দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_২১
#কলমে_লাবণ্য_ইয়াসমিন
হৃদীতা রুমে নেই। বাসর রাতে একটা মেয়ে নতুন বরকে রেখে, তাকে কিছু না বলে কোথাও চলে যেতে পারে এটা হৃদয়ের মাথাতেই আসছে না। হৃদয়ের মনে নানা রকম কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। একবার মনে হচ্ছে নিচে পানি খেতে গেছে,হয়তো ডাকলেই চলে আসবে। আবার মনে হচ্ছে ওকে কেউ কিডন্যাপ করেনি তো? সব কিছু ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। পানি খেতেই যদি যাবার ছিল তাহলে বিয়ের গহনা শাড়ি এমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে কেনো যাবে?। ওকে বলেছিল চেঞ্জ না করতে তবুও কেনো এগুলো ও খুলে রাখলো?।। হৃদয় কথা গুলো ভেবে ডাকতে ডাকতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসলো কিন্তু কেউ কোনো সাঁড়া দিলো না। বিয়ের বাড়িতে কাজকর্ম করে সবাই ক্লান্ত ছিল তাই ঘুমিয়ে পড়েছে। হঠাৎ হৃদয়ের চিৎকার শুনে দীলারা বেগম উঠে আসলেন,
> হৃদয় বাড়িতে মেহমান আছে। মাঝরাতে বউয়ের নাম ধরে চিৎকার করে ডাকছিস সবাই কি ভাববে বলতো? (রাগ করে)
> আম্মু তুমি হৃদীতাকে দেখেছো? ওকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।
> খুঁজে পাচ্ছিস না মানে কি হৃদয়? ও তো তোর রুমেই ছিল।
> আম্মু ছিল কিন্তু আমি ঘুম থেকে উঠে ওকে আর পাচ্ছি না। ওর শাড়ি গহনা সব মেঝেতে পড়ে ছিল। জানিনা কোথায় চলে গেলো। আম্মু আমার মনে হয় ওকে আবার ওরা কিডন্যাপ করেছে আমি ওদেরকে ছাড়বো না। এখুনি ওকে ফিরিয়ে আনবো। (বাইরে যেতে যেতে)
> পাগলামী বন্ধ কর। আমি দেখছি বাড়িতেই কোথাও আছে হয়তো।
ওদের কথাবার্তা শুনে সবাই উঠে পড়েছে।দীলারা বেগম আর বাড়ি বাকিরা মিলে হৃদীতাকে সব জায়গায় খুঁজলো কিন্তু কোথাও পাওয়া গেলো না। হৃদয় পুলিশের রিপোর্ট করেছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। কেউ জানেনা হৃদীতা কোথায় ! আত্মীয় স্বজন হৃদীতার নামে অনেকেই খারাপ খারাপ মন্তব্য করছে।। বলছে মেয়েটা খারাপ ছিল তাই বিয়ের রাতে অন্য জায়গায় চলে গেছে। চারদিকে কথাটা রাষ্ট্র হতে সময় লাগলো না। কিন্তু হৃদয় এসব কথা বিশ্বাস করেনি। ওর মন বলছে হৃদীতা কোনো বিপদে আছে। ও কয়েকদিন বাড়িতে আসা বন্ধ করে সারা শহর তন্নতন্ন করে খুজেছে কিন্তু পাইনি ।
বিয়ের রাতে হৃদীতা হারিয়ে গেছে কয়েক বছর হয়ে গেছে। ওকে আর খুজে পাওয়া যায়নি। সেদিন রাতটা ছিল হৃদয়ের জীবনের সুখী জীবনের শেষ রাত। তারপর থেকে ও গম্ভীর হয়ে গেছে। আগের তুলনায় দ্বিগুণ রাগ আর জিদ ওর মধ্যে বাসা বেধেছে। ও এখন বিশ্বাস করে হৃদীতা ওকে ঠকিয়েছে। হৃদীতা কাজের মেয়েদেরকে শুধু না এখন কোনো গরীব মানুষকেও আর পছন্দ করে না। প্রচণ্ড ঘৃণা করে। তবুও ওর মনে একটুও শান্তি নেই। সারাদিন অফিস আর রাত হলে ক্লাবে মেতে থাকে। ওর উপরে কেউ কথা বলতেই পারেনা। শাফিন ওকে অনেক বুঝিয়েছে কিন্তু ও শুনে না। নিজের মতো একটা জগৎ তৈরি করে নিয়েছে। দীলারা বেগম একমাত্র ছেলের এমন কষ্টে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সকালে নাস্তার টেবিলে বসে দীলারা বেগম গম্ভীর কষ্টে রুহুল সাহেব কে বললেন,
> ছেলেটা আমার রোবটে পরিণত হয়েছে বাবা হয়ে তোমার তো একটা দায়িত্ব আছে তাই না? এমন করে নিষেধ করতে তো পারো?
> তোমার ছেলে কবে আমার কথা শুনেছে বলতে পারো? সেই কোথা থেকে একটা মেয়েকে ধরে এনে বিয়ে করলো তারপর এতোকিছু। সবতো মুখ বুজে হাসিমুখে মেনে নিয়েছিলাম। আমি কি বলবো তোমার ছেলে তুমি বলো। ( বিরক্ত হয়ে)
> আমাকেই কিছু করতে হবে। আমি ওকে আবার বিয়ে দিবো। ওর জন্য ভালো একটা মেয়ে খুজে আনবো। যে ওই স্বার্থপর মেয়েটার কথা ওর মন থেকে ভুলিয়ে দিবে। আচ্ছা আমাদের তনুজা কে বউ করে আনলে কেমন হয়? (উৎফুল্ল হয়ে)
> জানিনা তোমার যা ভালো মনে হয় করো। আমি উঠছি। দেরিতে অফিসে গেলে তোমার ছেলে আমাকে অফিসে ঢুকতেই দিবে না। অফিসটাকে সে জেলখানায় পরিণত করেছে। সবাই ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপে বুঝেছো? (বিরক্ত হয়ে)
> বুঝবো না আবার।
খাবার শেষে দীলারা বেগম সোফায় এসে বসলেন। মনটা আজ বেশ ভালো। তনুজা মেয়েটা বেশ ভালো আর সুন্দরী,হৃদয়ে সাথে মানাবে ভালো।আর তনুজার অনেক পরিবর্তন হয়েছে সে আর আগের মতো অহংকারী নেই। দীলারা বেগম ফোনটা হাতে নিয়ে নিজের ভাইকে ফোন দিলেন,
> আসসালামু আলাইকুম ভাইজান কেমন আছেন ?
> ওয়ালাইকুম আসসালাম, আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুই কেমন আছিস?
> আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। ভাইজান আপনাকে একটা প্রস্তাব দিতে চাই আমি। প্লীজ আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না।।( অনুরোধ করে)
> কিন্তু কথাটা কি বলবি তো? আমার বোন চেয়েছে আর আমি ফিরিয়ে দিয়েছি এমন টা কখনও কি হয়েছে?
> ভাইজান আমি তনুজাকে আমার ছেলের বউ হিসেবে পেতে চাই। আপনি না করবেন না প্লিজ।
> কিন্তু হৃদয় কি মানবে?
> সে আমার উপরে ছেড়ে দাও। আমি দেখবো। তুমি শুধু আমাকে কথা দাও।
> আচ্ছা তুই আগে ওর সাথে কথা বল তারপর যা ইচ্ছা করিস
> জ্বী ভাইজান তাহলে রাখছি।
দীলারা বেগম মনে মনে ফন্দি আটলেন হৃদয় কে কেমন করে রাজি করানো যায় তার। অন্যদিকে হৃদয় অফিসে কাজ শেষ করে ক্লাবে গিয়ে বসলো কিন্তু আজ এখানে কিছুতেই ওর মন বসছে না। মনটা কেমন অশান্ত হয়ে আছে। বারবার না চাইতেই হৃদীতার কথায় মনে পড়ছে। হৃদয় ক্লাবে না থেকে বাড়িতে ফিরে আসলো। অনেক রাত করে ও বাড়িতে ফিরে তাই ওর জন্য কেউ অপেক্ষা করে না। আজও তার অন্যথা হয়নি। হৃদয় টলতে টলতে রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো। একটু পরে হঠাৎ ওর মনে হলো বন থেকে নিয়ে আসা সেই বই টা তো আর পড়া হলো না। হবেই বা কেমন করে হৃদীতার স্মৃতি ভুলে থাকার জন্য ওই টা তো ও ত্যাগ করেছে। ওই রুমে হৃদয় আর থাকে না। ওই রুমটা যেমন ফুল দিয়ে সাজানো ছিল তেমনি আছে এখনো। ফুলগুলো শুকিয়ে গেছে কিন্তু ঝড়ে পড়েনি হয়তো পড়বে সময়ের সাথে সাথে। হৃদয় বিছানা থেকে উঠে ড্রয়ার থেকে চাবিটা নিয়ে চলে গেলো সেই রুমে। হৃদয় কাঁপাকাঁপা হাতে দরজা খুলতেই কেমন একটা গরম হাওয়া বের হয়ে গেলো রুম থেকে। ভেতরে অনেক ধুলাবালি ও নাকে রুমাল চেপে ভেতরে গিয়ে দাঁড়ালো। এই রুমে ঢুকতেই ওর আবার সেই পুরানো দিনের কথা গুলো মনে পড়ে গেলো। ওর হাতে টর্চ জ্বালা আছে। এক হাতে টর্চ ধরে অন্য হাত দিয়ে বারান্দার দরজা খুলতেই এক ঝাক জোছনা ভেতরে হুড়মুড় করে প্রবেশ করে আলোকিত করে তুললো রুমটাকে। হৃদয় সব কিছুতেই হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর ভাবছে এমন কেনো করলে হৃদীতা। কি এমন ক্ষতি করেছিলাম তোমার যে তার এতবড় প্রতিশোধ নিলে। মানছি তোমাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি তাই বলে আমার সাথে এমন করলে?কথা গুলো ভেবে হৃদয়ের চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। হৃদয় ড্রয়ার খুলে বইটা বের করলো। বইটা যেমন মোড়ানো ছিল তেমন করেই রাখা আছে। হৃদয় ওটা নিয়ে দরজা আবার লক করে নিজের রুমে ফিরে আসলো। হৃদয় বইটার উপরের কাপড় সরিয়ে দেখলো উপরে সুন্দর করে একটা প্রাসাদের ছবি আঁকা আর তার সামনে কয়েকটা পরীর ছবি। হৃদয় বেশ কৌতূহলী হয়ে বই টা খুললো। উপরের কভারে লেখা একটা লাইন,”দৃষ্টির অগোচরে সে ” হৃদয় পরের পৃষ্টায় গেলো। এখানে থেকেই সূচনা পর্ব শুরু।
“অনেক বছর আগে পরীদের রাজ্যে সুন্দরী এক রাজকন্যার জন্ম হয়। সদ্য জন্ম নেওয়া অতুলনীয় সুন্দরী এই রাজকন্যার ভাগ্য রেখাতে কিছু খারাপ চিহ্ন দিয়ে কিছু ইঙ্গিত ছিল যেটা নিয়ে পরীর রানী বেশ চিন্তিত ছিলেন। উনি বুঝতেই পারছিলেন এই খারাপ চিহ্ন টা কিসের ঈঙ্গিত দিচ্ছে। জন্মের ঠিক দুপ্রহর বাদে পরীর রাজ্যের এক জ্যোতির্বিদ ওর ভবিষ্যৎ বানী করেন এই মূহুর্তে যদি ওকে মানুষের রাজ্যে রেখে না আসা হয় তবে ওর মৃত্যু হবে। কারণ ও মানুষের মতো সাধারণ হয়ে জন্ম নিয়েছে। আঠারো বছর না হলে ও পরীর শক্তি ফিরে পাবে না। ওর ললাটে এই আঠারো বছর কোনো সুখ নেই আছে দুঃখ। ওকে ওর এই দুঃখ ভোগ না করা পযর্ন্ত ওর মুক্তি হবে না। ওর জন্ম বিশেষ একটা কারণে হয়েছে যেটা সময় হলেই সবাই বুঝতে পারবে। কিন্তু এখন ওকে রেখে আসতে হবে মানুষের মাঝে। পরীর রানী পড়লেন মহা বিপদে। একমাত্র মেয়েকে উনি কোথায় রেখে আসবেন আর কে বা ওকে পালবে?।তারপর উনি ভাবলেন মেয়েকে কিছু অর্থ মনিমুক্তা দিয়ে কোনো বড়লোকের বাড়িতে রাখবেন কিন্তু এমন টা করতে মানা করলেন জ্যোতির্বিদ। উনি ওকে কোনো এতিমখানা বা ধর্মীয় উপাসনালয়ের সামনে রাখতে বললেন।আর ওকে কোনো সাহায্য করতেও মানা করলেন। ওকে পরীর রানী সেখানেই রেখে গেলেন। মেয়েটা সেই থেকে মানুষের মধ্যেই বড় হতে থাকলো। মেয়েটার গলাই একটা লকেট দিয়ে তাতে ওর নাম লিখে দেওয়া হলো। আর বলা হলো সময় আসলে ও নিজেই নিজের পরিচয় পেয়ে এই রাজ্যে ফিরে আসবে। একমাত্র রাজকন্যা কে হারিয়ে পরীর রানী একদম ভেঙে পড়লেন। পরীর রাজ্যের ছন্দ পতন ঘটলো কিছুই আর আগের মতো ছিল না। এর মধ্যেই অন্য এক বিপদ দেখা দিলো। এক খারাপ জ্বীন পরীর রাজ্য আক্রমণ করে পরীদেরকে পাথরে পরিণত করলেন। পরীরা সবাই এখন পাথর। তবে পরীদের শরীর পাথর হলেও ওদের আত্না পাথর হয়নি। ওরা অপেক্ষা করছে সেই রাজকন্যার জন্য যে মানুষের পৃথিবীতে বড় হচ্ছে। ও যদি নিজের শক্তি ফিরে পেয়ে এই রাজ্যে পা রাখে আর পরীর রানীকে ছুয়ে দেই তবে তাঁরা আবার পাথর থেকে নিজেদের রুপে ফিরে আসবে। পরী রাজকন্যা শক্তি ফিরে পেয়ে তার অতীত কে ভুলে যাবে সে হয়ে উঠবে পরীর রাজ্যের রানী।
( গল্প টা কিন্তু কাল্পনিক। হৃদীতার কাহিনী পড়ে আমাকে আবার গালি দিয়েন না যে লাবণ্য গাঞ্জা সেবন করে গল্প লিখেছে।)
হৃদয় বইটা পড়ে কিছুই বুঝলো না। সেই মেয়েটা বলেছিল এই বইটা পড়লে নাকি ও সব কিছুই বুঝতে পারবে কিন্তু ও তো কিছুই বুঝলো না। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ হৃদয়ের সেই স্বপ্নের কথা মনে পড়ে গেলো। ওতো দেখেছিল একটা প্রাসাদে সবাই পাথর হয়ে আছে। দেখে মনে হয়েছিল এরা একটা পরিবারের প্রতিচ্ছবি। তাহলে কি ও সেই পরীররাজ্য কে স্বপ্নে দেখেছিল। আর তারপর ওর যখন পানি পিপাসা পিয়েছিল তখন হৃদীতা ওকে পানি দিয়েছিল। হৃদয় মাথা খাটাতে লাগলো ওর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো পরপর মনে করার চেষ্টা করছিল।। হৃদীতা যখন ওর সাথে ছিল তখন ওর সাথে সব সময় অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতো কিন্তু ও চলে যাবার পর আর কিছুই ঘটেনি তার মানে হৃদীতা সেই পরী রাজকন্যা ছিল? যার ওই বিয়ের রাতেই আঠারো বছর পূর্ণ হয়েছিল আর আমাকে ভুলে ও নিজের রাজ্যে ফিরে গেছে? হৃদয়ের মাথায় সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ও এই সব বিশ্বাস করেনা। এমন আজগুবি গল্প কেমন করে বিশ্বাস করা যায়। বিশ শতাব্দীতে এসে জ্বীন পরীর এই আজগুবি গল্পগুলো গল্প উপন্যাসেই শুধু মানায় বাস্তবে না। হৃদয় আর কিছু ভাবতেই চাই না। যা হয়েছে হয়েছে আর কিছু ভেবে কি লাভ হবে। ক্ষতি তো ওর হয়েছে। একজন বেইমান স্বার্থপর কে ভালোবেসে ও ঠকেছে। হৃদয় দাঁতে দাঁত রেখে বইটা টেবিলে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। আজ ওর কিছুতেই ঘুম আসবে না কিন্তু চেষ্টা তো করতে হবে। আর কতোরাত এভাবে না ঘুমিয়ে কাটাবে। হৃদয় বিছানায় এপাশ ওপাশ করলো কিন্তু আজও ঘুম আসলো না। শেষে ও উঠে পড়লো। ফজরের আযান হয়ে গেছে। হৃদয় নামাজ পড়ে বাইরে এসে নিজেই এক কাপ চা তৈরী করে ছাদে চলে আসলো। ও হৃদীতাকে ঘৃণা করে কিন্তু ওর দেওয়া অভ্যাস টাকে রপ্ত করে ফেলেছে। হৃদয় সকালে নামাজ পড়ে চা নিয়ে প্রতিদিন ছাদে চলে যায়। তারপর চারদিকে আলো ফুটলে নিচে নেমে আসে। আজও তার অন্যথা হলো না। হৃদয় চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দূরে তাকিয়ে আছে। এই কয়েক বছরে হৃদয় অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আগে এলোমেলো ভাবে চলাফেরা করতো কিন্তু এখন আর তেমন না তার বিপরীত হয়েছে। রুটিন মাফিক জীবনের সাথে ওর পরিচয় ঘটেছে। হৃদয় চা শেষ করে নিচে আসলো। রেডি হয়ে অফিসে যেতে হবে তাই। হৃদয় গোসল করে অফিসের ড্রেস পড়ে নিচে নেমে এসে খাবার টেবিলে গম্ভীর হয়ে বসলো। তন্ময়া এখন বাড়িতে থাকে না। ও পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে থাকে। পরিক্ষা শেষ তাই কয়েকদিনের মধ্যেই ও দেশে চলে আসবে। হৃদয়ের প্লেটে খাবার দিয়ে দীলারা বেগম গম্ভীর মুখে বললেন,
> আমি তো কি হই?
> এটা আবার কেমন প্রশ্ন আম্মু? তুমি জানো না তুমি আমার কে?( খাবার মুখে নিয়ে )
> না আমি জানি না। তুই আমার ছেলে হলে অবশ্যই আমার কথা মানতি।
> সকাল সকাল কি শুরু করেছো বলবে? কি চাই তাই বলো এতো ড্রামা না করে।( বিরক্ত হয়ে)
> বিয়ে চাই, আমি চাই তুই বিয়ে…
(দীলারা বেগম এই পযর্ন্ত বলে আর বলতে পারলেন না তার আগেই হৃদয় বলে উঠল)
> তুমি কী আব্বুকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ভাবছো? আব্বুকে ছেড়ে আবার বিয়ে করবে? আচ্ছা করতেই পারো আমার কোনো সমস্যা নেই। এমনিতেও তোমাদের বনিবনা হয়না তেমন সিদ্ধান্ত টা খারাপ না ভালো।
> বাজে কথা কে বলছিস হৃদয়? আমি এই বুড়ো বয়সে বিয়ে করবো তোকে কখন বললাম? আমি তোর বিয়ের কথা বলছি। তোর মামার সাথে কথা হয়েছে তনুজার সাথে তোর….
দীলারা বেগমের কথা আর এগোতে পারলো না। তার আগেই হৃদয় হাতের মুঠ শক্ত করে রাগ করে উঠে দাঁড়িয়ে হুঙ্কার ছেড়ে বলল,
> আমি ওকে পছন্দ করি না। তুমি জানোনা ও কি করেছিল হৃদীতার সাথে? তুমি আবার ওকে এই বাড়িতে নিয়ে আসতে চাইছো? আমি অফিসে যাচ্ছি আজ বাড়িতে ফিরবো না।
হৃদয় দীলারা বেগমকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে হনহন করে বাইরে চলে আসলো। মেজাজ ওর প্রচণ্ড খারাপ। ওর জানা আছে মা তার সন্তানের ভালো চাই কিন্তু ওই মেয়েকে বিয়ে করলে কখনও ও ভালো থাকবেই না। মেয়েটা একটা মুখোশধারী। হৃদয় কখন আর বিয়ে নামক নাকামীর সাথে জড়াতে চাই না। হৃদীতার মতো সহজ সরল একটা মেয়ে যদি ওকে ঠাকাতে পারে তাহলে অন্যগুলো তো পারবেই। দরকার নেই কাউকে। নিজের জীবন নিয়ে ও সুখে আছে আর থাকবে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ও অফিসে চলে আসলো। কিন্তু আজ ও কিছুতেই কাজে মন দিতে পারছে না। তবু কষ্টে হলেও কাজ শেষ করতে হবে। কাজের মধ্যেই বিকালে হঠাৎ ওর ফোনে একটা ফোন আসলো। হৃদয় ফোনটা কানে ধরতেই কুসুম কাঁদতে কাঁদতে বলল,
> হ্যালো ভাইজান খালা আম্মা খুব অসুস্থ। এইমাত্র হসপিটালে নিয়ে এসেছি আপনি চলে আসেন।
কথাটা শুনে হৃদয়ের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।ও ফোন রেখে দৌড়ে হসপিটালে চলে আসলো। দীলারা বেগমের জ্ঞান নেই। উনাকে সেলাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।ওর বারবার মনে হচ্ছে সকালে ওমন না করলেই পারতো। কি হবে এখন? সব কিছু ওর জন্য হয়েছে নিজেকে দোষী মন হচ্ছে। হৃদয় কে এমন করতে দেখে ডাক্তার ওকে নিয়ে গেলো বাইরে।
> হৃদয় তোমার মা ঠিক আছেন। হঠাৎ পেশার টা বেড়েছিল তাই এমন হয়েছে। চিন্তা করার কিছু হয়নি। যাও মায়ের কাছে গিয়ে বসো। সকালে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবে ঠিক আছে?
> কোনো সমস্যা হবে না তো আঙ্কেল?
> বয়স হয়েছে সমস্যা তো একটু তো থাকবেই। চিন্তা করো না। আমি আসছি তো ইনশাআল্লাহ কিছু হবে না।।
পাশে রাখা চেয়ারে হৃদয় মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। সব কিছু ওই মেয়েটার জন্য হয়েছে। ওই মেয়েটা যদি ওর জীবনে না আসতো তাহলে এমন কিছুই হতো না। হৃদয় মুখ কঠিন করে বিড়বিড় করে বললো আমি আর নিজের কথা ভববো না। মায়ের মুখের হাসির জন্য তনুজাকেই বিয়ে করে নিবো। কথা গুলো ভেবে হৃদয় দীলারা বেগমের কেবিন উঁকি দিয়ে বাইরে চলে আসলো।হৃদয় হসপিটালের সামনে হাটতে হাঁটতে আনমনে ভাবছে। চারদিকে কেমন নির্জন হয়ে গেছে। এই রাস্তায় রাত নয়টার পর এমন নির্জনতা নেমে আসে। হৃদয়ের একা থাকার প্রয়োজন ছিল তাই বাইরের হাওয়ায় একটু হাঁটাহাঁটি করছে।রাস্তার পাশে ল্যামপোষ্টের আলো জ্বলছে আর আজ পূর্ণিমা রাত তাই চাঁদের আলোতে আলোকিত হয়ে আছে চারদিক। এমনি রাতে যার প্রেয়সীর সাথে হাত রেখে চাঁদ দেখার কথা ছিল সেকিনা আজ নির্জন রাস্তায় নিজের সুখ খুঁজে চলেছে হয়রান হয়ে কথাটা মনে মনে ভাবছে ও। কিন্তু হঠাৎ ওর ভাবনার অবসান ঘটলো দ্রুত বেগে ছুটে আসা একটা ট্রাকের শব্দে। হৃদয় সরতে পারছে না।। গাড়িটা হঠাৎ ওর একদম কাছে এসে ধাক্কা দিবে এমন সময় কেউ একজন বিদ্যুৎ এর গতিতে ওকে সরিয়ে নিলো।
(ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। গল্পটা কাল্পনিক তাই ভালো না লাগলে বাজে মন্তব্য না করে ইগনোর করুন)