দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_২২
#কলামে_লাবণ্য_ইয়াসমিন
হৃদয় ট্রাকের সাথে ধাক্কা লাগতে লাগতে বেঁচে গেলো। ও চোখ বন্ধ করে আছে এখনো। কিছুক্ষণের মধ্যে এখানে যেনো ঝড় বয়ে গেলো। গাড়ি টা ওর পাশ দিয়ে ঝড়ের গতিতে হুস করে চলে গেলো। বুকের মধ্যে কেমন কেঁপে উঠেছিল হঠাৎ ট্রাক দেখে। মনে হয়েছিল এই বুঝি জীবনের ইতি হলো। কিন্তু এমন কিছুই হলো না। কেউ একজন ওকে বাঁচিয়ে দিলো। হৃদয় ভাবতে ভাবতে চোখ খুলে তাকালো। আশেপাশের কেউ নেই। চারদিকে যেমন নির্জন ছিল তেমনি আছে। হৃদয় অবাক হলো ওর একদম ভালো করেই মনে আছে কেউ এসে ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিয়েছিল কিন্তু তাকে ও দেখতে পাইনি। লোকটা হঠাৎ এসে আবার হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলো? হৃদয় ভালো করে আশপাশ দেখলো কিন্তু কেউ নেই। ও কিছু দূরে এগিয়ে এসে দেখলো একটা মেয়ে রাস্তা ধরে সামনের দিকে হেঁটে চলে যাচ্ছে তাই ও মেয়েটাকে চিৎকার করে ডাকতে ডাকতে দৌড়ে গেলো কিন্তু তার আগেই মেয়েটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। হৃদয় হতাশ হয়ে ফিরে আসলো হয়তো মেয়েটা ছিল না অন্যকেউ ছিল ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিলো। ও হসপিটালে ফিরে এসে দীলারা বেগমের কেবিনে যেতেই দেখলো ওর বাবা আর তনুজা বসে আছে। হৃদয় কে দেখে তনুজা হাসি মুখে কথা বলার জন্য তাঁকালো কিন্তু হৃদয় ওকে পাত্তা না দিয়ে ওর বাবাকে বলল,
> তোমারা এখন বাড়িতে চলে যাও আমি সকালে আম্মুকে নিয়ে ফিরবো। এখানে ভিড় করে লাভ নেই। আমি আছি তবুও সব লোকজন নিয়ে চলে এসেছো? (বিরক্ত হয়ে)
> আমার বাড়িতে গিয়ে টেনশনে ঘুম আসবে না। অস্থির লাগবে। আমি এখানেই থাকি না। (মন খারাপ করে)
> আম্মুর কিছু হয়নি এখানে থেকে সবাই মিলে অসুস্থ হতে চাইছো নাকি? আমি ড্রাইভার কে বলেছি গাড়ি আনতে। তোমরা বাড়িতে যাও। আর ওকে কে এখানে এনেছে?( রাগ করে)
> হৃদয় আমি নিজেই এসেছি। ফুপি এমন অসুস্থ আর আমি আসবো না তাই কি হয়। প্লীজ আমাকে তাড়িয়ে দিও না। আমাকে ফুপির সেবাযত্ন করতে দাও। ফুপি সুস্থ হলেই আমি চলে যাবো কথা দিচ্ছি। (কান্না করে)
হৃদয়ের বিরক্ত লাগছে এমন এই নেকামী মার্কা কান্নাকাটি করা দেখে। তবুও কিছু বললো না। হসপিটালে চারদিকে লোকজন আছে সবাই খারাপ ভাববে তাই। হৃদয়ের বাবা ওদের দুজন কে রেখে চলে গেলো বাড়িতে। তনুজা দীলারা বেগমের মাথার কাছে বসে আছে আর হৃদয় বাইরে একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে আছে।ওর প্রচণ্ড মাথায় যন্ত্রণা করছে। একটু ঘুমাতে পারলে হয়তো ভালো লাগতো কিন্তু কোথায় ঘুমাবে।মাকে ফেলে বাড়িতে যাওয়া ওর পক্ষে সম্ভব না। এমন করে অনেক সময় পার হলো। প্রায় শেষ রাত ঠান্ডা বাতাসে ওর শীত শীত করছে। হৃদয় চেয়ারেই ঘুমিয়ে পড়েছে। হঠাৎ কারও স্পর্শে ওর ঘুম ভাঙলো। হৃদয় ভ্রু কুচকে তাঁকিয়ে দেখলো তনুজা ওর গায়ে একটা কাপড় দিয়ে মাথায় হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। হৃদয়ের এবার ভীষন রাগ হয়ে গেলো। ওক তো ওর ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছে তার উপর আবার এসেছে আলগা পিরিত দেখাতে। হৃদয় রাগ কন্টোল করতে না পেরে উঠেই টেনে ওর গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। তনুজা মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলছে। হৃদয় ওর দিয়ে আঙ্গুল তুলে শাসিয়ে বলল,
> আর একবার যদি আমার আশেপাশের আসার চেষ্টা করেছিস তাহলে কিন্তু আমি তোকে খুন করে ফেলবো। তোকে বলেছি আমি আমার শীত করছে চাদর দিয়ে যা? (রাগ করে)
> আমি তোমার ভালো চাই হৃদয়। আমি তোমাকে সুখী দেখতে চাই।তোমার শীতে কষ্ট হচ্ছে দেখে চাদর টা আমি নিয়ে এসেছিলাম।( মাথা নিচু করে)
> তোর মতো মিথ্যাবাদী অহংকারী মেয়ের থেকে ভালো কিছু আমি আশকরি না বুঝলি। তুই যা যা করেছিস সব আমার মনে আছে। (চিৎকার করে)
> কি করেছি আমি। যা করেছিলাম তোমার ভালোর জন্য করেছিলাম। আমার কথা শুনলে সেদিন তোমাকে আজ এতোটা কষ্ট পেতেই হতোই না। ওই চরিত্রহীন খারাপ মেয়েটা তোমাকে ঠকাতে পারতো না। (রেগে)
হৃদয়ের এবার রাগে মাথায় আগুন জ্বলছে। হৃদীতার নামে খারাপ কথা শুনলে ও নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। হৃদয় ওর গালে পরপর দুইটা থাপ্পড় দিয়ে বলল,
> ওকে নিয়ে আর একটা বাজে কথা বললে আমি তোকে এখুনি খুন করবো। তুই সকাল হলেই এখান থেকে চলে যাবি। তোকে আমি দেখতে চাই না। আর হৃদীতা আমার বউ তাই আমার উপরে ওর অধিকার আছে। ও আমাকে ভালোবাসবে, কষ্ট দিবে,ছেড়ে চলে যাবে,ইচ্ছা হলে চলে আসবে, ওর মন যা চাই তাই করবে তাতে তোর কি? তুই কে ওকে নিয়ে বাজে কথা বলার? (ধমক দিয়ে )
> হৃদয় দেখো ও তো চলে গছে। যে চলে যায় তাকে ভুলে গিয়ে নতুন করে পথ চলতে হয়। যে তোমার সামনে আছে তাকে নিয়ে বাকী জীবন চলতে হবে তোমাকে।( নরম কন্ঠ )
> ও রিয়েলী? তুই দেখি একদম পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিস। তোকে একটা কথা বলি শোন হৃদীতাকে আমি মুখে মুখে ঘৃণা করি কিন্তু মন থেকে ভালোবাসি অনেক। ওর স্মৃতি নিয়েই আমি বাকী জীবন পার করবো ইনশাআল্লাহ। তোর এসব ভেবে কাজ নেই। ফালতু সময় নষ্ট করছি আমি তোর সাথে কথা বলে,দূর।
হৃদয় ঝাড়ি দিয়ে চলে আসলো। এই মেয়েটা কখনও ভালো হবে না এমন থেকেই যাবে। হৃদয় কেবিনে এসে দরজা বন্ধ করে মায়ের পাশের বেডে শুয়ে পড়লো। ওকে চলে যেতে দেখে তনুজা চোখের পানি মুছে ফিরে এসে রুমে ঢুকতে গেলো কিন্তু দরজা বন্ধ। তনুজা বুঝলো ওকে বাকীরাত টা বাইরেই কাটাতে হবে। ওর এতে কোনো কষ্ট নেই বরং ভালোলাগবে। ও একটু একটু করে হৃদয়ের মনে নিজের ভালোবাসা তৈরি করে নিবে। ও তো চেয়েছিল হৃদয় কে নিজের করে পেতে। যবে থেকে ও ভালোবাসা কি বুঝতে শিখেছে তবে থেকেই ও হৃদয় কে ভালোবাসে। বয়সে ছোট হওয়া সত্ত্বেও ও কখনও হৃদয় কে ভাইয়া ডাকেনি বরং নাম ধরে ডেকেছে। যখন ও শুনেছিল হৃদয় বিয়ে করে ফেলেছে সেদিন ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। তবে একটা আশায় আলো ছিল যে একটা কাজের মেয়ের প্রতি হৃদয়ের ভালোবাসা কখনও আসবে না সব কিছু দুদিনের মোহ। দুদিন পরেই মেয়েটাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে কিন্তু পরে তেমন কিছুই হচ্ছে না দেখে ও নিজেই হৃদীতাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবার পরিকল্পনা করে কিন্তু সব চেষ্টা বিফল হয়ে যায় হৃদয়ের জন্য। আজ যখন সুযোগ এসেছে ও এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাই। হৃদয় কে বিয়ে করে ও এই বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়ে রাজরানী হতে চাই। তনুজা বাইরে বসে বসে কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই সকাল হয়ে গেলো। চারদিকে আলো ফুটতেই জনশূন্য হসপিটাল আবার গমগম করতে শুরে করলো। তনুজা উঠে ডাক্তারের সাথে কথা বলে রিলিজ করে নিলো দীলারা বেগম কে। তারপর কেবিনে এসে দেখলো হৃদয় দরজা খুলে বাইরে আসছে। তনুজা ওকে বাইরে যেতে দেখে বলল ও সবটা করে নিয়েছে। হৃদয় ওর কথায় উত্তর না করে বাইরে বের হয়ে গেলো। তনুজা ভেতরে ঢুকতেই দীলারা বেগম হাসি মুখে বলল,
> আম্মা শুভ সকাল।
> শুভ সকাল ফুপি। তুমি এখন কেমন আছো? (হাসি মুখে)
> আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো আছি। কিন্তু তুই কখন এসেছিস? এতো সকালে বাইরে থেকে আসছিস?
তনুজা সবটা খুলে বলল রাতে যা যা হয়েছে। সব শুনে দীলারা বেগম ওকে সান্ত্বনা দিলো। বলল সব ঠিক হয়ে যাবে। উনি বাড়িতে একা থাকেন তাই তনুজাকে উনি সাথেই রাখার প্লান করলেন। হৃদয় বাইরে গিয়ে ড্রাইভার কে গাড়ি আনতে বলে কেবিনে ফিরে এসে দীলারা বেগম কে নিয়ে গেলো। বাড়িতে পৌঁছে হৃদয় ওর মাকে রুমে রেখে নিজের রুমে চলে আসলো। তারপর ফ্রেস হয়ে অফিসের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো। আজ একটা মিটিং আছে, মিটিং টা একটা রেস্টুরেন্টে হবে।।ও ম্যানেজারকে বলে রেখেছে এই ডিলটা ওর নিজেই করতে চাই তাঁর জন্য সব ব্যবস্থা করতে। রেস্টুরেন্টের টেবিল বুকিং দেওয়া আছে। হৃদয় অফিসে গিয়ে বাকী কাজ গুলোতে মনোযোগ দিলো। কিন্তু এর মধ্যেই ম্যানেজার এসে জানালো মিটিংয়ের টাইম চেঞ্জ করা হয়েছে। একটা বিশেষ কারণে মিটিং দুইটা থেকে বাদ দিয়ে পাঁচটার সময় করা হয়েছে। হৃদয় বারবার বাড়িতে ফোন করে মায়ের খোঁজ নিচ্ছে। পৃথিবীতে মায়ের থেকে আপনার কেউ হয়না। বাবা ও আপন কিন্তু মায়ের মতো নয়। হৃদয় অফিসের কাজকর্ম শেষ করে মিটিংয়ে জন্য বের হলো। সাথে ম্যানেজার সুদিপ আছে কিন্তু সে চুপ করে আছে। হৃদয়ের সাথে থাকতে থাকতে এই লোকটাও কেমন গম্ভীর হয়ে গেছে।হৃদয় ওকে যা বলে ও তাই করে। হৃদয় এই জন্য ওকে সব থেকে বেশি পছন্দ করে। রেস্টুরেন্টে ঢুকেই হৃদয় নিজেদের বুকিং করা টেবিলে চলে গেলো। ওখানে আগে থেকেই দুজন লোক ওর জন্য অপেক্ষা করছিল। হৃদয় খুব মনোযোগ দিয়ে ওদের সাথে কথা বলছে আর ফাইল গুলো দেখছে। এখানে বেশ থমথমে পরিবেশ। আশেপাশে ও লোকজন আছে কিন্তু তেমন সাউন্ড নেই। সামান্য একটু দূরে একদল সুন্দরী মেয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে আর হাসছে। হৃদয় মাঝে মাঝে বিরক্ত হচ্ছে আর ভ্রু কুচকে তাঁকিয়ে দেখছে। এই মেয়েগুলো মাঝেমাঝে চিৎকার করে উঠছে। হৃদয় ম্যানেজারকে ইশারা করলো ওদের গিয়ে বলতে চুপ করতে। হৃদয়ের ইশারা বুঝে সুদিপ উঠে চলে আসলো। মেয়েগুলো কারও জন্মদিনের প্লান করছে। সুদিপ গিয়ে দাঁড়ালো মেয়েগুলোর পেছনে। তারপর অত্যন্ত বিনীত সুরে বলল,
> আপনারা একটু হৈচৈ কম করলে আমাদের একটু সুবিধা হতো আর কি। আমাদের একটা মিটিং চলছে।
ওর অনুরোধ শুনে মেয়ে গুলো চুপ করলো। ওরা জানালো আর এমন হবে না। সুদিপ মেয়ে গুলোর সাথে কথা বলে ফিরে এসে কাজে মনদিলো। ওদের মিটিং শেষ হতে হতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসলো। এখন খাবার খেয়ে বিদাই নেওয়ার পালা। হৃদয় খাবার অর্ডার দিয়ে ফাইল গুলো সুদিপের কাছে দিতেই হঠাৎ একটা মেয়ের চিৎকারের শব্দে ওর হাত থেমে গেলো। মেয়েটা চিৎকার করে কাউকে ডাকছে। হৃদয় ফাইলটা সুদিপের হাতে ছেড়ে দিয়ে পেছনে ফিরে তাঁকিয়ে দেখলো একটা মেয়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। ওকে দেখে হৃদয় দৌড়ে চলে আসলো কিন্তু ওর আসতে দেরী হয়ে গেলো। তাঁর আগেই মেয়েটা একটা গাড়িতে উঠে বসলো। হৃদয় তাড়াতাড়ি মেয়েটার গাড়ির পেছনে ফলো করতে থাকলো। শহরের রাস্তায় হাজার হাজার গাড়ি চলছে। এতোগুলো গাড়ির মধ্যে সেই সাদা রঙের গাড়িটা কেমন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলো হৃদয় বুঝতেই পারলো না। তাই ও রেস্টুরেন্টের দিকে গাড়ি ফিরিয়ে আনলো। ওর মনে অন্যকিছু চলছে। রেস্টুরেন্টের সিসি টিভি ফুটেজ চেক করলেই সবটা জানা যাবে। হৃদয় তাড়াতাড়ি ফোন বের করে সুদিপকে বলল এখুনি রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে ফুটেজ দেখানোর জন্য ও এখুনি পৌঁছে যাবে। সুদিপের জানা নেই হৃদয় কেনো এমন করছে। তবুও ও ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে গেলো। ওর কথা বলতে বলতেই হৃদয় হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। হৃদয় এসেই বসে গেলো ল্যাপটপ নিয়ে। ও একঘন্টা আগের ভিডিও দেখছে।ও যখন এখানে আসে তখন থেকে শুরু।
ভিডিও তে দেখা যাচ্ছে হৃদয় আর সুদিপ এখানে এসে বসতেই পেছনে কয়েকজন মেয়ে গিয়ে বসলো পাশের টেবিলে। হৃদয়ের চোখ ফাইলের দিকে। তার কিছুক্ষণ পরে সুদিপ ওখানে গিয়ে মেয়ে গুলোকে চিৎকার করতে মানা করে ফিরে আসলো। কিন্তু তারপর একটা মেয়ে নীল গাউন পরে ভেতরে আসলো। তার মুখটা দেখে হৃদয়ের পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো। মনে হলো বড়সড় একটা ভূমিকম্প হলো ওর চারপাশে।।হৃদয় বিড়বির করে একটা নাম উচ্চারণ করে উঠলো। ভিডিও তে চলছে হৃদয়ের পাশ দিয়ে মেয়েটা গিয়ে ওই টেবিলে বসে কথা বলেই ওদেরকে নিয়ে বেরিয়ে আসলো। তারপর হৃদয় ওদের পেছনে পেছনে ছুটছে। হৃদয় এই পযর্ন্ত দেখে ফুটেজ টা নিজের ফোনে নিয়ে নিলো। তারপর ওই টেবিলে যে খাবার পরিবেশ করেছে তাকে ডাকতে বললেন। সুদিপ মাথা নেড়ে কাজ করছে কোনো প্রশ্ন করছে না। হৃদয় পাগলের মতো করছে। ওর মাথায় কাজ করছে না। যার জন্য ওর জীবন এমন মাঝ রাস্তায় থমকে গেছে সে আবার ওর জীবনে ফিরে এসেছে। ওর জীবনে কি এই শহরে ফিরে এসেছে। হৃদয় ওকে এমন করে ছেড়ে দিতে পারেনা। ওর কাছে হৃদয়ের অনেক কিছূ জানার আছে। মেয়েটা কেনো এমন করলো ওর জানতে হবে। ওর কি দোষ ছিল কি জন্য ওকে এমন শাস্তি দিয়েছে ওর সবটা জানা প্রয়োজন। ওই মেয়েটাকে ও কখনো ক্ষমা করবে না। হৃদয় কথা গুলো ভাবছে তখনই সুদিপ সেই ছেলেটাকে ওর সামনে দাঁড় করালো। হৃদয় কঠিন গলায় বলল,
> ওই মেয়ে গুলোকে তুমি চিনো?
> জ্বী স্যার চিনি তবে মুখ চেনা,পরিচয় জানিনা। মেয়ে গুলো আসে আবার চলে যায়। ওরা বেশিরভাগ সময় রাতে আসে কিন্তু আজ সন্ধ্যায় এসেছিল।
> ওরা কি প্রতিদিন আসে?
> জ্বী না। কখনও কখনও প্রতিদিন আসে আবার কখনও দুদিন আসে ও না। মেয়ে গুলো খুবই ভালো। ওর মধ্যে একটা মেয়ের জন্মদিন আগামীকাল তাই ওরা এখানে একটা ছোটখাট অনুষ্ঠান করবে। দুই ঘন্টার জন্য কাল ওরা এই রেষ্টুরেন্ট ভাড়া নিয়েছে।
> আচ্ছা তুমি যাও। সুদিপ তুমি ওকে কিছু টাকা দিয়ে দাও।আর ম্যানেজারের সাথে কথা বলে আগামীকাল আমার এখানে আসার ব্যবস্থা করো। আমি এখানে আসতে চাই। তুমি থেকে সব ব্যবস্থা করে তবেই ফিরবে।আমি এখন আসছি।
হৃদয় কথা গুলো একদমে শেষ করে গাড়িতে এসে বসলো। মাথাটা হঠাৎ করেই কেমন বনবন করে ঘুরছে ওর। সব কিছু কেমন এলোমেলো লাগছে। হৃদয় জঙ্গলের মধ্যে গাড়ি থামিয়ে নেমে এসে গাড়ির উপরে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লো। ওর ইচ্ছা করছে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে। সামান্য একটুখানি ভুলের জন্য ওকে দুবছর কষ্ট করতে হয়েছে। হৃদয় এর প্রতিশোধ অবশ্যই নিবে। ওকে ধোকা দিয়ে পারপাওয়া এতো সহজ নয়। কি ভেবেছিল মেয়েটা হৃদয় কে এমন কষ্ট দিলেই হৃদয় মরে যাবে কখনও না। কথা গুলো এলোমেলো ভাবে বিড়বিড় করে বলছে হৃদয় আর ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে গাড়ির উপরে গিয়ে পড়ছে। ওর সারারাত এভাবেই কাটালো। তারপর ফজরের আযান দিলে ওখানে থেকে এসে মসজিদে নামাজ পড়ে বাইরে আসলো। আজ ওর বাড়িতে যেতে মন চাইছে না তাই বাড়িতে ফোন দিয়ে বলে দিলো কাজ আছে ফিরতে পারবে না। আর ও অফিসেও গেলো না। সেই রেস্টুরেন্টের গিয়ে বসলো। আজ ও এখানেই থাকবে।এখানে সারাদিন হৃদয় বসে আছে।এই সারাদিনে ও প্রায় একশো কাপের উপরে কফি খেয়ে ফেলেছে। সময় যেনো কিছুতেই পার হচ্ছে না। বারবার ফোন আসছিলো তাই ফোনটা ও বন্ধ করে রেখেছে। সুদিপ কে বলে রেখেছে বাড়ি থেকে ফোন দিলে যেনো বলে দেই একটা বিশেষ কাজের জন্য ও বাইরে গেছে। ফিরতে দেরী হবে চিন্তা না করতে। এমন করেই ওর সারাদিন পার হলো। সন্ধ্যার পর থেকে এখানে লোক আসতে মানা করা হচ্ছে আর সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে সব কিছু। হৃদয় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। তারপর ঠিক এগারোটার সময় হৃদয় ভেতরে এসে রেস্টুরেন্টের ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো। ও ফুটেজ দেখছে।
এগারোটার পরেই এক ঝাক সুন্দরী মেয়ে হাতে নানা রকমের ফুল নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। ওরা এসে একটা টেবিলে বসে নানা রকম কথাবার্তা বলে মজা করছে আর হাসাহাসি করছে। ওরা কারো জন্য অপেক্ষা করছে মনে হচ্ছে। ঠিক বারোটার একটু আগে সেই সাদা রঙের গাড়িটা এসে থামলো রেস্টুরেন্টের সামনে। তারপর দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষ টা। হৃদয়ের এখুনি ওর সামনে যেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু যাবে না ও। দেখতে চাই এখানে আরও কি হয়। মেয়েটা হাসি মুখে ভেতরে এসে সবাইকে হাক করে কেকের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মেয়েরা সবাই এখন আর বসে নেই ওরা ড্রান্স করছে। তারপর বারোটার সময় সবাই মিলে মেয়েটাকে ইউস করে কেক কাটলো। কেক কেটে যখন ও পাশের মেয়েটার মুখে দিতে গেলো তখনই হৃদয় ওর পাশে গিয়ে ওর হাত ধরে নিজের মুখে নিয়ে নিলো। ওর এমন কান্ড দেখে উপস্থিত সবাই অবাক। এই ছেলেটা এখানে কি করছে ওদের মাথাতেই আসছে না। হৃদয়ের হাত থেকে মেয়েটা নিজের হাতটা টেনে নিতে চাইছে কিন্তু হৃদয় ছাড়ছে না। ও জোর করে মেয়েটাকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসলো। কিন্তু বাকি মেয়েগুলো কিছু বলছে না। ওর পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে অথর্বের মতো দাঁড়িয়ে আছে। হৃদয় ওকে গাড়িতে বসিয়ে ওর দুহাত বেধে দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিলো। মেয়েটা এবার মুখ খুলল,
> আমাকে ছেড়ে দিন নয়তো কিন্তু আমি আপনার ক্ষতি করে দিবো।
>এই দুবছরে আমার অনেক ক্ষতি তুমি করে দিয়েছো। নতুন করে আর কি করবে হৃদীতা?
(নেন ফিরিয়ে দিলাম আপনাদের হৃদীতাকে। এতো হুমকি ধামকী আর সহ্য হলো না। ভেবেছিলাম হৃদয়ের একটা বিয়ে দিয়ে দিবো তা আর হলো না আপনাদের জন্য। )
> আমি আপনাকে চিনি না। আপনি আমার হাত কেনো বেধেছেন? প্লীজ ছেড়ে দিন।
> আমার সাথে নাটক করছো তুমি। তোমার নাটক করা আমি বের করে দিবো। আমাকে চিনতে তুমি ভুল করেছো। অনেক ভালো ছিলাম আমাকে খারাপ হতে তুমি বাধ্য করেছো। (ধমক দিয়ে )
> এমন কেনো করছেন আপনার কথা আমি বুঝতে পারছি না। প্লীজ বোঝার চেষ্টা করুন আমাকে। আমি চাইলে কিন্তু অনেক কিছুই হতে পারে আপনার জন্য সেটা খুবই খারাপ হবে। আমি চাইনা আপনার খারাপ কিছু হোক।
> তাকি নাকি? খারাপ তো আজ আমি তোমাকে বোঝাবো। মনে আছে সেই বাগান বাড়ির কথা?
(ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। এটা একটি কাল্পনিক গল্প তাই ভালো না লাগলে ইগনোর করুন )