ফেরা পর্ব-২৪

0
1103

#ফেরা

২৪.

” তুমি আমার সাথে এমন করতে পারো না, শাজু। ” নীরব উন্মাদের মতো আচরণ করতে শুরু করেছে। এমন তো হবার কথা ছিল না। কয়েক দিন আগেই শুনেছে শাজুর বিয়ে হয়নি৷ আর এখন…
” আমি বিয়ে নিয়ে আপনাকে মিথ্যা বলবো কেন? ” জোরে একটা থাপ্পড় দিতে পারলে শাজুর মনে শান্তি আসতো। এই ছেলে একপ্রকার মিথ্যা বলেই তাকে রিদ্দির সাথে দেখা করতে বলেছিল। তার ক্যারিয়ার তো মাটিতে মিশে গেছেই পাশাপাশি শান্তিও উড়ে গেছে।
” আমি তোমার জন্য এতবছর ধরে অপেক্ষা করে আছি। আর তুমি বলছ, তোমার বিয়ে হয়ে গেছে! এতো বড় রসিকতা ভাগ্য কীভাবে করলো আমার সাথে! ” নীরবের নিজেকে খুন করতে পারলে শান্তি আসতো।
” আমি আপনাকে কি কখনো কোনো কথা দিয়েছিলাম? কথা দিয়েছিলাম কি যে, আপনাকে বিয়ে করবো?” শাজুর এমন স্পষ্ট কথাতে নীরব অবাক হলো। শাজু এভাবে কথা বলার মেয়ে না৷ নীরব উত্তরে কিছু বলার পাচ্ছে না। তার কাছে উত্তর দেয়ার কিছু নেই।
উত্তর না পেয়ে শাজু আবারও প্রশ্ন করলো, ” বলুন, আমি কোনো কথা দিয়ে ছিলাম? ”
” না ” নীরব অন্যদিকে তাকিয়ে উত্তর দিল।
” তাহলে এখানে তো আমাকে দোষারোপ করার মানে হয়না। আর আপনার আফসোস করারও কোনো কারণ নেই। আপনার আর আমার মাঝে কোনো সম্পর্ক ছিলো না। ছিলো আপনার বন্ধুর সাথে কিন্তু সেটা বেশিদিন টিকেনি। এখন আমার বিয়ে হয়ে গেছে। দয়া করে কোনো প্রকার ঝামেলা করতে আসবেন না৷ আমার জীবন অলরেডি নরক হয়ে আছে। আর নরক বানাবেন না৷ আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিন। এটা আমার অনুরোধ রইলো আপনার কাছে৷ ” শাজু কথাগুলো শেষ করে দ্রুত পায়ে নিজের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে গেল। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যাবেনা। এই ছেলে বড় ধরনের ঝামেলা না পাকিয়ে শান্ত হবেনা।
” তোমার হাজবেন্ডের নাম কী? কোথায় থাকে?” পেছন থেকে নীরবের প্রশ্ন শুনে শাজু ভয় পেয়ে গেল আরো। সে প্রায় দৌঁড়ে একটা রিকশায় উঠে পড়লো। রিকশাওয়ালা বুঝতে পেরে দ্রুত টান দিল। শাজুর ভয়ে বুক কাঁপতে শুরু করেছে৷ সঞ্চয়কে কীভাবে জানাবে আজকের ঘটনা? না জানিয়েও তো উপায় নেই।

*****

রাহাত বারবার বই রেখে সঞ্চয়ের দিকে তাকাচ্ছে। সঞ্চয় কী মনোযোগ দিয়ে পড়ছে! ভাবাও যায়না। এতো মনোযোগ নিয়ে তাকে কোনোদিন পড়ার টেবিলে বসতে দেখেনি সে।
বই রেখে সঞ্চয় প্রশ্ন করতে বাধ্য হলো, ” আমার দিকে চোরা ভাবে তাকাচ্ছিস ক্যান?” এভাবে তাকালে পড়াতে মন দেয়া যায়?
” তোর মনোযোগ দেখছি। ”
” শ্লা, মাস্টার্স ফাইনাল এক্সাম। এখনো যদি মনোযোগ না দেই তবে কবে দিব?” সঞ্চয় আবারও বই খুলে বসলো৷ বই পড়ে ততটা কাজ হচ্ছে না৷ নোটটা হলে ভালো হতো। কিন্তু সেটা তো জারিফের কাছে।
” বিয়ে করলে বইতে মন আসে। এই নীতিকথা কেন পাঠ্যবইয়ে ছাপা হয়না দোস্ত?”
” এটা তুই এনসিটিবিরে জিজ্ঞেস করে দ্যাখ। আমার হাতে বেশি সময় নেই৷ ”
” তোর মাকে বল না। ”
” কী বলবো?”
” আমার মা’কে যেন বিয়ের ব্যাপারে বুঝিয়ে বলতে। ”
” বিয়ে পড়ে করিস। আগে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে নে৷ ” মোবাইলে রিদ্দির নাম্বার থেকে আবারও ফোন এসেছে। এই নিয়ে পনেরো বারেরও বেশি ফোন এসেছে। আর কতভাবে না বলা যায়?

পরীক্ষা শেষ হবার একদিন পরে…

” মা তোমার ঠিক হয়নি বড় ফুপুকে ও-ই বাড়িতে পাঠানো। কী ঝামেলা পাকিয়ে রেখে আসবে তার ঠিক নেই৷ ” সঞ্চয়ের খুব চিন্তা হচ্ছে৷ এর আগে শাজুকে কাজের মেয়ের সাথে তুলনা করে বসেছিল। সামনা-সামনি দেখলে যদি চিনে যায় তখন তো ঝামেলা আরো পাকাবে৷ এদিকে নীরব নাকি ওই বাসায় গিয়ে গেড়ে বসেছিল। কিছুতেই ওই বাড়ি সে ছাড়বে না৷ তারপর অভিভাবক ডেকে পরিবেশ শান্ত করা হয়েছে। বড় ফুপু ঝামেলা করবে কেন যেন মনে হচ্ছে সঞ্চয়ের। এদিকে সে ক্যাম্পাস থেকে আসতেও পারতেছে না। কী করবে সে?
” আমি কীভাবে না বলি বল? না বললে কি আমার কথা শুনবে? আর এখন তো উঠিয়ে আনার সময় হয়ে গেছে। তাই বিভিন্ন জিনিস নিয়ে, বউয়ের গহনা, শাড়ি, যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে কথা বলতে তো যেতেই হবে। ” লায়লা ছেলেকে শান্ত করার জন্য কথাগুলো বললেন৷ তারও মনে কু ডাক দিচ্ছে। সঞ্চয় মা’কে মূল ভয়ের কারণটা বলতে পারছে না।
” মা, তোমার সাথে যাওয়া উচিৎ ছিল। ”

*****
” তাহিরা মা, ঘোমটাটা আরেকটু খুলো তো। বয়স হয়েছে তো তাই চেহারা দেখতে পারছি না। ” লিমা কথাগুলো মিষ্টি স্বরে বললেন। মনো ঘোমটা টেনে খুলে দিয়ে বলেন, ” মেয়ে অনেক লাজুক তো। ”
চেহারা দেখে কেমন যেন লাগলো লিমার। ছবি দেখে চেনা চেনা লেগেছিল। এখন সামনা-সামনি দেখে সেই চেনা চেনা ভাবটা আরেকটু জোড়ালো হয়েছে।
” মা, তুমি এসএসসি পরীক্ষা দিছ কোন স্কুল থেকে? ” লিমা কেন এই প্রশ্ন করলো জানেন না। মনে হচ্ছে, এই সেই শাজু নামের মেয়েটা। ভাব ভঙ্গী তো তাই মনে হচ্ছে।
শাজুর পাশে রিনা বসা ছিল। সে বলে বসল, ” ও অনেক ভালো স্টুডেন্ট। ভিকারুননিসা থেকে এসএসসি পাশ করেছে তাও জিপিএ ফাইভ পেয়ে। ” লিমার সন্দেহ আরো গাঢ় হলো। কিছুটা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ” কত সাল?”
রিনা পাশ থেকে সাল বলার সাথে সাথে লিমা উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলল, ” এই তো সেই মেয়ে! হায় আল্লাহ! এই মেয়ের সাথে আমার সঞ্চয়ের বিয়ে হয়েছে! হায় আল্লাহ হইলো কী এইটা! এই চরিত্রহীনার সাথে কীভাবে বিয়ে হয়ে গেল। ” মনোর মুখ সাথে সাথে কালো হয়ে গেল। রিনা সবসময় ফটফট করতে থাকে। তার কিছু বলার আগেই এই মেয়ে সব উগড়ে দিয়েছে।
” সঞ্চয়ের সাথে বিয়ে হতে যাবে কেন? বিয়ে হয়েছে মামুনের সাথে। লায়লার ছেলে মামুন। ”
লিমা ক্রুর হাসি হেসে বলল, ” ওই যেই লাউ সেই কদুই গো। মামুনেরই ডাক নাম সঞ্চয়। ”

মনোর মনে হলো আকাশ ভেঙে পড়েছে মাথার উপরে৷ এতো কিছু করার পরেও সেই ছেলের সাথেই বিয়ে হয়ে গেল তাহিরার। লাভ কী হলো? এখন তিনি মুক্তাকে কি জবাব দেবেন? মাহমুদকে কী জবাব দেবেন?

চলবে…

~ Maria Kabir

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here