জীবনের গল্প পর্ব-২৭

0
330

__________জীবনের গল্প__________
লেখক: ShoheL Rana
____________পর্ব:-২৭___________
♥উনিশ♥
কলিংবেলের শব্দে দরজা খুলে দিয়ে রিতা অবাক হলো রাজ আর বীথিকে দেখে। রাজ সঙ্গে থাকায় বীথিকে চিনতে কষ্ট হলো না।
-বীথি?’ খুশিতে উত্তেজিত হয়ে বীথির নাম ধরে ডাকলো রিতা।
-হুমম, বীথি। কেমন আছিস তুই?’
-ভালো আছি রে।’ বলেই জড়িয়ে ধরলো সে বীথিকে। তারপর বললো,
-আয়, ভিতরে আয়….’ রিতা ওদের ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসালো।
-তারপর, কেমন আছো তুমি?’ রাজের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো রিতা।
-ভালো, তোমার কী খবর?’ মৃদু হাসলো রাজ।
-এইতো ভালোই। আচ্ছা, বসো তোমরা। আজ কিন্তু লাঞ্চ না করে যেতে দিচ্ছি না তোমাদের।
-আরে না, না, ওসব কিছু করতে যেও না।’
রাজের কথা শুনলো না রিতা। ভেতরে চলে গেল। বীথি পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে রাজকে নিচুকণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
-এদের নিজেদের বাসা নাকি এটা?
-নাহ, ভাড়ায় থাকে।’ রাজও নিচু কণ্ঠে জবাব দিলো
-ওহ…’
রিতা এলো স্বামীকে সাথে নিয়ে। রিতার স্বামী রাজের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করলো,
-ভালো আছেন?
-জ্বী ভালো, আপনি?’ হ্যান্ডশেক করলো দুজন।
-আমিও ভালো আছি। বসুন আপনারা। কথা বলুন… আমি একটু আসি…’ বলেই বেরিয়ে গেল রিতার স্বামী। তারপর রিতা চানাচুরের একটা প্লেট রাখলো ওদের সামনে। নিজে সে বীথির পাশে বসলো। বীথির কাঁধে হাত রেখে বললো,
-তুইও কত্ত বড় হয়ে গেছিস! তোকে দেখে বিশ্বাসই হচ্ছে না তুই বীথি। তো বিয়ে করিসনি এখনও?’
-না রে। এখনও ওসব নিয়ে ভাবিনি।’ চিমটি দিয়ে চানাচুর নিয়ে মুখে পুরলো বীথি।
-কবে করবি বিয়ে? আমি তো এক ছেলের মা হয়ে গেছি।’ বলেই হাসলো রিতা।
-ভাগ্যে যখন থাকবে, বিয়ে তখন করবো। বাই দ্যা ওয়ে, তোর বাবুটা কই?
-আছে। ঘুমোচ্ছে।
-আচ্ছা, ঘুমাক। পরে দেখবো।
-এ কী, রাজ তো কিছুই বলছে না…’ রাজের দিকে তাকালো রিতা। নীরবে সে চানাচুর খাচ্ছিল। রিতার কথা শুনে বললো,
-তোমরা বলছো, মাঝখানে আমি আর কী বলবো?
-তাই বলে এভাবে চুপ থাকবা?
-গ্রামে কখনও যেতে ইচ্ছে করে না তোমাদের?’ প্রশ্নটা করেই ভাইবোন দুজনের দিকে তাকালো রিতা। রাজ ও বীথি পরস্পরের দিকে তাকালো। কী জবাব দেবে বুঝতে পারলো না…’
.
.
-আয়েশা, এক কাপ চা বানিয়ে আনো তো?’ স্ত্রীর উদ্দেশ্য কথাটা বলে চায়ের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো আমান সাহেব। খাটের উপর বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে, পায়ের সাথে পা পেঁচিয়ে বসে আছে সে। আয়েশা বেগম রান্নাঘরে কাজ করছে। কিছুক্ষণ পর স্বামীর জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এলো সে। স্বামীর হাতে চায়ের কাপটা দিয়ে সে আবার রান্নাঘরে যেতে চাইলে তার হাতটি ধরে পাশে বসালো আমান সাহেব। আয়েশা বেগম ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
-কী?’
-কেন? তোমাকে কি বসাতে পারি না আমার পাশে?
-তা পারো। হঠাৎ পাশে বসালে তাই…
-রাজ আর বীথি কোথায়?
-ওরা রিতার বাসায় গেছে। রিতা কে জানো তো? সেই যে ছোটবেলায় ওদের সাথে খেলতো? ইয়াসমিনের ভাইয়ের মেয়েটা?
-হুমম… রিতা কি এখানে থাকে?
-হ্যাঁ, স্বামীর সাথে নাকি এখানেই থাকে।’
আমান সাহেব চায়ের কাপে চুমুকে দিয়ে স্ত্রীকে আরও কাছে টানলো।
-তোমার আজ কী হয়েছে বলো তো?’ আয়েশা বেগম জিজ্ঞেস করলো।
-বাড়িতে আজ ফাঁকা। একটু কাছে আসো না?’
স্বামীর কথা শুনে কিছুটা লজ্জা পেল আয়েশা বেগম। লজ্জায় মুখ নিচু করে ফেললো। আমান সাহেব তার মাথা থেকে ঘোমটাটা সরিয়ে চুলের ঘ্রাণ নিলো। তারপর ফিসফিস করে বললো,
-এখনও সেই আগের মতোই তোমার চুলের ঘ্রাণ।
-ইশ! ছাড়ো তো, আমার কাজ পড়ে আছে।
-আরেকটু বসো না? এই তোমার দেখছি আরও কয়েকটা চুল পেকে গেছে। আগে তো এতগুলো পাকা চুল ছিল না।’ স্ত্রীর মাথার চুল খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো আমান সাহেব।
-বয়স তো বাড়ছে। তাই না?’ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আয়েশা বেগম।
-হুমম, তা বাড়ছে। চুল পাকলেও তুমি কিন্তু আগের মতোই সুন্দরী রয়ে গেছো।
-বুড়ো বয়সে তোমার কি ভীমরতি ধরলো?’
-ভীমরতি না রে আয়েশা। কেন জানি সেই আগের দিনগুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। খুব মিস করছি আগের দিনগুলো।’ কথাটি বলে মুখটা মলিন করে ফেললো আমান সাহেব। স্বামীর চেহারাটা দেখে খুব মায়া হলো আয়েশা বেগমের।
.
.
দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে উঠলো রাজ ও বীথি। ফেরার প্রস্তুতি নিয়ে রাজ বললো,
-আমরা তাহলে যায় রিতা…
-আচ্ছা, আবার এসো কিন্তু। আর তোমাদের দুজনের নাম্বারগুলো সেভ করে দাও তো আমার ফোনে…’ বলেই নিজের ফোনটা বাড়িয়ে দিলো সে রাজের দিকে। রাজ দুজনের নাম্বার ওর ফোনে সেভ করে ফোনটা ফিরিয়ে দিলো। বীথি বললো,
-এবার তুই যাবি আমাদের বাসায়… তোর স্বামীকে নিয়ে সময় পেলে যাস, কেমন?’
-আচ্ছা যাবো…’
বীথি রিতার কোলের বাচ্চাটাকে আদর করে দিলো গাল টেনে। তারপর রাজের সাথে বেরিয়ে এলো রিতার বাসা থেকে। তখন চাঁদনির ফোন এলো। রাজ ফোন রিসিভ করতেই চাঁদনি বললো,
-রাজ, তুমি কোথায়? একটু মার্কেটে আসবা?
-কেন? মার্কেটে গেছো কেন?
-কিছু কেনাকাটা করবো। আমি অপেক্ষা করছি, আসবা তো?’
-আসছি।’ বলেই ফোন কেটে দিলো রাজ।
-কার ফোন?’ জিজ্ঞেস করলো বীথি।
-চাঁদনির ফোন…’
-যেতে বলছে বুঝি?’ দুষ্টুমি করে হাসলো বীথি।
-হুমম…’
-আচ্ছা তুই যা, আমি একাই চলে যেতে পারবো।’
-দাঁড়া, তোকে রিকশায় তুলে দিই…’ বলে একটা রিকশা ডাকলো রাজ। রিকশাটাতে বীথিকে তুলে দিয়ে ভাড়া দিয়ে দিলো সে রিকশাওয়ালাকে। তারপর সাবধানে যেতে বলে সে অন্য একটা রিকশাতে উঠে মার্কেটের দিকে যেতে লাগলো। মার্কেটের কাছাকাছি এসে সে ফোন দিলো চাঁদনিকে। তারপর ওর অবস্থান জেনে নিয়ে রিকশাকে ওদিকে নিয়ে যেতে বললো।
চাঁদনি রাস্তার পাশে ভ্যানিটিব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল রাজের জন্য। রাজকে রিকশা থেকে নামতে দেখে বললো,
-আসছো? চলো এবার…’
রাজ রিকশা ভাড়া দিয়ে চাঁদনির হাত ধরে বললো,
-চলো…’
মার্কেটের ভেতরের দিকে হাঁটলো ওরা। রাজ বলে উঠলো,
-তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।’
চাঁদনি লজ্জায় মুখে হাত চাপলো। রাজ আবার বললো,
-লজ্জা পেয়ো না। সত্যি বলছি…’
-চুপ থাকো তুমি… পাজি ছেলে একটা।’ বলেই হেসে উঠলো চাঁদনি।
-তা হঠাৎ শপিং করতে এলে যে?’
-মামার বিয়ে কাল। আজ মামা বাড়িতে অনুষ্ঠান হবে। ওখানেই যাবো।
-কবে আসবা?
-কয়েকদিন পর…’
চাঁদনির কথা শুনে রাজ মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে পড়লো। চাঁদনি বললো,
-আরে বাবা বিয়ের পরেরদিনই চলে আসবো। গাল ফুলিয়ো না আর।’ হাসলো চাঁদনি। রাজও হেসে বললো,
-ওখানে আমার বন্ধু রাফির দোকান আছে। চলো ওখান থেকে যা কেনার কিনবে।
-চলো…’
রাফির দোকানে আসতেই রাফি চোখ বড় বড় করে তাকালো দুজনের দিকে। রাজ ওর অবস্থা দেখে বললো,
-কী রে, হা করে তাকায় আছিস কেন বেটা? তোর ভাবীকে নিয়ে এসেছি। সালাম দে।’
-আস্সালামু আলাইকুম ভাবী…’ রাফি সালাম দিলো।
-ওয়ালাইকুমুস সালাম।’ মুখ চেপে ধরে হাসতে লাগলো চাঁদনি।
-বসেন ভাবী।’ বলেই দুজনের দিকে দুইটা টুল এগিয়ে দিলো। বসার পর চাঁদনি রাজের কানে কানে জিজ্ঞেস করলো,
-তোমার প্রিয় রং কী?
-নীল…’ জবাব দিলো রাজ।
-ভাইয়া নীল কালারের একটা শাড়ি দেখান তো?’ রাফির উদ্দেশ্যে বললো চাঁদনি। রাফি অনেকগুলো নীল শাড়ি বের করলো। ওখান থেকে রাজকে একটা শাড়ি পছন্দ করতে বললো চাঁদনি। রাজের যেটা পছন্দ হবে ওটাই কিনবে সে। রাজ পছন্দ করে একটা শাড়ি দিলো চাঁদনির হাতে। চাঁদনি ওটা প্যাকেট করে দিতে বললো। তারপর আরও কিছু মেয়েলী জিনিসপত্র কিনলো সে। সবকিছুর দাম রাজ দিতে চাইলে, চাঁদনি ওর দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকালো। রাজ বললো,
-আমি দিলে কী হয়? আমি কি আমার গার্লফ্রেন্ডকে এই সামান্য জিনিসও কিনে দিতে পারি না?
-না, পারো না। আগে ভালো একটা চাকরি পাও তুমি, তখন যতো খুশি কিনে দিও।’ বলেই দোকানের চারপাশে তাকালো। জিনিসের দাম দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো,
-এখানে জেন্টস কিছু নেই, তাই না?’
-না, সামনে গেলে পাবেন।’ জবাব দিলো রাফি।
-চলো, ওদিকে যাই।’ বলেই রাজের হাত ধরে আরেকটা দোকানে গেল চাঁদনি। তারপর রাজের জন্য প্যান্ট আর আর টি-শার্ট পছন্দ করতে লাগলো নিজে।
-এসবের কোনো দরকার ছিল না তো…’ মন্তব্য করলো রাজ।
-ভালোবেসে দিচ্ছি, না নিলে কষ্ট পাবো।’ রাজের দিকে না তাকিয়েই বললো চাঁদনি। তারপর রাজের জন্য পছন্দ করে প্যান্ট আর টি-শার্ট কিনে বের হয়ে এলো মার্কেট থেকে। রাজের ফোনটা তখন বেজে উঠলো। অচেনা নাম্বার ভেসে উঠলো স্ক্রিনে। কিছুক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে সে রিসিভ করলো ফোন।
-হ্যালো, কে?’
-সাদিয়া বলছি… তোমার সাথের মেয়েটা কে?’
-ও সাদিয়া? কোথায় তুমি? মার্কেটে আসছো?
-যেটা জিজ্ঞেস করছি ওটার জবাব দাও…’
-আমার হবু বউ, চাঁদনি।’ বলেই চাঁদনির কাঁধ ধরে আরও কাছে টানলো ওকে। ওপাশ থেকে আর কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো। রাজ ফোন ব্যাক করলে আর রিসিভ করলো না সাদিয়া।
-কে ও?’ জিজ্ঞেস করলো চাঁদনি।
-আমার ভার্সিটির একটা বান্ধবী…’
-কী বলছে?’
-তেমন কিছুই বলেনি। ফোন কেটে দিলো। তো, এখন কোথায় যাবে তুমি?’
-একটু পার্লারে যাবো…’
চাঁদনির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ওর চোখের দিকে তাকালো রাজ। তারপর খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো ওকে।
-কী দেখছো এভাবে?’ হাসলো চাঁদনি।
-তোমার যা রূপ আছে, পার্লারও লজ্জা পাবে। পার্লারে যাওয়ার দরকার কী?’
-হয়ছে আর আমাকে উপরে তুলতে হবে না। রিকশা ডাকো একটা।’
রাজ রিকশা ডাকলো। রিকশায় দুজন পাশাপাশি বসলো। পাশাপাশি বসতেই কেমন যেন ভালোলাগা শুরু হলো দুজনের মনে। রিকশাওয়ালাকে রিকশা চালাতে বলে রাজ চাঁদনিকে নিজের দিকে টানলো ওর কোমর পেঁচিয়ে ধরে। চাঁদনি হা করে চমকে উঠলো কোমরে রাজের স্পর্শ পেয়ে। তারপর ধীরে ধীরে সামলে নিলো নিজেকে…’
.
.
(চলবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here