বিবর্ণ জলধর পর্ব: ৪০

0
1176

#বিবর্ণ_জলধর
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৪০
_____________

কবির সাহেব লাইব্রেরি রুমে বসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে চোখ বুলাচ্ছেন। মুখটা কঠিন গাম্ভীর্য ধারণ করে আছে। আষাঢ়ের সাথে সেই ঘটনার পর আর তার দেখা হয়নি। আষাঢ়ের দেওয়া কঠিন আঘাত তার অন্তর ঘা করে দিয়েছে।
জুন এলো বাবার জন্য চা নিয়ে। চায়ের কাপ রেখে চুপচাপ চলে যাচ্ছিল। কবির সাহেব বললেন,
“শ্রাবণকে গিয়ে বলো আমি ডাকছি।”

জুন বাবার কথা শ্রবণ করে চুপচাপ চলে গেল।

শ্রাবণ লিভিং রুমে বসে আকাশ পাতাল ভাবনায় মশগুল হয়ে আছে। মাথায় চিন্তারা জট পাকিয়ে যন্ত্রণার সৃষ্টি করছে। কখন, কীভাবে আষাঢ় আর নোয়ানার মাঝে এই ব্যাপারটা ঘটেছে সে জানে না। কিন্তু মনে মনে সে যেন এটাকে সাপোর্ট করছে। মনে হচ্ছে আষাঢ়ের বিয়ে নোয়ানার সাথে দেওয়াই উচিত কাজ। আষাঢ় যখন এভাবে একটা কাণ্ড ঘটিয়েছে তখন এটা অবশ্যই খুব গুরুতর। গুরুতর না হলে এরকম কিছুতেই করতো না। শ্রাবণের ধ্যান ভাঙলো জুনের ডাকে,
“ভাইয়া, আব্বু ডাকছে লাইব্রেরি রুমে।”

শ্রাবণের আত্মা ভয়ে শুকিয়ে এলো। ভয়ার্ত চোখ জোড়া জুনের উপর নিবদ্ধ করে বললো,
“কেন ডাকছে?”

“তা তো বলেনি। গিয়ে দেখো।”

জুন কিচেনের দিকে অগ্রসর হলো।
শ্রাবণ এক মুহূর্তের জন্য দম বন্ধ করে সবটা বিবেচনা করার চেষ্টা করলো। বাবা তাকে কেন ডাকছে? কী কারণ? আষাঢ়ের প্রতি থাকা রাগ কি তার উপর ঝাড়তে চাইছে?
শ্রাবণ দুরুদুরু বুকে লাইব্রেরি রুমে এসে উপস্থিত হলো। কবির সাহেব বসতে বললেন। শ্রাবণ বসলো। সে শঙ্কিত! বাবা কী বলবে?

“মিহিক এসেছে বাবার বাড়ি থেকে?”

“না, আসেনি।” নম্র কণ্ঠে উত্তর দিলো শ্রাবণ। হৃদয়ের ভয়ের ধ্বনি সে নিজ কানে শুনতে পাচ্ছে। বাবার গাঢ় গাম্ভীর্যে ঢাকা মুখ দেখে অন্তর বার বার কেঁপে উঠছে ভয়ে। এ যেন এক কঠিন মুহূর্ত তার জন্য।

কবির সাহেব এতক্ষণ হাতে ধরে রাখা ফাইলের উপরেই দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রেখেছিলেন। ফাইলটা বন্ধ করে, চোখ থেকে চশমা খুলে তাকালেন ছেলের দিকে।
শ্রাবণ মাথা নত করে রেখেছে। কবির সাহেব রাশভারী কণ্ঠে ঝংকার তুলে বললেন,
“তোমরা দুই ভাই যে আমার মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার প্রয়াশ করেছো তা কি বুঝতে পারছো?”

শ্রাবণ মাথা নত রেখে প্রত্যুত্তর করলো,
“কীভাবে?”

“এই প্রশ্নটা করারও মুখ আছে তোমাদের? ‘কীভাবে’ জিজ্ঞেস করছো? কী করোনি তুমি? রুকমির বিয়ের মজলিসে তুমি যেই ঝামেলা করেছো, তাতে তো আমার মান সম্মান নিলামে উঠতে নিয়েছিল। বহু কষ্টে সেটা আটকেছি। আর তোমার ভাই, সে কী করলো? ইদ্রিস ভাইয়ের পরিবারের সকলের সামনে এটা কোন ধরণের ফাজলামো করেছে সে? তাদের সামনে তাদেরই এনগেজমেন্ট হয়ে থাকা মেয়েকে বিয়ে করবে বলেছে উঁচু গলায়। কতটা অধঃপতন হয়েছে তোমার ভাইয়ের বুঝতে পেরেছো?”

“ও তো খারাপ কিছু করেনি, বরং সকলের সামনে সবটা বলে একটা ভালো ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিয়েছে। এমনটা কজন পারে?” কথাটা বলে শ্রাবণ নিজেই নিজের কাছে থমকে গেল। বাবার মুখের উপর এই কথাটা এত সুন্দর কণ্ঠে বলে দিলো কী করে? শ্রাবণ আড়চোখে বাবার মুখ দেখার চেষ্টা করলো।

কবির সাহেব ভ্রু কুঞ্চিত করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন ছেলের দিকে। তারপর গাম্ভীর্যে গমগম কণ্ঠে বললেন,
“তুমি কি তোমার ভাইয়ের এই কর্মকে সাপোর্ট করছো?”

শ্রাবণ নিরুত্তর রয়। কবির সাহেব বলেন,
“তোমার কাছ থেকে আর কী-ই বা আশাযোগ্য? যেখানে তুমি নিজেই অপকর্ম করেছো সেখানে ভাইয়ের অপকর্মকেও যে সাপোর্ট করবে সেটাই তো স্বাভাবিক। তোমার মাথার ভূত তো নেমেছে, এবার তোমার ভাইয়ের মাথার ভূতও নামানোর ব্যবস্থা করো। বোঝাও ওকে। নোয়ানাকে যে সে বিয়ে করতে চাইছে সেটা একেবারে অসম্ভব। নোয়ানার এনগেজড হয়ে গেছে অন্য কারো সাথে। বিয়েরও খুব বেশি দিন বাকি নেই। আর তার নিজেরও সিনথিয়ার সাথে বিয়ের কথাবার্তা ফাইনাল করা হবে। এটা ওকে ভালো করে বুঝিয়ে বলো।”

“দুঃখিত আব্বু, এটা আমি করবো না!”

“এত বড়ো দুঃসাহস?”

শ্রাবণ চোখ তুলে তাকিয়ে বাবার চোখে নমনীয় দৃষ্টি রেখে বললো,
“যখন আষাঢ় নোয়ানাকে বিয়ে করতে চাইছে তখন নোয়ানার সাথে বিয়ে দিতে সমস্যা কোথায়? আর আষাঢ় তো কখনও এমন কোনোকিছু করেনি। এখন যখন করলো এটা নিশ্চয়ই ও মন থেকেই চাইছে। ও সিনথিয়াকে বিয়ে করবে না। ও তো আর এমন নয় যে ওকে জোর করে বিয়ে দিতে পারবে তোমরা। আর ওর তেজ্যপুত্র হওয়ারও কোনো ভয় নেই। আর তুমি ওকে তেজ্যপুত্র করে দিতে পারবেও না। কারণ, সবচেয়ে বেশি ভালো তুমি ওকেই বাসো। আর রুমকিকে মেনে নিতে পারোনি তার কারণ ছিল, কিন্তু নোয়ানাকে মেনে না নেওয়ার কোনো কারণ তো আমি দেখছি না।আষাঢ় যে জেদি ছেলে সেটা নিশ্চয়ই ওর গত কালকের কাজে বুঝতে পেরেছো। জেদ করে ও আমেরিকা চলে গেলে বাংলাদেশ আর নাও আসতে পারে। ওকে আর দেখতে পাবে না তখন সামনাসামনি। যেখানে তোমার ছেলে চাইছে নোয়ানাকে বিয়ে করতে সেখানে তুমি সিনথিয়ার সাথে কী করে বিয়ে দেবে ওর? খারাপ লাগবে না তোমার?”

কবির সাহেব স্তব্ধ নিঃশ্বাসে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন। বিষয়টা নিয়ে যে সে ভাবেনি সেটা নয়। আষাঢ় যেটা করেছে সেটা সিরিয়াস। যে ছেলে কখনও এমন করেনি সে ছেলে হঠাৎ এমন করলে সেটা সে হেলাফেলা ভাবে নিতে পারেন না। রাতে লায়লাও তাকে বুঝিয়েছে। তিনি লায়লার মাঝেও আষাঢ়কে সাপোর্ট করার বিষয়টা পরিলক্ষিত করেছে। তিনি বুঝতে পারছেন না সবাই আষাঢ়কে কী করে সাপোর্ট করছে! বললেন,
“তোমরা কি নিজেদের বোধ বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছো? আষাঢ়ের বিয়ে নোয়ানার সাথে কী করে দিই? নোয়ানা এখন অন্য কারো বাগদত্তা। আর সিনথিয়ার সাথে আষাঢ়ের বিয়ের কথাবার্তা আমি আংশিক পাকা করে ফেলেছি। এখন সিনথিয়ার সাথে বিয়ে না দিয়ে নোয়ানার সাথে ওর বিয়ে দিলে সম্মানহানি হবে আমার।”

“আর নোয়ানার সাথে তোমার ছেলের বিয়ে না হলে তোমার ছেলের জীবন নষ্ট হবে।”
বলে উঠে দাঁড়ালো শ্রাবণ। যাওয়ার জন্য ঘুরলে কবির সাহেব বললেন,
“তুমিও তো রুমকিকে বিয়ে করতে চেয়েছিলে, কিন্তু আমি মিহিকের সাথে তোমার বিয়ে দিয়েছি। এখন কি তুমি অসুখী মিহিকের সাথে? জীবন নষ্ট হয়েছে তোমার?”

প্রশ্নটা দুম করে এসে হৃদয়ে লাগলো শ্রাবণের। হৃদস্পন্দনের গতি বৃদ্ধি করলো। ক্ষণকাল নীরবতার পর বললো,
“অসুখী নই আমি। কিন্তু তাই বলে যে আষাঢ়ও সুখী থাকবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর আষাঢ়কে যে তুমি কখনও ওর অমতে বিয়ে করতে বাধ্য করতে পারবে না, সেটা তুমি খুব ভালো করেই জানো।”
শ্রাবণ আর দাঁড়ালো না। লাইব্রেরি রুম থেকে বের হয়ে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিলো। এত কিছু কী করে বললো বাবার সামনে? আসলেই অবিশ্বাস্য। যেখানে নিজের সম্পর্কে কখনও এমনভাবে কিছু বলার সাহস হয় না, সেখানে আষাঢ়ের জন্য আজ গটগট করে অনেক কিছু বলে দিয়েছে। আজ একটা কঠিন সত্য উপলব্ধি করতে পারলো, নিজের সম্পর্কে কথা বলার চেয়ে অন্য মানুষের সম্পর্কে কথা বলা অনেক সহজ।

_________________

ইদ্রিস খানের বাড়িতে কোনো ঝামেলা নেই। মনে মনে সবার রণক্ষেত্র চললেও বাইরে সব সুনিবিড়। তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। তিন দিন আগের ঘটা ঘটনাটা নিছকই একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে নেবে তারা। বিয়ে তো নাঈমের সাথেই হবে নোয়ানার। নাঈমের পরিবারকে কিছুই জানাবে না এ ঘটনা সম্পর্কে। কবির সাহেব নিজের ছেলেকে সামলে নেবে বলে তাদের বিশ্বাস। কিন্তু তাদের বিশ্বাসে মরীচিকা ধরার অবস্থা চলছে। কবির সাহেবের বাড়িতে চলছে তাদের ঠিক উল্টো চিন্তা ভাবনা। কবির সাহেব সব কিছু ভেবে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সবাইকে ডেকেছেন আজ লিভিং রুমে। এখন সন্ধ্যা বেলা। আষাঢ়ের সাথে কবির সাহেবের এ কদিনে দেখা হয়নি বললেই চলে। আষাঢ় রুম থেকে বের হয়নি তেমন। আজ বাবা ডেকেছে বলে উপস্থিত হলো লিভিং রুমে। প্রথমে তার চোখ চলে গেল সিনথিয়ার দিকে। এমন আজব একটা বিষয় কেন ঘটলো নিজেই একটু বিস্মিত সে ব্যাপারে। কবির সাহেব ছেলেকে বসতে বললেন,
“বসো।”

আষাঢ় বসলো না। বললো,
“বসতে হবে না, এমনিতেই বলো।”

“দিনকে দিন বাবাকে মান্য করা ভুলে যাচ্ছ তুমি!”

আষাঢ় মুখ নত করে দাঁড়িয়ে রইল।
কবির সাহেব প্রশ্ন ছুঁড়লেন,
“সিনথিয়াকে বিয়ে করতে চাও না তুমি?”

আষাঢ় সিনথিয়ার দিকে তাকালো। পরক্ষণেই আবার চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,
“সিনথিয়াকে বিয়ে করবো না সেটা তো সেদিনই বললাম।”

“আমার অবজেকশন তো সেখানটাতেই। সেদিন কেন বলেছো? এর আগে কী করেছো তুমি? নোয়ানাকে কবে থেকে পছন্দ করো?”

“সর্ব প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিনই পছন্দ হয়েছিল ওকে। শরতের রঙিন এক প্রহরে!”
আষাঢ়ের শেষের কথাটা কেউ খেয়াল করলো না। বুঝতে পারলো না আষাঢ় আমেরিকার কোনো এক রঙিন শরতের কথা উল্লেখ করেছে কথার মাঝে।

কবির সাহেব বললেন,
“প্রথম দেখায় যদি পছন্দ হয়, তাহলে আগে বলোনি কেন? সিনথিয়ার সাথে তোমার বিয়ে হবে এ ব্যাপারে যখন শুনেছিলে তখনই না করে দাওনি কেন?”

“কারণ, আমি চাইছিলাম সবকিছু ঝামেলাহীন সমাধান করতে। আমি সিনথিয়াকে প্রথম থেকেই জানিয়েছিলাম আমি নোয়ানাকে পছন্দ করি। আমার বিশ্বাস ছিল ও ইন্ডিয়া ফিরে গিয়ে আমাকে বিয়ে করবে না বলে অসম্মতি জানাবে। আমি চেয়েছিলাম ও চলে যাওয়ার পর তোমাদের ধীরে ধীরে সবটা জানাবো নোয়ানার ব্যাপারে। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু মাঝখান থেকে ঝামেলা করেছে নাঈম। ওর সাথে নোয়ানার বিয়ের কথা না উঠলে সব কিছু স্বাভাবিকই চলতো।”

লিভিং রুমে উপস্থিত সকলেই গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনলো আষাঢ়ের কথা। কবির সাহেব বললেন,
“হুম, বুঝলাম। কিন্তু নোয়ানা কি পছন্দ করে তোমায়?”

“মুখে কোনোদিন স্বীকার না করলেও পছন্দ করে এটা সুস্পষ্ট।”

“তার মানে নোয়ানা কোনো দিন বলেনি ও তোমায় পছন্দ করে।”

“এটাই তো ওর বোকামি। বোকা বোকা চিন্তা করে বোকামি করে শুধু।”

“কিন্তু নোয়ানা এখন নাঈমের বাগদত্তা!”

“কিছু যায় আসে না এতে আমার। বিয়ে তো আর হয়ে যায়নি এটা সকলের মাথায় রাখা উচিত।”

“নোয়ানার সাথে তোমার বিয়ে হলে খুশি হবে?”

“উত্তরটা তোমরা বুঝে নাও।”

“আর সিনথিয়া? সিনথিয়ার ফ্যামিলিকে কী বলবো আমি?”

“ওর ফ্যামিলির সাথে নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে কথা বলেছো তুমি। আর সিনথিয়া সবটা আগেই মেনে নিয়েছে।”

আষাঢ়ের কথার পর পরিবেশ কিছুক্ষণের জন্য নীরব হয়ে গেল। আষাঢ় সিনথিয়ার দিকে তাকালো। আশ্চর্যকর হলেও সত্যি তার যেন একটুখানি খারাপ লাগা অনুভব হলো সিনথিয়ার জন্য। ক্ষণিকের নীরবতাকে কাটিয়ে প্রথমে আষাঢ়ই বলে উঠলো,
“আমি কি ধরে নেবো আমাকে এখানে ডেকে এসব প্রশ্ন করার মানে, আমার সাথে নোয়ানার বিয়েতে তোমরা সম্মত এর ইঙ্গিত দেওয়া?”

রুপালি মুখ খুললো,
“এত ফটর ফটর কইরো না আষাঢ়। লজ্জা শরমের বালাই দেখাও কিছু।”

আষাঢ় হাসলো। আর তারপরই সিঁড়ি মুখো হলো। যেতে যেতে কারিবকে সাথে ডাকতে ভুললো না,
“আমার সাথে এসো কারিব।”

কারিব কথা মান্য করে পিছন পিছন এলো। রুমে এসে আষাঢ় অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়লো। অনেকক্ষণ হাসির পর বললো,
“এটা কী ছিল কারিব? কী ছিল এটা? এত তাড়াতাড়ি ঝড়টা থেমে যাবে এটা তো আমি আশাই করিনি। কীভাবে কী হলো? নোয়ানা ভুল প্রমাণিত হলো, ভুল। ওর ধারণা ছিল ও অনাথ বলে ওকে আমার আব্বু-আম্মু মেনে নেবে না। কিন্তু দেখো, যে ঝড় আরও পরে থামার কথা সে ঝড় এখনই থেমে যাচ্ছে। সে অবশ্যই বোকা!”

কারিবের মনটাও খুশি খুশি। অনেকদিন পর আবার আজ আষাঢ়কে এরকম হাসতে দেখেছে। অন্তঃকরণ শান্তিতে ভরে গেছে তার। সে শুধু আষাঢ়ের কথার উত্তরে একটুখানি হাসলো।

আষাঢ় বললো,
“আমাদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর তোমার বিয়েটাও দিয়ে দেবো কারিব।”

কারিব লজ্জা পেল। সলজ্জ হাসলো সে। এমন সময় সিনথিয়ার আগমন ঘটলো। আষাঢ়ের হাস্যমুখ দেখে সে শুধালো,
“এত আনন্দের কিছু নেই আষাঢ়। মেনে তো নিয়েছে কেবল তোমার ফ্যামিলি। নোয়ানার ফ্যামিলি মানবে কি?”

“তুমি হিমেল ইসলামকে চেনো না।”

“ভালো করে চিনি তোমায়।”

আষাঢ় বসা থেকে উঠে এগিয়ে এলো সিনথিয়ার দিকে। বললো,
“এত সহজভাবে মেনে নেবে সেটাও কিন্তু আশা করিনি।”

“কী জানি, কী হয়েছে মনের! এত সহজভাবেই মেনে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মন।”

“খালি হাতে ইন্ডিয়া ব্যাক করবে?”

“দু হাত পূর্ণ করে কী দেবে?”

আষাঢ় কারিবকে দেখিয়ে বললো,
“কারিবকে নিয়ে যাও।”

কারিব হকচকিয়ে গেল। সিনথিয়া হাসলো। হাসির পরেই আবার আনন ছেয়ে গেল অমানিশার আঁধারে। আষাঢ়ের চোখে চোখ রেখে বললো,
“কেন যেন কষ্ট হচ্ছে!”

সিনথিয়ার কথায় আষাঢ়ের মুখ থেকে চঞ্চলতার রেশ কেটে গেল। বললো,
“পেয়ো না কষ্ট। নিজেকে দোষী মনে করতে চাই না এই মুহূর্তে।”

“নোয়ানার ফ্যামিলি মেনে না নিলে খুব খুশি হতাম।”

আষাঢ় কিছু বলার পেল না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রশ্ন করলো,
“ফ্লাইট কবে?”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here