জীবনের গল্প পর্ব:-০৫

0
688

__________জীবনের গল্প__________
লেখক: ShoheL Rana
____________পর্ব:-০৫____________
-অপূর্ব! ঠিক যেন আমার মনের মতো।’ মনে জমিয়ে রাখা ভালোবাসাটুকু এক বাক্যেই প্রকাশ করে দিলো মাহফুজ। এতদিন ফোনে কথা বলে যে ভালোবাসাটুকু সৃষ্টি হয়েছিল মনে, ফাতেমাকে সামনাসামনি দেখে তা পাহাড় পরিমাণ বেড়ে গেল। ফাতেমা চোখ বন্ধ করেই বললো,
-আপনিও খুব সুন্দর।’ বলতেই ঠোঁট আলতো কেঁপে উঠলো তার। মাহফুজ বললো,
-তুমি তো আমার দিকে তাকাচ্ছো না। না দেখেই বলছো সুন্দর?
-আমি আপনাকে দেখেছি, লুকিয়ে।’
মাহফুজ মুখটা ফাতেমার কানের কাছে নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো,
-পছন্দ হয়েছে আমাকে?’
-হুমম… অনেক।’ চোখ বুজা অবস্থায় উপর নিচ মাথা দুলিয়ে মৃদু হাসলো ফাতেমা। লজ্জায় চোখ খুলতে পারছে না সে। মাহফুজ আবারও ওর কানের কাছে ফিসফিস করলো,
-আমারও পছন্দ হয়েছে…’
লজ্জা আরও বেড়ে গেল ফাতেমার। মাহফুজ তার লজ্জামাখা চেহারাটা দেখে আরও বেশি প্রেমে পড়ে গেল। এই মুহূর্তে স্বর্গের কোনো অপ্সরী মনে হচ্ছে ওকে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে মাহফুজ ওর মুখের দিকে চেয়ে থাকলো বেশ কিছুক্ষণ।
.
.
মাহফুজ তার বন্ধুদের নিয়ে চলে যেতেই দুইভাবী মিলে আবারও দুষ্টামি শুরু করে দিলো ফাতেমার সাথে। আবারও শুরুটা করলো মেজ ভাবী,
-নন্দিনী, দুজন বন্ধ ঘরে এতক্ষণ কী করেছো বলো?’
-কথা বলেছি…’ হেসে জবাব দিলো ফাতেমা।
-আর কী করেছো?
-ও বলেছে আমাকে ওর পছন্দ হয়েছে।
-উহু, কথা বলা ছাড়া আর কী করেছো।
-আর কিছু করিনি।
-টাচ-তাচ করেনি?
-উফ ভাবী! অসভ্য! মুখে কোনো কিছু আটকায় না?’ হাসলো ফাতেমা। এবার বড় ভাবী বললো,
-মুখে আটকাবে কেন? ভাবী হিসেবে আমরা জিজ্ঞেস করতেই পারি। তোমাদের দুজনকে আমরা আলাদা রুমে কথা বলতে দিলাম টাচ-তাচ করার জন্য, আর তোমরা কিছুই করোনি, এটা কি ভাবা যায়?
-হ্যাঁ, করেছে তো টাচ্। ও আমার হাত ধরেছে।
-আর কী ধরেছে?’
-মাথা ধরেছে মাথা। অসভ্য ভাবী!’ বিরক্ত হওয়ার ভান করলো ফাতেমা। তবে কথাগুলো শুনতে বেশ লাগছে তার।
-বলো বলো, আর কী কী ধরেছে?’ হেসে প্রশ্ন করলো বড় ভাবী।
-আর কিছু ধরেনি। শুধু মুখটা আমার কানের কাছে নিয়ে এসে বলেছে আমাকে উনার পছন্দ হয়েছে।
-মুখ আর কত কাছে এনেছিল?’ দুষ্টুমির হাসি হাসলো দুইভাবী।
-অনেক কাছে এনেছিল। আমাদের মধ্যে বন্ধ ঘরে সবকিছু হয়ে গেছে বিয়ের আগে। এটা শুনতে চাও তো?’ দুইভাবীর দুষ্টামির হাত থেকে বাঁচতে হেসে চলে গেল ফাতেমা একটা রুমে। তারপর ভেতর থেকে লক করে দিলো। ভাবীদের হাসির আওয়াজ শোনা গেল বাহির থেকে।
.
.
প্রায় পাঁচমাস পর আশরাফ সাহেবের বাড়িতে আবারও বিয়ে হচ্ছে। তবে এবার মেয়ের বিয়ে। মেয়েকে আজীবনের জন্য পরের হাতে তুলে দিতে হবে বলে সবার মন খারাপ। ফাতেমার মনটা আরও বেশি খারাপ। যে পরিবেশে তার শৈশব কেটেছে, যে পরিবেশে সে বেড়ে উঠেছে, সেই পরিবেশটা আজীবনের জন্য ছাড়তে হবে। খুব কষ্ট হচ্ছে তার। তবুও বিধাতার বিধান বলেই সে সন্তুষ্ট। বাড়ির সামান্য জিনিসগুলোও সে গভীর আবেগ দিয়ে দেখে নিচ্ছে। প্রত্যেকটা জিনিসকে সে খুব মিস করবে মানুষগুলোর পাশাপাশি। বাড়ির সামনের মেহেদি গাছটা সে নিজ হাতে লাগিয়েছিল। গাছটার পাশে দাঁড়িয়ে সে প্রাণভরে শ্বাস নিলো। মনে হলো গাছটাও কাঁদছে সে আর থাকবে না বলে। সবকিছুর জন্য হঠাৎ এভাবে মায়া বেড়ে গেল কেন তার? বিধাতার এ কেমন খেলা? ত্যাগই যদি করতে হবে, মায়ার জাল কেন বিছালো চারপাশে।
.
আবারও বাড়ি ভর্তি মেহমান এলো ফাতেমার বিয়ে উপলক্ষে। রায়হান খুব খুশি ফারিয়াকে দেখে। এবার সে যেভাবে হোক ওর ভালোবাসার কথা বলবে তাকে। বিয়ের আগের রাতে যখন সবাই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত, তখন সে ফারিয়াকে ডেকে পুকুরপাড়ে নিয়ে গেল। চারপাশে অন্ধকার। ফারিয়া ভয় পাচ্ছে রায়হান তার সাথে অনৈতিক কিছু করবে না তো? রায়হান তার হাত ধরে আছে। কিছুটা কাঁপছে সে। রায়হান বুঝতে পেরে বললো,
-ভয় পেয়ো না… তোমার সাথে খারাপ কিছু করবো না।’
রায়হানকে ‘তুমি’ করে বলতে দেখে ফারিয়া বুঝলো সে তার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চায়। ভয় কিছুটা কমলো তার। রায়হান আবার বললো,
-জানো কত মিস করেছি তোমাকে? তুমি আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে গিয়েছিলে সেবার। এমন একটা দিন নেই তোমাকে নিয়ে ভাবিনি।’
ফারিয়া চুপ করে রইলো। কোনো জবাব দিলো না।
-কী হলো? কিছু তো বলো।’ রায়হানের তর সইছে না। ফারিয়া বললো,
-কী বলবো ভাবছি। তোমাকেও যে আমার ভালো লাগেনি তা নয়। আমিও মিস করেছি তোমাকে। মন জিনিসটা নিজের হলেও বড় অবাধ্য সে নিজের। অনেক চেষ্টা করেছি তোমাকে নিয়ে না ভাবতে, তবুও ভাবতে হয়েছে।
-কেন আমাকে নিয়ে ভাবতে চাওনি?
-কারণ আমার একবার বিয়ে হয়েছে। যার সাথে বিয়ে হয়েছিল সে প্রতিরাতে মদ খেয়ে ঘরে ফিরতো, আর শুধুশুধু আমার উপর অত্যাচার করতো। এমন একটা রাত নেই তার অত্যাচারের শিকার হয়নি আমি। তাই আমাদের ডিভোর্স হয়ে যায়।’
ফারিয়ার কথা শুনে চুপ করে রইলো রায়হান। ফারিয়াও কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-তাই আমি তোমাকে নিয়ে ভাবতে চাইনি। কারণ আমাকে মেনে নেবে না তোমার ফ্যামিলি। হয়তো তুমিও মানতে পারছো না এখন সত্যিটা শুনে।’
রায়হান চুপ। আবারও নীরবে কাটলো কিছু সময়। তারপর ফারিয়া রায়হানের হাত ছাড়িয়ে চলে আসতে চাইলে রায়হান তার ধরে আরও কাছে টেনে আনলো। ফারিয়ার মুখোমুখি গা ঘেষে দাঁড়ালো সে। পরস্পরের নিশ্বাস পরস্পরের মুখে পড়ছে। রায়হান দুহাত ফারিয়ার দু’কাধে রেখে বললো,
-তবুও আমি তোমায় ভালোবাসি। অজান্তে যখন ভালোবেসেই ফেলেছি, আর পিছু হঁটতে পারবো না। তুমি কি আমার ভালোবাসার হাতটি ধরবে?
-কিন্তু তোমার ফ্যামিলি যদি না মানে?
-আমি মানাতে চেষ্টা করবো।’
ফারিয়া রায়হানের হাত শক্ত করে ধরলো। অন্ধকারে হাসি ফুটে উঠলো রায়হানের মুখে। দুজন পাশাপাশি বসলো পুকুরপাড়ে। রায়হানের কাধে মাথা রাখলো ফারিয়া। আর রায়হান নীরবে হাত বুলাতে লাগলো তার মাথায়। দুজনকে নীরবে সঙ্গ দিচ্ছে অন্ধকার। এভাবে অনেকক্ষণ কাটার রায়হান হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো গায়ে পানি অনুভব করে,
-এই কে রে গায়ে পানি ঢালছিস?’
পরমুহূর্তে গন্ধ শুকে বুঝতে পারে ওগুলো পানি না, প্রস্রাব। আবারও চিৎকার করে উঠে সে,
-এই কে রে গায়ে মুতে দিয়েছিস?
-আমি…’ অন্ধকারে রাজের গলা শোনা গেল।
-হারামজাদা, এদিকে আয়…’ বলে অন্ধকারে রাজকে খুঁজে নিয়ে কান টেনে ধরলো রায়হান। রাজ চিৎকার করে বললো,
-ছেড়ে দাও, ছেড়ে দাও।’
এবার ফারিয়া বলে উঠলো,
-রায়হান, ওকে ছেড়ে দাও।’
ফারিয়ার কণ্ঠ শুনেই রাজের মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। মনে মনে বললো,
-ও তাহলে এই ব্যাপার। এখানে একজন না, এরা দুইজন?’
ভয়টুকু কেটে গেল রাজের। তাই আত্মবিশ্বাস নিয়েই বললো,
-ছাড়ো, ছাড়ো বলছি। নয়তো সব বলে দিবো তোমরা এখানে কী করছিলে…’
রাজের কথা শুনেই কান ছেড়ে দিলো রায়হান। তারপর জিজ্ঞেস করলো,
-গায়ের উপর মুতলি কেন?’
-আমি কি অন্ধকারে দেখতে পেয়েছি তোমরা এখানে বসে আছো?
-তো বাপ, তুই কি আর মুতার জায়গা পাসনি, সোজা এখানে এসে আমাদের উপরেই মুততে হলো?
-সব জায়গায় মানুষ, তাই এদিকেই চলে এসেছি। আমি কাউকে বলবো না তোমরা এখানে কী করছো, এখন আমি যাই?’
-যা…’
রাজ চলে গেল। তখন ‘হা হা হা’ করে হেসে উঠলো ফারিয়া। মুগ্ধ শ্রোতার মতো সেই হাসি শুনলো রায়হান।

.
.
♥সাত♥
বাড়ির উঠানে চেয়ারে বসে আছে আশরাফ সাহেব এবং পদ্মাবতী। আজ তাদের ছোট মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে। ঘরটা ফাকা ফাকা লাগছে। ভেতরে যেন নিশ্বাস আটকে আসে। তাই দুজনে বাইরের অন্ধকারে বসে আছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পদ্মাবতী বললেন,
-কাল এই সময়েও মেয়েটা এখানে ছিল, আজ পরের ঘরে চলে গেছে।’
স্ত্রীর কথা শুনে আশরাফ সাহেব বললেন,
-মেয়ে হয়ে জন্মালেই একদিন না একদিন পরের ঘরে যেতে হয়। তুমিও কত আদরের ছিলে তোমার বাবা মার, একদিন তোমাকে আমি বিয়ে করে নিয়ে আসি। সে কী কান্না তোমার! আজ আমাদের মেয়েটাও এভাবে কান্না করে চলে গেল।’
দুজন একসাথে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। পদ্মাবতী বললেন,
-মেয়েটা এখন কী করছে জানি না। সবাই হয়তো ওকে ঘিরে মজা করছে, আনন্দ করছে। ওর হয়তো ঘরের জন্য খুব মন কাঁদছে।
-আর একটা দায়িত্ব আমাদের। আমাদের ছোট ছেলে রায়হানকে একটা বউ এনে দিতে পারলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ।
-দেখতে দেখতে কতগুলো বছর কেটে গেল তাই না?
-হুমম… মনে হচ্ছে, এইতো সেদিন তুমি বউ সেজে এসেছিলে এই বাড়িতে। তারপর আল্লাহর ইচ্ছেতে পাঁচজন সন্তান হারিয়ে অন্য পাঁচজনকে পেলাম। তারা একটু একটু করে বড় হলো। আজ তাদের নিজেদের সংসার হয়েছে। রায়হানটাকে সংসারী দেখে যেতে পারলে মরার পর আত্মার শান্তি মিলবে।
-ওর পড়ালেখা শেষ হোক। এখনও বি.এ পড়ছে। পড়ালেখা শেষ হলেই ওকেও একটা সুন্দর দেখে বউ এনে দেবো।
-তোমার মনে আছে পদ্ম, আমাদের আমানকে যখন আল্লাহ আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়নি, তখন আমি কত খুশি হয়?
-শুধু কি আপনি? আমি খুশি হয়নি?
-হ্যাঁ, আমাদের ধন ছিল ও। একটু একটু যখন হাঁটতে শুরু করে ও, ওকে নিয়ে সারা এলাকা ঘুরে বেড়াতাম।
-শুধু কি আমান, সবাইকে কাঁধে নিয়েই আপনি ঘুরতেন।
-হ্যাঁ, তবে আমান একটু বেশি আদরের ছিল। আজ সবাই যার যার মতো করে বড় হয়ে গেছে। চাইলেও কাঁধে নিয়ে ঘুরা যাবে না।’ বলেই হেসে উঠলেন আশরাফ সাহেব। এ কীসের হাসি বুঝতে না পারলেও, পদ্মাবতী বুঝলেন এ হাসির গভীরতা অনেক। এ হাসির পেছনে লুকিয়ে আছে দীর্ঘ জীবনের স্মৃতি। পদ্মাবতী আবারও মেয়ের কথায় ফিরে আসলেন,
-আমাদের মেয়েটার বিয়ে হচ্ছে বলে, আকাশটাও কেঁদেছে আজ তার জন্য। বৃষ্টির দিনেই বিয়ে হয়ে গেল ওর।
-ভাগ্যবতী মেয়ে তাই আল্লাহর রহমত পড়েছে আকাশ থেকে।’ বলতে বলতে নাতিকে কোলে তুলে নিলেন আশরাফ সাহেব। এতক্ষণ ভেতরে বাচ্চাদের সাথে খেলছিল রাজ। তার নতুন বান্ধবী রিতাও বাবার সাথে এসেছে বিয়েতে। রিতাকে নিয়েই সবাই খেলছিল। এখন রাজ খেলা শেষ করে এসে দাদুর কোলে বসেছে। আশরাফ সাহেব নাতিকে জিজ্ঞেস করলেন,
-ফুফিকে মনে পড়ছে দাদুভাই?
-হ্যাঁ…
-বেশি না কম?
-বেশি…
-আমরা ফুফির বাসায় বেড়াতে যাবো কেমন?
-হ্যাঁ, আমি আর তুমি যাবো। বীথি আর মনিকে নেবো না।
-হ্যাঁ, আমি আর তুই যাবো শুধু।’ নাতিকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলেন আশরাফ সাহেব।
.
.
পরদিন সকালেও আকাশটা মেঘলা ছিল। যেকোনো মুহূর্তে বৃষ্টি নামতে পারে। বাচ্চারা মিলে বাড়ির আঙিনায় খেলছিল। ‘বর কনে’ খেলা। রাজ বর হবে। কিন্তু বউ কে হবে সেটা নিয়ে বাড়াবাড়ি চললো মনি আর রিতার মধ্যে। মনির অভিযোগ প্রতিবার সে বউ হয়, এবারও সে বউ হবে। কিন্তু রিতা নতুন বলে রাজ চায় রিতা বউ হোক। রাজকে নিজের পক্ষে পেয়ে খুশি হয় রিতা। কিন্ত মনভার করে থাকে মনি। না খেলেই পুকুরের দিকে চলে যায় সে। পুকুরপাড়ে বসে সে সবার খেলা দেখতে লাগলো। রাজ ও রিতা বর-কনে সেজেছে। বীথি সেজেছে বরের বোন। আর একজন দোকানদার সেজেছে। সে হলো শায়লার ছেলেটা। রাজ দোকানদারের কাছ থেকে বাজার করে ঘরে ফিরে ‘বউ বউ’ বলে ডাকলো। একটা জায়গায় বসে রিতার মাথায় তেল মাখছিল বীথি। রাজের গলা শুনে ওড়না মাথায় দিয়ে হেঁটে এসে দাড়ালো সে রাজের সামনে। তারপর রাজের হাত থেকে বাজার নিতে নিতে বললো,
-কী বাজার নিয়ে এসেছো দেখি।’
পলিথিনে চোখ বুলালো রিতা। ওখানে কয়েকটি বাঁশের টুকরো ছিল, আর একটা প্যাকেটে ছিল বালু। বাঁশের টুকরোগুলো হলো মাছ, আর বালুগুলো হলো চাউল। বাজার দেখে নিয়ে রিতা বললো,
-এগুলো কী মাছ আনছো? আচ্ছা, তুমি বসো, আগে তোমাকে খেতে দিই।
-হুমম, খেতে দাও বউ। খিদে লাগছে। বীথি তুই মাছগুলো বটি দিয়ে কুট।
-আচ্ছা।’ বলেই পলিথিনটা নিয়ে মাছ কুটার ভান করলো বীথি। আর রিতা প্লাস্টিকের খেলনা পাতিল থেকে একটা কচুপাতায় বালু দিয়ে বললো,
-ভাত খাও…’
রাজ খাওয়ার অভিনয় করলো। পুকুরপাড় থেকে চুপচাপ ওদের খেলা দেখতে লাগলো মনি। তারপর হঠাৎ কী যেন ভাবতে লাগলো সে মন খারাপ করে। কার কথা ভাবছে? বাবার কথা? হ্যাঁ, আজ বাবাকে খুব মনে পড়ছে তার। মন খারাপ হলেই এখন সে বাবার কথা ভাবে। আগে প্রতিদিন ফোনে কথা হতো বাবার সাথে। আজ কয়েকমাস ধরে বাবার মিষ্টি ডাক শুনে না সে। তবে কল্পনায় একটা ছবি এঁকে নিয়েছে সে বাবার। কেউ তাকে কষ্ট দিলে কল্পনার সেই বাবাকে মনেমনে অভিযোগ করে মনি। আজও বাবাকে অভিযোগ করলো,
-বাবা, তুমি নেই বলে সবাই আমাকে কষ্ট দেয়। আমাকে ভালোবাসে না কেউ। তুমি ফিরে এসো বাবা, তোমাকে খুব মিস করছি।
.
.
(চলবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here