__________জীবনের গল্প__________
লেখক: ShoheL Rana
____________পর্ব:-২৯___________
ভার্সিটিতে আসার পর থেকেই রাজ দেখছে সাদিয়া মুখ ভার করে আছে। ওর সাথে কথা বলছে না, তাকাচ্ছেও না ওর দিকে। সাদিয়া হঠাৎ এই আচরণ করছে কেন? কী ব্যাপার? বুঝে উঠতে পারলো না রাজ। ভার্সিটি শেষে সে সাদিয়ার পথ আটকালে, সাদিয়া ওকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলো। রাজ ওর সামনে গিয়ে হাত ধরলে, সাদিয়া হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো,
-ছাড়ো, ছাড়ো আমাকে…’
-কী হয়েছে বলবা তো?
-কিছু হয়নি। সরো তুমি।
-না, এভাবে তো সরা যাবে না। কী হয়েছে বলো।
-আমার হাত ধরছো কেন? তোমার তো হাত ধরার মানুষ আছে। ওর হাত ধরো যাও…
-আজব। তুমি আমার বন্ধু না?
-না, আমি কারও বন্ধু না।
-তার মানে আমাকে তুমি বন্ধু ভাবতে পারোনি?
-না।’
সাদিয়ার হাত ছেড়ে দিলো রাজ।
-বেশ, তাহলে আর কী করার আছে।’ বলেই মুখটা মলিন করে চলে যেতে লাগলো রাজ। সাদিয়া পেছন থেকে বললো,
-এই ছেলে, দাঁড়া…’
রাজ দাঁড়িয়ে পড়লো। সাদিয়া এসে ওর শার্টের কলার ধরে বললো,
-সব তোর ইচ্ছায় হবে নাকি? একদম যাবি না এখান থেকে।’
রাজের মুখটা হা হয়ে গেল সাদিয়ার আচরণ দেখে। চোখ বড় বড় করে সে তাকালো ওর দিকে। সাদিয়া আবার বললো,
-ওভাবে কী দেখছিস? চোখ গেলে দিবো একদম।’ অন্য হাতে ঘুষি দেখিয়ে হাসলো সাদিয়া। রাজ বললো,
-বাহ্বাহ! এতটাই উন্নতি? তা বন্ধু ভাবছো তো আমাকে?’
-ঐ তুমি তুমি করছো কেন হেহ? বন্ধুকে ‘তুই’ করে বলবি।
-এ্যা!’ হাসলো রাজ।
-এ্যা না, হ্যাঁ। চল ক্যান্টিনে।’
-না রে, চল হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি…’
-ওকে…’
দুজনে ভার্সিটি থেকে বের হয়ে পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো। সাদিয়া বললো,
-ভালোই হয়েছে ব্যাপারটা শুরুতেই জেনে গেছি।
-কোন ব্যাপারটা?
-তোর আর চাঁদনির ব্যাপারটা। আমি আরও গভীরে গেলে সমস্যা হতো আমার।
-গভীরে গেলে মানে? আর কী সমস্যা?
-আমিও তোকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম, প্রথম দেখায় তোর প্রেমে পড়ি। তোদের প্রেমের কথা না জানলে আমি হয়তো আরও গভীরে চলে যেতাম তোকে ভালোবাসে। তখন তোর মায়া থেকে বের হতে কষ্ট হতো আমার।
-তো এখন তাহলে আজীবনের জন্য বন্ধুত্ব করছিস তো আমার সাথে?
-হুমম…’ মাথা ঝাকালো সাদিয়া।
.
.
বাজারে গিয়ে একটা বড় মাছ কিনলো আমান সাহেব। আজ বেতন পেয়েছে, যেদিন বেতন পায় সেদিন একটু বেশি বাজার করে সে। তরকারির দোকানে গিয়ে তাজা তাজা তরকারি কিনলো। চাউলের দোকানে গিয়ে এক বস্তা চাউল কিনলো। তারপর একটা রিকশা ডেকে সব বাজার নিয়ে ফিরলো বাসায়। রিকশাওয়ালাকে কয়েক টাকা বাড়িয়ে দিলে চাউলের বস্তাটা কাঁধে করে ঘরে দিয়ে আসে। আমান সাহেব হাতের মাছটা স্ত্রীকে দিয়ে বললো,
-একটু ভালো করে তেল মশলা দিয়ে রান্না করো তো মাছটা…’
আয়েশা বেগম মৃদু হেসে বললো,
-কোনদিন বুঝি খারাপ রান্না করি?’
-না, আজ আরেকটু ভালো রান্না করবা।’
আয়েশা বেগম মাছটা নিয়ে কিচেনে চলে গেল। আমান সাহেব নিজের রুমে যাওয়ার সময় বীথির রুমে উঁকি দিলো। বাবাকে দেখে বীথি বললো,
-ও বাবা, ভিতরে এসো।’
-কী করছিস মা?’ ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে জিজ্ঞেস করলো আমান সাহেব।
-এইতো একটা গল্পের বই পড়ছি।
-তোর ভাইয়া কোথায়?
-ভার্সিটি থেকে এসে বের হয়ে গিয়েছিল। কিছু বলে যায়নি।
-ও..’ মেয়ের দিকে তাকালো আমান সাহেব। মেয়েটার সাথে আজকাল তেমন কথা বলা হয়ে উঠে না। মেয়ের মাথায় হাত বুলালো সে।
-বাবা, তুমি কি কিছু বলতে চাও?’ সংকোচ নিয়ে প্রশ্ন করলো বীথি।
-অনেক বড় হয়ে গেছিস রে মা তুই।’
বীথি বুঝতে পারলো বাবার আসল কথা ওটা না। বইটা একপাশে রেখে সে বললো,
-আসল কথাটা বলো বাবা…’
-দেখ মা। মেয়ে বড় হলেই বিয়ে দিতে হয়। মনি তোর বয়সী ছিল, ওর বিয়ে হয়েছে সেই কবে। তোর এখনও বিয়ে হয়নি। তাই বলছিলাম…’
বাবাকে বাধা দিয়ে বীথি বললো,
-বাবা, আমাদের সংসারের এ অবস্থায় তুমি আমার বিয়ে নিয়ে ভাবছো? ভাইয়ার একটা চাকরি হোক, তারপর না হয় আমার বিয়ে নিয়ে ভেবো?’ মাথাটা কাত করলো বীথি।
-আচ্ছা মা, ঠিক আছে।’ মেয়ের পিঠে হাত বুলিয়ে বেরিয়ে গেল আমান সাহেব। বীথি আবারও বইটার দিকে চোখ দিলো।
.
.
চাঁদনিকে সাথে নিয়ে চাঁদনিদের ঘরে ঢুকলো রাজ। মামা বাড়ি থেকে ফেরার সময় চাঁদনি অর্ধেক পথে নেমে যায় গাড়ি থেকে। মা আর রিজভিকে আগে পাঠিয়ে দেয় ঘরে। তারপর রাজের সাথে দেখা করে। দুজনে বেশ কিছুক্ষণ ঘুরে এখন এলো। বাসায় তখন চাঁদনির ভাবীও ছিল। চাঁদনির সাথে রাজকে ওভাবে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকালো সে।
-ভাবী, তুমি আজ এই সময়ে বাসায়?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো চাঁদনি।
-অফিসের কাজ শেষ তাই। তা দুজন একসাথে কোথা থেকে আসছো? আজকাল একসাথে খুব ঘুরা হয় মনে হচ্ছে?
-ভাবী আমি ওকে ভালোবাসি।’ হুট করে বলে ফেললো কথাটা চাঁদনি। ভাবী বললো,
-তোমার ভাই জানতে পারলে কী হবে জানো?’
-ভাবী, ভাইয়া আর কী বলবে? ভালোবাসাটা কি অন্যায়?’ কথাটা বললো রাজ। তার কথা শুনে ভাবী বললো,
-তুমি চুপ থাকো। আমাদের পরিবারের মধ্যে কথা বলতে আসবা না। ছেলেকে পড়াতে দিয়েছি বলে আমাদের পরিবারের মেয়ের সাথে প্রেম করে বসবা?’
-পরিবার? হেহ…’ বিদ্রুপ করে হাসলো রাজ। তারপর আবার বললো,
-পরিবার কী বুঝেন আপনারা? পরিবারের মেয়ের সাথে প্রেম করছি বলে আপনার রাগ হচ্ছে? নাকি আমার পরিবার উঁচু না বলে রাগ হচ্ছে। পরিবারের কথা যখন উঠলো, আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই ভাবী। চাঁদনিকেও বলেছিলাম, আপনাকে যেন জিজ্ঞেস করে ওটা।
-কী?’ ভ্রু কুঁচকালো ভাবী।
-পরিবার কী? আপনার কাছে পরিবারের সংজ্ঞা কী?
-এই যে আমাদের পরিবারের সদস্যের নিয়েই আমাদের পরিবার।
-পরিবারের সদস্য? কখনও এদের নিয়ে ভেবেছেন?
-না ভাবলে আমি আর আমার স্বামী দিনরাত অফিসের কাজ নিয়ে পড়ে থাকতাম না।’
আবারও বিদ্রূপ করে হাসলো রাজ। তারপর বললো,
-এটাই বুঝি পরিবারের সদস্যদের প্রতি কর্তব্য? আপনি কখনও একটু সময় বসে বাড়ির সবার সাথে গল্প করেছেন?
-তা করিনি।
-উঠোনে বসে কখনও শাশুড়ির মাথায় তেল মাখিয়ে দিয়েছেন? অথবা পড়ন্ত কোনো বিকেলে ননদের মাথায় কখনও চুল বিনি কেটে দিয়েছেন?’
রাজের কথার কী জবাব দেবে ভেবে পেল না ভাবী। চুপ করে রইলো। রাজ আবার বললো,
-কখনও কি সময় করে ঘুরতে গেছেন পরিবারের সবার সাথে? অথবা একটা জোৎস্না রাত কাটিয়েছেন?’
এবারও নিশ্চুপ ভাবী। রাজ কণ্ঠটা আরেকটু নরম করে বললো,
-ভাবী, আপনি বিয়ে করে স্বামী পেয়েছেন, কিন্তু পরিবার পাননি।’ বলেই বেরিয়ে এলো রাজ ওখান থেকে।
.
.
(চলবে…