেমে যায় শ্রাবণের।
“রুমকির সাথে কথা বলছিলেন?”
“না, আমার বন্ধু রুমনের সাথে কথা বলছিলাম।” মিহিকের কাছে রুমকির কথা বলাটা এখন অনুচিত ঠেকার কারণে, সুন্দর করে উত্তর ঘুরিয়ে নিলো শ্রাবণ।
মিহিক মনে মনে বিদ্রুপ হেসে ওঠে। এই লোকটা সবদিক থেকে পারফেক্ট একদম। মিথ্যা বলাতেও দারুণ পারদর্শী!
________________
দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার কার্য সম্পন্ন। সবাই এখন লিভিং রুমে আছে। কথাবার্তা বলছে। শুধু নোয়ানা উপস্থিত নেই সেখানে। সে কিচেনে চা বানাচ্ছে। আষাঢ় খাওয়ার পর বললো, তার এক কাপ চা পান করা প্রয়োজন। এটা না কি তার নিত্য দিনের অভ্যাস। লাঞ্চের পর এক কাপ চা পান না করলে না কি তার চলে না। সবার সামনে সে নোয়ানাকেই বলেছিল,
‘আপনি কি আমাকে এক কাপ চা বানিয়ে খাওয়াতে পারবেন প্লিজ!’
আষাঢ়ের ওই কথার উপর কি আর কথা বলা যায়? সে এখন বাড়ির মেহমান। একটা কথা বলেছে সেটা না করে পারা যায়?
“আমার কথা রাখার জন্য ধন্যবাদ!”
আচমকা পিছন থেকে এক পুরুষ কণ্ঠ ধ্বনিতে নোয়ানা ভয় পেয়ে যায়। চকিতে পিছন ঘুরে তাকায় সে। আষাঢ় মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিলো তাকে।
“আপনি এখানে এসেছেন কেন?” অবাকের ঘোর থেকেই প্রশ্নটা করলো নোয়ানা।
আষাঢ় এগিয়ে এসে নোয়ানার সামনে থেমে বললো,
“ইট’স ও কে, এটা তেমন গুরুতর কোনো ব্যাপার না। তোমার চা বানাতে দেরি হচ্ছিল দেখে নিজেই নিতে এলাম। চা না খেলে একদম চলে না আমার।”
আষাঢ়ের চা খাওয়ার ব্যাপারটা একেবারে বানোয়াট একটা কাহিনী। নোয়ানাও আঁচ করতে পেরেছে এটা। সে বললো,
“চা তৈরি হয়ে গেছে।”
বলে ঘুরে চুলোটা অফ করলো। তারপর একটা কাপে পরিবেশন করলো তৈরিকৃত চা।
আষাঢ় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নোয়ানার বাম হাতের দাগটা দেখছিল নীরবে। নোয়ানা কাপটা তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
“আপনার চা!”
আষাঢ় কাপটা নিয়ে হেসে বললো,
“থ্যাঙ্ক ইউ।”
তারপর নোয়ানার হাতের ক্ষত চিহ্নটার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
“তোমার হাতের ওই দাগটা কীসের?”
নোয়ানার সচকিত মন আরও সচকিত হয়ে উঠলো। সে ডান হাত দিয়ে ক্ষত চিহ্নটা আড়াল করে নিলো। স্বাভাবিক করে বলার চেষ্টা করলেও, পারলো না।
“এটা…আসলে…পড়ে গিয়েছিলাম আমি…তো”
“মিথ্যাবাদী!” নোয়ানার কথার মাঝে অস্ফুট স্বরে কথাটি বলে উঠলো আষাঢ়।
“হুহ?” ঠিক ভাবে শুনতে পেল না নোয়ানা।
আষাঢ় হঠাৎ নোয়ানার বাম হাতটা নিজের হাতে উঠিয়ে নিলো। আকস্মিক এমন ঘটনায় নোয়ানা চমকে তাকালো। আষাঢ় নোয়ানার হাতের ক্ষতটার দিকে তীক্ষ্ণ তাকিয়ে থেকে বললো,
“এটা কোনো পড়ে যাওয়ার ফলে তৈরি হওয়া দাগ নয়। এই হাত ধারালো কিছু দিয়ে কাটা হয়েছে।” আষাঢ় নোয়ানার মুখের দিকে চেয়ে বললো,
“কেন কেটেছো তুমি নিজের হাত?”
নোয়ানার বুকে হাতুড়ি পেটার তীব্র ঝংকার হচ্ছে। সে আষাঢ়ের সামনে নিজেকে সব সময় স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আজ ব্যর্থ হলো। না চাইতেও মুখ থমথমে হয়ে গেল। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে লাগলো কপালে। সে দ্রুত হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
“কী বলছেন আপনি? আমি কেন নিজের হাত কাটতে যাব?”
“তাহলে কে কেটেছে? কে সৃষ্টি করেছিল তোমার হাতের এই ক্ষত? বলো আমায়।”
“পড়ে যাওয়ার ফলেই এই দাগের সৃষ্টি হয়েছে। কাচের টুকরায় হাত কেটে গিয়েছিল। এটাই সত্যি। কেউ আঘাত করেনি আমায়।”
আষাঢ় জেদি হয়ে উঠলো,
“তুমি মিথ্যা বলছো। আগের বারও মিথ্যা বলেছিলে তুমি। বলো কে কেটে দিয়েছিল তোমার হাত? সত্যি করে বলো আমায়।”
“ভুল করছেন আপনি…”
“ভুল তুমি করছো।”
নোয়ানা স্তব্ধ হয়ে গেল। কিছু বলার শক্তি রইল না তার। শুধু আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে রইল কঠিন হয়ে। আষাঢ়ও তাকিয়ে রইল। একবার পলক পর্যন্ত ফেললো না চোখে। কতটা ভালো অভিনয় করছে নোয়ানা সেটাই দেখছে সে। এদিকে কারো এগিয়ে আসার পদধ্বনির শব্দে দুজনের জেদের শহরের কড়া নড়লো। স্বাভাবিক হলো দুজনে। চোখ সরিয়ে নিলো একে অপরের থেকে।
হাফিজা কিচেনে পা রেখে বললেন,
“চা বানানো হলো না কি? এত দেরি কেন?”
আষাঢ় একদম স্বাভাবিক করে নিয়েছে নিজেকে। হাস্যমুখে জবাব দিলো,
“জি আন্টি, হলো আপনার মেয়ের চা বানানো।”
বলে কাপে চুমুক দিলো আষাঢ়।
তারপর আবার প্রশংসার সুরে বললো,
“বেশ ভালোই চা বানায় আপনার মেয়ে।”
বাকি কথাটা মনে মনে বললো আষাঢ়,
‘আরও অনেক কিছুতেই ভালো সে। বিশেষ করে শক্ত থাকতে পারদর্শী আপনার মেয়ে। ভিতরের নড়বড়ে অবস্থাকে বাইরে শক্তপোক্ত ভাবে উপস্থাপন করে।’
হাফিজা আষাঢ়ের কথার প্রত্যুত্তরে শুধু হাসলেন। নোয়ানারও নিজেকে স্বাভাবিক দেখাতে হবে, সেজন্য সেও একটুখানি কৃত্রিম হাসির রেখা টানলো। আষাঢ়ের সেই কৃত্রিম হাসি দেখে ভিতরটা জ্বলে গেল।
________________
শ্রাবণের আজকাল কী যেন হয়েছে! রুমকির সাথে দেখা করতে, কথা বলতে তার ভালো লাগে না। সবচেয়ে খারাপ যেটা লাগে সেটা হলো মিহিকের নিচে বিছানা পেতে শোয়া। একটা মেয়ে তার ঘরে নিচে ঘুমায়, এটা দেখতে খুব দৃষ্টিকটু লাগে! সে মিহিককে বলেছিল উপরে খাটে শোয়ার জন্য, আর সে নিচে শোবে। কিন্তু মিহিকের এক গান, যেখানে একজন ছেলে শুয়েছে সেখানে সে ঘুমাবে না। এই মেয়েটার জেদ শ্রাবণের কাছে অসহ্যনীয় লাগে। এত জেদ কেন মেয়েটার? মেয়েটার মাঝে সবচেয়ে জেদ উপাদানটাই বোধহয় বেশি। শ্রাবণ মিহিকের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে ভাবছিল এসব।
মিহিক শ্রাবণকে এরকম করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,
“আমার দিকে এরকম করে তাকিয়ে থাকবেন না, আমি পছন্দ করি না এটা। ফারদার আর কখনো তাকিয়ে থাকবেন না এরকম।”
শ্রাবণের ধ্যান ভাঙতে সে বললো,
“আপনার দিকে তাকিয়ে থাকলে কী হবে? আপনার সৌন্দর্য ঝলসে যাবে?”
“হ্যাঁ যাবে। তাকাবেন না আমার দিকে। রুমকিকে সামনে বসিয়ে রেখে রাত-দিন সব কাভার করে দিন, বুঝলেন?”
শ্রাবণের গায়ে লেগে গেল,
“আপনাকে না আগেও বলেছি, আমাদের কথার মাঝে রুমকিকে টানবেন না। বলতে হলে শুধু আমাকে বলুন।”
“বাব্বাহ! গার্লফ্রেন্ডের জন্য এত টান!” টেনে টেনে বললো মিহিক।
“হ্যাঁ, এত টান। নিজের কথার মাঝে ওকে টানবেন না।”
“ওরে ভালোবাসা রে!”
শ্রাবণের প্রচণ্ড রাগ হলো, সে ক্ষিপ্ত হয়ে বললো,
“দেখুন, আর যা নিয়েই মজা করুন না কেন আমাদের দুজনের ভালোবাসা নিয়ে মজা করবেন না। এটা আমি মোটেই সহ্য করবো না।”
শ্রাবণের কথায় মিহিক তো দমলোই না, বরং মুখ টিপে হাসতে লাগলো। শ্রাবণের শরীরে আগুন ধরে যাচ্ছে ওই হাসির প্রকোপে। সে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে কিছু বলতে চাইলে রিংটোনের শব্দ তাকে বাধা দিলো। থামলো শ্রাবণ। টেবিল থেকে ফোন উঠিয়ে রুমকির নামটা দেখতে পেল। রিসিভ করা দিলে মিহিক তর্জন করে বলে উঠলো,
“খবরদার কল রিসিভ করবেন না!”
শ্রাবণ বিস্ময়ে হতবিহ্বল হয়ে তাকালো।
“প্রেমিকার সাথে কথা যদি বলতেই হয়, তবে বাইরে গিয়ে বলুন। এ রুমের ভিতর কোনো ঘ্যানঘ্যান, প্যানপ্যান হবে না। যান, বেরিয়ে যান এ রুম থেকে।”
শ্রাবণ হতবাক! এ মেয়ে এভাবে গলা উঁচু করে কথা বলছে তার সাথে? তার রুম থেকে তাকেই বের হয়ে যেতে বলছে? কত বড়ো স্পর্ধা!
“কী হলো? যাচ্ছেন না আপনি? যান। এক্ষুণি বের হন এ রুম থেকে।” গর্জন করলো মিহিক।
শ্রাবণও গর্জে উঠলো। হাতের মোবাইল বিছানায় ফেলে দিয়ে মিহিকের কাছে এগিয়ে এলো। মিহিক জানালার কাছে টুলে বসা। শ্রাবণ সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
“এটা আমার রুম। আমার রুমে আমি কী করবো, না করবো এটা আমার পার্সোলান বিষয়। আমার যা ইচ্ছা, আমি তাই করবো। দরকার পড়লে আমি এখানে বসে দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা কথা বলবো রুমকির সাথে, নাচবো এখানে, মদের দোকান বসাবো তাতে আপনার কী? আপনার কী? আর আমার রুমকিকে একদম হিংসা করবেন না বলে দিলাম। একদম করবেন না।”
মিহিকের রাগও চড়ে গেল। সে বসা থেকে উঠে দুই হাত দিয়ে শ্রাবণকে মৃদু ঠেলা দিয়ে বললো,
“আমার সাথে বেশি বাড়াবাড়ি করলে এর ফল ভালো হবে না। এক্ষুণি নিচে গিয়ে শ্বশুর আব্বুকে ডেকে নিয়ে আসবো। আপনার তেজ্যপুত্র হওয়ার টিকিট বিনামূল্যে কেটে দেবো আমি।”
শ্রাবণের ভিতরটা ভয়ে চুপসে গেল। বাইরে কঠিন থাকার চেষ্টা করে বললো,
“আপনি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন?”
“ভয় মনে করলে ভয়। যা খুশি ভাবতে পারেন আপনি।”
বলে শ্রাবণের পাশ কাটিয়ে একেবারে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। শ্রাবণ তার বুকে হাত দিলো। ভয়ে ঢিপঢিপ করছে তার বুক। মেয়েটা খুব ডেঞ্জারাস! আচ্ছা, বাড়ির কারো কানে আবার কোনো কথা চলে গেল না তো?
___________________
রাত্রিক্ষণ। আকাশের চাঁদ আলো ছড়াচ্ছে। চাঁদের আলোয় ব্যালকনিতে দেখা যাচ্ছে নোয়ানাকে। একদম গ্রিল ঘেঁষে দাঁড়ানো সে। অন্যমনস্ক। বার বার সেদিনের ঘটনা মনে পড়ছে। সেদিন আষাঢ় তার বাম ধরে বলেছিল,
‘কেন কেটেছো তুমি নিজের হাত?’
ওই প্রশ্নটা সেদিন পুরোনো অতীতের পাতাটা খুব ভালো ভাবে উল্টে দিয়েছিল। নোয়ানা নিজের বাম হাতের ক্ষত চিহ্নটার দিকে তাকালো। চাঁদের আলোয় সে চিহ্নটা ভালো ভাবেই দেখতে পাচ্ছে। চোখে কিছু পুরোনো দৃশ্য ভেসে উঠলো। অনেক পুরোনো। সেই সব দৃশ্যে কেবল কষ্ট লেপ্টে আছে। কত কষ্টে কেটেছে ওই অতীতের দিনগুলো! নোয়ানার চোখে অশ্রু টলমল করে উঠলো। হাত থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আকাশের দিকে তাকালো। মনে হলো বিবর্ণ জলধরের মাঝে একটা বর্ণিল চাঁদ জোৎস্না ছড়াচ্ছে। সে চাঁদটার দিকে অপলক দৃষ্টি রেখে বললো,
“ফ্যাকাসে কষ্টগুলোকে আপনি তরতাজা করে দিচ্ছেন হিমেল। এত বছর পর আপনার সাথে দেখা হওয়াটা ভুল ছাড়া কিছু নয়।”
(চলবে)