তোমাতে মাতোয়ারা পর্ব-৮

0
1825

#তোমাতে_মাতোয়ারা ৮ম পর্ব

_আরশিয়া জান্নাত

তাইয়্যেবা আর দিয়া বসে বসে ভাইয়ের কান্ডকারখানা দেখছে।নিরব সেই কখন থেকে একটার পর একটা শার্ট চেইঞ্জ করে চলেছে।কোনোটাতেই তাঁকে নিজের মনমতো লাগছেনা।তাইয়্যেবা এবার বিরক্ত হয়ে বললো,তোর পছন্দসই হচ্ছে না যখন চল শপিং এ যাই??
নিরব ব্লু শার্ট গায়ে দিতে দিতে বললো,তোর সাথে শপিং এ গেলে আজকে আর যাওয়া লাগবেনা।তুই যে সময় নিয়ে শপিং করিস !!
দিয়া–ঠিক বলেছিস ভাইয়া।এতো ঘুরতে পারে আপু,পা ধরে যায় আমার।
তাইয়্যেবার ছোট ছেলে টুকুন বললো,আমালো।
তাইয়্যেবা রেগে বললো,ভালো জিনিস নিতে হলে একটু ঘোরা লাগে,তোরা এসব বুঝবিনা।শপিং করতে জানা লাগে।
অনেকক্ষণ পর নিরব একটা শার্ট চুজ করতে পারলো।দিয়া বললো,ভাইয়া তুই যাই পড়িস তোকে স্যুট করে।তাও এতো ঢং করছিস কেন বলতো?
—তা তোরা বুঝবিনা।কত স্টাইলিশ সেজে ঘুরেছি ,অথচ ভুলেও বান্দার নজরে পড়িনি,,,,
দিয়া টিপ্পনি কেটে বললো— শেষে কিনা কানা ভাবী হবে আমার ইয়া আল্লাহ!!
—আমার বেলা কানা বাকি সবার বেলা ঠিকই সব দেখে।
তাইয়্যেবা উঠে ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে বললো,এমন ভাবছিস কেন ভাই?মেয়েরা এমনিতেই মনের কথা সহজে প্রকাশ করেনা,আর ঐন্দ্রিলাতো চাপা স্বভাবের।ওর টা প্রকাশ পাবে কিভাবে?
আরমান ব্যস্ত ভঙ্গিতে ভেতরে ঢুকে বললো হলো তোমাদের ? বাবা-মা সেই কখন থেকে ওয়েট করছে!
ওমা আজ দেখি লেডিস ফাস্ট! দিয়া পর্যন্ত রেডি হয়ে গেছে আর নিরব রেডি হতে পারেনি।কি ব্যাপার শালাসাহেব??
তাইয়্যেবা–আর বলোনা আমাদের ভাই আজকে মিঃ কনফিউজড বনে গেছে।সে বুঝেই পাচ্ছিল না কোন শার্ট পড়বে।
আরমান–এতো জামাকাপড় কিনলে এমনই হবে।আরো কিনো বেশি করে,,
তাইয়্যেবা রেগে বললো—সব কথায় আমার কেনাকাটাকে ব্লেইম করো কেন?
টুকুন–উফ এতো কতা বলো কেন?
আরমান ছেলেক কোলে তুলে বললো,আমি এতো কতা বলিনাতো,তোমার আম্মু বেতি কতা বলে।
সবাই হাসতে লাগলো,,,,,
___________
ঐন্দ্রিলা না চাইতেও বারবার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।সে বুঝতে পারছে না কেন তাঁর এতো কষ্ট হচ্ছে।ইরফাজ সাহেব আর মনোয়ারা বেগম ঢাকায় এসেছেন ঐন্দ্রিলার বিয়ের ব্যাপারে আলোচনা করতে।ছেলেও নাকি ঠিক করে ফেলেছে একটু পরেই তাঁরা আসবে।তাই মায়ের দেওয়া সবুজ রঙের জর্জেট শাড়ি পড়ে সাজতে বসেছে সে,কিন্তু চোখের পানির জন্য কাজল দিতে পারছেনা।শেষে আইলাইনার আর লিপস্টিক দিয়ে উঠে গেল।
ঐন্দ্রিলা সবসময় ভেবেছে সে তাঁর দাদাই আর দাদুনের পছন্দে বিয়ে করবে,আজ তো তাই হচ্ছে তবে কার জন্য এতো মন খারাপ লাগছে তাঁর?
মনোয়ারা বেগম রুমে ঢুকতেই খুব গোপনে চোখ মুছে হাতে চুড়ি পড়তে লাগলো।
মনোয়ারা —মাশাআল্লাহ শাড়িটায় তোরে অনেক মানাইছে বুবু।গলায় এই স্বর্ণের হারটা পইড়া নে।
ঐন্দ্রিলা চুপচাপ পড়ে নিলো।মনোয়ারা বেগম কিছুক্ষণ নাতনির দিকে তাকিয়ে বললো,আমার চান্নির মুখে আমবস্যা ক্যান বুবু?তোর কি মন খারাপ?
—তোমরা আমাকে বিদায় করার জন্য পাঁয়তারা করছো আবার বলছো মন খারাপ কেন?
ধরা গলায় কান্না আটকে বললো ঐন্দ্রিলা।
মনোয়ারা বেগম হেসে বললো,ওমা মা অহনই কাইন্দা কাইট্টা চোখ মুখ ফুলাইতাছোস।বিয়ার দিন কি করবি?হুনছো নি গো এদিকে আসো,দেইখা যাও তোমার নাতনির অবস্থা
ইরফাজ সাহেব হন্তদন্ত হয়ে ঐন্দ্রিলার ঘরে এসে বললেন,কি হইছে আমার দাদুভাইয়ের?
–আমরা নাকি ষড়যন্ত্র কইরা ওরে বিদায় করতাছি।হাহাহাহা
ইরফাজ সাহেব গিয়ে ঐন্দ্রিলার মাথায় হাত রাখতেই ঐন্দ্রিলা দাদার বুকে মাথা রেখে কাঁদতে শুরু করলো।
—দাদাই আমি বিয়ে করবোনা।তোমাদের ছেড়ে আমি কোথাও যাবোনা।এখন তো যখন ইচ্ছে তখন চলে যেতে পারি তখন তো পারবোনা।
মনোয়ারা—আহা এমন কইরা কান্দিস না।মাইয়া মানুষ হইছে পরের ধন।আমরা পাইলা লাইলা বড় কইরা দিমু অন্যের ঘরের ঘরণীরে,এইডাই তো নিয়ম।
ইরফাজ ঐন্দ্রিলার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,দাদুভাই তোর চোখের পানি আমার বুকে পাথরের মতো ভার করতাছে।কান্দিস না বোইন,তোর পছন্দ না হইলে বিয়া দিমুনা তোরে।ওগোরে একবার আইতে দে আগে।
ঐন্দ্রিলা বেশ খানিকক্ষণ কেঁদে নিজেকে শান্ত করলো।তারপর চোখ মুখ মুছে সাজায় মন দিলো।
নাহার আর তাঁর বড় জা ফাতেমা গেস্টদের জন্য বিভিন্ন আইটেম তৈরি করায় ব্যস্ত।ইমরান সাহেব অফিস থেকে ফিরেই ফ্রেশ হয়ে সবকিছুর তদারকি করলো।ঐন্দ্রিলার বড় চাচা আর ইশতিয়াক দই মিষ্টি নিয়ে আসলো।ইরফাজ সাহেব নিচে এসে বললেন,বন্দোবস্ত সব হইছে?ওরা তো আইসা পড়তাছে।
ও বৌমা তোমাগো সব যোগারযন্তর হইছে ?
ফাতেমা—হ্যাঁ আব্বা আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।ছোট তুই গিয়ে দেখ তো ঐন্দ্রিলা রেডি হয়েছে কিনা?

ইরফাজ সাহেব সদর দরজায় দাঁড়িয়ে মেহমানদের অপেক্ষা করছিলেন এমন সময় দুটো গাড়ি ঢুকলো জান্নাত মঞ্জিলে।
ইসহাক,ইমরান তাড়াতাড়ি এদিকে আয় ওরা আইয়া পড়ছে।
সবাইকে কুশল বিনিময় করে সাদরে ভেতরে নিলো তাঁরা।
তাদের ড্রইং রুমে বসিয়ে টুকটাক আলাপচারিতা সেরে ঐন্দ্রিলাকে ডেকে পাঠালো ইরফাজ সাহেব।নাহার আর ফাতেমা সবাইকে নাস্তা পরিবেশন করলো।এরই মাঝে মনোয়ারা বেগম ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে এলেন।ঐন্দ্রিলা আনমনে তখন নিরবের কথা ভাবছিল।সেদিনের বলা কথাগুলো বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।কই এতোদিন তো এমনটা হয় নি তবে আজ কেন এমন হচ্ছে।তাঁর অবচেতন মন বারবার কেন নিরবের কথা ভাবছে!
নাঈমা রশিদ বেশ মনোযোগ দিয়ে ঐন্দিলাকে দেখলেন।ঐন্দ্রিলাকে তাঁর ভীষণ পছন্দ হয়েছে,ছেলের পছন্দ আছে বটে!দিয়া কথার মাঝখানে ইশতিয়াককে দেখে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল।ইশতিয়াকও বেশ অবাক হয়েছে কিন্তু কোনো রিয়েকশন দেয়নি।তাইয়্যেবা বললো,কিরে দাঁড়িয়ে গেলি কেন?
দিয়া বসে বললো,উড়না টান খাচ্ছিল তাই ।
কিছুক্ষণ পর নিরব ভেতরে ঢুকে বললো,আস্সালামু আলাইকুম এভ্রিওয়ান।
ঐন্দ্রিলা নিরবের গলা শুনে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলো।নিরব এখানে কেন এসেছে!!
নিরব ঐন্দ্রিলার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে সহজ ভঙ্গিতে সবার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,কেমন আছেন দাদাজান?
ইরফাজ সাহেব নিরবকে জড়িয়ে ধরে বললো,ভালো আছি তুমি ভালো তো?
–জ্বী ভালো।
ঐন্দ্রিলা অবাকের পর অবাক হচ্ছে ঘটনার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারছেনা।
ইরফাজ সাহেব বললেন,ও হচ্ছে নিরব যার কথা তোমাদেরকে বলেছিলাম।দাদুভাই বসো বসো দাঁড়িয়ে আছ কেন।
নিরবের বাবা তাহজীব বললেন,এতোক্ষণ কোথায় ছিলি বল তো?
নিরব –একটা জিনিস খুঁজে পেতে দেরি হয়ে গেছিল।
তারপর নাঈমা বললো,ভাইসাহেব আপনাদের যদি নিরবকে কিছু জিজ্ঞাসা করার থাকে করতে পারেন।
ইমরান বেশ আনন্দিত হলো নাঈমার এই কথায়।
নিরবকে দেখে ঐন্দ্রিলা যতোটা অবাক হয়েছে তাঁর চেয়ে বেশি শান্তি লাগছে।এতোক্ষণ মনে চলা যুদ্ধটা যেন থেমে আসছে।
দিয়া বললো,ঐন্দ্রিলা আপ্পি চলো না তোমার বাসাটা একটু ঘুরে দেখি।মা তোমাদের কথা শেষ হলে আমি যাই??
নাঈমা কিছু বলার আগেই ফাতেমা বললো,হ্যাঁ অবশ্যই যাও,নিরবকেও বরং নিয়ে যাও আমরা বড়রা নাহয় কথা বলি?
মনোয়ারা বেগম বললো,হ যাও।দাদুভাই তুই ও যা।ওদের কিছু লাগে কিনা দেহিস।
দিয়া গল্প করতে করতে ছাদে চলে এলো,তারপর দাঁড়িয়ে বললো ভাইয়া তোমরা কথা বলো আমরা বরং এদিকটা দেখি।
ইশতিয়াক ও চাইছিল দিয়ার সঙ্গে কথা বলতে,সেদিনের পর মেয়েটার সঙ্গে আর কথা বলার সুযোগ মেলেনি।অজানা এক ইগোতে সেও কল করতে পারেনি।আজ সরাসরি দেখে সেই ইচ্ছেটা ফের জাগ্রত হলো।
ছাদটা বেশ বড়,হরেক রকম গাছে পরিপূর্ণ।পায়রার বাকবাকুম শব্দে মুখোরিত চারিপাশ।বসার জন্য ছাউনি দেওয়া গোল টেবিল আর চেয়ার আছে।চিলেকোঠার মতো থাইগ্লাসের একটা রুম সেখানে ইজি চেয়ার,ছোট বেড,বুকসেল্ফ রাখা,পাশেই কফি মেকারসহ হালকা খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।নিরব মুগ্ধ হয়ে সবটা দেখলো।এসব যে ঐন্দ্রিলার কাজ তা তাঁর অজানা নয়।নিরবতা ভেঙে ঐন্দ্রিলা বললো,আপনি এভাবে কিভাবে এসেছেন!আই মিন দাদাই আপনাকে চিনে কিভাবে?
নিরব হেসে বললো— সাহিল ইবনান নিরব কে চেনে না এমন কেউ আছে নাকি?
—আমার দাদাই মোটেও মিউজিক শোনেনা বা মুভি দেখেনা।সো সে আপনাকে চেনার কারণ তো নেই!
—তাই নাকি জানতাম না তো!
—ভণিতা না করে বলুন আপনাকে উনি কিভাবে পেয়েছেন?
—সেসব তোমার না জানলেও চলবে আগে বলো এখন যদি তোমার দাদাই আমাকে বিয়ে করার কথা বলে তুমি কি অমত করবে??
ঐন্দ্রিলা দৃঢ় গলায় বললো,আমার দাদাই যা বলবেন তাই হবে।তবে তিনি আমায় কথা দিয়েছেন আমি না চাইলে কিছুই হবেনা।
নিরব ঐন্দ্রিলার দিকে এগিয়ে অনেকটা কাছাকাছি চলে আসলো,ঐন্দ্রিলা নিরবকে এগিয়ে আসতে দেখে ভড়কে গেল, ওর হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে যেন।ঐন্দ্রিলার চেহারা দেখে নিরব মুচকি হেসে ঐন্দ্রিলার পেছন থেকে সদ্য ঝরে পড়া কাঠগোলাপ তুলে ঐন্দ্রিলার কানের পাশে চুল সরিয়ে গেঁথে দিলো।নিরবের হালকা স্পর্শে ঐন্দ্রিলা কেঁপে উঠলো।শাড়ির আঁচল খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো।নিরব ঐন্দ্রিলার কাঁপতে থাকা চোখের পাতার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চেয়ার টেনে বসলো।চেয়ারের শব্দে ঐন্দ্রিলার ধ্যান ভাঙলো।সে নিজেকে স্বাভাবিক করতে গমের বাটি এনে পায়রাদের গম ছিটাতে লাগলো।কিন্তু নার্ভাসনেস এ হাত কাঁপতে কাঁপতে গমের বাটি পড়ে গেল।সে নীচে বসে গম তুলতে লাগলো।ঐদিকে পায়রা সব তাঁকে ঘিরে গম খেতে শুরু করে দিয়েছে।বেচারিকে এমন অবস্থায় দেখে নিরবের খুব হাসি পাচ্ছিল,আবার ভালোও লাগছিল।সে ফোন বের করে স্ক্রলিং এর ভান করে বেশ কিছু ছবি তুলে নিলো।এক ঝাঁক পায়রার মাঝে সবুজ শাড়ি পড়া ঐন্দ্রিলাকে হুরপরীর চেয়ে কম লাগছেনা!!
দিয়া লোহার দোলনায় বসে দোল খেতে খেতে বললো,আপনাদের ছাদটা তো অনেক সুন্দর।কে সাজিয়েছে?ঐন্দ্রিলা আপ্পি?
ইশতিয়াক–হ্যাঁ।
—ঐন্দ্রিলা আপ্পি যদি আমার ভাবী হয় তাকে দিয়ে আমাদের ছাদটাও এভাবে সাজাবো।
—হুম।
—বাই দ্য ওয়ে আমার ভাই কে আপনার পছন্দ হয়েছে?
—দাদাই যখন পছন্দ করেছেন আমাদের কারোই অপছন্দ হবার কথা না।দাদাইয়ের পছন্দে আমাদের সবার ভরসা আছে।
—ওহ আচ্ছা!
—তা আপনিও কি দাদাইয়ের পছন্দে বিয়ে করবেন নাকি?
ইশতিয়াক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,নিজের পছন্দকে দাদাইয়ের সামনে হাজির করাবো।আমার বিশ্বাস দাদাই অমত করবেন না।তবে যদি অমত করেন বুঝে নিবো এতে খারাপ কিছু আছে।
—ওহ!তা এমন কেউ আছে নাকি?
—চলুন নীচে যাই।ওনাদের কথাবার্তা বোধহয় শেষ হয়েছে।
দিয়া হেসে ইশতিয়াকের পিছু পিছু গেল।

ইরফাজ সাহেব নাতনিকে আলাদা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,দাদুভাই এখন তোমার মত কি?নিরবকে পছন্দ হয়?নাকি বাতিল করে দিবো?
ঐন্দ্রিলা লজ্জায় মাথা নীচু করে ফেললো।
ইরফাজ সাহেব হাসিমুখে বললেন,
আলহামদুলিল্লাহ।
চারদিন পর তাঁদের অ্যাঙ্গেজমেন্টের দিন ধার্য হলো।ঐন্দ্রিলার ফুফুরা আজকে আসতে পারেনি,তাদের অনুপস্থিতিতে কিছু করা যাবেনা।তাই ভেবেই এই সিদ্ধান্ত।নিরব যাওয়ার আগে ঐন্দ্রিলাকে একটা গিফটের বক্স দিয়ে গেল।
মনোয়ারা—কিরে ইমু জামাই কেমন দেখলি পছন্দ হইছে?
ইমরান—বাবা যখন দেখেছেন ভালোই হবে।তবে নিরবের বাবা-মায়ের কথা ভালো লেগেছে আমার।
নাহার—হ্যাঁ!কি সুন্দর করে বললো ছেলেকে কিছু জিজ্ঞাসা করার আছে কিনা।ওদের বড় জামাইকে দেখেছ কি অমায়িক।মনেই হয়নি আজ প্রথম ওদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে।
ফাতেমা—হুম সবাই অনেক মিশুক।আল্লাহর হুকুম হলে ঐন্দ্রিলা অনেক সুখী হবে।
ইসহাক—বাবা তুমি কিছু বলছো না যে?
ইরফাজ—আমি তো সব দেখেশুনেই এনেছি।এবার তোমরা দেখেছ পছন্দ হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
মনোয়ারা—আসলে তোদের বাবা নাতনির বিয়া লই যতো আনন্দ পাইতাছে তার চেয়ে বেশি নাতনিরে বিদায় দিতে হইবো ভাইবাই কষ্ট পাইতাছে।নাতনি আরো দাদারে জড়াই ধইরা যে কান্দন দিছে,,,,,,,
ইরফাজ—ঠিক কইছো মনোয়ারা।বুকের ভেতর পাথর বাইন্ধা নাতনিরে বিয়া দিতে নামতাছি।মাইয়ামানুষ যে পরের বাড়ির রত্ন চাইলেও ঘরে রাখা যায়না।
সবার চোখের কোণ ভিজে এলো।
।।
ঐন্দ্রিলা রুমে এসে গিফটের বক্স খুলতে লাগলো,বক্স খুলে 3D ক্রিস্টেল মিউজিক বক্স দেখে ঐন্দ্রিলা চমকে গেল।পাওয়ার কানেক্ট করতেই লাভ রোজ কালারফুল কাপল ডান্স করতে লাগলো,সাথে I love you মিউজিক চলতে লাগলো।এই মিউজিক বক্সটা ঐন্দ্রিলা অনেক খুঁজেছে ,প্রতিবার সোল্ড আউট ছিল।নিরব এটা কিভাবে পেল!আর জানলোই বা কিভাবে এটা তাঁর অনেক পছন্দের?
আজকে ঐন্দ্রিলার সারপ্রাইজ ডে।একটার পর একটা হৃদয় কাঁপানো সারপ্রাইজ পেয়েই চলেছে।
আনন্দে ঐন্দ্রিলার চোখে পানি চলে আসলো।এমন সময় ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল আসলো।দুইবার রিং হবার পর ঐন্দ্রিলা কল রিসিভ করলো।
—-পছন্দ হয়েছে?
ঐন্দ্রিলার বুঝতে বাকি রইলো না নিরব ফোন করেছে।কিন্তু আনন্দে তাঁর গলা দিয়ে শব্দ আসছেনা।
—তুমি তো ভারী অদ্ভুত ঐন্দ্রিলা! খুশিতেও কেঁদেকেটে সাড়া !তোমাকে তো কষ্ট দেওয়া যাবেনা আবার সুখ ও দেওয়া যাবেনা,দুইদিকেই বিপদ।
ভারী মুশকিল!
:________
—ও হ্যালো কথা বলবেনা?আজ কিন্তু তোমাকে কথা বলতেই হবে,তুমি কথা না বলা অবধি ফোন রাখছিনা আমি,হ্যালো ঐন্দ্রিলা শুনতে পাচ্ছ??

ঐন্দ্রিলা লাউডস্পিকার অন করে ফোনটা পাশে রেখে শুয়ে পড়লো।যতোক্ষণ পারুক বকবক করুক ঐন্দ্রিলাও আজ ফোন কাটবেনা,নিরবের সব কথা মন দিয়ে শুনবে।

“”ইশ জীবনটা কি দারুণ স্বপ্নের মতো!যদি স্বপ্ন হয় তবে ঘুম না ভাঙুক,আমি এই স্বপ্ন হাজার বছর ধরে দেখতে চাই,,,,””

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here